আনন্দ_অশ্রু #পর্ব_৮

0
159

#আনন্দ_অশ্রু
#পর্ব_৮
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি

রহিমা বানুর সাথে গল্পে মজে আছে মায়া আর নাফিসা। তানজিল, হাইউল আর মমিন গেছে এয়ারপোর্টে রেহানকে রিসিভ করতে। তিশা গেছে স্কুলে আর্শি, আনাম আর নিতুলকে আনতে। তিশাও তানজিলদের সাথে যেতে চেয়েছিল কিন্তু রেহান তাকে যেতে মানা করেছে এই নিয়ে ভিতরে ভিতরে খুব রেগে আছে তিশা কিন্তু রেহানের কথার ওপর কথা বলার সাহস তার নেই। তিশা খুব ভালো করেই জানে রেহান দেখতে যতোটা সরল গোপনে সে খুব জটিল তাই সরাসরি রেহানের কোনো ক্ষতি সে করতে পারে না।

বাড়ির বাইরে গাড়ির হর্ন শুনা যাচ্ছে মায়া শক্ত করে নাফিসার হাত ধরে আছে। নাফিসা খুব ভালো করে মায়ার অবস্থাটা বুঝতে পারছে। দরজার বেল বাজতেই নাফিসা দৌঁড়ে গিয়ে দরজার খুলে দিলো একে একে সবাই ভিতরে প্রবেশ করলো রেহান সোজা চলে গেলো বসার ঘরে, রহিমা বানুকে সালাম করে হাতে চুমু খায় রেহান। এতো গুলো দিন পর ছেলেকে চোখের সামনে দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে কিছুক্ষন মায়ের সাথে কথা বলে তারপর সবার সাথে শাফায়াতের পরিচয় করিয়ে দেয়।শাফায়াত রহিমা বানুকে সালাম জানায় তারপর একে একে সব বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে শুরু করে ওর বাংলা শুনে তানজিল সহ সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

রেহান, তুই তো বলেছিলি শাফায়াত কোনোদিন বাংলাদেশে আসেনি কিন্তু ওর বাংলা শুনে তো মনে হচ্ছে ও কোনো দিন বাংলা ছেড়ে বিদেশে যায়নি।(তানজিল)

প্রথম যখন ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম তখন আমারো এমন মনে হতো পরে আস্তে আস্তে ব্যাপার টা হজম হয়ে গেছে।(রেহান)

সবই বুঝলাম কিন্তু একটা কথা আমার হজম হচ্ছে না সেটা হলো,শাফায়াত তোর বন্ধুর ভাই তোর বন্ধু আমাকে ভাবী ডাকে কিন্তু শাফায়াত আমাকে আন্টি ডাকলো কেনো ওর তো ভাবী ডাকার কথা তাই না?

ওহো এতক্ষনে বুঝলাম ও কেনো আমাকে ভাইয়া না ডেকে স্যার কেনো ডাকে?

কি বুঝলি তুই?

সেটা এখন তুমি বুঝবে না। ওকে সুন্দর করে জামাই আদর করো বুঝলা আমিও ওকে আজ থেকে জামাই আদর দিবো।

কী বলছিস বুঝতে পারছি না?

তোমার এতো বুঝতে হবে না, এখন বলো আমার মায়ারানি কে কোন নির্বাসনে পাঠিয়েছো।ঘন্টা হয়ে গেছে বাড়ি এসেছি কিন্তু একবারো তাকে দেখলাম না।

মায়া নিজ থেকে আর তোর কাছে ধরা দিবে না আর একটু কষ্ট করে নিজেই খুঁজে বের কর।

ধুর বিয়ে করছি ছয় বছর হলো এখনও যদি বউ লজ্জা পায় তাইলে কেমনে কি?

সেটা তোর ব্যাক্তিগত সমস্যা আমি তোর ভাবী তাই ইন ডিটেল বলতে পারবো না। খুব সমস্যা হলে কাল বউকে নিয়ে চেম্বারে চলে আসিস প্রবলেম সলভ করে দিবো।

তুমি ছিলে বলে এতটা নিশ্চিন্তে ছিলাম ধন্যবাদ ভাবী এখন শুধু বউয়ের রাগ ভাঙ্গার অপেক্ষা তারপর তোমার কাছে যাবো তুমি চিন্তা করো না।

মজার ছলে কিছুক্ষন দুজনে কথা বললো তারপর রেহান চলে গেলো নিজের ঘরে ফ্রেশ হতে। আর এদিকে শাফায়াত নিতুল আর আনামের সাথে ভাব জমিয়ে ঘী বানিয়ে দিয়েছে। আর্শি শুধু শাফায়াতের আসে পাশেই থাকে। নাফিসা রেহানের সাথে একটু কথা বলেই চলে যায় মায়ার কাছে।শাফায়াত সবার সাথে গল্প করলেও তার চোখ দুটো খুঁজছে নাফিসাকে। শুধু নাফিসাকে সামনা সামনি দেখবে বলে এতো দূর থেকে সে এসেছে। কিন্তু বাড়িতে আসার পর সে শুধু একটুর জন্য নাফিসাকে দেখতে পেয়েছে তারপর আর দেখা মেলেনি তার বাঙালি রমণীর। ব্যাথিত হৃদয়ে এক চিলতে আশা নিয়ে আড্ডা ছেড়ে চলে গেলো তার জন্য বরাধ করা ঘরে।

রেহান বাসায় আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল তারপর সবার সাথে গল্প করতে করতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যায়।
রাতের খাবার রেডি এক এক করে সবাই হাজির হলো কিন্তু মায়া এলো না। রেহান খুব ভালো করেই মায়ার ব্যাপারটা বুঝতে পারছে,একবারের জন্যও রেহানের সামনে আসেনি এই বিষয় টা রেহান মেনে নিতে পারছে না। মন খারাপ করে খেতে বসে পরলো পাশে বসে শাফায়াত অনবরত কথা বলে রেহান কে বিরক্ত করে তুলছে।

রেহান স্যার বাসায় আসার পর একবারও আপনার আসুকে দেখলাম না কোথায় সে তাকে কী আপনি নির্বাসন দিচ্ছেন নাকি?

শাফায়াত যদি তুই সুস্থ সবল দেহ নিয়ে বসে খাবার খেতে চাস তাহলে তোর টেপ রেকর্ডারের মতো মুখটা বন্ধ রাখ। আর আসু নামটা শুধু আমার আর একবার যদি শুনি তাহলে তোর চাপার দাত গুলো কে হিপ হপ নাচ শিখিয়ে দিবো।

আরে স্যার আপনি শুধু শুধু রাগ করছেন আমি তো এমনি বললাম। শুধু শুধু ভয় দেখান খালি।

ওই তুই আমাকে স্যার স্যার ডাকবি না হয় কাকা ডাকবি নয়তো ভাই এবার ভেবে দেখ করবি? অবশ্য আমার ভাতিজী বিয়ে করলে কাকাই ডাকতে হবে তাই কাকা ডাকবি। আর যদি স্যার ডাকছিস খালি হাতে আবার ইউএসএ ফিরে যাবি। একটু ভালো করে ভেবে বলবি কী ডাকবি?

রেহানের মুখে এমন কথা শুনে শাফায়াত আপনা আপনি চুপ হয়ে যায়।শাফায়াত কে চুপ থাকতে দেখে রেহান বলে,,
আল্লাহ্ রহম করছে আমার কানের ওপর।

শাফায়াত এখনও ভাবছে রেহান কী করে বুঝলো ওর মনের কথা?

শাফায়াতের পাশেই বসেছে আর্শি। সে খাওয়া বাদ দিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে শাফায়াতকে এই বিষয়টা অনেক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে নাফিসা। সে শুধু আর্শির হাব ভাব বুঝার চেষ্টা করছে। তানজিল নাফিসার কাছে মায়ার কথা জিজ্ঞেস করতে আসলে নাফিসা তানজিলকে বলে…..

আম্মু, আর্শির হাব ভাব বুঝতে পারছি না। সেই কখন থেকে ওই লোকটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর একা একা হাসছে।

তোর এতো কিছু ভাবতে বা বুঝতে হবে না যার মেয়ে সে বুঝলেই হবে।

কিন্তু আম্মু আর্শি তো খুব ছোট।

এই বিষয়ে পরে কথা হবে, এখন বল মায়া কী রাতের খাবার ঘরে বসে খাবে নাকী পরে এখানে এসে খাবে?

