#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_২৯
আজ শুক্রবার। শৈলী সাধারণত সপ্তাহের এই দিনটায় আয়েশ করে একটা ঘুম দেয়। আজও সেই প্ল্যানেই ফজরের নামাজ পরে খাটে উঠেছিল ও। কিন্তু তার পরিকল্পনায় জগ ভরতি পানি ঢেলে দিলেন ওর মা। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে এসেই রুমে হইচই লাগিয়ে উঠিয়ে দিলেন তার দুই মেয়েকে। বললেন এখনই ঘর গোছানো শুরু করে দিতে। আজকে বিকেলেই এই রুমে থাকার মেহমানরা চলে আসছেন।
শৈলী আর নিপুণ ভরপুর বিরক্তি নিয়ে খাট ছাড়লো। চোখে ঘুমের সুতো জড়িয়ে লেগে পরলো কাজে। নাস্তাও এখনো জোটেনি পেটে কিন্তু কামলা খাটা শুরু হয়ে গিয়েছে। নিজেদের প্রতিটা জিনিস পরিপাটি করে রাখার এবং সাজানোর নির্দেশ এসেছে সয়ং হোম মিনিস্টারের কাছ থেকে। আর কি লাগে। বাসার অর্থ মন্ত্রী তথা ওদের বাবা এসেও উঁকি দিয়ে গিয়েছেন তবে সান্ত্বনা টুকু দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি তিনি। কারণ তার হাত বাধা, তিনি নিরুপায়!
কিন্তু শৈলীদের এই কষ্ট বেশিক্ষণের জন্য কপালে ছিল না। আধা ঘন্টার মাঝেই রুমে হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো মাহিরা। ওকে দেখে শৈলীর ঠোটে দিনের প্রথম হাসিটা ছলকে উঠলো। মাহিরার চোখও ঘুমে লাল হয়ে আছে। কিন্তু ওদের এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি দেখার মতন কেউ নাই। ওকেও ওর বাড়ির গৃহ মন্ত্রী শৈলীদের সাহায্য করতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাই একে অপরকেই নিজের দুঃখের সাথী বানিয়ে কাজে লেগে গেল ওরা।
দুই রুম ডিপ ক্লিন আর সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে সাজাতে আসলেই সময় লেগে গেল। মাঝে শুধু ব্রেকফাস্টের জন্য একটা ব্রেক নিয়েছিল ওরা। তাতেই দুপুর গড়ালো কাজ শেষ হতে। এখন বুঝতে পারলো মায়েরা কেন এতো সকাল থেকে ওদের ধাক্কা দিয়েছেন। অভিজ্ঞতা অনেক বড় ব্যাপার।
কাজ করতে করতেই মাহিরা শৈলীর সাথে আজকের সব প্ল্যার করে ফেলেছে। আজ বিকেলে মাহিরা আর মালিহাকে শপিংয়ে যেতে বলেছে ওদের মা। ঝুমার জন্য যেই গাউন বানানো হয়েছে তার সাথে কিছু গয়না অর্ডার দেয়া আছে, সেটার ডেলিভারি নিতে হবে। তার সাথে দুই বোনও বায়না ধরেছে নতুন ড্রেস কিনবে প্রোগ্রামের জন্য। সেটাও কিনতে যাবে। শৈলীকে ছাড়া মাহিরা নিজে থেকে কিছু চুজ করতে পারে না বলে ওকে সাথে নিয়ে যাবেই।
