#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_২৭
আজ ভার্সিটিতে শৈলীর প্রথম ক্লাসটাই মিহরানের সাথে পরেছে। এক দিক দিয়ে যেরকম ভীষণ এক্সাইটেড ও তেমনই আবার নার্ভানেসও কাজ করছে চরম ভাবে। করবে নাই বা কেন? লিফ্টের ভেতর যা করলো লোকটা! লজ্জায় শৈলীর পুরা মাথাই নাই।
নাহ্! মানুষটাকে যতটা ভদ্র মনে করেছিল শৈলী আসলে সেটা সে না। দুরন্ত পরিমানের দুষ্টু মানব সে!
শৈলীদের ডিপার্টমেন্টের ক্লাস হয় তৃতীয় এবং চতুর্থ তলায়। শৈলী সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে নিজের মনের মাঝে হঠাৎ ভয়ের আগমণ অনুভব করলো। দুদিন আগের ঘটনা গুলো না চাইতেও উঁকি দিল মস্তিষ্কে। নয়ন চঞ্চল হলো ওর। রিক আর ওর সাগরেদ দের খুজলো এদিক ওদিক। কিন্তু কাউকেই দেখলো না। অবাক হলেও মনটা শান্তও হয়ে গেল সাথে সাথে। ওদের চেহারা দেখলেই রক্ত গুলাবে শৈলীর এটা ও জানে। এতো সুন্দর প্রভাতে এমন একটা অনুভূতি ও কখনোই চায় না।
রুমে ঢুকতেই শৈলী যারপর নাই অবাক। এতো মেয়ে এক সাথে একটা কোর্সে ও এই দুই বছরে কখনো দেখেনি। ওদের সাবজেক্টে এতো মেয়েরা পরে সেটাই তো জানতো না ও। তাহলে প্রিতির কথাই ঠিক? মিহরান স্যারের জন্য এই ঢল্ নেমেছে?
এতো এতো মেয়েদের মাঝে নিজের বান্ধবীদের খোজাই মুশকিল হয়ে গেল শৈলীর জন্য। শেষ মেষ পেল তাদের মাঝামাঝি রো তে। দুইজন গল্পে পুরোই ডুবে আছে, শৈলীকে দেখতে পায়নি। এই সুযোগে পেছন থেকে যেয়ে প্রিতি কে যাপ্টে ধরলো শৈলী। কেয়া প্রিতি প্রথমে চমকে উঠলেও শৈলীকে দেখে খুশি যেন দ্বিগুন বেড়ে গেল ওদের। শৈলী পাশে বসতেই কেয়া শুরু করলো,
-তো যা জিজ্ঞেস করছিলাম, আমরা কবে দেখা করতে পারবো?
প্রিতির চেহারা লজ্জায় ঢাকা পরতেই শৈলী যা বোঝার বুঝে নিল,
-হমম। দেখা তো করতেই হবে এই অতিমানবের সাথে। কেয়া আমার কি মনে হয় জানিস। এই মানুষটার কোন সুপার পাওয়ার আছে। নয়তো যেই মেয়ে পারলে পৃথিবীর সব ছেলেকে নাকানি চুবানি দিয়ে বেড়ায়, তাকে কি না একজন কাবু করে ফেললো? এটা তো মিরাকেল!
শৈলীর কথার ধরনে কেয়া হো হো করে হেসে ফেললো। প্রিতিও হাসলো তবে মুখ লুকিয়ে। ডানপিটে প্রিতির এমন দিনও আসবে ও বোধহয় নিজেই সেটা কখনো ভাবেনি। আর আজ তো সব বাস্তবে হচ্ছে।
শৈলী এরপর প্রিতির দিকে সরাসরি তাকায়,
-আচ্ছা বল্ কেমনে কি হলো?
