#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 45
🍁🍁🍁
বাড়িতে আসতেই সামনে পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চা কে পড়ে যেতে দেখে সিমথি দ্রুত ধরে নেয়। এতে করে হাতের এপ্রোণ টা নিচে পড়ে যায়। সিমথি সেদিকে খেয়াল না করে বাচ্চা টা কে আগলে ধরে। হাঁটু গেড়ে বাচ্চাটার সামনে বসে হাত-পা চেক করে। অতঃপর বাচ্চার গালে হাত রেখে মোলায়েম গলায় শুধায়,,,,
সিমথি : লাগেনি তো তোমার।
বাচ্চা টা মাথা নেড়ে না করে। সিমথি আলতো হেসে নিচ থেকে এপ্রোণ টা তুলে একবার বাচ্চা টার দিকে তাকায়। ছেলেটা কে চিনতে না পেরে ড্রয়িংরুমের দিকে দৃষ্টি রাখে। আজ আসতে একটু দেরী হবে বিধায় ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলো। আদিকে ও বাড়ি চলে আসতে বলেছিলো। বাচ্চাটা দৌড়ে আদির কোলে উঠে যায়। এতে করে সিমথির ভ্রু কুঁচকায়। আদি বাচ্চা কে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মেইন ডোরের দিকে চোখ পড়তেই মুখের হাসি চওড়া হয়।
আদি : সিমথি ওখানে কি করছো। ভেতরে আসো।
আদির কথায় সবাই সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি সবার দিকে চোখ বুলিয়ে অপরিচিত চারটা মুখে দৃষ্টি রাখে।
আদির মা : এসেছিস তুই। এতো দেরী হলো যে।
সিমথি : ওই শেষ মুহূর্তে একজন ইমার্জেন্সি প্রেশেন্ট এসেছিলো তাই।
শাওনের মা : যা মা ফ্রেশ হয়ে আয়। ক্লান্ত লাগছে।
সিমথি : হুম যাচ্ছি।
আদিবা : বউমণি জানো,,,
আদির মা : মেয়েটা কে আগে ফ্রেশ হতে দে। সারাদিন পর আসলো।
আদিবা মুখ ফুলিয়ে বসে পড়ে। সিমথি মুচকি হাসে।
সিমথি : মেহের ভাবী তিন্নি কোথায়।
মেহের : পড়ছে ভেতরে। তোর কন্ঠ শুনছে না। এখনি এসে পড়বে। ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আয়। নয়তো আর ছাড় পাবি না
সিমথি আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। যাওয়ার আগে আবারো চারজনের দিকে তাকায়।
কথার মাঝে হুট করে নোটিফিকেশনের শব্দে আদি ফোন হাতে নেয়। সিয়াজান লেখাটা দেখে ম্যাসেজ ওপেন করে।
” আদি রুমে আসো কথা আছে ”
ম্যাসেজ টা দেখে আদি সবার দিকে চোখ বুলায়। এভাবে সবার সামনে থেকে উঠে গেলে উল্টাপাল্টা কিছু ভাববে ভেবে একটা ছক কষে। গুনে গুনে একমিনিট পর আদির ফোন বেজের উঠে। আদি সবার ফোন রিসিভ করে,,,
আদি : হ্যাঁ বলুন
______
আদি : কিন্তু ফাইল টা তো আমার বাড়িতে।
_____
আদি : তাহলে একটু পরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
____
আদি : এখনই লাগবে
____
আদি : আচ্ছা ওয়েট করুন।
____
আদি : তোমরা কথা বলো আমি একটা মেইল করে আসছি।
আদির কথায় সবাই সায় জানায়। রুমে এসে আদি সিমথিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে। সিমথি নাক ফুলিয়ে আদির পেতে গুতা মারে।
আদি : আহহ। গ/রু একটা।
সিমথি : মেয়ে মানুষ কখনো গ/রু হয়না।
আদি : হুহ। বাই দ্য ওয়ে সবার মাঝে ডেকে আনলে কেনো।
সিমথি : আদি তোমার,,
আদি : সিয়াজান এটা রোমান্সের সময় না। রাতে যতখুশি আদর করো। এখন বাড়ি ভরা মানুষ। এখন দরজা লাগিয়ে রোমান্স কিভাবে করবো বলো।
সিমথি কটমট দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। বুকে কিল মেরে রেগে বলে,,,,
সিমথি : অ/স/ভ্য লোক
আদি : আমি কি করলাম। দেখো জানপাখি আমার রোমান্সের নির্দিষ্ট সময় আছে। এখন না প্লিজ।
সিমথি : ধ্যাতত। আমারই ভুল, সরুন। নিচে যাবো।
সিমথি কে চলে যেতে দেখে আদি লাফিয়ে সিমথির হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
আদি : আচ্ছা শান্ত হ। মজা করছিলাম। বল কেনো ডাকলি ।
সিমথি : নিচে ওরা কে।
আদি : কারা।
সিমথি : ওই যে নতুন চারজন।
আদি : ওহ। শায়লা আপু, আপুর বর আর ছেলেমেয়ে।
সিমথি : শাওন ভাইয়ার বোন।।
আদি : হুমমম ( নাক টিপে)
সিমথি : আমি বাচ্চা না।
আদি : এটার জন্য ডেকেছিস।
সিমথি : হুম হুম।
আদি : আমি আরো কত কাহিনী বানিয়ে আসলাম।
সিমথি : মানে।
আদি : মানেটা হলো তুমি এভাবে ডাকলে এটাতো কেউ জানেনা । সবার সামনে থেকে উঠে আসলে ভাবতো তুমি রুমে এসেছো তাই আমিও এসেছি। আর দুলাভাইয়ের মুখে কিছু আটকায় না। প্রচন্ড রসিক মানুষ৷ মা-বাবার সামনে এমন কিছু বলতো যে লজ্জায় পড়ে যেতাম।
