প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৫৬

0
248

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫৬

–ওই তুই‌ কি আমাদের বেক্কল মনে করিস। সারা রাত বন্ধ একটা ঘরে দুইটা ছেলে মেয়ে একই বিছানার পাশাপাশি শুয়ে ঘুমিয়েছিস আর এখন সকালে উঠে বলচ্ছিস কিচ্ছু হয় নি আমাদের মাঝে। মজা নিস আমাগোর সাথে তার উপর আবার তোরা দুজন বিয়াত্তা। মানে তোদের কি কোনো উত্তে…

তীর বড় বড় চোখ করে তাকায় ইশার দিকে। তার বিয়ে হওয়ার পর থেকেই এই দুইডা ভাই বোনের কথার কোনো ইস্টিশন নেই। মুখে‌ যা আসছে তাই বলে‌ যাচ্ছে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে। তীরের এমন তাকানো দেখে ইশা ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে‌ বলে।

–না মানে আমি আসলে ওই‌ ভাবে কথাটা বলতে চাই‌ নি।

তীর তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।

–থাক আর কিছু বুঝাতে হবে না তোর। তোরা বড্ড পাকনা হয়ে গেছিস ইশু রে।

নীরা তীরের কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে।

–সে তো তুইও পেকে গেছিস আমাদের সাথে সাথে থাকতে থাকতে অস্বীকার করতে পারবি।‌ এখন তো আরো বেশি পেকে যাবে ইশান ভাইয়ার সাথে থাকতে থাকতে।

তীর আর নিতে পারতাছে না এই‌ দুইডার ফালতু বকবকানি। এখানে আর বেশিক্ষণ থাকলে‌ নিশ্চিত সে পাগল হয়ে‌ যাবে। তাই সময় থাকতেই এই ঘর থেকে যেতে হবে, না হলে হয়তো‌‌ পাবনা যেতে হবে তাকে। তীরকে দরজার কাছে‌ যেতে দেখে‌ ইশা বলে।

–কই‌ যাস?

–নিচে‌ যাচ্ছি।

ইশা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে।

–নিচ যাচ্ছিস নাকি ভাইয়ার কাছে যাচ্ছিস কোনটা?

তীর বিরক্তিকর ভাবে নিয়ে বলে।

–উফ! ইশু এবার কিন্তু বেশিবেশি বকছিস তুই।

ইশা হাসতে হাসতে বসা থেকে উঠে তীরের কাছে গিয়ে বলে।

–ওকে ওকে আমি আর বাজে বকবো‌ না চল নিচে চল।

তীর, ইশা আর নীরা চলে যায় নিচে। নিচে গিয়ে দেখে নাস্তা বানানোর আয়োজন চলছে। তীরের মনে হলো ওর কিছু করা দরকার। এ বাড়ির ছোট বউ বলে কথা আর তার উপরে কেয়া প্রেগন্যান্ট এতো কাজ করারটা ওর‌ জন্য ঝুকিপূর্ণ হতে পারে। তাই তীর সোজা কিচেনে গিয়ে নেহা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে।

–মা আমিও‌ আপনাদের হেল্প করবো।

নেহা বেগম চায়ের কাপে চা টালতে টালতে বলে।

–সবে এসেছিস এই বাড়িতে এখনেই কাজ করতে হবে না। কিছু দিন যাক তারপরে দেখা যাবে।

–আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি বরং চা গুলা দিয়ে আসি।

নেহা বেগম মুচকি হেসে ‌বলেন।

–ঠিক আছে তাহলে তুই‌ ইশানকে কফিটা দিয়ে আয়। ওর কফি বানানোই আছে শুধু চিনিটা দিলেই হবে অল্প চিনি দিবি বেশি না।

–আমি।

–হে।

–আচ্ছা।

তীর মুখটা ছোট করে নেয়। এই‌ লোকের সামনে গেলেই উল্টা পাল্টা কথা বকবে একশো পার্সেন্ট নিশ্চিত তীর। তাই দুরে দুরে থাকবে ভেবেছিলো কিন্তু কি আর করার। এখন তো আর শাশুড়ি মার মুখের উপর না করতে পারবে না কাজটা না করার জন্য। তাই তীর বাধ্য মেয়ের মতো কফি বানিয়ে নিয়ে চলল তার শ্রদ্ধেয় পতি পরমেশ্বরের কাছে।

তীর ঘরে ঢুকে দেখে ইশান ঘরে নেই‌ বারান্দা‌ থেকে ভেসে আসছে ইশানের কন্ঠ কারো‌ সাথে হয়তো‌ ফোনে কথা বলছে। তীরও সুযোগটা কাজ লাগানোর জন্য কফির মগটা টেবিলের উপরে রেখে পেছেন ঘুরতেই তীরের চোখের মনি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়ে‌ যায়। মৃদু চিৎকার করে পেছন ফিরে অস্থির হয়ে বলে।

–আপনি… আপনি এমন অর্ধ উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন? আপনার কি লাজ লজ্জা বলতে কিচ্ছু নেই।

ইশানের কোমড়ে শুধু টাওয়াল পেছানো আর গলায় আরেকটা টাওয়াল ঝুলানো। ইশানের ফোনে বার বার কল আসার কারণে এভাবেই বেরিয়ে আসতে হলো। কিন্তু এটা ভাবে নি এমন সময় যে তীর চলে আসবে। কিন্তু তীর যখন চলেই এসেছে এবার একটু লজ্জা দেওয়া যাক মেয়েটাকে। মেয়েটার লজ্জা রাঙা মুখটা ইশানের কাছে বড্ড প্রিয়। ইশান তীরের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে তীরের ঘাড়ে থুতনি রেখে গভীর গলায় বলে।

–পুরুষদের লাজ লজ্জা থাকতে নেই জান। লাজ লজ্জা থাকতে হয় নারীদের কারণ লজ্জাই নারীর ভুষণ। এখন আমাদের পুরুষ জাতিদের যদি লাজ লজ্জা থাকে তাহলে তোকে মা ডাক শুনবো কি করে আমি?

তীর মুহূর্তে ইশানের দিকে ফিরে নিথর কন্ঠে বলে।

–আপনি… আপনি এতো ঠোঁটকাটা কবে থেকে হলেন ইশান ভাই। আগে তো এমন ছিলেন না।

ইশান মুচকি হেসে তীরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

–আগে কি আমি তোর জামাই ছিলাম যে তোর সাথে আমি এভাবে কথা বলবো।

তীরের নজর যায় ইশানের উদাম প্রশস্ত বুকের দিকে। সমস্ত কায়া কেঁপে উঠে তীরের। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সাথে সাথে নজর অন্য দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলে।

–জামা কাপড় পড়ুন গিয়ে এভাবে না থেকে। আর কফিটা খেয়ে নিন না হলে ঠান্ডা হয়ে যাবে।

ইশান আগ্রহ নিয়ে বলে।

–নিজের হাতে বানিয়ে এনেছিস নাকি।

–না মা বানিয়ে দিয়েছে। আমি এখন আসি আপনি চেইন্জ করে নেন।

তীর চলে যেতে নিলে ইশান তীরের হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলে।

–এক পাও এগোবি না এই ঘর থেকে। আমি চেইন্জ করে আসছি তুই কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর।

ইশান চলে যেতে নিলে আবারো বলে।

—যেটা বলেছি সেটা মানবি কিন্তু এক পাও এগোবি না এই ঘর থেকে বলে দিলাম। যদি বের হোস তাহলে সবার সামনে থেকে তোকে কোলে করে আবার এই ঘরে নিয়ে আসবো কথাটা মাথায় থাকে যেন।

