#ফিরে_আসা২
২+৩
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ
রিপোর্টগুলো উল্টে-পাল্টে দেখছেন ডক্টর নাসরিন। তিনিই সেই শুরু থেকে অরার যাবতীয় চেকআপ করে আসছেন। তার ঠিক বিপরীতেই পাশাপাশি বসে আরশাদ এবং অরা। ডক্টর নাসরিনের মুখভঙ্গি দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না রিপোর্টগুলো সব স্বাভাবিক আছে কিনা।
একপর্যায়ে নীরবতা ভঙ্গ করে ডক্টর নাসরিন চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন, “আপনি কি খুব স্ট্রেস নেন মিসেস হক?”
শুকনো ঢোক গিললো অরা। কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সে যে স্ট্রেস একেবারেই নেয় না, এটা সত্যি নয়। অফিসে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কোনো ঝামেলা হলেই তার দুশ্চিন্তার পাল্লা ভারী হয়ে ওঠে।
অরা ইতস্তত করে বলল, “না আসলে…”
অরার কথা শেষ হবার আগেই আরশাদ থমথমে গলায় বলল, “হ্যাঁ নেয়।”
ডক্টর নাসরিন অবাক গলায় বললেন, “সে কী? কী নিয়ে এত স্ট্রেস নেন?”
অরা কী বলবে ভেবে না পেয়ে বলল, “না, আসলে ঠিক স্ট্রেস না। কাজের প্রেশার থাকে।”
ডক্টর নাসরিন শান্ত গলায় বললেন, “কাজের প্রেশার হ্যান্ডেল করতে শিখতে হবে মিসেস হক। একেবারেই চাপ নেওয়া যাবে না। সবসময় অবসাদমুক্ত থাকতে হবে। আপনি স্ট্রেসে থাকলে বাবুর ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে।”
কয়েক মুহূর্তের জন্যে অরার চোখদুটো গিয়ে পড়লো আরশাদের ওপরে। বোঝাই যাচ্ছে ডক্টরের কথাগুলো শুনে ভালো চিন্তায় পড়ে গেছে ছেলেটা।
নাসরিন এবার আরশাদকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “মিস্টার হক। আপনি প্লিজ এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখবেন।”
গম্ভীর মুখে ড্রাইভ করছে আরশাদ। প্যাসেঞ্জার সিটে বসে একটু পর পর আড়চোখে দেখছে তাকে অরা। মাঝেমধ্যে এই মানুষটাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না সে। এই মুহূর্তটা ওই মাঝেমধ্যের কাতারে পড়েছে। সে রেগে আছে না হতাশ হয়েছে কে জানে? আরশাদের ভেতরটা বুঝতে না পারলে চুপ করে থাকাই নিরাপদ। এই ছেলের রাগকে ভরসা নেই। দেখা গেল, অরা এমন কিছু একটা বলে বসেছে যা আরশাদের রাগের আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো কাজ করেছে।
একটা পর্যায়ে আরশাদ নিজেই নীরবতা ভঙ্গ করে বলল, “আমার কোনো কথাই তো তুমি শোনো না। এবার তো স্বয়ং ডক্টরই বলে দিলেন।”
সর্বনাশ করেছে! ভেতরে ভেতরে তবে রাগই পুষে রেখেছিল আরশাদ। এই রাগটাকেই সবথেকে ভয় করে অরা। তবে আশার কথা হলো, বিয়ের পর থেকে আরশাদ আর আগের মতো তার ওপর রাগ করতে পারে না। বিশেষ করে প্রেগন্যান্সির পর থেকে তো একেবারেই না।
রাগ যে করে না, এটা সত্যি নয়। আরশাদ হকের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো রাগ। ছোট ছোট কারণে অরার ওপরে ঠিকই রাগ করে। এই যেমন প্রেগন্যান্সির সময়টাতেও অরার রাত জেগে থাকা, অসময়ে খাওয়া, ড্রাইভ করতে চাওয়া – আরশাদের রাগের অন্যতম কারণ। রাগ করলেও সেই রাগের প্রকাশ করতে পারে না আরশাদ। অরার মুখটা দেখলেই তার সকল রাগ মোমবাতির মতো গলে যায়।
আরশাদ ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলল, “এই যে প্রতিদিন অফিসে তুমি অস্বাভাবিক স্ট্রেস নিচ্ছো, এর কী আসলেই কোনো প্রয়োজন আছে?”
