প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #অন্তিম_পর্ব

0
844

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#অন্তিম_পর্ব

সময় প্রবাহমমান। চোখের পলকে রাত পেরিয়ে সকালের সূর্য পূর্ব দিকে উঠে গেছে। চারিদিকে সোনালি আলোয় ছেয়ে গেছে। ফরাজী ভিলার প্রত্যেকটা মানুষ আজ ভীষণ ব্যস্ত‌ নানান কাজে। সাড়ে এগারোটা দিকে অতিথিরা আসবে তাই নেহা বেগম মেয়েকে নতুন একটা শাড়ি দিয়ে জলদি তৈরি হতে বলেছে। কিন্তু মেয়ের কোনো হেলদোল নেই সে এক ধ্যানে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে দিকে তাকিয়ে আছে। ইশার কোনো হেলদোল না দেখে নেহা বেগম ভ্রু কুচ করে বলে।

–কি রে? তোকে কিছু বলছি তো তাড়াতাড়ি রেডি হো সময় বয়ে যাচ্ছে। পরে অতিথিরা চলে আসলে একটা তাড়াহুড়ো শুরু হবে।

মায়ের কথা শুনেও ইশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নেহা বেগম মেয়ের এমন অবস্থা দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিচে চলে যান। নিচে গিয়ে কেয়া আর তীরকে পাঠায় ইশার কাছে।

কেয়া যখন তীরের কাছে থেকে ইশা আর রিফাতের ব্যাপারটা জানতে পারলো তখন থেকেই কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছে নিজের মাঝে। তীর কেয়ার অস্থিরতা দেখে বলে।

–ভাবি তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো তুমি এমনিতেই অসুস্থ।‌

–তুমি‌ বুঝতে পারছো না তীর যখন এই বিষয়টা বাড়ির সবাই জানবে তখন কি হবে?

–কিন্তু ইশান ভাইয়া তো সবটা জানে।

ইশা আর কেয়া দুজনেই তীরের দিকে বিস্মিত নয়নে তাকায়। তীর নিজের দু কাঁধ নাচিয়ে বলে।

–হুম ইশান ভাইয়া জানে তো।

কেয়া অবাক হয়ে বলে।

–তো ইশান কিচ্ছু বলে নি।

–বলেছে ওনি এসবের মাঝে নেই, যা করার রিফাত ভাইয়াকেই করতে হবে নাকি। যেহেতু রিফাত ভাইয়া সবটা গোপন করে রেখেছে তাই ইশান ভাইয়া রিফাত ভাইয়ার উপরে প্রচন্ড রেগে আছে।

ইশা এসব শুনেও কিচ্ছু না বলে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। কেয়া আর তীর ইশার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। তীর বিষন্ন মনে বলল।

–কি হবে ভাবি আজকে?

–জানি না আর তোমাকে এখন এসব কথা বলার কি দরকার ছিলো মেয়েটা এমনিতেই টেনশনে আছে আর তুমি দিলে‌ আরো টেনশন বাড়িয়ে।

–আমি বুঝতে পারে নি মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে।

এমন সময় ইশা ওয়াশরুমের দরজার টাস করে খুলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে শুরু করে। অন্য দিকে কেয়া আর তীর এক নজরে ইশার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে ইশার মনে ঠিক কি চলেছ। ইশা চুল আঁচড়িয়ে তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–ব্লাইজটা আর পেটিকোটট দে আমি পড়ে আসছি। তারপর ভাবি শাড়িটা পড়িয়ে দিবে।

তীর রোবটের ন্যায় চুপচাপ ইশার আদেশ পালন করলো। ইশা ওয়াশরুম থেকে চেইন্জ করে কেয়ার সামনে‌ এসে দাঁড়ায়। কেয়াও চুপচাপ সুন্দর করে শাড়ি পড়ানো শুরু করে। তীর ভয়ে ভয়ে ইশাকে বলে।

–রিফাত ভাইয়া কি আসবে আজকে?

