হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া #পর্বঃ৪ #আদওয়া_ইবশার

0
217

#হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া
#পর্বঃ৪
#আদওয়া_ইবশার

ফোনের দিকে দৃষ্টি রেখেই অত্যধিক রাগে দাঁত কিড়মিড় করছে পাপড়ি। রাগে দুঃখে নিজের চুল নিজেই ছিড়তে ইচ্ছা করছে তার। বড় বোনকে হঠাৎ এমন রেগে যেতে দেখে পালক কিছুটা অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করে,

‘কি হলো তোমার? হঠাৎ করে এমন রেগে গেলে কেন?’

কোনো উত্তর দিচ্ছেনা পাপড়ি। এখনো ফোনের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। ফোনের স্ক্রীনে ঝলঝল করছে একটা মেসেজ,

“ভেবেছিলাম জ’ঘণ্য খা’রা’প একটা মেয়ে আপনি। কিন্তু টাকা ফেরত দিয়ে কিন্চিৎ উদার মনের পরিচয় দিয়েছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ টাকা’টা ফেরত দেওয়ার জন্য মিস বে’য়া’ক্কল। পাঁচশ টাকা আপনার একাউন্টে গিয়েছে নিশ্চয়ই দেখেছেন! ঐটা আপনার ব্যবহারে খুশী হয়ে বকশিস দিলাম আপনাকে।টাকা’টা দিয়ে আ’ক্কে’ল হবার ঔষধ খেয়ে নিবেন। আপনার ভাষায় আমি চি’টা’র,বা’টপা’র, ধা’ন্দা’বা’জ হলেও উপকারের প্রতিদান দিতে জানি। মেয়ে মানুষ, এভাবে আজীবন বে’য়া’ক্কল থাকলে কপালে জামাই জুটবেনা। দ্রুত আ’ক্কে’ল বাড়ানোর চেষ্টা করুন। ভালো থাকবেন।”

পাপড়ি কি কোনো ফ’কি’র না কি? ছেলেটা নিশ্চই টাকা’টা দিয়ে বুঝাতে চেয়েছে পাপড়ি আসলেই একটা অসহায় মেয়ে। কত বড় বে’য়া’দব ছেলে! টাকার গরম দেখায় সে পাপড়িকে! তার উপর ফোনের মতো মেসেজেও বারবার বে’য়া’ক্কেল বলে তি’র’স্কার করছে তাকে।মুখের উপর এভাবে অপমান করে কি না বলে উপকারের প্রতিদান দিয়েছে! এতো বড় অপমান সে মুখ বুঝে মেনে নিবে ? একদম মানা যাবেনা এটা। সাথে সাথেই ছেলেটার নাম্বারে ফোন দিল পাপড়ি। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছেনা। রাগে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে পাপড়ির। এই অপমানের সোধ না তোলা পযর্ন্ত শান্তি হবেনা তার। একবার,দুইবার করে বারবার ফোন দিতেই থাকল পাপড়ি ঐ নাম্বারে। পাঁচ বারের মাথায় ফোনটা রিসিভ হলো। তখনও পাপড়িকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছেলেটাই আগে বলে ওঠল,

‘ অ্যাঁই মেয়ে! এমন অ’স’ভ্যে’র মতো বারবার ফোন দিচ্ছো কেন? দেখছো রিসিভ করছি না তার মানে অবশ্যই ব্যস্ত আছি। সবসময় নিজেকে বে’য়া’ক্কল প্রমাণ করার জন্য এভাবে ওঠে পরে লেগেছো কেন? উপকার করেছ ভালো কথা। তার প্রতিদান হিসেবে টাকা দিয়েছি। আবার কি চায়? না কি টাকার অংক কম হয়ে গেছে?’

আবার ! আবার ছেলেটা তাকে বে’য়াক্ক’ল বলে অ’প’মান করছে।ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ধেয়ে আসা এক একটা বাক্য যেন পাপড়ির শরীরে হোল ফোটাচ্ছে। রা’গ সংবরণ করতে না পেরে মুখ দিয়ে ফুস ফুস শব্দ উচ্চারণ করছে। তড়িৎ লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে রুম জুড়ে হাঁটতে হাঁটতে হিতাহিত জ্ঞা’ন শূণ্য হয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,

‘ফকির মনে হয় আমাকে আপনার? অসহায় আমি? হাত পেতেছিলাম আপনার কাছে সাহায্য চেয়ে? কোন সাহসে আপনি আমাকে টাকা দিলেন? এই টাকা দিয়ে কি প্রমাণ করতে চেয়েছেন? আপনি কোটিপতি আর আমি ফকির? আপনার ঐ সামান্য পাঁচশ টাকা পেয়ে আমি খুশিতে আ’ত্ম’হা’রা হয়ে যাব? কান খুলে শুনে রাখুন মিস্টার অ’স’ভ্য। আমার বাবাকে সৃষ্টিকর্তা যথেষ্ট অর্থ- বিত্ত দান করেছেন।আপনার ঐ টাকায় আমি থু’থু’ও ফেলি না। আর একবার যদি আমাকে এভাবে টাকা দিয়ে অ’প’মান করার চেষ্টা করেছেন তো খুব খা’রা’প হয়ে যাবে বলে দিলাম। একাউন্ট চেক করে দেখবেন। আপনার এতো ভালো মানসিকতায় মুগ্ধ হয়ে পাঁচশ টাকার সাথে আরও পাঁচ টাকা বেশি দিয়েছি খুশি হয়ে। ঐ পাঁচ টাকা দিয়ে একটা ললিপপ কিনে খেয়ে নিবেন।’

কথাগুলো শেষ করে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করলনা পাপড়ি। কল কেটে বিছানায় ছুড়ে মারল ফোনটা। ধুপধাপ পা ফেলে বাথরুমে ডুকে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিল। মনে হচ্ছে ছেলেটার প্রতি তৈরি হওয়া রা’গ পুরোটাই বাথরুমের দরজার উপর ঢেলে দিয়েছে।বোনের এমন হুট করে অস্বাভাবিক আচরণের কারণ কিছুই বোধগম্য হলনা পালকের। ফ্যালফ্যাল নয়নে সে এখনো তাকিয়ে আছে বোনের যাবার পানে।

****

সারাদিন বইয়ের মাঝে ডুবে থেকে সন্ধ্যার আগে চার বন্ধু মিলে একটু বাইরে বের হয়েছিল ঘুরেফিরে মাইন্ড ফ্রেশ করবে বলে। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল তাদের মাঝে। নাহিদের ফোন সাইলেন্ট থাকাই বুঝতে পারে নি কল আসছে। পকেট থেকে সিগারেট বের করতে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখতে পেল কল আসছে। বন্ধুদের এগোতে বলে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করেছিল সে। বাকী তিনজন হাঁটতে হাঁটতে প্রায় অনেকটাই দূরে চলে এসেছিল। এক সময় রাফিন পিছনে তাকিয়ে দেখতে পেল নাহিদ এখনো সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। পূণরায় তিনজন উল্টো হেঁটে নাহিদের কাছে এসে তাকে থম ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাফিন ছেলেটাই প্রশ্ন করে,

‘এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কথা শেষ হয় নি?’

ফোনটা পকেটে পুরে বিরক্তি ভঙ্গিতে জবাব দেয় নাহিদ,

‘কথা শেষ হয়েছে সাথে মাথাও শেষ হয়েছে। বছরের পর বছর মেয়েদের সাথে কেমনে প্রেম করিস তোরা ভাই? আমি তো চার ঘন্টার মাঝেই একটার পাল্লায় পরে আধ পাগল হয়ে গেছি। এগুলো কি আদও সুস্থ্য ম’স্তি’ষ্কের মানুষ না কি ভিন গ্রহের এলিয়েন! যত্তসব পাগলের কান্ড। ভালো করতে গেলেও খারাপ হয়ে যায় মানুষ।’

বন্ধুর মুখে মেয়েদের সম্পর্কে এমন উক্তি শুনে খ্যাঁক করে ওঠে লাবিব।,

‘ঐ শা’লা সমস্যা কি? মেয়ে মানুষের কথা শুনলেই এমন চু’ল’কানি ওঠে ক্যান তোর? কি করছে ওরা তোরে? কোনো কালে ই’জ্জ’ত হনন করছিল না কি তোর?’

এমন কথা শুনে চোখ পাকিয়ে তাকায় নাহিদ। কিন্তু তার চোখ পাকানোকে বন্ধুরা যেন তোয়াক্কায় করলনা। উল্টো লাবিবের কথা শেষ হতেই নাজিম কৌতুক করে বলে ওঠে,

‘আমার তো ভাই মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় এই নাহিদ্দেয়া আবার লে’সবি’য়ান কি না। নইলে ভাই তার মেয়েদের প্রতি এতো বিতৃষ্ণা ক্যান? যেইখানে আমরা তিন বন্ধু রাস্তাঘাটে মেয়ে দেখলেই তাদের প্রেমে উস্টা খেয়ে পরি। সেইখানে তার কি না আজ পযর্ন্ত কোনো মেয়ের প্রতি সামান্য পরিমাণ দূর্বলতাও তৈরি হয় নি! এইগুলা কি স্বাভাবিক মনে হয়?’

আ’গু’ন চোখে তাকিয়ে থেকে বন্ধুদের কার্যকলাপ দেখে যাচ্ছে নাহিদ। চোয়াল শক্ত করে যেই কিছু একটা বলতে যাবে এর মাঝেই রাফিন বলে ওঠে,

‘এইজন্যই তো বলি, আমি কাপড় পাল্টাইলে শা’লা আমার দিকে ড্যাবড্যাব কইরা তাকায় থাকে ক্যান? তলে তলে যে আমার ই’জ্জ’ত লু’ট করার চিন্তা করে এইটা তো ভাবনায় ছিল না। দেখ ভাই, আমি একটা মাসুম বাচ্চা। অনেক কষ্টে কপালে একটা গার্লফ্রেন্ড জুটাইছি। তুই যদি এখন আমার ই’জ্জ’তে হাত দিস তো আমার টুনির মা আমার কপালে ঝাড়ুর বারি দিয়া অন্য বেডার হাত ধইরা চইলা যাইবো। ভাই প্লিজ, দয়া কইরা তুই আমার দিকে আর নজর দিস না। আমার থেকেও ডেসিং নাজিম্মেয়া আর লাবিব্বেয়া। আমারে ছাইড়া ওদের দিকে নজর দে ভাই।’

সাথে সাথেই এক লাফে দুই পা পিছিয়ে গেল লাবিব। তাড়াহুড়ো করে বলে ওঠল,

‘হুশ হুশ ! দূরে থাকবি একদম আমার থেকে। মিলি যদি জানতে পারে তুই আমার দিকে নজর দিছিস তাইলে তোর চোখ তুইলা মারবেল খেলবো সে। জানিস তো মেয়েটা আমার প্রতি কতটা পজেসিভ।’

মুহূর্তেই তেতে ওঠল নাহিদ। আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করল। না পেয়ে নিজের পায়ের জুতা খুলে হাতে নিল।সাথে সাথেই ছুটতে শুরু করল তিন বন্ধু । সর্বশক্তি দিয়ে হাতের জুতাটা তাদের দিকে ছুড়ে মেরে দাঁত কিড়মিড় করে চেঁচিয়ে বলল,

‘একটাও বাসাই ডুকবি না আজকে সাবধান করে দিলাম। ডুকেছিস তো তোদের ইজ্জত কিভাবে লুট করতে হয় সেটা আমি দেখে নিব। প্রয়োজনে হিজরা ভাড়া করে আনব। তবুও তোদের একটাকেও ইজ্জত নিয়ে পরদিন গার্লফ্রেন্ডের সামনে দাঁড়াতে দিব না। শা’লা বে’ই’মা’ন কত গুলা! নিজেরা ছেলে হয়েও মেয়েদের পক্ষ হয়ে বন্ধুর চ’রি’ত্র নিয়ে এতো গুলো কথা বলে দিল! তোদের মতো বন্ধু থাকার থেকে না থাকা অনেক ভালো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here