মেডিকেল ক্যাম্প Part:31

0
162

FF:মেডিকেল ক্যাম্প
Part:31

হিয়া আর ডক্টর অদিত এর মধ্যে ভালো সম্পর্ক টা মৃন খুব খারাপ ভাবে তুলে ধরে প্রতিনিয়ত উজানের কাছে…
আজকে কলেজে কিছু সিলেক্টেড স্টুডেন্ট দের নিয়ে একটা কনফারেন্স এর আয়োজন করা হয়।হিয়ার নামো আছে এর মধ্যে।আর কিছুক্ষণ পর কনফারেন্স শুরু হবে…….

অদিত:হিয়া হিয়া..
হিয়া:হুম স্যার বলুন…
অদিত:কোথাও যাচ্ছিলে
হিয়া:হ্যা স্যার আজ কনফারেন্স আছে না।তো ওটাতে আমার নাম আছে ওখানেই যাচ্ছিলাম..
অদিত:ওহ আমি তো ভুলেই গেছিলাম কনফারেন্স এর কথা…যাই হোক এটা তোমার জন্য
হিয়া:কি এটা স্যার…?
অদিত:আমি তোমাকে আমার বোনের কথা বলেছিলাম না হিয়া।তোমার মতো দেখতে…ওর নেক্সট উইক বিয়ে আমি চাই তুমি তোমার পরিবার কে নিয়ে আসো…সবাই কে বলেছি ক্লাসের,শুধু তোমাকেই বলা হয়নি।
হিয়া:স্যার আমি…ঠিক আছে স্যার…
অদিত:আর উজান ও তো যাচ্ছে চাইলে ওর সাথেও আসতে পারো….
হিয়া:স্যার আপনিও না…
অদিত:হাহাহা…দেখো হিয়া যতোই লুকাও না কেনো তুমি যে উজান কে পছন্দ করো সেটা কিন্তু আমার কাছে গোপন করো না..তবে উজান যে রাগি পারবে তো ওকে সামলাতে…

…অদিত আর হিয়া দুজনে হেসে দেয়।উজান আর মৃন দূর থেকে দাড়িয়ে ওদের এভাবে হেসেহেসে কথা বলতে দেখে…

মৃন:দেখলে তো উজান আমি তোমাকে বলেছিলাম না অদিত আর হিয়ার মাঝে কিছু একটা চলছে নাহলে কেউ তার স্যার এর সাথে এভাবে হেসে হেসে কথা বলে….আমি তো জানতাম ই হিয়ার ক্যারেকটার এর ঠিক নেই কোনো, যাকে পায় তার গা এই…এতোদিন তোমার ক্লাস ছিলো তাই তোমাকে প্রয়োজন ছিলো আর এখন তো তুমি নেই তোমার প্রয়োজন টাও নেই..

উজান:মৃন…
মৃন:প্লিজ উজান এবার তো একটু বোঝো….এনিওয়ে কনফারেন্স শুরু হতে চললো আমাদের আগানো দরকার…
উজান:হুম চলো…
…………………………
হিয়ার হঠাৎ আবার মাথা ঘোরে..
অদিত:হিয়া হিয়া কি হলো…দেখি এদিকে বসো…মাথা ঘুরছে…হিয়া
হিয়া:আমি ঠিক আছি স্যার ঔ একটু মাথা টা কেমন জানি ঘুরে গেলো…
অদিত:এ অবস্থায় পারবে তুমি কনফারেন্স এটেন্ড করতে….?
হিয়া:পারবো স্যার আমার প্রায় এমন হয় পেসার আছে ওটা একটু ওঠা নামা করে….
অদিত:ওয়েট আমি তোমার জন্য পানি আনছি পানি টা খেয়ে তারপর না হয় যাও…
………………..

মৃন:আর কতোক্ষন হিয়ার জন্য ওয়েট করবে তুমি উজান?
নিলীমা:মৃন তো ঠিকি বলছে একজন এর জন্য এতোগুলো মানুষ কে বসিয়ে রাখার তো কোনো মানে নেই….
মৃন:দেখো এখনো হয়তো অদিত এর সাথেই গল্প করছে আসার সময় যা দেখলাম..

উজান:(মনে মনে)আমি হিয়া কে কাল এতো করে বললাম কনফারেন্স টা কতো জরুরি উনি তাও কোনো গুরুত্ব না দিয়ে অদিত এর সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করছে…ডিসগাস্টিং…আমার কথার কোনো দাম নেই ওনার কাছে….আমি হিয়া কে একটু বেশি লায় দিয়ে ফেলেছি…..

……..
হিয়া:স্যার আপনাকে অনেক অনেক থ্যাংকস। আমি এখন আসি কনফারেন্স এতোক্ষন এ মনে হয় শুরু হয়ে গেছে এর পর আরো দেড়ি হলে উজান স্যার খুব রাগ করবে..
অদিত:ঠিক আছে সাবধানে এসো..

………..
হিয়া:স্যার আসবো।আসলে আমার আসতে একটু লেট হয়ে গেলো…
উজান:স্টপ মিস মিএ….গেট আউট…
হিয়া:স্যার…
উজান:আই সেইড গেট আউট
হিয়া:স্যার আমি কনফারেন্স এটেন্ড করতেই আসছিলাম হঠাৎ আমার…
উজান:হঠাৎ হঠাৎ কি হিয়া….আপনাকে ইনফেক্ট সবাই কে কালকে বলা হয়েছিলো এই কনফারেন্স টা আপনাদের জন্য কতো জরুরি তারপরো আপনি লেট করলেন…..এতো কেয়ারলেস আপনি কি করে হতে পারেন……আর এই কনফারেন্স টা খুবই সিনসিয়র স্টুডেন্ট দের নিয়ে করা হয়…কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে না আপনার মধ্যে সেই কেপিবিলিটি আছে।সো প্লিজ গেট আউট ফর্ম দিছ কনফারেন্স.
হিয়া:কিন্তু স্যার…
উজান:আমি আপনাকে কি বললাম আপনি শুনতে পারেন নি…
হিয়া:ঠিক আছে স্যার…সরি…..
……………

হিয়া:উনি একবারো আমার কথা টা শোনার প্রয়োজন টুকু মনে করলো না….উজান স্যার কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে দিন দিন….আজ তো আবার ওটিও আছে…আমি কি থাকবো না যাবো…ওটি তে আসিস্ট না করলে যদি আবার রেগে যায়।থেকে যাই না করে দিলে তখন না হয় বাড়ি চলে যাবো…..

…..ওটি শুরু হয়…হিয়া উজান কে ওটি তে আসিস্ট করে বাট দুজনের মধ্যে আগের মতো কোনো কথা নেই।ওটি প্রায় রাত আটটার দিকে শেষ হয়..

হিয়া:স্যার এর ফোন।হুম স্যার বলুন..
উজান:কোথায় আপনি?
হিয়া:এইতো টিউলিপের গেটে অটো নিচ্ছি
উজান:আচ্ছা একটু ওয়েট করুন আমি আসছি কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে…
হিয়া:ঠিক আছে আমি দাড়িয়ে আছি আপনি আসুন..

………..
হিয়া:জিনিয়া এতো রাতে আমাকে হঠাৎ…হ্যালো জিনিয়া বলো….?
জিনিয়া:(কাঁদতে কাঁদতে ভয়ে)হ্যালো হিয়াদি….. হিয়াদি তুমি কোথায়?….আমাকে হেল্প করো হিয়াদি ওরা আমাকে আমাকে ওরা…প্লিজ হিয়াদি তুমি জলদি এখানে আসো….
হিয়া:জিনি কি হয়েছে তুমি এভাবে কাঁদছো কেনো…আর কিসের হেল্প কে তোমাকে কোথায় নিয়ে গেছে..

জিনিয়া:আমি পরে তোমাকে সব বলবো প্লিজ তুমি তাড়াতাড়ি এখানে চলে আসো…না হলে ওরা আমাকে…
হিয়া:আমি আসছি আমি আসছি জিনি তুমি কেঁদো না…আমি আসছি কোথায় কোথায় যেতে হবে বল আমায়..
জিনি:……….
হিয়া:হ্যালো জিনিয়া জিনি….
…….আমাকে শীঘ্রই যেতে হবে। জিনিয়া কোনো বড়ো বিপদে পড়েছে কিন্তু এদিকে যে উজান স্যার আমাকে থাকতে বললো…নাহ নাহ ওনার জন্য ওয়েট করলে হবে না…ওনাকে বলবো।না না এরপর তো ওনার আরো একটা ওটি আছে নাহলে উনি এই টেনশন এ ওটি তে মন দিতে পারবে না….অটো অটো এই অটো…ধুরো কেউ যাচ্ছে না।জিনি জিনি কেমন আছে কি করছে মেয়ে টা..

অদিত:হিয়া তুমি এভাবে রাস্তায়
হিয়া:স্যার আসলে আমার বোনের একটা বড়ো বিপদ হয়েছে আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।অটো ট্যাক্সি কিচ্ছু নেই…
অদিত:শান্ত হও আগে…আসো আমি তোমাকে ড্রপ করে দিচ্ছি তুমি এসো আমার সঙ্গে
হিয়া:আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন…
অদিত:কোনো সমস্যা
হিয়া:(এখন ওসব ভাবলে চলবে না হিয়া।জিনির কিছু হয়ে গেলে)না স্যার কোনো সমস্যা না।ঠিক আছে তাড়াতাড়ি চলুন…
অদিত:তুমি আমাকে ঠিকানা টা বলো….
হিয়া:হুম বলছি…

……হিয়া অদিত এর গাড়িতে উঠতে গেলে উজান এসে দেখে নেয়…এতে হিয়াকে ভুল বোঝার আরো একটা সুযোগ উজান পায়…

উজান:হিয়াকে আমি দাঁড়াতে বললাম আর উনি অদিতের সাথে তাও আবার ওনার গাড়িতে….আমি ভাবলাম রাত হয়েছে উনি অটো ট্যাক্সি হয়তো কিছু পাবে না আমি ড্রপ করে দিয়ে আসি কিন্তু আমি ভুল ছিলাম এখন তো ওনাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ায় লোকের অভাব নেই…(অভিমানে)

….এদিকে জিনি কে ওর কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা বার এ নিয়ে আসে।বার টা খুবই জঘন্য।জিনি প্রথমে বুঝতে পারেনি কিন্তু পরে ও বুঝতে পারে ওর এই ফ্রেন্ড গুলো ওকে বদ মতলবে না বলে এরকম একটা জায়গায় নিয়ে এসেছে..

হিয়া:স্যার।স্যার এখানে।এইতো এ জায়গাটার কথাই তো বললো…
অদিত:হিয়া তুমি সিউর এখানে..
হিয়া:কেনো স্যার এখানে কি।আমার ভীষণ ভয় করছে স্যার বলুন না..
অদিত:হিয়া এটা তো একটা বার…তোমার বোন এখানে…
হিয়া:বার….না না জিনি মোটেও ওরকম মেয়ে না আমি আমার বোনকে চিনি…
অদিত:ঠিক আছে হিয়া রিলাক্স।চলো আসো ভিতরে…এসো আমার সাথে……
হিয়া:হুম….
………..হিয়া আর অদিত গিয়ে জিনি কে ওখান থেকে সেভ করে বাহিরে নিয়ে আসে….

জিনিয়া:(কাঁদতে কাঁদতে) হিয়াদি বিশ্বাস করো আমি জানতাম না ওরা আমাকে এখানে নিয়ে আসবে…ওরা আমাকে আমাকে ওরা মিথ্যে বলে এখানে এনে…
হিয়া:(জিনি কে ওর বুকে নিয়ে)কি হয়েছে এতে কাদার কি আছে পাগলি মেয়ে একটা…আমি জানি আমার জিনি কখনো কোনো খারাপ কিছু করতে পারে না….এই দেখো আবার কাদেঁ..

জিনিয়া:আজ তুমি ঠিক সময় না এলে…
হিয়া:ঠিক সময় না আসলে কি হ্যা।খারাপ কিছু কি হয়েছে…হতে পারতো হয়নি তো..তা তাহলে..দেখি চোখটা মুছতোঁ এবার।

জিনি:হিয়াদি আমাকে একটা কথা দিবে।
হিয়া:কি কথা..
জিনি:আমাকে ছুইয়ে প্রমিস করো
হিয়া:আচ্ছা বেশ করলাম…
জিনি:তুমি দাদাভাই কে এসব ব্যাপার এ কিছু বলবে না আজকে যা যা হলো তুমি প্লিজ উজান দা বা ছোট দা কে কিছু বলবে না বলো প্রমিস করো…আসলে জানো দাদাভাই আমাকে এর আগেও এদের সাথে মিশতে মানা করেছিলো কিন্তু আমি শুনিনি।এখন দাদাভাই জানতে পারলে আমাকে শেষ করবে..তুমি প্লিজ উজান দা কে কিছু বলো না.

হিয়া:তোর উজান দা কে তাহলে তো তুই চিনলি না জিনি উনি যদি জানতে পারে তুই এমন একটা বিপদে পড়েছিস তাহলে কি উনি তোকে বকবে….তবে তুই যখন বলছিস আমি ওনাকে কিছু বলবো না পাক্কা প্রমিস…
অদিত:হিয়া দেখি জল টা নেও তো জিনিয়া কে দেও।তখন থেকে কাঁদছে মেয়ে টা….

…অদিত জিনিয়া কে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে হিয়াকে বাসায় ড্রপ করে দিতে যায়…..
……
বুলি:হ্যালো উজান দা
উজান:বলো
বুলি:দিদি কোথায় গো আছে তোমার সাথে আসলে ওকে না ফোনে পাচ্ছি না…কিছু মেডিসিন আনতে বলতাম টিউলিপ থেকে…
উজান:হিয়া এখনো বাড়ি যাইনি…
বুলি:না তো
উজান:মনেমনে(ওটি তো শেষ হয়েছে সেই কখন আমি তো ওনাকে ৯টার সময় অদিতের সাথে যেতে দেখলাম ১২টা হতে চললো তিনঘন্টা উনি কোথায় ছিলেন…
বুলি:হ্যালো উজান দা রাখো দিদি মনে হয় এসেছে…হ্যা দিদি ই তো।সরি হ্যা এতো রাতে তেমাকে বিরক্ত করলাম। রাখছি এখন আমি কেমন..
উজান:হুম…(বাহ হিয়া আপনি অদিত এর সাথে এতো রাতে….আপনি আমাকে এভাবে..)(অভিমানে)

হিয়া:স্যার আসুন না ভিতরে বসুন।
অদিত:নাহ হিয়া অনেক রাত হয়ে গেছে এখন এসময় সবাই ভালো ভাবে নেবে না..আমি বরং অন্য একদিন আসবো…
হিয়া:ঠিক আছে স্যার…
অদিত:আসি তাহলে
হিয়া:(অদিত যেতে ধরলে)স্যার আপনি আমার জন্য যা করলেন শুধু বারবার আপনাকে থ্যাংকস দিয়ে আমি আর ছোট করবো না শুধু একটা রিকুয়েস্ট আছে
অদিত:রিকুয়েস্ট! বেশ বলো
হিয়া:আজ যা যা হলো আপনি প্লিজ কাউকে এ ব্যাপার টা বলবেন না…
অদিত:তুমি চিন্তা করো না আমি কাউকে বলবো না….
হিয়া:থ্যাংক ইউ স্যার….থ্যাংকস এ লট
অদিত:আসি তাহলে….
হিয়া:হুম….

……..হিয়া এসে ফ্রেশ হয়ে উজান কে অনেকবার ফোন করে কিন্তু উজান রিসিভ করে না।পরের দিন উজানের কেবিন…….
মৃন:কালকে নাকি হিয়া আর অদিত রাতে বাহিরে গিয়েছিলো জানো কিছু…
উজান:আমি জেনে কি করবো মৃন
মৃন:ওমা তোমার এতো ভালো স্টুডেন্ট সারাক্ষণ গুরুজি গুরুজি উজান স্যার উজান স্যার বলে বের হয় তারর একটু খোজঁ রাখবে না…
উজান:তোমার আর কিছু বলার আছে মৃন…
মৃন:না আর কি বলবো..ওরা কালকে কোথায় গিয়েছে জানতে চাও না..

উজান:আই ডোন্ট কেয়ায়..
মৃন:তাই কেয়ার করো না বলছো…যাই হোক আমি তো শুনলাম কালকে নাকি হিয়া আর অদিত কোনজানি একটা বারে গিয়েছিলো….

উজান:হোয়াট!আর ইউ ইনসেন্স তোমার মাথা টা কি গেছে মৃন….হিয়া আর কোথাও যাক আর না যাক এসব জায়গায় উনি কখনো যেতে পারে না…

মৃন:আমি সবটা জেনেই….
হিয়া:স্যার আসবো…
মৃন:আরে ঔতো হিয়া।হুম এসো না হিয়া ভিতরে এসো….উজান তুমি ওকেই জিঙ্গাস করো না কেনো ওহ কোথায় গিয়েছিলো..??

হিয়া:কি জানতে চাচ্ছেন আমাকে নিয়ে কিছু…

মৃন:কালকে রাতে তো তুমি অদিতের সাথে বেরিয়ে ছিলে তাই না হিয়া…শুনলাম তোমরা নাকি একটা বারে গিয়েছিলে…তাহ কলকাতা তে এতো জায়গা থাকতে তোমাদের এতো রাতে বারেই যেতে হলো…

হিয়া:ম্যাম আমরা আসলো ওখানে
উজান:আপনি অদিতের সাথে বারে গিয়েছিলেন…
হিয়া:হ্যা মানে আমরা গিয়েছিলাম কারন….(হিয়া কিছু বলতে যাওয়ায় আগে ওর জিনি কে দেওয়া কথা গুলো মনে পড়ে….হিয়া আর কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না….)

উজান:মৃন তুমি একটু বাহিরে যাও আমার ওনার সাথে কিছু কথা আছে…
মৃন:উজান আমি..
উজান:আমি তোমাকে যেতে বলেছি তুমি প্লিজ যাও….
মৃন চলে যায়।উজান গিয়ে কেবিনের গেট লক করে হিয়া কে এসে চেপে ধরে…

উজান:আমি আপনাকে কালকে বললাম হিয়া আপনি একটু ওয়েট করুন আমি আসছি আমার কিছু কথা আছে আপনার সাথে।আমি এসে কি দেখি আপনি অদিতের গাড়িতে করে বেরিয়ে গেলেন…আর গেলেন তো ফিরলেন কখন রাত ১২টায়….আর আজকে আমি জানতে পাচ্ছি আপনি অদিতের সাথে, ছিঃ হিয়া আমার ভাবতেই লজ্জা হচ্ছে আপনি..(রাগে)

হিয়া:স্যার আমার হাতে ভীষন লাগছে….

উজান:কেনো করলেন আপনি আমার সাথে এরকম…এ্যান্সার মি…(চিৎকার করে)

হিয়া:(মনেমনে)আপনি আপনার হিয়াকে এতো টাই অবিশ্বাস করেন উজান স্যার।আমি যদি বারে গিয়েও থাকি আপনি কিভাবে ভাবলেন আমি আর অদিত স্যার…আমিও আপনাকে এবার কিছু বলবো না আমিও দেখতে চাই আপনি আমাকে কতোটা চিনেন….

উজান:কি হলো চুপ করে কেনো আছেন…উওর দিন….কেনো গিয়েছিলেন আপনি ওরকম একটা জায়গায়….(রাগে)

হিয়া:মানুষ বারে কেনো যায় উজান স্যার….(আস্তে)

……..উজান হিয়ার কথায় অবাক হয়ে হিয়ার হাত টা ছেড়ে দেয়….
উজান:মানে আপনি কি বলতে চাইছেন..?
হিয়া:এতে তো না বোঝার কিছু নেই…মানুষ বারে যে জন্য যায় আমি আর অদিত স্যার ও সে জন্যই গিয়েছিলাম….যদি খারাপ কিছু করতেও যাই করলাম না হয়…

উজান:হিয়া…..ঠাস….
হিয়া:আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন উজান স্যার
উজান:হিয়া আমি…
হিয়া:আপনি এর আগেও আমাকে মেরেছিলেন কিন্তু ওগুলো ওগুলোতে আপনার ভালোবাসা আপনার আদর আপনার টেনশন আমার প্রতি আপনার যত্ন মিশে ছিলো…আমি বরং আপনাকে বেশি করে ইরিটেট করতাম যাতে আপনি আমাকে বকেন আমাকে মারেন আমার ওসব ভালো লাগতো…কিন্তু আজ আপনি অন্য একজন এর কথা শুনে আমাকে…..(হিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে)
উজান:যদি অন্য কারো কথা শুনে আপনাকে কিছু বলেও থাকি ভুল কিছু কি করেছি আমি।আপনি তো নিজের মুখেই সবটা স্বীকার করে নিলেন…

হিয়া:হুম আমারি তো ভুল…
উজান:নাহ ভুল কেনো আপনার হতে যাবে ভুল টাতো আমারই আমিই আপনাকে সবার থেকে আলাদা ভেবেছিলাম বাট না আপনিও সব মেয়ের মতো…আজকে প্রথমবার আমার মনে হচ্ছে সেদিন আমাদের বিয়ে টা ওভাবে না হলেই বরং ভালে হতো….(অভিমানে)
হিয়া:উজান স্যার…….

……হিয়া কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।উজান গিয়ে গাড়িতে থাকা ড্রিংক এর বোতল টা নিয়ে ড্রিংক করতে থাকে।ড্রিংক করতে করতে উজানের ডান হাতে চোখ পড়লে ওর মনে হয় এ হাত দিয়ে হিয়াকে ও একটু আগে মেরেছিলো। উজান বোতল টা ভেঙ্গে কাচের টুকরো গুলো দিয়ে ওর হাত টায় আঘাত দেয়।আর এই দিকে আমাদের হিয়া বাসায় গিয়ে বালিশ জরায় কাঁদতে শুরু করে…..

……এদিকে দিন যতো গড়াতে থাকে উজান আর হিয়ার মাঝে ভুল বোঝাবোঝি তোতো বাড়তে থাকে…টিউলিপে আজ ডক্টর দের নিয়ে পার্টি থ্রো করা হয় যেখানে সব স্টুডেন্ট আরও উপস্থিত….

দুজন নার্স এর কথোপকথন :
১ম নার্স:দেখ দেখ উজান স্যার আর মৃনালিনী ম্যাম কে কি সুন্দর লাগছে…
২য় নার্স:হুম কি মানিয়েছে বল..তার উপর দুজনে হার্টের ডক্টর
১ম নার্স:কিন্তু জানিস আমি শুনেছি ঔ যে হিয়া বলে মেয়েটা আছে না ওর সাথে নাকি উজান স্যারের কিছু চলছে ভেতরে ভেতরে..
২য় নার্স:সে তো আমিও শুনেছি…বুঝি না বাপু উজান স্যার কি যে পেয়েছে হিয়ার মাঝে…হিয়ার কি আছে বল তো শুধু পড়াশুনো তে ভালো হলে হয় না।এখন কি পড়াশুনো কেউ দাম দেয় নাকি..এখন তো শুধু টাকা আর ক্ষমতার খেল..

১ম নার্স:আমি তো শুনেছি মৃনালিনী ম্যাম এর নাকি বিরাট ব্যাপার খুব নাম ডাক..উজান স্যার হিয়ার পেছন ছুটে সময় নষ্ট না করে মৃনালিনী ম্যাম কে বিয়ে করে নিলে দেখবি আরে কতো উপরে উঠে যাবে
২য় নার্স:সে কি আর বলতে…কোথায় হিয়া আর কোথায় মৃনালিনী ম্যাম…

……..হিয়া নার্স দুটোর কথোপকথন শুনছিলো।হঠাৎ পিছন থেকে নিলীমা এসে…

নিলীমা:কি ভাবছো ওদের কথা.
হিয়া:না না ওসব কেনো ভাবতে যাবো
নিলীমা:ভাবা টা দরকার হিয়া।দেখো ওরা তো ভুল কিছু বলেনি।কি আছে বলো তো তোমার কি দিতে পারবে তুমি উজান কে আর মৃন কে দেখো কোনো কমতি আছে কি ওর। দুজন কে কি সুন্দর লাগছে….তুমি প্লিজ এবার না হিয়া উজান কে ছেড়ে দেও।উজান এবার সুখে থাকুক বাকিটা লাইফ….

নিলীমা আর ওদের কথা শুনে হিয়ার মনটা এবার ভেঙ্গে যায়..ওহ কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসে…..

