#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
২০.
চাঁদের মিসক্যারেজের মাসখানেক পেরুতেই সে জানতে পারে কস্মিনকালেও আর সে মা হতে পারবেনা।একের পর এক যন্ত্রণার ধাপ অতিক্রম করে বর্তমানে সে অনুভূতিশূন্য এক মানবমূর্তির রূপ কেবল।বেঁচেতো আছে তবে প্রাণহীন।এরইমাঝে তার অপারেশনের দিন পনেরো পরেই হঠাৎ প্রণয়ের আগমনে হৃদয় পুলকিত হলেও নিজেরই নিজেকে অপরাধী ঠেকে প্রণয়ের সম্মুখে তার।সে মনে করে তার জন্যই তার বাচ্চাটা আজ সাথে নেই।শুরু থেকেই বাচ্চাটার প্রতি খুব একটা যত্নশীল সে হতে পারেনি।যার দরুন অনুতাপের ছোয়াটা চাঁদেরই বেশি।যদিও বা এতে প্রণয়ের তাকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই তারপরেও নিজেকেই নিজে ধিক্কার জানায় চাঁদ।নিজের অতিরিক্ত সাহসিকতার দরুনই এত এত ঝামেলা তাকে পোহাতে হয়েছে।সতীত্ব হারানোর পর মাতৃত্ব হারিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছা দিনকে দিন তার কমছে।তবুও সে জানে প্রণয় নামক তার ঐ শুদ্ধ পুরুষটা তাকে ছাড়া ধ্বংস হবে,ভেঙে গুড়িয়ে যাবে।সেও তাকে ছাড়া নিজ জীবন কল্পনা করতে পারেনা,চায়ও না।তারপরেও মনে মনে লোকটার জন্য তার মায়া হয়।অদ্ভুতরকমের কষ্ট তার জন্য হৃদযন্ত্রে অনুভূত হয় চাঁদের।এই একটা মেয়েকে ভালোবেসে ছেলেটা তার সর্বস্ব খুইয়েছে।নিজ প্রধান ব্যক্তিসত্তা ছাপিয়ে এমন এক সত্তায় নিজেকে আবৃত পর্যন্ত করেছে যা চাঁদের কল্পনাতীত।ছেলেটা তার জন্য,কেবলমাত্র তার জন্য নিজ প্রাণ উৎসর্গ করে দিতেও দ্বিধাবোধ করেনি।অথচ সে?সে আজ অব্দি প্রণয়ের জন্য কী এমন করেছে যা ছেলেটাকে একটুখানি সুখ দেবে?যাও সুখের দেখা মিলতো তারও কোনো সুযোগ বর্তমানে নেই।সে কি কেবলই প্রণয়ের নিকট এক বোঝা?প্রণয় কি এখনো আগের ন্যায় তাকে ভালোবাসবে?বুক কি একটুও কাপবেনা ছোট্ট আরেকটা প্রণয়ের আশায়?তার নিজেরই তো আফসোসের সমাপ্তি নেই।অথচ ছেলেটা অনায়াসে নিজ গম্ভীর সত্তার আড়ালে দুঃখ,কষ্টসমূহ কি নিদারুন লুকাতে সক্ষম!এরূপ কেনো তার এই বিড়ালাক্ষী মানব?অতঃপর প্রণয়ের পানে চেয়ে থাকতে থাকতেই বুক চি!ড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতেই সে শুনতে পায় প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“আপনি কস্মিনকালেও আমার কাছে বোঝা নন।আপনি আমার হৃদরানী,আমার প্রেমমানবী”
“এত কা…..”
চাঁদকে থামিয়ে দিয়ে গায়ে এপ্রোণ জড়াতে জড়াতে প্রণয় বলে,
“এদিকে আসুন”
অতঃপর ধীরসহিত চাঁদ নেমে আসে বিছানা হতে।আলতো পায়ে হেটে প্রণয়ের কাছে আসতেই চাঁদকে নিজের দিকে ভালোভাবে ঘুরিয়ে আলমারি হতে চাঁদের এপ্রোণ বের করে তা গায়ে জড়াতে জড়াতে প্রণয় বলে,
“ভাগ্যের উপর কোনো জোর নেই চন্দ্র।অনেকতো বিরহে দিন কাটালেন,এবার মজুন প্রণয়ের প্রেমে”
বলতে বলতেই চাঁদের অতি সন্নিকটে গিয়ে কানের পিঠে ঘাড়ের কাছে চুমু খায় প্রণয়।তৎক্ষনাৎ জাগ্রত হয় শিহরণের রেশ চাঁদের সমস্ত সত্তাজুড়ে।চাঁদের গালে গভীর চুমু এঁকে প্রণয় উঠে আসতে নিলেই বাইরে থেকে শুনতে পায় নিজ ভাইয়ের ঠাট্টামূলক স্বর,
“সরি ভাই সরি!মানছি স্বামী-স্ত্রী কিন্তু দরজা টরজা লাগিয়ে প্রেম করতে হয়না?দাড়া আমিই লাগিয়ে দিচ্ছি”
কপাল ঈষৎ কুচকে পেছনে ঘুরে গম্ভীরস্বরে প্রণয় বলে,
“ফারদার আমার সাথে ঠাট্টার ভুল যেনো ভুলেও না হয় তন্ময়”
অতঃপর চাঁদের পানে চেয়ে বলে,
“আপনি হিজাব পরুন আমি আসছি।হিজাব পরে বসে থাকবেন।নিচে নামবেন না।আমি এসে নিয়ে যাবো”
“আমার ভাই কত কেয়ারিং দেখেছো ভাবি?তোমায় পারেনা কোল….লা…লা লা লে……”
কথাখানা সম্পূর্ণের পূর্বেই প্রণয়ের গম্ভীর চাহনীর দরুন চুপসে যায় তন্ময়।অতঃপর আমতা আমতা করে বলে,
“আম….আমি বলছিলাম যে ভাবি তুমি হাসপাতালে যাচ্ছো?”
যেতে যেতে তন্ময়কে উদ্দেশ্য করে প্রণয় বলে,
“ভুলবশতও চাঁদকে আজেবাজে বলে বিরক্ত করবিনা”
কপাল কুচকে প্রণয়ের পানে তাকিয়ে কিছু বলার পূর্বেই প্রণয় প্রস্থান নেয়।আর তন্ময় শুনতে পায় চাঁদের ধীরকন্ঠ,
“তোমার ভাই কোথায় নিচ্ছে জানিনা।এপ্রোণ পরিয়েছে হয়তো হাসপাতালেই যাচ্ছি”
প্রণয়ের বিছানায় বসতে বসতে তন্ময় বলে,
“তুমি সুস্থ থাকলে অবশ্যই যাও ভাবি।কিন্তু ভালো না লাগ….”
তন্ময়কে থামিয়ে চাঁদ বলে,
“আ’ম পার্ফেক্ট তন্ময়।তাছাড়া তোমার ভাইয়ের তুলনায় আমার সুস্থতা সম্পর্কে আর কেউ জানবেনা,আমি নিজেও না”
“ভাইকে এত বিশ্বাস করো?”
“ভালোবাসার মূলভিত্তিই বিশ্বাস।বিশ্বাসহীন কোনো ভালোবাসা হতে পারেনা।সেসব বাদ দাও।আজই ফিরলে?আরও কয়েকদিন থাকার ছিলে না?”
“হ্যা।তোমার কথা শুনে তাড়াতাড়িই আসলাম”
অতঃপর চাঁদকে আরও কিছু বলার পূর্বেই কারো ফোনকল আসায় বিরক্ত হয় তন্ময়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
“প্রণয়ের থেকে রিহার বিষয় লুকানো কি আমাদের ঠিক হচ্ছে মির?”
মিরার কথা শুনে বোনের পাশে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মির বলে,
“মাত্রইতো চাঁদের সাথে একের পর এক হওয়া ইন্সিডেন্ট সামনে আসলো।এখন রিহার বিষয়ে বলে প্রণয়কে গিলটি ফিল করানো টা হয়তোবা অনুচিতই”
“কিন্তু মির,প্রণয়ের তো অধিকার আছে।ও রিহুর জানাযা পর্যন্ত….”
মিরাকে থামিয়ে মির বলে,
“ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে।কয়েকটা দিন যাক জানাবো।ওরা বাচ্চার ট্রমা থেকে বেরুক একটু”
ছোট্ট করে জবাব দেয় মিরা,
“হিম”
অতঃপর ফের মির বলে,
“অরণকে এখনো কিছু জানাস নি?”
“কী জানাবো?”
“তুই ভালো করেই জানিস আমি কীসের কথা বলছি”
“তোর মনে হচ্ছে এসব বলার সিচুয়েশন এখন?আর তাছাড়া এসব নিয়ে এখন আর ভাবছিও না”
“অরণকেও কিছু বলবিনা,বিয়েও করবিনা।চাচ্ছিস কী?”
কপাল কুচকে মিরা বলে,
“কী চাচ্ছি মানে?”
“বয়স হচ্ছে বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে তোর”
“তো তুই বলছিস আমি তোর বা বাবার কাছে বোঝা হচ্ছি?”
“থা!পড়াবো বেয়াদব।একবারও বলেছি?বেশি ভাবিস কেনো?আমি বলছি জীবনকে আরেকটা সুযোগ দেয়া উচিত না?”
“সুযোগ তো রিহুও দিয়েছিলো।কী হয়েছে ওর সাথে?”
“রিহার আর তোর বিষয়টা ভিন্ন।আর রিহা ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছিলো ঠিক যেমন বছরের পর বছর তুই যা করে এসেছিলি”
কপাল কুচকে গম্ভীরকন্ঠে মিরা বলে,
“ভালো লাগছেনা এসব।আগে নিজের লাইফের ঝামেলা সামলা।পরে উপদেশ দে”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চাঁদকে নিয়ে কলেজে প্রবেশ করেই প্রিন্সিপালের রুমে হাজির হয় প্রণয়।অতঃপর হাতে থাকা ফাইলের সমস্ত কাগজপত্র তার নিকট এগিয়ে দিতেই প্রিন্সিপাল বলেন,
“বসো দু’জনেই”
অতঃপর কাগজগুলো দেখতে দেখতেই প্রিন্সিপাল বলেন,
“বেশ অনেকবছর পর দু’জনকে একসাথে দেখছি।তো জব কি চাঁদের জন্য নাকি দু’জনেরই প্রণয়?”
শান্তস্বরে প্রণয় জবাব দেয়,
“আপাতত চাঁদেরই।আমার সময় হয়ে উঠেনা স্যার।ভাবলাম চাঁদের ফ্রি সময়ে সে বর্তমান জেনারেশনকে কিছু জ্ঞান হলেও শিক্ষা দিক”
প্রণয় আর প্রিন্সিপালের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠে চাঁদ,
“জব মানে?”
প্রিন্সিপাল প্রশ্ন করেন,
“তোমার টিচিং প্রফেশন নিয়ে কথা হচ্ছে।প্রণয় বলোনি কিছু তুমি ওকে?”
“ভাবলাম কথাবার্তা শেষে একবারে জানাবো”
“চাঁদ যদি করতে না চায়?”
“দুই,তিনটা ক্লাসই তো স্যার।তাছাড়া চাঁদেরও ইচ্ছা প্রফেসর ডাক অথবা কারো মেনটর হওয়া।সঠিক গাইডলাইন দেওয়া।ডাক্তার তো হলোই”
প্রণয়ের কথা শুনে চাঁদপানে প্রিন্সিপাল চাইতেই মৃদুস্বরে চাঁদ বলে,
“জ্বি স্যার”
চাঁদের জবাব পেতেই প্রিন্সিপাল বলেন,
“ঠিক আছে তোমরা যাও।আমি পরবর্তীতে আপডেট জানাবো”
অতঃপর প্রিন্সিপালের থেকে বিদায় নিয়ে চাঁদের সহিত ক্যাম্পাসে আসে প্রণয়।নিজেদের পূর্বের আড্ডাস্থলে এসে বসতেই চাঁদের কোলে মাথা এলিয়ে ঘাসের উপর শুয়ে চাঁদপানে চেয়ে প্রণয় বলে,
“চশমাটা খুলুন তো চাঁদ”
কপাল কুচকে কোলে শুয়ে থাকা প্রণয়ের পানে চেয়ে চাঁদ প্রশ্ন করে,
“কেনো?”
“খুলতে বললাম তো”
অতঃপর প্রণয়ের কথা মোতাবেক চশমা খুলতেই প্রণয় বলে,
“এদিকে আসুন”
“কী?”
“বললাম এদিকে আসুন,কান দিন”
প্রণয়ের ইশারায় মাথা খানিকটা তার পানে ঝুকিয়ে কানের দিক ঘোরাতে নিলে প্রণয় চাঁদের থুতনী হালকা চেপে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আরেকটু তাকে নিচু করে ওষ্ঠদ্বয়ে আলতো করে চুমু খায় চাঁদের।প্রণয়ের কান্ডে হকচকায় চাঁদ।প্রথমদিনের ন্যায় হৃদস্পন্দন তীব্র হয়,গলার কাছে শ্বাস এসে আটকে যায় তার।শিরশিরায় বদন।শরীরে শীতল স্রোত বইতেই ঢোক গিলে প্রণয়ের থেকে দূরে সরে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে চাঁদ বলে,
“দিনকে দিন অসভ্যের কাতারও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন পুরো!”
“অসভ্যতামির কিছুই তো করা হলো না।ওদের ডাকাই?”
“ডাকিয়ে কি অসভ্যতামির রঙ দেখাবেন?”
চাঁদের কথা শুনে খানিক শব্দ করেই হাসে প্রণয়।অতঃপর দেহ ডান পাশে কাত করে চাঁদের পেটের কাছে মুখ নিয়ে দু’হাতে চাঁদের কোমড় জড়িয়ে শোয়াবস্থায়ই সে বলে,
“এতটাও অসভ্য হইনি যে নিজের বউয়ের উষ্ণরূপ অন্য কাউকে দেখাবো”
অতঃপর পেটের কাছে আলতো চুমু এঁকে ফের প্রণয় বলে,
“তার উষ্ণরূপে মত্ত থাকার অধিকার কেবলই প্রণয়ের”
প্রণয়ের উষ্ণ শ্বাস সহ পেটের কাছে ঠোটের মৃদু কম্পনে
গা শিরশিরায় চাঁদের।লোমকূপসমূহও দাঁড়ায় নিমিষেই।মৃদু কম্পিত বদনেই ঘনঘন শ্বাস নেয় সে।হৃদস্পন্দনের মাত্রা বেড়েছে খানিক।নিজেকে সামলানোর চেষ্টায় প্রণয়ের ঘাড়ের কাছে হাত রাখতেই ফের প্রণয়ের ঠোটের স্পর্শ পায় চাঁদ।অতঃপর চাঁদের পেটে ঠোটের গভীর স্পর্শ আঁকতেই প্রণয়ের নজর কারে চাঁদের শুভ্ররঙা উজ্জ্বল উদরের অল্প বিস্তর অংশবিশেষ।মৃদু শ্বাস নিয়ে সেথায় খানিক ফু দিয়ে হাতের তর্জনী দ্বারা আলতো ছুতেই শরীরে বৈদ্যুতিক স্রোত বয় চাঁদের।অভ্যন্তরে থাকা রক্তসমূহ শীতল হয়ে জমে যাচ্ছে যেনো।ঘনঘন শ্বাস নিয়ে প্রণয়ের ঘাড়ের কাছে থাকা হাত তার চুলে বিচরিত করে চাঁদ।অতঃপর মৃদু কম্পিত হাতেই প্রণয়ের চুলসমূহ টেনে ধরে আলতো হাতে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রুবার তথ্যানুযায়ী মিন্টুরোডে হাজির হয়েছে তন্ময়।মিনিট বিশেকের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকায় একটু বেশিই বিরক্ত হয় সে।অতঃপর পকেট হতে ফোন বের করতে নিলেই হাপাতে হাপাতে হাজির হয় সেথায় রুবা।বুকের কাছে হাত রেখে মুখ দ্বারা লম্বা শ্বাস ফেলতে ফেলতে রুবা বলে,
“সরি….সরি ভাইয়া।একটু বেশি দেরি হয়ে গেলো?”
দাঁতে দাঁত চেপে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রুবার পানে দিয়ে কথা চিবিয়ে চিবিয়েই বলে তন্ময়,
“একটু দেরি হবে কেন?অনেক বেশিই তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো।আরও আধঘন্টা পরে আসলে পার্ফেক্ট হতো”
ঘনঘন শ্বাস মুখ দ্বারা ফেলে কপাল কুচকে রুবা বলে,
“মেজাজ দেখাচ্ছো কেনো?”
রুবার কথায় তোয়াক্কা না করে হঠাৎ ই রুবার কব্জি টেনে নিজের পাশে এনে দাড় করায় তন্ময় তাকে।অতঃপর রুক্ষ কন্ঠেই বলে,
“কমনসেন্স বলতে আদোতে কিছু আছে তোর?পারিস তো শুধু মুখ চালাতে”
নাকমুখ কুচকে বিরক্ত হয়ে ফের রুবা বলে,
“আবার কী করলাম?”
“পেছনে গাড়ি ছিলো।কানে কালা তুই?”
হঠাৎ ভড়কে রুবা বলে,
“ইম…..ইম দা…দেখিনিতো!মানে শুনি…শুনিনি ভাইয়া”
“তা কী করে শুনবি?এদিকে আয়”
বলেই রুবার হাত ধরে নিজের বাম পাশে তাকে রেখে হাটাধরে তন্ময়।রুবা কেবলই মুচকি হাসে তন্ময়ের কান্ডে।ভাগ্য করে শাসনে রাখলেও রক্ষণশীল ভাই পেয়েছে সবগুলোই সে।অতঃপর তন্ময়ের পাশে হাটতে হাটতেই বলে,
“আসলে ভাইয়া তোমার একটা হেল্প লাগতো”
“হ্যা তাতো জানিই।দরকার ছাড়াতো আর আমায় মনে পড়বেনা আপনার!”
“আরেএ!তেমন কিছুনা।মানে একটু আরকি…..”
“ঝটপট বল।শুনছি”
হাটার গতি ধীর করা সহ গলার স্বরও ধীর করে রুবা,
“হয়েছি কী!মানে তুম….তুমিতো প্রেম….প্রেম করেছো তাইনা?”
রুবার কথায় পা জোড়া থামতে বাধ্য হয় তন্ময়ের।অতঃপর কপাল কুচকে রুবার পানে চেয়ে থেকেই সে বলে,
“কী বললি?”
রুবাও থামে।অতঃপর ঢোক গিলে বা’ হাতের দুই আঙুল দ্বারা নাক খানিক চেপে বলে,
“ইম…..বা….বললাম যে প্রেম….প্রেম করেছো কিনা তুমি!”
কপাল কুঞ্চিত রেখেই তন্ময় প্রশ্ন করে,
“আমার প্রেম দিয়ে তুই কী করবি?”
“বলো না!লাগবে”
বাকা চোখে রুবার পানে চেয়ে তন্ময় বলে,
“যদি ভুলেও কাউকে বলেছিস তাহলে ফাসাবো কিন্তু আমি তোকেও।কথাটা মাথায় থাকবে?”