ইশা ছোট্ট করে উত্তর দেয়।

–জানি না।

–ফোন দে একটা।

ইশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিচ থেকে শোরগোলের আওয়াজ ভেসে আসছে। কিন্তু এখনো তো অতিথিদের আসার সময় হয় নি আরো অনেকটা সময় বাকি আছে তাহলে এতো শোরগোল হওয়ার‌ কারণ কি? তীর কিচ্ছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে করিডোরে গিয়ে দাঁড়ায়। তীরের পেছন পেছন ইশা আর কেয়াও যায়। ইশা নিচের দিকে তাকিয়ে চমকে যায় সোফায় বসা ফর্মাল ড্রেস পড়া রিফাতকে দেখে। রিফাত যে এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবে এটা ভাবি নি। ইশা এবার তার পরিবারের সকল সদস্যদের দিকে তাকায়। সবার চেহারা দেখে এটা বুঝা যাচ্ছে তারা রিফাত আর রিফাতের বাবা-মাকে এমন একটা দিনে আসতে দেখে বড্ড অবাক হয়েছে। কিন্তু একজন বাদে সে হলো ইশান। ইশান অদূরে বুকে দু হাত গুজে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সোহেল ফরাজী রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে।

–রিফাত বাবা আজকে হঠাৎ এভাবে তোমার বাবা-মাকে‌ নিয়ে কিছু কি হয়েছে?

রিফাত চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে ইশানের দিকে কয়েক পালক তাকিয়ে সোহেল ফরাজী দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বুক ফুলিয়ে বলে।

–আঙ্কেল আজ আমি এখানে ইশানের বন্ধু হিসেবে আসি নি বরং অন্য এক কারণে এসেছি।

সোহেল ফরাজী অবাক হয়ে বলেন।

–অন্য কারণে মানে? কি কারণে এসেছো ঠিক বুঝলাম না?

রিফাতের বাবা আলমগীর সিকদার বলেন।

–আসলে ভাইসাব আপনি তো জানেন আমার একটা মাত্রই ছেলে। আর ছোট থেকেই ছেলের কোনো ইচ্ছে আমি অপূর্ণ রাখি নি। নিজের সাধ্যের ভেতরে যা চেয়েছে তাই দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমি ওকে। ঠিক গতরাত্রে ও‌ আমার কাছে এসে এমন একটা আবদার করলো যেটা আমার সাধ্যের বাইরে কিন্তু বাবা হিসেবে যদি আমি চেষ্টা করি তাহলে হয়তো আমি আমার ছেলেটার আবদার মেটাতে পারবো।

সোহেল ফরাজী মাথা নাড়িয়ে বলেন।

–আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন।

–আসলে… আমার ছেলে আপনার মেয়ে ইশাকে ভালোবাসে আর ইশাও আমার ছেলেকে ভালোবাসে। ওরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে।

পিনপিন নিরবতা বজায় করছে সারা ঘর জুড়ে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। সোহেল ফরাজী স্তব্ধ, বিমুঢ়। ঠোঁটের মধ্যস্থান ফাঁকা হয়ে আছে। এখনো দু কানের মাঝে আলমগীর সিকদারের বলা কথা গুলা বাজছে। আনমনেই অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে।

–কি?

আলমগীর সিকদার আবারো বলা শুরু করে।

–আমি জানি আপনার বিশ্বাস করতে একটু অসুবিধা হচ্ছে কিন্তু এটাই সত্যি। এখন আপনার হাতে সব কিছু নির্ভর করছে। আপনি আপনার মেয়েকে অন্য জায়গাতে বিয়ে দিতেই পারেন এটা আপনার অধিকার আছে। কিন্তু তাতে তিন তিনটে জীবন নষ্ট হবে। আপনার মেয়ে হয়তো আপনার ভয়ে বিয়ে করেও নিবে কিন্তু সে কি সুখী হবে মন থেকে। ওদের এই প্রনয়ের সম্পর্কটা যদি আপনি মেনে না নেন তাহলে আমি আমার ছেলেকে বুঝাবো যাতে করে ইশার জীবন থেকে সে সরে যায়। কিন্তু এটা ভেবে তো নিজেকে সান্ত্বনা দিবো আমি আমার ছেলের জন্য সব রকম চেষ্টা করেছি।

রিফাত চমকে বাবার পানে তাকায়। তার বাবা এসব কি বলছে? সে সরে যাবে মানে কিছুতেই সে ইশার জীবন থেকে সরে যাবে না কিছুতেই না। যদি সরে যেতেই হয় তাহলে একমাত্র রিফাতের মরণেই ইশার জীবন থেকে রিফাতকে সরাতে পারবে তার আগে নয়।

সোহেল ফরাজী দু হাত এক সাথে করে চুপচাপ বসে আছেন। এই চুপচাপ বসে থাকাটা হয়তো ঝড় আসার পূর্বাভাস। মেয়ে যে তার এত্ত বড়ো হয়ে গেছে এটা আসলেই‌ বুঝতেই পারেন নি ওনি। সোহেল ফরাজী ইশানের দিকে তাকিয়ে বলেন।

–কিছু বলবে না ইশান তুমি!

রিফাত ইশানের দিকে তাকায় ইশান কি বলে তা শুনার জন্য।‌ইশানের চোখে মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে অভিমানের চাপ। এই অভিমানটা যে ওর উপরে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে রিফাত। ইশান রিফাতের দিক থেকে নজর সরিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে।

–নাহ আমার কিছু বলার নেই। আপনি যা সিদ্ধান্ত নিবেন সেটাই আমি মেনে নিবো।

সোহেল ফরাজী হঠাৎ করে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ইশাকে ডাকতে থাকে। সোহেল ফরাজীর দাঁড়ানো থেকে বাকি সকলেই দাঁড়িয়ে পড়েন। বাবার এমন হুংকার শুনে ইশা ভয়ে কেঁপে উঠে। এতক্ষণ আড়াল থেকে সবটা দেখেছে আর শুনেছে সে। বাবা যে ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে এটা ইশা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তার। সে নিচে যাবে না মনে মনে ঠিক করে রেখেছে। কিন্তু তা আর হলো না বাবার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বাধ্য হয়ে নিচে নামালো মাথা নিচু করে। ইশার পেছন পেছন কেয়া আর তীরও এসেছে। ইশাকে দুরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোহেল ফরাজী গম্ভীর গলায় বলেন।

–আমার সামনে এসে দাঁড়াও।

নেহা বেগম স্বামীর রাগ দেখে ইশারা করে‌ ইহানকে‌ কিছু বলার জন্য। ইহানেও মায়ের ইশারা বুঝতে পেরে বাবাকে বলে।

–বাবা তুমি এতো উত্তে”জিত হলে শরীর…

সোহেল ফরাজী ছেলেকে থামিয়ে দিয়ে বলে।

–আমাদের বাবা মেয়েরে মাঝে তুমি এসো না ইহান। যা কথা হবে ইশা আর আমার মাঝে। আমার সামনে এসে দাঁড়াও ইশা জলদি।

ইশা গুটিগুটি পায়ে বাবার সামনে এসে দাঁড়ায় কিন্তু নজর তার নিচু, চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। বুক কাঁপছে। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সোহেল ফরাজী মেয়ের উদ্দেশ্যে বলেন।

–ওনারা যা বলেছেন একটু আগে তা কি সব সত্য।

ইশা ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে গলা‌ শুকিয়ে গেছে। কথা বলার শক্তি টুকু পাচ্ছে না। মেয়েকে নিরব থাকতে দেখে সোহেল ফরাজী বলেন।

–কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন? বাবা তোমাকে কিছু প্রশ্ন করেছে তো!

ইশা এবার বাবার ধমক‌ শুনে ভয়ে মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বুঝায়। রিফাত ইশার উত্তর পাওয়া দেখে‌ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। ভেবেছিলো ইশা হয়তো ভয়ে সবটা অস্বীকার করবে কিন্তু না সবটা স্বীকার করলো।‌ সোহেল ফরাজী পুনরায় বলেন।

–মুখে বলো।

ইশা ঢোক গিলে আড়‌ চোখে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে।

–হুম।

–তাহলে কালকে যখন তোমার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলাম তোমার বিয়ের বিষয়ে তখন তুমি এই‌ কথাটা বললে না কেন?

