প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_৩০ (ভালোবাসার স্বীকারোক্তি)

0
279

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩০ (ভালোবাসার স্বীকারোক্তি)

–ছাড়ুন আমায়! আমার হাতে লাগছে।

এই কথাটা শুনে ইশান তীরের বাহু আরো জোরে চেপে ধরে বলে।

–আগে বল ছেলেটা কে? তারপর ছাড়াছাড়ি।

তীর রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে, নাকের পাটা ফুলিয়ে নিজের শরীরের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে ইশানের হাতটা নিজের বাহু থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে।

–ও যেই হোক তাতে আপনার কি হুম? আপনার এত কিসের ইন্টারেস্ট ও কে জানার জন্য?

ইশান আবারও তীরের বাহু ধরে নিজের কাছে এনে রাগী কন্ঠে বলে।

–আমারেই সব কারন আমি তোকে ভা…

ভালোবাসি কথাটা বলতে গিয়েও থেমে যায় ইশান। ভালোবাসি কথাটা বলতে গেলেই কেন যেন বলতে পেরে না। মনের ভেতরে যেন কিসের একটা জড়তা কাজ করে বারবার। সেই জড়তাটা কি আহমেদ পরিবার আর ফরাজী পরিবারের সুন্দর একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার কারন নাকি দুজনের বয়সের এত ডিফারেন্স। কোনটা? অন্য দিকে তীর উৎসুক নয়নে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে।

–কি হলো বলুন থেমে গেলেন কেন? আমাকে আপনি কি বলুন?

ইশান তীরের বাহু ছেড়ে অন্য দিকে ফিরে বলে।

–কিছু না আর এতটাও অবুঝ নোস তুই। বুঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে তোর?

তীর অনেকটা রেগে গিয়ে ইশানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে।

–নাহ আমার বুঝার বয়স হয় নি। আমি অনেক অবুঝ। আমাকে বুঝিয়ে বলুন তাহলে আমি বুঝবো। আপনি বলুন না কি বলতে চেয়ে ছিলেন শেষে।

শেষের কথাটা অনেকটা কোমল স্বরে বলে তীর।

–সব কিছু মুখে বলতে হয় না কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। শুনেছি মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নাকি অনেক প্রখর হয় তাহলে তোর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এতটা দুর্বল কেন?

তীর ইশানের কথা শুনে শব্দ করে হেসে বলে।

–ঠিকেই বলেছেন মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুবই প্রখর। তাই তো বুঝতে পারছি আপনি হিংসায় জ্বলে যাচ্ছেন। আপনার চোখে মুখে হিংসার চাপ স্পষ্ট ফুটে উঠছে।‌ আচ্ছা সকালের ছেলেটা আমার হাত ধরার জন্য কি আপনার হিংসা হচ্ছে। কিন্তু আমি তো শুনেছে ছেলেরা কোনো মেয়েকে ভালোবাসলে সেই মেয়ের ক্ষেএে ছেলেটা হিংসা পরায়ণ হয়। কিন্তু আপনি তো আর আমায় ভালো টালো বাসেন না। তাই ছেলেটা আমার হাত ধরুক বা জড়িয়ে ধরুক তাতে আপনার কি? আপনার তো কোনো যা….

এতক্ষন চোখ বুজে তীরের প্রত্যেকটা কথা শুনছিলো ইশান। কিন্তু এক পর্যায়ে ইশান তীরের বলা কথা গুলা সহ্য করতে না পেরে তীরের কথার মাঝেই ওর বাহু ধরে নিজের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–আমার যায় আসে কারন “আমি তোকে ভালোবাসি”। আর রইলো হিংসে হওয়ার কথা হে আমার হিংসে হয় তোর আশেপাশে কোনো ছেলেকে দেখলে আমার হিংসে হয় ভীষন হিংসে হয়। তাই ওই ছেলের থেকে দুরে দুরে থাকবি। শুধু ওই ছেলের থেকে কেন পৃথিবীর সমস্ত ছেলের থেকে দুরে দুরে থাকবি বুঝেছিস আমার কথা।

তীরের অধরের কোণে মুদৃ হাসি ফুটে উঠে। অ্যাট লাস্ট ইশানের মুখ থেকে ম্যাজিকেল তিনটা ওয়ার্ড শুনতে পেলো। এই ম্যাজিকেল তিনটা ওয়ার্ড ইশানের মুখ থেকে শুনতে পেয়ে যেন নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। তীর বলে।

–কত দিন লাগলো এই তিনটে শব্দ বলার জন্য? না কত দিন না কত বছর লাগলো এই তিনটে শব্দ মুখ ফুটে বলার জন্য?

ইশান যেন এতক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলো তীরের কন্ঠস্বর শুনে নিজের সম্মতি ফিরে পেতেই ওর কাছ থেকে ছিটকে দুরে সরে দাঁড়ায়। রাগের বশে মুখ ফসকে ভালোবাসি কথাটা বলে দিলো তীরকে। এবার কি হবে? অন্য দিকে তীর আবার বলে উঠে।

–কি হলো চুপ করে আছেন কেন? উত্তর দিন আমাকে।

–আমি তোর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।

–অব্যশই আপনি বাধ্য। যাকে ভালোবাসেন তাকে তার সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য আপনি।

ইশান তীরের দিকে ফিরে তাকায়। কথা কাটানোর জন্য উল্টে তীরকে প্রশ্ন করে।

–আগে বল ছেলেটা কে? তারপর তোর সকল প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি।

ইশানের কথা শুনে আচমকা হেসে দেয় তীর। তীরকে এভাবে হাসতে দেখে ইশান ভ্রু-কুচকে বলে।

–এভাবে হাসচ্ছিল কেন? ভুতে টুতে ধরলো নাকি আবার।

–ভুতে ধরে নি আমাকে আসলে আপনার বোকামির জন্য আমার হাসি পাচ্ছে। আপনি আসলে একটা বোকা।

ইশান হতভম্ব হয়ে বলে।

–কি আমি বোকা?

–তা নয়তো কি! চালাক যদি হতেন তাহলে তো আমাদের অভিনয় ধরে ফেলতেন।

ইশান কিছুটা তোতলিয়ে বলে।

–অ… অভিনয়! কিসের অভিনয়?

–এই যে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সবটাই অভিনয় আপনার মুখ থেকে ভালোবাসার কথাটা বের করার জন্য।

–মানে!

–মানেটা হলো সকালের ছেলেটা হলো রাহুল। যাকে দেখে আপনি হিংসায় জ্বলেপোড়ে যাচ্ছেন। আর ছাদে এসে যা যা আ‌মাকে বলতে শুনেছে ওই গুলা একাই বলেছি যেগুলা ইশা নোট করে দিয়েছিলো। কিন্তু এত কিছু করার মাঝে আমার নিরীহ অবলা ফোনটাকে আপনি হত্যা করে দিলেন। যেখানে বেচারার কোনো দোষেই নেই। আপনি জানেন এই ফোনটা কিনার জন্য আমাকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে বাবা মাকে রাজি করানোর জন্য।

তীরের কথা শুনে ইশান যেন আকাশ থেকে পড়লো। অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে আছে তীরের দিকে হা হয়ে। নিজেকে আসলেই খুব বোকা বোকা লাগছে। এই তিনটে পুচঁকে মিলে তাকে এত্ত বড় গোল খাওয়ালো মানে ভাবা যায়। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে ইশান তারপরও বলে।

–তোদের পেটে পেট এতো।

–আমাদের পেটে আরো অনেক কিছু আছে বুঝলেন।

ইশান চোখ বড় বড় করে বলো।

–আরো আছে! তা আর কি কি আছে তোদের পেটে।

–সেটা আপনার জেনে এখন আর লাভ নেই।

বলেই নিচে পড়ে থাকা ভাঙ্গা ফোনটা তুলে নিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করে। ইশান তা দেখে তীরের কাছ থেকে ফোনট কেঁড়ে নিয়ে বলে।

–আমি দেখছি।

–দেখে আর কোনো লাভ নেই ফোনের ডিসপ্লে হয়তো চলে গেছে।

ইশান ফোনটা চেক করে দেখে আসলেই দেখে ফোনের ডিসপ্লে চলে গেছে। ইশান অনুতপ্ত বোধ করে। এতোটা রেগে যাওয়া উচিত হয় নি। ক্ষমাসরুপ চোখে তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–সরি আমি আসলে এমনটা করতে চাই নি। রাগে বশে কিভাবে যে এমনটা হয়ে গেল।

–সমস্যা নেই! কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয় এটাই নিয়ম।

–তাই! কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয়।

–হুম।

ইশানের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। তীরের ভাঙ্গা ফোনটা নিজের প্যান্টের পকেটে ডুকিয়ে দু’হাত বুকে গুজে বলে।

–তা কি পেয়েছিস?

তীরও সাত পাঁচ না ভেবে মুখের উপর ঠাস করে বলে দিলো।

–এই তো আপনাকে পেয়েছি আর আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে পেয়েছি।

কথাটা বলেই তীর নিজের মুখ দু’হাত দ্বারা চেঁপে ধরে। চোখ দুটো বড় বড় করে ইশানের দিকে তাকায়। আঁখি পল্লব’দ্বয় বার কয়েকবার ঝাপ্টায়। কি বলতে কি বলে দিলো? এবার ইশান কি ভাববে? ইস! কি লজ্জার বিষয়। পালাতে হবে এখান থেকে এক্ষুনি ইশান কিছু বলার আগেই। ইশান যেন তীরের মতিগতি বুঝতে পেরে গেছে আগে ভাগেই তাই তীর যখনেই ঘুরে দৌঁড় দিতে যাবে সাথে সাথে ইশান তীরের হাত খপ করে ধরে ফেলে। অন্য দিকে তীর ইশানের হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ দুটো ঝাপ্টে বন্ধ করে নেয় লজ্জা আর ভয়ে। ইশান তীরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গভীর স্বরে ডাক দেয়।

–তীর!

বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠে তীরের আবারও সেই ডাক যেই ডাকটা শুনলে তীরের ছোট্ট কিশোরী হৃদয়টা যেন চঞ্চলে পরিণত হয়ে যায়। রক্ত চলাচলের গতি ক্রমশ বেড়ে যায়। ইশান পুনরায় বলে।

–তাকা আমার দিকে।।

তীর ধীরে ধীরে মাথা তুলে ইশানের দিকে তাকালো চোখে চোখ মিলতেই শিহরণ বয়ে গেল সারা সর্বাঙ্গ জুড়ে। ইশানের শীতল চাওনির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না তীর বেশিক্ষণ সাথে সাথে মাথা আবার নত করে ফেললো। কন্ঠনালি কাঁপছে কথা বললে কি কথা আটকে আসবে নাকি। কিন্তু তারপরও তীর নিজেকে সামলে রেখে ঢোক গিলে সরু কন্ঠে বলে।

–ঘরে যাবো।

ইশানের কন্ঠ স্বর আধার রাত্রির থেকে গভীর শুনা গেল যেন।

–পরে যাস। আগে আমার একটা কথা রাখবি এই মুহূর্তে।

ইশানের কথা শুনে তীরের শিড়দাঁড়া বেয়ে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যায়। কি বলবে ইশান কি রিকোয়েস্ট করবে যা এই মুহূর্তে রাখতে হবে? অজানা ভয় কাজ করছে তীরের মনে। চলে যেতেও পারছে না ইশান হাতটা ধরে রেখেছে বলে। তীর বাধ্য হয়ে মাথা উপর নিচ করে বুঝায় যে সে ইশানের কথা রাখবে।

ইশান আকুতি ভরা কন্ঠে বলে।

–তোকে একবার জড়িয়ে ধরতে দিবি। শুধু একবার।

তীরের পেট মোচর দিয়ে উঠে ইশানের এমন দ্বারা কথা শুনে। বুকের ভেতরের রঙিন প্রজাপতিরা জেগে উঠছে। শ্বাস প্রশ্বাসের গতি ঘন হয়ে আসছে ক্রমশ। তার কি হাপানি রোগ আছে নাকি যে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। না হলে হাপানিতে নিশ্চিত মারা যাবে।

অন্য দিকে ইশানকে খুব অধৈর্য লাগছে। প্রেয়সীর উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু প্রেয়সী তো কিছুই বলছে না। ইশান নজর বন্দী করলো প্রেয়সীর মায়বী মুখপানে। শুকনো ঢোক গিললো ইশান। চাঁদের আলোতে তীরের মুখটা খুবেই আবেদনময়ী লাগছে। ইশান নিচের অধর কামড়ে ধরে আশপাশটায় তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আচমকা তীরের চিকন কোমড়ে নিজের পেশিবহুল হাত রেখে নিজের কাছে টেনে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

আচমকা এমন হওয়াতে তীর বড় বড় চোখ করে তাকায়। শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে। বিন্দু পরিমাণ শক্তি পাচ্ছে না দাঁড়িয়ে থাকার। ইশান যদি তাকে ছেড়ে দেয় তাহলে নিশ্চিত নিচে পড়ে যাবে।

তীরের ডান কান গিয়ে ঢেকে ইশানের বুকের বা পাশটা। ইশানের প্রত্যেকটা হৃদস্পন্দনের শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। তীরের কচি মন তাতে থরথর করে কেঁপে উঠে। ইশানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে ইশান তীরের কোমড়ে রাখা হাতের বন্ধন আরো দীর্ঘ করে নেয়। এক পর্যায়ে তীর ইশানের কাছে হার মেনে ইশানের বুকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ইশানের হৃদস্পন্দনের শব্দ গুলা গভীর ভাবে অনুভব করছে। মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর সকল সুখের উৎস ইশানের এই‌ চাওড়া বুকে।

তীরের ছটপটানি কমতে দেখে ইশানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটে উঠে। এতো বছরের আকাঙ্ক্ষা যেন পূরণ হলো ইশানের প্রেয়সীকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে। ইশানের তুলনায় তীর অনেকটাই খাটো যার কারনে ইশানকে অনেকটা ঝুকেই তীরকে জড়িয়ে ধরতে হয়েছে। এত বড় ইশানের বুকের উপর পড়ে থাকা তীরকে যেন দেখাই যাচ্ছে না। ইশানের তো ইচ্ছে করছে প্রিয়তমাকে নিজের মনের গহীনে বন্দী করে রাখতে। যাতে আর দুরে সড়ে যেতে না পারে।

#চলবে________

এই ৩০ নং পার্টটা আমি দু দু’বার লিখছি তাও আবার অসুস্থ শরীর নিয়ে। গতকাল রাতে 1200+ শব্দ লিখার পর কপি করতে গিয়ে দিলাম ডিলেট করে। তখন এতটা মন খারাপ হইছিলো যা বলার বাহিরে। কিন্তু পরে ভাবলাম যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন আর আফসোস করে লাভ নাই। আর আপনারা সকলেই অপেক্ষা করবেন আজকে গল্পের জন্য তাই আজকে সারাদিনে 1400+ শব্দ লিখলাম। জানি কিছুটা গোছালো হয়েছে পর্বটা তার জন্য কেউ কিছু মনে করবেন না প্লিজ। আর আমার জন্য দোয়া করবেন যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই। হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here