#ফিরে_আসা
৩৮+৩৯
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ
বিকেলের এই সময়টা অদ্ভুত সুন্দর। সূর্যের তীব্রতা কমে আসে, আকাশে নাম না জানা পাখির ঝাঁক উড়ে বেড়ায়, মিষ্টি একটা বাতাস অনুভূত হয়। আরশাদের বাড়ির বিশাল বাগানে ঘাসের ওপর বসে আছে সে। তার কোলে কথা। মলিন সূর্যটার আলো এসে পড়েছে তার মুখের ওপরে। মেয়েটাকে আজ সত্যিই প্রিন্সেসদের মতো লাগছে। কথা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। তার দৃষ্টি আকাশে উড়ন্ত এক ঝাঁক পাখির দিকে আবদ্ধ।
কথা হঠাৎ কী যেন মনে করে কৌতূহলী গলায় বলল, “আচ্ছা বাবা? আমি উড়তে পারি না কেন?”
আরশাদ স্বাভাবিকভাবে বলল, “কোথায় উড়তে পারিস না? প্লেনে তো ঠিকই উড়ে বেড়াস।”
কথা ভ্রু কুঁচকে বলল, “ধুর! ওটা উড়া হলো না-কি? আমি তো পাখিদের মতো উড়তে চাই।”
“কিন্তু আমরা তো পাখিদের মতো উড়তে পারবো না বাবা।”
“কেন?”
আরশাদ কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে বলল, “কারণ আমাদের ডানা নেই।”
“আমার ডানা থাকলে কি আমিও পাখিদের মতো উড়তে পারতাম?”
“পারতি তো।”
“ইশ! আমি পাখি হলে কত ভালো হতো।”
আরশাদ সুন্দর করে বুঝিয়ে বলল, “পাখি উড়তে পারলেও মানুষের ক্ষমতা তার থেকে অনেক বেশি। পাখি হলে বলতি, ইশ! আমি যদি মানুষ হতাম! মানুষ এমন অনেক কিছু পারে যা পাখি পারে না।”
“তাই? মানুষ কী কী পারে বাবা?”
“সেটা জানতে হলে তো তোকে আগে বড় হতে হবে।”
“আমি কবে বড় হবো? কালকে?”
কথার এমন প্রশ্নে হেসে ফেলল আরশাদ। তাকে সচরাচর হাসতে দেখা যায় না। গেলেও সেই হাসিগুলো হয় না প্রকৃত হাসি। তবে কথাকে পেলে তার ঠোঁটে এমন হাসি ফুটে উঠতে বাধ্য।
এরই মাঝে বাগানে আগমন ঘটলো অরার। তার হাতে একটা ট্রে। ট্রেতে তার এবং আরশাদের জন্যে কফি, আর কথার জন্যে মিল্কশেক। অরা ট্রে নামিয়ে রেখে নিজে ঘাসের ওপর বসতে বসতে বলল, “কী কথা হচ্ছে আপনাদের?”
কথা ব্যাকুল কণ্ঠে বলল, “দেখো না অরা! আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করছি আমি কবে বড় হবো? আর বাবা হাসছে।”
অরা হাসিমুখে বলল, “বড় হতে হবে কেন? ছোট থাকাই তো মজা।”
কথা অবাক হয়ে বলল, “তাই না-কি?”
“হুঁ। বড়দের অনেক কাজ করতে হয়, অনেক টেনশন করতে হয়। ছোটদের তো আর সেসব টেনশন নেই। তারা চাইলেই গেম খেলতে পারে, টিভি দেখতে পারে। তাই না?”
“তাই তো! তাহলে কি আমি বড় হবো না?”
“একদমই না। সবসময় এরকম থাকবে। এখন লক্ষ্মী মেয়ের মতো মিল্কশেকটা শেষ করে ফেলো তো সোনা।”
“ছবি আঁকতে আঁকতে খাই?”
“হুঁ।”
কথা আরশাদের কোল থেকে নেমে তার মিল্কশেক নিয়ে চলে গেল ছবি আঁকার সরঞ্জামগুলোর কাছে। কথা এ বাড়িতে এসেছে গতকাল। আরশাদ আগে থেকেই তার জন্যে বেশ অনেক রঙ,পেন্সিল আরও হাবিজাবি ছবির আঁকার সরঞ্জাম এনে রেখেছিল। ওগুলো দেখার পর থেকে একের পর এক ছবি একেই যাচ্ছে কথা। এমনকি জিনিসগুলো বাগানেও নিয়ে এসেছে ছবি আঁকবে।
অরা কথার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসি হাসি গলায় বলল, “বিরাট আর্টিস্ট হবে আপনার মেয়ে।”
আরশাদ তার কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল, “তোমার তাই মনে হয়?”
