ফিরে_আসা ৫০ লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

0
784

#ফিরে_আসা
৫০
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

প্রচন্ড বেগে আরও একটা ঘুষি এসে পড়লো সাবেরের মুখের ওপরে। অনবরত আঘাতে তার মুখের নকশাই পাল্টে দিয়েছে আরশাদ। গাল-ঠোঁট ফেটে অনর্গল রক্ত পড়ছে। সাবের মুক্তির জন্যে আর্তনাদ করছে। তবুও আরশাদের মনে সামান্যতম দয়া হচ্ছে না। একের পর এক ঘুষি বসিয়েই যাচ্ছে সাবেরের মুখে।

ক্রোধে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আরশাদ বলল, “এই জানোয়ার! তুই জানিস কোথায় হাত দিয়েছিস? কী ভেবেছিলি? আমি বেঁচে থাকতে আমার বউকে নিয়ে পালিয়ে যাবি?”

আবারও সজোরে কতগুলো ঘুষি এসে পড়লো সাবেরের মুখে। সাবের অসহায় ভঙ্গিতে কাতরাতে কাতরাতে বলল, “আমার কোনো দোষ নেই স্যার। বিশ্বাস করুন! ওই নওশীন আমাকে দিয়ে জোর করে অরাকে কিডন্যাপ করিয়েছে।”

নওশীনের নামটা শুনে বিন্দুমাত্র অবাক হলো না আরশাদ। এই জঙ্গলে পরিচিত কাঠের বাড়ির কথা মনে পড়তেই সে তৎক্ষণাৎ বুঝতে পেরেছিল এসবের পেছনে রয়েছে নওশীন।

আরশাদ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “কেউ একজন জোর করলো আর তুই নাচতে নাচতে কিডন্যাপ করতে চলে এলি? পাঁচ বছরের বাচ্চা তুই?”

আরশাদ আবারও তাকে আঘাত করতে যাবে তখনই ওসি হানিফ বাঁধা দিয়ে বলল, “আরশাদ ভাই! এবার ওকে ছেড়ে দিলে হয় না?”

পায়ে গুলি লাগার পর পুলিশ তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আরশাদ তার আগেই ভেতরে জমে থাকা সকল রাগের প্রকাশস্বরূপ ঘুষির বর্ষণ শুরু করে দেয় সাবেরের মুখে। আরশাদের রাগ দেখে পুলিশ বাঁধা দেওয়ার সাহসও পাচ্ছিল না।

হাসু মিয়া এবং মাঝি নদীতে ঝাঁপ দিলেও বেশিদূর যেতে পারেনি। পুলিশ সাঁতরে মাঝ নদী থেকেই ধরে আনে তাদের। হাসু মিয়াও পুলিশকে জানিয়েছে এক ব্যাগ টাকা দিয়ে নওশীনই আজ সকালে তাকে এখানে পাঠিয়েছে।

আরশাদ সাবেরকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, “আপনাকে একটা রিকুয়েস্ট করবো ওসি সাহেব?”

“জি অবশ্যই।”

“সাবের যে ধরা পড়েছে এই খবরটা মিডিয়ায় জানাবেন না। মূল হোতা সতর্ক হয়ে যাবে।”

ওসি সাহেব আশ্বাস দিয়ে বললেন, “এটা আপনি না বললেও আমরা জানতাম না। সমস্যা করেছে সাংবাদিকগুলো! এমন সিরিয়াস অভিযানে আমরা কখনো সাংবাদিকদের আশেপাশে অ্যালাউ করি না। তবে এই কেসটা আলাদা কারণ এই কেসের সঙ্গে আপনি জড়িত। আপনি আমাদের সঙ্গে এই অভিযানে না এলে সাংবাদিকদের এত ভীড় জমতো না। সাবেরও তড়িঘড়ি করে রওনা দেওয়ার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়তো না।”

আরশাদ তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, “আর আমি না এলে এই জায়গাটা খুঁজে পেতেন কী করে?”

ওসি সাহেব চুপ করে রইলেন। আসলেই তো! এই জায়গাটা শেষমেশ আরশাদই খুঁজে বের করেছে। পুলিশ অরাকে খুঁজতে এত দূর অব্দি আসতো না। প্রথম বাড়িটার পাঁচ কিলোমিটার রেডিয়াসের ভেতরেই অভিযান চালাতো। আর রেডিয়াসে এই জায়গা আসে না। আরশাদ তাদের সঙ্গে না এলে তো অরাকে খুঁজে পাওয়াই সম্ভব হতো না। সাবেরও অরাকে নিয়ে পালিয়ে যেত বহুদূর।

আরশাদ আবারও বলল, “যাইহোক, সাংবাদিকরা এখনো এদিকটায় পৌঁছাতে পারেনি। আপনারা প্লিজ দ্রুত একে নিয়ে কোথায় যাবেন যান।”

ওসি সাহেব রহস্যময় কন্ঠে বললেন, “জি। দ্বিতীয় অভিযানে কি আপনি আমাদের সঙ্গে যাবেন?”

দ্বিতীয় অভিযানটি কীসের সেটা আর বুঝিয়ে বলতে হলো না আরশাদকে।

আরশাদ দৃঢ় গলায় বলল, “অবশ্যই।”

আরশাদের গাড়ির ব্যাকসিটে গা এলিয়ে দিয়েছে অরা। তার গায়ের ওপরে নিজের জ্যাকেটটা জড়িয়ে দিয়েছে আরশাদ। সাবেরের টানাটানির কারণে তার জামার পেছনের অংশের অনেকখানি ছিঁড়ে গেছে। মোটা জ্যাকেট গায়ে থাকা সত্বেও শীতে থরথর করে কাঁপছে অরা। এমনিতেই বৃষ্টির পানি তার সহ্য হয় না। তার ওপরে আজ এতটা দীর্ঘ সময়ে বৃষ্টির মাঝে থাকতে হয়েছে।

বুকের মাঝে হৃদয়টা অনবরত লাফিয়েই যাচ্ছে। গত এক ঘন্টায় পর পর কতগুলো ঘটনা ঘটে গেল। সাবের তাকে টেনেহিঁচড়ে নৌকায় এনে ফেলল। অরার বারবার মনে হচ্ছিল এই বুঝি সে চিরতরে হারিয়ে যেতে যাচ্ছে। হাজার চিন্তায় মাঝে ঠিক করে ফেলল এই জীবনটা সে আর রাখবে না। যন্ত্রণাময় এই জীবনে বহুবার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভেবেছে সে। তবে প্রতিবারই তা ভাবনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আজকের মতো দৃঢ়সংকল্পভাবে উদ্যোগ নেয়নি সে কোনোদিন।

নৌকার পাটাতনে দাঁড়িয়ে যখন সে প্রায় ঝাঁপ দিয়েই ফেলছিল, তখন বারবার শুধু মনে ভেসে উঠছিল আরশাদের নামটা। মানুষটাকে তো আর বলা হলো না, ভালোবাসি। সে কি অরার দেওয়া জার অফ সিক্রেটস খুলে দেখেছিল? না দেখারই তো কথা। ওই মুহূর্তে কেবল মনে হচ্ছিল, সারাজীবন সাবেরের বন্দী হয়ে কাটানোর থেকে নদী ঝাঁপ দিয়ে মরে যাওয়া ভালো।

এতসব ঘটনার ভীড়ে শেষমেশ আগমন হলো আরশাদের। একদম সঠিক সময় বিপদের মুখ থেকে বাঁচিয়ে নিলো তার ভালোবাসার মানুষটা তাকে। পর পর ঘটে যাওয়া এই ঘটনাগুলো যেন অরার মস্তিষ্কে বারবার বেজেই চলেছে। ক্লান্তিতে তার শরীর ভেঙে আসছে। গত আটচল্লিশ ঘন্টার প্রায় পুরোটা সময়ই তাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল চেয়ারের সঙ্গে। হাত-পা যেন তাই অবশ হয়ে আসছে।

ওসি সাহেবের সঙ্গে কথাবার্তা সেরে আরশাদ উঠে বসলো গাড়ির ব্যাকসিটে। অরার দিকে চোখ পড়তেই তার বুকটা ধ্বক করে কেঁপে উঠলো। সর্বক্ষণ যে মেয়েটা প্রাণবন্ত হয়ে থাকে, আজ সে কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। চুলগুলো অগোছালো হয়ে ছড়িয়ে আছে, চোখের কাজল অশ্রুর সঙ্গে মিশে যাওয়ায় গালে কালো দাগ বসে গেছে, নৌকায় পড়ে যাওয়ার কারণে কপাল কেটে রক্ত জমাট বেঁধেছে। বেচারি এতটাই ক্লান্ত যে নিঃশ্বাস নেওয়াটাও যেন তার কাছে বিরাট কষ্টকর কোনো কাজ বলে মনে হচ্ছে।

নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না আরশাদ। এক নিমিষে অরাকে টেনে বুকে আগলে ধরলো। অরাও বিড়ালছানার মতো গুটিশুটি মেরে পড়ে রইলো আরশাদের বুকে। অরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আরশাদ চোখদুটো বুজে রইলো। এই মেয়েটার সঙ্গে থাকতে থাকতে, সিক্রেট সিক্রেট খেলতে খেলতে হঠাৎ একদিন আরশাদ উপলব্ধি করে মনের অজান্তেই ভালোবাসে ফেলেছে তাকে। তাকে ক্ষণিকের জন্যে হারিয়ে আরশাদ উপলব্ধি করতে পারছে সেই ভালোবাসার প্রখরতা কতটা বেশি। অরার এই ফিরে আসা আরশাদকে শেখালো, এই মেয়েটার উপস্থিতি ছাড়া তার চাকচিক্যময় জীবন কতটা অনর্থক।

আরশাদ অরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, “তুমি ঠিক আছো অরা?”

অরা তার বুকের মাঝে গুটিশুটি মেরে থেকেই হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো।

অনর্থক একটা প্রশ্নের অনর্থক জবাব। আরশাদ জানে, অরা মোটেও ঠিক নেই। শারীরিক-মানসিক দুভাবেই প্রচন্ড এলোমেলো হয়ে আছে সে। তবুও প্রশ্নটা কেন করলো নিজেও জানে না। আরশাদ যাতে বেশি দুশ্চিন্তা না করে, তাই অরাও হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো।

আরশাদ কোমল স্বরে বলল, “তাকাও আমার দিকে!”

অরা ক্লান্ত ভঙ্গিতে আরশাদের বুক থেকে মাথা তুলে তাকালো তার দিকে।

আরশাদ অরার গালে হাত রেখে উদ্বিগ্ন স্বরে বলল, “তোমার সাথে কী করেছে ও? টর্চার করেছে?”

অরা না-সূচক মাথা নাড়লো। কথা বলার মতো শক্তি তার শরীরে অবশিষ্ট নেই। তবুও বহুকষ্টে বিড়বিড় করে বলল, “নওশীন…”

অরা আর কিছু বলার আগেই আরশাদ বলল, “আমি সব জানি অরা। তোমাকে ওসব নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না।”

আরশাদ আচমকা তার ঠোঁটের স্পর্শ দিলো অরার কপালে। অরা আহ্লাদে মোমবাতির মতো গলে গিয়ে আবারও মাথা রাখলো তার বুকে। আশ্চর্য ব্যাপার! বিয়ের পর আরশাদের এতটা কাছে সে আসেনি। তার এতটা গভীর স্পর্শ সে পায়নি। অরার তো লজ্জায় নুয়ে পড়ার কথা। লজ্জায় থেকেও বেশি তার সমস্ত শরীরে বিচিত্র এক প্রশান্তি খেলে যাচ্ছে।

ঢাকায় ফিরে অরাকে নিয়ে বাড়িতে গেল না আরশাদ। সোজা চলে এল হসপিটালে। সাংবাদিকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এতটা পথ আসা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। সাংবাদিকদের কোনমতে জানতে দেওয়া যাবে না অরাকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তারা এই খবরটা জানা মানেই হলো নওশীনের সতর্ক হয়ে যাওয়া। ডক্টর ইশতিয়াক অত্যন্ত গোপনীয়তার মাঝে হাসপাতালে অরার চিকিৎসা করছেন। এখান থেকে খবরটা ফাঁস হবার কোনো উপায় নেই।