-কি হবে? কিছুই হয়নি তো।
– দেখ্ প্রিতি একদম কিছু লুকানোর চেষ্টা করবি না। এমনিতেই তলে তলে এতো দূর এগিয়ে গেলি, কিছুই বললি না। এখন আবার ঢং করিস? সব বল্ আমাদের।
প্রিতি কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেয়া একটা ধাক্কা দেয়। শৈলী কেয়ার দিকে তাকিয়ে, তারপর ওর চোখ অনুসরণ করে দরজার দিকে তাকাতেই দেখে মিহরান রুমে ঢুকছে। আশপাশে কিছু সময়ের মধ্যেই পিনপতন নিরবতা নেমে আসে। শৈলীও নিজেকে ঠিক ঠাক করে বসে। এরপর সরাসরি সামনে তাকায়।
মিহরান ঢুকেই প্রথমে সামনে তাকায়। চঞ্চল চোখ খোজে কাউকে, তারপর এক দিকে তা স্থির হয়। তুষ্ট হয়ে সাথেসাথেই চোখ নামিয়ে ফেলে ও। ক্লাস শুরু করে প্রথমে নিজেকে উপস্থাপন করে। তারপর কোর্সের সংক্ষিপ্ত বর্ণণা দেয়।
চতূর্থ সারিতে বসা শৈলী অপলক তাকিয়ে থাকে সামনে দাড়ানো সুদর্শন পুরুষটার দিকে। তার ঠোট দ্বয় দিয়ে বের হওয়া প্রতিটা শব্দ গভীর মনোযোগে শোনে। ভীষণ গম্ভীর ও একদম নিয়মনিষ্ঠ মাপে পড়ানো এই অধ্যাপকের সাথে গত রাতের বা আজ সকালের দুষ্টু মীহরানের কোন মিল পায় না শৈলী। কই শৈলী তো দেখেছে, মানুষটা মুখে হো হো করে না হাসলেও, তার চোখে আর ঠোটের কোণে হাসি খেলে। কিন্তু গত বিশ মিনিট ধরে ও লক্ষ্য করেছে, মিহরানের ঠোটে হাসি তো দূর, ঠোটের কোণায় ছিটা ফোটাও ভাজ পরার রেশ নেই। এতো পরিবর্তন কেমনে সম্ভব এক মানুষের মাঝে তাই চিন্তা করেই শৈলীর নাজিহাল অবস্থা। পাশে বসা কেয়ার ধাক্কা ও ফিসফিসানি আওয়াজে শৈলীর ঘোর কাটে।
– এই শৈলী? এভাবে হা করে কি দেখিস? মুখ বন্ধ কর্।
শৈলী চরম লজ্জা পায়। ওর অজান্তেই মুখ খুলে গেছে, খেয়ালই করেনি। দ্রুত নিজেকে ধাতস্থ করে আবার পড়ায় মন বসালো।
এক সময় ক্লাস শেষ হলো। মিহরান চলে গেল রুম থেকে। ওমনি সারা ক্লাস জুড়ে হই হই রব শুরু হলো। সবার মুখেই এক বিষয় নিয়ে আলোচনা: মিহরান স্যার। মিহরান স্যার কতো হ্যান্ডসাম, মিহরান স্যারের পার্সোনালিটি সুন্দর, মিহরান স্যার এই মিহরান স্যার ঐ। শৈলীর এসব আশপাশ দিয়ে শুনতে শুনতে মেজাজ পুরাই বিগড়ে গেল। মুহূর্তেই মুখ কালো রুপ ধারণ করে। প্রিতি পাশে থেকে ডাকতেই চোখ রাঙিয়ে তাকায় ও।
– ওরে বাবা! ভয় পাইলাম গো শৈলী। কি হইসে তোর? এরকম ভাবে রেগে আসিশ কেন?
কেয়াও ততক্ষণে ওদের জয়েন করেছে। এতোক্ষণ সিনিয়র তিনজন মেয়ের সাথে গল্প করছিল ও। শৈলী পাশে সব মেয়েগুলোকে দেখেই রাগে হিসহিস করলো,
– একজনকে নিয়ে এতো গান গাওয়ার কি আছে তাই বুঝলাম না। এভাবে পুরুষ মানুষ দেখে হা করে থাকার মানে হয়? নিজের ব্যক্তিত নামানো ছাড়া আর কিছুই না।
কেয়া শৈলীর রাগে ভরা কথা গুলো শুনেই হেস ফেলে। প্রিতি তাকায় অবাক হয়ে,
– এই তুই এইভাবে হাসছিস কেন?