“হুঁ। আপনার কী মনে হয়?”
আরশাদ কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “আমার তো মনে হয় কথা অ্যাথলিট হবে।”
“অ্যাথলিট?”
“হুঁ। ওর মধ্যে একটা স্পোর্টস স্পিরিট দেখতে পাই। আবার মাঝে মাঝে মনে হয় কথা কোনো ভিন্ন ফিল্ডে যাবে। সায়েটিস্ট টাইপের কিছু হবে।”
অরা আগ্রহ নিয়ে বলল, “আপনি চান না কথা আপনার মতো অভিনয় করুক।”
আরশাদ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “না। চাইলে করবে, না চাইলে কোনো জোরাজুরি নেই। আমি চাই ওর যা ইচ্ছা তাই হবে।”
“আচ্ছা স্যার? ছোটবেলায় কী হতে চেয়েছিলেন?”
আরশাদকে উত্তরটা ভাবতে এক মুহূর্তও অপচয় করতে হলো না। সঙ্গে সঙ্গে সে বলল, “ক্রিকেটার।”
অরা হতভম্ব হয়ে বলল, “সত্যি?”
“স্কুলের ক্লাবে রেগুলার ক্রিকেট খেলতাম। আমি ছিলাম আমাদের টিমের ক্যাপ্টেন। খুবই অ্যাগ্রেসিভ ক্যাপ্টেন। আমিই ওপেনিং ব্যাটিং করবো, আবার ওপেনিং বোলিংও আমি করবো।”
“আপনি অলরাউন্ডার ছিলেন?”
“হুঁ। প্লেয়ার হিসেবেও প্রচুর অ্যাগ্রেসিভ ছিলাম। বেশির ভাগ সময় আমার ঝগড়া বাঁধতো আম্পায়ারের সঙ্গে। আমাকে আউট দিলেই ওকে মারার জন্যে দৌড় দিতাম।”
আরশাদের চোখদুটোতে যেন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার ছোটবেলার মজার স্মৃতিগুলো। যে ওই চোখদুটোর দিকে তাকাবে, সেই দেখতে পারে সমস্ত স্মৃতি। ইদানিং ওই চোখদুটোর দিকে তাকানোর সাধ্য হারিয়ে ফেলেছে অরা। আরশাদের চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনের মাঝে হাজারো প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। বুকের মাঝে হৃদয়টা প্রচন্ড গতিতে লাফিয়ে ওঠে।
নিজেকে সামলে নিয়ে অরা বলল, “তারপর?”
আরশাদ মলিন স্বরে বলল, “তারপর আর কী? স্কুল শেষ হয়ে গেল। আমার ক্রিকেটও শেষ হয়ে গেল। ইচ্ছা ছিল ন্যাশনাল টিমের জন্য খেলবো। কিন্তু হলো না।”
“কিন্তু স্যার, ন্যাশনাল টিমের প্লেয়ারদের তো ফেমাস হতে হয়। আপনি তো কখনো ফেমাস হতে চাননি।”
“এটা তো ভেবে দেখিনি।”
অরা কৌতূহল নিয়ে বলল, “স্কুলের পর আর কন্টিনিউ করলেন না কেন?”
আরশাদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আমার বাবা তখন কেবল আমাদের ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গিয়েছিল। একে তো এত বড় একটা ধাক্কা তার ওপরে মামাদের কাছ থেকে নেওয়া ধার কী করে শোধ হবে তাই ভেবে মায়ের রাতের ঘুম হারাম। পড়াশোনাতেই ঠিকমতো মন বসতো না, আর ক্রিকেট!”
অরা চুপ করে রইল।
আরশাদ বলল, “তুমি কী হতে চেয়েছিলে?”
অরা কিছুটা ভেবে বলল, “আমি ছোটবেলায় কখনো স্বপ্ন দেখার সুযোগ হয়নি। তবে আমার মা যখন চিকিৎসার অভাবে মারা গেল, তখন আমার ইচ্ছা হতো বড় হয়ে ডাক্তার হবো। ভাবতাম, আমি যখন ডাক্তার হবো তখন দেশে কাউকে আর চিকিৎসার অভাবে মারা যেতে হবে না। কিন্তু পরে বুঝেছি, ডাক্তার হওয়ার জন্যে কঠিন সাধনা করতে হয়। আমি ভালো স্টুডেন্ট হলেও হার্ড ওয়ার্ক করতে পারতাম না। তাই নাইনে উঠে আর সায়েন্সই নেয়নি।”
“একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো অরা?”