ইশা ভয়ে এবার কেঁদে বলে উঠে।

–আমি ভয়ে কিছু বলতে পারি নি তোমাকে।

সোহেল ফরাজী মেয়ের কান্নামিশ্রিত কন্ঠ শুনে গলার স্বর নরম করে বলেন।

–এতোটা অবিশ্বাস করো বাবাকে যে মনের কথাটাও বলতে পারো নি ভয়ে। একটুও ভরসা নেই বাবার উপরে তাই না।

ইশা ছলছল নয়নে বাবার দিকে তাকায়। ইশার পাশাপাশি বাকিরাও অদ্ভুত দৃষ্টিতে সোহেল ফরাজীর দিকে তাকায়। এতক্ষণ যে রাগে বোম হয়ে ছিলো তার কন্ঠ হঠাৎ করে এতোটা নরম হয়ে যাওয়াতে সবাই‌ অবাক হয়ে যায়। সোহেল ফরাজী মুচকি হেসে বলে।

–বাবা এতোটাও খারাপ না যে মেয়ের ইচ্ছে, অনিচ্ছার কোনো গুরুত্ব দিবে না। তবে প্রথমে এই কথাটা শুনে একটু রাগ হয়ে ছিলো কারণ গতকাল রাতে তুমি আমাকে এই কথাটা যদি বলতে তাহলে আমি তোমার বিয়ের ব্যাপারটা এতোটাও এগিয়ে নিতাম না। আমাকে নাই বলতে পারতে কিন্তু মাকে তো কথাটা বলতে পারতে কিংবা অন্য কেউকে।

ইশা নিচু স্বরে বলে।

–সরি বাবা! আমি বুঝতে পারে নি।

সোহেল ফরাজী মেয়ের কাছে এসে মেয়ের চোখের জল মুজে দিয়ে বলে।

–এই‌ চোখের জলটা জমিয়ে রেখো যখন তোমার বিয়ে হয়ে এই বাড়ি থেকে পর হয়ে যাবে তখন না হয় প্রাণ ভরে কেঁদো।

ইশা বাবার কথাটা শুনে বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কান্না শুরু করে দেয়। সোহেল ফরাজী খুব ভালো করেই জানেন রিফাতের সাথে যদি ইশার বিয়ে হয় তাহলে রিফাত ইশাকে সুখে রাখবে। রিফাতকে ওনি অনেক বছর ধরে চেনেন তাই এতো টুকু বিশ্বাস আছে ওনার রিফাতের উপরে। সোহেল ফরাজী মেয়েকে ওনার বুক থেকে সরিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলেন।

–ওকে ভেতরে নিয়ে যাও।

নেহা বেগম মেয়েকে নিয়ে ভেতরে চলে যান। সোহেল ফরাজী সোফায় বসে রিফাতের বাবার উদ্দেশ্যে বলেন।

–বসুন। আর একটু আগের ব্যবহারের জন্য আমি ক্ষমা চাইছি।

–না না এসব কি বলছেন মেয়রে বাবা হিসেবে আপনার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক।

সোহেল ফরাজী আলমগীর সিকদারের কথা শুনে মুচকি হেসে ইশানকে বলেন।

–যাদের আসার কথা তাদের ফোন করে বারণ করো না আসার জন্য। আর কারণ জানতে চাইলে বলবে মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

রিফাত সোহেল ফরাজীর কথা শুনে চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। এতক্ষণ মনে হচ্ছিলো ধম আটকে ম’রে’ই যাবে। সোহেল ফরাজীর কথাবার্তা শুনে রিফাত এতোটুকু বুঝতে পেরেছে তাদের দু জনের সম্পর্কটা মেনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতো সহজে যে সব কিছু হয়ে যাবে এটা রিফাত কল্পনা করতে পারে নি। রিফাত সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে ইশান বাইরে যাচ্ছে।‌ রিফাতও বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ইশানের পিছন পিছন যায়।

