মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 51

0
364

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 51

🍁🍁🍁

হসপিটালের সামনে এসে তিনটা গাড়ি থামে। শাওন গাড়ি থেকে বেরিয়ে সিমথিকে কোলে নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা হয়। আদির অবস্থা ভালো নয়। হসপিটালের সামনে আসতেই একঝাঁক জার্নালিস্টের মুখোমুখি হয়। মেঘাদের এখনো কিছু জানানো হয়নি। ইফাজ রা জার্নালিস্ট দের কোনো মতে কাটিয়ে ভেতরে যায়। শাওনের কোলে রক্তাক্ত সিমথি কে দেখে নার্স ওয়ার্ড বয় রা ছোটাছুটি শুরু করে। স্টেচার নিয়ে আসতেই শাওন সিমথিকে স্টেচারে শুইয়ে দেয়। তুষার, ইশান হসপিটালের করিডোরেই বসা ছিলো। একটু আগেই সায়নের অপারেশন সাকসেস হয়েছে। রিসেপশনের দিকে চেচামেচিতে দুজনই উঠে দাঁড়ায়। কিছুটা এগুতেই দুজন থমকে যায় সিমথির অবস্থা দেখে। মেঘা একটু আগেই সিনহার ডেলিভারি করিয়ে কেবিনে যায়। কয়েকজন প্রেশেন্ট পেন্ডিং থাকায় তুহিন, রোদেলা, মেঘা তিনজনই কাজগুলো এগিয়ে রাখার জন্য যার যার কেবিনে যায়৷ প্রেশেন্ট দেখা কালীন বাইরে চেঁচামেচির শব্দে মেঘা বিরক্তি নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়। মেঘা বেরুতেই তুহিন আর রোদেলার মুখোমুখি হয়।

রোদেলা : এতো চেঁচামেচি কিসের বলতো।

তুহিন : তুই যেখানে আমিও সেখানে।

মেঘা : তর্ক না করে চল।

মেঘার ধমকে দুজনই চুপ হয়ে যায়। তিনজন একসাথে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে যায়। অন্যদিকে তন্ময় মেঘার কেবিনের দিকে আসার সময় চেঁচামেচি শুনে পথ বদলে রিসেপশনের দিকে এগিয়ে যায়। দুদিক থেকে চারজন এগিয়ে এসে স্টেচারের শুইয়ে থাকা ব্যক্তির দিকে চোখ যেতেই চারজন যেনো থমকে যায়। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকায়। চারজনই এগুনোর বদলে পিছিয়ে যায় ৷ র/ক্তে পুরো শরীর লাল হয়ে আছে। পাশে ড. নিহা পালস চেক করছে। মেঘা জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া শুরু করে। রোদেলা পাশ থেকে মেঘাকে সামলানোর বদলে তুহিনের সাথে ধাক্কা খায়।

ড.নিহা : সরি সী ইজ নো মোর।

ড.নিহার কথা কানে আসতেই সবাই সিমথির নিথর দেহটার দিকে তাকায়। মেঘারা দৌড়ে ভীড় ঠেলে সিমথির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রোদেলা ড.নিহার বাহু খামছে চেঁচিয়ে বলে,,,,

রোদেলা : কিসব বলছেন। ওর কিচ্ছু হয়নি আপনি ভালো করে চেক করুন। ওর কি হবে। একটু আগেও ওকে সুস্থ দেখে এসেছি। কয়েক ঘন্টায় কেউ কিভাবে।

ড.নিহা : দেখো রোদেলা।

তুহিন : কিসের দেখা দেখি ড.নিহা। এসব বাজে কথা আর কখনো বলবেন না। ওর কি হবে। আর কি এমন হয়েছে যে আপনি এসব বলছেন। এই সিমথি দেখ অনেক ফাজলামো হয়েছে এবার উঠ। নয়তো মা/র খাবি এখন।

ড.নিহা : ড.সিমথি জাহান সিয়ার শরীর থেকে ইতোমধ্যে অনেক ব্রিডিং হয়েছে সেই সাথে উনি একটা ছোট খাটো হার্ট অ্যাটাক ও করেছেন।

শাওন : এতো অল্প বয়সে।

ড.নিহা : দেখুন মিস্টার. বর্তমানে যেকোনো জেনারেশনের মানুষজন হার্ট অ্যাটাক করে। মূলত অধিক মানুষিক চাপের জন্য উনার এই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