শৈলীরও বিকেলে কোন প্ল্যান নেই দেখে এক কথাতেই রাজি হয় ও।
ঘর গোছানোর মাঝেই শৈলী আর নিপুণ তাদের এই দুই দিনের ব্যাবহারের সব সরঞ্জামও দুটো পৃথক ব্যাগে ঢুকায়। মেহমান থাকাকালীন সময় বার বার তো আর আসা যাবে না। তাদের প্রাভেসিরও তো একটা ব্যাপার আছে।
ব্যাগটা প্যাক হতেই শৈলী মাহিরাকে জিজ্ঞেস করতেই ও জানালো যে ওদের ব্যাগ কাল রাতেই মিহরানের রুমে রেখে এসেছে ওরা। শৈলীকেও যেয়ে রেখে আসতে বললো। মাহিরা বরঞ্চ তাড়া দেয়,
– দোস্ত এখুনি যা, নয়তো ভাইয়া নামাজের জন্য বের হয়ে গেলে তোদের ব্যাগ রোদে পুড়বে। তাও তার দরজা খুলবে না। এখনই রেখে আয় ওপরে। আমাদের ব্যাগগুলোর সাথেই রেখে দিস।
শৈলী মাহিরার কথা সায় জানিয়ে দুটো ব্যাগ নিয়েই ওপরে চলে এলো। মিহরানের দরজায় টোকা দিল তবে ভেতর থেকে কারও সারা শব্দ পেলো না। মিহরান আসলেই বের হয়ে গেছে কিনা সেটা বুঝতেই দরজার লক্ চেক করতে গিয়ে দেখে সেটা খোলা। শৈলী নব ঘুরিয়ে আস্তে হাতে দরজা খুললো। ভেতরে উঁকি দিয়ে এপাশ ওপাশ দেখলো। কেউ নেই। কপাল কুচকায় শৈলী। গেল কই মানুষটা?
শৈলী রুমে ঢোকে। নিজের কাজে মনোযোগ দেয়। মাহিরাদের ব্যাগ খুজে পায় পুলের সাথে লাগোয়া থাই গ্লাসের পাশে। মাহিরা ওদের ব্যাগটাও একসাথেই রাখতে বলেছিল। তাই করলো শৈলী। নিজেদের দুটো ব্যাগ সুন্দর করে সেট করলো দেয়ালের সাথে ঠেশ দিয়ে।
উঠে দাড়ায় শৈলী কাজ শেষ করে। তবে যেই না ঘুরে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায়, ওমনি ওয়াশরুমের দরজা টা খুলে যায় ওর সামনে। মিহরানকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে প্রথম পলকে কিছু না বুঝলেও দ্বিতীয় মুহূর্তেই শৈলীর চোখ কোটর থেকে বের হওয়ার ভাব নেয়। মিহরান মাত্র গোসল দিয়ে বের হয়েছে। একদমই খালি গায়ে শুধু কোমর থেকে নিচে টাওয়েল প্যাচানো।
মিহরানের পেটানো তামাটের শরীরের দিকে অজান্তেই লোভাতুর দৃষ্টি পরে শৈলীর। এলোমেলো চুল থেকে মুক্তার মতন টপ্ টপ্ করে পানি পরছে মানুষটার চওড়া ঘাড়ে। সেখান থেকে বেয়ে যাচ্ছে তার নগ্ন বুকে, মিশে যাচ্ছে বুকের লোমে। মেদহীন পেটের আশপাশের ফোটা ফোটা পানির বিন্দু থাই গ্লাস ভেদ করে আসা রোদের কিরণে চিকচিক করছে।
শৈলীর হঠাৎ খেয়াল হয় ও কি করছে।
আস্তাগফিরুল্লাহ্ !