– তো হাসবোনা? কার মুখে কি শুনছি দেখ। এখন এতো রাগ দেখাচ্ছেন আমাদের শৈলু ম্যাডাম, অথচ ক্লাসের আধা সময়ই সে নিজেই মিহরান স্যারের দিকে চোখ বের করে আর মুখ হা করে থেকেছেন। আমি তখন ধাক্কা টা না দিলে পুরো ক্লাসই এমন ভাবেই থাকতেন।
এবার কেয়ার সাথে প্রিতিও যোগ দিল হাসিতে। দেখে শৈলীর পিত্তি জ্বলে যাওয়ার অবস্থা। ইচ্ছা করছে, জোর গলায় বলে দিতে যে ওর সম্পূর্ণ অধিকার আছে তাকানোর, সেটা যেভাবেই হোক। অন্যদের আছে নাকি? কিন্তু আফসোস! শৈলী সেটা বলতে পারছে না।
ততক্ষণে কেয়া শৈলীর বাহু ধরে নিজের কাছে টানে।
-তবে বান্ধবী যাই বল্, এই মিহরান স্যারের মধ্যে একটা কিছু তো আছে। সুদর্শন হওয়ার সাথে সাথে স্যারের ব্যক্তিত্ব আসলেই সুন্দর। রুচিশীল মানুষ। দুই আড়াই সপ্তাহ হয়ে গেল, আজ পর্যন্ত তাকে উড়াধুরা ভাবে দেখিনি। আজকেই দেখ্ কি সুন্দর করে ফরমাল ওয়ারে এসেছেন। সিনিয়ার আপুরা তো এটা নিয়েই কথা বলছিল। ধুষর প্যান্টের সাথে তাকে কালো শার্টে ভীষণ মানিয়েছে। দিস ম্যান নোওস ফ্যাশন।
শৈলীর আর শুনতে ভালো লাগছিল না।
– তোরা এক জিনিস নিয়ে বকবক করতে থাক্। আমি গেলাম।
বলেই শৈলী আর দাড়ালো না। অবাকের চরম পর্যায়ে দাড়ানো প্রিতি আর কেয়াকে রেখে হনহনিয়ে বের হয়ে গেল।
————————–
বিকালে বাসায় ফিরে শৈলী ফ্রেশ হয়ে বসতে বসতে ওর মা এলো রুমে। নিপুণ বই পড়ছিলো শুয়ে শুয়ে, মাকে দেখে উঠে বসলো। রেহানা তার দুই মেয়েকেই বললেন,
– মাহিরার মা এসেছিলেন আজ সকালে। ঝুমার জন্য বাসায় বড় সর একটা প্রোগ্রাম হবে সামনে। দূরদুরান্ত থেকে আত্মীয় স্বজন আসবে। এখন ওনাদের বাসা আর নিচে নিশাত আপার বাসা মিলিয়েও জায়গা কাভার হচ্ছে না। তাই আমাদের সাহায্য চাচ্ছেন তারা।
নিপুণ জিজ্ঞেস করে,
– কি সাহায্য মা?
– আমাদের দুটো বেড রুম ছেড়ে দিতে হবে। ওনাদের আত্মীয়দের মাঝে দুটো পরিবারকে রাখতে চাচ্ছেন। এখন আমি তোদের আব্বুর সাথে কথা বলেছি। আমাদের তো কোনো আপত্তি নেই, তোদের কোনো সমস্যা আছে?
শৈলী আর নিপুণ একসাথেই এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ায়। ওদের কোনো সমস্যা নেই। রেহানা তুষ্ট হাসলেন। তার এই উত্তরই আশায় ছিল, কারণ তিনি জানেন তার দুই মেয়েই কতো অতিথি পরায়ন।
হঠাৎ নিপুণ বলে ওঠে,
-আচ্ছা মা, বাসায় তো তিনটা বেডরুম, আমাদের টা আর গেস্ট বেডরুম দিয়ে দিলে আমি আর আপুনি শুব কই?