এদিকে তীর ইশাকে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে।

–ইশুরে আমি খুব খুশি তোর আর রিফাত ভাইয়ার বিয়ে ফাইনাল। আমি তো কল্পনাই করতে পারছি না বাবা যে এতো সহজে রাজি হয়ে যাবেন।

ইশা তীরের কথা শুনে মুচকি হাসে। তীর ইশার হাসি দেখে ইশার থুতনিতে হাত রেখে বলে।

–যাক এতক্ষণে আমাদের নববধূর মুখে হাসি ফুটলো। গতকাল থেকে তো অমাবস্যা লেগে ছিলো এই চাঁদ মুখে এখন সেই অমাবস্যা কেটে গেছে।

_______

ইশান ফোনে কথা বলে ঘুরতেই রিফাতকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে যায়। ইশান কিচ্ছু না বলে আবরো উল্টো দিকে ফিরে যায়। রিফাত চুপচাপ ইশানের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে বলে।

–সরি।

–শেষমেষ তাহলে আমাকে সত্যি সত্যি শালা বানিয়েই ছাড়লি।

–রেগে আছিস আমার উপরে।

ইশান নিঃশব্দে হেসে বলে।

–তুই বল রাগ করাটা কি আমার উচিত তোর উপরে।

–বিশ্বাস কর আমি প্রথম দিকে অনেক চেষ্টা করেছি নিজেকে ইশার কাছে থেকে দুরে দুরে রাখার কিন্তু আমি হাজার চেষ্টা করেও পারি নি। সবসময় নিজেকে মনে করিয়ে দিতাম ও আমার বন্ধুর বোন, বন্ধুর বোনের সাথে এমন….

রিফাতকে থামিয়ে দিয়ে ইশান বলে।

–তুই কি ভেবেছিস আমি কিচ্ছু বুঝতে পারবো না। আমার চোখের সামনে আমার বোনের সাথে প্রেম করছিস আর আমি টের পাবো না এটা তুই‌ ভাবলি কি করে?

রিফাত ভ্রু কুচকে বলে।

–তার মানে তুই প্রথম থেকেই জানতি।

–হুম জানতাম।

–তো এখন তুই কি চাস?

–আমি চাই‌ আমার বোনটা সুখে থাকুক। সারা জীবন হাসিখুশি থাকুক। কখন যেন কোনো দুঃখে তার মনে আছড় না কাটতে পারে।

–তো এই দায়িত্বটা কি‌ আমাকে দেওয়া যায়।

ইশান এবার শব্দ করে হেসে বলে।

–দায়িত্বটা আমি দেওয়ার আগেই তুই‌‌‌ নিজে থেকেই‌‌ নিয়ে নিয়েছিস।

–এই দায়িত্বটা আমি সারা জীবন পালন করবো। কখন কষ্ট দিবো না তোর আদরের বোনকে সবসময় আগলে রাখবো এই বুকের মাঝে।

–বিশ্বাস আছে তোর উপরে আমার।

_______

দেখতে দেখতে রিফাত আর ইশার বিয়েটা হয়ে গেলো। আজ থেকে আইনের খাতায় আর শরীয়ত মোতাবেক রিফাত আর ইশা স্বামী স্ত্রী।

ইশা ফুল দিয়ে সাজানো খাটে বসে আছে লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে আর তার সামনে বসে আছে রিফাত তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে। মূলত রিফাতে‌র এমন চাওনি দেখে ইশা লজ্জায় মরে যাচ্ছে। ইশা আর সহ্য করতে না পেরে দু হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয়। রিফাত বিরক্তিতে মুখ দিয়ে “চ” জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে বলে।

–কি হলো মুখটা ঢেকে নিলে কেন দেখছিলাম তো আমি!

–আর দেখতে হবে না আপনাকে।

–কেন আমার বউয়ের মুখ আমি দেখবো এতে তুমি বাধা দেওয়ার কে শুনি?

–আমার লজ্জা লাগছে আপনি এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না প্লিজ।

রিফাত মুচকি হেসে ইশাকে কোমল স্বরে ডাকে।

–ইশা।

–হুম।

–হাতটা সরাও মুখ থেকে।

ইশা চুপচাপ‌ মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয় কিন্তু দৃষ্টি তার নিচে। রিফাত আচমকা ইশাকে জড়িয়ে ধরে বলে।

–আই লাভ ইউ ইশা। খুব ভালোবাসি তোমাকে।

ইশা মুচকি হেসে রিফাতের পিটে হাত রেখে বলে।

–হুম।

রিফাত ইশার মুখে শুধু হুম শুনে রাগী গলায় বলে।

–হুম কি! তুমিও বলো।

–কি বলবো?

–একটু আগে যা বললাম সেটা।

–আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি মিস্টার রিফাত সিকদার।

ইশার মুখে ভালোবাসি কথা শুনে রিফাত আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইশার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। হয়তো আজ রাতটা হবে তাদের জীবনের এক সুন্দরতম রাত।

______

তিন বছর পর……

তীর দুই আড়াই বছরের বাচ্চা একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে খেলা করছে। হঠাৎ করেই তীরের লম্বা চুলগুলা ধরে ফেলে বাচ্চা মেয়েটি আর তীর চিৎকার করে চুল গুলা ছাড়ানো চেষ্টা করছে। কেয়া এই দুজনের কান্ড দেখে দৌঁড়ে এসে বাচ্চা মেয়েটির হাতের মুঠো থেকে চুল গুলা ছাড়িয়ে নেয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না কয়েকটা চুল বাচ্চা মেয়েটি‌ ছিঁড়ে নিয়েছে। তীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে।

–ভাবি দেখেছো তোমার দুষ্টু মেয়েটা আমার সব গুলা চুল ছিঁড়ে ফেলেছে।

কেয়া হাসতে হাসতে নিজেরে মেয়েকে বলে।

–তুবা সোনা চাচিকে বলে দাও তো এই‌ কথাটা যে চাচি ডাক শুনতে হলে একটু আধটু কষ্ট করতেই হবে।

ইশা তুবার মাথায় হাত রেখে বলে।

–তোমার চুল উঠুক আগে তারপর আমি আমার নিষ্পাপ চুল গুলা ছিঁড়ে ফেলার জন্য তোমার চুল গুলার থেকে প্রতিশোধ নিবো।

তুবা কি বুঝলো কে জানে সে তীরের কথা শুনে হেসে উঠলো। তীর তুবার হাসি দেখে বলে।

–দেখেছো ভাবি তোমার মেয়ে কতটা চালাক এটা যে আমি মজা করে বলেছি সেটা ঠিক বুঝে ফেলেছে। ঠিক আছে আমি আর পঁচা তুবাকে আদর করবো না আমি চললাম থাকো তুমি একা একা।

বলেই তুবার নরম গালে চুমু দিয়ে কেয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। ঘরে ঢুকে দেখে ইশান ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। ইশান ল্যাপটপে নজর রেখে বলে।

–কোথায় ছিলি এতক্ষণ?

–তুবার কাছে।

–ওও।

তীর কিছু একটা ভেবে আস্তে আস্তে ইশানের গা ঘেঁষে বসে। ইশান তীরের এমন আচরণ দেখে বলে।

–কি হয়েছে?