অরার হাতে-পায়ে বেশ অনেকগুলো চোট লেগেছে। দীর্ঘ সময় হাতে-পায়ে নাইলনের দড়ির শক্ত বাঁধন থাকায় স্থায়ী দাগ বসে গেছে। ক্ষতচিহ্নগুলোতে ড্রেসিং করে দেওয়া হলো। একে তো মুখের ওপরে স্কচটেপ, তার ওপরে জানালা-বিহীন ঘরে দীর্ঘ সময় বন্দি থাকার কারণে তার শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তাই ডক্টর কয়েক ঘন্টার জন্যে তাকে অক্সিজেন মাস্ক দিয়েছে। গত দুদিন পানি ছাড়া কিছুই পড়েনি তার পেটে। অস্বাভাবিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে অরা। এজন্যে তাকে সেলাইন দেওয়া হয়েছে।

সমস্যা এখানেই শেষ হয়ে গেলে ভালো হতো। তবে বাড়তি সমস্যা হিসেবে যোগ দিয়েছে অরার জ্বর। অনেকটা সময় বৃষ্টির মাঝে থাকার কারণে তার এসেছে আকাশ-পাতাল জ্বর। কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। আরশাদ ঠিক আছে ঠিক তার পাশেই। শক্ত করে ধরে রেখেছে অরার হাত। যেন হাতের বাঁধন একটু আলগা হলেই মেয়েটা দূরে কোথাও হারিয়ে যাবে।

অরার ঘুম ভাঙলো রাত দশটার দিকে। শ্বাস-প্রশ্বাসে আর কোনো অসুবিধা হচ্ছে না বলে ডাক্তার সাহেব অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিলেন। অরার শরীরে জ্বর এখনো আছে। সেই সঙ্গে ভর করছে একরাশ ক্লান্তিবোধ।

ডক্টর ইশতিয়াক আরশাদের উদ্দেশ্যে বললেন, “সেলাইন শেষ হলেই উনাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। তবে আমি সাজেস্ট করবো আজকের রাতটা এখানেই থেকে যেতে। আমরা তাহলে ভালোভাবে অবজার্ভ করতে পারবো।”

আরশাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরা ক্লান্ত স্বরে বলল, “আমি বাসায় যাবো।”

অরার বাড়ি ফিরে যাওয়ার তাড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেই কবে থেকে বাড়ির বাইরে মেয়েটা!

আরশাদ বলল, “বাড়িতেই নিয়ে যাই। আপনি কাইন্ডলি কাল সকালে একবার ওর চেকআপ করে আসবেন?”

“Sure.”

বাড়ি ফিরে অরাকে নিজের ঘরে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলো আরশাদ। অরা নিশ্চয়ই এ অবস্থায় পাশের ঘরে থাকতে পারে না। তাছাড়া মেয়েটাকে এক মুহূর্তও চোখের আড়াল করতে চাইছে না আরশাদ। অরা চোখের আড়ালে গিয়েই তো অস্থির করে দিয়েছিল আরশাদের সমস্ত চেতনাকে। আর অস্থিরতা সহ্য হবে না তার।

ঘুমের ওষুধের প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। বিছানায় মাথা রাখতেই অরা ঘুমের ঘোরে ডুবে গেল। এখনো ঘুমিয়ে পড়েনি তবে যেকোনো সময় ঘুমিয়ে পড়বে। অরাকে রেখে আরশাদ ফ্রেশ হতে চলে গেল। এতক্ষণ সেই বৃষ্টিতে ভেজা জামাকাপড় তার গায়ে জড়ানো। ফ্রেশ হতে গিয়ে আরশাদের খেয়াল করলো তার হাতের ক্ষতটা। কাল অমন সজোরে হাতটা দেয়ালে আঘাত করার কারণে এই ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। পানির সংস্পর্শে হাতটা তাই জ্বালাপোড়া করছে। অরাকে যতক্ষণ পাওয়া যাচ্ছিল না ততক্ষণ এতসব ব্যথা-ট্যথা অনুভূত হয়নি। মাথায় কেবল একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিল। অরার চিন্তা।

ফ্রেশ হয়ে ঘরে এসে আরশাদ দেখলো অরা গুটিশুটি মেরে বিছানায় শুয়ে আছে। তার গলা পর্যন্ত ব্ল্যাঙ্কেট টানা। আরশাদ নিঃশব্দে গিয়ে শুয়ে পড়লো তার পাশে। সুইচবোর্ডে হাত বাড়িয়ে ঘরের সব বাতিগুলো নিভিয়ে দিলো। হঠাৎ কেন জানি তার মনে হলো অরা জেগে আছে, ঘুমিয়ে পড়েনি।

আরশাদ ক্ষীণ স্বরে ডাকলো, “অরা?”

অরা অস্পষ্ট গলায় বলল, “হুঁ?”

আরশাদ কোমল স্বরে বলল, “আমার কাছে এসো!”

অরা বিনা বাক্য ব্যয়ে নিঃসংকোচে আরশাদের কাছে গেল। তার বুকে মাথা রেখে আবারও শুয়ে পড়লো। আরশাদ অরার হাতটা টেনে এনে তার গায়ের ওপরে রাখলো। নিজেও শক্ত করে আকড়ে ধরলো অরাকে। ক্রমেই যেন আরশাদের এই স্পর্শের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে অরা। দীর্ঘ ক্লান্তির পর দিনশেষে বাড়ি ফিরে এনে মনে যেমন বিচিত্র এক প্রশান্তি বোধ হয়, ঠিক তেমনই এক অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীর জুড়ে।

আরশাদ অরার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলল, “I’m sorry Aura. আমার কারণেই তোমাকে এতটা কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমার আগেই উচিত ছিল তোমার সিকিউরিটি বাড়িয়ে দেওয়া।”

অরা থেমে থেমে বলল, “আপনি কেন সরি বলছেন? I’m sorry.”

“কেন?”

“সেদিন আপনাকে না জানিয়ে বাড়ির বাইরে যাওয়া আমার উচিত হয়নি।”

আরশাদ ক্ষীণ হাসি হেসে অরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “তোমার কোনো দোষ নেই অরা। তুমি কি সব জায়গায় যাওয়ার আগে আমাকে জানিয়ে যাও?”

অরা ক্লান্ত স্বরে বলল, “আমার খুব ভয় করছিল জানেন। বারবার মনে হচ্ছিল আর কখনো আপনাকে দেখবো না।”

“ভরসা ছিল না আমার ওপরে?”

“ছিল কিন্তু…”

অরাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আরশাদ বলল, “থাক। আর কথা বলতে হবে না। চুপ করে ঘুমাও তো তুমি।”

কেটে গেল প্রশান্তিময় নীরবতার হাওয়া। যে নীরবতার মাঝে হাজার বছর কাটিয়ে দেওয়া কষ্টকর হবে না তাদের পক্ষে।

আচমকা নীরবতা ভঙ্গ করে অরা কম্পিত স্বরে বলল, “আরশাদ?”

মনে মনে চমকে উঠলো আরশাদ। এই প্রথমবার তাকে নাম ধরে ডাকছে অরা। প্রথমবারের মতো নাম ধরে ডাকায় চমকায়নি আরশাদ। তার চমকানোর কারণ তার ডাকার ধরনটা। আর এবং শাদের মাঝে ন্যানোসেকেন্ডের বিরতি। হাজারো মানুষের মুখে মুখে আরশাদের নাম। তবে এতটা সুন্দর করে আজ পযর্ন্ত কেউ তা উচ্চারণ করেছে বলে মনে তো হয় না।

আরশাদ মুগ্ধতার হাসি হেসে বলল, “হুঁ?”

অরা উদ্বিগ্ন স্বরে বলল, “ওরা যদি আবার নতুন কোনো প্ল্যান করে আমাকে…”

অরার কথাটা শেষ হবার আগেই আরশাদ তার একটা আঙুল অরার ঠোঁটের ওপর রেখে বলল, “হুস! ভালো করে তাকিয়ে দেখো কার বাহুডোরে আটকা পড়ে আছ তুমি। এই পৃথিবীতে কারও সাধ্য নেই তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার।”

আরশাদের বুকে মাথা রেখেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো অরা নিজেই জানে না। আরশাদ সাবধানে অরাকে বুক থেকে নামিয়ে বালিশে শুইয়ে দিলো। হঠাৎ কী যেন মনে করে অরার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আরশাদ। তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে মনে মনে বলল, “সরি অরা। আমাকে এখন যেতেই হবে। কিন্তু তুমি চিন্তা কোরো না। তোমার ঘুম ভাঙার আগেই আমি ফিরে আসবো তোমার কাছে।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here