পরিণয়_প্রহেলিকা #লেখিকা_সিনথীয়া #পর্ব_৩০

0
936

#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৩০
শৈলীর সন্দেহে ভরা দৃষ্টি মিহরানের নজর এড়ালো না। কিন্তু ছোট বোনদের সামনে কিছু বলার উপায় নেই বলে চুপ রইলো। চুপচাপ যেয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো ও। মালিহা সামনে বসলো ওর পাশে। আর মাহিরা আর শৈলী বসলো পেছনে। গন্তব‍্য বসুন্ধরা সিটি।

বসুন্ধরা থেকে বসুন্ধরা সিটির দুরত্ব বেশ টুকু হলেও এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ার দরূণ ওদের যাত্রা সময় লাগলো ১৫ মিনিটের মতন। এতোটা তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারবে, তাও আবার কোন যানজট ছাড়া, এটা কল্পনাতেই ছিল না কখনো। মাহিরা তো এতো উত্তেজিত ছিল যে ওর মুখ পুরো রাস্তায় একমিনিটের জন‍্যেও থামেনি, বকর বকর করেই চলেছে সে। শৈলীও কখনো কখনো সঙ্গী হয়েছে ওর কথোপকথনে, আবার কখনো হয়েছে মালিহা। তবে মালিহা বেশি একটা কথা জমাতে পারেনি কারণ সে ফোনে তার দোস্তকে সামলাতে ব‍্যস্ত। কয়বার যে তুরিন ফোন করেছে তার ইয়ত্তা নেই। ম‍্যাসেজের বন‍্যা তো বচ্ছেই। মালিহা এদিকে, ভাইয়ের পাশে বসে এতোবার ফোনও ধরতে পারছে না। তাও তো একবার বকা খেয়েই বসলো,
– কে এতোবার তোকে ফোন দিচ্ছে মালিহা?
-ততেমন কেউ না ভাইয়া, আমার বান্ধবী, তুরিণ।
-তো ফোন রিসিভ করছিস না কেন?
-হমম? করবো?

মিহরান ড্রাইভিং এর মাঝে একবার পাশ ফিরে চোখ রাঙ্গায়। ঠিক তখনই আবার ফোন ভাইব্রেট করে ওঠে। সাথে সাথে ফোন ধরে মালিহা,
-হ‍্যা তুরিন।

বাকি তিনজন সেই মুহূর্তে চুপ থাকায় তুরিনের গলা গমগম করে ওঠে গাড়ির ভেতর,
– কোথায়? তোরা কতোদূর? আমি তো চলে এসেছি?

মালিহা প্রমাদ গোণে। এই মেয়ে যেই লেভেলে এক্সাইটেড, ভাইয়ার না নিতে ওর একটু সময় লাগবে না। তাড়াতাড়ি বান্ধবীকে বাঁচাতে ওর কথায় ফোরণ কাটলো,
– তুরিণ, মেঝ ভাইয়া ড্রাইভ করছেন, আমার পাশেই বসা। তুই ওয়েট কর্, আমরা আসছি।

তুরিন বোধহয় বুঝলো বিষয়টা। শুধু ‘আয়’ শব্দটা বলে ফোন রেখে দিল। মিহরান ভ্রু জোড়া কুচকালেও কিছু বললো না, কিন্তু মাহিরা প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
– তুরিণ আপু আসছে নাকি আপু?
– হ‍্যা রে। ওরও নাকি কি কিনতে হবে।
– ও আচ্ছা।

গাড়ি বসুন্ধরা সিটির কাছাকাছি আসতেই মাহিরা ম‍্যাসেজ করলো তন্ময়কে। ও যখন থেকে শুনেছে তন্ময় আসবে, তখন থেকে ভীষণ রুপে এক্সাইটেড ও। কিন্তু একটা গুটলির সমাধান এখনো হচ্ছে না।

মালিহা যেরকম লাঞ্চের পরেই নিজের রুমে যেয়ে তুরিনকে ফোন দিয়েছিল, ঠিক সেভাবেই মাহিরাও দৌড়ে রুমে ঢুকে ফোন দিয়েছিল তন্ময়কে। তন্ময় ফোন ধরতেই একটা হাসি ছড়ায় ওর মুখে,
– তো মিস্টার তন্ময় আহমেদ। শুনলাম আপনি নাকি শপিং করতে আসছেন?
তন্ময় বোঝে মাহিরার দুষ্টুমি,
– হমম, ভাবছি গার্লফ্রেন্ডকে অনেকদিন গিফ্ট দেওয়া হচ্ছে না, তাই আর কি….
খিলখিলিয় হেসে ওঠে মাহিরা,
-বাব্বাহ্ গার্লফ্রেন্ডের জন‍্য গিফ্ট কিনতে যাবে তারই ভাই কে সাথে নিয়ে? আপনার দেখি সাহস বেড়েছে ভালোই।
– হমম। সাহস ছিল না কবে? ভদ্র মানুষ বলে দেখাই না শুধু বুঝলা।
মাহিরা স্মিত হাসি দেয়।
-আচ্ছা সিরিয়াসলি বলো তো, ভাইয়ার সাথে যাচ্ছো কোথায়?
-মানে?
-মানে আমাদের ড্রপ করে দিয়ে কই যাবা তোমরা?
– কাদের ড্রপ করে কই যাব আবার? কি বলছো তুমি মাহি?