“মাথায় মানে?মন,দিল,কলিজা,ফ্যাপড়া,কিডনি,ফুসফুস,মাথা সবজায়গায়ই থাকবে ভাইয়া।তুমি জাস্ট আমার একটু হেল্প করো প্লিজ!”
খানিক অবাক হয়ে নিজেও ঢোক গিলে তন্ময় বলে,
“বলবিনা কিন্তু কাউকে!”
মাথা ডানে বায়ে করে রুবা বলে,
“একদমই না!নিশ্চিন্তে বলো”
রুবার কৌতূহলে নিজেও কৌতূহলী হয় তন্ময়।অতঃপর বলে,
“করেছিলাম স্কুলে থাকতে।বেশিদিন টেকেনি ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছিলো”
“তাহলেতো তুমি জানো কীভাবে মানুষ পটাতে হয় তাইনা?আই মিন…..আই মিন যার সাথে প্রেম করতে চাও আরকি?”
কপাল কুচকে তন্ময় বলে,
“তুই আবার কার সাথে প্রেম করতে চাস?থাপ!ড়াবো কিন্তু রুবা।আমি তোর বড় ভাই ভুলছিস কিনা?”
“আহহা!ভুলিনি তো।মানে বলোনা পটায় কীভাবে?”
“এই কাকে পটাতে চাচ্ছিস বলতো?বাই এনি চান্স প্রেম ট্রেম করছিস নাতো?অথবা করতে চাস?ভার্সিটি উঠতে না উঠতেই পাখা গজিয়ে গেছে?”
“আরে ভাইয়া এরকম কিছুনা।আমি জাস্ট পছন্দই করি কিন্তু সে আমায় দুইচোখে দেখতে পারেনা”
ধীরকন্ঠে বিরবিরায় তন্ময়,
“ভালো হয়েছে”
অতঃপর গম্ভীরস্বরে প্রশ্ন করে,
“কার কথা বলছিস?”
“বলবেনা তো কাউকে?”
“ঠ্যাকা পড়েছে?”
“ইম…..মিস্টার….মিস্টার চৈত্রের”
রুবার বলা দুই শব্দের বাক্যে মস্তিষ্ক ফাকা হয় তন্ময়ের।শ্বাস খানিকের জন্য থমকায়,স্থির হয় তার দৃষ্টিজোড়া।অতঃপর কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে দ্বিধান্বিত স্বরেই সে বলে,
“চৈত….চৈত্র ভাইয়ের কথা বলছিস?ভাবির ভাই?চৈত্র ভাই?”
“হা…..হ্যা ভাইয়া”
“ভালোবাসিস?”
রুবার সোজাসাপটা জবাব,
“ভালোবাসি কিনা জানিনা।তবে আমার জীবনের প্রথম পুরুষ এবং শেষ পুরুষ হিসেবে তাকেই চাই।তুমি আমার হেল্প করবে ভাইয়া?”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যা সাতটা,
চাঁদ হলরুমে সকলের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।মূলত প্রণয়ের বন্ধুমহল বাড়িতে আসায় চাঁদই তাদের আপ্যায়ন করছে।সাথে এসেছে রবিনের মা আর বোনও।রবিন আর অমৃতার বিয়ের কার্ড নিয়েই তারা এসেছেন।বড়দের সাথে কথা শেষে সোফায় বসে থাকা চাঁদপানে চেয়ে রবিনের মা বলেন,
“চাঁদ মামনি?তুমিতো অমৃতার বোন”
“জ্বি?জ্বি আন্টি”
“বেয়াইনই তো তোমাদের কার্ড দিয়ে ফেলেছেন না?”
মৃদু হেসে চাঁদ বলে,
“অমি আমার খালাতো বোন কম আমার নিজের আপন বোনই বেশি।কেউ অমি,আমায় আর নিমুকে দেখলে বলেনা আমরা কাজিন হই।আর খালামনির কার্ড দেওয়ার প্রয়োজনই কোথায়?অমির বিয়ে আর ওর নিজের খালামনি বা চাঁদ আপু থাকবেনা তা হয়?আপনি টেনশন করবেন না আন্টি।তবে হ্যা!আমি কিন্তু হিসেবে তিনটে দাওয়াত পাই”
রবিনের ছোটবোন প্রশ্ন করে,
“কীভাবে ভাবি?”
অতঃপর চাঁদ রবিনের পানে চেয়ে চোখ দিয়ে তাকে ইশারা করে বলে,
“কী ভাইয়া বলবো?”
ভড়কে রবিন বলে,
“কী বলবে আবার?বলো”
“প্রথমত আমি অমির বোন সেই হিসেবে একটা তো পাচ্ছিই।দ্বিতীয়ত প্রণয়ের ওয়াইফ সেই হিসেবে আরেকটা।আর সর্বশেষ হলো আমি রবিন ভাইয়ারও বোন।সেই কলেজ লাইফ হতে।সেই হিসেবে আরেকটা পাওনা না বলো ভাইয়া?”
অরণ বলে,
“হ্যা অবশ্যই!অবশ্যই।আরেকটা কার্ড দে”
হঠাৎ মিরার প্রশ্ন,
“প্রণয় কোথায় চাঁদ?আমরা সবাই এখানে ও কী করছে?”
মিরার পানে চেয়ে চাঁদ বলে,
“রুমেই আছে আপু।কী যেনো করছে কলেজ প্রাসঙ্গিক”
চাঁদের কথা শেষ হতেই মির প্রশ্ন করে,
“শুনলাম তুমি নাকি প্রফেসর হচ্ছো?”
“শিওর না ভাইয়া।ইন্টারভিউ তে ডাকুক,দেখি”
রবিনের দৃঢ় কন্ঠ,
“ইন্টারভিউ দিয়ে কাজ কী?তোমাকে নেবে মানে নেবেই গ্যারান্টি দিলাম আমি”
______________________________
বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে এক পায়ের টাখনুর উপর অপর পায়ের পাতা তুলে উরুর উপর ল্যাপটপ নিয়ে কিছু কাজে ধ্যানমগ্ন ছিলো প্রণয়।অতঃপর ল্যাপটপের কী-বোর্ডে আঙুল চালানো থামিয়ে ঠোটের বাম পাশ কিঞ্চিৎ বাকা করে প্রণয়।হৃদয়ে প্রশান্তির জোয়ার ভাসে,হাসে প্রণয়ের বিড়ালাক্ষীজোড়াও।ল্যাপটপ সেভাবে রেখেই বিছানার পাশে থাকা টেবিল হতে ফোন হাতে নিয়ে টাইপ করে চৈত্রের নাম্বারে।সাথে যুক্ত করে ফায়ানকেও।অতঃপর তাদের সহিত কিছু বার্তা শেষে ফোন কাটে সে।
রাত্রি তখন নয়টা বেজে সাইত্রিশ মিনিট,
সুনসান নীরব রাস্তা দিয়ে নিটোল পরিবেশে ড্রাইভ করছে প্রণয়।মাঝেমাঝেই এপাশ ওপাশ চাইছে সে।অতঃপর ফোনে কারো নাম্বার ডায়াল করে লাউডস্পিকার দিয়ে ফেলে রাখে পাশের সিটে।কিয়ৎক্ষণ জরুরী আলাপ শেষে ফের ড্রাইভিং এ মনোযোগী হয় প্রণয়।অতঃপর কাউকে ‘দাও’ কথাটি উচ্চারিত করে গম্ভীরকন্ঠে প্রণয় শুধায়,
“কী মিস অহনা?মিস অহনা শেখ?নাকি অহনা অধিরাজ শেখ?হোয়াট ডিড ইউ থিংক?আপনি ধরা-ছোয়ার বাইরে হা?ইউ ব্লা!ডি ফুল লেডি”
To be continued……