অরা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে কম্পিত স্বরে বলল, “আমি অস্বাভাবিক স্ট্রেস নিই না আরশাদ। তুমি তো জানো, আমি বরাবরই কাজের ব্যাপারে একটু বেশিই সিরিয়াস।”
আরশাদ ভ্রু কুঁচকে বলল, “এবার না হয় একটু কম সিরিয়াস হও।”
“ডক্টর কিন্তু আমাকে একেবারে মেটার্নিটি লিভে চলে যেতে বলেনি। বলেছে কাজের প্রেশার কমিয়ে দিতে।”
আরশাদ শান্ত ভঙ্গিতে বলল, “আমিও সেটাই বলছি। একটু একটু করে অফিসে যাওয়া কমিয়ে দাও, ইন্টারনাল মিটিংগুলো বাড়িতে বসে অনলাইনে সেরে ফেলো।”
অরা গোমড়া মুখে বলল, “অনলাইন মিটিং আর বাস্তবের মিটিংয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তাছাড়া আমি অফিসে না গেলে সকলে ফাঁকিবাজি চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায়।”
আরশাদ থমথমে গলায় বলল, “তার মানে তুমি শুনবে না আমার কথা?”
“আচ্ছা বাবা আমি প্রমিজ করছি, এখন থেকে কোনো স্ট্রেস নিবো না। অফিসে গেলেও বেশি একটা কাজের চাপ নিবো না।”
“তাও অফিসে যেতে হবে?”
বাচ্চারা অন্যায় করলে যে ভঙ্গিতে বাবা-মাকে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করে, অরা অবিকল সেই ভঙ্গিতে বলল, “পুতুলের মতো ঘরে বসে থাকতে আমার ভালো লাগে না। তাছাড়া বাবু আসার পর তো অনেকটা সময় লিভে থাকতেই হবে। যতদিন সুস্থ আছি, ততদিন কাজ করতে দাও প্লিজ!”
অরার জেদের সঙ্গে পেরে ওঠার সাধ্য কারো নেই। আরশাদও আর তর্কে জড়ালো না। মেয়েটার কথায় যুক্তি আছে অবশ্য। বাবু পৃথিবীতে চলে এলে তো অরা এমনিতেই তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কাজ নিয়ে দুশ্চিন্তার অবকাশ তার মাঝে আর থাকবে না।
অরাকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে আরশাদ চলে গেল শুটিংয়ে। অরাকে চেকআপে নিয়ে যাবে বলেই আজ সে সকালে শিডিউল দেয়নি। অফিসে প্রবেশ করতেই কাজের মাঝে ডুবে গেল অরা। ‘কে ফিল্মসের’ ব্যানারে নির্মাণাধীন সিনেমাগুলোর একটি ‘নক্ষত্র’। এই সিনেমার গল্প অরা নিজে পছন্দ করেছে। সিনেমার সেট থেকে শুরু করে এডিট পর্যন্ত সবকিছুই হচ্ছে তার তদারকিতে। সিনেমাটি এখন রয়েছে এডিটিংয়ের শেষ পর্যায়ে। দুপুরের আগ পর্যন্ত অরা এডিটিং ডিপার্টমেন্টেই কাটালো।
দিন কয়েকের মধ্যেই সিনেমাটির এডিট শেষ হয়ে যাবে। এর পরেই আরশাদ এর প্রিভিউ করবে। প্রিভিউতে আরশাদের পছন্দ হলেই সেন্সরের জন্যে পাঠানো হবে সিনেমাটিকে। আরশাদের পছন্দ-অপছন্দ সিনেমার ওপরে একটা বড় প্রভাব ফেলে। এমনও দৃষ্টান্ত রয়েছে একটা সিনেমার কোনো একটা অংশ তার পছন্দ না হওয়ায় নতুন করে শুট করতে হয়েছে।
অরা প্রবলভাবে চাইছে ‘নক্ষত্র’ যেন প্রথম দেখাতেই আরশাদ পছন্দ করে ফেলে। কারণ এই সিনেমার পেছনে সেই শুরু থেকে অরা প্রচুর শ্রম দিয়েছে। এমনকি এখনো দিয়ে যাচ্ছে। কাগজে-কলমে আরশাদ তো এখনো তার বস। বসকে খুশি করানোর ইচ্ছা সকলের মনেই সজাগ থাকে।
এডিটিংয়ে তদারকি সেরে অরা এলো নিজের কেবিনে। আরেকটা সিনেমার বাজেট নিয়ে হিসাব-নিকাশ করতে বসেছে। কাজের ফাঁকে ঠিক সময়মতো পৌঁছে গেল কথাকে স্কুল থেকে তুলতে। কথা আজ বায়না ধরেছে কিছুতেই বাড়ি যাবে না। মাঝে মাঝে এই বায়নাটা সে ধরে। তখন অরা তাকে নিজের সঙ্গে অফিসে নিয়ে যায়। অরা অফিসে কাজ করে আর কথা লক্ষ্মী মেয়ের মতো গেম খেলে, না হয় টিভি দেখে। অরার কেবিনটা বিশাল। কেবিনের এক প্রান্তে কথার অনেকগুলো খেলনা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা। কথা মাঝে মাঝে তার সঙ্গে অফিসে আসতে চাইলে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে ব্যবস্থাই করে রাখা হয়েছে।
অরা ভেবে পায় না বাবু এলে সে কী করে সামাল দেবে সব দিক? বাবুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত না হয় লিভে থাকা যাবে। কিন্তু তারপর আবার ঠিকই কাজে ফিরতে হবে। অরা অবশ্য ঠিক করেছে বাবুর জন্যে একজন গভর্নেন্স রাখবে। সেই গভর্নেন্স বাবুকে নিয়ে তার কেবিনেই থাকবে। কেবিনের সাজসজ্জায় পরিবর্তন আনতে হবে। একটা কোণায় সুন্দর করে বাবুর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
কথা অফিসে এসে এখানেই ফ্রেশ হয়ে নিলো। অরার তার কতগুলো জামা-কাপড় এখানে রেখে দিয়েছে বলে কথার চেঞ্জ করে নিতেও কোনো অসুবিধা হলো না। আবারও কাজের মাঝে ডুব দিলো অরা। আর কথা ওদিকে সোফায় শুয়ে গেল খেলছে।
ল্যাপটপে কী যেন টাইপ করতে করতে অরা বলল, “কথা? আজ স্কুলে কোনো হোমওয়ার্ক দেয়নি?”
কথা উদাস গলায় বলল, “কী জানি!”
অরা দুষ্টুমির ছলে বলল, “আমাকে মিথ্যা বলে কিন্তু লাভ নেই। তোকে বলেছিলাম না, আমার ব্রেনে একটা লাই ডিটেক্টর ফিট করা আছে? আমি কিন্তু সব বুঝতে পারি।”
কথা এবার নড়েচড়ে বসে বলল, “দিয়েছে, দিয়েছে!”
অরা মুচকি হাসি হেসে বলল, “সারাটা দিন শুধু গেম আর গেম! একটু হোমওয়ার্ক নিয়ে বসলেও তো পারিস।”
কথা হাই তুলতে তুলতে বলল, “হোমওয়ার্ক করতে আমার বোরিং লাগে অরা।”
মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল অরা। কথার দোষ নেই, পড়াশোনা করতে আজকাল সব বাচ্চাদেরই ‘বোরিং’ লাগে। কেন যে এতটুকু বাচ্চাদের ছোট্ট কাঁধের ওপর পড়ালেখার ভারী বোঝা তুলে দেওয়া হয়? দেওয়া যখন হয়ই, তখন পড়ালেখাটাকে একটু আনন্দদায়কভাবে বাচ্চাদের সামনে উপস্থাপন করলে কী এমন ক্ষতি হতো?
অরার জোরাজুরিতে শেষমেশ বাধ্য হয়ে স্কুলব্যাগ থেকে খাতা বের করে হোমওয়ার্ক করতে বসলো কথা। মাঝেমধ্যে দুয়েকটা সমস্যা হলে অরার কাছে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে ঠিকই, তবে বেশিরভাগ কাজ কথা নিজেই করলো। মেয়েটা সারাদিন গেম আর কার্টুন নিয়ে পড়ে থাকলে কী হবে? পড়ার সময়ে তার সমস্ত মনোযোগ বইয়ের পাতায়।
অরা মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপের স্ক্রিনে। আচমকা তার ধ্যানভঙ্গ হলো কথার চিৎকারে।
কথা উৎফুল্ল গলায় বলে উঠলো, “সীমা আন্টি!”
তৎক্ষণাৎ অরার চোখদুটো গিয়ে পড়লো দরজার দিকে। মেয়েটার সময়জ্ঞানের প্রশংসা না করে উপায় নেই। অরা আড়াইটায় আসতে বলেছিল, ঘড়িতে কাটায় কাটায় ঠিক আড়াইটাই বাজছে। সীমার পরনে হলুদ রঙয়ের একটা শাড়ি। তাকে দেখে মন হচ্ছে যেন ঘরের ভেতরে একফালি রোদ এসে প্রবেশ করেছে।
সীমা ছুটে অরার কেবিনে প্রবেশ করে কথাকে কোলে নিয়ে বলল, “কেমন আছো কথা সোনা! কত দিন পর দেখলাম তোমাকে!”
কথা সীমার গলা জড়িয়ে আদুরে গলায় বলল, “আমার জন্যে চকলেট এনেছো তো?”
“কথার জন্যে চকলেট না এনে আমি পারি?”
কথাকে কোল থেকে নামিয়ে হ্যান্ডব্যাগ থেকে একগাদা চকলেট বের করে দিলো সীমা। চকলেট পেয়ে কথা তো আনন্দে আত্মহারা!
অরা এগিয়ে এসে মুগ্ধ গলায় বলল, “বাহ্! তোকে তো একেবারে নতুন বৌয়ের মতো লাগছে।”
সীমা মিষ্টি একটা হাসি হেসে জড়িয়ে ধরলো তার প্রিয় বান্ধবীকে। একই বাড়িতে থাকতো দুজনে। সুখ-দুঃখ, ছোট ছোট সকল মুহূর্তের ভাগাভাগি করে নিতো একসঙ্গে। এখন আর সে সুযোগ নেই। তবুও মাসে অন্তত একবার দুবার ঠিকই দেখা হয় তাদের। যোগাযোগের অভাবে না-কি বন্ধুত্ব হারিয়ে যায়। প্রকৃত সত্যি আসলে সেটা নয়। সত্যিটা হলো, চেষ্টা থাকলেই কেবল টিকিয়ে রাখা যায় একটা বন্ধুত্বকে আমৃত্যু।
সীমা হাসি হাসি মুখে বলল, “তোর চেহারা তো দারুণ গ্লো দিচ্ছে অরা!”
“তাই না-কি?”
সীমা প্রশংসার ভঙ্গিতে বলল, “হুঁ! সবই ছোট্ট সুপারস্টারের কেরামতি!”
অরা খানিকটা হেসে বলল, “একটু বোস, কাজটা শেষ করেই আমরা ছাদে যাবো।”
সীমা গিয়ে অরার বিপরীতে থাকা চেয়ারগুলোর একটায় বসতে বসতে বলল, “ছাদে কেন?”
“ছাদেই আমাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা করতে বলেছি। নতুন ডেকোরেশন করা হয়েছে ছাদে। এর সুন্দর হয়েছে জায়গাটা এখন!”
সীমা নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে লাগলো। কাজটা শেষ করতে অরাও বেশি একটা সময় নিলো না। মিনিটের দশেকের মাঝেই তারা পৌঁছে গেল ছাদে। অরা মিথ্যা কিছু বলেনি। অফিসের ছাদটা সত্যিই চমৎকার। একপাশ জুড়ে টবে টবে দেশী-বিদেশী হাজারটা গাছ, আরেকপাশে আড্ডা দেওয়ার জন্যে ছোট্ট একটা কর্ণার। এই ছাদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে আকাশ দেখার মধ্যে বিচিত্র এক ধরনের আনন্দ রয়েছে।
তাদের লাঞ্চের আয়োজন করা হয়েছে ছাদের ঠিক মাঝখানে। মাথার ওপরে বিশাল এক ছাতা আর নিচে গোলাকার টেবিল। কথা বসতেই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আজকালকার বাচ্চা, মোবাইল ছাড়া খাওয়ার কথা তো কল্পনাই করতে পারে না।
সীমা আর অরা বসলো পাশাপাশি। এতদিন পর প্রিয় বান্ধবীকে কাছ পেয়ে মনে জমে থাকা সব কথাগুলো একসঙ্গে বলে দিতে ইচ্ছা করছে সীমার। ফোনে যদিও কথা হয় প্রায়ই। তবে ফোনে কথা বলে মনের তৃপ্তি মেলে না ঠিক।
সীমা আগ্রহ নিয়ে বলল, “জানিস একটু আগে কী হয়েছে?”
“কী?”
সীমা হাসি হাসি মুখে বলল, “সিঙ্গাপুরী আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়ে দোকানে যাবে। এর আগে তো আমাকে এখানে আসতে দেখেনি। অফিসের সামনে গাড়ি থামিয়ে ভয়ে ভয়ে বলছে, তোমাকে এখানে ঢুকতে দিবে তো?”
সীমার বিয়ে হয়েছে মাস ছয়েক হলো। যদিও বিয়েটা অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল। নানা জটিলতার কারণে দেরি হয়ে গেল। প্রথম জটিলতাটা ছিল সীমার বাবার অসুস্থতা। হুট করে একদিন তিনি ব্রেন স্ট্রোক করে বসলেন। তিনি সেরে উঠতে উঠতে ছেলে আচমকা বলল, “এখন বিয়ে করবো না। আগামী কয়েকটা মাস ব্যবসায় মন দিতে হবে।”
ব্যবসা থেকে ছেলের মনটা যখন আবারও বিয়েতে ফিরলো তখন বেঁকে বসলো সীমা। তীক্ষ্ণ স্বরে ঘোষণা করলো, “আমাকে বিয়ে করলে যে ছেলে ব্যবসায় মন দিতে পারবে না, আমি তাকে বিয়ে করবো না।”
হাজারো জটিলতার অবসান ঘটলো ছয় মাস আগে, ধুমধাম বিয়ে আয়োজনের মাধ্যমে। নতুন বাড়ি, নতুন পরিবারে মেয়েটা বেশ সুখেই আছে। সুখী মানুষদের চোখেমুখে কোনপ্রকার বিষাদের ছাপ থাকে। সীমার চোখেমুখেও বিন্দুমাত্র বিষাদ ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সীমা আবারও ফুর্তির ভঙ্গিতে বলল, “আমিও তখন একটু ভাব নিয়ে বললাম গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে। এই অফিসের সবাই তো মোটামুটি চেনে আমাকে। নিচের সিকিউরিটি গার্ড আমাকে দেখে একেবারে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এক লাফ দিয়ে উঠে বলল, আরে সীমা আপা! কত দিন পর আসলেন! আর এই দৃশ্য দেখে সিঙ্গাপুরী বেচারা থ মেরে গেছে।”
দুজনে একসঙ্গে খিলখিল করে হেসে উঠলো।
সীমার সঙ্গে হাসির এই মুহূর্তগুলো দারুণ উপভোগ করে অরা। এই মুহূর্তগুলো তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ওই সময়টাতে, যখন দুজনে একসঙ্গে থাকতো। দিনে-রাতে, কারণে-অকারণে আড্ডায় ডুবে থাকতো।
অরা প্লেটে চামচ নাড়তে নাড়তে স্বাভাবিক গলায় বলল, “কেমন লাগছে ম্যারিড লাইফ?”
সীমা সঙ্গে সঙ্গে বলল, “ভালোই। একটা নতুন একপেরিয়েন্স হলো বলতে পারিস। যে মানুষগুলোকে আগে একেবারেই চিনতাম না, তাদের সঙ্গেই শেষমেশ মানিয়ে নিতে হলো। আমি ভেবেছিলাম অচেনা মানুষদের সঙ্গে থাকা বুঝি অসম্ভব। কিন্তু এখন দেখি, এই অচেনা মানুষগুলোই আমার সবথেকে কাছের।”
“বলেছিলাম না! বিয়ের আগে তুই শুধু শুধু ভয় করছিলি।”
বিয়ের মাসখানেক আগে সীমাকে ঝেঁকে ধরে অজানা এক ভয়। সে না-কি অচেনা মানুষদের সঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকতে পারবে না। ভয়ে ভয়ে বলল, “রাস্তায় অচেনা মানুষজন লিফলেট বিলি করতে এলেই আমি তাদের এড়িয়ে যাই, আর সেখানে কতগুলো অচেনা মানুষের সঙ্গে থাকা তো অসম্ভব।” অরা যদিও হাজারো বুঝ দিয়ে সেই ভীতি কাটাতে সার্থক হয়েছিল।
অরা আগ্রহ নিয়ে বলল, “আচ্ছা সীমা? তোর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কেমন?”
“আছে একরকম। আমার শ্বশুর খুব একটা কথা বলেন না। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যে দুয়েকটা কথা বলেন, তাও ধমকের সুরে। আর সময় সুযোগ পেলেই নিজের ঘরে বসে কাশতে থাকেন।”
“তোকেও ধমকায় না-কি?”
সীমা দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল, “আরে না! আমাকে ধমকানোর সাধ্য কারও নেই। তারপরে শোন, আমার শাশুড়ি একটু বেশিই ভালো মানুষ। যাকে বলে চিনির মতো মিষ্টি। চায়ের কাপে পাঁচ-ছয় চামচ চিনি মিশিয়ে দিলে যেমন লাগে, উনার স্বভাব ঠিক সেরকম। এই ছয় মাসে আমাকে রান্নাঘরের কাছে ঘেঁষতে পর্যন্ত দেয়নি। ঘরের কোনো একটা কাজ করতে গেলেই তিনি কোথা থেকে যেন ছুটে এসে বলেন, তুমি গিয়ে রেস্ট নাও মা। আমি করে দিচ্ছি।”
অরা মুগ্ধ গলায় বলল, “বাহ্! বেশ আদরে আছিস তো তাহলে।”
সীমা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “তা আছি। তবে ঝামেলারও শেষ নেই।”
অরা অবাক গলায় বলল, “এরমধ্যে আবার কী ঝামেলা বাঁধালি?”
“আমি বাঁধাইনি, বাঁধিয়েছে আমার ননদ।”
“কী ঝামেলা?”
“আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ঠিক করেছেন ননদের বিয়ে দেবেন। ছেলে খোঁজাও না-কি শুরু হয়ে গেছে। এদিকে ননদ আমার কাছে এসে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, তার না-কি বয়ফ্রেন্ড আছে।”
“সে কী?”
সীমা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, “হুঁ! আমার হাতে-পায়ে ধরে বলল, বাবা-মাকে বয়ফ্রেন্ডের কথাটা জানাতে। আমি তাদেরকে এ কথাটা কী করে বলি তাই ভেবে রাতের ঘুম হারাম হচ্ছে।”
অরা কৌতূহলী স্বরে বলল, “তোরা এত ভয় পাচ্ছিস কেন? ছেলে কিছু করে না না-কি?”
“না, না। ভালো চাকরিই করে।”
অরা কী যেন একটা ভেবে বলল, “তাহলে আন্টিকে গিয়ে বল তোর সন্ধানে একটা ভালো ছেলে আছে। ছেলেটা যে তোর ননদের বয়ফ্রেন্ড এ কথা বলার দরকার কী?”
সীমা প্রশংসার সুরে বলল, “আইডিয়াটা খারাপ দিসনি তো! সিনেমা নিয়ে কাজ করতে করতে দিন দিন তোর ক্রিয়েটিভিটি বেড়ে যাচ্ছে।”
অরা খানিক হেসে বলল, “সীমা?”
“হুঁ?”
“সবার কথাই তো বললি। কিন্তু তোর সিঙ্গাপুরী?”
প্রশ্নটা যেন বেশ অন্যমনস্ক করে দিলো সীমাকে। এতক্ষণ ঠোঁটে লেগে থাকা হাসি নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। বিচিত্র এক চিন্তার জগতে হারিয়ে গেল সে।
অরা উদ্বিগ্ন গলায় বলল, “কী রে? সব ঠিক আছে তো?”
সীমা ক্লান্ত স্বরে বলল, “আমি না তাকে ঠিক বুঝতে পারি না। মাঝে মাঝে মনে হয়, এমন ভালো মানুষ হয় না। আবার মাঝে মাঝে মনে হয়, লোকটা এত বিরক্তিকর কেন?”
অরা আচমকা খিলখিল করে হেসে উঠলো। এই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি সেও হয়েছিল। হাজারো দ্বিধা-দ্বন্দ কেবল টেনে-হিঁচড়ে বেড়াতো তাকে। সে বুঝতেই পারতো না আরশাদের প্রতি তার অনুভূতিগুলোর অর্থ কী? তবে অরা জানে, এই দ্বিধা ক্ষণস্থায়ী। খুব শীঘ্রই সীমার দ্বিধার মেঘগুলো ঘনীভূত হতে শুরু করবে।
সীমা ভ্রু কুঁচকে বলল, “হাসছিস কেন?”
“প্রথম প্রথম এমন কনফিউশনেই থাকবি। পরে দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।”
সীমা থমথমে গলায় বলল, “এমনভাবে বলছিস যেন তোর কাছে অনেক বছরের বিবাহিত জীবনের এক্সপেরিয়েন্স আছে!”
“যতটুকু আছে, তা থেকেই বলছি।”
লাঞ্চ শেষে সীমা আবারও এসে বসলো অরার অফিসে। একটু পরেই মিটিংয়ে ঢুকবে অরা। সীমাকে নিতেও চলে আসবে তার ‘সিঙ্গাপুরী’। শেষের এই সময়টুকু কাজে লাগিয়ে আড্ডায় মেতে উঠেছে দুজনে।
আড্ডার এক ফাঁকে অরা বলে উঠলো, “আয় তোকে আরশাদের নতুন সিনেমার ট্রেইলার দেখাই।”
সীমার আগ্রহের কমতি রইলো না। যাই হয়ে যাক না কেন, সে এখনো আরশাদের এক নম্বর ভক্ত।
সীমা উৎফুল্ল গলায় বলল, “যে সিনেমার শুটিং হচ্ছে, সেটার ট্রেইলার?”
“না গাধা! শুটিং শেষ না হলে ট্রেইলার আসবে কোথা থেকে? গত মাসে যে সিনেমার শুটিং শেষ হলো, সেটার ট্রেইলার।”
সিনেমার ট্রেইলার মুক্তির আগে সাধারণ দর্শক দেখতে পায় না। অরার বদৌলতে পুরো দেশের আগে ট্রেইলারটা দেখে নেওয়ার সৌভাগ্য হলো সীমার। তার মধ্যে আনন্দ-উত্তেজনার কোনো অভাব রইলো না।
ট্রেইলার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমা আনন্দে আত্নহারা হয়ে আশ্চর্য গলায় বলল, “অসাধারণ! তুই তো আমার এক্সাইটমেন্ট বাড়িয়ে দিলি অরা? এখন রিলিজের আগ পর্যন্ত আমার ঘুমই আসবে না।”
অরা মিষ্টি একটা হাসি হেসে বলল, “এতদিন না ঘুমিয়ে থাকবি, এটা তো কোনো কাজের কথা নয়। ট্রেইলার রিলিজের আগে যেমন দেখালাম, সিনেমা রিলিজের আগেও তেমনি দেখিয়ে দিবো।”
“সত্যি? Aura you’re the best!”
অরা ল্যাপটপে কী যেন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। হুট করে একটা প্রশ্ন উঁকি দিলো সীমার মনে। সীমা বুঝতে পারছে না, প্রশ্নটা করা ঠিক হবে কিনা। ঠিক না হবার কী আছে? অরা কী তার দূরের কেউ? তার সঙ্গে আবার ফর্মালিটি কীসের?
“এই অরা?”
অরা ল্যাপটপের দিক থেকে চোখ না সরিয়েই বলল, “হুঁ?”
সীমা নিঃসংকোচে বলল, “তোর মধ্যে কোনো জেলাসি কাজ করে না?”
অরা অবাক গলায় বলল, “জেলাসি? কেন?”
“এই যে আরশাদ ভাইয়া, সিনেমার পর্দায় নায়িকাদের সঙ্গে রোমান্স করে। এসব দৃশ্য দেখে তুই জেলাস হোস না?”
কয়েক মুহূর্ত সীমার দিকে তাকিয়ে রইলো অরা। যেন তার প্রশ্নটার অর্থ অরা বুঝতে পারছে না। মুখের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলেই অর্থ উদ্ধার করতে পারবে।
কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে অরা সহজ-সাবলীল ভঙ্গিতে হেসে উঠলো।
সীমা ভ্রু কুঁচকে বলল, “হাসছিস কেন? আমি কি হাসির কোনো কথা বললাম? সিঙ্গাপুরীর সঙ্গে আমার কোনরকম বন্ডিং তৈরি হয়নি। তবুও যদি তাকে দেখতাম অন্য মেয়ের সঙ্গে রোমান্স করতে, তাহলে তো আমার শরীরের সব রক্ত টগবগ করে ফুটে উঠতো। আর সেখানে তুই তো ভাইয়াকে এত ভালোবাসিস। তোর খারাপ লাগে না?”
অরা স্বাভাবিক গলায় বলল, “একদমই না।”
“কেন?”
অরা সুন্দর করে গুছিয়ে বলল, “কারণ আরশাদ একজন অ্যাক্টর। অ্যাক্টর হিসেবে এসব তার কাজের অংশ। তাছাড়া আমার সাথে বিয়ের আগেও তো পর্দায় রোমান্স করতো ও। সিনেমার পর্দায় আমরা যাকে রোমান্স করতে দেখি সে তো আর সত্যিকারের আরশাদ নয়। কোনো একটা গল্পের চরিত্র।”
“আচ্ছা মানলাম। স্ক্রিনে চরিত্র রোমান্স করছে, আরশাদ ভাইয়া নয়। কিন্তু শুটিং সেটে তো সর্বক্ষণ নায়িকারা তার আশেপাশে মাছির মতো ঘুরঘুর করে। যেখানে তুই চাইলেই তাকে দেখতে পাচ্ছিস না, সেখানে ওই নায়িকাগুলো দিনভর চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তাকে। এতে জেলাস হোস না?”
অরা আবারও একগাল হেসে বলল, “না রে বাবা।”
সীমা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “কী করে সম্ভব?”
“আমি কাকে বিয়ে করেছি জানিস?”
“জানবো না কেন?”
অরা ঝলমলে গলায় বলল, “সুপারস্টার আরশাদ হককে। এ দেশে এমন কোনো মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে যে কিনা জীবনে অন্তত একবার তার ওপর ক্রাশ খায়নি? কয়জনের ওপরে জেলাস হবো? মেয়েরা ওকে পছন্দ করবেই। কিন্তু তাদের ভাগ্য এতটাও ভালো নয় যে আরশাদও তাদের পছন্দ করবে। সারাদিন যতই নায়িকাদের আশেপাশে থাকুক, দিনশেষে তো আমার কাছেই ফিরে আসা তার।”
অফিসের কাজ সেরে সন্ধ্যার আগে আগে কথাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। আরশাদকে দেওয়া কথা অনুযায়ী আজ অরা বিন্দুমাত্র কাজের চাপ নেয়নি, সময়মতো সবগুলো ওষুধ খেয়েছে।
বাড়ি এসে কথা আর পড়তে বসলো না। অরার সঙ্গে অফিসে গেলেই বেচারি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আজ তাই আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়লো। ওদিকে অরার জেগে রইলো তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটার অপেক্ষায়। না খেয়ে অপেক্ষা করার উপায় নেই। তাহলে অরার বারোটা বাজিয়ে দেবে আরশাদ। তাই নিজে ডিনার করে এসে বিছানায় বসে একটা বই পড়ছে অরা। আরশাদ তো বলে, তার জন্যে অপেক্ষা করে জেগে না থাকতে। বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে শরীর খারাপ হবে। তবুও সেই বারণ পরোয়া না করে জেগে রইলো অরা।
বইয়ের মাঝে এতটাই ডুবে রইলো যে চারপাশের কোনো দিকে তার খেয়ালই রইলো না। অরার ধ্যানভঙ্গ হলো ঘরের দরজা খোলার শব্দে। অরা চোখ তুলে তাকালো, দেখা পেলো তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটার। সেই চিরচেনা শান্ত মুখ, তার ঠোঁটে লেগে থাকা মোহনীয় হাসি।
অরা বইটা বিছানার ওপর ফেলে ব্যস্ত গলায় বলল, “আরশাদ! কলিংবেল বাজলে না কেন?”
আরশাদ ঘরের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে শান্ত ভঙ্গিতে বলল, “কলিংবেল বাজালেই তো তুমি ছুটে যেতে দরজা খুলতে।”
“হ্যাঁ যেতাম, সমস্যা কোথায়?”
“উফ অরা! বলেছি না, যত সম্ভব কম ছোটাছুটি করবে!”
অরা কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আরশাদ তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। তার আচমকা এমন কান্ডে যেন বরফের ন্যায় জমে গেল অরা। আরশাদকে কাছে পেলেই তার পৃথিবীটা যেন হাজারো রঙে সেজে ওঠে। মনের মাঝে হাজারো প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। এমন কেন ছেলেটা?
আরশাদের চুলের মাঝে হাত বুলিয়ে দিয়ে অরা বলল, “টায়ার্ড?”
অরার কোলে মুখ লুকিয়েই আরশাদ বলল, “প্রচন্ড!”
অরা নিঃশব্দে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আরশাদের চুলে। নীরবতার মাঝেই কেটে গেল কয়েক মুহূর্ত। তাদের চিরচেনা প্রশান্তিময় নীরবতা।
আচমকা অরার কোল থেকে মাথা তুলে আরশাদ বলল, “তোমার কষ্ট হচ্ছে?”
“না।”
আরশাদ আর কথা না বাড়িয়ে উঠে বসলো।
অরা ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলল, “আহা! উঠে গেলে কেন?”
“তোমার কষ্ট হবে তো।”
অরা গোমড়া মুখে তাকিয়ে রইল আরশাদের দিকে। সবকিছুতেই এই ছেলেটার একটু বেশিই বাড়াবাড়ি!
“অরা?”
“হুঁ?”
“একটা সিক্রেট শুনবে?”
নিমিষেই অরার ঠোঁটে ফুটে উঠলো প্রচ্ছন্ন একটা হাসি। নানা পরিস্থিতিতে নানা মানুষের সামনে হাসতে হয় তাকে। তবে এই হাসির জাত আলাদা। এই হাসিটা দেখার সৌভাগ্য আরশাদ ছাড়া পৃথিবীতে কারোর নেই।
অরা সেই হাসিটা হেসেই বলল, “না শুনে আর উপায় কী?”
আরশাদ ঠিক অরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি আমার পাওয়ার হাউজ। দিনভর যতই ক্লান্ত থাকি না যেন, তোমার কাছে এলেই আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।”
(চলবে)