#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৯
তীরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ক্রমশ। শুষ্ক ঠোঁট জোড়া বার বার জিভ দ্বারা ভিজাচ্ছে আর কামড়াচ্ছে। ইশান যদি এক বার মুখ খুলে আজকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলে দেয় মাকে তাহলে তীরকে আর আস্ত রাখবে না সোজা বিয়ের সানাই বেজে যাবে তার। বাবার থেকে মাকে ভীষন পায় মেয়েটা। কি করবে এখন কি করে এই হিটলার ইশানকে আটকাবে? মাথায় কোনো প্রকার কু বুদ্ধিও আসছে না পুরা মাথা যেন হ্যাং হয়ে আছে। কথায় আছে না “চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে” তীরের সিচুয়েশন এখন এমন হয়ে গেছে। অন্য দিকে ইশান বলা শুরু করে।
–আসলে আন্টি আজকে হয়েছে কি….
তীর আবারও ইশানের কথার মাঝে বা হাত ডুকিয়ে বলে উঠে।
–মা তুমি আমার কথাটা শুনো আজকে কি হয়েছে?
আয়েশা সুলতানা মেয়ের মুখপানে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে? যখনেই ইশান কিছু বলতে চায় তখনেই মেয়ে যেন লাফিয়ে উঠে। আয়েশা সুলতানা বিরক্ত নিয়ে বলেন।
–আর একবার যদি তোর মুখ থেকে টু শব্দটাও বের হয় তাহলে একটা মারও মাটিতে পারবে না তীর। সব গুলা মার তোর পিটে পরবে সোজা এই আমি বলে রাখলাম।
মায়ের এমন দ্বারা কথা শুনে চুপসে যায় তীর। মার তো এমনিতেই খাবে যদি ইশান সব বলে দেয়। বরং মারের থেকে বেশি কিছুই খেতে পারে। অন্য দিকে ইশান তীরের এই বেহাল অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসে। ভালোই মজা পাচ্ছে তীরের এমন করুন অবস্থা দেখে। আয়েশা সুলতানা বলেন।
–ইশান তুমি বলো।
–আসলে আজকে আমি….
কথার মাঝেই ইশান তীরের দিকে তাকায় বেচারি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে ভয়ে। ইশান মুচকি হেসে আবার বলা শুরু করে।
–ভাবচ্ছিলাম যে আমাদের দু বাড়ির মাঝে যে দেয়ালটা আছে সেটার কিছুটা জায়গা ভেঙ্গে সেখানে একটা গেইট স্থাপন করার। তাহলে আমাদের দু পরিবারেরই যাওয়া আসার সুবিধা হতো এই আর কি!
তীর বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো। ঠোঁট দুটো আপনাআপনি ফাঁক হয়ে যায়। ইশান কি বললো এটা গেইট দিবে দেয়াল ভেঙ্গে আর সে কিনা এতক্ষন আকাশ কুসুম ভেবে নাজেহাল অবস্থা করেছে নিজের ছোট ব্রেইনটার। তীর নাক ফুলিয়ে বিরবিরিয়ে উঠে।
–ব্যাটা হিটলার ইচ্ছে করে এটা করেছে। যাতে আমাকে শায়েস্তা করতে পারে। প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে না।
ইশান তীরের দিকে আঁড় চোখে তাকায় তার প্রেয়সীর রিয়েকশন দেখার জন্য। এতক্ষন যে ভাবে ছটপট করছিলো মনে হচ্ছিলো এক্ষুনি ব্রেইন স্ট্রোক করবে মেয়েটা। ইশান সত্যিটাই বলতে এসেছিলো কিন্তু তীরের এমন করুন অবস্থা দেখে বলার সাহসটা পেলো না। সাথে এটাও ভেবে দেখলো এই কথাটা বললে হয়তো তীর বিপদে পড়তে পারে। তাই আয়েশা সুলতানাকে কি বলবে কি বলবে ভেবে না পেয়ে গেইট দেওয়ার কথাটা বলে দিলো। ইশান দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ছাড়ে। আয়েশা সুলতানা ইশানের কথা শুনে বলে।
–বাহ এটা তো ভালো কথা কিন্তু তীরের বাবা আসুক ওনার সাথে বরং তুমি কথা বলো।
–জী আন্টি আমি আঙ্গেলের সাথে কথা বলবো এই বিষয়ে। তবে আরেকটা বিষয়েও কথা বলা দরকার আমার।
আয়েশা সুলতানা চিন্তিত হয়ে বলেন।
–কি বিষয়ে কথা বলা দরকার?