ও মিহরানের শরীরের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে কিছুক্ষণ ধরে। চিন্তাটা মাথায় হিট করতেই যতটা চোখ দুটো বড় করা যায় তাই করে শৈলী এক চকিতে উল্টো পাশে ঘুরে দাড়ায়।
মিহরান শৈলীর মুখে খেলে যাওয়া প্রতিটা অনুভূতি শুক্ষ ভাবে লক্ষ করে। চরম মজা পায় ও। তার সাথে মেয়েটাকে বিরক্ত করারো সুযোগ খুজে নেয়।
চেয়ারের হাতলে রাখা আরেকটা টাওয়েল হাতে নিয়ে কন্ঠে দুষ্টুমি টানে,
– ওদিকে তাকিয়ে লাভ কি বলুন তো? থাই গ্লাস দিয়েও তো রিফ্লেকশন দেখা যায়।
শৈলী সামনে তাকতেই দেখে আসলেই থাই গ্লাসে মিহরান কে দেখা যাচ্ছে। অস্ফুট চিৎকার দিয়ে হাত দিয়ে চোখ ঢাকে ও,
-আআমি কিছু দেখিনি।
-দেখলেই বা কি সমস্যা? আপনিই তো দেখছেন, পর কেউ তো না।
শৈলীর মাথায় বাজ পরে। কি অসভ্য মানুষরে বাবা। জুম্মার দিনও দুষ্টুমি ছাড়ে না। সবই শৈলীর দোষ আসলে। এভাবে হুটহাট চলে আসা উচিত হয়নি ওর। এতোদিনেও শিক্ষা হয় নি। বারবার একই ভুল করে লজ্জায় পরে। কিন্তু মানুষটাকে সবসময় সুযোগ দেয়া যাবে না তো। একটু বকা তো দিতেই হবে। এই ভেবে শৈলী কপট রাগ টানে,
-আপনি জুম্মার দিনেও দুষ্টুমি করছেন? আল্লাহ্ রাগ করবেন।
-স্ত্রীর সাথে দুষ্টুমি করা সুন্নত তা জানেন কি? আমাদের নবীজি (স) তার স্ত্রী দের সাথে অনেক রোম্যান্টিক ছিলেন। হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনায় তা পাওয়া যায়। কাইন্ডলি পড়বেন সেগুলো।
মুচকি হাসে শৈলী। ও নিজে পড়েনি কিন্তু শুনেছে মায়ের থেকে সব। আসলেই আমাদের নবী (স) তার ভালোবাসা ব্যক্ত করতেন অভিনব সব উপায়ে। সেগুলো আমাদের জন্যও সুন্নাত। শৈলীর মন ভরে যায় এটাও চিন্তা করে যে মিহরানও এই সব বিষয়ে অবগত এবং তিনি মানেন। এরকম একজন স্বামী থাকলে একজন স্ত্রীর আর কিছু চাওয়ার থাকে না।
হঠাৎ হাতে মিহরানের স্পর্ষ পেয়ে শৈলী কেঁপে ওঠে। মিহরান ওর দুহাত আল্তো করে টেনে মুখ থেকে সরায়। শৈলী আস্তে করে চোখ খোলে। মিহরানের সাদা পাঞ্জাবী পড়া স্নিগ্ধ রুপ চোখে বাধা পরে ওর। শৈলী মুহূর্তেই শান্ত হয়ে যায়। সদ্য গোসল করে এসে এই শুভ্র রংয়ে রাঙানো মিহরানের প্রেমে আবার পরে যায় ও। মানষটা ওকে মনে হয় বাঁচতে না দেওয়ার পনে নিয়ে বসেছে। ভালোবাসার বাণ দিয়ে মেরেই দম নিবে।
মিহরানের ঠোটে তখন ছোট্ট হাসি। চোখে এক আলাদা ধরনের চমক ঝিলমিল করছে। নিজের হাত দিয়েই শৈলীর দুহাত নামিয়ে দিল। কাছে এলো দুকদম। শৈলী এবার সরলো না। চোখ টিকিয়ে রাখলো মিহরানের স্বচ্ছ মুখের দিকে। যেন এক ঘোরে প্রবেশ করেছে ও। ফিসফিসিয়ে মিহরানের কন্ঠ শোনা যায়,
– এভাবে কি দেখছেন মিসেস মিহরান?