তীর ভয় পেয়ে যায় ইশানের এমন হু’ম’কি শুনে। এই‌ লোককে বিশ্বাস নাই সত্যি সত্যি‌ এমনটা করে দিবে সে যদি এখন এই ঘর থেকে বের হয়। তাই সবার সামনে লজ্জা না পড়তে চাইলে এখানেই থাকতে হবে। তাই তীরও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বেডের এক সাইডে বসে দু পা দুলাতে থাকে। কয়েক মূর্হুত পরেই ইশান ব্লু শার্ট আর গ্রে কালারের প্যান্ট পড়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসে। ইশানের দিকে ফিরতেই তীরের নজর আটকে যায় তার সুদর্শন হাসবেন্ডের দিকে। নীল আর ধূসর রঙটা যে কাউকে‌ এতোটা বানাতে পারে তীর‌ ইশানকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না। আনমনেই তীরর ঠোঁটে ফুটে উঠে মিষ্টি হাসি। প্রেয়সীর সেই মিষ্টি হাসি ইশান আয়নার ভেতর থেকে স্পষ্ট দেখতে পারছে। ইশানও মুচকি হেসে চুল ঠিক করে তীরের দিকে ফিরে দু ভ্রু নাচায়। কিন্তু না প্রেয়সীর কোনো ধ্যান নেই সে তো ব্যস্ত আছে তার সুদর্শন হাসবেন্ডকে দেখতে। ইশান নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে ধীর পায়ে হেটে তীরের পাশে এসে বসে তীরের চোখের সামনে চুটকি বাজিয়ে বলে।

–আপনার পাশে আমি ম্যাডাম, এবার এদিকে ফিরেন আমাকে প্রাণভরে দেখতে চাইলে।

ইশা থতমত খেয়ে যায় ইশানকে তার পাশে বসে থাকতে দেখে। ইশান কখন তার পাশে এসে বসলো‌‌? এতোটাই অন্যমনস্ক ছিলো যে বুঝতে পারি নি। ইস! এভাবে তাকিয়ে থাকার কি দরকার ছিলো এবার তো থাকে‌ লোকে বেহায়া তীর বলবে। চোখের দৃষ্টি সংযত করতে পারে না। তবে তীরও নিজেকে সামলে গলায় কঠিনত্ব এনে বলে।

–আমি আপনার দিকে কোন দুঃখে তাকাতে যাবো আজব।

নিঃশব্দে হাসে ইশান। এই মেয়ে ভাঙবে তবু মচকাবে নে। ইশান তীরের কানের কাছে মুখ নিয়ে শীতল কন্ঠে বলে।

–দুঃখে তাকাবি নাকি সুখে এটা একান্ত তোর ব্যাপার। তবে আমার দিকে তুই অজীবন তাকিয়ে থাকতে পারিস তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই কারণ এই আমিটা তো সম্পূর্ণ তোর।

তীর আভাস পাচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে তাই তীর তাড়াতাড়ি করে উঠে কফির মগটা নিয়ে ইশানের দিকে দিয়ে বলে।

–নিন কফি খান ঠান্ডা হয়ে যাবে না হলে।

ইশানও মুচকি হেসে কফির মগটা নিয়ে এক চুমুক দিলো। চুমুক দিয়েই তীরের দিকে তাকালো। ইশানের চাওনি দেখে তীর বলে।

–কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

–মিষ্টি হয় নি।

–কিন্তু মা যে বলল আপনি চিনি কম খান তাই তো চিনি কম দিয়েছি।

–চিনি কম খাই তা বলে চিনি খাই না এমনটা নয়। তুই তো মনে হয় এর মাঝে চিনি “চ” টাও দিস নি।

–কিন্তু আমি দিয়েছি তো।

–আমার কথা বিশ্বাস না হলে তুই টেস্ট করে দেখ।

–দেখি।

তীর কফির মগটা নিয়ে চুমুক দেওয়ার সাথে সাথেই ইশান কফির মগটা তীরের কাছ থেকে কেঁড়ে নিয়ে চুমুক দিয়ে বলে।

–নাও পার্ফেক্ট।

তীর হতভম্ব হয়ে যায় ইশানের এহেন কান্ডে। এই‌ লোকের পেটে পেটে এতো। তবে মন মনে খুব খুশি হয় ইশানের এমন পাগলামি দেখে কিন্তু তা মুখে প্রকাশ করে না। ইশান কয়েক চুমুক খেয়ে তীরকে বলে।

–আলমারি থেকে আমার ধূসর কালারের ব্লেজার নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি।

তীর কিচ্ছু না বলে চুপচাপ ব্লেজারটা নিয়ে ইশানের কাছে আসে। ইশান তীরের দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে বলে।

–পরিয়ে দে।

–আপনি নিজে পড়ে নিন‌ আমি পড়বো না।

ইশান তীরের দিকে ফিরে রসিকের স্বরে বলে।

–বউ থাকতে নিজে পড়বো কেন? এত কাল একা একা পড়েছি এখন বউ পাশে আছে তাই বউকে দিয়েই পড়াবো। তাই চুপচাপ ব্লেজারটা পড়া লেইট হচ্ছে আমার।

ইশান কথাটা বলেই পেছন ফিরে যায়। তীরও ভেংচি কেটে ইশানকে কোর্টটা পরিয়ে দেয়। ইশান বেড সাইটের টেবিল থেকে ঘড়ি নিয়ে হাতে পড়তে থাকে। তীর ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে এই লোক এতো সাজুগুজো করে এতো সকাল সকালে যাচ্ছে কোথায়? তীর মনের মাঝে আর‌ কথা চেপে রাখতে না পেরে বলে।

–আপনি কোথায় যাচ্ছে এতো সকালে?

–একটা কথা গোটা বিশ্বকে জানাতে চলেছি।

–কোন কথা?

ইশান তীরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নিজের থুতনি রেখে বলে।

–গোটা বিশ্বকে জানানোর ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি যে এই পাগলি মেয়েটা আমার বউ, আমার ভালোবাসা, আমার সব।

বলেই তীরের কানের চু’মু খায় আর তীর চোখ বন্ধ করে অনুভব করে। এর মাঝে বুঝতে পারে ইশান তার গলায় কিছু একটা পরিয়ে দিছে। তীর তাকিয়ে দেখে ইশানের দেওয়া ওই লকেটটা। যেটা সে ইশাকে দিয়ে ইশানের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। ইশান লকেটটা পরিয়ে দিয়ে বলে।

–এটা যেন তোর গলায় সবসময় থাকে। পরের বার খুলার আগে দু বার ভাববি।

তীর মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। ইশান পুনরায় বলে।

–আমি আসি এখন দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার।

ইশান তীরকে ছেড়ে ওয়ালেট পকেটে ভরে ফোন আর গাড়ির চাবি নিয়ে ঘর থেকে বেরুতে নিবে এমন সময় তীর বলে উঠে।

–নাস্তা করে যাবেন না।

–নাহ। খেতে ইচ্ছে করছে না তুই খেয়ে নিস।

ইশান তো চলে গেলো কিন্তু এক রাশ চিন্তা রেখে গেলো তীরের ছোট্টো মাথায়। কি যে করতে যাচ্ছে এই‌ লোক কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।

_____

দিনের অর্ধপ্রহর কেটে গেছে এর মাঝে অদ্ভুত এক কান্ড ঘটে গেছে। ফরাজী ভিলাতে এসে হাজির হয়েছে অভিলা শেখ আগে আহমেদ ভিলাতে গিয়েছে বান্ধবী আয়েশার কাছে গত কালকের ঘটনাটার জন্য ক্ষমা চাইতে। উনি উনার ছেলের কাজের জন্য বড়ই অনুতপ্ত আর লজ্জিত। আর এখন এসেছে তীরের কাছে ক্ষমা চাইতে ছেলের এমন বাজে কর্মকান্ডের জন্য। আর প্রাণ ভরে দোয়াও করে গেছে ইশান আর তীর যেন সবসময় ভালো থাকে তাদের দাম্পত্য জীবন যেন সুখী হয়।

অভিলা শেখ যাওয়ার পরপরেই পার্লার থেকে লোক আসে তীরকে সাজাতে। হঠাৎ করে পার্লার থেকে লোক আসাতে তীর অবাক হয়ে ইশাকে বলে।

–হঠাৎ করে পার্লার থেকে লোক আসলো কেন?

–তোকে সাজাতে।

–হঠাৎ করে।

–সারপ্রাইজ সোনা সারপ্রাইজ। অপেক্ষা করো দেখতে পাবে আর এখন চুপচাপ সাজতে বসো।

তীরও আর কিছু না বলে সাজতে বসে।‌ কিন্তু মনে মনে দুশ্চিন্তা করছে ইশানকে নেই সেই‌ সকাল বেলা বের হয়েছে একবার দেখা তো দুরে থাক একটা ফোনও পর্যন্ত করলো না তাকে। বড্ড অভিমান হলো‌ ইশানের উপর তীরের। লোকটা সবসময় তাকে অবহেলা করে কেন এভাবে?

তীরকে সাজাতে সাজাতে প্রায় গৌধুলী লগ্ন পেরিয়ে গেলো। তীরকে আজকে জামদানির মাঝে খয়েরি কালারের শাড়ি পড়ানো হয়েছে। প্রত্যেকটা গহনা শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে কিনা হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে সাজের সাথে সব কিছু পারফেক্ট ভাবে ম্যাচ করেছে। নিজেকে নিজের কাছে খুব বড় বড় লাগছে এভাবে শাড়ি পড়াতে তীরের।

ফরাজী ভিলা আর আহমেদ ভিলার সকলে মিলে রাওয়ানা হলো। তীর বার বার ইশাকে বলে যাচ্ছে কোথায় যাচ্ছে সকলে মিলে কিন্তু ইশার ওই‌ এক কথা সারপ্রাইজ বলে দিলে সারপ্রাইজ থাকে‌ না।

গাড়ি এসে থামে বড় একটা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে। চারিদিক সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। তীর গাড়ি থেকে নেমে মু্গ্ধ নয়নে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। হঠাৎ করেই পাশ থেকে পরিচিত কন্ঠ স্বর ভেসে আসে।

–মিসেস ফরাজী হাতটা বাড়িয়ে রেখেছি কখন থেকে আপনার দিকে যদি সদয় হোন আমার উপরে তাহলে হাতটা ধরুন প্লিজ।

তীর অভিমানি নয়নে তাকালো ইশানের দিকে। সকালের ড্রেসআপ পুরো চেইন্জ ব্ল্যাক প্যান্ট, হোয়াইট শার্টের সাথে ব্ল্যাক ব্লেজার। ব্লেজারের বুক পকেটে দুটো লাল গোলাপ রাখা। অন্য দিনের তুলানায় আজকে ইশানকে একটু বেশি সুর্দশন লাগছে মনে হচ্ছে যেন কোন রুপকথার রাজ্যের রাজকুমার। যে রাজকুমারটা শুধু তীরের আর কারোর নয়। তবে সেই রাজকুমারটা উপরে তীর বড্ড অভিমান করে আছে। তীর ভেংচি কাটা ইশানের দিকে সারা দিন কোনো পাত্তা ছিলো না এখন এসেছে ভাব ধরতে যত্তসব। ইশান চোখের ইশারায় আবারো বলে হাতটা ধরতে। তীর ঠোঁট নাড়িয়ে “ডং” বলে হাতটা ধরে ইশানের। তীররর বাচ্চামো দেখে ইশান ঠোঁট কাঁমড়ে হেসে তীরকে নিয়ে এগিয়ে চলে।

হল রুমের আসার পরপরেই সকলের সামনে তীরকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দেয় ইশান। পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে তীরের সম্মুখে ইশান হাটু গেরে বসে পড়ে। এতে তীর কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে চারিদিকে নজর বুলিয়ে ইশানকে বলে।

–কি করছেন এসব? চারিদিকে কতো মানুষ আর কতো মিডিয়ার লোক আছে তারা কি ভাববে?

ইশান মুচকি হেসে বুক পকেটে থাকা দুটো গোলাপ থেকে একটা গোলাপ হাতে নিয়ে তীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে।

–ভালোবাসি! খুব ভালোবাসি আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে, পাগলের মতো ভালোবাসি। সে কি এই পাগলটাকে ভালোবাসে।

তীর হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইশানের দিকে। ইশান যে তাকে জনসম্মুখে আর এতো মিডিয়ার সামনে এভাবে প্রপোজ করে বসবে তা কোনো দিন কল্পনাও করতে পারি নি। তীর আশেপাশে তাকালো সবাই উৎসুক নয়নে তীরের দিকে তাকিয়ে আছে তীর কি করে তা দেখের জন্য। তীর জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে ইশানের কাছ থেকে গোলাপটা নিয়ে বলে।

–বাসি সেই পাগলটাকেও আমি খুব ভালোবাসি।

ইশানের মুখে ফুটে উঠে তৃপ্তিকর হাসির রেখা। এতো বছরের কামনা আজ সম্পূর্ণ রুপে পূরণ হলো।

#চলবে______

আর কয়েকটা পার্ট আছে তারপরেই সমাপ্তি ঘটবে এই গল্পের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here