#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫৫
–আয়নার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটার প্রতিবিম্ব দেখে বলতো আসলেই কি আমার চয়েজ এতোটা খারাপ আর জঘন্য।
তীর চুপসে যায় ইশানের কথাটা শুনে। ইশান এটা কি করে জানলো যে সে এই কথাটা বলেছে। নিশ্চয়ই ইশা বলছে এই কথাটা। তীর মনে মনে বলে।
–ইশুর বাচ্চা তোকে হাতের কাছে পেয়ে নেই তারপর বুঝাবো।
তীরকে চুপ থাকতে দেখে ইশান পুনরায় বলে।
–কি হলো? চুপ করে আছিস কেন? আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি তো।
তীর নিজেকে ইশানের বাহুডোর থেকে সরিয়ে ইশানের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বলে।
–আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে বাধ্য নই।
ইশান বাঁকা হেসে তীরের দিকে এগোতে এগোতে বলে।
–বুঝতে পেরেছি নিজেকে জঘন্য বলতে ইচ্ছে করছে না এখন তাই তো।
তীর ইশানকে আবারো কাছে আসতে দেখে আমতা আমতা করে বলে।
–শুনুন আপনার চয়েজ যে খারাপ সেটা সবাই জানে। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু উল্টো হয়ে গেছে এই আর কি।
ইশান মজার স্বরে বলে।
–তাই বুঝি।
–হে! তাই তো।
ইশান এবার দ্রুত পায়ে তীরের কাছে এসে তীরের হাত ধরে নিজের বুকে এনে ফেলে এক হাত দিয়ে তীরের কোমড় আঁকড়ে ধরে যাতে তীর দুরে সরে যেতে না পারে। ইশানের এহেন কান্ডে তীর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশান তীরের মুখের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে।
–একটা চু’মু খা তো ঠোঁটে।
আচমকা ইশানের মুখে এমন কথা শুনে তীর হা হয়ে যায়। ভ্রু কুচ করে বড় বড় চোখ করে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। কোন কথার ভেতরে কোন কথা ঢুকিয়ে দিলো এই লোক। ইশান তীরের মুখের উপর ফু দিতেই তীর চোখ বন্ধ করে নেয়। ইশান মাতাল কন্ঠে বলে।
–এভাবে তাকাস না জান তখন কিন্তু তোর হ্যান্ডসাম বরটার উপরে নজর লেগে যেতে পারে।
তীর চোখ মেলে নাকের পাটা ফুলিয়ে নিজেকে ইশানের কাছ থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে।
–হ্যান্ডসাম না ছাই। ছাড়ুন আমাকে। একদম আমাকে স্পর্শ করবেন না আপনি। আপনি একটা বাজে লোক আর বাজে লোকের কাছ থেকে যত সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলা উচিত।
ইশানও কম নাছোড়বান্দা না। চটপট করতে থাকা তীরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের মাঝে। আর তীরও এক সময় ক্লান্ত হয়ে ইশানের বুকে হালকা করে চাপড় মারতে মারতে কান্নামিশ্রিত গলায় বলে।
–আপনি একটা বাজে লোক যে শুধু তার ভালোবাসার মানুষটাকে কষ্ট দিতে জানে। একটুও ভালোবাসে না তাকে, ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে চায় না বরং আরো দুরে সরিয়ে দেয়।
ইশান বুঝতে পারে তীর কান্না করছে। যতো তীর নিজেকে ইশানের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে চায় না কেন? কিন্তু দিন শেষে ঠিকেই ইশানকে প্রাণ ভরে ভালোবাসে। ইশান তীরের মুখটা নিজের দু হাত দিয়ে আবদ্ধ করে বুড়ো আঙ্গুল দ্বারা তীরের চোখের জল মুজে নেয়। তীর ইশানের স্পর্শ পেয়ে আবেশে দু চোখের পাতা বন্ধ করে নেয়। ইশান তীরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে কোমল গলায় বলে।
–সরি জান এবারের মতো ক্ষমা করে দে। আর কোনো দিন তোকে কষ্ট দিবো না প্রমিজ। শুধু ভালোবাসবো নিজের সবটুকু উজার করে। একটা সুযোগ দিয়ে দেখ এবার তোকে আর নিরাশ করবো না। সবসময় নিজের বাহুডোরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আগলে রাখবো।
তীর চোখ বন্ধ করে ইশানের প্রত্যেকটা কথা মন দিয়ে শুনলো। মানুষটাকে যতো অবহেলা করতে চায় না কেন তীর, কিন্তু ইশান তার সান্নিধ্যে আসলে সব রাগ, অভিমান কেমন যেন হাওয়া মিলিয়ে যায়। তীরকে চুপ থাকতে দেখে ইশান হটু করে ভাবুক তীরকে কোলে তুলে নিলো। আকস্মিক এমন হওয়াতে তীর মুদু চিৎকার করে ইশানের গলা জড়িয়ে ধরে। ভীতু ভীতু চোখে ইশানের দিকে তাকালো তীর। ইশানের মোহনীয় দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলতেই তীর লজ্জায় চোখ সরিয়ে নেয়। ইশানের চোখের ভাষা সম্পূর্ণ অন্য রকম লাগছে অন্যান্য দিন গুলোর তুলনা। মেয়ে হয়ে সেটা সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে সেটা তীর। তবে কি আজকে তার জীবনে শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত গুলা আসতে চলেছেন কিন্তু তার যে ভয় করছে। ইশান তীরকে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে লাইট বন্ধ করে দেয়। আধারে তলিয়ে যায় সারা ঘর তাতে তীর আতংকে উঠলো। কাঁপাকাঁপা গলায় বলে।
–কি হলো লাইট অফ করলেন কেন?
ইশান কোনো প্রতিউত্তর করলো না তার বদলে অন্য একটা সুইচ টিপলো। আর সাথে সাথে জ্বলে উঠলো নানা রকমের বাহারি রঙের মরিচ বাতি। তীর এমনটা দেখে চট করে বেড থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আনমনেই বলে উঠে।
–ওয়াও! কত্ত সুন্দর!
প্রিয়তমার হাস্যজ্জ্বল মুখটা দেখে ইশান মুচকি হেসে তীরের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলে।
–পছন্দ হয়েছে।
–খুব….।
–তাহলে এর পরির্বতে আমি তো কিছুমিছু পেতেই পারি তোর কাছ থেকে।
ইশানের এই কথা শুনে এতোক্ষণ আনন্দ ভরা তীরের মুখটা পানসে হয়ে যায়। কি চাইছে ইশান তার কাছে সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। মনে ভেতরে তুফান বইছে আর তার সাথে তো লজ্জা আছেই। তীর আমতা আমতা করে বলে।
–আমি… আমি আপনাকে আবার কি দিবো?
–অনেক কিছু দিতে পারিস যেগুলা এই ইশান ফরাজী এখন পর্যন্ত পায় নি।
তীর ইশানের এগোনো থেকে পিছাতে পিছাতে বেডের সাথে পা আটকে ধপ করে বেডে বসে পড়ে। ইশানও দ্রুত পায়ে তীরের কাছে এসে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে তীরের দিকে। ইশানের তপ্ত নিঃশ্বাস তীরের মুখে আছড়ে পড়ছে। তীর চোখ জাপটে বন্ধ করে নেয়। ইশান হেসে তীরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে।
–কি দিবি না?
তীরের সারা শরীরের কেঁপে উঠে। এই লোক তার সাথে এমনটা কেন করছে তার যে আর সহ্য হচ্ছে ইশানের এই অসহনীয় অত্যাচার।
–আমার কাছে দেওয়ার মতো কিচ্ছু নেই। আমার অনেক ঘুম পেয়েছে ঘুমাতে গেলাম আমি।
তীর চটপট কথাটা বলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। ইশান মুচকি হেসে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ইশান টের বুঝতে পারছে তীরের মনে কি চলছে? কিন্তু আজকে যাই হয়ে যাক কেন ইশান নিজের কন্ট্রোল হারাবে না। আজকের রাতটা না হয় তীরকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে কাটিয়ে দিবে। সারাটা জীবনেই তো পড়ে আছে একে অন্যকে উপভোগ করার জন্য।
তীর এক চোখ খুলে দেখে ইশান তার সামনে নেই। গেলো কোথায় লোকটা, উবে গেলো নাকি? তীর পাশে ফিরতে চমকে উঠে ইশানকে তার পাশে শুয়ে থাকতে দেখে। তীর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশান তীরের বাহু ধরে নিজের বুকে এনে জড়িয়ে ধরে বলে।
–ঘুমা জান। সারা দিন অনেক দখল গেছে তোর উপর দিয়ে।
তীর বিস্মিত নয়নে ইশানের দিকে তাকায়। এতক্ষণ কি ভেবেছিলো আর এখন হলো কি? এখন নিজের উপর নিজেরেই রা’গ উঠছে এসব উদ্ভট চিন্তা মাথায় আনার জন্য। তীরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশান বলে।
–চোখ বন্ধ কর। না হলে এতোক্ষণ মনে মনে যেটা ভেবে এসেছিলি সেটা হবে কিন্তু।
তীর চোখ বড় বড় করে তাকায় কয়েক পল আর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। ইশান যে সবটা বুঝে গেছে এতক্ষণ ধরে ভেবে আসা ওর মনে কথা। ছিহঃ ছিহঃ! কি লজ্জার বিষয়। ইশান মুচকি হেসে তীরের কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
_______
ঘড়ির কাটায় বাজে রাত সাড়ে তিনটা। হঠাৎ করেই তীরের ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। চোখ মেলে তাকাতেই ইশানকে চোখের সামনে অবিষ্কার করে। কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু তীরের কিছুতে বুঝে আসছে ইশানের এত কাছে থাকার পরেও কি করে ইশান নিজেকে এতোটা শান্ত রাখছে। এতো ধৈর্যশীল একটা লোক কি করে হতে পারে এখানে অন্য কেউ হলে তো এতক্ষণে….. তীর এসব ভেবে মুচকি হেসে বা হাতটা ইশানের খোচাখোচা দাড়ি যুক্ত গালে হাত রাখে। মনে পড়ে কিছুক্ষণ আগে বলা ইশানের কথা তার কাছে কিছু একটা চেয়ে আবদার করেছিলো। তীর নিজের ঠোঁট চেপে ধরে ঢোক গিলে মুখটা এগিয়ে নিয়ে ইশানের গালে টুপ করে চু’মু খেয়ে বসে পরপর কপালেও আলতো করে চু’মু দেয়। তীর দুরে সরে বালিশ মাথা রেখে ইশানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে। তীরের যেন এখনও বিশ্বাস হচ্ছে তার পাশে শুয়ে থাকা মানুষটা তার স্বামী তার একান্ত আপন জন। এক সময় তো ভেবেই নিয়ে ছিলো ইশান হয়তো তার কপালে নেই। কিন্তু আজকে সেই ইশান তার পাশে শুয়ে আছে। তীরের নজর যায় ইশানের কালচে ঠোঁটের দিকে। কোন জানি খুব ইচ্ছে ইশানের এই ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ে দিতে। ভয়ও হচ্ছে এমনটা করতে গিয়ে যদি ইশানের ঘুম ভেঙ্গে যায় তখন ইশান কি ভাববে তাকে। কিন্তু তীর মনের ভেতরে সকল ভয়কে জয় করে ইশানের ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে চলে আসতে নিলে সাহসা চমকে উঠে ইশানকে সজাগ দেখে। ইশান হা হয়ে তাকিয়ে আছে তীরের দিকে। তীর শুকনো একটা ঢোক গিলে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইশান অবিশ্বাস্য গলায় বলে।
–এটা কি ছিলো জান?
–না…. মানে আমি আসলে।
–এভাবে ঘুমন্ত সিংহকে না জাগালেও পারতি জান। এখন যদি হামলা হয় তখন কি হবে?
তীর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সত্যি কি সে ঘুমন্ত সিংহে ক্ষেপিয়ে তুলল নাকি। কিন্তু তারপরও নিজের মনে সাহস জুগিয়ে বলল।
–না মানে আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো ঘুমিয়ে…
তীরের কথা সমাপ্ত না হওয়ার আগেই ইশান অভিনয় করে বলে।
–তার জন্য তুই আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছিলি। এটা তোর কাছ থেকে আমি আশা করি নি তীর।
–এমা না না… এমনটা না।
ইশান তীরের দিকে মুখটা এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলে।
–তাহলে কেমন? আর তুই কি ভেবেছিস আমি ঘুমিয়ে গেছি। আমার পাশে যদি আমার অবাধ্যগত তুফান শুয়ে থাকে তাহলে সেই তুফান উপেক্ষা করে ঘুমানো আমার পক্ষে অসম্ভব।
ইশানের এমন কথা শোনার পর সঙ্গে সঙ্গে মৃদু কেঁপে উঠে তীরের সারা অঙ্গ। তীর চোখ বন্ধ করে নেয়। সে আবেগের বশে বড্ড বড়ো একটা ভুল করে ফেলেছে না বুঝে শুনে। এবার এর থেকে নিস্তার পেতে হবে। তাই তীর অন্য দিকে ফিরতে নিলেই ইশান ঝড়ের বেগে তীরের বাহু ধরে অপ্রত্যাশিত এক কান্ড ঘটিয়ে দিলো। না চাইতেও তীরের চোখ গুলা বড় বড় হয়ে গেলো। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে আবেশে চোখ বন্ধ করে ইশানের গভীর স্পর্শ গুলা অনুভব করা শুরু করলো। না চাওয়া সত্বেও তীর দু হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে ইশানের ঘাড়। প্রিয়তমার সম্মতি পেয়ে ইশান যেন আরো ধৈর্য হারা হয়ে তীরকে নিজের আরো কাছে টেনে নিলো।
______
ভোরের আলো চোখে পড়তেই তীরের ঘুম উবে যায়। গায়ের শাড়িটা এলোমেলো হয়ে আছে তা ঠিক করে উঠে দাঁড়ায়। শাড়ি পড়ে কোনো দিন তীর ঘুমাই নি তাই এই বেহাল অবস্থা শাড়ির। ইশানের দিকে এক পলক তাকিয়ে লাগেজ থেকে নতুন একটা শাড়ি বের করে ওয়াসরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
বিশ মিনিট পর তীর শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দরজা লক করে ঘুরতেই পা জোড়া থমকে যায়। ইশান বেডে পা ঝুলিয়ে বসে আছে আর নজর তার তীরের দিকে। তীর ভেবেছিলো শাওয়ারটা নিয়ে সোজা ইশার ঘরে চলে যাবে ইশানকে ঘুম থেকে উঠার আগেই, কিন্তু তা আর হলো কই। এই লোকটা সবার সব আশায় জল টেলে দিতে ওস্তাদ। ইশানের চাওনি দেখে তীর শাড়ির আচঁল দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করে। ইশান তা দেখে ঠোঁট কাঁমড়ে হাসে এমন একটা ভাব ধরছে যেন ইশান কোনো পরপুরুষ। তীর পা বাড়াতে নিলেই ইশান বলে উঠে।
–ওদিকে না গিয়ে এদিকে আয়।
নিজের দিকে ইশারা করে বলে। তীর ইতস্তত হয়ে বলে।
–কেন?
–আসতে বলেছি আসবি।
–আ.. আমার চুল শুকাতে হবে তাই আপনার কাছে আসতে পারবো না।
ইশান রা’গী গলায় বলে।
–আমি যদি তোর কাছে নিজে আসি তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা হয়তো অন্য রকম হয়ে যাবে।
তীর ইশানের কথা শুনে খানিকটা ভ’য় পেয়ে যায়। তাই আর কিছু না বলে না নাক ফুলিয়ে আস্তে আস্তে ইশানের দিকে এগিয়ে যায়। তীর ইশানের ধরাছোঁয়ার কাছে আসতেই তীরের হাত ধরে তীরকে নিজের কোলে এনে বসায়। আকস্মিক এমন হওয়াতে তীর ভ’য়ে ইশানের গলা জড়িয়ে ধরে। তীরকে আরো অবাক করে দিয়ে ইশান তীরের ভেজা চুলে জড়ানো টাওয়ালটা সরিয়ে দিয়ে নাক ডুবিয়ে দেয় ভেজা চুলে আর জোরে শ্বাস টেনে নিয়ে মাতাল করা স্বরে বলে।
–জানিস তোর ভেজা চুলের ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য কতটা অপেক্ষা করেছি আমি। আজ সেই অপেক্ষার প্রহর আমার শেষ হলো। অপেক্ষা জিনিসটা খুব নিষ্ঠুর জানিস!
তীর মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে নজর নিবদ্ধ করে রেখেছে। চোখ তুলে দেখাতে পারছে না ইশানের দিকে। ইশানের দিকে তাকালেই মনে পড়ে যায় দু জনের একান্ত কিছু মুহূর্ত। ইশান তীরের লজ্জা পাওয়া দেখে মিটিমিটি হাসে। রাতে তো লজ্জা পাওয়ার মতো তো কিছু হয় নি তাহলে এই মেয়ে লাজুক লতার মতো এতো মিইয়ে যাচ্ছে কেন? ইশানের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো তীরকে আরো লজ্জা দেওয়ার জন্য। গলা খাকারি দিয়ে বলে।
–সকাল সকাল শাওয়ার নিয়েছিস কেন? শাওয়ার নেওয়ার মতো তো গত কাল রাতে কিচ্ছু হয় নি আমাদের মাঝে। শুধু তো ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে…
তীর বিস্ফোরিত নয়নে ইশানের দিকে তাকায়। এই লোক কবে থেকে এতো লাগামছাড়া হলো আগে তো এমন ছিলো না। আগে দেখে তো মনে হতো ভাঁজা মাছটা উল্টে খেতে পারতো না আর এখন তো তার উল্টো সম্পূর্ণ। তীরের এমন চাওনি দেখে ইশান দুষ্টু হেসে দু ভ্রু নাচায়। তীর গলার স্বর কঠিন করে বলে।
–ছাড়ুন আমাকে। আপনি যে এতো….
–অসভ্য আগে জানতি না তাই তো। জানলে কি বিয়ে করতি না এমন একটা অসভ্য ছেলেকে।
তীরের বলার আগে ইশানেই বলে দিলো কথাটা। তীর পুনরায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজার বাইরে থেকে ইশার চিৎকার ভেসে আসে। ইশানও তীরকে সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে বলে।
–যাহ তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ওরফে ননদিনী এসেছে।
বলেই ইশান ওয়াসরুমে চলে যায়। আর তীর নিজেকে ঠিক করে দরজা খুলার সাথে সাথে দেখে ইশা আর নীরা দাঁড়িয়ে আছে উৎসুক নয়নে। ইশা তীরকে দেখে বলা শুরু করে।
–কি রে! এতক্ষণ লাগে তোর দরজা খুলতে।
–আরে বাবা….
–ভাইয়া কোথায় রে?
–ওয়াসরুমে।
ইশা তীরকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দু ভ্রু নাচিয়ে বলে।
–কি রে? তোর চুল ভেজে তার মানে রাতে সামথিং সামথিং।
তীর দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–তোর অসভ্য কথাবার্তা বলা বন্ধ করবি কেউ শুনে নিবে।
–ওকে কেউ যাতে না শুনতে পায় সেই ব্যবস্থা করছি চল।
ইশা কথাটা বলেই তীরের হাত ধরে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলে।
–এবার বল কাল রাতে কি কি হয়েছে? সব কিছু সুন্দর ভাবে গুজিয়ে বলবি।
তীর অবাক হওয়ার ভান ধরে দু কাঁধ নাচিয়ে বলে।
–কি হবে?
নীরা ধমকের স্বরে বলে।
–একদম ভাব ধরবি না। এখনের যুগে একটা ক্লাস ফাইভের বাচ্চাও জানে বাসর রাতে কি কি হয়?
–আরে বাপ তোরা যেমনটা ভাবচ্ছিস তেমনটা নয়।
–তাহলে তোর চুল ভেজে কেন হুম?
–আরে আজব গতকালকে সকালে শাওয়ার নিয়েচ্ছিলাম তাই ভালো লাগছিলো না দেখে সকাল সকাল শাওয়ার নিলাম। তার মানে এই নয় যে আমার আর তোর ভাইয়ের মাঝে কিছু হয়েছে।
ইশা অসহায় গলায় বলে।
–তার মানে তোর আর ভাইয়ার মাঝে কিচ্ছু হয় নি।
–না হয় নি।
তীরের কথাটা শুনে নীরা আর ইশা এক সাথে বলে উঠে।
–ধুর।
–তোদের যদি এতোই বাসর রাতের কাহিনী শুনতে ইচ্ছে হয় তাহলে বিয়ে করে নে।
নীরা বলে।
–আমাদের বাসর রাত পরে দেখা যাবে। তার আগে বিয়ে হয়েছে তাই তোরটা শোনার খুব ইচ্ছে ছিলো।
তীরের ভীষণ হাসি পাচ্ছে এই দুইটার অবস্থা দেখে। মানে সবার ফ্রেন্ডরাই কি এমন। এর মাঝে ইশা আফসোসের স্বরে বলে।
–ভেবেছিলাম তোর বাসর রাতের সব কাহিনী শুনবো। কিন্তু কিচ্ছু শোনা হলো না আফসোস। ভাইয়া এতো ধৈর্যশীল একটা মানুষ কি করে হলো? আমার তো সন্দেহ হচ্ছে তীর।
তীর ভ্রু কুচকে বলে।
–সন্দেহ হচ্ছে মানে? এখানে তুই সন্দেহের কি দেখলি?
–না মানে আসলে…. না থাক কিচ্ছু না।
তীর আর কথা বাড়িয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুলগুলা ছাড়তে থাকে। এদের সাথে কথা বললেই এরা উল্টা পাল্টা কথা বলবে তাই মুখ বন্ধ রাখার শ্রেয় মনে করলো। ইশা কিছুক্ষণ তব্দা মেরে বসে থেকে কিছু একটা ভেবে সাহসা চিৎকার করে বলে।
#চলবে________