ভালোবাসিবো_খুব_যতনে #Ayrah_Rahman #part_04

0
435

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_04

দরজায় ঠক ঠক আওয়াজে ঘুম হালকা হয়ে হেলো পূর্ণার মিটমিট করে তাকিয়ে শুয়া ছেড়ে উঠে বসলো, ভ্রু কুচকে বার কয়েক ঠক ঠক আওয়াজ শুনে বালিশের নিচে থেকে ফোন টা বের করে একবার সময় ট দেখে নিলো , মোটে ৭ টা বাজে এই সাত সকালে কে আসবে ? মাস ও তো শেষ হয় নি যে বাড়িওয়ালার বউ আসবে ভাড়া চাইতে তাহলে কি ইলমি?

কথাটা ভাবতে ভাবতে ই বিছানা থেকে নেমে এক হাতে চুলের খোপা করতে করতে দরজার দিকে এগুলো পূর্ণা , বাড়িওয়ালার বউ আর ইলমি ছাড়া এই বাসায় তেমন কেউ ই আসে না ,

পূর্না দরজার কাছে কি গিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,

” কে? ”

অপর পাশ থেকে ইলমির কন্ঠ শুনা মাত্র ই দরজা খুলে দিয়ে দু হাত বুকে গুজে দাড়ালো পূর্ণা ,

ইলমির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই থতমত খেয়ে গেলো সে , ইলমি বাসন্তী রঙের সাড়ি পড়েছে, সাদা ব্লাউজ সাথে ম্যাচিং কানের দুল আর গলায় ছোট পাথরের রকেটের সাথে চিকন চেইন , ফর্সা গায়ে রং টা বেশ মানিয়ে ছে আবার হাতে একটা সপিং ব্যাগ কিন্তু এই সকালে এত সঙ সাজার কারণ বুঝলো না পূর্ণা ,

ইলমি পূর্না কে দেখে সব কটি দাঁত বের করে হাসি দিলো

” কি চাই ? এই সাত সকালে আমার ঘুম ভাঙানোর কারণ টা জানতে পারি? ”

পূর্ণার কথার কোন রুপ পাত্তা না দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,

” সর তো, আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি এসেছি তাতে তোর কি ? ”

বলেই ইলমি সোজা ঘরের দিকে হাটতে লাগলো , পূর্ণা ও দরজা লাগিয়ে ইলমির পিছনে পিছনে গেলো ,

” কি সমস্যা তোর ? রাতে ও ঘুমাতে দিলি না এখন আবার সাত সকালে এসে হাজির! ”

ইলমি বিছানায় বসতে বসতে ভ্রু কুচকে বলল ,

” রাতে ঘুমাতে দেই নাই মানে কি ? আমি তো একবার ই ফোন দিলাম ”

” তাহলে রাত ১২ টা বাজে কি আমি দিয়েছি তোকে ফোন? ”

পূর্ণার কথায় ইলমি বেশ অবাক হলো,

” রাত ১২ টা মানে ? তুই তো জানিস পূর্ণ আমাকে ১১ টার পর এই বাংলাদেশে চিরুনি তদন্ত করলে ও আমাকে পাওয়া যাবে না ”

কথাটা যে ইলমি একেবারে ভুল বলেছে তা কিন্তু না , ওকে আসলেই রাত ১১ টার পর ঘুম থেকে তোলা ইহকালে সম্ভব না কিন্তু ফোন করলো কে?

” তাহলে? ”

পূর্ণার কথার ভিত্তি তে ইলমি ভ্রু কুচকে বলল,

” এত চিন্তা করার কি আছে আজব, তোর ফোন চেক করলেই হয় ”

” আরে হ্যা তো , মনেই ছিল না ”

বলেই পূর্ণা নিজের ফোন হাতে নিয়ে কল লিস্টে ঢুকলো , প্রথমেই অপরিচিত নাম্বার দেখে খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো সে , এটা তো ইলুর নাম্বার না, তাহলে? ইসস কে না কে ফোন দিয়েছিল আর কি করলাম এটা? এখন তো নিজের কপাল নিজে থাপরাইতে মন চাচ্ছে ,

পূর্ণা মোবাইল থেকে চোখ তুলে সামনে বসে থাকা ইলমির দিকে তাকালো ,
ইলমি প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে ই তাকিয়ে আছে, ইলমির দৃষ্টি লক্ষ্য করে পূর্ণা বোকা ভাবে হাসলো ,

” কি হয়েছে ? ”

পূর্ণা কিছু টা ঢোক গিলে বলল,

” আননোন নাম্বার চিনি না ”

ইলমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো ,

” আননোন নাম্বার তো কি হয়েছে ? বাই দা রাস্তা তুই কি উল্টো পাল্টা কিছু কথা বলছিস না কি ? ঝাড়ি টাড়ি দিসিস ? ”

পূর্ণা ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো,

” আমি না আসলে, তুই ফোন দিয়েছিস ভেবে ইচ্ছে মতো ঝেড়ে ফোন রেখে দিয়েছিলাম , আমি কি জানতাম না কি ? আর ওই লোকের কমনসেন্স নাই নাকি! মাঝ রাতে একটা মেয়েকে কল করে ! ”

ইলমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

” আচ্ছা যা করার তো করেই ফেললি এখন বলে লাভ নাই , তুই বরং বেচারা অর বেচারি যেই হোক না কেন তাকে ফোন করে সরি বলে দে ”

পূর্না মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করে বলল,

” ঠিক আছে ”

বলেই ফোন হাতে নিয়ে কল করলো সেই নাম্বারে ,

_______________

মুখে সূর্যের তীর্যক রশ্মি পড়াতে চোখ মুখ কুচকে গেলো তাহরিমের , রাতে সকল হিসেব নিকেশ শেষ করে ঘুমোতে ঘুমোতে বেশ দেরি হয়ে ছিলো তার,
সূর্যের আলোতে কাঁচা ঘুম টার ব্যঘাত তার মোটেও সহ্য হচ্ছে না, উপুর হয়ে শুয়ে কাথা দিয়ে পা থেকে মাথা অব্দি ঢেকে আবার ঘুম দিলো এর ই মাঝে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে নিজের কর্কষ শব্দে বেজে উঠলো ফোন, চোখ বন্ধ করে বালিশের তলায় থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো , কানে দেওয়ার সাথে সাথে ই কারো কোমল কন্ঠে হৃদপিন্ড কম্পিত হলো তাহরিম তালুকদারের ,

ওপাশ থেকে কেউ একজন কোমল কন্ঠে সালাম দিলো , সালামের উত্তরে তাহরিম শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলল ,

” ওয়ালাইকুম সালাম ”

অপর পাশ থেকে মেয়েটা বলল,

” আপনি কি কাল রাতে আমার ফোনে কল দিয়েছিলেন ? আসলে এই নাম্বার থেকে কাল রাত ১২ টায় আমার ফোনে কল গিয়েছিল কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত আমি ঘুমিয়ে ছিলাম আর ঘুমের ব্যঘাত ঘটানোর কারণে বেশ রেগেও গিয়েছিলাম , আসলে আমি ভেবেছিলাম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মনে হয় ফোন দিয়েছিলো আর আমি ঘুমের তাড়নায় নাম্বার টাও খেয়াল করি নি তাই আসলে আপনাকে ওভাবে বলা হয়েছিলো আসলে আমি ঘুমের মাঝে কাকে কি বলি মাথায় থাকে না , আপনি মনে হয় কোন দরকারে ফোন দিয়েছিলেন! আসলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত , আমি ইচ্ছে করে করি নি , আপনার কোন দরকার হলে বলতে পারেন , কি উপকার করতে পারি? ”

তাহরিম চোখ বন্ধ করে মেয়েটার কথা শুনছিলো , মেয়েটার কন্ঠ কি আসলেই এত মধুর নাকি শুধু মাত্র তার কাছে ই এমন মনে হচ্ছে! আচ্ছা! এক সাথে এত কথা কেউ কি বলতে পারবে? হ্যা তো মেয়েটা পেরেছে, এমন কেন মনে হচ্ছে যেন সে চাইছে মেয়েটা আরো কিছু ক্ষন কথা বলুক আর সে শুধু শুনবে ! এতো আবেগ দিয়ে কেউ কি কখনো সরি বলেছে তাকে? কই মনে হচ্ছে না তো, এত সুন্দর করে সরি মেয়েটাকে কে বলেছে বলতে? আনমনেই তার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ভেসে উঠলো ,

ওপাশ থেকে মেয়েটা সমানে হেলো হেলো করেই যাচ্ছে ,

” হ্যালো , এই যে শুনছেন আপনি ? ”

“……………..

” কথা বলুন , আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? ”

” জজজজ্বি ”

” আসলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ”

” ইট’স ওকে, আমার ই ভুল হয়েছে, এত রাতে একটা মেয়েকে ফোন দেওয়া ঠিক হয় নি , আমিও আসলে…. ”

সরি বলতে গিয়েও তাহরিম ঠেকে গেলো কারণ সে এর আগে কখনো ই কাউকে তার কাজের জন্য সরি কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেনি

” জি? ”

” আববব কিছু না ”

” আচ্ছা যায় হোক, আপনি কি কোন দরকারে ফোন দিয়েছিলেন? ”

অপরপাশে কথা বলা মেয়েটরা প্রশ্নে তাহরিম জ্বিব দিয়ে খানিকটা ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে গিয়েও থেমে গেলো , কেনো জানি আজ অদ্ভুত ভাবে মেয়েটিকে তার পরিচয় দিতে ইচ্ছে করছে না , কেন জানি তার নিজের পরিচয় গোপন রেখে মেয়েটার সাথে কথা বলতেই ভালো লাগছে , সে চাই না মেয়েটা তাকে চিনুক, সাধারণ ছেলে হিসেবে নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করতে ইচ্ছে করছে তা খুব করে ,

” আসলে আপনাদের ওখানে কি সংবাদ পত্র ছাপা হয় ? আমার একটা সংবাদ ছাপানো ছিলো তাই আপনাকে কল করেছিলাম ”

” কি রকম সংবাদ ? ”

” পাত্রীর ”

পূর্ণা বেশ থতমত খেয়ে বলল ,,

” পাত্রী? ‘

নিজের বোকা বোকা কথায় নিজেই বেআক্কেল হয়ে গেলো তাহরিম , মিথ্যে সে কোন কালেই বলতে পারে না তার উপর দুনিয়ায় কি আর কোন নিউজ ছিলো না শেষে কি না পাত্রী চাই! যে কি না হাতে তুড়ি দিলে পাত্রীর লাইন লাগবে সেখানে সে কি না পাত্রী চাই বলে সংবাদ পত্রে বিজ্ঞাপন! ব্যপার টা হাস্যকর না!

চলবে….

[ কেমন হয়েছে জানাবেন আর আমার এই কাঁচা হাতের লেখা আপনাদের কেমন লাগে ছোট্ট একটা রিভিউ দিয়ে যাবেন ,

হ্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here