#হৃদয়_জুড়ে_তার_ছায়া
#পর্বঃ১৩
#আদওয়া_ইবশার
নিকষ কালো রজনী। মাথার উপর নীল সামিয়ানাটা মেঘে ঢাকা। লক্ষ কোটি উজ্জ্বল নক্ষত্র গুলো’ও যেন গা ঢাকা দিয়েছে পুঞ্জীভূত মেঘের আড়ালে। কুচকুচে আধারে পাপড়িও বোধহয় দূর আকাশের নক্ষত্র গুলোর মতোই নিজেকে আড়াল করতে প্রয়াস চালাচ্ছে। ঘরের কৃত্রিম আলো টুকু নিভিয়ে চুপচাপ বসে আছে বারান্দার মেঝেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে। উত্তরে বাতাস এসে সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে যাচ্ছে আলতো পরশে। হিম শীতল বাতাসের স্পর্শে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে দেহটা। জ্বলজ্বল করা চোখের মণি দুটো ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝেও সামনের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক। মাথার ভিতর ভনভন করে ঘুরছে শুধু দুপুরের ঘটনা গুলোই। ক্ষণেক্ষণে মনে পরছে নাহিদের বিদায় বেলার আগ মুহূর্তে তার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে যাওয়া কিছু কথা। বাতাসের দাপটে যেমন কেঁপে উঠছে পাপড়ির দেহের বাহ্যিক দিকটা তেমন ভিতরটাও কেঁপে কেঁপে উঠছে নাহিদের বলা শেষ কথা গুলো স্বরণে আসতেই। কানের কাছে যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এখনো সেই কথা গুলো।
দুপুরে তখন নাহিদের কথা গুলো শুনে আর কোনো উত্তর দেয়নি পাপড়ি। তবে চোখ পিটপিট করে পালক কিছুক্ষণ নাহিদের দিকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলেছিল,
“আপনাকে দেখতে ঠিক আমার ফেভারিট এক্টর ওয়াহাজ আলির মতো নতুন কুটুম। ভেবেছিলাম আপনার উপর ক্রাশ খাব। আমার বাস্তব জীবনের ওয়াহাজ ভেবে আপনাকে নিয়ে প্রতি রাতে সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখব। কিন্তু আপনি যতটা সুন্দর আপনার কথা ঠিক ততটাই বান্দর টাইপ। তাই আপনার উপর ক্রাশ খেতে খেতেও খেলাম না। স্বপ্ন’ও দেখবনা ওয়াহাজ ভেবে। দেখা যাবে প্রতিদিন স্বপ্নে এসেও আপনি এমন মেজাজ গরম হওয়া কথা বলে আমার স্বপ্নের বারোটা বাজিয়ে দিবেন। আপনার থেকে আমাদের পাড়ার বোকাসোকা সজল ভাই আরও বেশি ভালো। দরকার পরলে আমি তাকেই ওয়াহাজ ভেবে স্বপ্ন দেখব। সজল ভাই বোকা হলেও আশা করি আপনার মতো এরকম মেজাজ গরম হওয়া কথাবার্তা বলবেনা। আপনার থেকে ঐ সজল ভাই ঢের ভালো।”
এতটুকু একটা মেয়ের মুখে তার ফেভারিট এক্টরের সাথে নিজের তুলনা আবার ক্রাশ খাওয়া, স্বপ্ন দেখা কথা গুলো শুনে ভড়কে যায় নাহিদ। পাপড়ি নিজেও বোনের মুখের এমন কথায় হা হয়ে যায়। চোখ বড় বড় করে দুজনেই তাকিয়ে থাকে পালকের মুখের দিকে। এতো গুলো অপ্রত্যাশিত লাগাম ছাড়া কথা বলে দুজন মানুষের হার্ট অ্যাটাক করানোর উপক্রম করেও পালক নির্বিকার। বোনের এমন বেলেহাজ কথার ধরনে বিস্ময় ভাব কাটিয়ে পাপড়ি কিছু বলতে যাবে তার আগেই শুকনা কেশে নাহিদ বলে,
“সাধে কি আর তিড়িং বিড়িং ফড়িং বলেছিলাম? বয়স কত তোমার? ক্লাস এইট এ পড়া তেরো-চৌদ্দ বছরের পিচ্চি একটা মেয়ে অথচ কথার ধরন কি সাংঘাতিক! হাত-পায়ের সাথে দেখছি অপরিনত বয়সেই মন’ও তিড়িং বিড়িং করে। আন্টিকে জিজ্ঞেস করে দেখো তোমার বয়সে হয়তো তোমার বেয়াক্কল বোনের নাক দিয়ে সর্দি পরতো। আর তুমি কি না ফেভারিট এক্টরের সাথে বাস্তব জীবনের কোনো ছেলেকে তুলনা করে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাও শুরু করে দিয়েছো!