হিয়া:সত্যি তো ওরা তো ভুল কিছু বলেনি।উজান স্যার তো আমাকে ছেড়ে দিয়ে মৃনালিনী ম্যাম কে বিয়ে করে নিলে সুখে থাকবে…আমার কি আছে আমি তো কিছু দিতে পারি নাই আজ পর্যন্ত ওনাকে উল্টে ওনার কাছ থেকে নিয়েছি।আমি স্যার কে বলবো উনি যেনো আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওনাকে বিয়ে করে নেয়….(কাঁদতে কাঁদতে)

….আজ উজান আর হিয়ায় তুমুল ঝগড়া বাধে…..

উজানের কেবিন…..

মৃন:আসবো
উজান:হুম এসো….এসব কি
মৃন:আমি আজ তোমার আর আমার জন্য লান্চ এর আয়োজন করেছি খেয়ে দেখো তো কেমন হলো….
উজান:প্লিজ মৃন এসব নিয়ে যাও আমার ভালো লাগছে না…
মৃন:একটু খেয়েই দেখো না…
উজান:বললাম তো মৃন আমি এসব খাই না প্লিজ তুমি আমাকে জোর করো না…
…..এমন সময় হিয়া আসে…..
হিয়া:স্যার আসবো
উজান:আসুন…
হিয়া:আপনারা খাচ্ছিলেন ঠিক আছে আমি পড়ে আসছি তাহলে…..
মৃন:তাই ভালো হয় হিয়া তুমি গিয়ে বাহিরে ওয়েট করো….আমি যখনি আসি তখনি তোমাকে উজানের কেবিনে দেখি….
হিয়া:সরি ম্যাম…আমি আসছি…..স্যার আমি বাহিরে ওয়েট করছি আপনাদের হয়ে গেলে আমাকে ডেকে নিয়েন…(অভিমানে)

উজান:মনেমনে(হিয়াকে এমন দেখাচ্ছে কেনো তবে বুলি যে বললো দিদির শরীর টা খারাপ সেটা কি ঠিক…কি যে করে না ইনি…আমার কথা না শুনে সারাক্ষণ অদিত এর পেছন পড়ে থাকলে তো এমনি হবে…..)(রাগে)

মৃন:হ্যা প্লিজ হিয়া যাও…

হিয়া গিয়ে বাহিরে ওয়েট করে…

উজান:মৃন প্লিজ আমি এক কথা বারবার বলা পছন্দ করি না…তুমি এগুলো নিয়ে যাও…

মৃন:আমি এতো শখ করে তোমার জন্য নিয়ে এলাম আর তুমি…ঠিক আছে খেতে হবে না…
…..মৃন গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়..

হিয়া:ম্যাম তো বেরিয়ে গেলো।লান্চ নিশ্চয় হয়ে গেছে এতোক্ষনে।আমি কি যাবো ভিতরে..

……স্যার আসবো…
উজান:হুম আসুন….
হিয়া:স্যার আজকে কি ওটিতে আপনাকে এসিস্ট করতে হবে?
উজান:কেনো হঠাৎ!এটেন্ড করতে পারবেন না নাকি আজ…
হিয়া:নাহ আপনি বললে করবো….
উজান:তাহলে…আপনার শরীর ঠিক আছে এখন…
হিয়া:আমার আবার কি হবে আমি ঠিক আছি..আর আমাকে নিয়ে এখন আপনার না ভাবলেও চলবে..

উজান:সেই এখন আপনাকে নিয়ে ভাবার তো কতো মানুষ আছে আমার না ভাবলেও চলবে.

হিয়া:আপনি কি মিন করতে চাইছেন উজান স্যার…
উজান:যেটা আপনি বুঝেছেন..

হিয়া:ওটি আছে কি না এটাই জানার ছিলো আমার।আমি আসছি…

উজান:এতো কিসের তাড়া আপনার ওহ এর পর তো শুনলাম অদিত এর প্রাক্টিকেল ক্লাস এ জন্যেই এতো যাইযাই করছেন..

হিয়া:আপনার যা ভাবার ভাবুন আমার সত্যি এখন আর কিছু যায় আসে না আপনার ভাবনাতে..
আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনি যে আমাকে এতো কথা শুনাচ্ছেন তা এ কদিনে কই একবারো তো আমাকে ফোন দিয়ে এটা জানতে চাইলেন না আমি কেমন আছি আমার শরীর কেমন আছে এ কদিন এ তো একবারো বললেন না হিয়া চলো আজ তোমাকে ড্রপ করে দেই..আগে কতো বাহানা খুঁজতেন আমার কাছে আসার জন্য আমার স্পর্শ পাওয়ায় জন্য কোথায় এখন তো আর এসব কিছু করেন না…..আর আমিও পাগল বলুন আপনাকে এসব বলছি আপনি তো এখন অন্য একজন কে নিয়ে ব্যাস্ত….একসাথে ওটি করছেন তারপর সময় কাটাচ্ছেন আর আজ তো একসাথে লান্চ ও করলেন…….
……..উজান এসে হিয়া কে চেপে ধরে…

উজান:হোয়াট ডু ইউ মিন হিয়া…
হিয়া:আমিও কি মিন করতে চাচ্ছি আপনি বুঝতে পারছেন ভালো করেই..
উজান:আসলে কি জানেন তো যার মনে যেটা সেটা ওহ অন্য কে দিয়ে ভাবে….
হিয়া:তাই না আর তাছাড়া আমার মনে যদি অদিত স্যারকে নিয়ে খারাপ কিছু থেকেই থাকে তো আপনার কি সমস্যা তাতে…..আমার ব্যাপার আমাকে বুঝতে দিন…

উজান:দিতাম যদি কাগজে কলমে আপনাকে আমি নিজের করে নাহ নিতাম..

হিয়া:তাহলে সেই কাগজে কলমেই আমাকে আলাদা করে দিন..
উজান:কি মিন করতে চাইছেন আপনি…
হিয়া:আমাকে ডিভোর্স দিয়ে মৃনালিনী ম্যামকে বিয়ে করে নিন…..
উজান:হোয়াট…
হিয়া:হুম আমি আপনাকে কি দিতে পেরেছি বলুন তো।কি আছে আমার মৃন ম্যাম এর তো এতো কিছু আর এ কদিন আপনারা যেভাবে মিশছেন তাতে যে কেউ বলে দেবে আপনাদের মধ্যে কিছু চলছে…

উজান:আপনি আমার কথা কেনো বলছেন বললেই তো পারেন আপনাকে ডিভোর্স দিলে আপনার রাস্তা টা ক্লিয়ায় হয়ে যায় তখন আপনি আর অদিত এর সম্পর্ক টা তে কোনো বাধা থাকে না…
হিয়া:যদি তাই হয় তাহলে ওটাই করুন।আমার না আর এই প্রত্যেক টা দিন এসব নিয়ে ঝামেলা আর ভালে লাগে না…আমি বিরক্ত হয়ে গেছি….আপনি তো আপনার জায়গায় ভালে আছেন…ওটি করছেন গল্প করছেন একসাথে খাচ্ছেন তাহলে আমি কেনে পারবো না…আমিও এবার একটু নিজের লাইফ টা আমার মতো কাটাতে চাই….(রাগে)

উজান:আমি এতো বিরক্ত করি আপনাকে…আচ্ছা বেশ ডিভোর্স চাই তো আপনার আমি দেবো আপনাকে ডিভোর্স……এখন কি মনে হচ্ছে জানেন আমার সেদিন মিনাক্ষী চ্যাটার্জির ওফার টা মেনে নেওয়াই বেটার ছিলো আমি ফরেন চলে গেলে হয়তো আজ আপনার এই নোংরামো গুলো দেখতে হতো না…

হিয়া:এখনো তো সময় সুযোগ দুটোই আছে সাথে মৃনালিনী ম্যাম প্লিজ আপনি চলে যান বিদেশ।আপনি টিউলিপে থাকলে আমার আরো বিরক্ত লাগবে এই ইয়ায় টা…প্লিজ আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে মৃন ম্যাম এর সাথে বাহিরে গিয়ে সেটেল হয়ে নিন…..প্লিজ…

উজান:আপনাকে আমি কখনো মাফ করবো না হিয়া কখনো না….ছিঃ আপনি প্লিজ আর কখনো আমার চোখের সামনে আসবেন না প্লিজ…আর ডিভোর্স তো আমি আপনাকে পেপার পাঠিয়ে দিবো আপনি শুধু কষ্ট করে সাইন টা করে দিয়েন….
হিয়া:হুম….(হিয়া কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসে)

…..হিয়া বাসায় এসে ওর রুমে কাঁদতে থাকে….

হিয়া:আমি আপনাকে ওভাবে কথা গুলো বলতে চাই নাই উজান স্যার।আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিয়েন।কিন্তু এটাই সত্য আপনি আমার সাথে না মৃন ম্যাম এর সাথে সবথেকে বেশি ভালো থাকবেন।আর আপনার ভালোর জন্য আমি সব করতে পারবো সব…….(কাঁদতে কাঁদতে)

………হিয়ার শরীর টা সেদিন আবার খারাপ করে…..

বুলি:দিদি……….দিদি কি হলো তোর আবার খারাপ লাগছে….আমি উজান দা কে ফোন করবো….দিদি ও দিদি…
হিয়া:আমাকে এক গ্লাস জল দে..
বুলি:দ্বারা আনছি…..নে…..এখন ঠিক আছিস তুই..
হিয়া:হুম আমি ঠিক আছি..
বুলি:আমার কি মনে হয় দিদি কাকিমা যখন কাল আবার এতো করে বললো তুই একবার পরীক্ষা টা করে নে না।পরীক্ষা করতে তো সমস্যা নেই……

হিয়া:তুই বেশি বুঝিস আমি তো বললাম ওসব কিছু না….
বুলি:শোন দিদি কি হলে কি হয় এটা বোঝার মতো বড়ো আমি হয়েছি…আর উজান দা কেই কেনো লাগবে তুই তো বাড়িতেই টেস্ট করতে পারিস….

হিয়া:বুলি তুই যা তো আমার ভালো লাগছে না…আর শোন যাওয়ায় সময় লাইট টা ওফ করে দিস…..
…………..

দুদিন পর করিডোর দিয়ে হাটার সময় উজান আর হিয়ার ধাক্কা লাগে…….

উজান:কি হ্যা চোখে দেখতে পারেন না…হিয়া
হিয়া আপনি
হিয়া:সরি স্যার….
…..হিয়া যেতে ধরলে….
উজান:হিয়া..
হিয়া:বলুন….
উজান:আপনি যেই বই টা খুঁজছিলেন আপনার জন্য আমি বই টা নিয়ে এসেছি।আমার কেবিনে রাখা আছে আপনি এসে নিয়ে যেয়েন..

হিয়া:আমার এখন লাগবে না আর ওটা।অদিত স্যার এর কাছ থেকে আমি নিয়ে নিয়েছি বই টা…
উজান:আমি আর কি বলবো আপনাকে সত্যি হিয়া আপনি আর আগের মতো নেই..
হিয়া:(মনেমনে)আপনি কি আগের মতো আছেন স্যার আপনিও তো এখন অনেক টা চেন্জ…না হলে বারে যাওয়া নিয়ে এখনো আমাকে আর অদিত স্যার কে ভুল বুঝতেন আপনি…..

যাই হোক ডিভোর্স কবে দিচ্ছেন আমায়।প্লিজ তাড়াতাড়ি দিয়ে দিন আমি এবার এই বেড়াজাল থেকে একটু মুক্ত হতে চাই..(অভিমানে)

উজান:আপনি চিন্তা করিয়েন না আমি আপনাকে আর বেশিদিন আমার কাছে বেধেঁ রাখবো না…(অভিমানের সুরে)
……মিনাক্ষীর কেবিন…..

উজান:আসবো…
মিনাক্ষী:বাহ বাহ কে এসেছে দেখো আমার কেবিনে….এসো এসো বসো…তা হঠাৎ কি মনে করে আজ আমার কেবিনে আসতে হলো তোমাকে উজান….
উজান:আপনি আমাকে একদিন একটা প্রপোজাল দিয়েছিলেন ফরেন যাওয়ায় ব্যাপারে।আমি রাজি ইউ এস তে গিয়ে সেটেল হতে…

মিনাক্ষী:ওয়েট ওয়েট ওয়েট তুমি ইউ এস তে যেতে চাও মানে সত্যি উজান…

উজান:হুম আর সেটা নেক্সট উইক এই…
মিনাক্ষী:আমি স্বপ্ন দেখছি না তো কোনো!

উজান:তবে আমারো একটা শর্ত আছে
মিনাক্ষী:তোমার তোমার আবার কি শর্ত
উজান:ইন ফিউচারে বুলি আর পাবলোর রিলেশন নিয়ে ওদের বিয়ে নিয়ে আপনি কোনো রকম ঝামেলা করবে না…ওদের কোনো রকম হার্ম আপনি করবেন না….

মিনাক্ষী:আমি ওদের কে কিছু বলার কে উজান…আমি এতো বলার পরো পাবলো কি শুনেছে আমার কথা।শুনে নি তো তাই ওদের বিয়েতে আমি মত দেই বা না দেই পাবলো যে আমার কথা শুনবে না এটুকু বোঝার ক্ষমতা না আমার আছে…তাই তুমি প্লিজ এসব নিয়ে ভেবো না..
উজান:বেশ আপনি কথা রাখলেই হলো…আমি আসছি……..
………..
মৃন:হিয়া হিয়া হিয়া হিয়া
হিয়া:ম্যাম কিছু বলবেন
মৃন:নাহ তোমাকে আর কি বলবো আসলে কি বলো তো আমি আর উজান নেক্সট উইক ইউ এস এ তে চলে যাচ্ছি,টিকিট ও বুক করা হয়ে গেছে তাই ভাবলাম সবার সাথে যাওয়ায় আগে কথা বলেনি….আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে কি বলবো তোমাকে….
হিয়া:(হিয়ার যেনো কথা টা শোনার পর পা থেকে মাটি সরে যায়…আকাশভেঙ্গে পড়ে…সত্যি সত্যি উজান ওকে ছেড়ে…)আপনি এসব কি বলছেন কোথায় উজান স্যার তো আমাকে কিছু বললো না…
মৃন:তোমাকে বলার ওর সময় আছে নাকি..ভালো থেকো কেমন আসি আজ….

হিয়া:সত্যি সত্যি উজান স্যার না না এটা আমি ভুল শুনছি…
মেট্রন:না হিয়া তুমি যা শুনছো সবটাই ঠিক
হিয়া:মিরাদী তুমি…
মেট্রন:উজান স্যার সত্যি ইউ এস তে চলে যাচ্ছে ইনফেক্ট ওনার ডিউটি গুলো উনি আজ বিকালের মধ্যে ক্লিয়ায় করে নিবে বলেছেন…
হিয়া:এটা হতে পারে না….উজান স্যার আমাকে ছেড়ে….
মেট্রন:এটাই হচ্ছে হিয়া….
…….হিয়া বাড়িতে চলে আসে খুব কান্নাকাটি করে….
হিয়া:তুই কাঁদছিস কেনো তুই তো নিজেই চেয়েছিলি উজান স্যার তোকে ছেড়ে ভালো থাক।মৃনালিনী ম্যাম কে নিয়ে সুখে থাক না না আমাকে এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না আমাকে আমাকে শক্ত হতে হবে…আমিও আমার জীবন থেকে উজান স্যার এর সব স্মৃতি গুলো মুছে দিতে চেষ্টা করবো..ভুলে যাবো এই একটা বছর আমাদের মাঝেমাঝে যা যা হয়েছিলো….(কাঁদতে কাঁদতে)

……রাতে হিয়া উজানের গিফট করা এ্যাপরোন,কিছু বই,সেদিনের কেনা শাড়ি আর গাউন টা যা যা ছিলো ওসব ফেরতে দিতে টিউলিপে উজানের গেস্ট রুমে যায়…উজান ওর রুমে সব কিছু মেঝেতে ছড়িয়েছিটিয়ে রেখে ড্রিংক করছিলো…….হিয়া এসে রুমে ঢুকে গেট লক করে দেয়……
উজান:হিয়া আপনি আপনি কেনো এখানে এসেছেন এতো রাতে ..

হিয়া:শুনলাম নেক্সট উইক আপনি আর মৃন ম্যাম ইউ এস এ তে চলে যাচ্ছেন?(অভিমানে)

উজান:কেনো আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন…এখন আপনার আর অদিতের মাঝে কোনো বাধা থাকলো না….এখন আপনারা চাইলেই কথা বলতে পারবেন,ঘুরতে পারবেন,বারে গিয়ে মজা করতে পারবেন….(অভিমানে)

হিয়া:হুম তা অবশ্য ঠিক।আমি আপনাকে আপনার এই জিনিস গুলো ফেরত দিতে এসেছি…..
উজান:কি এগুলো??

হিয়া:এই তিনটে বছর আপনি আমাকে যা যা দিয়েছিলেন সেসব আছে এটাতে…..

……..উজান হিয়ার কাছ থেকে প্যাকেট টা নিয়ে মেঝেতে ছুরে ফেলে…হঠাৎ হিয়ার নজর যায় মেঝেতে পড়ে থাকা পর পর তিনটে ড্রিংক এর বোতল এর উপর..দুটো ভরা একটা অর্ধেক শেষ করছে উজান….হিয়া গিয়ে বোতল গুলো হাতে নিয়ে…
হিয়া:এগুলো কি…আপনি রুমের দরজা লক করো ড্রিংক করছিলেন…
উজান:ওগুলো আমাকে দিন…হিয়া দিন বলছি…
হিয়া:এতো গুলো ড্রিংক এর বোতল আপনি।আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন আপনি কোনো দিন এসব করবেন না বলুন কথা দেননি…(রাগে চিৎকার করে)
উজান:কীসের কথা এখন আপনার আর আমার মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই।আর প্রমিস এর কথা বলছেন আপনি কটা প্রমিস রেখেছেন বলতে পারবেন…
হিয়া:তাই বলে আপনি এভাবে..
উজান:দিন বলছি হিয়া…কে আপনি সাহস কি করে হয় আমার জিনিসে হাত দেওয়ার।আপনার গিফট গুলো দেওয়া হয়ে গেছে আপনি প্লিজ এবার আসুন…
হিয়া:আমি যাবো না…আর এগুলো এগুলো আমি…
……..হিয়া বোতল গুলো মেঝেতে ছুড়ে ভেঙ্গে ফেলতে ট্রাই করে বাট বোতল গুলো একটাও ভাঙ্গে না….
উজান:ওগুলো ওভাবে ভাঙ্গবে না…(ইয়েন ফানি বুম বুম)
হিয়া:কেনো কেনো ভাঙ্গবে না…
উজান:এগুলো কাচের বোতল না যে আপনি মেঝেতে আঁচড়াবেন আর ভেঙ্গে যাবে….দিন তো..দিন বলছি…
হিয়া:ভাঙ্গতে পারবো না তো কি হয়েছে আমি এগুলো ফেলতে তো পারবো…

……..হিয়া বাথরুমে গিয়ে বোতল গুলোর মুখ খুলে বেসিনের মধ্যে এক এক করে সব গুলো ড্রিংক ফেলে দেয়…উজান পিছন পিছন এসে হিয়ার হাত থেকে আধা ফাকাঁ বোতল গুলো কেড়ে নিয়ে হিয়াকে যা মুখে আসে বলে যায়……

উজান:স্টপ ইট হিয়া…হাউ ডেয়ায় ইউ এতো সাহস হয় আপনার কি করে…আপনি আমার জিনিস কে এভাবে….জানেন এগুলোর দাম কতো….

হিয়া:আমার ইচ্ছের চাইতেও বেশি?
উজান:হ্যা বেশি…কারন আপনি এখন আর আমার হিয়া নন দুদিন পর আপনি অন্য একজনের হবেন।তাই আপনার কোনো কথা রাখার বা শোনার দায় আমার নেই….
হিয়া:এখনো তো ডিভোর্সই দিলেন না তাতেই এতো টা পর করে দিলেন…

উজান:আপনি চিন্তা করবেন না আমি যাওয়ায় আগে ঠিক আপনাকে পেপারস পাঠিয়ে দিবো…আমার বোতল টা দিন…

হিয়া:দিবো না…কি পান আপনি এসব খেয়ে…আমি তো আপনাকে ছেড়েই দিচ্ছি তাহলে কেনো শুধু শুধু এভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন আপনি…

উজান:কি পাই এসব খেয়ে শান্তি পাই শান্তি…
হিয়া:তাই!তা মৃন ম্যাম কেও ডেকে নিন না আজ রাতে,বাকি শান্তি টাও পূরন হবে…

উজান:হিয়া….ঠাস
……উজান হিয়াকে আরো একটা থাপ্পড় মেরে হিয়াকে গায়ের জোর দিয়ে বাথরুমের দেওয়ালে ঠেসে ধরে…
উজান:যেমন আপনার মন তেমন আপনার চিন্তাধারা…মৃন ঠিকি বলে আপনি একটা নোংরা মেয়ে…..
হিয়া:হিয়া এবার হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে…
উজান:হিয়া কাঁদবেন না এভাবে….বললাম না আপনি কাঁদবেন না….জাস্ট স্টপ ইট হিয়া….

…..হিয়া কে আরো জোরে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে….

উজান:হিয়া……..নাটক করছেন কিসের নাটক করছেন এতো…..তা আপনিও কি অদিতের সাথে বারে গিয়ে ওসব করেছিলেন তাই আমাকে এখন এসব করতে বলছেন…

হিয়া:সারুন আমাকে আমি বাসা যাবো(কাঁদতে কাঁদতে)
উজান:আমি আজ আপনাকে কোথাও যেতে দিবো না….অনেক হিসাব মেটাতে হবে আজ আমায়….আমার সাথে বিয়ের নাটক করে আপনি এখন অন্য একজন কে পেয়ে আমাকে ঠকালেন তো…আমিও আজ আপনাকে বোঝাবো ডক্টর উজান চ্যাটার্জি কতোটা খারাপ…..

………উজান হিয়াকে টেনে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হিয়ার পাশে গিয়ে হিয়ার বাহু দুটো শক্ত করে ধরে……….হিয়া তখনো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে এবার উজানের ও চোখে ভর্তি জল জমা হয়….দুজনেই কাঁদতে শুরু করে….

হিয়া:আমি বাড়ি যাবো…
উজান:(হিয়ার বাহু দুটো শক্ত করে ধরে)আমি আপনাকে যেতে দেবো না..আর অনেক রাত হয়েছে আপনি কিছু পাবেন না যাওয়ার জন্য..
হিয়া:সেটা আমি বুঝে নিবো…
উজান:হিয়া…কেনো এতো যাই যাই করছেন..একটাই তো রাত এর পর তো আমি চলেই যাবো দূরে অনেক দূরে। চাইলেও আপনি আমার কাছে আসতে পারবেন না…থাকুন না আজ রাত টা আমার সাথে…আমরা দুজনে একটু সময় কাটাই….

হিয়া:আমি তো নোংরা মেয়ে তাই না বলুন। তাহলে কেনো আপনি থাকতে চাইছেন আমার সাথে আপনি ও তো তাহলে নোংরা হয়ে যাবেন…

উজান:হলাম না হয়….
হিয়া:আমি চাই না আমাদের মাঝে স্বামী স্এী র কোনো আর সম্পর্ক তৈরি হোক যেটা দুদিন পর শেষ হবে সেটার উপর মায়া বাড়িয়ে কি লাভ…

উজান:আমি এতো কথা শুনতে চাই না আমার আপনাকে আজ চাই এটাই শেষ কথা…

হিয়া:জোর করবেন আমাকে..
উজান:যদি করতে হয় তাই করবো….

…….উজান হিয়ার উপর পিপার্সতিত পথিকের মতো ঝাপিয়ে পড়ে…হয়তো এটাই হিয়াকে শেষ কাছে পাওয়া…কি জানি কখনো যদি আর হিয়া কে ও কাছে না পায়…কিভাবে পাবে দুজন তো এখন আর এক শহর এক টিউলপে থাকবে না…

……..রাত প্রায় চারটে দুজনের কারো চোখে ঘুম নেই এক ফোটা..উজান নিজের চোখের পানি সামলে নিলেও হিয়া এখনো কেদেঁই চলছে..আজ হিয়ার কান্না যেনো বাধ ভেঙ্গেছে..চোখ গুলো দুজনের আজ লাল হয়ে ফুলে গেছে…

হিয়া:আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে উজান স্যার…

উজান:সব টা এভাবে শেষ হোক আমি চাই নাই হিয়া…
হিয়া:আপনি চেয়েছিলেনন….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here