যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া #আনিশা_সাবিহা পর্ব ৪৫ (১ম খণ্ডের সমাপ্তি)

0
945

#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪৫ (১ম খণ্ডের সমাপ্তি)

(বি.দ্র. পড়ার অনুরোধ রইল)

গলা শুকিয়ে আসে স্বচ্ছের। মোহ মেয়েটা বেশ সাংঘাতিক সেটার প্রমাণ সে প্রথম থেকে পেয়ে আসছে। তবে পরক্ষণেই তার মনে হলো অন্যকিছু। মোহ আস্তে করে টিশার্টের শুরু অর্থাৎ কলার থেকে টেনে ধরে ছু/রি দিয়ে আস্তে করে কেটে দেয়। এরপর পুরোপুরি দুই খণ্ড করে ফেলে টিশার্টটি। স্বচ্ছ চমকে তাকায় মোহের পানে। মোহ এবার নিজের গায়ের শক্তি দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেয় টিশার্ট। খালি ভেজা গায়ে বসে থাকা স্বচ্ছ তখন হতভম্ব এবং মোহের চোখে তখনও বিরক্তি। সে ব্যস্ত কণ্ঠে বলে উঠল,
“জানি এই সময়ে আপনার টিশার্ট ছিঁড়ে ঠিক করিনি। কিন্তু আপনি অন্য কোনো রাস্তা বাকিও রাখেন নি। আশা করি এবার জেদ না ধরে, আমার পদক্ষেপের অপেক্ষা না করে নিজের ভেজা গা মুছে ফেলবেন।”

“এবার যদি গা না মুছি তাহলে তোমার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? নিজে মুছে দেবে? তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারো।”

মোহ এবার ক্রুদ্ধ নয়নে তাকায়। স্বচ্ছ এবার বিনা শব্দে উঠে গিয়ে নিজের টাওয়াল দিয়ে গা মুছতে থাকে। মোহ তখন নির্বিঘ্নে খাবার বের করছে আর বলছে,
“খাবার এনেছি আপনার জন্য। খেয়ে নিন।”

“তুমি কী করে বুঝলে যে আমি খাইনি?”

“মানুষের চোখমুখের গঠন একেক সময় একেক ভাষা প্রকাশ করে। আপনার শুকনো মুখ অনেক কিছুই বলে দিচ্ছে। জ্বরের গায়ে ভেজা জামায় শুয়ে ছিলেন। এসব কিছুর মানে কী বোঝাবেন?”

“বোঝালেই বুঝবে?”

স্বচ্ছের উদ্ভট প্রশ্নে কপালে ভাঁজ পড়ে মোহের। উল্টো জিজ্ঞেস করে,
“কেন বুঝব না?”

“বুঝবে না। বোঝাতে চেয়ে হতাশ হয়েছি বারবার।”

মোহ ঢক গিলে বলল,
“হয়ত হতাশ হওয়ার দিন খুব শীঘ্রই মিটে যেতে চলেছে।”

স্বচ্ছ নিজের গা মোছা থামিয়ে দিলো। গোল গোল নেত্রপল্লবের সহিত দেখল মোহকে।
“কেমন আশা দেখাচ্ছো এটা?”

মোহ আর উত্তর দিলো না। স্বচ্ছ এবার নিজের মনের বাঁধা মানতে না পেরে হুট করে প্রশ্ন করে বসল,
“শৌভিক কে হয় তোমার? ইথানের কে হয়?”

আচানক মোহের ফোনে আসা শৌভিকের গুরুত্বপূর্ণ মেসেজে ব্যস্ত হয়ে পড়া মোহের কানে ঠিকঠাক গেলই না স্বচ্ছের প্রশ্নটি। স্বচ্ছের দিকে চকিতে তাকায় সে। অতঃপর বলে ওঠে,
“কী বললেন?”

পুনরায় প্রশ্নটা বলার ইচ্ছে জাগল না স্বচ্ছের। তীব্র ক্রোধে যেন শরীরের প্রতিটা রগ অবধি কম্পন সৃষ্টি করছে। তবে সে প্রকাশ করতে পারছে না। দম আঁটকে নিজেকে দমিয়ে কোনোমতে সে বলল,
“কিছু না।”

মোহ নীরব হলো। স্বচ্ছের রাগটা সবেমাত্র মোমবাতির ন্যায় নিভু নিভু হয়েছিল তা আবারও জ্বলে উঠল যেন। দ্রুত বাহিরের ঘর থেকে নিজের পোশাক সম্পূর্ণ পাল্টে এলো মোহের নিকট। আবারও উদ্ভ্রান্তের ন্যায় প্রশ্ন করল,
“কেন এসেছ?”

