পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) #পর্বঃ৪ #Jhorna_Islam

0
290

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam

(অতীত)

ঐদিন যখন নূরের মা নূরকে একটা শাড়ি দিয়ে কোনো কিছু না বলে তৈরি হতে বলে চলে যায়। আর নূরের ফুপাতো বোন নূরকে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দেয় তখনও বুঝতে পারছিলো না তার সাথো হচ্ছে কি।এক্সামের টেনশনে এসব বিষয় গুলো মাথার ভিতর যাচ্ছিলো না। নূরের বাবা রুমে এসে যখন তার মাথায় হাত রেখে বলেছিলো আম্মা বাবার প্রতি বিশ্বাস আছে না? বাবারা যা করে ভেবেচিন্তে করে।আমি তোমাকে জলে ভাসিয়ে দিবো না। বাবার উপর একটু ভরসা রেখো।

বাবার কথায় নূর বেশ অবাক হয়।সচরাচর বাবা এমন করে কথা বলে না। মনে নানান ধরনের কু চিন্তা আসতে থাকে। এরমধ্যে নূরের মা আর দুইজন মহিলা যখন নূরকে ড্রইংরুমে নিয়ে বসিয়ে দেয় নূর তখন সাত পাঁচ ভাবতে থাকে। এরমধ্যে নূরকে কাজী যখন কবুল বলতে বলে,,নূরের মাথায় যেনো আসমান ভেঙে পরে। বাবার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থাকে। বাবার করুন চোখের চাহনি দেখে না জেনে না দেখে মুখ দিয়ে সেই সবচেয়ে পবিত্র সবচেয়ে কঠিন জীবন বদলে দেওয়া কবুল শব্দটি উচ্চারণ করে।

বিয়ের পর যখন কিছু সময়ের জন্য বরের পাশে নিয়ে বসায় নূর তখনও মাথা নিচু করে বসে আছে। শুধু বসে নেই হাত এমন ভাবে কচলাচ্ছে মনে হচ্ছে চামড়া উঠিয়ে ফেলবে।সকল রাগ ক্ষোভ হাতের সাথে মিটাচ্ছে। কোনোদিকে তাকানোর বা কথা বলার প্রয়োজন মনে করছে না। নীরব থাকা মানুষ গুলোর প্রতি তাদের কাছের মানুষরাই সবচেয়ে কঠিন ও কষ্টকর বোঝা গুলো চাপিয়ে দেয়।

নিজের বাবার উপর সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস ও ভরসা ছিলো আর সে কিনা এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত একা নিয়ে জীবনের মোড়টাই ঘুরিয়ে দিলো। একবার বলার বা জানানোর ও প্রয়োজন মনে করলো না।এতোই বোঝা হয়ে গেছে নূর।না খাওয়াতে পড়াতে পারলে বলে দিলেই হতো এমন করে শাস্তি দেওয়ার কি আছে। মনে মনে আরো নানা ধরনের কথা ভাবছিল আর হাতের উপর সব রাগ ঢালছিলো নূর।

এটা হাত কাপড় ইস্ত্রী করা মেশিন না।নাকি চামড়া থুবড়ে গেছে দেখে এভাবে ডলে ডলে ঠিক করার চেষ্টা চলছে।শেষ মেষ কিনা ভুলভাল বুঝিয়ে একটা বুড়ির সাথে আমাকে বেঁধে দিলো।

কারো গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে এসব উল্টা পাল্টা বাক্য শুনে চোখ তুলে তাকায়। সেই তাকানোতে কয়শো ভোল্টের ঝটকা খেয়েছে নূর নিজেও জানে না। হাত পা অটোমেটিক কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ।মনে হচ্ছে এখন এক সমুদ্র পানি এনে নূরের গলায় ঢেলে দিলেও তার তৃষ্ণা বুঝি মিটবে না।

নূর লোকটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এটাই ভাবার চেষ্টা করছে ইনি এখানে কি করছে? আর ইনি আমাদের বাড়ি চিনলো কি করে। পরে মনে পরলো লোকটা ঐদিন তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে। লোকটা কি নূরের বাবার কাছে বিচার দিতে আসছে বাসের ঐ ঘটনার জন্য? এসব নানা ধরনের আজগুবি সব চিন্তা ভাবনা করে চলেছে নূর।তার যে একটু আগে বিয়ে হয়ে গেছে এক মুহূর্তের জন্য সেটা মাথা থেকে বের হয়ে গেছে।