মায়া বলেছে ওর ক্ষিদে নেই যখন খেতে ইচ্ছে করবে তখন খাবে।

ঠিক আছে সবার খাওয়া শেষ হলে সবাই যার যার রুমে চলে যাবে তখন এসে খেয়ে যেতে বলিস।

তানজিলের কথায় নাফিসা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই যার যার মতো রুমে চলে যায়। নাফিসা মায়ার পাশে বসে আছে অনেক বার ওকে খাওয়ার কথা বলেছে মায়া প্রতিবার উত্তর দিয়েছে পরে খাবে, দুজন মিলে আবার রোগীর গল্প শুরু করেছে গল্পের মাঝেই নাফিসা বলে,

দোস্তরে ছোটো কাকার সাথে যেই ছেলেটা এসেছে না ঐটারে দেখতে একদম রাজপুত্তুরের মতো লাগে। মন চায় ওষুধের মতো গিলে ফেলি।

ছিঃ নাফু তোরে এখন লুইচ্ছি লুইচ্চি লাগছে। নিজের ভদ্রতায় ফিরে আয় নয়তো আমি মিসেস তানজিল শিকদার কে ডাকবো।

ওহো জামাই ফিরা আইছে দেইখ্যা এখন ভালো মানুষ হইয়া গেছো আর জামাইর হুমকি দেওয়ার স্টাইল টাও শিখে গেছো।

নাফিসার করুন চেহারা দেখে হেসে দিল মায়া। হাসতে হাসতে বলে,
নাফু তুই কান্না করে দিস না আমি মজা করছি তুই তো আমার সকল অপরাধের সঙ্গী তোরে হুমকি দিয়ে কী আমি নিজে বিপদে পারবো নাকি এখন তাড়াতাড়ি বল রাজপুত্তুর টা কে?

নাম শাফায়াত কবির নিরব। নামের সাথে স্বভাবের কোনো মিল নাই অতিরিক্ত কথা বলে ঠিক আমাদের মতো। জন্মের পর কোনো দিন বাংলাদেশে আসে নি কিন্তু এতো সুন্দর বাংলা বলে কী বলবো, ছোটো কাকার বন্ধুর ভাই যদি সম্পর্ক দেখি তাহলে সেও আমার কাকা কিন্তু আমার মন তাকে কাকা মানতে নারাজ। আমি এখন কী করবো মায়া তুই বল?(মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে)

আরে ধুর কিসের কাকা কোনো কাকাফাকা না সোজা শাফায়াত বলে ডাকবি। সে কি আমার দেবর নাকি আর যদি হয়ও আমি মানি না তুই এত চাপ নিস না। ওর সামনে একটু ভাব নিয়ে চলবি বুঝতে দিবি না তুই যে ওরে পছন্দ করিস যদি কোনো ভাবে তোর ভাব সাবে বুঝে তাইলে দোস্ত আগে থেকেই অভিনন্দন তোমার প্রেম কাহিনীও আমার প্রেম কাহিনীর মতো হবে।

দোস্ত এতো চাপ নিস না আমি ওর সামনে ঝাছি কি রানী সেজে থাকবো বুঝতেই দিবো না আমার মনে কি চলছে। এখন তুই এত কথা না বলে চুপ চাপ যা আর কিছু খেয়ে আয় নয়তো আবার প্রেসার ফল করবে।

নাফিসার কথায় সম্মতি জানিয়ে মায়া চলে যায় রান্না ঘরে প্লেটে করে খাবার নিয়ে রান্না ঘরে রাখা চেয়ার টেবিলের বসে খাওয়া শুরু করে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মায়াকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে রেহান, সেই ছোট্ট মেয়ে টা কত বড় হয়ে গেছে এখন আর চকলেটের বায়না ধরে না এখন সে মেডিকেল স্টুডেন্ট রোগীদের সুখ দুঃখের কথা শুনার বায়না ধরে। চুল গুলোও মাশাল্লাহ খুব সুন্দর দেখা যাচ্ছে কতটা লম্বা বোঝা যাচ্ছে না খোঁপা করা কিন্তু খোপাটা বড় আছে । মায়াকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে রেহান। খাওয়া শেষ করে মায়া হাত ধুতে বেসিনের কাছে যায় তখন রেহান বলে,,

আগে যদি জানতে পারতাম আমার বাড়ী ফেরাতে কারও খাওয়া দাওয়া আর চলা ফেরায় কষ্ট হবে তাহলে বিশ্বাস করো আসুসোনা আমি বাড়িতেই ফিরতাম না সারাজীবন বউ বিহীন জীবন কাটাতাম।

আচমকা রেহানের কন্ঠ শুনে হাত থেমে যায় মায়ার চুপ করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বুকের ভিতর ধক ধক আওয়াজ হচ্ছে পিছনে ঘুরে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। মায়ার থেমে যাওয়া দেখে রেহান ঠোঁট চেপে হাসলো আবার বলতে লাগলো,,,

কী হলো কথা বলছো না কেনো, আমার বাড়ী ফেরাতে তুমি খুশি হওনি নাকি অন্য কেউ আছে তোমাকে খুশি করতে?

রেহানের এই কথা শুনে চুপ থাকতে পরলো না মায়া ঝাঁঝালো কণ্ঠে উত্তর দিল,,

হ্যাঁ, আছে তো কিন্তু আপনাকে বলবো না কারন আপনাকে বললে দেখা যাবে আপনি বলবেন আমি তারও যোগ্য না। তাই আপনাকে না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর মাফ করবেন আমায় আমি আমার দেওয়া কথা রাখতে পারিনি। আর কিছু বলার না থাকলে আমি এখন যাই কারণ আপনার মতো সুদর্শন পুরুষের সামনে আমার মতো টোকাইয়ের দাড়িয়ে থাকাটা জনগন মেনে নিবে না।

কথা গুলো বলে গট গট করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো মায়া, রেহান দাড়িয়ে আছে ঠোঁটের কোণে হাসি লেপ্টে আছে কয়েক বছর আগেও যে মেয়েকে কিছু বললে তার সামনে বন্ধু বলে কেঁদে দিতো সেই মেয়ে আজ পাল্টা জবাব দিতে শিখে গেছে,

বড়ো ভাবী আমার বউরে দেখে রাখতে বলছিলাম একটু প্রতিবাদী করে তুলতে বলছিলাম তুমিতো দেখি আমার বউরে বুনো উল বানিয়ে দিছো এখন তো আমাকে বাঘা তেতুঁলের রুপ নিতে হবে নয়তো এই বউ আমার শ্বাস নেওয়া দুস্কর করে দিবে।

সাহস কী করে হয় আমাকে এমন কথা বলার হুঁ আমি কী এতো সস্তা নাকী যে যার তার হাত ধরে তার বাড়ি চলে যাবো কী মনে করে নিজেকে সে আমাকে ভালোবাসেনা বলে কী আমিও তাকে ভালোবাসবো না। এতো বছর পর আইছে বউ বউ করতে যখন বউরে কান্দাইয়া বিদেশ গেছিলো তখন মনে ছিলো না বউ ছোটো বড় হইলে অন্য জনের সাথে প্রেম করবো তখন তো ভাবে নাই তাহলে এখন কেনো ভাবছে?

রান্নাঘর থেকে রুমে ঢুকে রাগে কথা গুলো বললো মায়া নাফিসা ঠিক বুঝতে পারছে মায়ার রাগের কারণ তাই চুপ করে জলামুখির ঠান্ডা হওয়ার অপেক্ষা করছে এখন মায়াকে কিছু বলা মানে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনা আর মায়া যে রান্না ঘরে গেছে সেই খবরটা নাফিসাই দিছে রেহানকে তাই এখন চুপ থাকাই মঙ্গল জনক…………….

#চলবে……………

গল্পটি সম্পর্কে (রিভিউ) আলোচনা সমালোচনা করুন এই গ্রুপে।(যেকোনো গল্প খুজতে আমাদের গ্রুপটি ব্যবহার করতে পারেন)

গ্রুপ লিঙ্ক👇
https://www.facebook.com/groups/273212672043679/?ref=share_group_link

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here