“কেন এসেছি মানে? ভাগ্যিস এসেছি। নাহলে তো ভেজা জামাকাপড়ে শুয়ে থেকে আধম/রা হয়ে যেতেন।”

“আমাকে দেখে কি তোমার মনে একটুও ভয় জাগে না?”

মোহের দৃষ্টি সূক্ষ্ম হলো। তীব্র মনোরোগ দিয়ে একবার দেখল স্বচ্ছের এক সমুদ্রের স্পষ্ট দুটো চোখকে। যা আকারে ছোটো হয়ে এসেছে জ্বরে। বেশ যত্নের অভাবে বেড়ে গিয়েছে তার গালের দাড়ি। ধূসর আবরণে ঢাকা ঠোঁটে নেই কোনো হাসি বা সুখের আবেশ। এরপর মোহ অস্বস্তিতে চোখ সরিয়ে নিলো। বলল,
“দেখলাম বেশ মনোযোগ দিয়ে। ভয় লাগল না মোটেও। কিন্তু দেখতে পেলাম শৌখিনতায় গড়ে ওঠা মানুষটি কীভাবে সবকিছু ছেড়ে পাগলামি করে যাচ্ছে। তার চোখে নিজেকে ছোটো লাগছে ভীষণ। আমি মনেপ্রাণে চাই সে পাগলামি না করুক।”

“তোমার এই কথা সে রাখতে পারবে না মিস. মোহ। তার পাগলামির মাত্রা আরো বাড়বে। কারণ তাকে সামলানোর তুমি নেই।”

মোহ এবার প্রতিত্তোর না করে খাবার স্বচ্ছের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“খিচুড়ি নিজ হাতে রান্না করেছিলাম। খেয়ে অবশ্যই বলবেন কেমন হয়েছে। আজ আসি। আকাশের মেঘ কাটে নি। যখন তখন বৃষ্টি চলে আসবে।”

“এসেছ যখন থেকে যেতে তো পারো কিছুক্ষণ।”

মোহ শান্ত নয়নে দেখল স্বচ্ছকে। স্বচ্ছের চোখ দুটোতে পরিষ্কার আবেদন। মোহ বলে,
“আপনি চান আমি থাকি?”

স্বচ্ছ আর জবাব দিলো না। নির্লিপ্ত মনে খাওয়া শুরু করল গম্ভীর হয়ে। মোহ তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল,
“আপনার কথা রাখব আজ। বলা তো যায় না কালকের পর আর কোনোদিন আমায় এভাবে আটকাবেন কিনা!”

স্বচ্ছের খাওয়া বন্ধ হলো। দমবন্ধকর সুরে বলল,
“মানে?”

“পরিস্থিতি পাল্টায় কারণে অকারণে। তাই বললাম।”

মোহের কথাই ধোঁয়াশা, রহস্য। স্বচ্ছের মনে তখনও বিশাল কৌতূহল। কিন্তু সে পাল্টা জানতে চাইল না। সে একবারের বেশি প্রশ্ন করে না। নিজের অহমিকা কাটিয়ে উঠতে সে এখনো পারে না। ফলস্বরূপ দুজনেই নীরব রয়।

আবহাওয়া অফিস থেকে খবর প্রচার হচ্ছে টানা তিনদিন বৃষ্টি হওয়ার। শুধু বৃষ্টি নয় শিলাবৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা ব্যাপক। সবে বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডা দিয়ে পার্ক দিয়ে বেরিয়ে নিজের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পায়তারা করছিল সৌমিত্র। বৃষ্টি তৎক্ষনাৎ ঝমঝমিয়ে নামে। হুটোপুটি লেগে সকল লোকজনের ছোটাছুটি শুরু হয় বৃষ্টির পানি থেকে রেহাই পেতে। সৌমিত্রও দ্রুত হাঁটা ধরে। পার্কের পার্কিং প্লেসে গাড়ি। সেখানে অবধি পৌঁছাতে হবে। ফুলের বাগানের মাঝের কংক্রিটের রাস্তা দিয়ে যাবার সময় তার নজর হঠাৎ তার পড়ে মাঝে থাকা ছোটো পুকুরের পাশে উল্টোদিকের বেঞ্চে বসে থাকা একটি মেয়ের দিকে। তীব্র বর্ষণেও যেন একদম পাথরের মতো সোজা হয়ে বসে রয়েছে মেয়েটি। বৃষ্টি যে পড়ছে তাতে যেন তার কোনো হেলদোলই নেই। সৌমিত্র শুধু তার মাথার চুলটাই দেখতে পাচ্ছে। যা ভিজে গিয়ে নেতিয়ে পিঠের সাথে লেগে গিয়েছে একদম। মেয়েটি এভাবে বসে রয়েছে কেন? সৌমিত্রের অবাধ্য কৌতূহলের বাঁধ ভাঙে। নিজের তাড়া ভুলে ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়ায় বেঞ্চের পাশেই। ঘাড় ঘুরিয়ে ভালো করে মেয়েটির মুখ দেখতেই গিয়েই চমকে উঠল সে। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“এ তো মিস. সিনিয়র গোলাপি!”

সৌমিত্র বেশ ভাবুক হয়ে পড়ল তানিয়ার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না মেয়েটার। সৌমিত্র বিড়বিড়িয়ে আপনমনে বলল,
“মেয়েটা কি বিয়েশাদির টেনশনে ডিপ্রেশনে চলে গেল? কিন্তু রিহান ভাইকে তো আমি আঁটকে দিয়েছিলাম। তাহলে আবার কী হলো?”

আগপাছ না ভেবেই তানিয়ার থেকে দূরত্ব রেখেই ফট করে বসে পড়ল সৌমিত্র। তানিয়ার যেন সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। চোখের পানিগুলো তার বৃষ্টির পানির সাথে মিলিয়ে মুছে দিয়ে যাচ্ছে। পলকহীন দৃষ্টি তার পুকুরের দিকে স্থির। হঠাৎ কর্ণকুহরে বেজে ওঠে এক মোটা কণ্ঠস্বর।
“পুকুরে কয়টা বৃষ্টির পানি পড়ছে তা গুনছেন নাকি?”

তানিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। সৌমিত্রকে দেখে অবাকই হয় সে। ভাঙা গলায় শুধায়,
“আপনি এখানে?”

“এখানে আসা বারণ বুঝি? নাকি দুঃখবিলাসে ডিস্টার্ব করে ফেললাম?”

“তেমন কিছু না।”

“তা দুঃখবিলাস তো করছেন। কিন্তু এটা কি সুখের দুঃখবিলাস নাকি দুঃখের দুঃখবিলাস জানা যাবে?”

তানিয়া ফের তাকায়। সৌমিত্রের অবান্তর কথাবার্তা তাকে কখনো বিরক্ত করে কখনো বা হাসায় বা কখনো অবাক হয়। তানিয়ার উত্তর না পেয়ে সৌমিত্র আবারও বলে,
“আপনার বিয়ে আমি আঁটকে দিয়েছি। আমার এক ভাইয়ের সাথেই বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। সেটা আমি দায়িত্ব নিয়ে ভেঙে দিয়েছি। তাই দুঃখবিলাসের দরকার নেই। এখন আপনার বয়ফ্রেন্ডকে বলুন তো দ্রুত চাকরি টাকরি খুঁজে বিয়ে সেরে ফেলতে। বারবার আমি বিয়ে ভাঙার দায়িত্ব নিতে পারব না বলে দিলাম।”

তানিয়ার মুখে তবুও উচ্ছ্বাস দেখা গেল না। তখনও সে বিষণ্ণ। একটু সময় নিয়ে ফট করে তানিয়া বলে ফেলল,
“আপনাকে বিয়ে ভাঙতে হবে না। যার জন্য বিয়ে ভাঙবেন সে আমার জীবন থেকে চলে গেছে বিদায় নিয়ে।”

সৌমিত্র চরম বিস্মিত হলো। ধা;ক্কা খেল যেন। তৎক্ষনাৎ জানতে চাইল,
“কেন? কী হয়েছে?”

