#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 35 ( ধামাকা পর্ব ২)
🍁🍁🍁🍁
ড্রয়িং রুম জুড়ে পিনপিন নীরবতা। সায়নরা স্তব্ধ দৃষ্টিতে সীমা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে। সীমা বেগম অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সিমথির দৃষ্টিতে একরাশ ক্রোধ ঘৃণা। সায়ন ইফাজ আগে থেকেই জানতো সীমা বেগম ওদের আপণ ফুফি বেঁচে নেই। কিন্তু কখনো সীমা বেগম কে সেই ভাবে হেলা করেনি। সিমথির প্রথম কথায় সায়ন, ইফাজ অবাক না হলেও পরবর্তী কথাগুলো শুনে হতবাক। সিমথি, রোজ, তরী ওরা সীমা বেগম কে আপণ ফুফি, মাসি বলেই জানতো।
ইফাজ : ছোট মা, ছোট বাবা আর আম্মুর মৃত্যুর পেছনে ত তুমি জড়িত।
ইফাজ কাঁপা কাঁপা গলায় কথাগুলো বলে সীমা বেগমের দিকে তাকায়। সীমা বেশি আগের ন্যায় চুপ।
সিমথি : এখন আর চুপ থেকে কি করবেন। নিজের অপরাধ টা অন্তত স্বীকার করুন।
সিমথি কটাক্ষ কন্ঠস্বর শুনে সীমা বেগম ছলছল দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি দৃষ্টি ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকায়।
সীমা বেগম : আমার তোদের প্রতি ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিলো না রে মা।
সীমা বেগমের কথায় সিমথি তাচ্ছিল্যেকর হাসে। দাতে দাঁত চেপে সীমা বেগমের উদ্দেশ্য বলে উঠে,,,,
সিমথি : পাঁচ পাঁচ বার যেই ব্যক্তি আমাকে মা’রা’র চেষ্টা করে সেই ব্যক্তির ভালোবাসার শুদ্ধতা আমাকে শেখাতে আসবেন না। ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়েকে যেই ব্যক্তি ড্রাগসের মতো ভয়াবহ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে সেই ব্যক্তির ভালোবাসার সত্যিই তুলনা হয় না।
সীমা বেগম : তুই সবটা জানিস না।
সিমথি : আমি যতটুকু জানি আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট। আপনি মিসেস রহিমা বেগমের বোনের মেয়ে আপনি ছিলেন। অল্প বয়সেই আপনার মা মারা গেলে আপনার বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করে। আপনার সৎ মা আপনাকে প্রতিদিন মা’র’তো। মিসেস রহিমা বেগম তখন আপনাকে এই বাড়িতে নিয়ে আসে। এখানে লেখাপড়া শিখেন আর বড় হতে থাকেন। আপনার বান্ধবী ছিলো আমার মা। মিসেস রহিমা বেগম জানতো আপনার মা তার সম্পত্তি আপনার নামে করে দিয়ে গেছে তার জন্য উনি চাইতো আপনাকে আমার বাবাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে। কিন্তু বাবাই আমার মাকে পছন্দ করে এবং বিয়ে করে। আপনি নিজের হার মানতে পারেননি। আমার মাকে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মে*রে ফেলতে চান কিন্তু আপনি প্রতিবারই ব্যর্থ হন। তখন আপনি আন্ডারগ্রাউন্ডের এন.কে নামে একজন দাগি আসামীকে হায়ার করেন আমার মাকে মা’রা’র জন্য। কিন্তু আপনি জানতেন না এন.কে বাবাইয়ের শত্রু। আপনি তো চেয়েছিলেন আমার মাকে মা’র’তে তারপর বাবাই কে বিয়ে করতে। কিন্তু এন.কে আপনার প্ল্যানে পানি ঢেলে দুজনকেই মে”রে ফেলে আর সেটার নাম হয় কার এক্সিডেন্ট।
সিমথির কথায় সীমা বেগম ক্রোধে গর্জে উঠে।
সীমা : তোর মা আহনাফ আর আমার মাঝে এসেছিলো। আমি ছোট থেকেই আহনাফ ভালোবাসতাম কিন্তু ওই ভিখিরি এসে আহনাফ কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।
সীমা বেগমের কথায় সিমথি হাতের কাছে থাকা ফ্লাওয়ার ভার্স টা স্বজোরে ছুঁড়ে মারে। যা গিয়ে সীমা বেগমের পায়ের কাছে পড়ে। সবাই চমকে সিমথির দিকে তাকায়। চোখ দিয়ে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছে সিমথির।