সিমথি : তোমার লজ্জাও আছে জানতাম না তো।
আদি : তোমার সামনে তো আমি সবসময় নির্লজ্জ। এটার প্রমাণ প্রতি রাতে পাও।
সিমথি : ছিহহহ। সরো তো। নিচে যাবো।
সিমথি আদির উত্তরের অপেক্ষা না করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আদিও হাসতে হাসতে সিমথির পেছন পেছন যায়।
সিমথি এসে মেহেরের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তখনই শায়লা উঠে এসে সিমথির সামনে দাঁড়ায়। মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,,,,
শায়লা : ও আমাদের আদির বউ।
মেহের : হুমমম।
শায়লা : মাশাল্লাহ। আমি কিন্তু তোমার বড় ননদ হয়।
শায়লার কথায় সিমথি আলতো হাসে। পায়ে ধরে সালাম করতে গেলে শায়লা আটকে দেয়।
শায়লা : আরে আরে কি করছো। সালাম করতে হবে না।
সিমথি : আপু ওদের নাম কি। ( বাচ্চা দুটোকে দেখিয়ে)
সিমথির কথায় শায়লা হাসে। ইনিমা আর আয়াজ কে ডেকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
শায়লা : ও হচ্ছে ইনিমা আমার বড় মেয়ে আর ও হচ্ছে আয়াজ।
সিমথি বাচ্চা দুটোর দিকে তাকিয়ে হাসে। বাচ্চা দুটোকে ধরার জন্য হাত নিশপিশ করছে। কিন্তু শায়লা যদি কিছু মনে করে।
শায়লার বর তুষার এসে সিমথির সামনে দাঁড়ায়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। মেয়েটাকে কেমন চেনা চেনা ঠেকছে কিন্তু চিনতে পারছে না। সিমথি ও তুষার কে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। প্রথম থেকেই লোকটাকে চেনা চেনা লাগছিলো।
তুষার : আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে চিনি। বাট কোথায় দেখেছি বলোতো।
আদিবা : বউমণিকে তো মাঝে মাঝেই টিভিতে দেখায়।
তুষার : না শ্যালিকা। ওকে আমি সামনা-সামনি দেখেছি।
সিমথি : আমার ও আপনাকে চেনা চেনা লাগছে।
শায়লা : সেকি তোমরা দুজন দুজনকে কিভাবে চেনো।
আদি : কোথায় দেখলে।
তুষার কিছু ক্ষণ ভেবে আচমকা হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠে,,,,
তুষার : তুমি সেই মেয়েটা না যে আমার বন্ধু মৃণাল কে রিজেক্ট করেছিলে। তুষারের কথায় সিমথি হকচকিয়ে তাকায়। আদি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার সিমথির দিকে তো একবার তুষারের দিকে তাকায়।
শাওন : মৃণাল কে।
তুষার : আমারই এক ফ্রেন্ড। তুমি তো লন্ডনে ছিলে তাইনা। তখনই মৃণাল ওকে প্রপোজ করেছিলো। কিন্তু
আদি : কিন্তু
তুষার : কিন্তু সেদিন সিমথি কাট কাট গলায় বলেছিলো ও নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে।
তুষারের কথায় আদি প্রশান্তির শ্বাস টানে। ছোটরা সবাই ” ওহহোহহ ” করে উঠে। শাওনের মায়েরা মুখ টিপে হেসে একে অপরের দিকে তাকায়। সিমথি ঠোঁট কামড়ে নিচের দিকে তাকায়। এভাবে বড়দের সামনে লজ্জায় পড়তে হবে জানলে নিচেই আসতো না।
তুষার : তা শালা বউ তোমার উনি কি আমার শা/লা বাবু।
তুষারের কথায় সিমথি আড়চোখে আদির দিকে তাকায়। আদিকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনে।
আদির মা : চলো বড় ভাবী আমরা রান্না ঘরের দিকটায় যায়। আর এই যে তোমরা রুমে যাও। ছেলেপেলেরা আড্ডা দিক।
আদির মায়ের কথায় আদির বাবা উঠে রুমে চলে যায়। মুহুর্তেই বড়রা স্থান ত্যাগ করে। সবাই কে যেতে দেখে তুষার হা হুতাশ করে বলে,,,
তুষার : তোমার বিরহে আমার বন্ধু একরাতে বারো প্যাগ খেয়েছিলো। বেচারা ওইদিন ও তোমার কথা বলছিলো। আর তুমি তো এদিকে বিয়ে করে সংসার করছো। শালাবাবু জিতছো তুমি।
সিমথি : অজানা মেয়েকে প্রপোজ করার সময় মনে থাকে না হুহ। বারো প্যাগ কেনো এক হাজার প্যাগ খেলেই বা আমার কি ( মনে মনে )
শায়লা : আচ্ছা থামো তো তুমি। তোমার কোন আবাল মার্কা বন্ধু কি করেছে এসব শোনার ইন্টারেস্ট নেই।
ইনিমা : মা উনি কি আমাদের মামণি হোন।
আদি : হুমম মামার বউ তো মামণিই হয় তাই না।
আদির কথায় ইনিমা মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। সিমথি ইনিমার দিকে তাকায়। তিন্নির থেকে বয়সে এক-দুই বছর বড় হবে।
শায়লা : তুহা আসলো না যে।
শাওন : আরে বেচারীর আজ ক্লাস টেস্ট ছিলো। কালও আছে। তাই কাল ভার্সিটি সেড়ে এদিকে আসবে।
শায়লা : ওহ।
চলবে,,,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ )