#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
২২.
“অরণকে মা*রার উদ্দেশ্য কখনোই আমার ছিলোনা।সেজন্যই ওর মাথায় কি*ল টা আমার প্রবেশ করাতে হয়েছিলো।তবে মানতেই হয় তোর চাঁদ বেশ বিচক্ষণ এবং অতিরিক্তই চালাক।অরণকে মা*রার দায়ে ওকে ফাসানো,ওর প্রতি তোর হেটরেড সবকিছু মিলিয়েও অরণের সমস্যাটা কেবল ও ই ধরতে পেরেছিলো।এবং আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম যখন অরণকে আমরা কোথাও খুঁজে পাইনি।পরিশেষে যখন নিজ পায়ে ওকে দাড়াতে দেখলাম তাও আবার চাঁদেরই অপারেশন দরুন।আমি মানতে বাধ্য হয়েছি এই মেয়ে অতিরিক্ত চালাক।বুদ্ধি বেশ প্রখর তবে ততটা নয় যতটা হলে ও আমায় ধরতে পারতো।কিন্তু একসময় আমারও মনে হয়েছিলো হয়তো আমায় ধরে ফেলতেও পারে।কিন্তু এইদিক দিয়ে তোর চাঁদ বেশ বলদ বের হয়েছে প্রণয়।ও চোখ বন্ধ করে তোর সব বন্ধুবান্ধবকে বিশ্বাস করে।এমনকি আমায়ও।অরণের ঠিক হতে হতে তুই যেই কান্ড করেছিস তাতে কোনো সন্দেহই ছিলোনা তুই সবটা জেনে গিয়েছিস।শুধু অহনা অর্থাৎ আমার বিষয়টা জানা তোর পক্ষে সম্ভব হয়নি।এমনকি কারো পক্ষেই তা সম্ভব ছিলোনা।ভুলটা আমি রিহাকে সবকিছু বলেই করেছি।আদারওয়াইজ আমায় ধরা কারো পক্ষেই সম্ভব হতোনা।এমনকি তোর পক্ষেও না।হয়তো অহনা আর পূর্ণতার মিসক্যালকুলেশন সম্পর্কে এখনো জানতে পারিস নি অথবা জানতে চাস।আমি সেটাও জানাবো।ভালোবাসি তোকে,এতটুকু জানাতেই পারি।তবে তার আগে তোর বাচ্চাকে কী করে মা*রলাম সেটা বলি নাহয়?”
কথাগুলো সম্পন্ন করেই লম্বা শ্বাস নিয়ে থামে পূর্ণতা।প্রণয় কেবল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার পানে রেখে চেয়ে আছে পলকহীন।প্রণয়ের পানে চেয়ে আলতো হেসে পূর্ণতা বলে,
“তোর চোখে আমি অসহায়ত্ব দেখতে পাচ্ছি প্রণয়।এই অসহায়ত্ব কি আমার জন্য?”
প্রণয়ের শীতল কন্ঠস্বর,
“যার জন্য রক্ষক থেকে ভক্ষক হতেও দ্বিধাবোধ করিনি,তার জন্য বন্ধু থেকে শত্রু হতেও পিছুপা হবোনা।তবে তুই বন্ধু হওয়া দূর বলারও যোগ্য নস।বাকিটুকু বল,শুনছি”
খানিক শ্বাস নিয়ে পূর্ণতা ফের শুরু করে,
“ডেসপারেট হস না,বলছি।তুই যেদিন ড্যাডসহ সবাইকে খু*ন করলি।ওটা আমিসহ সবার জন্যই আনএক্সপেক্টেড ছিলো।তার চাইতেও আনএক্সপেক্টেড ছিলো চাঁদের প্রেগন্যান্সির বিষয়টা।বাকিসবকিছু মেনে নিলেও ওটা মানতে পারছিলাম না।সেজন্যই শুরু থেকে পয়জন দিয়ে এসেছি।তোর বোকা বউ স্মরণে রেখে খেয়েছেও।যদিও বা তোর শোকে কয়দিন আধপাগল ছিলো।একেবারে শুরু থেকে যদি খেতো তাহলে আরও জলদি বাচ্চাটা মা*রা সম্ভব হতো।সেইসাথে তোর চাঁদেরও সমাপ্তি ঘটতো।কিন্তু মাঝে দিয়ে রিহা যেই বাগড়া টা দিলো।সেজন্যই ওর প্রতি আমি ক্ষু!ব্ধ হয়েছি।চাঁদকে আমার দেওয়া ঔষধ খেতে নিষেধ করেছিলো।সাথে এমনকিছু ঔষধ দিয়েছিলো যাতে করে পয়জন কাজ করা বন্ধ করে দেয়।কিন্তু পয়জন যা ক্ষ*তি করার করেই দিয়েছিলো।চাঁদের ক্ষতি না করতে পারলেও তোর বাচ্চার ক্ষ*তি শতভাগ করেছিলো।রিহা যেদিন চাঁদের আলট্রা করায়।তখনই ও দেখতে পেয়েছিলো বাচ্চার মধ্যে অবশিষ্ট আর কিছুই নেই।তখনই ও আমার কাছে আসে জবাবদিহি করতে।তবে ওকে আর ফিরে যেতে আমি দিই নি।এবং সেদিনও কিন্তু রিহুকে আমি মা*রতে চাইনি,মা*রার ছিলাম ঐ চাঁদকে বেশি পাকনামো করে মাঝে দিয়ে এসে বেশ সাধু সেজেছিলো।কিন্তু ওকে বাঁচতে দেওয়া ও আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা।সেজন্যই ওর অপারেশনের পরপরই ওর স্যালাইনে আমি পয়জ*ন দেই।ও সচক্ষে তা দেখেছিলো ঠিকই তবে কাউকে কিছুই বলেনি।আমার বন্ধুবান্ধব বড্ড বোকা রে প্রণয়!ভালোবাসায় অন্ধ প্রায়।মেয়েটাকে তো চৈত্র ভাইও ভালোবাসলোনা।অথচ রিহু সত্যি সত্যি তাকে ভালোবেসেছিলো”
“তোর নাম ভুলবশত পূর্ণতা রাখা হয়েছে পূর্ণ।তোকে যদি গিরগিটিও বলা যায় তাও অসম্মানজনক হবে।তার তুলনায়ও দ্রুতগতিতে নিজ রঙ বদলাতে সক্ষম তুই।আমি বরাবরই মুগ্ধ হচ্ছি”
“যাক আমার কিছু একটাতে তো তুই মুগ্ধ হলি!”
“তারপর বল।অরণের মাথায় কি*ল কী করে প্রবেশ করিয়েছিস?কখন করেছিস এটা?তোর একার পক্ষেতো তা সম্ভব না”
“আমার একার পক্ষে কী সম্ভব আর কী কী সম্ভব না তা তুই ভাবতেও পারিস না প্রণয়।একবার তোর বউকে বলেছিলাম মানুষ খু*ন করা আমার প্রিয় নেশা।তাই আমার পক্ষে কোনোকিছুই অসম্ভব না।আমি চাইলে তোকেও মে*রে ফেলতে পারি”
“সে খবর আমার জানা”
“কিন্তু তোকে আমি মা*রবোনা প্রণয়।তোর শেষ নিশ্বাস ত্যাগের মুহুর্ত আমার পক্ষে দেখা সম্ভব না।আমি চাই তুই যুগযুগ বেঁচে থাক,একাই থাক তবে চাঁদের সাথে নয়”
“অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে”
“দিশেহারা হচ্ছিস কেনো?আমি জানি আমায় তুই বাঁচতে দিবিনা।তো যতটুকুই বাঁচি তোর সাথেই নাহয় বাঁচি”
প্রণয়ের ধারালো কন্ঠ,
“তুই কি বলবি পূর্ণ?”
“বলছি।আহিন আর আহানের মায়ের সম্পর্কেতো জানার কথা তোর?”
“জানি”
“তো মম যদিও আমার সৎ মা তারপরেও আমায় বেশ আদর করে।সেই সুবাদেই ক্যানাডা যাওয়া,আসা নিয়ে বিশেষ কোনো প্রবলেম নেই।ক্যানাডায়ই ডাক্তারদের সাথে যুক্তি করে অরণের মাথায় কি*ল প্রবেশ করানো।আর ফেইক রিপোর্ট বানানো আমার জন্য বিশেষ কোনো বিষয়ই ছিলো না”
“তুই যদি…..”
প্রণয়কে মাঝপথে থামিয়ে পূর্ণতা বলে,
“জানি তোর কথা।আমিই বলছি।আমার পুরো নাম অহনা অধিরাজ শেখ পূর্ণতা।পূর্ণতা আমার ডাকনাম।অহনাই মূলত আসল নাম।কিন্তু ড্যাডের যে দুই বিয়ে সেই বিষয়টা লুকাতে গিয়েই আহানকে তিনি সামনে আনেননি।আমায়ও আনেননি।সকলে জানতো আহিনই কেবল তার একমাত্র সন্তান।সেজন্যই অহনাকে সবসময় এব্রোডেই রাখা হয়েছে।যদিও বা আমি সর্বদা এখানেই ছিলাম।সে খবর আহিন কখনোই জানতে পারেনি আর ড্যাডও কখনো আমায় সামনে আসতে দেন নি,মানে পূর্ণতাকে সামনে আনেননি।পূর্ণতাকে পূর্ণতা হিসেবেই রেখেছেন।বাংলাদেশী অ্যাকাডেমিক নাম আমার কেবলই পূর্ণতা কিন্তু এমনিতে আমার জন্ম নিবন্ধে অহনা অধিরাজ শেখ।ড্যাডের পরিচয় লুকাতে গিয়েই পূর্ণতার পর শেখ সারনেম টা ড্যাড লাগায়নি।সে শিওর ছিলো আমায় তার সবচাইতে বড় হাতিয়ার বানাবে।এজন্যই সর্বদা লুকিয়ে রেখেছিলো আমার মুখ্য পরিচয়।যাতে যদি কখনো তার রহস্য উন্মোচিত হয়ও আমার ক্ষ*তি যেনো না হয়।আর তার অসম্পূর্ণ কাজ আমি সম্পন্ন করতে পারি।আহিনকেও চেয়েছিলো তবে ও হয়েছে ড্যাডের সম্পূর্ণ বিপরীত।আহানকে ম্যানিউপুলেট করে এই পথে আনতে সক্ষম হয়েছিলো যদিওবা।কিন্তু আমি বেশ সূক্ষ্মভাবেই আমার পরিচয় আত্মগোপন রেখেছিলাম প্রণয়”
“অথচ সারাজীবনই শুনে গেলাম বাবা-মা স্যাপারেট হয়ে গিয়েছে।তুই আসলেই মানুষের ইমোশন নিয়ে একটু বেশিই খেলে ফেলেছিস পূর্ণ”
“তুই আমায় মে*রে ফেললেও আমার কোনো আফসোস থাকবেনা প্রণয়।কারণ চাঁদ আর তুই যে এক হয়েছিসও তোদের পরবর্তী প্রজন্মের কোনো অস্তিত্ব ধরণীতে থাকবেনা।এবং এটাই আমার প্রাপ্তি”
পূর্ণতার বাক্যসমূহ শেষ হতেই ধীরপায়ে তার নিকট এগিয়ে আসে প্রণয়।অতঃপর একটু জোরালোভাবেই চোয়াল তার চে!পে ধরে বলে,
“তোকে তো এত জলদি মা*রবোনা পূর্ণ।আমার বাচ্চাকে তুই যতটা কষ্টের সহিত মে*রেছিস তার তুলনায়ও বহুগুন কষ্ট তোকে দিয়ে তারপর আমি মা*রবো।অ্যান্ড আই মিন ইট”
বলেই ঝাড়া দিয়ে পূর্ণতার চোয়াল ছাড়ে প্রণয়।অতঃপর ফের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে চোখজোড়া বেঁধে কামড়া হতে বেরুতে বেরুতে গম্ভীরস্বরে বলে,
“সবচাইতে নিকৃষ্ট এবং মানসিক মৃ*ত্যুটা আমি তোকে দেবো পূর্ণ”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
পরেরদিন খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম প্রণয়ের রুমের কাছে এসেই দরজায় কড়া নাড়ে রুবা।বেশ রাত করে বাড়ি ফেরায় প্রণয়ের ঘুম একটু গাঢ়ই ছিলো।অগ্যতা চাঁদই উঠে আসে দরজা খুলতে।অতঃপর দরজার বাইরে রুবাকে দেখে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করে,
“এত সকালে তুমি?”
“ভাইয়াই বলেছিলো ভাবি।এখনো উঠেনি ভাইয়া?”
“প্রণয় তোমায় ডেকেছিলো?”
“হ্যা”
“দরকারী কিছু?”
“হ্যা।তুমি একটু ভাইয়াকে ডেকে দাও প্লিজ”
“বেশ রাত করেই তোমার ভাইয়া ফিরেছিলো রুবা।এখনই ডাকাটা প্রয়োজন?”
খানিক চিন্তা করে রুবা বলে,
“হ্যা একটুতো জরুরী ছিলোই ভাবি…..”
চাঁদ আর রুবার কথোপকথনের মাঝেই টি-শার্ট গায়ে চাঁদের পাশে দাঁড়ায় প্রণয়।অতঃপর হাই তুলে বলে,
“এসেছো তুমি?ওখানে সব ঠিক হচ্ছে?”
“হ্যা ভাইয়া।আপাতত আর কী করা লাগবে?”
“আর কিছু না ওকে ওখানেই রাখো।পারলে বাইরে নিয়ে যেয়ো।আমি বেরুচ্ছি”
“তুমি শিওর সবকিছু ঠিক হবে?”
রুবার প্রশ্নে কেবল গম্ভীর চাহনী নিক্ষেপ করে প্রণয়।অতঃপর বাইরে বেরুতে নিলেই চাঁদ প্রশ্ন করে,
“কোথায় যাচ্ছেন প্রণয়?আর আপনারা ঠিক কী নিয়ে কথা বলছেন?”
চাঁদের পানে স্নিগ্ধ দৃষ্টির সহিত খানিক চেয়ে চোখের ইশারায় সামান্য হেসে প্রণয় বলে,
“দ্রুত ফিরবো।ফিরেই বলছি”
_________________________________
সকাল এগারোটার দিকে বাড়ি ফিরে হাপাতে হাপাতেই নিজ রুমে চাঁদকে না পেয়ে নিচে এসে মায়ের রুমের কাছে দাড়াতেই চাঁদ,ইয়ানা দু’জনকেই নজরে আসে প্রণয়ের।সাথে তার মা ও আছেন।প্রণয়কে দেখে পুষ্পিতা জামান ইশারায় ভেতরে ডাকেন।প্রণয় ভেতরে এসেই বলে,
“মা,চাঁদের সাথে কথা ছিলো”
“হ্যা নিয়ে যাও”
কথাখানা বলেই মুচকি হাসেন তিনি।সাথে মিটমিটিয়ে হাসে ইয়ানাও।এরূপ পরিস্থিতিতে বেশ বিব্রতবোধ করে চাঁদ।আর কিছু কাউকে না বলেই প্রণয় চাঁদের হাত ধরে বাইরে আসতে আসতে বলে,
“এখন আপনার হাসপাতালে যাওয়ার সময় না?ওখানে কী করছিলেন?”
প্রণয়ের সাথে বের হতে হতেই তার ঘাড় বরাবর চেয়ে চাঁদ বলে,
“আপনিতো তখনো ফেরেন নি তাই যাইনি”
“আচ্ছা শুনুন আজ যেতে হবেনা।রুবা আর শিফা কোথায়?বাড়িতেই?”
“না,কোথায় যেনো গিয়েছে”
“কোথায় গিয়েছে?”
কপাল কুচকে চাঁদ জবাব দেয়,
“বলে তো যায়নি”
“বাড়িতে ডেকোরেটর আসবে চাঁদ।আপনি বরং ঐ বাড়ি যান।আর রুবা,শিফাদের ওখানেই যেতে বলবেন।রিদি আর মিরাও থাকবে”
কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুচকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতেই পা জোড়া থামিয়ে প্রণয়কে নিজ পানে ঘুরিয়ে চাঁদ প্রশ্ন করে,
“আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা আপনারা করছেন টা কী?”
“বলছি,আসুন”
বলেই চাঁদকে কোলে তুলে নিজ রুমের দিকে এগোয় প্রণয়।প্রণয়ের বুকের কাছের টি-শার্টের অংশ দুই হাতে খা!মচে হকচকায় চাঁদ,
“প্রণয়!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দুপুর একটা চল্লিশ মিনিট,
প্রণয়ের ফুপি,মামা এবং খালার পরিবারের সকলেই হাজির চৌধুরী বাড়িতে।এসেছে তার বন্ধুমহলের সকলেই।চাঁদের বন্ধুমহলও আছে যদিওবা।কিন্তু প্রণয়ই সেখানে উপস্থিত নেই।না আছে রামিম।কপাল কুচকে পকেট হতে ফোন বের করে রিদির কানের কাছে মুখ নিয়ে বিড়বিড়ায় মির,
“তোমার দুই ভাই এত লেট লতিফ কেনো?আমি গেলে এতক্ষণে নিয়ে চলেও আসতাম!”
কপাল কুচকে রিদি প্রশ্ন করে,
“আপনি কার কার কথা বলছেন?”
“ও সরি,তিন ভাই বলা উচিত ছিলো না?”
চোখ রাঙায় রিদি,
“মির!”
ঠোট চেপে রিদির কানের কাছে মুখ রেখেই সেথায় আলতো চুমু এঁকে মির বলে,
“তবে আমিও একটু লেট লতিফ হয়ে গিয়েছি কী বলো?আরেকবার বিয়ে করি?”
মিরের কথায় মাত্রাতিরিক্ত লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করে রিদি।মিরের আকস্মিক স্পর্শে কেপে উঠেছে সে।শরীরের লোমকূপসমূহ দাড়িয়েছে তৎক্ষনাৎ।শ্বাস তার ঊর্ধ্বগতিতে বেড়েছে।গাল দু’টো তার একটু বেশিই যেনো জ্বলছে।সাথে হৃদস্পন্দনও তীব্র হয়েছে।মির আরও কিছু রিদিকে বলতে উদ্যত হতেই নজর যায় সিড়ি বেয়ে নামতে থাকা তিন রমনীর দিকে।মাঝে শিফা এবং তার দুই পাশে চাঁদ আর মিরা।তিনজনই কথা বলতে বলতে নামছে।শিফাকে একটু বেশিই ভয়ার্ত লাগছে।সে নামতে নামতেই চাঁদকে বলছে,
“ভাবি দেখো এটা কি ঠিক হচ্ছে?জানিনা কিছু না হুটহাট বিয়ের সিদ্ধান্ত।তাও আবার এঙ্গেজমেন্ট?আমার মতামত টা…..”
অসহায় মিশ্রিত কন্ঠে চাঁদ বলে,
“কী করবো বলো?হঠাৎ ই প্রণয় বললো আন্টি আর আংকেলও রাজি বিয়েতে।তাছাড়া প্রণয় নিজে সম্বোধন এনেছে আমি তাকে কিছুই বলতে পারিনি।ছেলের সাথে কথা পাকাপাকি।বেশ পছন্দ করে তোমায়”
“কিন্তু ভাবি আমারও তো একটা পছন্দের বিষয় আছে।তাকে যদি আমার পছন্দ না হয়?আর তুমিতো জানো আমি রায়…..”
শিফার কথার মাঝেই কথা বলে মিরা,
“ছেলেকে তোমারও পছন্দ হবে শিফা।বেশ সুদর্শন,শুধু শুধুইতো প্রণয় আর তোমার জন্য তাকে বাছেনি।সুদর্শনের পাশাপাশি দায়িত্ববানও”
“কিন্তু আপু আমি সত্যিই বিয়ের জন্য এখন রেডি….. ”
“প্রণয় তাকে কথা দিয়ে ফেলেছে শিফা”
চাঁদের কথায় তার আঁখিজোড়ায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই সেথায় অসহায়ত্ব অবলোকন করে চুপ হয় শিফা।মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আঁখিজোড়া বদ্ধ করেই চাঁদ আর মিরার সহিত সিড়ি বেয়ে নেমে আসে।অতঃপর কপাল কুচকে গোমড়ামুখেই দাঁড়িয়ে থাকে চাঁদের পাশে।রিদি তার কাছে আসলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় শিফা।শিফার ব্যবহার উপলব্ধি করে রিদি তাকে প্রশ্ন করে,
“কী রে কী হলো?খুশি হস নি?রুবার আগেই তোর বিয়ে হচ্ছে”
ভড়কায় শিফা,
“অনেক খুশি হয়েছি।হবো না কেন?তোদের মতো ঘসেটি বান্ধবী থাকলে কেই না খুশি হবে?”
তৎক্ষনাৎ কপাল কুচকে মির বলে,
“এই শালিকা,ঘসেটি আর মিরজাফরের সম্পর্ক কেবল আমার আর চাঁদের।ঐ ট্যাগ আমাদের জন্যই বরাদ্দ রাখো।তাতে আমাদের দু’জনেরই কপিরাইট আছে বুঝেছো?”
রাগী দৃষ্টি মিরের পানে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে শিফা বলে,
“বেশ মজা লাগছে তোমাদের?”
অতঃপর কপাল কুচকে আশেপাশে চেয়ে বলে,
“ঐ রুবা বেয়াদবটা কোথায়?”
পাশেই রবিন এসে বলে,
“তোমার বরের সাথে আসছে।হবু দুলাভাই কিনা!”
বেশ বিরক্ত হয়ে শিফা কিছু বলতে নিলেই সকলের মুখে গুঞ্জন ভাসে ‘বরপক্ষের লোক এসেছে’ সহ বিভিন্ন বাক্য।কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই শ্বাস বাড়ে শিফার।বুকের ভেতর থাকা হৃদযন্ত্রের ‘লাব ডাব’ শব্দসমূহ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে,যেনো কান তার ফে!টে যাবার উপক্রম।অস্থিরতা ক্ষণে ক্ষণেই বাড়ছে শিফার।খানিক ঘেমেও গিয়েছে।ঘমার্ক্ত শরীর লালচে হচ্ছে ধীরে ধীরে।এক্ষুণি বোধহয় সে জ্ঞান হারাবে।আকস্মিক এত বড় ধাক্কা মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।মাথা তার ঘুরাচ্ছে।অতঃপর প্রবেশদ্বার হতে রায়হান,রামিম,প্রণয় আর রুবাকে আসতে দেখে শ্বাস থমকায় শিফার।গলার কাছে শ্বাস আটকে আসতেই চোখজোড়া বড় বড় হয়,নজর কেবল রায়হান পানেই নিবদ্ধ হয় তার।পলকসমূহ থামে।কিয়ৎক্ষণ বাদে রায়হানকে নিজের সম্মুখে এবং রুবার চঞ্চল স্বরে ধ্যান ভাঙে শিফার।রায়হানের বাম পাশে রুবা দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীসহিতই দুই হাত রায়হান পানে ইশারা করে বলছে,
“টানটানা!মিট মাই হবু দুলাভাই ওরফে আমার নিজের ভাই!”
To be continued…..
[বিঃদ্রঃগল্পটা কাল্পনিক।তাই কাল্পনিকভাবে নেওয়ার এবং ভুলসমূহ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ]