আনন্দ_অশ্রু #পর্ব_১৪

0
163

#আনন্দ_অশ্রু
#পর্ব_১৪
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি

তোমার কপালে একটা চুমু দেওয়ার অধিকার আমাকে দিবে আসু?

রেহানের এমন আবদার শুনে মায়া ঠোঁটে মিষ্টি হাসি টেনে উত্তর দেয়,

এতো দিনে স্বামীর কাজের মত কাজ করার কথা বললেন। সেই কবে থেকে অপেক্ষা করছি, কখন আপনি আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিয়ে নিজের ঘরে আনবেন। অবশেষে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটলো।

মায়ার কথা শুনে রেহান দুষ্টু হেসে বলে,

ওহহ তার মানে আমার বউ এতো দিন ধরে আমার অপেক্ষা করছিলো। তা বউ এতো দিন অপেক্ষা করার দরকার কী ছিলো সোজা চলে আসতে আমার কাছে তাহলেই তো হতো শুধু শুধু বাসর সারতে দেরী হলো।

প্রথম বার আপনার কাছে ভালবাসার প্রকাশ করতে এসে ফিরে যেতে হয়েছে, যদিও সেটা আমার জন্যই হয়েছে। এবার স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আপনার কাছে আসলে যদি আবার ফিরিয়ে দেন তাই আসিনি। অপেক্ষায় ছিলাম আপনি কখন এসে বলবেন আসু তোমাকে খুব ভালোবাসি,আমাদের মধ্যকার দূরত্ব এবার কমাতে চাই? আমি আপনার আত্মপ্রকাশ শোনার অপেক্ষায় ছিলাম।

আসু আমি জানি তুমি আমার অপেক্ষায় ছিলে, আর আমি এটাও জানি তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়া তে তুমি কষ্ট পেয়েছো আমার ওপর অভিমান করেছো তাই তোমার অভিমান গুলো দূর করতে একটু সময় নিয়েছি।

আপনি আমার ভালোর জন্যই আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। এই জন্যে আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। আপনি না চাইলে আমি কখনোই এমন একটা সুন্দর জীবন উপহার পেতাম না। আপনার ওপর কোনো অভিমান বা অভিযোগ আমার নেই। আমি এতো দিন অপেক্ষায় ছিলাম আপনি কবে আমাকে জোর দিয়ে অধিকার খাটিয়ে বলবেন আসু আমাকে আপন করে নাও।

আজ যদি আমি আমার অধিকার টুকু নিতে চাই তুমি কী আমাকে অনুমতি দিবে?

যেই পুরুষটার কাছ থেকে ভালোবাসা শিখেছি, যেই পুরুষটার বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় রাত জেগেছি,যার কথা ভেবে প্রতিদিন বউ সাজতে ইচ্ছে হয়েছে, সেই পুরুষকে আজ আমি আমার করে পেতে চাই। আপনি কী আমাকে আপনার বুকের বাপাশে একটু জায়গা দিবেন?আপনার হৃদস্প্দনের শব্দে নিজের নাম শুনতে চাই, আপনার সাথে ভোরের আলো আর রাতের অন্ধকার দেখতে চাই, জীবনের শেষ মুহূর্তে আপনার হাতে হাত রেখে কাধে মাথা রেখে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চাই, আপনি কী এতো কিছুর অধিকার আমাকে দিবেন?

মায়ার কথা গুলো শুনে রেহানের চোঁখে অশ্রু চিকচিক করছে ঠোঁটে মিষ্টি হাসি টেনে মায়াকে জিজ্ঞেস করে,
শুধু এতোটুকুর অধিকার চাও আর কিছু চাই না তোমার?

আপনার বুক পকেট হতে চাই সারা দিন আপনার বুকের সাথে লেপ্টে থাকবো আর আপনার হৃদস্পন্দন শুনবো, আপনার আদুরে স্বরে নিজের নাম শুনতে চাই, আপনার নিরাময়হীন অসুখ হতে চাই, কাজ থেকে বাসায় ফিরে ক্লান্ত চাহুনিতে আপনার মুখ খানা দেখে সতেজ হতে চাই। আপনার বুকে মাথা রেখে শান্তির ঘুম ঘুমাতে চাই। আপনার এই সুরক্ষিত হাতের ভাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চাই, এইগুলো দিতে কী খুব বেশি কষ্ট হয়ে যাবে আপনার?