রেহানা একটু চিন্তিত হলেন,
– সেটার চিন্তা আমিও করছি রে। দেখি একটা না একটা ব্যবস্থা তো হয়েই যাবে। এখন তোরা একটু রুম টা গুছিয়ে ফেলিস। তিন চারদিনের মধ্যেই মনে হয় তারা প্রোগ্রামের ডেইট ফেলবে।
রেহানা আরো কিছুক্ষণ মেয়েদের সাথে খোশ গল্প করলেন। তারপর বিকালের নাস্তা বানাতে চলে গেলেন।
……………
আজ সন্ধ্যার পর পর শৈলী ছাদে যায় না। মায়ের আপত্তি সত্বেও গতকাল একটা অজুহাত দিয়ে গিয়েছিল। আজ আবার কি বলবে? তাই একটু আকাশটাকে কালো হওয়ার সময় দিল ও। এই সময় ছাদে গেলে এমনিতেই মা কিছু বলবে না। আগেও গিয়েছে শৈলী, তাই উনি এই বিষয়ে অভ্যস্ত।
ছাদে উঠেই গতকালের মতন মিহরানকে শৈলী ফোন দেয়। রুমের দরজা খুলে আবারও ওর সামনে এসে দাড়ায় মানুষটা। শৈলীকে দেখেই হাত ঘড়ির দিকে তাকায়,
– আজ দেরী যে?
শৈলী ঠোট জোড়া টিপে,
– ভর সন্ধ্যায় মা আসতে দেয় না। তাই….
– ও আচ্ছা। চলুন ছাদে বসি।
চপল পায়ে ছাদে প্রবেশ করে শৈলী। পাশে মিহরান।
আজ শৈলী পন করেছে ও সামনে তাকিয়ে থাকবে। কোনো ক্রমেই সে মিহরানের দিকে তাকাবে না। আড়চোখেও না, সামনা সামনিও না। নাহলে মানুষটা ওকে লজ্জার আগুণে পুড়িয়ে মারবে।
গরম পরেছে আজ একটু। ছাদে সেরকম বাতাসও নেই। পুলের পানিও আজ স্থির হয়ে আছে। শৈলীর খুব ইচ্ছা করছিল পুলে নামতে। কিন্তু সেটা যেহেতু এখন কোনভাবেই সম্ভব নয় তাই, ও মাটিতে, পুলের পাশে বসে পা ডোবলো। অন্তত পায়ে তো শান্তি পাক।
মিহরান চুপচাপ দেখছিল তার নববিবাহিত স্ত্রীর কীর্তি। শৈলী যেভাবে সালোয়ার না উঠিয়েই সোজা পা ডুবিয়েছে তা দেখেই নিঃশব্দে হেসে ওঠে ও। মেয়েটা কেন এইকাজ করলো তাও বুঝতে অসুবিধে হয়নি। এখুনি এতো লজ্জা পায় এই মেয়ে, সম্পর্ক আরো আগালে ও করবে কি তখন?
নিজের ট্রাউসার গুটিয়ে শৈলীর পাশেই বসে পরলো মিহরান। নিজেরও পা ডুবিয়ে দিল। পানির চঞ্চলতার মধ্যে দুই জোড়া পায়ের পাতার দিকে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে ছিল শৈলী। পাশাপাশি বেশ মানিয়েছে ভেবেই হেসে ফেললো।
– হাসছেন যে?
শৈলী আচমকা হাসি থামায়,
-কিছু না।
– এমনিতেই হাসছিলেন?
-হম! হমমম।
একপলের নিরবতা আবার চলে। যথারীতি মিহরানই আবার শুরু করে,
– আজ আমার ক্লাস কেমন ছিল? পড়া বুঝেছেন ঠিক মতো?
সাথে সাথেই সকালের সব কথা মনে পরে যায় শৈলীর। হূট করেই বেজায় রাগ উঠে,
-আপনাকে একটা কথা বলি?
নিজের অর্ধাঙ্গিনীর কন্ঠে রুষ্ঠতা আঁচ করতে পারে মিহরান,
-বলুন।
– আপনি কালো শার্ট আর ভার্সিটি পরে যাবেন না।
মিহরান ভীষণ ভাবে চমকে তাকায়। এরকম আবদার শৈলীর থেকে ও কখনোই আশা করেনি। তবে এটা আবদার ছিল না আদেশ সেটা অবশ্য চিন্তার বিষয়। তবে যাই হোক, মিহরানের বিষয় টা বেশ মজা লাগে।
– বেশ, পরবো না। আর কিছু?
– আর আপনি এতো পরিপাটি হয়েও যাবেন না। এতো স্টাইল করার দরকার নেই।
-ওকে করবো না। আর?
– আর….
