#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_২৮
সেই সন্ধ্যার পর সময় পার হয় আরও দুদিন।সেদিন রাতে ছাদ থেকে ফেরার পর, শৈলীর অবস্থা হয় পুরাই নাজেহাল। ঐযে ও চিন্তা করেছিল না? স্টার জলসার নাইকাদের মতন ওর অবস্থা? ঠিক সেই রকম নাজেহাল। তাও তো মিহরান তেমন কিছু করেওনি ওর সাথে। শুধু দুরত্ব ঘুঁচিয়ে কাছেই এসেছিল। হাতটা ধরেছিল কেবল। তাতেই যেরকম লাজে সাতরাচ্ছে শৈলী, এর থেকে বেশী কিছু হলে তো তলিয়ে যাবে ও প্রেম সাগরে। খুজে পাওয়া অসম্ভব হবে ওকে তখন।
এই দুই দিনের মাঝে শৈলী মিহরানের আরও একটা ক্লাস পায়। তবে বেচারির এখানেও শান্তি মিললো না। সেদিন সকালেই মিহরানকে সবুজ চেকের একটা শার্ট পরতে দেখে শৈলী খুশি হয়। ও ভাবে, যাক্ আজ কালো শার্ট পরে নি বলে আর মেয়েগুলো সেভাবে তাকাবে না ওর স্বামীর দিকে। কিন্তু বোকা শৈলী বুঝলোই না, মেয়েদের আসল আকর্ষণ পরিধান না। ক্লাসে, আগের দিনের থেকেও বেশী হই হুল্লোড় শুনে শৈলী হতাশ। সবুজ শার্টে নাকি স্যারকে আরো মারাত্মক সুদর্শন লেগেছে। শৈলী এবার ঝিম মেরে বসে। বুঝতে পারে, এখন বরকে কুনজর থেকে বাঁচানোর জন্য রীতিমতো দোয়া সুরা পড়া শুরু করতে হবে ওকে।
এই দুদিনে সন্ধ্যার রুটিনে একটু ব্যাঘাত ঘটেছে। এক সন্ধ্যায় মিহরান বাইরে ছিল বলে শৈলীর সাথে সময় কাটানো হয়নি। আর গত রাতে হয়েছে যদিও, তবে সেটা একান্তে নয়।
সন্ধ্যায় মিহরান থাকবে ছাদে, এটাই জানিয়েছিল ও শৈলীকে। শৈলীও ঠিক সেভাবেই তৈরী হচ্ছিল যাওয়ার জন্য যখন ওর ফোনে মাহিরার কল্ আসে।
– হ্যা মাহি বল্।
– শৈলু, কি করিস?
-এই তো, কিছু না। কেন?
– ছাদে যাবি?
শৈলীর চোখ বড় বড় হয়। মাহিরা এখন ছাদে যেতে চাচ্ছে?
-ককেন? হহঠাৎ ছাদে কেন?
মাহিরার উত্তেজিত কন্ঠ শৈলীর কানে বাজে,
– আজকে বাসায় একটা আজিব কান্ড ঘটেছে জানিস?
– কি?
– মেঝ ভাইয়া, তার রুমে আমাকে আর আপুকে থাকতে বলেছে প্রোগ্রামের সময়টা। বিশ্বাস করতে পারিস?
শৈলী একটু বিভ্রান্ত হয়,
– এতে না বিশ্বাস করার কি আছে? বোনরা ভাইয়ের রুমে তো থাকতেই পারে। এখানে সমস্যা কোথায়?
– মহম। তুই ভাইয়া কে চিনিস না। চরম লেভেলের শুচিবাই মানুষ সে। আমরা বাকি চার ভাইবোন তো শিওর যে একটু হলেও ভাইয়া ওসিডির রুগী। তার রুমে থাকার কথা আমরা চিন্তাই করতে পারি না। ইভেন এতোদিন ভাইয়া ছিল না, আম্মু দাড়িয়ে থেকে বুয়াকে দিয়ে রুম পরিষ্কার করিয়ে দিত কিন্তু ব্যবহার করার ব্যাপারে আমাদের ওপর ছিল কঠোর নিষেধাজ্ঞা। সেই মানুষ কিনা এবার নিজে থেকেই আমাদের থাকতে দিচ্ছে। আমি আর আপু এটা শুনার পর থেকেই নির্বাক।
শৈলীর ঠোটের কোণে ভাজ পরে। কোথায় যেন ভালো লাগার বাতাস বয়। ফিরে যায় পরশু সন্ধ্যার সেই মুহূর্তে যখন মিহরান বিনা বাক্যে ওকে নিজের রুমে থাকতে বলেছিল। শুধু বলেই নি, রীতিমতো জোর দিয়েছিল। মাহিরা আর মালিহা আপুকেও তো রাখার পেছনে এটাই কারণ। ভাবা যায়? যেই মানুষটা নিজের ভাই বোনদের পর্যন্ত থাকতে দেয় না, সে নির্দ্বিধায় শৈলীকে থাকার জন্য অনুমতি দিল। এটাকেই কি বৈবাহিক বন্ধনের টান বলে?
-এই শৈলী? আবার কই হারিয়ে গেলি?
-হম? না এখানেই আছি। বল্।
– আমি ভাইয়ার রুমে যেয়ে দেখতে চাই, কোথায় শুবো বুঝলি? আমি তো পারলে সারা রাত পুলের পাশে কাটাই তবে আপু সেটা দিবে না। যাই হোক, সেটা পরের কথা, আগে রুমে যাই চল্।
-আচ্ছা।
ছয় মিনিটের মাথায় মাহিরা শৈলীকে নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দুই বান্ধবী ছাদে প্রবেশ করতেই মীহরানকে পুলের পাশেই দেখে ফোনে কথা বলতে। শৈলীর বুঝতে সময় লাগে না, মিহরান ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল।
পায়ের আওয়াজ পেয়ে মিহরান পেছনে তাকায়। শৈলীকে দেখে তুষ্ট হলেও নিজের ছোট বোনকে দেখে কপাল কুচকে যায়। মাহিরা এখানে কেন? একটু থম মেরে ওদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়েই ফোনে আবার মনোযোগ দেয় মিহরান। মাহিরা আর শৈলী ফিসফিস করে একপাশে দাড়িয়ে গল্প করে, মিহরানের ফোনালাপ শেষের অপেক্ষায়।
একসময় মিহরান ওদের কাছে আসে। পরণে কালো একটা টিশার্ট আর অফওয়াইট ট্রাউসার। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। শৈলী আগে মিহরানকে চশমা পড়তে দেখেনি। এই প্রথম। ও শুনেছিল ছেলেদের নাকি চশমা তে খুব মানায়, কিন্তু ওর কাছে এমন লাগে নি কাউকে কখনো। কিন্তু এইমুহর্তে শৈলী একদম ক্লিন বোল্ড হলো। নিজের মানুষ বলেই কি না জানে না তবে এই উজ্জ্বল তামাটে চেহারায় চশমা পরিধানরত মিহরানকে অতিরিক্ত পরিমাণে আকর্ষণীয় লাগলো ওর কাছে।
ওদের কাছে আসতেই মিহরান শৈলীর দিকে তারপর মাহিরার দিকে তাকায়। মাহিরা চেনে ওর ভাইয়ের এই ভাবলেশহীন চাহণী। ভাই নিজে থেকে ওর আসার কারণ জিজ্ঞেস করবে না। তাই মাহিরা নিজেই প্রশ্ন করে,
– ভাইয়া তুমি কি খুব বিজি?
– না। কেন?
-আসলে…ঐ যে তুমি বললা না তোমার রুমে আমরা থাকতে পারবো? তো সেটাই দেখতে এসেছিলাম যে কোথায় কে শুবে।
বোনের আসার অজুহাত শুনে বিরক্ত হয় মিহরান। কাবাবের হাড্ডি একটা!
– শোয়ার জন্য আবার দেখার কি আছে? রুম তো একটাই, খাট ও একটা।
-হ্যা..তা জানি…কিন্তু তারপরেও একটু দেখতে চাই। দেখি?
মিহরান এক দীর্ঘ চাউনি দেয় বোনের দিকে,
– দেখ্, যা।
মাহিরা খুশি হয়ে যায়।
– এই শৈলু আয়।
বলেই চঞ্চল মেয়েটা আর দাড়ায় না। শৈলীও বান্ধবীর ডাকে সাড়া দিয়ে পেছনে যেতে নেয়, কিন্তু শক্ত এক হাতের বাধনে আটকা পরে ও। চমকে ঘুরে তাকিয়ে দেখে এক হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে আরেক হাত দিয়ে শৈলীকে ধরে রেখেছে মিহরান। ঠোটে বাঁকা ছোট্ট হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। শৈলী ঘাবড়ে মাহিরার দিকে তাকায়। নাহ্ মেয়েটা সামনেই হেটে চলে গিয়েছে একদম রুম পর্যন্ত। তবে যে কোনো সময় পেছনে ঘুরতে পারে। এই ভেবে আবার চকিতে ঘোরে মিহরানের দিকে। তাকায় কপট রাগ আর আকুতি মেশানো এক দৃষ্টি নিয়ে,
– কি ফাজলামো করছেন? ছাড়ুন না।
মিহরান হাত তো ছাড়েই না বরং শৈলীর পাঁচ আঙ্গুলের মাঝে নিজের আঙ্গুলগুলো গলিয়ে দিয়ে আরও শক্ত করে বন্ধন। আরও কাছে এসে দাড়ায়। রুঢ় কন্ঠে শৈলীর কানের কাছে ঠোট নেয়,
– মাহিকে সাথে নিয়ে এসেছেন কেন?
মাহিরার ঘাড়ে আছড়ে পরে শব্দগুলো। একটু কেঁপে ওঠে ও,
– আমি আনিনি তো। ওই আমাকে নিতে এসেছিল।
– তো থামিয়ে দেননি কেন?
-কেমনে থামাবো? আজব তো?
মিহরান, মাহিরার উত্তরে থামে। চেহারাতে এবার ওনার কপট রাগ স্পষ্ট,
– থামাতে যখন পারেননি, এখন ননদের সামনেই এভাবে আমার হাতে বন্দি থাকবেন আপনি।
শৈলীর মুখটা করুণ হয়ে যায়। ঘুরে সরাসরি মিহরানের দিকে চায় ও,
-দেখুন, মাহিরা এখনো জানে না কিছু। এভাবে দেখলে আমাদের ভুল বুঝতে পারে ও।
-তাহলে চলুন সব সত্যি জানিয়ে দেই। তাহলেই তো হলো।
শৈলীর আত্মা কাঁপে। লজ্জায়, নার্ভানেসে না ভয়ে বোঝে না ও।
-এখনই জানিয়ে দিবেন?
– জানালে সমস্যা আছে?
– নননা…মানে, ও কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে।
– কে কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে?
শৈলী ঝট করে পেছনে ঘোরে। মাহিরাকে সামনে দেখে ভূত দেখার মতন ভয় পায়। মিহরানও বোনকে এভাবে আশা করেনি। আপনাতেই শৈলীর হাতটা ছুটে যায়। মাহিরা দুইজনের চাউনি দেখে একটু অবাকই হয় বৈকি,
-আমি কি ডিস্টার্ব করলাম কিছুতে?
শৈলী তাড়াতাড়ি সামলায়,
– না না। সস্যারের সাথে পিকনিকের সময় নিয়ে কিছু কথা বলছিলাম।
মাহিরার কপালের ভাজ সিথিল হয়,
– ওও আচ্ছা। আচ্ছা শৈলু, তুই না বললি পিকনিকে নাকি তোর সাথে কিছু হয়েছিল, আমাকে জানাবি। কই বললি না তো?
শৈলী আড়চোখে মিহরানের দিকে তাকায়, তারপর মাহিরাকে বলে,
-হমম বলবো তোকে। পরে।
মাহিরা মনে করে মিহরানের সামনে শৈলী হয়তো বলতে চাচ্ছে না। আফ্টার অল, ওর স্যার বলে কথা। বেশ ফরমাল সম্পর্ক। স্যারদের সামনে এসব কথা না বলাই ভালো। তাই বান্ধবীকে বাঁচাতে ও তৎপর হলো,
-হ্যা হ্যা। এগুলো নিয়ে পরে কথা হবে। এখন বাদ দে।
মাহিরা এরপর ভাইয়ের দিকে তাকায়,
– ভাইয়া তোমার রুম আমার খুব পছন্দ হয়েছে। থাকতে মজা লাগবে।
মিহরান ঠোট টানে,
– তোকে আমার বাসা ভাড়া দিচ্ছি না। দুই তিন রাত থাকতে দিচ্ছি কেবল। কোনোকিছু বেশী ধরাধরি করবি না। বুঝেছিস?
মাহিরা ততক্ষণাৎ মন খারাপ করে কাধ ঝাকায়। শৈলীকে পেছন থেকে একটু ধাক্কা দিয়ে ইশারায় বোঝায়
-বলসিলাম না? ভাইয়ার ওসিডির সমস্যা আছে? দেখ।
ভাই বোনের খুনশুটি খুব উপভোগ করে শৈলী। ঠোট টিপে হাসে। তখনই মিহরান হঠাৎ যেন মনে পরলো এমন ভাব নিয়ে কথা উঠায়,
– শৈলী আপনাদের বাসায় তো আমাদের গেস্টরা উঠবে, তাই না? তো আপনাদের থাকার অসুবিধা হবে না?
শৈলী কিছু বলতে চায় না। জানে ও কেন এই কথা তুলেছে মিহরান। এবং যার জন্য টোপ টা ফেলেছে, সেও চঞ্চলমনে সেই টোপ গিলে ফেললো। মাহিরা ব্যস্ত হয়ে বলে,
– আমিও ভাবছিলাম, শৈলী, এই একই কথা। আমার খালাতো দুই বোনকে নাকি তোদের রুমটা দেওয়া হবে। তাহলে তুই আর নিপুণ কোথায় থাকবি? আমাদের সাথে তোদের দুজনকে নিয়েই নিতাম…কিন্তু..ভাইয়া…
মাহিরা চোরা চোখে নিজের ভাইয়ের দিকে তাকায়। মিহরান যেন বোঝে ওর কথা,
– শৈলীদের যদি সমস্যা না থাকে, তাহলে এখানে ওনারাও থাকতে পারেন।
মাহিরার মুখে চারশো চল্লিশ ভোল্টের আলো জ্বলে ওঠে।
-সত্যি ভাইয়া? পারবে শৈলীরা থাকতে?
মিহরান চোখ রাঙায়। মাহিরা তাতেই বুঝে এই মানবকে আর ঘাটানো ঠিক হবে না। কখন না কখন আবার মত পাল্টে ফেলে। মাহিরা ততক্ষণাত চুপ হয়ে যায়।
মিহরান মাহিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
– রাত হয়েছে, যা পরতে বস্।
মাহিরার এই সন্ধ্যায় কতোবার যে মুখের ভাব পাল্টায়। যেমন এই মুহূর্তে ওর কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো,
– ভাইয়া, আমি কি স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী নাকি যে সন্ধ্যা হলেই রুটিন দেখে পড়তে বসতে হবে। এখন ভার্সিটিতে পড়ি আমি। কিছুটা তো ছাড় দাও।
মিহরানের চোখ রাঙানো থামে না,
– পরশু থেকে মানুষে ভরে যাবে বাসা। পড়া উঠবে তোমার মাথার ওপর তখন। আগামী মাসের প্রথমেই যে মিড এক্স্যাম সেটা মাথায় আছে না সেটাও ভার্সিটি ওঠার খুশিতে ভুলে গিয়েছিস?
মাহিরা ঢোক গিলে। আসলেই ও পরীক্ষার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো। ভাইয়ের আদেশে আবার চোখ তুলে,
– এখনই যেয়ে পড়তে বস্। আমি কিছুক্ষণ পর নিচে নামছি। তোর পড়া দেখবো কতোদূর এগিয়েছে।
মাহিরা রীতিমতো ঘাবড়ায়। এই মেঝ ভাইয়ের হাতে পরলে ও শেষ। তারচেয়ে ভালো চুপচাপ যেয়ে ও পড়তে বসুক।
শৈলীর দিকে তাকায় মাহিরা,
– চল দোস্ত।
শৈলী কদম বাড়ানোর আগেই মিহরান মুখ খোলে,
– শৈলী এখন যাবে না। ওনার আমার সাথে ডিপার্টমেন্টের কিছু কাজ আছে। তুই যা।
মাহিরা সরল মনে কাধ ঝাকায়।
-আচ্ছা। শৈলী তোকে রাতে কল্ দিব নি। এখন যাই রে।
শৈলী শুধু একপাশে মাথা কাত করে। মাহিরা নিচে নেমে যেতেই, মিহরানের দিকে ঘোরে। দুষ্টুমির ছলে প্রশ্ন ছোড়ে,
– আমাকে থামালেন কেন? আমিও বাসায় যেয়ে পড়তে বসতাম? মিড তো আমারও আছে। বোনের পরীক্ষা টা ঠিকই খেয়াল রাখলেন আর আমার বেলায়?
মিহরান ঝট্ করেই ধরতে পারে মাহিরার অভিব্যক্তি। আবার হুট করেই হাত গলিয়ে মুঠোবন্দি করে বন্ধন। শৈলীকে কাছে টেনে নেয় আবার,
– আপনার একা পড়ে কাজ কি, বলুন তো? আপনাকে পড়ানোর জন্য তো সয়ং আপনার স্যার সামনে দাড়ানো। পুরো সিলেব্যাস শেষ করে দিতে পারি চাইলে। মিড, ফাইনাল সব। দিব?
শৈলী লাজে মুখ ফেরায়,
-ধ্যাত!
…………………………
যখন ওপরে মিহরান আর শৈলীর প্রেমালাপ চলছে, তখন ঠিক তাদের নিচ তলায় মালিহার রুমেও চলছে প্রেম নিবেদনের কথোপকথন। রায়হানের কথায় খিলখিল করে হাসছে মালিহা। হাসবেই না কেন? মানুষটা কথায় কথায় লজ্জা দেয়। নানান বায়না ধরে। এতো লজ্জা দেওয়া বায়না সেগুলো, মালিহা পারেনা শুধু মরে যেতে। এখন যেরকম রায়হান বায়না ধরেছে কাল ওকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে, ঢাকার বাইরের ওর বন্ধুর একটা রিসোর্টে। ডে ট্যুর। আরও বন্ধুরা যাচ্ছে ওর। মালিহার এইসব জিনিসগুলো আবার পছন্দ না। মন সায় দেয় না।
অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে মালিহা কালকের ব্যাপারটা টলাতে পেরেছে। রায়হান ভালোই মন খারাপ করেছে কিন্তু বুঝেছে ওর কথা। এটাতেই খুশি হয় মালিহা।
রায়হানের সাথে কথা শেষ করেই তুরিনকে ফোন দিল মালিহা। তুরিনকে ভাবীর সাদের জন্য দাওয়াত দিতেই ফোন দিচ্ছে। আমন্ত্রণ পেয়ে তুরিনের তো খুশির কোনো শেষ নেই। দুই তিন দিনের প্রোগ্রাম মানে, দুই তিন দিন একটানে মিহরানকে দেখা যাবে। আর কি লাগে জীবনে?
দুই বান্ধবী মিলে কোন ইভেন্টে কি পরতে পারে, কোন থিম মেইনটেইন করবে তার আলোচনায় মত্ত হলো।
……………
এক অপরের হাতে হাত জড়িয়েই ছাদের থেকে বের হয়ে সিড়ির রাস্তা ধরলো মিহরান শৈলী। ঠোটে হাসি নিয়ে চুপিচুপি কথা বলতে বলতে নামলো দুজন। নিজেদের মাঝের ইতস্ততা কমছে তাদের। সাচ্ছন্দতা বাড়ছে। না বাড়লে একে অপরকে চিন্তে পারবে কিভাবে, জানবে কিভাবে? পথ চলা শুরু করতে হবে তো। আজ অবশ্য মিহরান একটা সিরিয়াস কথা আলোচনা করেছে কিছুক্ষণ আগে। ও চাচ্ছে দুই পরিবারকে সব বলে দিয়ে বিয়েটা অফিশিয়ালি করে ফেলতে। এভাবে লুকিয়ে দেখা করা তার ভালো লাগছে না। বৈধ সম্পর্ক অবৈধতার নিয়মে চলুক এটা চায় না ও।
মিহরানের উচ্চারিত প্রতিটা শব্দই শৈলী বুঝেছে। ও নিজেও সহমত পোষণ করে এই বিষয়ে। কিন্তু ও আটকে আছে, এক বিষয়ে। ওর বাবা। শৈলী জানে, ওর বাবা কতো ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড মানুষ। এরকম চেতনার ব্যক্তি তার মাত্র ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে পড়া মেয়েকে জীবনে বিয়ে দিবে না এখন। সাথে সাথেই প্রপোসাল নাকচ করে দিবে, তা সেটা যতই ভালো হোক না কেন। উনি তার দুই মেয়েকেই এটা শিখিয়ে বড় করেছেন যে তাদের নিজেদের পায়ে দাড়াতে হবে। তারপর সংসার। মিসেস রেহানাও তো জব করেছেন অনেক বছর। পরে শারীরিক কিছু জটিলতার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন।
মিহরানকে এই বিষয়ে সবটা বলতেই ও কিছুটা গম্ভীর ভাবে চিন্তা করে। তারপর এক বাক্যেই আলোচনার ইতি টানে ও,
– ভাবীর এই প্রোগ্রাম টা যাক্, তারপর ভেবে চিন্তে আগাবো।
শৈলী সন্তুষ্ট হয় এই উত্তরে।
চলবে।