#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part :44
🍁🍁🍁
মেঘার বাবা : আমি যদি তোমাদের এই সম্পর্ক মেনে না নেই। তখন কি করবে
মেঘার বাবার কথায় আয়াশ চমকে যায়। বিচলিত দৃষ্টিতে একবার মেঘার দিকে তাকিয়ে ওর বাবার দিকে দৃষ্টি রাখে। যার ভয়ে এতোদিন লুকিয়ে প্রেম করলো আজ তার সামনেই বসে আছে। মেঘা মুখ কাচুমাচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। ক্ল্পনা করছে কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা।
শুক্রবার হওয়ায় বিকেলের দিকে দুজন ঘুরতে বেরিয়েছিলো। পুরো সপ্তাহ পর আজ দুজন দেখা করেছে। সারা বিকেল এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে খাওয়া দাওয়া করে আয়াশের বাইকে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। প্রতিবার বাড়ি থেকে নিরাপদ দূরত্বে বাইক থেকে নেমে যায় মেঘা। কিন্তু আজ কথায় এতোটায় মজে ছিলো কখন বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছে সে খেয়াল দুজনের কারোরই ছিলো না৷ আচমকা মেঘার খেয়াল হতেই মেঘা বাইক থামাতে বললে আয়াশ ও দ্রুত বাইক থামায়। আর তখনই মেঘা বাইক থেকে নামার আগেই মেঘার বাবা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে ওদের দেখতে পায় আর বাড়িতে নিয়ে আসে।
মেঘার বাবা : এভাবে কাপছো কেনো ( ধমকে)
মেঘার বাবার ধমকে মেঘা বাস্তবে ফিরে। আয়াশকে কাঁপতে দেখে রেগে যায়। এতো ভয় পাওয়ার কি আছে। ওর বাবা কি সিংহ নাকি আশ্চর্য।
আয়াশ : আ আংকেল আ আমি
মেঘার বাবা : ভালোভাবে কথা বলো ( গম্ভীর কণ্ঠে)
আয়াশ : শা/লা/র কপাল একটা। ধরা পড়ার আর সময় পেলো না। কে বলেছিলো আপনাকে ওই সময় বাড়ি থেকে বের হতে। অসুর একটা। ( মনে মনে)
মেঘা : আয়াশের বাচ্চা। আজ তোর খবর আছে। ভালোবাসার সময় বলতে পারে আর বাবার সামনে কথা বলতে পারে না। গবেট একটা। ( মনে মনে)
আয়াশ মেঘার দিকে আড়চোখে তাকায়। মেঘার দৃষ্টি দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়। বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস ছাড়ে। কি ভয়ানক দৃষ্টি। আয়াশ জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলায়। মেঘার বাবা বিরক্তি নিয়ে আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়াশ : আঙ্কেল আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি আপনার মেয়েও আমাকে ভালোবাসে। এখন আপনার মানা না মানার উপরই আমাদের ভবিষ্য নির্ভর করছে। আশা করি আপনি আপনার মেয়ের খারাপ চাইবেন না৷
চোখ বুঁজে একদমে কথাগুলো বলে আয়াশ দম নেয়। ড্রয়িংরুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা। মেঘা হা হয়ে আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘার মা তো প্রথমেই আয়াশকে দেখে পছন্দ হয়েছে। প্রথমেই ভেবে রেখেছিলো মেঘা যদি ছেলেটা ভালোবাসে তাতে উনার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু নিজের স্বামীর উপর চরম বিরক্ত লাগছে। এতো পুলিশি জেরা করার কি আছে।
মেঘা : হায় হায় আমার কিউটি টা। আলাবু বেপি। ( মনে মনে)
মেঘার বাবা : কিন্তু তোমাকে আমার পছন্দ হয়নি।
মেঘার বাবার কথায় আয়াশ হতভম্ব হয়ে যায়।
আয়াশ : জ্বি মানে।
মেঘার বাবা : এখন আসতে পারো।
আয়াশ : কিন্তু,,
মেঘার বাবা : যাও
আয়াশ অসহায় দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকায়। মেঘার ছলছল চোখ দেখে বুকের ভেতর মোচড় মেরে উঠে। মনে মনে মেঘার বাবাকে অসুর নামক শ্বশুর নাম দিয়ে বেরিয়ে যায়। মেঘার বাবা মেঘার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা লাগায়।
এতোটুকু বলে মেঘা শুকনো দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। রোদেলা, তুহিন একে অপরের দিকে তাকায়।
সিমথি : আয়াশ ভাইয়াকে পছন্দ না হবার কারণ বলেনি আঙ্কেল।
মেঘা : নাহ।
তুহিন : আরে সেন্টি খাস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
মেঘা : সিমথি তুই কিছু একটা কর বোন প্লিজ।
মেঘার কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকায়।
সিমথি : আমি কি করবো। তোর বাবা আমার কথা শুনবে।
মেঘা : শুনবে। তুই বলে দেখ প্লিজ।
সিমথি মেঘার চোখে পানি দেখে চোখ মুখ কুঁচকে নেয়। বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
সিমথি : ছোট বাচ্চার মতো প্যাচ প্যাচ করিস না। বমি দেখছি।
সিমথির কথায় মেঘা কিছু টা ভরসা পায়।
ভার্সিটি ছুটির পর রিকশার জন্য রোদে দাঁড়িয়ে থাকার মতো বিরক্তি আর দ্বিতীয় কিছু তে নেই। আদিবা রাস্তায় রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আজ গাড়ি আসবে না। কপালের উপর হাতের উল্টো পিঠে সূর্যের আলো ঠেকানোর বৃথা চেষ্টা করছে। ফর্সা মুখশ্রীতে ঘামের বিন্দু বিন্দু কণা জমেছে।
আদিবা : এখন একটা রিকশা নেই। অন্যদিক এদিক ওদিক থেকে ডাকতে শুরু করে কোথায় যাবে কোথায় যাবেন। আর আজ কারো টিকিটি ও নেই।
আদিবা বিরক্তি নিয়ে মাথা নুইয়ে হাঁটতে শুরু করে । কিছুটা হাঁটার শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খাওয়ায় আদিবা দুইপা পিছিয়ে যায়। বিরক্তি যেনো এবার আকাশ ছুঁই ছুঁই। রাস্তার মাঝে খাম্বাগুলো রাখার কি দরকার ছিলো। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই বিরক্তির স্থানে একরাশ চমক এসে হানা দেয়। পরিচিত কাঙ্ক্ষিত মুখটা দেখে বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু হয়। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বেয়ে জায়গা। গলা শুকিয়ে চৌচির হয়ে আসছে আদিবার পা টলছে। আদিবাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সামনে ব্যক্তি ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। আদিবার বুকটা ধক করে উঠে।
আফিন : আরে ভা,, আদিবা তুমি এখানে।
পাশ থেকে পরিচিত কন্ঠে আদিবার হুশ ফিরে। সূর্যের দুই পাশে আফিন, আহান কে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করে। আলতো হেসে রিনিরিনে স্বরে বলে,,,
আদিবা : পেছনে আমার ভার্সিটি।
আহান : ওহ কোথায় যাচ্ছো হেঁটে।
আদিবা : আ আসলে রিকশা খুঁজতে । আজ বাসার গাড়ি আসেনি। ড্রাইভার আঙ্কেল ছুটিতে আছে। আর ভাইয়ারা ও অফিসে।
আফিন : ওহহহ। আমরা এদিকটায় ঘুরতে এসেছিলাম। এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি।
আদিবা : ওহ ( আড়চোখে সূর্যের দিকে তাকিয়ে)
আহান : তা যাবে কি হেঁটেই। বাড়ি কতদূর এখান থেকে।
আদিবা : ওই ঘন্টা খানেক। দেখি সামনে কিছু পাই কিনা। নয়তো ভাইয়াকে কল করবো।
আহান : ওহ। আদি ভাইয়া, সিমথি ভাবী, মেহের ভাবী সবাই ভালো আছে।
আদি : হুমমম
আহান আফিন চোখে চোখে কিছু একটা ইশারা করে কেশে আদিবার দিকে তাকিয়ে কেবলা কান্ত হাসি দেয়।
আফিন : আমাদের একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে। আমাদের এখুনি যেতে হবে। তোমাকে না হয় সূর্য পৌঁছে দেবে।