রেহান মায়ার কথায় হেসে দেয়, চোঁখ থেকে একফোঁটা জল টুপ করে নিচে পরে যায়। মায়ার কপালে ভালোবাসার এক গভীর পরশ এঁকে দেয়। মুচকি হেঁসে বলে,

খুব ভালোবাসি তোমায়, এতটা ভালবাসি যেটা তুমি কোনো কিছু দিয়ে পরিমাপ করতে পারবে না। আমার ভালোবাসার ঘনত্ব মাপতে গেলে তুমি নিজেই এক গোলক ধাঁধায় ফেঁসে যাবে। অনেক তো অপেক্ষা করেছো আর একটু অপেক্ষা না হয় করো তারপর তোমাকে নিজের করে নিবো এইবার আর ফিরিয়ে দিবো না।

রেহানের কথায় লাজুক হাসলো মায়া। রেহান মায়ার মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

এক্ষনি যতো লজ্জা পাওয়ার পেয়ে নাও যেদিন এই ঘরে আমার বউ সেজে ঢুকবে সেদিন কিন্তু লজ্জা পাওয়ার সময় দিবো না। তখন কিন্তু বলতে পারবে না আমি আগে সতর্ক করিনি। এখন চলো নিজের ঘরে গিয়ে বেশি করে লজ্জা পাও। এখানে আমার সামনে এমন করে লজ্জা পেলে আমি আমার লজ্জা শরম সব ভুলে যাবো।

মায়া রেহানের কথা শুনে আহাম্মক হয়ে গেছে। মনে মনে বলছে, এই লোকটাকে বোঝা বড় দায় কখন কোন মুডে কথা বলে বোঝা যায় না। মায়াকে এমন বোকার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে রেহান বলে,

কী হলো যাচ্ছো না কেনো? তোমার কী আজই বাসর কাজ শেষ করার নিয়ত নাকি?

মায়া এবার চোখে মুখ খিচকে বলে,
ওফফ, আপনি বড্ডো বেশরম, নির্লজ্জ্ব। বলি আমাকে যেমন ভাবে নিয়ে এসেছেন ঠিক তেমন করে দিয়ে আসেন। আমার মাথা ঘুরাচ্ছে আমি হাটতে পারবো না।

ইসস হয়েছে আর বাহানা করতে হবে না, বললেই তো হয় আবার আমার কোলে চরার ইচ্ছে হয়েছে। মেয়েরা এত বাহানা কই পায় আমি বুঝি না।

কথা গুলো বলেই মায়াকে আবার কোলে তুলে নিলো। ভ্রু কুঁচকে রেহানের দিকে তাঁকিয়ে আছে মায়া। রেহান মায়াকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে আবার ড্রয়িং রুমে আসে। তানজিলকে ডেকে কিছু জরুরী বিষয়ে কথা বলে। তারপর নিজের ঘরে গিয়ে রাজার হালে শুয়ে পরে। দেখে মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ জয় করে এসে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে।
_______________

সকাল বেলা সবাই নাস্তার টেবিলে হাজির। নাফিসা আর মায়া পাশাপাশি বসে আছে শাফায়াত আর রেহান পাশাপাশি বসে আছে। নাফিসা আর মায়া আস্তে আস্তে কথা বলছে তাদের কথা বলার মূল টপিক হচ্ছে শাফায়াত আর আলোচনা টা হচ্ছে এমন,

দোস্ত,শাফায়াত কী ওই মাছি গুলারে পছন্দ করবে? যদি আমার বাংলিশ রসগোল্লা বাঙ্গালী মাছির প্রেমে পরে তাইলে আমার কি হইবো?(নাফিসা)

আরে দোস্ত, তোরে বলছি না তোর কাকার বউ তোর সাথে আছে এতো চাপ নিস না। আগে দেখি বাঙ্গালী মাছি গুলো কেমন। আগে বুঝিয়ে বলবো না বুঝলে বুঝিয়ে দিবো।

দুইজনের খুচুর ফুচর দেখে শাফায়াত মিটি মিটি হাসছে আর রেহানকে বলছে,

ছোটো শ্বশুর, মেয়ে বিদায় দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে নেন। কিছু দিনের মধ্যেই আপনার বাড়ী অন্ধকার করে আমার বাড়ী উজালা করবো ইনশাহ আল্লাহ।

শাফায়াতের কথা শুনে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে রেহান। একবার নাফিসার দিকে আর একবার শাফায়াতের দিকে তাকাচ্ছে। এক গ্লাস পানি খেয়ে শাফায়াত কে বলে,