মাহিরা এবার অবাক হয়। খাওয়ার সময় বলা মিহরানের কথা গুলো মনে করলো,
– ভাইয়া তো আমাদের বললো, তোমার সাথে নাকি কই যাবে আমাদের মলে নামিয়ে দিয়ে।
এবার তন্ময় অবাক,
– মিহরান এটা বলসে? কিন্তু আমাকে তো একটু আগে ম‍্যাসেজ করে জানালো মলে নাকি ওর কি শপিং আছে, তোমরাও যাচ্ছো, আমি যেন চলে আসি।
আকাশ থেকে পরে মাহিরা,
-হ‍্যা? ভাইয়া এইটা বলসে? ম‍্যাসেজ কখন দিসে তোমাকে?
– এই দশ মিনিটও হয় নাই।
-কি? আমাদের সাথে তো ভাইয়ার কথা হয়েছে প্রায় আধা ঘন্টা আগে। তাহলে কি আমাদের কথার পরে ভাইয়া তোমার সাথে প্ল‍্যান বানিয়েছে? কিন্তু ওর কথায় কিন্তু তা মনে হয় নি।
তন্ময় একটু চুপ করে থাকে, তারপর জিজ্ঞেস করে হঠাৎ,
– আচ্ছা তোমরা শপিং করতে কে কে যাচ্ছো বলোতো?
– হমম…আমি, মালিহা আপু আর আমাদের প্রতিবেশী, আমার বান্ধবী শৈলী। তুমি তো চেনোই ওকে।
ঠিক তখনই যেন তন্ময়ের কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যায়। আচ্ছা! ব‍্যাটার বের হওয়ার তাহলে এই কারণ।
তবে ও মাহিরা এখনই কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নিল। আগে ও একটু শিওর হয়ে নিক, তারপর সব বলবে। এখন বিষয়টাকে স্বাভাবিক করার জন‍্য বললো,
– হইতে পারে আসলেই আমাকে নিয়ে কোথাও যাবে ও। আগেই প্ল‍্যান করেছিল, বলেছে পরে। এরকম আমাদের ছেলেদের মাঝে হয়েই থাকে। ব‍্যাপার না।
আরো দু একটা কথা বলে মাহিরা তন্ময়ের ফোন রাখে। ওর মনের খচ্খচ্ রয়েই যায় একটু। নিজের মেঝ ভাইয়ের মধ‍্যে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন দেখেছে সে। সবকিছু মিলিয়েই একটু আজব লেগেছে মাহিরার কাছে।

নিজের স্মৃতির পাতা থেকে বের হতেই মাহিরা দেখে ওরা মলের দোড়গোড়ায় প্রবেশ করছে। কিছুক্ষণ পরেই মিহরান সবাই কে নামতে বলে ভেতরে যেয়ে ওর জন‍্য অপেক্ষা করতে বললো। ও গাড়ি পার্ক করে আসছে। মাহিরাও খোজ নিয়ে জেনেছে যে তন্ময়ও প্রায় চলে এসেছে।
বসুন্ধরা সিটির ছোট গেট টা দিয়ে ঢুকেই তুরিনকে দেখতে পেল মালিহা। তুরিনও দৌড়ে আসলো ওদের কাছে। ওকে জড়িয়ে ধরার পর আশ পাশ তাকিয়ে মিহরানকে না পেয়ে মালিহার দিকে প্রশ্ন নিয়ে তাকালো। মালিহা বান্ধবীর উৎকন্ঠা বুঝে ভরসার হাসি দেয়,
-গাড়ি পার্ক করে আসতেসে।
ততক্ষণে মাহিরা আর শৈলীও ওদের কাছে চলে আসে। মাহিরাকে দেখে খুশি হলেও শৈলীর উপস্থিতি কাটা দেয় তুরিনকে। কপাল কুচকে একভাবে তাকিয়ে থাকে, এই মেয়ে এখানে কেন?
মাহিরা তখন পাশেই এক খেলনার দোকানে একটা পপ্ ইট দেখে চেঁচিয়ে ওঠে,
– এই শৈলী চল্ তো, আমার ঐ পপ্ ইট টা কেনা লাগবে, চল্।
মালিহা শুনে অবাক। দিল ছোট্ বোনকে একটা ধমক,
– এই মাহি, তুই কি বাচ্চা নাকি? ঐ পপ্ ইট দিয়ে কি করবি তুই?
মাহিরা ভ্রু জোড়া একটু উঠিয়ে ঠোট টানে,
– তোমার তো আর জমজ কেউ হয় নাই আপু, তাই বোঝ না। তোমার ছোট ভাই আমার জীবন কতো ভাবে, কতো লেয়ারে কিমা করে সেটা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না আমি। ওর এই অত‍্যাচার থেকে রিলিফ পেতে আমি এই পপ্ ইট সাথে রাখি। আমার স্ট্রেস রিলিফে সাহায‍্য করে এটা। এবার বুঝছো?
মাহিরার কথায় বাকি তিনজনই হেসে দেয়। আসলেই এই দুই ভাই বোনের খুনশুটি দিনে চব্বিশ টা ঘন্টা লেগে থাকে।মাহিরা শৈলী চলে যেতেই তুরিন সেদিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
-এই মেয়েটা তোদের প্রতিবেশী না?
-কে শৈলী? হ‍্যা। রেহানা আন্টির মেয়ে। তুই তো আগেও ওকে দেখেছিস।
– হমম। কিন্তু আজকে ও এখানে কেন? তোদের সাথে এসেছে নাকি?
– হ‍্যা। মাহিরা আর শৈলী তো তোর আর আমার মতন জানের দোস্ত। শপিং এ ওকে সাহায‍্য করতে মাহিরা শৈলীকে সাথে করে এনেছে। আসলেই মেয়েটার রুচি খুবই সুন্দর।
মালিহা আদর দিয়ে কথা গুলো বললেও, তুরিনের ভালো লাগলো না। আসলে বোনদের ছাড়া মিহরানের আশপাশেও কাউকে সহ‍্য হয় না তুরিনের। সেখানে শৈলীর মতন সুন্দরই তো একে বারেই না।
– ঐযে ভাইয়া চলে এসেছে।
তুরিনের চিন্তায় ব‍্যাঘাত ঘটানোর জন‍্য পুরো বাক‍্য‍ না, ‘ভাইয়া’ শব্দটাই যথেষ্ট ছিল। ছিটকে তাকালো ও পাশে। আর সাথেসাথেই ওর ভার বেসামাল হয়ে পরলো। সাদা পাঞ্জাবী পরণে সামনে থেকে হেটে আসা মানুষটাকে দেখে তুরিন এক ঘোরে ঢুকে পরলো দ্রুত। মানব টাকে আজ মানব লাগছে না। সাক্ষাৎ আকাশ থেকে নেমে আসা কোণ দূত মনে হচ্ছে। আলো ছড়াচ্ছে যেন চারদিকে। আচ্ছা কে বলেছিল এনাকে এতো সুদর্শন হতে? এই ভাবে হতে থাকলে তো তুরিনের পাগল হয়ে যাওয়া নিশ্চিত।
মিহরান কাছে এসেই এপাশ ওপাশ কিছু খুজলো। মালিহার ওপর চোখ পরতেই প্রশ্ন ছুড়লো,
– মাহিরা, শৈলী ওরা কোথায়?
-ঐ দোকানটায় গিয়েছে ভাইয়া।
মিহরান ওদিকে পা বাড়াতেই তুরিনে ভ্রু কুচকালো। একি? ওকে কি মানুষটা দেখলোই না? মালিহা পেছন থেকে সাথেসাথেই ডাক দেয় মিহরানকে,
-ভাইয়া?
মিহরান পেছন ঘাড় ঘোরায় শুধু,
– আমার বান্ধবী, তুরিন।
মিহরান এবার খেয়াল করে যে মালিহার পাশেও আরেকটা মেয়ে দাড়ানো। শৈলী কোথায় আছে এই টেনশনে ও আগে দেখেইনি। চোখ ফেরালো ও মেয়েটার দিকে,
-ভালো আছেন?
তুরিন তড়াক করে তাকায়। মিহরান কথা বললো ওর সাথে..হায় হায়, আজ ওর মরণ নিশ্চিত।
-জজ্বি। আপনি…
– মালিহা তোরা আয়, আমি সামনে যাচ্ছি।
শৈলীর প্রশ্ন মাঝ পথে থেমে যায় কিন্তু মিহরান থামে না। ওকে সেই খেলনার দোকানটায় ঢুকে যেতে দেখে।

চলবে।

আজ শৈলী-মিহরানের প্রেম নিবেদন না লিখতে পারার জন‍্য অত‍্যন্ত দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here