আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড) #নুসরাত_জাহান_মিম ২১.

0
406

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

২১.
অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘুটঘুটে এক কামড়ায় দুলন্ত চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে প্রণয়।দৃষ্টি তার তীক্ষ্ণ দূর হতে দূরান্ত পানে।শব্দহীন বদ্ধ কামড়ায় ইজি চেয়ারের ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ খানিক ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি করছে চারিপাশ জুড়ে।প্রণয় হতে কয়েক ফুট দূরত্বে ঠিক তার সম্মুখ বরাবরই হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারের সাথে আবদ্ধ এক মেয়ে।মুখ আর চোখও তার বাঁধা।কোনোভাবেই কোনোকিছু দেখা অথবা বোঝার অবকাশ নেই।খানিক বাদে বাদেই চেয়ার দোলার আওয়াজে খানিক কেপে কেপে উঠছে মেয়েটা।অনেকাংশ ঘেমেও গিয়েছে।হাত-পা তার কাপছে,বুকের ধুকপুকানি বেড়েছে অতিমাত্রায়।অতঃপর ঢোক গিলে ঘনঘন শ্বাস নেয় সে।কিয়ৎক্ষণ বাদে চেয়ার দোলার আওয়াজ তীব্র হওয়ার সঙ্গে কারো পদধ্বনির শব্দও কর্ণগোচর হয় মেয়েটার।ভয় তার বাড়ে বহুগুন,নিশ্বাসের গতি তীব্র হয়।শরীরের লোমকূপসমূহ দাঁড়ায় নিমিষেই।অতঃপর আকস্মিক চোখের বাঁধনে টান পড়তেই দাঁতে দাঁত চাপে মেয়েটা।বাঁধন খুলতেই পিটপিট করে চাইতে নিলে মুখের বাঁধনও খোলা হয় তার।সবেমাত্র চোখজোড়া খুলে ভালোভাবে সামনের দৃশ্যসমূহ অবলোকন করতে উদ্যত হয়েছিলো সে তবে আকস্মিক গালে কারো শক্ত হাতের থাবা পড়তেই চামড়া ফে‌!টে যাবার উপক্রম মেয়েটার।মাথা ভনভন করছে।এখনো কানের কাছে তার সাইরেনের ন্যায় সংকেত বাজছে।গাল তার অতিরিক্ত পরিমাণে জ্বলে উঠতেই সম্মুখপানে নজর দিতেই গম্ভীরসত্তার প্রণয়কে দেখে শ্বাস তার আটকায়,নাসারন্ধ্র প্রসারিত করে শ্বাস নিতে গেলেই গলার কাছে প্রণয়ের শক্তপোক্ত হাতের স্পর্শ পেতেই দম বন্ধ হবার উপক্রম।চোখদু’টো উলটে আসছে তার।অতঃপর প্রণয়ের বিড়ালাক্ষীজোড়ায় নজর পড়তেই সেথায় হিংস্রতার চরম পর্যায় অবলোকিত হয় মেয়েটার।সে অস্ফুটস্বরে আওড়ায় কিছু শব্দ,

“প্রা….প্রণ..প্রণ….প্রণয়!”

তৎক্ষনাৎ মেয়েটার গলা হতে হাত সরিয়ে হাটুগেরে বসে প্রণয়।অতঃপর চেয়ারের দুইপাশে দুই হাত রেখে হাটুতে ভর দিয়েই মেয়েটার অতি সন্নিকটে বসে আফসোসের সুরে প্রণয় বলে,

“এতটা নিচে না নামলেই কি আপনি পারতেন না?পারতেন না মিস অহনা অধিরাজ শেখ!”

“প্রণয় আমার…”

নিস্তব্ধ কামড়ায় প্রণয়ের একেকটা শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে কানের কাছে বারংবার ভাসে মেয়েটার।অন্তরাত্মা কাপে তার,

“হিশ!ডোন্ট লাউড।লেট মি ফিনিশ” [হিশ!চেচাবেন না।শেষ করতে দিন আমায়]

অতঃপর ফের গম্ভীরকন্ঠে শুধায় প্রণয়,

“হোয়াট ডিড ইউ রিয়েলি থিংক?আয় কুডেন্ট ক্যাচ ইউ হা?” [কী ভেবেছিলেন আপনি?আমি কখনোই আপনাকে ধরতে পারবোনা?]

ফের মেয়েটা কিছু বলতে নিলে প্রণয়ের তীক্ষ্ণ নজরের দরুন থামে সে।অতঃপর প্রণয় বলে,

“আপনি আদোতে মেয়ে তো?আমি মনে করি আপনি মানুষতো দূর,পশুর কাতারেও পড়েন না মিস অহনা!ওরফে অহনা পূর্ণতা শেখ!”

“প্রণয় আমার কথ…..”

অহনার চোখ বরাবর তর্জনী নিয়ে গর্জায় প্রণয়,

“জাস্ট শাট ইওর মাউথ পূর্ণ!সরি,ভেরি সরি!মিস অহনা শেখ!না,আসলে আপনাকে কী বলে সম্বোধন করবো বলুন তো?”

বলেই অহনার কাছ হতে সরে আসে প্রণয়।অতঃপর ফের গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে হেলান দিয়ে বসে চেয়ারে।প্রণয় গিয়ে চেয়ারে বসতেই অহনা বলে,

“দা…..দেখ প্রণ..প্রণয় তুই আমায় ভুল ভুল বুঝ…..”

“স্টপ!স্টপ দেয়ার!আরেকটা মিথ্যে বললে ঠিক অনিন্দ্য ঘোষের ন্যায়ই তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো পূর্ণ!নাকি তোর বাবা মি.অধিরাজ শেখের মতো জিভ তোর চি*ড়ে দেবো?”

প্রণয়ের ঠান্ডাস্বরের সতর্ক বার্তায় বুক কাপে পূর্ণতার।সে চোখের পানি ছেড়ে আটকানো কন্ঠে বলে,

“প্রণয়….শোন….আমার কথাটা তুই শোন।আম…আমার বাঁধনগুলো খোল আমি বলছি!সব….সবটাই বলছি”

পূর্ণতার বাক্য সম্পন্ন হতে না হতেই উচ্চশব্দের হাসি ভাসে কানে প্রণয়ের।উন্মাদের ন্যায় উচ্চস্বরের হাসি আরও জোরালো হয় তার।অতঃপর হাসি বহাল রেখেই প্রণয় শুধায়,

“ও মাই গড!আ’ম গন্না বিলিভ ইউ!রিয়েলি গন্না বিলিভ ইউ।তুই এখনো ভাবছিস আমি কোনোকিছুই জানিনা?সত্যি পূর্ণ?তুই আমায় বোকা ভাবিস?এতটা বোকা?একজন খু*নের আসামীকে তুই সত্যি সত্যি বোকা ভাবছিস?”

“তা…..তুই কা….কী জানিস?”

চুলের ভেতর হাত গলিয়ে খানিক গুচ্ছ কেশ টেনে মাথা চেয়ারের পেছন দিকে হেলিয়ে ফের উচ্চশব্দে হাসে প্রণয়।অতঃপর বলে,

“স্টপ অ্যাক্টিং লাইক আ ডাম্ব।আদারওয়াইজ আ’ম গন্না কি*ল ইউ।নিজ মুখে সবটা স্বীকার কর।আদারওয়াইজ আয় উইল রিয়েলি…..”

প্রণয়কে থামিয়ে গম্ভীরস্বরে পূর্ণতা বলে,

“তো তুই ভাবিস স্বীকার করিয়ে জেলে দিবি?রিয়েলি প্রণয়?ইউ থিংক আমি ওখানে আদোতে থাকবো?”

প্রণয়ের হাসির মাত্রা ক্ষীণ হয়।ঘাড় নিচু করে বাকা চোখে পূর্ণতার পানে চেয়ে ঠোট মৃদু বাকিয়ে বিরক্তিপূর্ণ দৃষ্টিসহিত ধীরকন্ঠে প্রণয় শুধায়,

“অ্যান্ড হাউ কুড ইউ ইভেন থিংক আমি তোকে জেলেও দেবো?যেখানে আয় ক্যান কি*ল ইউ ইন আ ভেরি রিসেন্ট মোমেন্ট”

খানিক হেসে পূর্ণতা বলে,

“জানিস যেহেতু সবই আমার কিলিং অথবা মা!র্ডারিং রেকর্ডও তোর জানা?তাছাড়া ইউ ক্যান নেভার কি*ল মি।ইহিম!নেভার প্রণয়।আমি তোর প্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম”

“তুই তোর প্রিয় ব্যক্তিকে খু*ন করতে পারলে,হোয়ায় কান্ট আয়?”