মুহুর্তের মধ্যে হসপিটালের করিডোর যেনো সমাবেশে পরিণত হয়েছে। আশেপাশের সব প্রেশেন্ট সহ তাদের বাড়িরলোক, নার্স, ওয়ার্ড বয়রা এসে ভীড় জমায়। তুহিন, রোদেলার কথায় আদিবারা ডুকরে কেঁদে ওঠে। আদির মা মুখে আঁচল চেপে আদির দিকে তাকায়। ছেলেটা কেমন নির্জীব হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে দেহ থেকে আত্মা টায় যেনো বেরিয়ে গেছে এখানে কেবল দেহ টা পড়ে আছে।

তন্ময় ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সিমথির পাশে দাঁড়ায়। গালে হাত দিয়ে ধীর গলায় ডাকতে শুরু করে,,,

তন্ময় : সিমথি বোন দেখ সবাই কাদছে। উঠ এবার। তুই না বলেছিলি আমার বাচ্চাকে তুই আগে কোলে নিবি৷ সিনহা এখনো বাচ্চা টাকে আমার কোলে দেয়নি। নিজেও কোলে নেয় নি। তোর কোলে প্রথম দেবে বলে সিনহা কাউকে বাচ্চাটাকে কোলে দেয়নি। সিনহা কে আমি এখন কি বলবো বল। এই হারামি উঠ না। আমাদের কাঁদাতে তোর ভালো লাগে তাই না৷ এই মেঘা, তুহিন বল না ওকে উঠতে। সিয়া আমাদের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে প্লিজ দোস্ত উঠ।

তন্ময় কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে। তুহিন এপ্রোনের হাতা দিয়ে চোখ মুছে তন্ময়ের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে।

রোদেলা : সিয়ু আদি ভাইয়ার অবস্থা টা একবার দেখ। কি করছিস এসব। তোর এভাবে ফাঁকি দেওয়ার কথা ছিলো না তো। তুই না বলেছিলি তুই আমার দজ্জাল ননদ হবি। আমার ননদ হবার আগেই যদি চলে যাস তাহলে আমি কিভাবে ননদের জ্বালা বুঝবো বল। এই ইফাজ তোমার বোনকে বলো না উঠতে।

মেঘা : ও উঠবে না। কে কেনো উঠবে না৷ ড.নিহা আপনি বলুন কি হয়েছে ওর। একটু র/ক্ত বের হলে বুঝি কেউ চলে যায়। কোথায় আমরা তো এতো এতো রক্ত অন্যের শরীর থেকে বের করি ওদের তো কিছু হয়না।

কথাগুলো বলতে বলতে মেঘার গলা ধরে আসে। চোখের পানি বাঁধ ভাঙ্গে। চার বন্ধুই শব্দ করে কেঁদে ওঠে। ইতোমধ্যে হসপিটালে সবাই জানে সিমথি – মেঘাদের বন্ধুত্বের কথা। ওদের কান্না দেখে সবার চোখে আপনাআপনি পানি চলে আসে। সিনহা ওর শ্বাশুড়ির সাহায্য নিয়ে বাইরে আসে কিসের চেঁচামেচি এটা দেখার জন্য। নরমাল ডেলিভারি হবায় আজই ডিসটাজ করে দেবে জানিয়েছে মেঘা। বাচ্চা টাকে নার্সের হাতে দিয়ে এখানে এসেছে। কিন্তু সিনগার পেছন পেছন নার্সটা ও চলে আসে বাচ্চা কে কোলে নিয়ে। সিনহা ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যায়। তন্ময়কে তুহিনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখে অবাক হয়। এই ছেলে এভাবে কাঁদছে কেনো। পাশে মেঘা রোদেলাও আছে। আচমকা চোখ যায় নিথর দেহে পড়ে থাকা সিমথির দিকে। সিনহা ওর শ্বাশুড়ির দিকে তাকায়। দুজনের চোখে মুখেই অবিশ্বাস।

সিনহা : ত তন্ময় স সিমথি আপু এ এভাবে শুয়ে আ আছে কেনো।

সিনহার কাঁপা কাঁপা গলায় তন্ময় সিনহার দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায়। তন্ময়ের দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে সিনহা থমকায়। আচমকায় হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। এই মেয়েটা সিনহার জন্য অনেক করেছে। নরক জীবন থেকে একটা সুন্দর জীবন সিনহাকে দিয়েছে। তন্ময়ের মতো একজন ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে। সেই সাথে পেয়েছে শ্বশুর শ্বাশুড়ি নামক আরেক মা-বাবা।