–এটা না হয় আমি আঙ্গেলকেই সরাসরি বলবো। আমি বরং এখন আসি আন্টি।
ইশান তীরের দিকে কয়েক পল তাকিয়ে চলে যায়। চোখ মুখে যে ইশানের রাগ মিশে আছে সেটা তীর স্পষ্ট বুঝতে পারছে। কিন্তু তীরের মাথায় এখনো ইশানের শেষ বলা বাক্যটা ঘুরপাক খাচ্ছে। কি বলবে বাবাকে? তীরের মনে আবার ভয় ডুকিয়ে চলে গেলো ইশান। সে জব্দ করতে চাইছে ইশানকে কিন্তু ইশান উল্টো তাকেই জব্দ করে রেখে চলে গেছে। তীর মাথায় হাত রেখে উফ করে উঠে।
________
রাত সাড়ে দশটা বাজে প্রায় ইশান নিজের ঘরে বসেই কাজ করছে। হাতের সেলাই ইহান খুলে দিয়ে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি। কাল থেকে অফিসে যাওয়া শুরু করবে তাই কাজের চাপটা একটু বেশি। যত গুলা কাজ পেন্ডিং হয়ে পড়ে আছে সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে কালকের মধ্যে। কিন্তু কাজের মাঝেই তীরের ওই অচেনা ছেলেটার হাত ধরে রাখার দৃশ্যটা বার বার ভেসে উঠছে চোখের সামনে। ইশান যত চেষ্টা করছে এই সাইডটা ইগনোর করতে ততই যেন মস্তিষ্ক স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এই ব্যাপারটা। ল্যাপটপে কাজরত হাত জোড়া আচমকা থামিয়ে চোখ বন্ধ করে ঠোঁট দুটি গোল করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে আবার কাজে মনযোগ দেয়। কিন্তু মনযোগ আর দিতে পারলো কই ইশানের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে ইশা এসে হাজির তার ঘরে ভাইয়া ভাইয়া চিৎকার করতে করতে। ইশান ভ্রু-দ্বয় কিঞ্চিৎ কুচ করে বলে।
–কি হলো? এভাবে ষাঁড়ের মতো করে চেঁচাচ্ছিস কেন?
ইশা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে।
–আমাকে তুমি ষাঁড় বলতে পারলে ভাইয়া।
–এত্ত ড্রামা না করে বল কি হয়েছে?
ইশা শুকনো একটা ঢোক গিলে বলে।
–আসলে ভাইয়া ছাদে আমার কেমিস্ট্রি বইটা আছে।
ইশান কাজ করতে করতে বলে।
–হে তো।
–বইটা একটু এনে দিবে।
ইশান বোনের দিকে তাকিয়ে বলে।
–মানে।
–আসলে কি বলো তো রাত তো অনেক হয়ে গেছে এখন যদি আমি ছাদে যাই বইটা আনার জন্য তাহলে আমাকে নির্ঘাত পেত্নী ধরবে। তুমি কি চাও তোমার সুন্দরী বোনটাকে পেত্নী ধরুক।
ইশান ছোট ছোট চোখ করে বলে।
–তোকে পেত্নী ধরবে!
–হে ধরবে তো।
–ধরবে না। তুই গিয়ে নিয়ে আয় আমার কাজ আছে আর এক পেত্নীকে আরেক পেত্নী ধরতে আসবে না।
ইশা ভাইয়ের কথার সারমর্ম বুঝতে না পেরে বলে।
–ও আচ্ছা কিন্তু তারপরও।
কিন্তু পরক্ষনে ইশানের কথার সারমর্ম বুঝতে পেরে ইশা চিৎকার করে বলে।
–কি বললে তুমি? আমি পেত্নী।
–সন্দেহ আছে কোনো?
–ভাইয়া এটা কিন্তু একদম ঠিক হচ্ছে না বলে দিলাম।
–ইশু তুই যা তো কাজের ডিস্টার্ব করিস না আমার।
–বইটা এনে দিলেই তো হয় তাহলেই তো আমি আর ডিস্টার্ব করি না তোমাকে।
ইশান বোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ইশা ছোট্ট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলে।
–প্লিজ ভাইয়া এনে দাও না বইটা আমার পড়া আছে। আমি তোমার এক মাএ আদরের বোন না। বোন যদি পরীক্ষায় ফেইল করে তাহলে তুমি কি খুশি হবে বলো। তাই ছোট্ট বোনটার বইটা এনে দাও না।
ইশান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।
–ঠিক আছে যাচ্ছি আমি। ছাদে রেখেছিস কোথায় বইটা?
–দোলনার উপরে আছে।
ইশান ওকে বলে ঘর থেকে বের হতেই ইশা ঝড়ের বেগে দৌঁড়ে নিজের ঘরে এসে তীরকে ফোন দিয়ে বলে।
–দোস্ত ভাইয়া কিন্তু ছাদে আসছে তাড়াতাড়ি শুরু কর।
বলেই ফোন কেটে দিয়ে বলে।
–এবার শুরু হবে আসল খেলা।
____
ইশান ছাদে এসে ইশার কেমিস্ট্রি বইটা নিয়ে যখনেই ছাদ প্রস্থান করতে নিবে তখনেই অতি পরিচিত একটা কন্ঠ ভেসে আসে কানে। ভ্রু-দ্বয়ের মধ্য স্থানে ভাঁজ পড়ে ইশানের। এতো রাতে ছাদে এসে এভাবে লুকিয়ে কথা বলার মানে কি? ইশান পুরনায় ফিরে এসে ছাদের মাঝ বরাবর দাঁড়ায় আর তখনেই নজর যায় তীরদের বাড়ির ছাদের কোণে উল্টো দিকে ফিরে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে তীর। ভ্র-দ্বয়ের মধ্য স্থানের ভাঁজ আরও গাঢ় হয় ইশানের। তীরের কথাগুলো স্পষ্ট শুনার জন্য ইশান আরও এগিয়ে গিয়ে রেলিং এর পাশে দাঁড়াতেই তীরের বলা কথা গুলা শুনা মাএই ইশানের মেজাজ গরম হয়ে যায়। আর এদিকে তীর হেসেহেসে কথা বলেই যাচ্ছে।
–হে তো আমি এখনও তোমার দেওয়া গোলাপ ফুলের গাজরাটা পড়ে আছি আমার হাতে। আমার খুব পছন্দ হয়েছে থ্যাংক ইউ সো মাচ।
ফোনের ওপাশে কি বলছে ইশানের জানা নেই। কিন্তু তীরের এমন প্রেমময় কথাবার্তা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছে না। পায়ের র*ক্ত মাথায় উঠে গেছে যেন। রা’গে কপালের মধ্য স্থানের রগ ফুলে উঠেছে, চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। ইশান নিজেকে আর ঠিক রাখতে না পেরে হাতে রাখা বইটা মাটিতে সর্বশক্তি দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে তীরদের ছাদে চলে যায় রেলিং পার হয়ে। এই প্রথম ইশান তীরদের বাড়ির ছাদে এসেছে তাও আবার এভাবে। তীর তো আগে থেকেই জানে ইশান যে তার পিছনে আছে। তাই ফোন কানে রেখেই নিজে নিজেই কথা বলে যাচ্ছে যে কথা গুলা ইশা নোট করে দিয়েছিলো। যাতে ইশান বুঝতে পারে কারো সাথে ও কথা বলছেে।
কিন্তু বই ছুঁড়ে ফেলায় এমন একটা বিকট শব্দ হয়েছে যে তীর ভয়ে কেঁপে উঠে। তীর পিছনে ফিরার সাথে সাথে ইশান তীরের হাত থেকে ফোনটা কেঁড়ে নিয়ে সজোরে একটা আছাঁড় মারে। সাথে সাথে ফোনটা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। তীর সাথে সাথে নিজের দু কান চেঁপে ধরে ভয়ে। ভ্যাগিস ছাদের দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছে তীর না হলে ফোন ভাঙ্গার শব্দ বাড়ির ভেতরে পৌঁছে যেত। কিন্তু ইশানের সেই দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। রাগে বশবর্তী হয়ে ইশান তীরের দু বাহু জোরে চেঁপে ধরে বলে।
–কার সাথে কথা বলছিলি তুই কার সাথে? কে এই ছেলে? কি সম্পর্ক ওই ছেলের সাথে তোর? কি এতো কথা বলছিলি তুই ওই ছেলের সাথে?
তীর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ইশানের দিকে। ইশান যে এতটা রেগে যাবে কল্পনাও করতে পারে নি। চোখ দুটো কেমন ভয়ংকর দেখাচ্ছে। এক ধ্যান ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে তীর। তীরের এমন চাওনি থেকে ইশানের রাগের মাএ যেন আরও বেড়ে যায়। তীরের বা হাতে পরিহিত গোলাপের গাজরাটার দিকে নজর যায় ইশানের। ইশান সাথে সাথে গাজরাটা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে তাতে তীর ব্যাথা পেয়ে আহ করে উঠে। কিন্তু তাতেও যেন ইশানের রাগ কমলো না। তীরের এই চুপ থাকাটা ইশান আর সহ্য করতে না পেরে তীরের বাহু আরও চেঁপে ধরে চিঁবিয়ে চিঁবিয়ে বলে।
–কি হলো মুখে কথা ফুটছে না কেন? এতক্ষণ তো ফোনে ঠিকেই হেসেকুদে কথা বলছিলি তাহলে এখন মুখটা বন্ধ হয়ে গেলো কেন? কে এই ছেলে কি সম্পর্ক ওই ছেলের সাথে তোর?
#চলবে________