– আপনাকে।
মিহরান হাসে। কি স্নিগ্ধ সেই হাসি! শৈলীর মুগ্ধ চোখ ওর ঠোটে নামে। পুরু ঠোটের মাদকতায় হারায় অক্ষিদ্বয়। অজান্তেই এক হাত উঠে আসে মেদহীন পুরুষালি গালে। মিহরান একটু নড়ে ওঠে সেই স্পর্শে। তারপর চোখ বোজে। নিজের গাল দিয়ে শৈলীর হাতে একটু চাপ বসায়। তার অর্ধাঙ্গিনীর নিজ থেকে ওঠানো ছোয়া মন থেকে উপভোগ করে।
হঠাৎ ছলকে ওঠে শৈলী। ঘোর কাটে, কি করছে বুঝতে পেরে চমকে যায়। আয় হায়! ওর হাত মিহরানের গালে গেল কখন? নিজে থেকেই তুলে দিল ও? ছি: ছি:। কি ভাববে মানুষটা ওকে নিয়ে?
শৈলী সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিতে চায়, কিন্তু তার আগেই মিহরান চেপে ধরে সেটা গালের সাথে। নিঃশ্বাস ভারী হয় শৈলীর,
– ছাড়ুন না?
-মহম।
-প্লিস।
– নাহ্।
শৈল চুপ করে তবে চোখের আঁকুতি ছাড়ে না। মিহরানের ঠোট জোড়া ফাঁকা হয়,
– আচ্ছা ছাড়বো, তবে একটা শর্তে।
মুহূর্তে কৌতুহলী হয়ে ওঠে শৈলী,
– কি শর্ত?
মিহরান উত্তরে কিছু বলে না। বরং নিজের চোখ নামিয়ে বুকে আনে। শৈলী সেই দৃষ্টি অনুসরণ করেই নিচে তাকায়। দেখে মিহরানের পরণে পাঞ্চাবীর বোতামগুলো বুকের কাছে খোলা। অবাক হয়ে প্রশ্নে করতে যাবে তার আগেই মিহরান মুখ খুলে,
– নামাজের জন্য দেরী হয়ে যাচ্ছে, বোতামগুলো লাগানো জরুরী যে। নাহলে যেতে পারছি না।
শৈলী হতভম্ব,
-তো লাগিয়ে ফেলুন।
– কেমনে লাগাবো? আমার হাত তো আটকানো, দেখুন।
শৈলী চঞ্চল চোখে তাকায় মিহরানের হাতের দিকে। ঝট করেই যেন ও বুঝে ফেলে মিহরানের দুষ্টুমি আর শর্ত দুটোই। লজ্জায় হেসে ফেলে চোখ নামিয়ে। তারপর নিঃশব্দে নিজের হাত মিহরানের গাল থেকে সরিয়ে বুকের ওপর রাখে। আরেক হাতও উঠিয়ে আনে। শিহরিত হস্তদ্বয় দিয়ে একটা একটা করে পাঞ্জাবীর বোতামগুলো লাগাতে শুরু করে।
শৈলী মনে করেছিল, ও বোতাম লাগাতে থাকার সময় মিহরান বোধহয় ওর কোমড় জড়িয়ে ধরবে। মুভি বা নাটকে তো তাই দেখেছে ও। কিন্তু এখানে এমনটা হলো না। মিহরান ওকে ছুলো না বরং তুষ্ট নয়নে তার স্ত্রীর নিপুনতার সাথে কাজ করাটা দেখে গেল। শৈলী জানে মিহরান কেন ধরেনি ওকে। সম্পর্কটাকে যথেষ্ট সময় দিয়ে দিয়ে আগাচ্ছে ও। শৈলীকে আস্তে আস্তে আপন করছে। শৈলী এই কারণেই মানুষটাকে গভীর শ্রদ্ধা করে। মুখে দুষ্টুমি করলেও সেটা লিমিট ক্রস করে না।
শেষ বোতামটা লাগাতে লাগাতে মিহরানের ফোন বাজে, পাঞ্জাবীর পকেট থেকে বের করে দেখে মেহরাবের কল। মিহরান রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শোনে,
– হ্যালো ভাইয়া, যাবা না নামাজে?
– হমম যাবো।
– তাহলে নিচে নামো?
– একটু দেরী হবে নামতে আমার। একটা জরুরী কাজে ব্যস্ত। তোরা আগা, আমি চলে আসছি।
মিহরানের ‘জরুরী কাজ’ শুনেই শৈলী বোতাম লাগাতে গিয়ে হেসে দিল। হুহ্! কি এক জরুরী কাজ!
-আপনি হাসছেন কেন শৈলী?
শৈলীর বোতাম লাগানো শেষ। ও এক কদম পিছিয়ে আসে,
– কিছু না….। মেহরাব রা ওয়েট করছে, একসাথেই চলে যান। পরিবারের সব পুরুষ একসাথে নামাজে গেলে ভালো লাগে।
মিহরান অপলক চেয়ে রয় তার লাজুকলতার দিকে,
-হমমম। আপনি যেই কাজে রুমে এসেছিলেন সেটা শেষ হয়েছে?
-হ্যা।
– তাহলে চলুন একসাথেই নামি।
বলেই মিহরান নিজের মোবাইল আর রুমের চাবি নিয়ে বের হয়। রুম লক্ করে দুজন সিড়ির দিকে পা বাড়ায়।
……………..
নামাজ শেষে দুপুরে খাবার টেবিলে শপিং আলোচনাই চলে দুই বোনের মাঝে। মাহিরা আর মালিহা খাওয়া কম, ফেসবুকে মনোযোগ দিয়ে রেখেছে বেশি। কোন স্টাইলের ড্রেস কিনবে সেটাই এখনো ডিসাইড করতে হিমশিম খাচ্ছে।
মেহরাব অপর পাশ থেকে ওদের কান্ড দেখে টিপ্পনি কাটে,
– যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়া পড়শির ঘুম নাই।
মালিহা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়,
-কি বলতে চাইছিস তুই, হ্যা?
-যেটা দেখছি সেটাই। প্রোগ্রাম বড় ভাবির, তার সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা উচিৎ। সেখানে বেচারি চুপচাপ আছে, আর তার জায়গায় তোমরা দুইজন লাফাচ্ছো। এর কোনো মানে হয়?
মালিহা কিছু বলার আগেই টেবিলের নিচ থেকে নিজের পা দিয়ে মেহরাবের ঠাশা মারলো মাহিরা। বেচারা কোকিয়ে ওঠে,
– তুই কি পাগল? এতো জোরে কেউ ব্যাথা দেয়?
মাহিরার সোজা উত্তর,
– অন্যের কাজে নাক গলায় যারা তাদের এরকম পরিনামই হয়।
মালিহা ওর দুই জমজ ভাই বোনের কীর্তিতে হেসেই খুন।
ওপাশ থেকে ঝুমাও হাসে আর বলে,
– আরে মেহরাব, তুই এরকম বলছিস কেন? আমার আনন্দে আমার দুই ননদিনী মজা করবে না তো কে করবে বল্। ওদেরই তো এখন সাজগোজের সময়।
ততক্ষণে আফিয়া বেগম আসলেন টেবিলে,
– তোরা আজকে কে কে যাচ্ছিস শপিংয়ে বলতো?
মালিহা উত্তর দেয়,
– আমি, মাহিরা আর শৈলী বোধহয়। তাই না মাহি?
-হমম।
– আচ্ছা, তাহলে তোরা উবার ডেকে চলে যেতে পারবি না? আসলে বাসার গাড়িটা লাগবে তোদের সন্ধ্যা খালার পরিবার কে বাস স্টেশন থেকে আনার জন্য।
মায়ের কথায় মালিহারা রাজি হয়েই যাচ্ছিলো যখন টেবিলের এক পাশ থেকে মিহরান বললো,
– আরেকটা গাড়ি আছে তো বাসায়। আমি নিয়ে যাবনি ওদের। উবার ডাকার দরকার নেই।
মালিহা মনে হয় অষ্টমাশচর্জ দেখলো এমন ভাবে তাকালো ওর মেজ ভাইয়ের দিকে। আর মাহিরার তো হাত থেকে ডালের চামচই পরে গেল,
– তুমি আমাদের নিয়ে যাবে ভাইয়া? আই মিন তুমি আমাদের সাথে যাবে?
মিহরান কপাল কুচকে তাকায়,
-কেন? গেলে সমস্যা?
কঠোর কন্ঠে চুপসে যায় মাহিরা,
-ননা কি সমস্যা হবে? ককোনো সমস্যা নাই।
– আমি তন্ময়ের সাথে বাইরে যাব, তোদেরকে নামিয়ে যাব। আসরের পর রেডি থাকবি।
এইবার কথাটা পরিষ্কার হলো দুই বোনের কাছে। ভাই ওদের শুধু ড্রপ করবে, তাই বলো। নাহলে ওদের সাথে শপিং এ যাওয়া, তাও আবার মেঝ ভাইয়া…. অসম্ভব!
খাবার শেষ করেই মালিহা নিজের রুমে যায়। ফোনটা তুলেই ঝটপট ফোন লাগায় তুরিনকে। তুরিন কল ধরতেই মালিহা উত্তজিত কন্ঠে শুধায়,
– তোর জন্য একটা বড় অপরচিউনিটি আছে। নিবি সেটা?
-কি বলছিস, কিছুই তো বুঝলাম না।
– বিকালে কি করছিস?
-আম্মুর সাথে এক জায়গায় যাব। কেন?
-ওহহো! তাহলে তো তুমি ভাইয়াকে মিস করলা বান্ধবী।
তুরিন শুয়ে কথা বলছিল। তড়াক করে উঠে বসে,
– কিসের মিস? কেমনে মিস? বল্।
মালিহা হো হো করে হেসে দেয়,
-আচ্ছা, আমার ভাইয়ের মধ্যে তুই এমন কি পাস বলতো তুরিন? এতো পছন্দ করিস কেন তাকে?
তুরিন অধৈর্য হয়,
– করি পছন্দ ব্যস। এখন চুপচাপ বল্ কি মিস করছি আমি।
মাহিরা ধাতস্থ হয়,
– আর এক ঘন্টা পরেই আমরা প্রোগ্রামের জন্য শপিং এ যাব। মেঝ ভাইয়া আমাদের ড্রপ করবে। তুই তার সাথে মিট করতে চাইলে…
-আমি আসতেসি। তুই জাস্ট লোকেশন টা বল্।
– কিন্তু তুই না বললি, আন্টির সাথে যাবি কোথাও?
– ঐটা বাদ। পরে যাব। এটা আগে জরুরী।
মাহিরা জানতো তুরিন এটাই বলবে,
– ঠিক আছে আয়। আমি লোকেশন শেয়ার করে দিচ্ছি।
……………………
আসরের নামাজের পর মাহিরা শৈলীকে নিয়ে লিফ্টের কাছে আসতে আসতে মালিহাও বাসা থেকে বের হলো। নিচে নামা পর্যন্ত তিনজনে খোশ গল্পে মেতে ওঠে। তবে গাড়ির কাছে আসতেই অবাক হয় শৈলী। মিহরানকে এখানে এক্সপেক্ট করেনি ও। মাহিরা বান্ধবীর চাউনি দেখে হেসে দেয়,
– তুই ভাইয়াকে দেখেই টাশ্কি খেয়েছিস না? আমাদেরও একই অবস্থা হয়েছিল যখন উনি আমাদের সাথে শপিং যাওয়ার কথা বললেন। পরে বুঝলাম সে শুধু আমাদের ড্রপ করতে যাচ্ছেন।
শৈলী একবার সন্দেহের চোখে তাকায় মিহরানের দিকে। সেই সাদা পাঞ্জাবী পায়জামাই পরে গাড়ির সাথে ঠেশ দিয়ে দাড়ানো লোকটা। এতো বেশী সুদর্শন লাগছে যে শৈলী ভাষা খুজে পাচ্ছে না কিছু বলার। কিন্তু এই সুন্দর চেহারার পেছনে কি দুষ্টুমি লুকিয়ে আছে? কোন কারণে তিনি চাচ্ছেন ওদের সাথে শপিং এ যেতে?
চলবে।