তীর মেকি হাসি দিয়ে বলে।

–একটা কথা বলি আপনাকে।

–বল শুনি।

–আপনি রাগ করবেন না তো।

–তোর কথার উপরে আমার সম্পূর্ণ রাগটা ডিপেন্ড করছে।

তীর হঠাৎ করেই‌ রেগে বলে।

–আপনি এমন কেন বলুন তো? কোথায় বলবেন না রাগ করবো না বল কি বলব, তা না করে তোর কথার উপরে আমার রাগটা ডিপেন্ড করছে। ঠিক আছে শুনতে হবে না আপনাকে আমার কথা।

তীর‌ উঠে চলে যেতে নিলে‌ ইশান তীরের হাত ধরে নিজের‌ কোলে‌ বসিয়ে তীরের কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে।

–আচ্ছা সরি রাগ করবো না এবার বল‌ কি বলবি।

তীর ইশানের গলার কাছটায় শার্টের বোতাম খুলছে আর লাগছে কোনো কথা না বলে। বলবে কি করে তীরের তো লজ্জা লাগছে কথাটা বলতে। ইশান তীরের কর্ম কান্ড দেখে ভ্রু কুচকে বলে।

–কি হলো বল কি বলবি?

–আমার না…

ইশান আগ্রহ নিয়ে বলে।

–হুম তোর।

–আমার না একটা ছোট্ট বাবু চাই।

তীর এবার নিজের লজ্জা শরমে মাথা খেয়ে বলেই দিলো কথাটা চোখ বন্ধ করে। কিন্তু অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে ইশানের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তীর এক চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে ইশান অদ্ভুদ নয়নে তীরের দিকে তাকিয়ে আছে। তীর ইশানের চাওনি দেখে ঢোক গিলে বলে।

–একদম বকাবকি করবেন না আমাকে। আমার এই‌ কথাটা বলতে ইচ্ছে হয়েছে তাই বলেছি তাই বলে এভাবে তাকানোর কি আছে আজব।

ইশান নরম স্বরে বলে।

–আরেকটু বড় হো তারপর বাবু নিয়ে ভাববো আমরা।

–আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি। আর ইশাও তো আমার বয়সী তাহলে ও কি করে….

–ওরটা এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে।

তীর এবার বাচ্চাদের মতো করে ইশানের কলার ধরে বলে।

–প্লিজ এমন করবেন না আমার একটা ছোট্ট বাবু‌ চাই। যেই বাবুটা সর্বক্ষণ আমার পাশে থাকবে আমাকে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিবে।

ইশান তীরের কথা গুলা মনযোগ দিয়ে শুনলো। ইশানেরও ইচ্ছে হয় বাবা ডাক শুনতে কিন্তু তীরের বয়সের কথা চিন্তা করে এগোতে পারে নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এগোনো দরকার। যেহেতু তীর‌ চায় এখন তাহলে ইশান এটা কি করে ফিরিয়ে দেবে। তারও বয়স হয়েছে আরো কয়েক বছর অপেক্ষা করলে তো‌ সে বুড়ো হয়ে যাবে। ইশান তীরের গালে হাত রেখে নেশাক্ত কন্ঠে বলে।

–ঠিক আছে।

তীর অবুঝের মতো বলে।

–কি ঠিক আছে?

–বাচ্চা নেওয়ার জন্য প্রেসেস তাহলে শুরু করা যাক। আজ থেকে তাহলে পিল গুলা খাবি না।

ইশানের কথা শুনে তীরের গাল দুটো লাল হয়ে যায় লজ্জায়। ইশান তীরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তীরকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় আর লাইট অফ করে তীরের পাশে এসে বসে তীরের গালে হাত রাখে। তীর আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে‌ নেয়। প্রত্যেক বারের মতো আবারো তারা দুজনে মেতে উঠবে এক পবিত্র ভালোবাসার জুয়ারে। হয়তো এই ভালোবাসা থেকে নতুন কিছুর সূচনা ঘটবে আগামী দিনে।

——–সমাপ্ত——–

ছয় মাসের জার্নি আজ শেষ হলো এখানে। এই ছয় মাসের জার্নিতে ভুলত্রুটি হয়েছে হয়তো আমার দ্বারা তার জন্য সরি। আর গল্পটা এতোটাও সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পেরে নি আমি কিন্তু তারপরও এতদিন যারা আমার পাশে ছয় মাস ছিলেন তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর যারা সাইলেন্ট পাঠক-পাঠিকারা আছেন তারা প্লিজ একটু উঁকি দিবেন। সবাই ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here