হকচকিয়ে কপাল কুচকে পূর্ণতা বলে,

“কা….কার কথা বলছিস?”

চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা শ্বাস ভেতরে নিয়ে নাসারন্ধ্র প্রসারিত করে তা নির্গত করে প্রণয় বলে,

“ইউ কিল্ড ইওর বেস্টফ্রেন্ড!মাই বেস্টফ্রেন্ড!মাই সিস্টার।আমার হৃদয়ে বিরাজমান সর্বপ্রিয় বান্ধবী,আমার বোনকে তুই নিজ হাতে শেষ করেছিস।অ্যান্ড ইউ থিংক আয় রিয়েলি উইল স্পেয়ের ইউ?আ’ম গন্না রিয়েলি কি*ল ইউ,অ্যান্ড আয় ডেফিনেটলি উইল!”

“রিহ…রিহার বিষয়েতো তোর কিছু জানার কথা না!আমরা কেউতো তোকে জানাইনি।তাহলে….”

“তোরা কেউ জানাসনি বলে যে আমি কিছুই জানবোনা।সেটা ভাবাটাই তোর সর্ববোকামি ছিলো।তার চাইতেও বেশি বোকামির কাজ করেছিস রিহাকে তুই খু*ন করে।মেয়েটা বেঁচে গিয়েছিলো স্টিল তুই হাসপাতালে গিয়ে তাকে খু*ন করে এসেছিস।আর ভাবিস কেউ খোঁজ রাখবেনা?তুই আসলেই বোকা পূর্ণ।অতি সূক্ষ্মভাবে নিজেকে আড়াল করেছিস ঠিকই অথচ নিজেই নিজের ধরাটাও দিয়েছিস চাঁদের মিসক্যারেজ করিয়ে।কী ভাবিস?প্রণয় চুপ হয়ে গিয়েছে।শোকে,শোকে সে শোকাহত?ইহিম!আয় ওয়াজ জাস্ট স্টে কুয়াইট টু ক্যাচ ইউ!চাঁদের যেদিন মিসক্যারেজ হয় আর তুই ই তার অপারেশন করাস সেদিনই তোর সমস্ত মুখোশ আমার সম্মুখ হতে উন্মুক্ত হয় পূর্ণ।আর সিড়িতে যে তেলও তুই ঢেলেছিলি তাও আমার জানা।আমার বাচ্চাকে যে তুই ই খু*ন করেছিস সে খবরও আমার জানা।অরণকে জাস্ট মে*রেই দিয়েছিলি সেটাও আমার জানা রে পূর্ণ!তুই আমার চন্দ্রের গায়ে কলঙ্কের দাগ ছড়ানোর মূলে সে খবরও জানি।নিজের ভাইকে পর্যন্ত তুই গু*লি করেছিস মে*রে ফেলতে।তাকে এসাইলামে রাখিয়েছিস।কতশত নারীর সম্ভ্রম কা!ড়ার মূলে ছিলি তুই!কতটা নিম্ন পর্যায়ে তুই গিয়েছিস চিন্তাও করিস কখনো?করিস না যে সেও জানি।তো এত এত যে পাপের বোঝা তোর ঘাড়ে সেই পাপ হতে তোকে মুক্ত করা লাগবেনা?দায়িত্বটা নাহয় আমিই নিই?”

প্রণয়ের কথা শেষ হতেই খানিক কেশে পূর্ণতা বলে,

“এতকিছুতো তোর জানার কথা না!আমি যে অহনা সে খবর তুই তো দূর অন্যকারোরও…….ওয়েইট!রিহা!রিহা বলেছে তোকে?”

শেষের কথাগুলো কপাল কুচকে অতিমাত্রায় অবাক হয়েই বলে পূর্ণতা।আর লম্বা শ্বাস নিয়ে চোখমুখ গম্ভীর রেখে প্রণয় বলে,

“যতটা চালাক তুই নিজেকে মনে করিস আদোতে ততটা চালাক তুই নস পূর্ণ।আরও একটা বোকামি তোর কী জানিস?তোর সর্বসত্যিটা রিহুকে জানানো।চাঁদের সাথে কী কী তুই করেছিস সেসবকিছুও ওকে জানানো।তুই নিজের ঢোল নিজেই পিটিয়েছিস।ভেবেছিলি বেস্টফ্রেন্ড হয় কাউকে বলবেনা।অথবা তাকে পৃথিবী হতে নিঃশেষ করলেই সব ধামাচাপা!কিন্তু হ্যা রিহু তোর সত্যিটা আর সবার সামনে ঠিকই আসতে দেয়নি কারণ ও তোকে ভালোবাসে।তবে আমায় কী বলে গেছে জানিস?”

“কা….কী?”

“ওর শেষ কথা ছিলো ‘পূর্ণকে তুই ছাড়িস না প্রণয়!”

কথাখানা বলে খানিক থেমে ফের প্রণয় বলে,

“তো তোকে আমি কী করেই বা ছেড়ে দিই বল?”

“কিন্তু এসব…..এসবতো ওকে আমি গাড়ির মধ্যে থেকে বলেছিলাম!তারপর পরই তো আমি ওর এক্সিডেন্ট করি।তার মাঝে ও তোকে?ও তোকে?”

“হ্যা!ও তোর গাড়ি থেকে লাফ দিয়েছিলো কিনা?”

“হা….হ্যা”

“তখনই আমার মেসেঞ্জারে ভয়েজ পাঠিয়ে রেখেছে।তোর সমস্তকিছু সেখানেই বিবৃত করেছে।তৎক্ষণাৎ কোনোকিছুতো করার সামর্থ্য ছিলোনা।একদিন তো বের হতামই?অতঃপর তোর পতন ঘটতো,ঘটছে!এই দিনটার জন্যই রিহু সেদিন আমার কাছেই ওর দুঃখসমূহ বলে গিয়েছিলো।আমার বোন শেষবারের ন্যায় কিছু চেয়েছে।তা তাকে না দিই কী করে?একটা জিনিস এখনো আমার জানা হয়নি।বলবি তুই?”

অতি রুক্ষ কন্ঠে পূর্ণতা বলে,

“সবই জানিস।আর কী এমন জানিস না?”

“এতকিছু কেনো করলি?আমার চাঁদটাকে ছেড়ে দিলেই কি পারতিনা?আমার বাচ্চাটাকে কেনো মা*রলি?যেই বাচ্চাটা আমার পৃথিবীতেও আসেনি তাকে তুই অতি ধীরে গর্ভেই মে*রে দিয়েছিস?এত পাষাণী কেন তুই পূর্ণ?”

কতটা আক্ষেপের সহিত করুন কন্ঠে বাক্যসমূহ প্রণয় আওড়িয়েছে তা বোঝার ক্ষমতা হয়তোবা তার সামনে বসা পূর্ণতার পক্ষে সম্ভব না।এজন্যই হয়তো সে রুক্ষ কন্ঠেই পাল্টা জবাব দেয় প্রণয়ের,

“তোর চাঁদই তো সমস্ত সমস্যার মূল প্রণয়!ওকে কেউ বলেছিলো আমার রাস্তায় আয়?বল বলেছিলো?ও কেন ‘রাজ ভিলা’ য় গিয়েছে?তোর বউ এত বা* পাকনা কেনো?”

চেচায় প্রণয়,

“শাট ইওর মাউথ পূর্ণ‌!”

“তুই চেচালেই সবটা বদলাবে না।তোর বউ নিজেকে বাঘিনী ভাবে তো?সেই বাঘিনীকে নিজ পায়ের তলায় এনে সর্বসুখ আমি অনুভব করেছিলাম প্রণয়।শুধু যে আমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করেছিলো সেই ক্ষোভে না।ও আমার সমস্ত সুখ কেড়ে নিয়েছিলো।ওকে তো এমনি এমনি ছাড়া যেতো না”

কথাখানা শেষ হতেই বসা হতে দৌড়ে আসে প্রণয় পূর্ণতার নিকট।অতঃপর তার টুঁটি চে!পে বলে,

“আমার চাঁদের গায়ে হাত দেয়ার সাহসও হয় তোর কী করে?আরে!তুইতো অরণকে পর্যন্ত ছাড়িস নি!অরণের সাথে চাঁদের কী বাজেভাবে উপস্থাপনা করেছিলি তুই!ছেলেটা তোকে ভালোবাসতো পূর্ণ!এখনো হয়তো বাসে!”

শ্বাস আটকে আসায় চোখদু’টো বড়বড় হয় পূর্ণতার।ঘনঘন শ্বাস নিতে গেলেই গলা ছাড়ে প্রণয়।অতঃপর পূর্ণতা কাশতে কাশতে বলে,

“আমি বলেছিলাম ওকে ভালোবাসতে?ও কেনো বেসেছে আমায়?জানতো না?জানতো না আমি তোকে ভালোবাসি?তারপরেও কেন বাসবে?বেসেছে ভালো!ঐ চাঁদের সাথে কেনো ওর এত মেলামেশা করতে হবে?যদি না ও চাঁদের এত হেল্প করতো আমি কখনোই অরণের ক্ষ*তি করার বিষয় চিন্তায়ও আনতাম না।আর না রিহুর এতটা করুন পরিণতি হতো।তোরা সবাই ঐ চাঁদের জন্যই কেন নিজেদের বিলিয়ে দিস?কী আছে টা কী ওর মধ্যে?ওর প্রেমে তুই কেন পড়েছিলি প্রণয়?আশেপাশে আমিও ছিলাম তোর!আমি যে তোকে ভালোবাসি কই সে খবর তো তুই রাখিস নি।কখনো বোঝার চেষ্টাই করিস নি!”

“তুই নিজের আর চাঁদের তুলনা দিচ্ছিস পূর্ণ?কখনো আকাশ আর পাতাল এক হতে দেখেছিস?আমার চাঁদ আর তুই আকাশ পাতালের ন্যায় ভিন্ন।আমার চাঁদ যদি শ্রেষ্ঠ নারী হয়।তুই হচ্ছিস নিকৃষ্টতম নারী!আর কী বললি?আমায় ভালোবাসিস তুই?ভালোবাসার মানেও বুঝিস?বল বুঝিস?বন্ধু হিসেবেও তো ভালোবাসতে পারলি না।না আমাকে পেরেছিস না আমাদের বন্ধুমহলের অন্য কাউকে!”

“আমার বন্ধুত্বে প্রশ্ন তুলবিনা প্রণয়!আমি তোদের সবাইকে ভালোবাসি।অসম্ভবরকম ভালোবাসি”

খানিক হেসে প্রণয় বলে,

“এতটাই ভালোবাসিস যে আমাদের সকলকে যদি খু*ন পর্যন্ত তোর করতে হয় তাও হাত কাপবেনা!”

“আমি সত্যিই তোকে ভালোবাসি বিশ্বাস কর প্রণয়!আমি আমি তোদের সবাইকে ভালোবাসি।শুধু…..শুধু ঐ চাঁদ!চাঁদ কেনো আসলো জীবনে?আমার ভাইয়েরা পর্যন্ত ঐ চাঁদের জন্য দিশেহারা।কেনো?কী আছে কী ওর মধ্যে?সবাই শুধু ওকেই কেনো ভালোবাসে?”

“ঈর্ষা পতনের মূল জানিস তো?তোর ক্ষেত্রেও তাই।আর রইলো আমায় ভালোবাসা।তো আমি বলবো তুই আমায় কখনোই ভালোবাসিস নি।ভালো তো আমায় অনেকেই বেসেছে।সচক্ষে আমি তা দেখেছিও।তবে তুই?তুই কখনোই বাসিস নি।বাসতে পারিস না।কারণ তুই চরিত্রহীণা।তোর চরিত্রে সমস্যা আছে।তুই এই পর্যন্ত নিজ জীবনে কী কী করেছিস বলতো?তুই আম্বিয়ার ফেস মাস্ক লাগিয়ে কী কী করিস নি?শেষে চাঁদের ফেস মাস্ক লাগিয়ে অতি নিকৃষ্ট কাজটা তুই করেছিলি।অরণ আর চাঁদের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলি।আমি কিছুই ভুলি নি পূর্ণ।শুধু মুখোশের আড়ালের সাপ নামক তুইটাকে চিনতে পারিনি।তুই কখনোই কারো আপন হতে পারিস না।তোর মাথায় অতিরিক্ত পরিমাণে সমস্যা আছে।তুই আমার বাচ্চাকে পয়জন পর্যন্ত দিয়েছিস।তোর ভেতর কি নারীসত্তা নেই?মায়া আদোতে আছে?”