ইশান : ম মেহের ভা ভাবী এ এসব ক কিভাবে হ হলো। আ আমরা ত তো কেবল প পেটে গ গুলি ল লাগতে দ দেখে এ এসেছিলাম।

মেহের : ও ওর বুকে গ গুলি লেগেছে। তোমরা আসার পর অনেক কিছু হয়ে গেছে।

প্রেস – মিডিয়া তাদের রসালো খবর ইতোমধ্যে নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে। খবর পেয়ে আয়াশ, রিক ও ছুটে আসে। করিডোরে এসে সবাই কে দেখে দুজনের বুক ধক করে উঠে। খবরটা সত্যি নয়তো। দুজনই এগিয়ে যায়। আদিকে নির্জীবের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর দিকে এগিয়ে যায়। আদির দৃষ্টি অনুসরণ সামনে তাকাতেই দুজনের হৃদয় কেঁপে ওঠে। আয়াশ আদির কাঁধে হাত রাখে। আদি আয়াশের দিকে তাকায়।

আদি : ইশান সায়ন কোথায়।

আদির কথায় সবাই কান্না থামিয়ে আদির দিকে তাকায়। আদির দিকে তাকাতেই সবার বুক মোচড় দিয়ে উঠে। কিছুক্ষণের ব্যবধানের ছেলেটার চোখ-মুখের কি হাল হয়েছে।

ইশান : সায়ন ভাইয়াকে একদিনের অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।

আদি আর কিছু না বলে এগিয়ে যায়। সিমথি রক্তে ভেজা হাত টা হাতে নিয়ে চুমু খায়। ধীর কন্ঠে বলে উঠে,,,

আদি : তুই তোর কথা রাখিসনি। আমার ক্ষেত্রে তোর এই খামখেয়ালি আমি আর সহ্য করবো না। তুই দূরত্ব বাড়িয়েছিস না। আমি ও আর দূরত্ব কমাবো না। তোর উপর আমার এক আকাশ সম অভিযোগ জমা রইলো। সব বলবো তোকে। উপসংহারে যদি বিচ্ছেদই থাকে তবে সূচনা এতো রঙিন কেনো হলো। আমার না ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছে করে নিজেকে শেষ করে দেয়। বিশ্বাস করো আত্মহত্যা যদি মহাপাপ না হতো তাহলে আমি আর সেকেন্ড ও অপেক্ষা করতাম না। সমস্যা নেই জানপাখি তুই বলেছিস না পরের জন্মে তুই আবার আমার হবি। আমি অপেক্ষায় থাকবো। সেই সময় কথা রাখিস।

আদি উঠে দাঁড়ায়। বুকের ভেতর ক্রমাগত কেউ ছুড়ি চালাচ্ছে মনে হচ্ছে। আদির চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে সিমথি-আদির কাটানো মুহুর্ত গুলো। শরীরে শক্তি মনে হচ্ছে সব ফুরিয়ে গেছে। এক পা পিছাতেই আদি নিচে পড়ে যায়। সবাই চমকে উঠে। আয়াশরা দ্রুত আদিকে ধরে কিন্তু ওর চোখ বন্ধ দেখে সবাই ঘাবড়ে যায়। আয়াশ, শাওন দুজন মিলে আদিকে পাশের কেবিনে নিয়ে যায়। তন্ময়, তুহিন, মেঘা, রোদেলা উঠে দাঁড়ায়। চারজনের দৃষ্টি সিমথির দিকে। অথচ চোখের সামনে ভাসছে একে একে কাটানো মুহূর্ত গুলো। জীবনের শেষ মুহূর্তটা বুঝি এতোই কষ্টের হয়। কানে বাজছে সিমথির সেই উক্তি টা,,,

_ দেখবি যেদিন চলে যাবো সেদিন আমার জন্য কাঁদবি। কিন্তু সেদিন আমিও মুখ ফিরিয়ে তাকাবো না হুহহ

____________________

মেঘাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রোদেলা, তন্ময়, তুহিন, আয়াশ, রিক। ভেতরে মেঘাকে ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছে।

আয়াশ : বুঝতে পারছি না ও কখন আসবে।

রিক : আরে চলে আসবে।

রিকের কথার মাঝে একটা গাড়ি এসে ওদের সামনে থামে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে একজন। কয়েক মাসের ব্যবধানে সুদর্শন ছেলেটার উজ্জ্বলতা যেনো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। হাসি-খুশি থাকা ছেলে টা একরাতেই কেমন নীরব, গম্ভীর হয়ে গেছে। কারো সাথে প্রয়োজন ব্যতিত কথা বলে না। সারাক্ষণ কাজের মাঝে ডুবে থাকে। আচ্ছা এভাবে একটা যন্ত্র মানবে পরিণত হওয়ার মাঝে কি আধো বেঁচে থাকা যায়।

আদি : এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস। ভেতরে চল।

রিক : এতোক্ষণ লাগে আসতে।

রিকের কথার প্রতিত্তোরে আদি কিছু না বলে ভেতরের দিকে হাঁটা লাগায়। ওর সিয়াজানের অসম্পূর্ণ কাজ টা সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব তো সিয়াজানের জামাইজানের ই। এই যে মেঘার হুট করে বিয়ে ঠিক হলো এটা কি সিমথি থাকলে সিমথি মানতো। কখনো নাহ। নিজের বুদ্ধি দ্বারা ঠিকই মেঘার বাবাকে ইমপ্রেস করতো।

কয়েক জোড়া পায়ের শব্দে ড্রয়িংরুমের সবাই দরজার দিকে তাকায়। সবার সাথে আদিকে দেখে মেঘা যেনো আঁধারে ঘেরা আকাশে রঙধনুর দেখা পায়। আদিকে দেখে মেঘার বাবা – মা এগিয়ে আসে। যতই হোক সিমথির বর বলে কথা। কিন্তু আয়াশকে দেখেই মেঘার বাবা মুখ বিকৃত হয়ে যায়। আদি সেসবে তোয়াক্কা না করে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে পড়ে।

আদি : আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল আন্টি।

আদির সালামের জবাব দেয় মেঘার মা-বাবা।

মেঘার বাবা : তা বাবা হঠাৎ আসলে।

আদি : আসতে তো হতোই আঙ্কেল। শুনলাম মেঘার বিয়ে ঠিক করেছেন।

মেঘার বাবা : হুম। এই তো সামনের সপ্তাহে।

আদি : তা মেঘার মতামত আছে নাকি।

মেঘার বাবা : আমার কথায় ওর কথা৷

মেঘার বাবার কথায় আদি তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,,,

আদি : ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আঙ্কেল। সংসার কি আপনি ওকে শিখিয়ে দেবেন ৷ না আপনিই ওর বদলে সংসার করবেন

আদির কথায় সবাই থতমত খেয়ে যায়। আয়াশ আর রিক মুখ চেপে হাসে।

মেঘার বাবা : ম মানে।

আদি : দেখুন আঙ্কেল কথার মারপেঁচ আমার পছন্দ নয়। যা বলার ডিরেক্ট বলছি। সিমথি যদি আজ থাকতো তবে আপনি কি মেঘার বিয়ে অন্য কোথাও ঠিক করার সাহস টা দেখাতেন।

আদির কথায় মেঘার বাবা চপ হয়ে যায়। কথাটা ঠিক। সিমথি থাকলে হয়তো আজ আয়াশের সাথেই বিয়ে দিতে হতো। তবুও মেঘার বাবা উপরে রাগ দেখিয়ে বলে,,,

মেঘার বাবা : তোমার কি মনে হয় আমি ওকে ভয় পেতাম।

আদি : নাহ তো আঙ্কেল। ভয় কেনো পাবে। সিয়া বড়দের যথেষ্ট সম্মান করতো। আপনি ওর সম্মান আর বুদ্ধির কাছে হার মেনে রাজি হতেন।

মেঘার বাবা মাথা নত করে নেয়। আদি উঠে দাঁড়ায়। মেঘার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,,

আদি : আঙ্কেল প্রত্যেক মা-বাবা সন্তানের ভালো চায়। আপনি ও চান। কিন্তু আপনার কাছে মনে হচ্ছে মেঘার বিয়ে তিশান ( মেঘার হবু জামাই) এর সাথে হলে ভালো হবে মেঘা সুখী হবে। কিন্তু আঙ্কেল এটা কখনো হবে না। মেঘা আয়াশ একে অপরকে ভালোবাসে। আপনি ওদের ভালোবাসার মাঝে শুধু শুধু বাঁধা কেনো হচ্ছেন। সংসার টা ওরা দুজন করবে। আমি বা আপনি কেউ করবো না। জুটি তো উপর থেকেই সেট করা আমরা কেনো এর জুটি ওকে ওর জুটি একে দেবো। তাই বলছি আপনি ওদের মেনে নেন। আয়াশ কোন দিক দিয়ে খারাপ। ভালো ভদ্র মার্জিত একটা ছেলে। টাকার প্রশ্ন তুললে বলবো টাকা সবাই কে সুখ দেয় না। আঙ্কেল টাকা তো আমার কাছে ও আছে তাই বলে কি আমি সুখী। নাহ আঙ্কেল৷ দিনশেষে সেই সুখী হয় যার কাছে ভালোবাসার একজন মানুষ আছে যে একান্ত তার। আমার কাছে তো সেই মানুষ টা নেই। তার না বলা কথাগুলো যে বুঝে নেবে। ভালোবাসলে কেনো শুধু কষ্ট পেতে হবে আঙ্কেল। ভালোবেসে সুখটা তো ওদের প্রাপ্য। টাকা দিয়ে সেই সুখ কেনা যায় না আঙ্কেল। আমি আপনাকে ভালোভাবে বুঝাতে এসেছি আঙ্কেল। আশা করি আমার কথার মান রাখবেন। নিজের মেয়ে সুখ টা দেখেন।

আদির কথায় ড্রয়িং রুমে পিনপনে নীরবতা নেমে আসে। মেঘার বাবা মাথা নুইয়ে নেয়। কথা ঠিক। মেঘারা আহত দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। এই মানুষ টা ভালোবেসে সুখ কষ্ট দুটোই পেয়েছে। তাই হয়তো ভালোবাসার মানে টা উনার কাছে অন্যরকম। এক মিশ্রিত অনুভূতি।

মেঘার বাবা : আমার ভুল হয়ে গেছে। তিশান বাবা আমি দুঃখিত। আমার মেয়ে যাকে ভালোবাসে আমি তার হাতে ওকে তুলে দেবো। আমায় মাফ করো।

তিশান : না আঙ্কেল ইট’স ওকে। মা – বাবা চলো।

তিশান ওর মা-বাবা কে নিয়ে বেরিয়ে যায়। আয়াশ-মেঘার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে। আদি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আয়াশ খুশিতে আদিকে জড়িয়ে ধরে।

আয়াশ : Thank you ভাই৷

আদি : ছাড়। তোর মা-বাবা কে নিয়ে আসিস। বিয়ের ডেট ফিক্সড করে জানাস। আঙ্কেল আন্টি আসছি।

মেঘার মা : সেকি কিছু খেয়ে যাও। এই প্রথম আসলে খালি মুখে কিভাবে যেতে দেয়। তুমি সিমথির বর। সিমথি আমার মেয়ের মতো ছিলো।

আদি : আন্টি যার পরিচয়ে আপনাদের কাছে পরিচিত সেই তো নেই তাহলে এসব ফর্মালিটির কোনো প্রয়োজন হবে না। আর বিয়েতে তো আসবোই। তখন নাহয় খাবো আজ আসি।

আদি বেরিয়ে যায়। তন্ময়রা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই কয়েকমাসে এই দীর্ঘশ্বাস সবার নিত্যদিনে সঙ্গী।

আদি : সিয়াজান আমার ভীষণ কষ্ট হয় রে তোকে ছাড়া। তুই সত্যিই কঠিন মনের। পাথরের মন তোর নয়তো আমাকে এতোটা কষ্ট দিস। প্রতিনিয়ত আমাকে তোর শূন্যতা অনুভব করাস। শূন্যতার মাঝেও আমি রাতের আঁধারে তোকে খুঁজে বেড়ায়। নিজের রুমে আমি থাকতে পারিনা। মনে হয় সবজায়গায় তুই চলাফেরা করছিস। তোর হাসির, রাগ, হুটহাট জ্বালানো গুলো বড্ড মিস করি রে। জানিস তিন্নি টা প্রতিদিন তোর কথা বলে কিন্তু ওকে কিভাবে বলি বল তুই আমার সাথে দূরত্ব বাড়িয়েছিস। সিয়াজান তুই বলেছিলি না তোর মানসিক শান্তি প্রয়োজন। আজ আমার মানসিক শান্তি প্রয়োজন রে। আমি হাঁপিয়ে গেছি। ভালোবাসায় এতো কষ্ট আগে জানলে এসবে জড়াতাম না। সারাজীবন একাই থাকতাম।

চলবে,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here