কিরে সৌন্দর্য নতুন বউকে দেখি একদিনেই পাগল করে দিলি।দেখ দেখ তোর থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। আমরা মুরুব্বিরা যে আছি সেই কথা মেয়ে টা ভুলেই গেছে। আহা সৌন্দর্যের সৌন্দর্যে দিওয়ানা হয়ে গেছে আমাদের নূর।

তালহার এরূপ বাক্যে কটমট করে তাকায় সৌন্দর্য। চোখ পাকিয়ে গলা নিচু করে বলে চুপ যা শা*লা।এটা তোর মশকরা করার জায়গা না।বের হয়ে নেই তারপর দেখে নিচ্ছি তোকে।

এমন করে ভয় দেখাস কেন ভাই? বিয়ের দিন ও তোর এরকম রূপ দেখাচ্ছিস? তোর বউ তো ভয় পেয়ে আর শ্বশুর বাড়ি ই যেতে চাইবে না।মেয়েটা এমনিতেই যেই ভী’তু।

সৌন্দর্য তালহার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,, আমার বউ কেমন সেটা তোকে বলতে হবে না। আমি নিজে বুঝে নিবো সাহসী নাকি ভীতু।

বাহ্ ভাই বাহ্ এখনই এতো? ভুলে যাস না সে তোর বউ হওয়ার আগে আমার ছাত্রী।

তোর ছাত্রী আমার বিয়ের পাত্রী। বলেই সৌন্দর্য কলার ঠিক করে পাঞ্জাবির।

ওদের দুই বন্ধুর কথা কানেই যায় নি নূরের সে টা’সকি খেয়ে বসে আছে এসব কি করে হলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না। সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এসব কিছু তো নূর কল্পনাতে ও ভাবে নি। তাও কিনা সৌন্দর্য স্যারের সাথে? যার সাথে একটার পর একটা দূর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। কতো লজ্জায় পরতে হয়েছে নূর কে। তারচেয়ে বড় কথা এই লোকটার তো মেয়ে আছে বিবাহিত। নিজের বউ বাচ্চা থাকা সত্তেও কিনা নূর কে বিয়ে করেছে।বাবা কি করে পারলো একটা বিবাহিত লোকের সাথে তার বিয়ে দিতে? মনে মনে নূর ঠিক করে নেয় বাবার সাথে আর কোনোদিন কথাই বলবে না।

নূরের নানান ভাবনার মাঝেই নূরের বোন এসে নূর কে ড্রয়িং রুম থেকে নিয়ে যায়।

সৌন্দর্যরা ও খাওয়া দাওয়া করে চলে যায় নূরের সাথে আর আলাদা করে কথা হয় না।এমনকি বিয়ে নিয়ে কোনো আলাপ আলোচনা ও হয়নি। এমনিতে নূরের বাবা কথা বলতে আসলে চুপ হয়ে যেতো। ভালো মতো খাওয়া দাওয়া ও করে নি। এমন করেই দুই দিন চলে যায় এরমধ্যে আর সৌন্দর্য ফোন ও দেয় নি। নূর অনেক চেষ্টা চালাচ্ছে বিষয় টা ভুলে যেতে। কিন্তু কে জানতো যেটা থেকে নূর পালানোর চেষ্টা করবে সেটাই তার সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যাবে।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(বর্তমান)

ফাতিহা পিছন সিট থেকে এসে নূরের কোলে বসেছে।

সৌন্দর্য গাড়ি চালাতে চালাতে নূরের দিকে একবার ফাতিহার দিকে একবার দেখছে।নূর বাইরের দিকে দৃষ্টি দিলেও ফাতিহা এক দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। কে জানে কি দেখছে মেয়েটা নাকি কিছু খোঁজার চেষ্টা করছে।

নূর মনে মনে ভাবছে এই বাচ্চা মেয়েটা কি করে নিজের মা কে ভুলে আরেকজন কে এতো সহজে মাম্মা মেনে নিলো।অবশ্য ওর কোনো দোষ নেই ওর মাথায় যা ঢুকানো হয়েছে তাই তো বলবে।

মাম তুমি আমার কোলে এসে পড়ো।বেচারির দেখো মুখটা শুকিয়ে একটু খানি হয়ে গেছে। কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে এখনই বুঝি কেঁদে দেবে।সৌন্দর্য নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।

ফাতিহা সৌন্দর্যের কথায় নূরের দিকে তাকিয়ে বলে,, মাম্মা আমি তোমার কোলে উঠায় তুমি কষ্ট পাচ্ছো? আমি কি বেশি মোটা? এই কথা টা বলতে বলতে ফাতিহার চোখ দুটো পানিতে টইটুম্বুর হয়ে উঠে।

নূরের কেন জানি ফাতিহার এমন চাহনী দেখে খুব মায়া হলো । ফাতিহা কে নিজের সাথে জড়িয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে একদম না। আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না। আমার আরো ভালো লাগছে।

সৌন্দর্য মনে মনে বলে,,এখানে তাকে এনেছি একজনের মন ভালো করার জন্য। সে এসে নিজেই গঙ্গা, যমুনা ভাসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সবগুলো ইমোশনাল ফুল।

ফাতিহা আর নূর সৌন্দর্য কে পাত্তা না দিয়ে নানান ধরনের গল্প করা শুরু করে দেয়। অবশ্য বেশি বকবক ফাতিহা ই করছে নূর শুধু তার উত্তর দিচ্ছে। এরমধ্যে নূর কিছু একটা বলতে গিয়ে ফাতিহা কে ডাক দেয়,,,,তিহা শুনো।

নূরের তিহা ডাকে সৌন্দর্য আর ফাতিহার মাথায় যেনো বা/জ পরে। সৌন্দর্য হুট করে গাড়ি ব্রেক করে। হুট করে হওয়ায় নূর সামলাতে না পেরে ফাতিহা কে নিয়ে হেলে পরে। কপালে আঘাত পাওয়ার কথা থাকলেও সৌন্দর্য হাত বাড়িয়ে নূরের কপালের সামনে রাখায় ব্যাথা পাওয়া থেকে বেঁচে যায়।

নূর সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। সৌন্দর্য নূরের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার গাড়ি চালাতে থাকে আর বলে,,,নেক্সট টাইম ফাতিহা মাম কে তিহা বলবে না। আই নো ভালোবেসে বলেছো বাট কিছু কিছু জিনিস একজনের কাছে ভালোবাসার হলেও আরেকজনের কাছে কষ্টের কারণ। আই থিংক বুঝতে পেরেছো।

নূর চুপ করে শুধু তাকিয়ে ছিলো বুঝলো না তিহা ডাকের সাথে কষ্টের কি সম্পর্ক। নূর আর বেশি ঘাটায় ও নি আর না প্রশ্ন করার প্রয়োজন মনে করে।

এরমধ্যে একটা দোকানের সামনে সৌন্দর্য গাড়ি থামিয়ে রাখে। গাড়ি থেকে নামার সময় ফাতিহা জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছো?

এখনই আসছি মাম বলে সৌন্দর্য বড় বড় হাঁটা দিয়ে চলে যায়। কিছু সময়ের মাঝে ফিরেও আসে। হাতে অনেকগুলো প্যাকেট। গাড়ির ভিতরে ঢুকে সবগুলো প্যাকেট নূরের হাতে ধরিয়ে দেয়। নূর কিছু গাড়ির পিছনে রাখে আর কিছু ফাতিহার জন্য নেয়। যেই প্যাকেট টা নেয় এরমধ্যে হরলিক্স ও দেখতে পায়। ফাতিহা দেখে খুশি হয়ে যায় কারণ তার অনেক পছন্দ। নূরের হাত থেকে নিজেই নিয়ে নেয়। প্যাকেটে দুটো হরলিক্স ছিলো একটা ফাতিহা নিলো তাই নূর আরেকটা গাড়ির পিছনে রাখে পরে খাবে ফাতিহা এটা ভেবে। কিন্তু নূরের আর হরলিক্স রাখা হয়না সৌন্দর্যের কথায় আহাম্মক হয়ে যায়।

ওটা রাখছো কেনো? ওটা তোমার জন্য। স্মৃতি শক্তি যা দূর্বল ফাতিহার সাথে সাথে তুমিও খাও। ওটা তোমার।

নূর হরলিক্সের কৌটা নিয়ে চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে আছে কারণ ওটা বাচ্চাদের হরলিক্স। লোকটা কিনা সত্যি সত্যি তারজন্য হরলিক্স কিনেছে? তাও আবার বাচ্চাদের গুলো।

চলবে,,,,?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here