সিমথি : ভাষা সংযত করুন। কেউ আপনার কাছ থেকে আপনার ভালোবাসা কেড়ে নেইনি। ভালোবাসা কেউ কাড়তে পারেনা। আপনাকে বাবাই সবসময় নিজের বোনের মতো দেখতো। কিন্তু আপনি ভাই-বোনের মতো পবিত্র সম্পর্কে এসব নোংরা জিনিস টেনে এনেছেন।
সীমা বেগম : হ্যাঁ হ্যাঁ আমি সব করেছি কিন্তু এসব কাজে আমি একা নই আরো অনেকেই সামিল ছিলো। তোর মাকে আমিই মা’রতে টাকা দিয়েছি। তোকে ও আমিই মা’র’তে চেয়েছি। তরীকে ও আমিই ড্রাগস দিতাম আর যখন ও নেশার ঘোরে থাকতো তখন তোদের তিনজনের বিরুদ্ধে উস্কে দিতাম।
এতবছরে ভালোবাসার মানুষটার এমন নৃশংস রূপ দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। সায়নরা বাকরুদ্ধ হতবাক। তরী অসহায় দৃষ্টিতে সীমা বেগমের দিকে তাকায়।
তরী : এসব করে কি লাভ হলো ভালো মা।
তরীর কথায় সীমা বেগম হাসতে শুরু করে আচমকা কেঁদে ওঠে।
সীমা বেগম : আমি আনন্দ পেয়েছি। আমি সুখে না থাকলে কাউকে সুখে থাকতে দেবো না। কিন্তু আমি তোদের সত্যিই ভালোবাসি।
সিমথি : মেন্টালি এবনরমাল উনি। অফিসারস ভেতরে আসুন।
অফিসারসহ কনস্টেবল রা ভেতরে আসে। সিমথি ইশারা করতেই দুজন মহিলা কনস্টেবল গিয়ে সীমা বেগমকে চেপে ধরে।
সীমা বেগম : এই ছাড় বলছি। সিমথি মা আমার ওদের ছাড়তে বল। আমি কোথাও যাবো না। আমি কোথাও যাবো না।
সিমথি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায়। আজ কাছের মানুষটার চোখের পানিও সিমথির মন গলাতে ব্যর্থ। রাগ, ঘৃণা টায় যেনো পুরোটা মন ছেয়ে গেছে।
সীমা বেগম : আমার কথা শোন। আমি এসবে একা নয়। আরো কেউ আছে।
সিমথি : আর যেই থাকুক তাকে আমি খুঁজে নেবো। কিন্তু ভালোবাসার আড়াল থেকে আপনি আমাদের প্রত্যেক কে যেভাবে ক্রমাগত ঠকিয়েছেন। আমাদের বিশ্বাস ভেঙেছেন তার জন্য ফাঁসি ও কম হয়। আপনার ফাঁসি হবে কারণ তিনজন জীবিত মানুষকে খুন করার পেছনে আপনার অনেকটা সহমত আছে। তবে জীবনের শেষ মুহূর্তে আপনি অনুশোচনা করবেন। একটা বার আমাদের সাথে মাফ চাইতে ইচ্ছে করবে। সবাই আপনার সাথে দেখা করলে আপনার সাথে আজই আমার শেষ দেখা। জীবনে শেষ সেকেন্ড অবধি আপনি আমার সাথে কথা বলতে চাইবেন একটু দেখতে চাইবেন সেই সুযোগ টা আমি আপনাকে দেবো। আমি চাইলেই এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতার শাস্তি আপনাকে নিজের হাতে দিতে পারতাম। কিন্তু স্বার্থের জন্য হলেও ভালোবেসেছিলেন৷ সেটা নাটক হলেও আমরা সত্যি বলেই জানতাম। তাই আপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলাম। অফিসারস নিয়ে যান উনাকে।
সিমথির কথায় অফিসার সীমা বেগম কে নিয়ে যায়। সায়নরা নির্বাক। রহস্য এখনো অনেক বাকি। কিন্তু কারোরই কথা বাড়ানোর মতো মন মানসিকতা নেই আপাতত। সিমথি রহিমা বেগমের দিকে তাকায়। রহিমা বেগম ভয়ে সেটিয়ে যায়।
সিমথি : আপনাকে ছাড় দিয়েছি। আপনি স্বার্থপর লোভী হলেও আমার বাবাইয়ের জন্মদায়িনী সেজন্য। এই বয়সে জেলের শক্ত রুটি খেতে পারবেন না তার জন্য ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তেড়িবেড়ি করলে আপনার সো কল্ড বোনের মেয়ের পাশে আপনার জায়গায় হবে। গট ইট। বাড়ি ছেড়ে গেছি দুনিয়া ছাড়িনি। সো বি কেয়ারফুল।
সিমথির শান্ত গলার হুমকিতে রহিমা বেগম দমে যায়।
_________________
আদির মা : রাত দশ বাজতে চললো। সিমথি এখনো আসছে না কেনো। প্রতিদিন তো আটটায় বাড়িতে উপস্থিত থাকে।