“কোন ব্যাপার স্যার?”
“আমার স্বপ্নগুলো কখনো কখনো পরিবারের কারণে ভেঙে যায়। আমার স্বপ্ন যেমন গিয়েছিল। আর তুমি তো স্বপ্ন দেখার সুযোগই পাওনি।”
“আসলেই।”
“এজন্যেই আমি চাই কথার যা ইচ্ছা সে তাই করুক।”
ছবি আঁকা শেষে তাদের দিকে উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে ছুটে এলো কথা। তার ঠোঁটজুড়ে হাসির ছড়াছড়ি।
হাসতেই হাসতেই কথা ছবিটা আরশাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “বাবা দেখো”
আরশাদ ছবিটা হাতে নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো। ছবিতে একটা পালতোলা নৌকা নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে। নৌকায় বসে রয়েছে তিনজন। তাদের সকলের মুখেই প্রচ্ছন্ন একটা হাসি।
অরা মুগ্ধ গলায় বলল, “ওমা! কী সুন্দর হয়েছে! এটা কে কে?”
কথা আঙুল দেখিয়ে বলল, “এটা আমি, এটা বাবা, আর এটা অরা!”
এ বাড়ির দোতলায় আরশাদের ঘর এবং বিশাল লাইব্রেরি ঘর ছাড়াও আরও দুটো ঘর রয়েছে। তার একটা বর্তমানে সাজানো হচ্ছে কথার ঘর হিসেবে। কথার দীর্ঘদিনের অভিযোগ এ বাড়িতে তার নিজের কোনো ঘর নেই। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আরশাদ এই ঘরটাকে কথার ঘর হিসেবে নতুন করে সাজিয়েছে। দেয়ালজুড়ে তার পছন্দের কার্টুনের ওয়ালপেপার লাগানো হয়েছে। ঘরের এক কোণে তার সব খেলনা আর পুতুলগুলো রাখা হয়েছে। যাতে কথা সেখানেই তার খেলনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খেলতে পারে। নতুন একটা স্মার্ট টিভি আনা হয়েছে। দিন-রাত কার্টুন ছাড়া কথার মন টেকে না। এছাড়াও সবুজ রঙের সুন্দর একটা স্টাডি টেবিল আনা হয়েছে। কথার পছন্দের রঙ সবুজ। যদিও বাবার কাছে এসে কথা কখনো পড়তে বসে না, তবুও যাতে তার ইচ্ছা হলে এখানে বসে পড়তে পারে বা ছবি আঁকতে পারে – সেজন্যে এই টেবিল।
আজকালকার স্মার্ট টিভিগুলো আবার গেমও খেলা যায়। কার্টুন দেখে বিরক্ত হয়ে গেলে কথা টিভিতে গেল খেলে। আরশাদ বিছানায় বসে তার জন্যে গেমগুলো ইনস্টল করে দিচ্ছে। আর ওদিকে এ পর্যন্ত কথা যতগুলো ছবি এঁকেছে, সবগুলো অরা ছোট ছোট ফ্রেমে ভরে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে ব্যস্ত। কথা অবাক চোখে দুজনের কাজ দেখছে।
কাজের ফাঁকে অরা হাসিমুখে বলল, “কথা? তোমার নতুন ঘর পছন্দ হয়েছে?”
কথা উৎফুল্ল ভঙ্গিতে বলল, “খুব পছন্দ হয়েছে অরা!”
আরশাদ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বলল, “পছন্দ তো হতেই হবে। বাবা ডিজাইন করেছে বলে কথা।”
অরা বলল, “আমিও হেল্প করেছি।”
কথা হঠাৎ কী যেন মনে করে বলল, “আচ্ছা অরা? তুমি কি সত্যি সত্যিই এখন থেকে এই বাসায় থাকবে।”
অরা মজার ছলে বলল, “মানুষ মিথ্যা-মিথ্যি থাকতে পারে বুঝি!”