বলতে বলতে উত্তেজিত শৈলী পাশ ফিরে তাকায়। ওমনি মিহরানের দুষ্টুমি ভরা দৃষ্টিতে আটকা পরে ও। এতোক্ষণ রাগের মাথায় কি কি বলেছে বুঝতে পেরে ওর আত্মা শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথ ধরে।
– আর কি আদেশ আছে আমার জন্য, বললেন না তো মিসেস মিহরান।
শৈলী এই সম্মোধনে নড়ে ওঠে। মিহরান বেশ কাছে এসে ওকে কথাগুলো বলেছে দেখে লাজে নিভে যায়। নিজেও একটু পিছায়। তারপর মিহরান সোজা হতেই পানি থেকে পা উঠিয়ে দাড়িয়ে পরে। কথা ঘুরায়,
– আআপনার জন্য কফি বানাবো। কিচেনটা দেখিয়ে দিন।
মিহরান চোখে হাসে। তারপর উঠে দাড়িয়ে শৈলীকে ইশারায় সামনে আগাতে বলে। পুলের পাশের দরজা দিয়েই রুমে ঢুকে দুজন।
কিচেন কাউন্টারে যেয়ে শৈলী দেখে, একটা ঝুড়িতে সব সরঞ্জাম সাজানো। একটা একটা করে দেখে নেয় ও। সবই আছে।
– আপনার আর কিছু লাগবে শৈলী?
-না…সব আছে। তবে মগ..?
-ওও। দাড়ান দিচ্ছি।
মিহরান ওপাশে যেয়ে নিচ থেকে দুটো মগ্ বের করে দিল।
– আর কিছু লাগবে?
– না আছে সব।
-তাহলে আমি বাইরে আছি। আপনি আসুন।
শৈলী ছোট্ট একটা হাসি দেয় ওর দিকে তাকিয়ে। এই রুমে ও যে মিহরানের সাথে একা আনকম্ফর্টেবল তা বুঝেই মিহরান চলে যাচ্ছে।
ইশ! লোকটা দুষ্টু হলেও বেশ ভালো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই মগ কফি নিয়ে শৈলী বের হয়। মিহরানকে ছাদের কোণে রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সেখানেই যায়।
– আপনার কফি,
পেছনে ঘুরে কফি হাতে নেয় মিহরান। শৈলীও তারপর তার পাশে দাড়ায়। দুই চুমুক পর্যন্ত দুজনেই চুপ থাকে। ছাদে বাতাস না থাকলেও এই জায়গায় হাওয়ার একটু হলেও বেগ পাওয়া যায়। দুজনেই সেটাই উপভোগ করে কিছুক্ষণ। শৈলী তারপর কথা ওঠায়,
-ভাবির জন্য বাসায় প্রোগ্রাম হচ্ছে শুনলাম।
-হমম। আম্মুর সখ। ঘরের প্রথম নাতি বা নাতনি আসছে, তার আসার আগ থেকে সেলিব্রেশন শুরু করে দিচ্ছেন তিনি।
শৈলী হেসে দেয়,
– দাদী বলে কথা। ওনার বংশধর আসছে, উনি মজা করবে না তো কে করবে বলুন তো?
-হমম। তবে আমাদের মজার মাঝে আপনাদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
শৈলী প্রশ্নসূচক দৃষ্টি তোলে ওপরে,
– আমাদের কষ্ট?
– এই যে আপনাদের বাসায় আমরা অহেতুক হানা দিচ্ছি। এভাবে আপনাদের প্রাইভেসি নষ্ট করছি।
শৈলী বুঝতে পারে মিহরান ওদের রুমে গেস্টদের রাখার বিষয়টা নিয়ে কথা বলছে। ও হেসে দেয়,
– আরে এটা কোনো ব্যাপার না। প্রতিবেশীর হক্ এটা। সুখে দুখে একে অপরের কাজে আসবো। আপনি এরকম করে বললে আরও নিজেদের পর পর মনে হয়।
মিহরান দুষ্টুমি জড়ায় কন্ঠে,
– শুধু কি প্রতিবেশিই আপনারা? মানে..ইফ আই এ্যাম নট রঙ, ওটা তো আমার শ্বশুর বাড়ি। সো সেই দিক দিয়ে চিন্তা করলে আবার ঠিক আছে। পর পর লাগার সুযোগই নাই। সাহায্য নেয়াই যায়।
কফি মুখ থেকে উপচে, কাশি উঠে গিয়েছে আগেই শৈলীর। ইয়া আল্লাহ্! এই লোক একটা, একটাও সুযোগ ছাড়ে না ওকে লজ্জা দেওয়ার। কি দিয়ে বানানো এই মানুষটা? শৈলী সাথে সাথে কথা ঘোরানোর চেষ্টা করে,
– প্রোগ্রামের ডেট ঠিক হয়েছে?