শাওন : আদি তুই আজ একা চলে আসলি কেনো। সিমথির মনের অবস্থা জেনেও।
আদি : আমাকে কড়া গলায় বলে দিয়েছে আমি যেনো আজ হসপিটালের ত্রিসীমানায় ও না যায়। তারপর ও কিভাবে যাবো। একেই রণচণ্ডী হয়ে আছে আজ। সবই তো জানিস।
আদির কথায় সবাই দমে যায়। আদি নিজেই সবাই কে সব ঘটনা বিস্তারিত জানিয়েছে। আচমকা কলিং বেলের শব্দে সবাই চমকে যায়। মেহের গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার ওপাশ থেকে সিমথির ক্লান্ত মুখশ্রী ভেসে ওঠে। মেহেরকে দেখে সিমথি ক্লান্তি মাখা হাসি দেয়।
সিমথি : এভাবে তাকিয়ে আছো কেন সবাই।
আদি : তোমার ব্ল্যাক শাড়ী পাল্টে লাল হলো কিভাবে৷
সিমথি : সিরিয়াসলি আদি। তোমার নজর শাড়িতে গেলো।
আদি : কার সাথে কি করেছো আবার৷
সিমথি : আরে না আমি প্রায় তিন মাস হলো মা’রা’মা’রি করিনা। এখন আর এসব করিনা ভদ্র মেয়ে হয়ে গেছি না আমি বিয়ের পর৷
কথাটা বলে সিমথি একটা ইনোসেন্ট মার্কা হাসি দেয়। এতকিছুর পরও সিমথিকে স্বাভাবিক দেখে সবাই বেশ অবাক হয়।
আদির মা : আচ্ছা এসব বাদ দে। কিন্তু তোর চুল ভেজা কেনো। বাইরে তো বৃষ্টি ও নেই।
সিমথি : আর বলো না মা বাইরে ডেঙ্গু জ্বরের ভীষণ উপদ্রব হয়েছে। হসপিটালে রোগীর জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। এখন সারাদিন এসব ভাইরাসে থেকে কি হসপিটালের ড্রেসে বাড়িতে আসবো। তারজন্যই ফার্ম হাউসে গিয়ে চেঞ্জ করে আসলাম তাই তো এতো লেট হলো।
মেহের : বাড়িতে এসেই তো চেঞ্জ করতে পারতে।
সিমথি : আপু বাড়িতে বাচ্চা কাচ্চা আছে। একটু সচেতন না হলে ডাক্তারি পড়ে কি লাভ হলো।
শাওনের মা : এই কথা বল। আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ফোন করে জানাবি তো।
সিমথি : ফোনের চার্জ শেষ।
আদির বাবা : আচ্ছা রুমে যা এখন। ফ্রেশ হয়ে আয়। খাবি তো নাকি।
সিমথি মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে যায়। আদির বাবা সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ছাড়ে। এই বয়সেই মেয়েটা কতকি সহ্য করার শক্তি রাখে।
আদির বাবা : সিমথির সামনে আর কেউ আজকের ঘটনার রিপিট করিস না। ও নিজেকে সামলে নিয়েছে।
আদির বাবার কথায় সবাই সায় জানায়।
____________
আদি : সিয়াজান মন খারাপ
আচমকা আদির কথায় সিমথি পাশ ফিরে আদির দিকে তাকায়। আদির কথার মর্মার্থ বুঝতে পেরে হাসে। আদি বালিশে ভর দিয়ে সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে। সিমথি মাথা নাড়িয়ে না জানায়।
সিমথি : নাহ। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে। একটু জড়িয়ে ধরি তোমায়৷
সিমথির অনুরোধের স্বরে কথা শুনে আদির বুক মুচড়ে উঠে। একটানে সিমথিকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলায়।
আদি : বিশ্বাস ঘাতকের জন্য কষ্ট পেতে নেয় সিয়াজান। তুই না আমার বাঘিনী বউ।
শেষের কথা টা আদি সিমথির মুড ঠিক করার জন্য বলে। তাতে কাজও হয়। আদির বলা শেষ কথায় সিমথি হেসে দেয়। বুক থেকে মাথা তুলে আদির দিকে তাকায়। হুট করেই আদির গলায় খামছি দেয়।
সিমথি : বাঘিনী হুট হাট খামছি দেয় বুঝি।
আদি : নাহ বাঘিনী তো হুট করে আক্রমণ করে। বাট তুই তো আমার কাছে থাকলে এমনিতেই বিড়াল হয়ে যাস। এই যে বিড়ালের ন্যায় খামছি মারলি।
সিমথি : আদি ( মুখ ফুলিয়ে) আমি বিড়াল নয়।
সিমথির মুখ ফুলানো দেখে আদি শব্দ করে হেসে দেয়।
চলবে,,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)