পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) #পর্বঃ২৪ #Jhorna_Islam

0
228

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ২৪
#Jhorna_Islam

কিছুসময় ইসরাতের মা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর ভাবে সোফায় এমন করে শুয়ে থাকলে পরে গিয়ে শরীরে ব্যাথা পাবে। তাই ইসরাত কে ডাকতে থাকে উঠার জন্য কিন্তু কিছুতেই উঠে না।অনেকক্ষন ডাকার পর চোখ ডলতে ডলতে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে আবার মুখে বালিশ দিয়ে শুয়ে পরে।ইসরাতের মা এখনও মেয়ের মুখ দেখেনি দেখলে হয়তো তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলতো। ঐসময় এসেই মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে শুয়ে ছিলো আর এখন আসার সময় ও চোখ ডলতে ডলতে এসেছে যার দরুন খেয়াল করেনি।

এইদিকে নূর ইসরাত কে একের পর এক কল দিয়ে চলেছে কিন্তু মেয়েটা কল রিসিভ করছে না কিছুতেই। পৃথিবীতে মনে হয় এটা নিয়ম হয়ে গেছে দরকারের সময় কাউকে পাওয়া যায় না। নূর চাচ্চিলো ইসরাতের সাথে বিষয় টা শেয়ার করবে কিন্তু কিসের কি এই মেয়ে ফোন ই তুলছে না।আরো কয়েকবার চেষ্টা করে নূর আর কল দেয় না হয়তো এখনও পরে পরে ঘুমোচ্ছে। একটু সুযোগ পেলেই চলে ঘুম আর ঘুম। মেয়েটার ঘুম ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। এসব কিছু ভাবনার মাঝে নূরের মাথায় আসে ফাতিহার কথা, ঐসময় রা’গের বশে ফাতিহার সামনেই কিসব বলেছে।পরোক্ষনে মাথায় আসে ফাতিহার বেদনাদায়ক অতীতের কথা। দৌড়ে গিয়ে আবার ফাতিহা কে খুঁজতে থাকে। এতোসময় যাদের সাথে খেলছিলো তাদের কারো সাথে নেই। এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে কোথায় গেলো মেয়ে টা। খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে যেইখানে দেখে গিয়েছিলো সেইখানে এসেই পায়।বসে বসে চোখ মুচ্ছে। নূর দৌড়ে ফাতিহার কাছে যায় গিয়ে পাশে বসে।

কি হয়েছে মাম্মা? তুমি কাঁদছো কেন? ব্যাথা পেয়েছো? দেখি দেখাও মাম্মা কে কোথায় ব্যাথা পেয়েছো বলেই অস্থির হয়ে নিজেই খুঁজতে থাকে।

ফাতিহা নিজের ছোট্ট হাত দিয়ে নূরের হাত দুটি আঁকড়ে ধরে করুন গলায় বলে উঠে,, “মাম্মা আমাকে কি তুমি ছেড়ে চলে যাবে আমার মায়ের মতো? ”

ফাতিহার একটি মাত্র প্রশ্ন মুহূর্তের মধ্যে নূর কে শান্ত করে দিলো।কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে ফাতিহার দিকে তাকিয়ে রয় নূর। ফাতিহার কেন মনে হলো নূর তাকে ছেড়ে চলে যাবে তার জানা নেই। শুধু জানে এই মেয়েটার এখন নূর কে প্রয়োজন খুব করে প্রয়োজন।নূর ফাতিহাকে নিজের বুকের মাঝে আগলে নেয়। নূর পারলে কলিজার ভিতর ঢুকিয়ে ফেলতো এই ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েটা কে।

” এসব কি কথা মাম্মা? আমি তোমাকে কেন ছেড়ে চলে যাবো? মায়েরা কি তার বাচ্চা কে ছেড়ে চলে যায় কখনো?”

“তাহলে আমার সোহানা মাম্মা কেন চলে গলো মাম্মা?”

নূর এই প্রশ্নে থমকায় তার কাছে তো এর কোনো উত্তর নেই। হুট করে বাচ্চা মেয়েটা কিরকম বড়দের মতো কথা বলছে। তোমার সোহানা মাম্মা চলে গেছে দেখেতো আল্লাহ তোমার মাম্মার জায়গায় আমাকে পাঠিয়েছেন, যেনো আমার ফাতিহা মামনি তার মাম্মা কে পায়। তুমি তো আমার আদরের বাচ্চা। মাম্মা তোমাকে অনেক ভালোবাসে।