“এখনো শুরু করিনি তো স্বপ্ন দেখা। তবে দেখব বলেছি।”
নির্লিপ্ত কন্ঠের জবাব পালকের। তৎক্ষণাৎ রাগ সংবরণ করতে না পেরে নাহিদের সামনেই ধুম করে পিঠে কিল বসিয়ে দিল পাপড়ি। চোখ-মুখ খিঁচে ধমকে ওঠে,
” নির্লজ্জের মতো আর একটা শব্দ মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলে তোর গলা টিপে ধরব আমি। বেহায়া মেয়ে কোথাকার! লজ্জা করেনা বড় বোনের সামনে একটা ছেলেকে নিয়ে এসব বলতে?”
“সত্যি কথা বললেই মানুষ নির্লজ্জ হয়ে যায় তাইনা! ভুল কি বলেছি আমি? প্রায় সব মেয়েরাই নিজেদের ক্রাশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর তুমিও তার ব্যতিক্রম না। ব্যতিক্রম শুধু এটুকুই, আমি ভালো মানুষ তাই সবটা স্বীকার করে দিয়েছি। আর তোমরা গোপন করে রেখেছো।”
মুখের উপর জবাব দিয়েই চোখের পলকে বসা থেকে ওঠে চলে যায় পালক। হতবাক দৃষ্টিতে বোনের যাবার দিকে তাকিয়ে থাকে পাপড়ি। ফিচেল হাসে নাহিদ। পাপড়ির থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বিদ্রুপ করে বলে,
” আবারও প্রমাণ হয়ে গেল দুজনকে আসলেই আমি ঠিক নামটাই দিয়েছি। যে মেয়ে নিজের ছোট বোনের সাথেই কথায় পারেনা। হাঁটুর বয়সী বোন মুখের উপর চটাং চটাং জবাব দিয়ে চলে যায় আর সে জবাব দিতে না পেরে বোনের যাবার পানে হা করে তাকিয়ে থাকে। এটা দেখার পর আসলেই যে আপনি বেয়াক্কল না এটা ভাবার আর কোনো অবকাশ থাকেনা।”
একদিকে বোন আর একদিকে নাহিদ। কারো সাথে না পেরে রাগে দুঃখে পাপড়ির চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। তিরতির করে কাঁপতে থাকে ঠোঁট দুটো। কথার তালে সাথে কাঁপে কন্ঠনালী’ও। হাত দুটো মুঠো করে গলার কাছে দলা পাকিয়ে থাকা কান্নাটা গিলে নিয়ে বলে,
“আপনার কি মনে হয় না এখন একটু বেশিই ফাজলামি করে ফেলছেন! আমি বোকা হই আর
যাই হই না কেন। অন্তত আপনার মতো মানুষের মনে কষ্ট দেবার মতো কোনো কথা বলিনা।”
কথা গুলো বলার মাঝেই টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে পাপড়ির গাল বেয়ে। যেটা দেখে থমকে যায় নাহিদ। থমকে যায় পাপড়ি নিজেও। বুঝতেই পারেনি কখন নিজের অজান্তেই চোখে জমে থাকা জল টুকু কান্না হয়ে গড়িয়ে পরেছে গাল বেয়ে। আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না সে। দ্রুত হাতে চোখ মুছে চলে যায় নিজের রুমে।পাপড়ির যাবার পানে অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে নাহিদ বিরবির করে বলে ওঠে,
” এতোদিন ভাবতাম শুধু বেয়াক্কল। এখন তো দেখছি বেয়াক্কলের সাথে সাথে ছিচকাঁদুনেও।”
খুব অল্প সময়েই বিভিন্ন পদের রান্না শেষ করে নিয়েছে রওশন আরা। একে একে সব কিছু ডাইনিং এ সাজিয়ে নাহিদের সাথে মেয়েরও তাড়া দেয় খেয়ে নেবার জন্য। খাবার টেবিলে আর কোনো কথা হয় না। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে কয়েকবার নাহিদ চোখ তুলে পাপড়ির দিকে তাকালেও পাপড়ি তাকায় না একবারও। পুরোট সময় নিচের দিকে তাকিয়েই একমনে খেয়ে যায়। বুঝতে পারে নাহিদ মেয়েটা হয়তো একটু বেশিই আবেগী। এভাবে মজা করাটা আসলেই হয়তো ঠিক হয় নি তার। সব মানুষ তো আর সবসময় মজা বুঝেনা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মজাটাকেই সিরিয়াস নিয়ে গন্ডগুল পাকিয়ে দেয়। পাপড়ি’ও হয়তো ঐ মানুষ গুলোর মতোই। খাওয়া শেষে নাহিদ জানায় তার একটু ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন। রওশন আরা পাপড়িকে বলে নাহিদকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। কোনো উচ্চবাচ্য করেনা পাপড়ি। মাথা নিচু করেই চুপচাপ নাহিদকে সাথে আসতে বলে এগিয়ে যায় আগে আগে। রওশন আরা পালকের থেকে একটু দূরে গিয়ে নাহিদ পাপড়ির থেকে অল্প দূরত্ব রেখে ফিসফিসিয়ে বলে,
” আপনি চান আমি যেন আর কখনো আপনাকে বেয়াক্কল না ডাকি তাই তো!”
হঠাৎ কানের কাছে নাহিদের গরম নিঃশ্বাস আঁচড়ে পরাই ঘাবড়ে যায় পাপড়ি। দ্রুত পায়ে দূরে সরে গিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে নাহিদের দিকে। পাপড়ির এমন কান্ডে কপাল কুঁচকে কন্ঠে বিরক্ত ভাব নিয়ে বলে,
” টিকটিকির মতো এমন লাফিয়ে সরে গেলেন কেন? বাঘ না কি ভাল্লুক আমি? নিশ্চয়ই খেয়ে ফেলতাম না আপনাকে!”
” তো আপনি আমার এতো কাছে আসলেন কেন?একদম দূরে থাকবেন। আ. .
পাপড়ির পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে পূণরায় নাহিদ বলে ওঠে,
” মুখে ব্রেক কষেন। ঐ বেশি বোঝা মস্তিষ্ক নিয়ে এখন আবার এটা বলবেন না, আমি খারাপ মতলব নিয়ে আপনার কাছে গিয়েছি। আমার চরিত্র খারাপ এই সেই। ফর ইউর কাইন্ড ইনফোরমেশন আপনার এতোটাও কাছে কিন্তু যায়নি আমি। কথা গুলো আমার মুখ আর আপনার কান পযর্ন্ত সীমাবদ্ধ রাখার জন্য আমার যতটুকু কাছে যাওয়া প্রয়োজন আমি ঠিক ততটুকুই কাছে গিয়েছি। এর বেশি না।”
একটু থেমে আবারও বলে,
“সে যায় হোক। এখন বলুন আপনি আসলেই চান কি না আমি আপনাকে আর বেয়াক্কল না ডাকি!”
নাহিদের দিকে ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে থেকেই পাপড়ি মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। পাপড়ির সম্মতি ধরতে পেরে নাহিদ পূণরায় পাপড়ির কানের কাছে এগিয়ে আসে। চমকে ওঠে আবারও দূরে সরে যায় পাপড়ি। দ্বিতীয়বার পাপড়ির এহেন কান্ডে যথেষ্ট বিরক্ত হয় নাহিদ। মুখ দিয়ে ‘চ’কারান্ত উচ্চারণ করে শাসিয়ে বলে,
” আর এক পা দূরে সরে গেলে কিন্তু এই মুহূর্তে আমাকে যেমন ভাবছেন ঠিক তেমন রূপটাই দেখিয়ে দিব। ভদ্র আছি ভদ্র থাকতে দিন। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন এখানেই। একদম নড়চড় করলেই খবর করে ছাড়ব,
এমন শাসানো বাক্যে কি বলবে পাপড়ি ভেবে পায়না। ক্ষণেক্ষণে অবাক হয়ে শুধু তাকিয়েই থাকে নাহিদের মুখের পানে। এই ফাঁকে নাহিদ আবারও একটু কাছে এগিয়ে আসে পাপড়ির। সাথে সাথেই আতঙ্কে পিটপিট করা চোখ দুটো বুজে ফেলে পাপড়ি। কানের কাছে নাহিদের আঁচড়ে পরা গরম নিঃশ্বাস গুলোর তালে তালে কেঁপে ওঠে পাপড়ির সর্বাঙ্গ। তার এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে মজা পায় নাহিদ। পাপড়ির ভিতু মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হাসতে থাকে মিটমিট করে। কিছুক্ষণ অপলক চোখে তাকিয়ে থেকে মিহি কন্ঠে বলে,
“বলুন তো কার্বনের সাথে হাইড্রোজেনের কখনো ঝগড়া হয় না কেন?”
এমন অদ্ভূত প্রশ্নে বন্ধ চোখ জোড়া মেলে পিটপিট করে তাকায় পাপড়ি। কাঁপা কন্ঠে জানতে চায়,
“কেন?” হাস্যজ্জ্বল মুখটা নিমিষে গম্ভীর হয়ে যায় নাহিদের। চোখ-মুখ কুঁচকে বলে,
“এই প্রশ্নের উত্তর তো একটা এইট-নাইনের বাচ্চাও পারবে। এটুকু’ও জানেন না অথচ অভিযোগ করেন কেন আপনাকে বেয়াক্কল ডাকি!”
নাহিদের এতোটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করছে পাপড়ি। দূরে সরে যাবার হাজার পায়তারা করেও লাভ হচ্ছেনা। তখন নাহিদের থেকে দূরে সরতে গিয়ে ওয়াশরুমের সামনর দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তার। ঠিক সেটার সুযোগটাই নিয়েছে নাহিদ। দু-হাত দেয়ালের দুপাশে রেখে আটকে দিয়েছে পাপড়িকে। দূরে যাবার কোনো উপায় রাখেনি তার। ঘরে মা-বোন আছে। একটু জোরে কথা বললেই তারা শুনে নিবে। এমন পরিস্থিতিতে নাহিদকে কিছু বলতে গেলে মা শুনে এগিয়ে এসে এই পরিস্থিতি দেখে আবার না জানি তাকেই অন্য কিছু ভেবে নিয়ে তাকেই ভুল বুঝে। মনের মাঝে তাদের এমতাবস্থায় কেউ দেখে ফেলার আতঙ্ক নিয়ে ভিতু কন্ঠে জবাব দেয়,
“কারণ আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট না। তাই এসব জানাও আমার কাম্য না। এবার প্লিজ দূরে সরুন।”
“আমার গা থেকে কি কোনো বাজে স্মেল আসছে?”
দুই পাশে মাথা নাড়িয়ে না জবাব দেয় পাপড়ি। জবাব পেয়ে নাহিদ আবারও বলে,
“তাহলে এমন দূরে সরুন দূরে সরুন করছেন কেন? খেয়ে ফেলছি না তো আপনাকে। আরে ভাই আমার কথা শেষ করেই তো চলে যাব আমি। এতো হাইপার হবার কি আছে? সবসময় বেশি বোঝা পাবলিক। সাধে কি আর বেয়াক্কল বলি আপনাকে! সে যায় হোক। যে প্রসঙ্গে কথা বলছিলাম সেদিকে আসি। ঐ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে কাওকে সাইন্সের স্টুডেন্ট হতে হয় না। বেসিক নলেজ থাকলেই উত্তরটা বলা যায়। কিন্তু আপনি সেটাও পারছেন না। না পেরে দোহাই দিচ্ছেন সাইন্সের স্টুডেন্ট না। এবার বুঝেছেন তো বুদ্ধি আপনার হাঁটু না সোজা টাকনুর নিচে নেমে গেছে! আচ্ছা থাক! আপনার বুদ্ধির প্রসঙ্গেও আর না যায়। প্রশ্নের উত্তরটা আমিই দেই। কার্বনের সাথে হাইড্রোজেনের কখনো ঝগড়া হয় না কারণ তারা সবসময় একে অপরের সাথে ফেবিকলের মতোই আটকে থাকে। যে কারণে তাদের মাঝে ঝগড়া হবার কোনো অবকাশেই থাকেনা। এখন আমরাও যদি তাদের সম্পর্কের সূত্র ধরে এগিয়ে যায় তাহলে কিন্তু আমাদের মাঝেও ঝগড়া হবার কোনো সম্ভাবনা থাকেনা। আর না থাকবে আমার আপনাকে বেয়াক্কল বলে ডাকার কোনো ইচ্ছে। কারণ যত যায় হোক, নিজের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষটা যদি জগত বিখ্যাত বেয়ক্কল’ও হয় তবুও তাকে বেয়াক্কল ডেকে নিজেই নিজেকে অপমান করা যায় না।”
কথার মাঝে একটু থামে নাহিদ। পাপড়ির স্তম্ভিত মুখের দিকে কিছু সময় শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে মুখটা আর একটু কাছাকাছি নিয়ে মন্থর স্বরে জানতে চায়,
“মিস বোকা রানী! হবেন কি আমার ফেবিকল? কথা দিচ্ছি আজীবন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখব নিজের সাথে। সম্মানের সাথে মনের রাণী করে রাখব। কখনো কোনো কিছু নিয়ে অভিযোগ করার কোনো সুযোগ দিবনা। আর না দিব ঐ বোকা চাহনীর চোখ দুটো দিয়ে অশ্রু ঝরার কোনো সুযোগ।”
কথা গুলো শেষ করেই দূরে সরে যায় নাহিদ। পাপড়ির থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে ভাবলেশহীন কন্ঠে পূণরায় বলে,
“এই একটা সুযোগ। এটা কাজে লাগাতে না পারলে কিন্তু আজীবন আপনাকে বেয়াক্কল নামেই ডেকে যাব। শুধু আমিই না। সবাই যাতে আপনাকে বেয়াক্কল নামেই চিনে সেই ব্যবস্থাই করব। আপনার ছবি সহ পোস্টার ছাপিয়ে দিব। যেটাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকবে “পাপড়ি নই। আমাকে বেয়াক্কল বলে ডাকুন। আমার আচার আচরণের সাথে এই বেয়াক্কল নামটাই পারফেক্ট। তাই বাপ-মায়ের আকিকা করে রাখা নাম বদলে নতুন করে বেয়াক্কল নাম রেখেছি।” দেয়ালে, রাস্তার পাশে, মোড়ে মোড়ে, আপনার ভার্সিটির আনাচে কানাচে সব জায়গায় এই পোস্টার লাগিয়ে দিব। তখন কিন্তু পরিচিত থেকে শুরু করে অপরিচিত সবার মুখেই এই বেয়াক্কল নামেই শুনতে হবে। আর একটা কথা, আমি কিন্তু খালি কলসি বাজায় না। যা বলি তাই করি। আজ রাতের মাঝে আমার প্রশ্নের জবাব না পেলে কাল সকালেই কথার প্রমাণ দেখতে পারবেন বাইরে বের হলেই। সো যা করবেন একটু বুদ্ধি খাঁটিয়ে। কেমন!”
কথাটা বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না নাহিদ। পাপড়িকে অবাকের সাগরে ডুবিয়ে রেখেই বড় বড় পা ফেলে চোখের আড়াল হয়ে যায়। রওশন আরার থেকে বিদায় নিয় চলে যায় একেবারে বাড়ি থেকেই।
চলবে……
( তাড়াহুড়োয় রিচেইক দেওয়া হয় নি। ভুল গুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।)