আফিনের শেষ কথায় আদিবা চমকে সূর্যের দিকে তাকায়। সূর্যের প্রখর চাহনি দেখে আদিবা হাস ফাঁস করে। মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে মিমমিনে গলায় বলে,,,
আদিবা : তার দরকার পড়বে না ভাইয়া। আমি যেতে পারবো।
আহান : আমরা জানি বোন। কিন্তু আজ রোদের প্রখরতা দেখেছো৷ প্রকৃতি জ্বলসে যাচ্ছে। এই গরমে তোমাকে হেঁটে যেতে হবে না। আমরাই দিয়ে আসতাম কিন্তু কাজ পড়ে যাওয়ায় সম্ভব হয়নি।
আদিবা : কিন্তু,,,
আফিন : বড়দের কথা অমান্য করতে নেই। ওই যে সূর্যের গাড়ি৷ তোমরা যাও। আমরা বাইকে করে চলে যাবো।
আদিবা : আপনাদের বাইক কোথায়।
আফিন : রাস্তার ওপাশে রাখা আছে। আচ্ছা যাও তাহলে আসি এখন। আবারো দেখা হবে।
আদিবা : হুমম।
আফিন, আহান দুজনের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে সূর্যের কানে কানে কিছু বলে দুজনই হাসতে হাসতে যায়। আদিবা ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মাথা পুনরায় নিচু করে নেয়। আদিবাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সূর্য নিজেই আদিবার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে। আচনকা চেনা স্পর্শে আদিবা হকচকিয়ে যায়। সূর্যের হাতে ভাঁজে নিজের হাত দেখে সমস্ত শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বেসামাল হয়ে যায়। আদিবার শরীরের কাঁপুনি টের পেয়ে সূর্য মনে মনে হাসে। গাড়িতে বসে দুজনই সিটবেল্ট বেঁধে নেয়। সূর্য একপলক আদিবার দিকে তাকিয়ে ড্রাইভিং শুরু করে।
সূর্য : বি ইজি আদিবা।
সূর্যের কথায় আদিবা মাথা তুলে একপলক তাকিয়ে আবারো চোখ নামিয়ে নেয়। কোনো কারণ ছাড়া এমন অবস্থায় আদিবা নিজেই নিজের উপর চরম বিরক্ত। ক্লান্তিতে সিটে মাথা হেলিয়ে চোখ বুঁজে একটা লম্বা শ্বাস টানে।
সূর্য আদিবার দিকে একপলক তাকিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগী হয়।
___________
ইশান : কি ব্যাপার বড় মা মেঝো মা। বাড়িতে কোনো স্পেশাল কিছু নাকি আজ।
আদির মা : সে কি তুই জানিস না।
ইশান : জানবো কিভাবে দুদিন কি বাড়ি ছিলাম।
ইশানের মা : টুডে তোমার শায়লা আপু কামিং
ইশানের মায়ের কথায় ইশান চমকায়। মুখে হাসি ফুটিয়ে চিল্লিয়ে বলে,,,,
ইশান : সিরিয়াসলি! শায়লা আপু আসছে।
শাওনের মা : হ্যাঁ রে বাবা। মেয়েটা কতবছর পর দেশে আসছে বলতো। আদির বিয়ে তে ইনিমা টার এক্সাম থাকায় আসতে পারলো না। কতবছর পর মেয়েটা আসছে নিজের দেশে।
ইশান : ওয়াট এ্যা প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ। ভাইয়ারা জানে।
মেহের : নাহ। শায়লা না করেছে। বলেছে ওদের সারপ্রাইজ দেবে। ছোট মা তো তোমাকে বলে দিলো।
ইশান : যাক গে। দুলাভাই, আপু পুচকি দুটো সবাই আসছে নাকি।
আদির মা : হ্যাঁ
ইশান : যাক অনেক দিন পর আবারো বাড়িতে হৈহল্লা হবে।
শাওনের মা : অন্যদিন হৈহল্লা করিস না নাকি।
আদির মা : এতোদিন তো তোরা করতি। করিম সিমথি আসার পর তো তোরা একেকটা আরো চিল্লাপাল্লা করিস।
ইশান : তুম নেহি জান্না। যায় হোক একটা ঘুম দিয়ে আসি আমি। রাত জাগতে হবে তো
ইশান দৌড়ে রুমে চলে যায়।
শাওনের মা : আজ আর কারোর ঘুম হবে না। সবগুলো ছাঁদে বসে আড্ডা দেবে।
আদির মা : একেকটা বাঁদর।
আদির মায়ের কথায় সবাই হেঁসে দেয়।
চলবে,,,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)