ফাতিহা ও তার মাম্মা কে অনেক ভালোবাসে। ফাতিহা বলেই নূরের গালে চুমু খায়।

হ্যা সব ভালোতো তোমরা মা মেয়ে দুইজন দুইজনকে বাসো তাই না? আমিতো কেউ না বা’নের জলে ভেসে এসে পরেছি তোমাদের কাছে।আজ কেউ নাই বলে,, বলেই সৌন্দর্য মুখটা গোমরা করে বুকে হাত বেঁধে অন্য দিকে তাকায়।

উফফফ মি. ওয়াহিদ তুমি খুব হিংসুটে লোক বলেই কোমরে হাত রাখে ফাতিহা।তারপর আদেশের সুরে বলে,,,নিচু হও দেখি যেই লম্বা তুমি, তোমার কাছে তো আমি পৌঁছাতেই পারবো না। সৌন্দর্য ফাতিহার কথা শুনে নিচু হয়। ফাতিহা সৌন্দর্যের গালে চুমু খেয়ে বলে,,ফাতিহা লাভ’স ইউ এ লট মি.ওয়াহিদ। এন্ড মাম্মা অলসো লাভ’স ইউ। তাই না মাম্মা?

নূর এতোসময় বাবা মেয়ের কথায় হাসলেও এখন ফাতিহার কথায় শুকনো মুখেই বিষম খায়। মনে মনে বলে,, কি সাংঘাতিক প্রশ্নরে বাবা। নূর এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকে। কি করে দেবে নূর এই প্রশ্নের উত্তর? প্রশ্ন শুনেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা।

সৌন্দর্য হয়তো নূরের বিষয় টা বুঝতে পারছে তাই নিজেই পরিস্থিতি সামলে নেয় সব সময়ের মতো।

“মাম খিদে লাগে নাই তোমাদের? বেলা কতো হলো সেই দিকে খেয়াল আছে? ”

“তুমিই ঘুম থেকে উঠতে লেট করছো আমরা না।আমি আর মাম্মা তো সেই সকালে উঠেছি।জানো সকালে উঠে কতো মজা হয়েছে? ”

আচ্ছা তাই নাকি? চলো খেতে খেতে শুনবো। সৌন্দর্য নূরকে ও চোখের ইশারায় আসতে বলে এগিয়ে যায়। নূর বরাবরের মতো স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।

কিন্তু খেতে গিয়ে লাগে আরেক বিপত্তি। সব ঠিকঠাকই ছিলো খাওয়ার টেবিলে বসে নূর খাচ্ছে মাঝে মাঝে ফাতিহার মুখে ও তুলে দিচ্ছে। অপর দিকে সৌন্দর্য ও একই ভাবে নিজেও খাচ্ছে ফাতিহার মুখে ও তুলে দিচ্ছে। এরমধ্যে ফাতিহা নিজের আবদার নিয়ে বসে সৌন্দর্য কে নূরকে খাইয়ে দিতে হবে, নূরকেও সৌন্দর্য কে খাইয়ে দিতে হবে। এরকম আবদার শুনে নূরের বলতে ইচ্ছে করলো আর কতো লজ্জায় ফেলবি মা? এসব আবদার কেউ করে?কিন্তু কিছুই পারলো না। এবার সৌন্দর্য ও কোনো বাহানা দিয়ে বিষয় টা কাটাতে পারলো না। ফাতিহা বলেছে খাইয়ে দিতে হবে মানে দিতে হবে কোনো বাহানা চলবে না।ফাতিহা নিজেই ঠিক করে দেয় কে আগে খাইয়ে দিবে। সৌন্দর্য প্রথম নূর কে খাইয়ে দিবে তারপর নূর সৌন্দর্য কে।

সৌন্দর্য হাতে লোকমা বানিয়ে নূরের মুখের সামনে ধরে।সৌন্দর্য কে দেখে মনে হচ্ছে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার সে আগেও করেছে। নূর মুখ হা করছে না দেখে ফাতিহা হাতে ধরে ধাক্কাতে থাকে। নূর ছোট্ট করে হা করে। সৌন্দর্য লোকমা নিয়েছে বড় নূরের ছোট্ট করে হা করাতে কিছুতেই পুরোটা মুখে ঢুকবে না।সৌন্দর্য পুরো লোকমা ঠেসে মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়। এইদিকে এতো বড় লোকমা যে নূরের চিবুতেও কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্টে গিলে।এবার নূরের পালা নূর লোকমা ধরে সৌন্দর্যের মুখের কাছে নিতেই সাথে সাথে সৌন্দর্য মুখে নিয়ে নেয়। কিন্তু সাথে ব্যাথা ও পায় সৌন্দর্য আঙ্গুলে কামড় দিয়েছে। চোখ মুখ কোচকে সৌন্দর্যের দিকে তাকাতেই বলে এতো ছোট লোকমা তো মনে হয় ফাতিহার মুখে ও লাগবে না। ভবিষ্যতে বড় বড় লোকমা দিবে আর নিজেও খাওয়ার জন্য তৈরি থাকবে বলেই চোখ মা’রে সৌন্দর্য ।