গর্জায় পূর্ণতা,

“না নেই!একদমই নেই।তোর বাচ্চাকে খু*ন করে আমি সর্বশান্তি পেয়েছি।তোর আর চাঁদের অংশ পৃথিবীতে বাঁচবে কেনো?অথবা আসবেই কেনো?তাইতো মে*রে দিয়েছি।তুই আমার না হলে অন্য কারোও হতে পারিস না।কতবার যে ঐ মেয়েকে মা*রতে চেয়েছি পারিনি!কই মাছের প্রাণ কিনা!আর কী বলেছিস?হ্যা আমি মানি আমার চরিত্রে সমস্যা আছে।তবে তোকে পেলেতো সেসব থাকতোনা প্রণয়!তুই আমার হলে পরপুরুষের কাছে যেতাম আমি?কোনোদিনই তো যেতাম না।তুই আমার হস নি কেন বলতো?”

“ঠিক এজন্যই আমি তোর হইনি!কখনো হওয়ার সুযোগও নেই।প্রণয়ের জন্য সৃষ্ট নারী কেবল একজনই,আমার চন্দ্রময়ী”

উচ্চস্বরে হেসে পূর্ণতা বলে,

“তোর সেই নারীর তো সতীত্বই নেই!না আছে মাতৃত্ব!আমি,আমি নিজ চোখে তোর চাঁদের সতীত্ব ধ্বং*স হতে দেখেছি।আমারই হাতে তোর চাঁদের মাতৃত্ব পর্যন্ত ধ্বং!স করেছি।আমিই চাঁদের গর্ভাশয় ফেলে দিয়েছিলাম প্রণয়।তোর চাঁদ কোনোদিনই মা হবেনা!আজীবন এই অনুতাপে ভুগবে।তুইও ভুগবি।তোরা কখনোই সুখী হবিনা!আমার ভালোবাসা কেড়ে তোর চাঁদও কখনো সুখী হবেনা।ওর গর্ভাশয়ের বদলে জানটা কে*ড়ে নেওয়া উচিত ছিলো আমার!”

“পূর্ণ!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চাঁদের রুমের কাছে এসে দরজায় কেউ টোকা দিতেই সে পানে চেয়ে হাসিমুখে চাঁদ বলে,

“এসো রুবা”

অতঃপর ভেতরে এসে রুবা চাঁদের বিছানায় বসতে বসতে বলে,

“আমি আর শিফু পার্মানেন্টলি এসে পড়লাম ভাবি!মানে যদিও বা টেম্পোরারিই”

“আগেইতো বলেছিলাম।তোমরাই শোনোনি”

“হ্যা।আর জানো কাল একটা সারপ্রাইজ আছে সবার জন্য!”

কপাল কুচকে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“কীসের সারপ্রাইজ?”

“কালই বলবো ভাবি!অবশ্য তুমি কাল দু’টো সারপ্রাইজ পাবে”

কপাল কুচকে রেখেই চাঁদ বলে,

“দু’টো মানে?”

“মানে দুইটা”

বিরক্তি নিয়ে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“কীসের দুইটা?বুঝিয়ে বলো”

“বলবো,বলবো।সময় হোক।আর হ্যা ভাবি আমিই তোমার ভাবি হবো”

বলেই বিছানা হতে উঠতে নিলে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“তুমি এখনো ভাবো ভাই তোমায় ভালোবাসবে?”

“শুধু ভালোই বাসবে না।তোমার ভাই আমারই হবে ভাবি।মিলিয়ে নিও”

কথাখানা শেষে চাঁদের রুম হতে প্রস্থান নেয় রুবা।অতঃপর তন্ময়ের রুমের কাছে গিয়ে নক করতে গেলেই গম্ভীরস্বর ভাসে তন্ময়ের,

“ভেতরে আয়”

তন্ময়ের অনুমতি পেয়ে ভেতরে এসে সোফার উপর বসতে বসতে রুবা বলে,

“ভাইয়া!ভাইয়া!আমি এত এক্সাইটেড!জানিনা মিস্টার চৈত্র কী রিয়েক্ট করবেন”

কপাল ঈষৎ কুচকে তন্ময় বলে,

“চৈত্র ভাই ছাড়া আর কিছু তোর মাথায় আসেনা?”