তানিয়ার এবার মাথা নত করে কেঁদে ফেলল। ক্রন্দন কণ্ঠে বলল,
“বিগত কয়দিন ধরেই সমস্যা চলছিল। সে আমাকে এড়িয়ে চলতে চাইছিল যেন। আমি খুব চেষ্টা করছিলাম স্বাভাবিক থাকার। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। আজ দেখা করি তার সাথে জোর করে এখানে। ও আসতে চাইছিল না। তবুও আসে আর আমি রাগারাগি করে জিজ্ঞেস করি কেন এমন করছে। সে আমায় জানায়, তার খুব ভালো একটা চাকরি হয়েছে। এখন তার পরিবারের লোকজন তার জন্য পাত্রী খুঁজছে। সে নাকি আমার সম্পর্কে বলেছিল তার মাকে। তার মা নাকি সরাসরি না বলে দিয়েছে। কারণ একটাই, আমার বয়স নাকি বেশি। তার মায়ের চাই কমবয়সী আঠারো-উনিশ বছরের সুন্দরী একটা মেয়ে। সেই তুলনায় আমার বয়স নাকি অনেক বেশি হয়ে গেছে। তাই ওর পরিবার আমায় মানবে না। আর সবচেয়ে বড়ো কষ্টের কথা কী জানেন? সে এক বলাতেই তার পরিবারের কথা মেনে নিয়েছে। অন্য একটা সুন্দর, কমবয়সী মেয়ের সাথে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। তাই আমি যেন তাকে আর বিরক্ত না করি সেটা সে পরিস্কার করে জানিয়ে চলে গিয়েছে। আমাদের এত বছরের সম্পর্ক এইটুকু সময়ের মধ্যে কত সহজে সমাপ্তি ঘটিয়ে সে চলে গেছে।”

সৌমিত্র স্তব্ধ হলো। কিছু বলার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পেল না সে। কাউকে ভালোবাসলে বুঝি এত সহজে তাকে ছেড়ে দেওয়া যায়? সৌমিত্রের স্বচ্ছের কথা মনে পড়ে। তার ভাই কত সুন্দর করে তার প্রেয়সীর জন্য নিজের সব ত্যাগ করে যাচ্ছে। প্রেম আর ভালোবাসার পার্থক্য বুঝি এখানেই। তানিয়া এবার তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“আমার বয়স কার জন্য বেশি হয়েছে বলুন তো? তার জন্য অপেক্ষা করতে করতেই তো। এইচএসসির পর থেকে আমার বিয়ের কত প্রস্তাব এসেছে তার ধারণার বাহিরে। আমি সবাইকে মানা করেছি শুধু তার জন্য। মায়ের সাথে অশান্তি করেছি, পরিবারের সাথে লড়াই করেছি। লাভ কী হলো? সে আমাকে সবার কাছে ছোটো করে চলে গেল। আমার পাওনা এই ছিল?”

সৌমিত্র এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কে বলেছে আপনার বয়স বেশি? মোটেও না। আমি আর আপনি প্রায় একই বয়সের। তবুও সবাই আমাকে ছোটো বলেই গণ্য করে। আমি নাকি এখনো বড়ো হইনি। মেয়েরা এখন ত্রিশ বছর বয়সেও বিয়ে করেছে। আমি আপনাকে একদিন বলেছিলাম মনে আছে? প্রেমিকরা প্রেম করতেই ওস্তাদ। সংসার তাদের দ্বারা হয়না।”

তানিয়ার মনে পড়ে সৌমিত্রের কথা। কে জানত সৌমিত্র সেদিন বাস্তব এক কথা বলে ফেলেছিল! তানিয়ার চোখ ফেটে কান্না আসে। সৌমিত্রকে বলে,
“আপনি আমার সঙ্গে বসে আছেন কেন বৃষ্টিতে? ঠাণ্ডা লাগবে। চলে যান।”

“না, না। সদ্য প্রেম ভেঙে যাওয়া মানুষজনের পাশে থাকতে হয়। কখন কী করে বসে ঠিক নেই।”

” কতক্ষণ পাহারা দেবেন শুনি? সারাজীবন তো আর পাহারা দিতে পারবেন না আমায়।”

সৌমিত্র এবার না চাইতেও বলে ফেলল,
“হুকুম আর ভাগ্যে থাকলে সেটাও হয়ে যাবে।”

তানিয়ার কান্না একেবারে থেমে গেল। গোল গোল চোখে তাকায় সৌমিত্রের দিকে। ভিজে চুপসে যাওয়া সৌমিত্র নিজেই লজ্জা পেল এবার। মুখ ফসকে বলেছে কথাটা। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,
“থামলেন কেন? কাঁদতে থাকুন।”

“এভাবে তাকিয়ে থাকলে কাঁদব কী করে?”

“আমি তো এভাবেই তাকিয়ে থাকব।”

তানিয়া আর কাঁদল না। কাঁদতে পারল না। কারণটা সৌমিত্র।

অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করার পরেও যখন বৃষ্টি থামছিল না তখন যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল মোহ। বৃষ্টিতে ভিজেই যাবে সে। দেরি হয়ে যাচ্ছে। ইথান নিশ্চয় তাকে খুঁজবে। স্বচ্ছও উঠে দাঁড়াল সাথে। বলল,
“চলো এগিয়ে দিয়ে আসি।”

মোহ চক্ষু ছানাবড়া হলো। দ্রুত স্বচ্ছের কপালে হাত ঠেকিয়ে বলল,
“পাগল আপনি? বৃষ্টিতে এত জ্বর নিয়ে বাহিরে যাবেন? এখানে থাকুন। আমি যেতে পারব।”

“তোমার সঙ্গে আরো একবার বৃষ্টিতে ভেজার ভীষণ ইচ্ছে আমার। এই জন্য যদি আমি আধম/রা হয়ে যাই তবুও আমি এই ইচ্ছে পূরণ করব।”

বাঁধা মানল না স্বচ্ছ। বেরিয়ে এলো মোহের সাথে। ঠাণ্ডায় কেঁপে উঠছে দুজনের শরীর। দুজনে এসে দাঁড়াল এক দোকানের নিচে ছাউনিতে। কোনো গাড়ির অপেক্ষা করতে থাকল। আধভেজা স্বচ্ছ হঠাৎ বলল,
“তোমার আর আমার প্রথম সাক্ষাতেও বৃষ্টি আমাদের সঙ্গে ছিল।”

মোহ হাত দিয়ে পড়ন্ত বৃষ্টিগুলো উপভোগ করতে করতে বলল,
“হুঁ, মনে আছে। সেদিনই নিজের ত্যাড়ামির সর্বোচ্চ দেখিয়েছিলেন আপনি। কাঁদা পানিতে আমার শরীর মাখিয়ে দিয়েছিলেন।”

“কে জানত সেই কাজের পরিণাম এত ভয়ঙ্কর হবে? কে জানত আমি সেই বিশেষ বৃষ্টিতে ভিজে ভয়ানকভাবে ডুবে যাব কারো আসক্তিতে? কেউ জানত না।”

মোহ মৃদু হাসে আর বলে,
“হয়ত সেটা সাধারণ বর্ষণ ছিলই না। সেই বৃষ্টিতে প্রেমের ছোঁয়া ছিল।”

স্বচ্ছ আচানক আবদার করে,
“আমি তোমার হাতে হাত রেখে বৃষ্টি উপভোগ করতে পারি?”

মোহের হাসিতে পরিবর্তন হাসে। লাজুকতায় মেতে ওঠে মুখ।
“কিছু কিছু কাজে অনুমতি নিতে নেই। আন্দাজ করার আগে সেরে ফেলতে হয়।”

স্বচ্ছ কথা ব্যতীত মোহের হাতের নিচে হাত রাখল। দুজনের হাতে পড়ছে বর্ষণের বিন্দু। কমছে অনুরাগ, বাড়ছে প্রণয়।

(১ম খণ্ডের সমাপ্তি)

]বি.দ্র. এটা মোটেও গল্পের শেষ নই। আর কয়েকটি পর্ব বাকি রয়ে গেছে। যা এই পরিস্থিতিতে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ২য় খণ্ড আসবে আমার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হবার পর।নঅনেকে জিজ্ঞেস করেছেন আমার অনিয়মের কথা। সবাইকে উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে নোটে দুবার উল্লেখ করেছিলম আমি একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। অনেকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন কেন এত চাপ নিয়ে গল্প লিখেছি তবে? আসলে গল্প তো চাপ পড়ার আগেই শুরু করেছিলাম। গল্প শুরু করার প্রধান কারণ ছিল রাইটিং ব্লক। সেটা কাটিয়ে ওঠার তাগিদে লেখা শুরু। যেটার কারণে এত সময় নিয়ে লিখতে হতো আমায়। যাক সেসব কথা। দোয়া করবেন আমার জন্য আমার পাঠকমহল। নিজের মনমতো যেন পরীক্ষা দিতে পারি। আসসালামু আলাইকুম।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here