নূর মনে মনে বলে,,সখ কতো ভবিষ্যতে তোকে আমি খাইয়ে দিবো নাকি অসব্য সুন্দর মানুষ।

**************
ইসরাত সেই যে ঘুমিয়েছে আর কোনো খবর নেই। এখনও পর্যন্ত ঘুমিয়েই যাচ্ছে। ইসরাতের মা আর বাবা একটা কাজে বের হয়েছে। বের হওয়ার আগে ইসরাতের মা কয়েকবার ডেকেছে কিন্তু উঠে নি।শেষ মেষ ধাক্কা দিতেই ঘুমু ঘুমু কন্ঠে হু বলেছে।ইসরাতের মা ভেবেছে উঠেছে তাই বলে যায় উনারা একটু বের হচ্ছে আসতে লেট হবে। দরজা লাগিয়ে যাচ্ছে সাবধানে যেনো থাকে।

ইসরাতের ঘুম ভাঙে কলিং বেলের শব্দে।প্রথমে ভেবেছিলো উঠবেনা পরোক্ষনে মাথায় আসলো মা বাবা ও হতে পারে। এখন গিয়ে না খুললে মা আজ আস্তো রাখবেনা। তারাতাড়ি দৌড়ে যায় দরজা খুলতে।

দরজা খুলে বাইরে কে আছে না দেখেই উল্টো ঘুরে যেতে যেতে বলে এতো তারাতাড়ি তোমাদের কাজ শেষ? কি এমন কাজ করতে গেলে শুনি?

” ইসরাত?”

ডাক শুনে ইসরাত থমকে দাঁড়ায়।

“কি হলো?”

ইসরাত ভুল শুনছে ভেবে কানে আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা দেয়।

ইসরাত আমি ডাকছি তোমায়।

নাহ্ ভুল শুনছে না। কিন্তু ঐ লোকটা এখানে কি করে কি? ভাবতে ভাবতেই পিছনে ফিরে তাকায়।
তালহা ইসরাত কে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। এসব কি দেখছে চোখে মুখের কি অবস্থা। ইসরাত ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তালহার দিকে। বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কিছু সময়ের জন্য ঐ ঘটনাটা মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।এখন আবার কষ্ট শুরু হয়ে গেছে।

একি হয়েছে তোমার? চোখে মুখের এই অবস্থা কেন? তুমি কি অসুস্থ?

–আ-আপনি এখানে? আপনি এখানে কি করছেন?
— তুমি আগে আমার কথার উত্তর দাও।তুমি কি অসুস্থ?
— বলতে বাধ্য নই আমি।

তোমাকে আমি এক জায়গায় দেখা করতে বললাম তুমি কি করলে ঐখানে গিয়েও ফিরে এসেছো তাও আমার সাথে দেখা না করে। এসবের মানে কি?

ইসরাত তোতলাতে তোতলাতে বলে আ-আমাকে আপনি কো-কোথায় দেখেছেন?

— তালহা দায়সারা ভাব নিয়ে বলে আমিও বলতে বাধ্য নই।

আজব লোক তো।এখানে কি করতে এসেছেন? কোনো দরকার কি? তারাতাড়ি বলে বিদায় হোন।

– তোমার কি হয়েছে বলোতো এরকম ভয়েসে কেন কথা বলছো?

কিরকম ভাবে কথা বলবো আপনার সাথে? এখন কি আপনার থেকে নতুন করে কথা বলাও শিখতে হবে?

তালহা চোখ ছোট ছোট করে বলে,,মনে হচ্ছে ঝগড়া করার মোডে আছো।

— আমি যার-তার সাথে ঝগড়া করি না।

ফরগেট ইট! আমার প্রশ্নের উত্তর দাও ঐখানে গিয়েও কেন আমার সাথে দেখা করলে না?

— বললাম না আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই?

তালহার এবার রাগ উঠে যায়।ইসরাতের হাত শক্ত করে ধরে বলে,, তুমি বলতে বাধ্য আলবাত বাধ্য।আমি তোমাকে ডেকেছি তোমাকে বলতেই হবে।

ইসরাত এক ঝটকায় তালহার হাত থেকে নিজের হাত ছারিয়ে নেয়।
খালি বাড়িতে একজন মেয়ে মানুষের হাত ধরা এসব কি ধরনের অ’সভ্যতা স্যার?

ইসরাতের কথায় তালহা ভাষা হারিয়ে ফেলে। এ কোন ইসরাত কে দেখছে সে?

#চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here