– না। তবে হয়ে যাবে দু একদিনের মাঝেই। আচ্ছা ভালো কথা, আমাদের গেস্টরা আপনাদের বাসায় থাকলে আপনি থাকবেন কোথায়?
শৈলী একটু ধীরে উত্তর দেয়,
-হমমম… এটা নিয়ে কথা হচ্ছে। দেখি একটি ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
মিহরান শৈলীর দিকে সরাসরি তাকায়। মুখের গম্ভীরতা দেখে বোঝাই যায় কিছু একটা ভাবছে সে। তারপর মুখ খোলে,
– আপনি এখানে, আমাদের রুমে থাকবেন।
শৈলী হতভম্ভ হয়ে যায়, এই লোক বলে কি? ওনার সাথে একই রুমে? মাথা খারাপ নাকি?
– না না। আপনি কি পাগল? এখানে কিভাবে?
– শৈলী আপনাকে এই রুমে থাকতে বলেছি, আমার সাথে থাকতে না।
শৈলী চোখ বন্ধ করে মুখ কুচকায়,
-আবার! আবার এই মেয়ে উল্টা পাল্টা চিন্তা করেছে। উফফফ!
তবে মুখে তারপরেও প্রশ্ন টানে,
– এখানে কিভাবে? আমার বোনও আছে, ও…
– ও আপনার সাথে এখানে থাকবে। সমস্যা কোথায়?
-সবাই কি বলবে? বড়রা খারাপ চোখে দেখতে পারে।
– মোটেও না। মাহিরা, মালিহাকেও নিজেদের রুম ছাড়তে হবে। ওদেরও এখানে চলে আসতে বলবো। আপনারা চারজন এখানেই শুবেন।
– তাহলে আপনি?
– আমি কি?
– আপনি কোথায় শুবেন?
-দেখি।
শৈলীর এই উত্তরটা পছন্দ হয় না। টেনশন হয় ওর।
– না না আপনার কষ্ট হয়ে যাবে। আপনার রুম ছাড়ার দরকার নেই।
মিহরান হঠাৎ সরাসরি শৈলীর সামনে আসে,
– তাহলে কি করবো? থেকে যাব রুমে? এটা বরং একটা ভালো আইডিয়া। এক কাজ করি, আপনার ছোট বোনকে মাহিরার রুমে পাঠিয়ে দেই। মালিহা সহ ওরা দুজন একসাথে থাকলো। আর আপনি…আমার সাথে…
শৈলীর দম বন্ধ হয়ে আসে। সারা শরীর কেঁপে ওঠে। রেলিংয়ের সাথে একেবারে ঘেষে দাড়ায়ও। মিহরান ওদের মাঝের দুরত্ব আরেকটু ঘুচায়। শৈলী কিছু বোঝার আগেই আচমকা ওর বাম হাত তুলে নেয় নিজের কাছে। পর মুহূর্তেই শৈলী নিজের আঙ্গুলে একটি আংটির অবস্থান পায়। চোখ বড় বড় করে তাকায় ও,
-এএটা কি? এএটা তো…
-আমার তরফ থেকে আপনার জন্য। কেমন লেগেছে?
– এটা কেন দিচ্ছেন?
– কেন আমি দিতে পারি না?
শৈলী চুপসে যায়। কি বলবে এর প্রেক্ষিতে? মিহরান দিতে তো পারেই। কিন্তু…
শৈলীর চোখে মুখে ইতস্ততার ফোটা গুলো নজর এড়ায় না মিহরানের। ওর চোয়ালের নিচ হাত দিয়ে মুখ টা নিজের দিকে উঠায়। শৈলীর দৃষ্টিতে নিজের দৃষ্টি আটকায়। কন্ঠে টানে আবেগ,
– ধরে নিন এটা বাসর রাতের দেওয়া আপনার স্বামীর তরফ থেকে প্রথম গিফ্ট। বাসর হয়নি তো কি হয়েছে, গিফ্ট তো দেয়াই যায় তাই না?
চলবে।