তোকে বলেছিলাম হয় ভাই নয়তো কাকা ডাকতে তুই তো সোজা শ্বশুরে চলে গেলি। এতো গতি ভালো না গতি কমা। নয়তো বাংলা ছবির ভিলেন শ্বশুর হতে বাধ্য হবো।

যে নিজেই বউয়ের জন্য কাদে সে আবার জামাইকে কাদাবে ব্যাপার টা হাইস্যকর। এমন কিছু বলেন যেটা শুনে আমার অন্তরাত্মা কেপে উঠে।

এরে শাফায়াত তোর কপালে যে কষ্ট আছে এটা আমি রেহান বলে দিলাম। দেখবি আমি যদি তোরে নাও কাদাই অন্য কেউ তোর জন্য দুঃখের ডালা রেডি করে নিয়ে বসে আছে। তুই বুদ্ধিমান ছেলে আশা করছি এখন তোর অন্তরাত্মা কেপে উঠছে।

কথাটা বলেই একটা ডেভিল হাসি দিলো রেহান। রেহানের হাসি দেখে শাফায়াত নাফিসার দিকে তাকায় নাফিসাও শাফায়াতের দিকে তাকায়। দুজনের চেহারার মানচিত্র একই। একজন শ্বশুরের হুমকিতে চুপসে আছে আর অন্য জন বাঙলিশ রসগোল্লা হারানোর ভয়ে।

নাস্তা শেষ করে সবাই যে যার কাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। মায়া নাফিসা নিজেদের ঘরে তৈরি হচ্ছে। হুট করেই রেহান দরজায় টোকা দেয় দরজার সামনে রেহানকে দেখে নাফিসা ঝগড়ার সুরে বলে,,

ওফফ, তোমার জন্য কী একটু শান্তিতে কোনো গোপন আলোচনা করতে পারবো না নাকি?

এই টিকটিকি তোর সাথে এখন ঝগড়া করার মুডে আমি নেই। তাই এই ঝগড়াটা তোলা থাকলো পরে এটার শোধ নিবো। এখন বাইরের যা বড় ভাবী তোকে ডাকছে কী যেনো কথা আছে।

নাফিসা চেহারায় বিরক্তি ভাব নিয়ে চলে যায়। আর এদিকে রেহান মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদুরে স্বরে বলে,

বউ তোমাকে গতকাল থেকে খুব মিস করছি, এখন চুপ চাপ দাড়িয়ে থাকবা আমি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরবো আর এক ডরজন চুমু খাবো। যদি কোনো প্রকার বিরক্ত করো তাহলে চুমুর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হবে, নাও চয়েজ ইজ ইউরস।

জড়িয়েই ধরে আছেন কিছু বলি নাই, চুমু খান কিছু বলবো না কারণ আপনার বউকে আপনি চুমু খাবেন এতে আমার কিছু বলার নেই।

আরে বাহ তোমাকে তো আমি নিরামিষ ভাবতাম এখন দেখি একটু আমিষও আছো।

হুমম আপনার কৃপায় এটাও হয়ে গেছি।

গুড এখন দাড়িয়ে থাকো। কোনো কথা বলবে না আমি আমার কাজ শেষ করে চলে যাবো। হসপিটালে তো আর তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না তাই এখনি একটু বেশি করে জড়িয়ে ধরে নেই।

রেহানের হসপিটালে যাওয়ার কথা শুনে মায়া রাগী স্বরে রেহানকে জিজ্ঞেস করে,
আপনি আজ আবার কেনো হসপিটালে যাবেন শুনি?

রেহান মায়ার প্রশ্নের উত্তর দেয়,
তোমাদের হসপিটালে খুব সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে আছে। তাদের দেখতে যাবো। কেনো তোমার কোনো সমস্যা?

#চলবে………………….

(আসালামুয়ালাইকুম সবাইকে আজকে দেরিতে গল্পটা দেওয়ার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। কিছু ব্যাক্তিগত কাজের জন্য আজকের পর্বটা একটু ছোটো হয়ে গেছে। আগামী কাল একটা দৈত্যাকার পর্ব দিবো। অনুগ্রহ করে কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না। উৎসাহ দিয়ে পাশে থাকবেন। আল্লাহ্ আপনাদেরকে আরশে ছায়া তলে রাখুক আমীন।)

গল্পটি সম্পর্কে (রিভিউ) আলোচনা সমালোচনা করুন এই গ্রুপে।(যেকোনো গল্প খুজতে আমাদের গ্রুপটি ব্যবহার করতে পারেন)

গ্রুপ লিঙ্ক👇
https://www.facebook.com/groups/273212672043679/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here