অরা এ বাড়িতে আসার পর এবারই প্রথম এলো কথা। অরা ভয়ে ছিল তাকে এ বাড়িতে দেখে কথার প্রতিক্রিয়া না জানি কেমন হয়? কথা যদি তার সার্বক্ষণিক উপস্থিতি পছন্দ না করে? আসলে সেরকম কিছুই হয়নি। বড়দের মধ্যে কথা সবথেকে বেশি পছন্দ করে অরাকে। নিজের প্রিয় বড় মানুষকে এ বাড়িতে দেখে কথার আনন্দের সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, অরা সারাক্ষণ তার কাছেই আছে।
রাতে খাবার টেবিলে সাধারণত নিজেদের মধ্যে কথা বলে আরশাদ এবং অরা। কখনো কাজ নিয়ে, শুটিং নিয়ে আবার কখনো জীবনের বিশেষ কোনো ঘটনা নিয়ে। তবে আজ কথা বলার বিন্দুমাত্র অবকাশ পেলো না দুজনের কেউই। সকল কথার ঝুলি আজ কথার কাছে।
আরশাদ মেয়েকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল, “এটা কিন্তু ঠিক না বাবা। তুই না গুড গার্ল? গুড গার্লরা মারামারি করে?”
কথা জোর গলায় বলল, “কিন্তু বাবা ওই ছেলেটা তো আমার সব বই ছিঁড়ে ফেলেছে।”
“তুইও ওর সব বই ছিঁড়ে ফেলতি। ঘুষি মারাটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না?”
দুমাস পর দেশে ফিরে ক্লাসে গিয়েই কথা একটা ছেলের নাক বরাবর সজোরে ঘুষি মেরে আসে। এই নিয়ে ক্লাস টিচার বাসায় অভিযোগ জানিয়ে একাকার কান্ড করেছে। তবে কথার মতে যে ছেলেটাকে সে ঘুষি মেরেছে সে আস্ত একটা বাঁদর। বাঁদর তার সঙ্গে বাঁদরামি করেছে, তাই সে ঘুষি মেরেছে। ভবিষ্যতে বাঁদরামি করলে ফের ঘুষি খাবে।
কথা গাল ফুলিয়ে বলল, “আমার রাগ হয়েছিল। রাগ হলে কী করবো আমি?”
অরা আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “অবিকল আপনার রাগটা পেয়েছ।”
আরশাদ ভ্রু কুঁচকে বলল, “তাই বলে আমি কাউকে ঘুষি মারি না।”
“এখন না হয় মারেন না। ওর মতো বয়সে তো ঠিকই আম্পায়ার বেচারাকে মারার জন্যে দৌড়াতেন!”
অরার এমন কথায় সে এবং কথা দুজনেই হেসে কুটি কুটি হলো। কথার সঙ্গে আজ আরশাদ এবং তার দিনটা দারুণ কেটেছে। ইশ! মেয়েটা এখানে থেকে গেলে না জানি কত ভালো হতো!
রাত নয়টা তেত্রিশ। ইতোমধ্যেই কথার ঘুমের সময় পার হয়ে গেছে। বাবার কাছে এলে কথা সাধারণত একটু রাত করেই ঘুমায়। তবুও ঘুম নিয়ে আরশাদের কড়াকড়ির কারণে বেশি রাত জাগতে পারে না। বসার ঘরের সোফায় কথা অরার কোলে বসে টিভি দেখছিল।
আরশাদ হঠাৎ এসে বলল, “বাবা! চল এখন। আবার কালকে টিভি দেখবি।”
কথা অস্পষ্ট গলায় বলল, “আচ্ছা। তুমি যাও, আমি অরাকে গুড নাইট বলে আসছি।”
“আমাকে যেতে হবে কেন? তুই এখনই গুড নাইট বলে আয়।”
কথা জেদ ধরে বলল, “না! আমি অরাকে একা একা গুড নাইট বলবো। তুমি যাও, আমি এক মিনিটের মধ্যে আসছি।”
আরশাদ সিড়িতে পা রাখতে রাখতে বলল, “যাচ্ছি। এক মিনিটের মধ্যে যদি না দেখি, তোর আজকে খবর আছে।”
আরশাদ চলে যেতেই কথা অরাকে জড়িয়ে ধরে তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, “অরা? তোমার মনে আছে তো?”
অরা আশ্বাস দিয়ে বলল, “হ্যাঁ বাবা! ভুলে যাইনি।”
“আমাকে ডেকো কিন্তু! আমি তোমাকে হেল্প করবো।”
অরা বিস্মিত হয়ে আদুরে গলায় বলল, “তুমি আমাকে হেল্প করবে?”
কথা দৃঢ় গলায় বলল, “হুঁ!”
“তাহলে তো ডাকতেই হবে। এখন তুমি যাও, বাবা ঘুমিয়ে পড়লেই আমি তোমাকে ডেকে দেবো।”
নতুন ঘরের বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে কথা। পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আরশাদ। তবুও কিছুতেই ঘুম নেমে আসছে না তার দুচোখে। বারবার ইচ্ছা করছে উঠে বসে বাবার সঙ্গে গল্প করতে।
কথা হঠাৎ চোখদুটো মেলে তাকিয়ে বলল, “বাবা শোনো! এবার আমি আর যাবো না। এখানেই থাকবো।”
আরশাদ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “এই একই কথা তো প্রতিবারই বলিস!”
“এবার সত্যি সত্যি বলছি।”
“কেন? এবার এমন কী হয়েছে?”
“এবার এখানে অরা আছে।”
আরশাদ ক্ষীণ হাসি হেসে বলল, “অরাকে তুই খুব পছন্দ করিস?”
“করি তো! She is my Elsa!”
আরশাদ বিভ্রান্ত স্বরে বলল, “এলসাটা আবার কে?”
কথা হতাশ গলায় বলল, “তুমি এলসা কে চেনো না?”
“কোনো ডিজনি প্রিন্সেস নিশ্চয়ই।”
“প্রিন্সেস না। এলসা হলো কুইন। অরাও আমার কুইন।”
“হয়েছে। অনেক পাকা পাকা কথা হয়েছে। এবার ঘুমিয়ে পড়।”
কথাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে আরশাদ নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইদানিং তার অনিদ্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ডাক্তার সাহেবের দেওয়া ঘুমের ওষুধ কাজে দিচ্ছে। আগে তো বেচারা ঘুমের ওষুধ খেয়েও দুচোখের পাতা এক করতে পারতো না। আরশাদের মনের একটা অংশ মনে করে এই অনিদ্রা সেরে যাওয়ার পেছনে কোনো না কোনোভাবে অরার অবদান রয়েছে। অরা এ বাড়িতে আসার পর থেকে আরশাদ তার মনের গভীরতম স্তরে জমে থাকা কথাগুলো বলার মতো একজন মানুষ পেয়েছে। যন্ত্রণার কথাগুলো কারও ভাগাভাগি করে নিলে মন অনেকটাই হালকা হয়ে যায়।
কথা ঘুমাতে চলে যাওয়ার পর অরা কতগুলো কাজ এগিয়ে রাখলো। কেকের ব্যাটার তৈরি করে ওভেনে ঢুকিয়ে দিলো। আর চুলায় বসিয়ে দিলো পায়েস। কেক তৈরি হতে হতে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটে লেগে গেল। ওদিকে পায়েস রান্নাও শেষ করে ফেলেছে অরা। ওভেনে কেক তৈরি হওয়ার পর সেটা কয়েক ঘন্টা ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিতে হয়। না হলে ক্রিমটা ঠিকমতো বসে না। তবে এক সেই সময় নেই। তাই অরা কেকটা ডিপ ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলো। ডিপের তীব্রতায় যতটুকু ঠান্ডা হতে পারে।
এগারোটার কাছাকাছি। অরা রান্নাঘর থেকে পা বাড়ালো কথার ঘরের দিকে। ছোট ছোট পা ফেলছে, যাতে কোনো আওয়াজ না হয়। সব কাজ শেষ হয়ে গেলেও মজার একটা কাজ বাকি। কেক ডেকোরেশন। এই কাজটা অরা কথাকে নিয়ে করবে। এমনিতেই মেয়েটা বলে রেখেছিল অরাকে হেল্প করবে। ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে অরা একাই সব কাজ শেষ করে ফেলেছে তাহলে নির্ঘাত রেগে যাবে। তার তো আবার বাবার মতো রাগ বেশি।
ঘরের বাতি না জ্বালিয়েই অরা ফিসফিস করে ডাকলো, “কথা? কথা?”
অন্ধকারের মধ্যেও অরা স্পষ্ট দেখতে পেলো ছোট্ট কথা সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসেছে।
অরা অবাক গলায় বলল, “তুমি ঘুমাওনি?”
“না তো।”
“কেন সোনা?”
“ঘুমালে তো আর উঠতে পারবো না। তাই ঘুমাইনি।”
অরা বাতি জ্বালিয়ে কথা কোলে নিয়ে মুগ্ধ গলায় বলল, “বাহ্! তুমি তো অনেক চালাক।”
“চালাক মানে কী অরা?”
অরা কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “চালাক মানে ক্লেভার।”
কথা বেশির ভাগ সময় বাংলায় কথা বললেও বেশ অনেক বাংলা শব্দের অর্থ জানে না। সেক্ষেত্রে তাকে ইংরেজি শব্দটা বলতে হয়।
“আচ্ছা? চালাক ভালো হয় না-কি খারাপ?”
“ভালোও হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে।”
“সেটা কীভাবে?”
“এখন বুঝবে না, বড় হলে বুঝবে।”
কথা থমথমে গলায় বলল, “কিন্তু তুমি তো বড় হতে না করলে?”
“ওহ তাই তো! আচ্ছা, চালাকরা ভালো হয়। যেমন আমার কথা সোনা!”
সীমার জন্যে কাপকেক বানাতে বানাতে অরার কেক বানানোর হাত বেশ ভালোই পেকেছে। তবে সমস্যা হলো, সীমার জন্যে বানানো কাপকেকের ডিজাইন এলোমেলো হলেও সমস্যা নেই। তবে আজ সমস্যা আছে। কোনোভাবেই ভুল করা যাবে না। ক্রিমের ব্যাগটা নিয়ে ডিজাইন করতে গিয়েই অরার হাতটা কেঁপে উঠছে।
কেকের ওপরে কী ডিজাইন হবে তা কথা ঠিক করে দিয়েছে। অরাকে সুপারম্যানের লোগো আঁকতে হবে। সুপারম্যানের লোগোর একটা ছবি গুগল থেকে নামিয়ে পাশেই রেখেছে অরা। দেখে দেখে ডিজাইনটা করার চেষ্টা করেছে। তবুও হাত কাঁপাকাঁপি যেন থামছেই না।
অরা কথাকে সাবধান করে দিয়ে বলল, “আমি কিন্তু ভালো করে আঁকতে পারবো না কথা, ভুল হবে।”
কথা পাশেই গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে অরা কেক সাজানো দেখছিল। এমন কথা শুনে জোর গলায় বলল, “নাহ্! আমি জানি তুমি সুন্দর করেই আঁকবে।”
“কথা?”
“হুঁ?”
“তুমি কেকের ওপরে সুপারম্যানের সাইন আঁকতে বললে কেন?”
“কারণ সুপারম্যান আমার ফেভারিট সুপারহিরো, আর বাবা আমার সুপারহিরো।”
“বাবাকে অনেক ভালোবাসো, তাই না?”
“হ্যাঁ! আমি বাবাকে লবণের মতো ভালোবাসি।”
“লবণের মতো?”
কথা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল, “হুঁ! কেন ওই গল্পটা শোননি। একটা রাজার তিন মেয়ে ছিল। একটা মেয়ে তাকে চিনির মতো ভালোবাসে, আরেকজন গুড়ের মতো ভালোবাসে। আর শেষের জন লবণের মতো ভালোবাসে। রাজা এই শুনে খুব রেগে গিয়েছিল। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছে, লবণ সবথেকে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। লবণ ছাড়া তো আমরা খেতেই পারি না।”
কী যুগ এসে গেল! আগে বড়রা বাচ্চাদের গল্প শোনাতো আর এখন বাচ্চারা বড়দের গল্প শোনাচ্ছে।
অরা চমৎকৃত হয়ে বলল, “বাহ্ কথা! তুমি তো অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প জানো? কে বলেছে তোমাকে এই গল্পটা?”
“আমি নানির বাসায় গিয়েছিলাম না? নানি বলেছে।”
ঘড়িতে কাটায় কাটায় রাত বারোটা। কথা এবং অরা দাঁড়িয়ে আছে আরশাদের ঘরের সামনে। অরার হাতে কেকটা। তার বুক ধুকপুক করছে। মনের মাঝে বিচিত্র এক আনন্দ আর উদ্দীপনা কাজ করছে। না জানি এই সারপ্রাইজে আরশাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়!
কথা তার ছোট্ট হাতে অনবরত দরজায় টোকা দিয়ে যাচ্ছে। তবুও অপরপ্রান্ত থেকে কোনো সাড়া-শব্দ নেই। আরশাদের এই এক বদভ্যাস। হয় সারা রাত জেগে থাকবে। আর ঘুমিয়ে পড়লে আর ওঠার নামই নেবে না।
কথা ব্যর্থ হয়ে বিরক্ত গলায় বলল, “অরা? তুমি এই দরজাটা খুলতে পারো?”
অরা কিঞ্চিৎ সংশয় নিয়ে বলল, “পারি। কিন্তু বাবা যদি রাগ করে?”
“ধুর! বাবা আমার ওপরে রাগ করবে? কী যে বলো তুমি!”
আরশাদের ঘরের লকের পাসওয়ার্ডটা এখনো মনে রেখেছে অরা। টু ফোর জিরো নাইন। ভয়ে ভয়ে একেকটা নম্বর প্রেস করলো সে। লক খুলে যেতেই কথা দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। অরা অনিশ্চিত পায়ে তার পিছু নিলো।
পুরো ঘর অন্ধকারে ছেয়ে আসে। এসির হিমশীতল হওয়া গায়ে লাগতেই যেন হাড় হিম হয়ে গেল। অরা গিয়ে সাবধানে ডিম লাইট ধরিয়ে দিলো। কাঁধ পর্যন্ত ব্যাঙ্কেট টেনে ঘুমাচ্ছে আরশাদ। তার চোখেমুখে অদ্ভুত এক স্নিগ্ধতা। এক মুহূর্তের জন্যে অরার ইচ্ছা হলো তার ঘুমটা না ভাঙিয়ে সারা রাত তার দিকে তাকিয়ে থাকতে। মুহূর্তেই সামলে নিলো নিজেকে। আজকাল এমন লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে তার ইচ্ছেগুলো?
কথা বিছানায় উঠে বসে ঘুমন্ত আরশাদের গায়ে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলল, “বাবা! বাবা! বাবা ওঠো না!”
আরশাদ ঘুমজড়ানো কণ্ঠে বলল, “হুঁ?”
“ওঠো না বাবা!”
আরশাদের মাঝে কোনপ্রকার হেলদোল নেই। ঠিক আগের ভঙ্গিতেই ঘুমিয়ে রইলো সে।
কথা অরার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বলল, “উঠছে না তো!”
অরা বলল, “আবার ডাকো।”
কথা এবার গলা ফাটিয়ে ডাকলো, “বাবা!”
আরশাদের ঘুম মনে হয় তাতে কিছুটা ভাঙলো। চোখ মেলে তাকিয়ে বলল, “কী মা?”
“ওঠো আগে।”
আরশাদ উঠে বসতে বসতে বলল, “কী হয়েছে?”
ভালোভাবে আরশাদ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো কেক হাতে অরা দাঁড়িয়ে রয়েছে। কেকের ওপরে জ্বলন্ত মোমবাতি।
আরশাদ আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই কথা উৎফুল্ল ভঙ্গিতে গান ধরলো, “Happy Birthday to you, Happy Birthday to you, Happy Birthday dear Baba! Happy Birthday to you”
যার জন্মদিন উদযাপনের জন্যে সারা দেশ মুখিয়ে থাকে তার নিজেরই কোনো খবর নেই। একেবারে ভুলেই গিয়েছিল আজকের দিনটার কথা। বহু বছর হয়ে গেল নিজের জন্মদিন পালন করে না আরশাদ। মানুষের অহেতুক অ্যাটেনশন থেকে বাঁচতে এই দিনটা ঘরেই কাটিয়ে দেয় সে।
আরশাদ অবাক হয়ে অরার দিকে তাকিয়ে বলল, “আজকে আঠারো তারিখ?”
অরা প্রচ্ছন্ন হাসি হেসে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো।
কথা বাবাকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি গলায় বলল, “Happy Birthday Baba.”
আরশাদ কথার কপালে চুমু খেয়ে বলল, “থ্যাংক ইউ সোনা। তুই জানলি কীভাবে? তোর মনে ছিল?”
“আমি মনে রাখতে পারি না তো। অরা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিল।”
বিছানার ওপরে কেকটা নামিয়ে রাখতে রাখতে অরা বলল, “এখন বাবার সাথে কেকটা কেটে ফেলো তো।”
কথা বলল, “বাবা জানো, এই কেকের ডিজাইন আমি করেছি।”
“তাই না-কি?”
“হুঁ! আমি অরাকে যেভাবে বলে দিয়েছি, ও সেভাবেই ডিজাইন করেছে। তাই না অরা?”
আরশাদ আরেকদফা অবাক হয়ে অরাকে বলল, “তুমি কেকও বানাতে পারো?”
“চেষ্টা করেছি। খেয়ে বলুন তো কেমন হয়েছে।”
কেক কাটা পর্ব শেষে কথা আরশাদকে বসার ঘরে নিয়ে এল। আজ সকালে সে অরার সঙ্গে বাইরে গিয়ে বাবার জন্যে অনেক গিফট কিনেছে। সবই কেনা হয়েছে তার পছন্দ মতো। অরা আগে থেকেই সবগুলো গিফট রঙিন র্যাপিং পেপারে মুড়িয়ে রেখেছিল। আরশাদ একটা একটা করে গিফট খুলছে আর কথার উচ্ছ্বাস ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।
বাবার জন্মদিন উদযাপনের এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে সোফার ওপরেই ঘুমিয়ে পড়লো। আরশাদ তাকে কোলে নিয়ে সাবধানে ঘরে রেখে এলো।
রাত একটা বাজে। ব্যস্ত ঢাকার এই নিস্তব্ধ রূপ বড়ই অসহনীয়। ছাদে একা দাঁড়িয়ে রয়েছে আরশাদ। তার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। কথার কাছ থেকে পাওয়া অপ্রত্যাশিত সারপ্রাইজে সত্যিই তার বিস্ময়ের সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সে তো কোনদিন ভাবতেই পারেনি জন্মদিনে মেয়ের কাছ থেকে এমন সারপ্রাইজ পাবে।
হঠাৎ তার পাশে এসে দাঁড়ালো অরা। তার উপস্থিতি যেন এই মুহূর্তটাকে আরও সুন্দর করে দিলো।
অরা ক্ষীণ স্বরে বলল, “আজকের দিনে এই বাজে জিনিসটা না খেলে হয় না?”
আরশাদ কয়েক মুহূর্ত শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো অরার দিকে। সুপারস্টার আরশাদ হককে সিগারেট খেতে বারণ করার সাহস এই পৃথিবীতে কারো নেই। অরার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে আরশাদের রাগ আশেপাশের সবকিছু তছনছ করে ফেলতো। তবে এটা অরা বলেই হয়তো আরশাদ তেমন কিছুই করলো না।
সদ্য জ্বালানো সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বলল, “হয়।”
নীরবতার মাঝে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে রইলো তারা। সবথেকে ভালো হতো যদি এই প্রশান্তিময় নীরবতা যদি কোনোদিন শেষ না হতো।
অরা হঠাৎ নীরবতা ভঙ্গ করে বলল, “এটা কিন্তু ঠিক না স্যার।”
“কোনটা?”
“পুরো দেশ আপনার জন্মদিন সেলিব্রেট করে। আর সেখানে আপনি নিজেই নিজের জন্মদিন ভুলে বসে আছেন।”
“একে বারেই মাথা থেকে চলে গিয়েছিল। অনেকদিন হলো নিজের বার্থডে সেলিব্রেট করি না।”
“আজ তো করলেন!”
“All thanks to you.”
“কথার গিফটগুলো কেমন লাগলো?”
আরশাদ ভ্রু কুঁচকে বলল, “নিজের গিফট কথার নামে চালিয়ে দিচ্ছো?”
“ওগুলো কথার গিফটই। আমার গিফট তো এখনো বাকি আছে।”
“তাই?”
“হুঁ।”
অরা একটা কাঁচের জার আরশাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “Happy Birthday Sir.”
আরশাদ জিনিসটা হাতে নিতে নিতে বলল, “Thank you.”
আরশাদ এবার ভালো করে লক্ষ্য করলো অরার গিফট। মাঝারি সাইজের একটা কাঁচের জার ভর্তি ভাঁজ করে রাখা কতগুলো চিরকুট। আর জারের বাইরের দিকে একটা কাগজে লেখা, “Jar of secrects.”
আরশাদ কৌতূহলী ভঙ্গিতে বলল, “Jar of secrets?”
“এই জারে আমার একেকটা সিক্রেট বন্দী।”
“এটা তো ঠিক হলো না। তোমার মুখ থেকেই একেকটা সিক্রেট শুনতে আমার ভালো লাগছিল?”
“সবসময় এই জার থেকে সিক্রেট পড়তে পারবেন কে বলল?”
“তাহলে?”
“আমি যখন আপনার আশেপাশে থাকবো না, কিন্তু আপনার খুব সিক্রেট শুনতে ইচ্ছা হবে – শুধু তখনই এখান থেকে একটা চিরকুট নিয়ে পড়বেন। এর আগে না।”
(চলবে)
[দেখছেন! আপনাদের লেখিকা কত লক্ষ্মী! আজকে একসঙ্গে দুই পর্ব চাইলেন, আমিও দিয়েও দিলাম। এবার আপনাদেরকেও কিন্তু লক্ষ্মী পাঠকের মতো বেশি বেশি রেসপন্স করতে হবে। ❤️]