“আপাতত আসছেনা।কালকের কথা ভেবেই আমার কেমন কেমন লাগছে ভাইয়া।আশা করছি থা!প্পড় টাপ্পড় না মে*রে দেয় আমায়!”

বেশ বিরক্ত হয়ে তন্ময় বলে,

“এসব বলতে এখানে এসেছিস?”

“আরেএ!এমন করো কেনো ভাইয়া?তোমার থেকে সাজেশন নিতে এসেছি শুধু”

“কী করবি কাল?”

তন্ময়কে কিছু বলার পূর্বেই রুবার ফোনে কল আসে রিদির।অগ্যতা রুবাকে চলে যেতে হয় সেথা হতে।রুবা চলে যেতেই তার যাওয়ার পানে একধ্যানে চেয়ে মনে মনে তন্ময় শুধায়,

“আমি কি বেশি দেরি করে ফেলেছি রুবা?তুই চৈত্র ভাইয়েরই হবি?”

অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যপানে চেয়ে চোখজোড়া বুজে বালিশে হেলান দেয় তন্ময়।

____________________________

রুবা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত গেস্টরুমে এসে দরজা আটকাতেই শিফা বলে,

“কীরে?তন্ময় ভাইয়া কোনো আইডিয়া দিলো?”

“না।রিদু কল করেছে আয় কথা বলি”

“ভিডিও কল দে”

শিফার কথা মোতাবেক রিদিকে ভিডিও কল দিতেই ওপাশ থেকে রিদি রিসিভ করে বলে,

“কীরে প্ল্যানিং অল ডান?তুই সত্যি সত্যি চৈত্র ভাইয়াকে প্রোপোজ করবি রুবা?”

খানিক কেশে মনে মনে সাহস সঞ্চার করে রুবা বলে,

“হা…..হ্যা..হ্যা!আলবাত করবো”

কিঞ্চিৎ চিন্তিত হয়ে রিদি বলে,

“কিন্তু রিহাপু বেঁচে থাকতে সেও করেছিলো কিন্তু….. ”

তৎক্ষণাৎ রুবা জবাব দেয়,

“হ্যা করেছিলো কিন্তু আমার চৈত্র রিহাপুকে ভালোবাসেনি।আমি জানি সে আপুকে উলটো ইগনোর করেছে….”

রুবার আরও কিছু বলার পূর্বে শিফা বলে,

“কিন্তু রুবা,ভাইয়া যদি তোকেও ইগনোর করে?বা ভাবিকে যদি বলে দেয়?অথবা প্রণয় ভাইয়াকে বা রায়হান ভাইকে?”

শিফার গলার স্বর পেয়ে রিদি প্রশ্ন করে,

“কীরে শিফাও তোর সাথে?”

মনে পড়ার ভঙ্গিতে রুবা বলে,

“ও হ্যা!তোকে বলতে ভুলে গেছি।শিফু আর আমি এই বাড়িতে একসাথেই শিফট হয়েছি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
“অরণের ব্রেইনের পাশ ঘেষে তুই কী করে কি*ল প্রবেশ করিয়েছিলি?তুইতো গাইনী ডাক্তার”

প্রণয়ের প্রশ্নে মৃদু ঠোট বাকিয়ে আলতো হেসে পূর্ণতা বলে,

“এতকিছু জানিস ওটা জানিস না?তুই হয়তো এটাও জানিস না যে আমিই যে অহনা এ খবর অরণও হয়তো জানতো।তাছাড়া অরণ আমায় ভালোবাসে এটা কিন্তু আমার প্লাস পয়েন্ট প্রণয়!ডাফারটার উচিত ছিলো মিরুকে ভালোবাসা অথচ ও না জেনেবুঝে আমায় ভালোবেসেছে।শুধু শুধুই কি ডাফার বলি?”

“ভালোবাসা জেনেবুঝে হয়না।আর জেনেবুঝে কাউকে ভালোবাসতে গেলে তাকে আমি ভালোবাসা বলে গণ্য করিনা।আর এটাও ধ্রুবসত্য যে সর্বদাই আমরা ভুল মানুষে প্রেম নিবেদন করি!”

To be continued…..

[বিঃদ্রঃগল্পটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক।তাই কাল্পনিকভাবেই নেওয়ার অনুরোধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here