মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 46

0
358

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 46

🍁🍁🍁

বেশ কিছুদিন পর। সিমথির মা-বাবার মৃত্যু আঠারোতম মৃত্যু বার্ষিকের দুইদিন আগের ঘটনা।

শাওনের মা : মেঝো দেখ তো সব ঠিকঠাক আছে কিনা।

আদির মা : তুমিই দেখে নাও না।

তখনই ইশান চেঁচাতে চেঁচাতে বাড়ির ভেতর ঢুকে।

ইশান : আদি ব্রো, শাওন ব্রো কোথায় তোমারা।

ইশানের ডাকে আদিসহ সবাই ইশানের কাছে আসে।

আদিবা : এনেছিস ছোড়দা।

ইশান : টেন টেনা

মেহের হেসে ইশানের হাত থেকে প্যাকেট টা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়।

শাওন : যেই ফ্লভারের বলেছি সেটা এনেছিস তো নাকি গন্ডগোল কটেছিস।

ইশান : আরে না না।

আদি : দাঁড়া সিয়া কে একটা কল করি।

আদি ফোন থেকে ফোন বের করে সিমথির নাম্বারে ডায়াল করে। প্রথমবার ফোন না ধরলেও দ্বিতীয় বার সিমথি ফোন ওঠায়।

সিমথি : কি হয়েছে। ( গম্ভীর কণ্ঠে)

আদি : ক কোথায় তুমি৷

সিমথি : হসপিটালে। দরকারি কিছু বললে বলো নয়তো রাখছি।

আদি : কখন আসবে।

সিমথি : আজ একটু লেট হবে। মা কোথায়।

আদি : মা রান্নাঘরে।

সিমথি : মাকে বলে দিও আজ আমার একটু লেট হবে।

আদি : হ্যাঁ হ্যাঁ যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ লাগাও। কাজ শেষ করে আসবে ঠিক আছে। কাজ একদম পেন্ডিং রাখবে না।

সিমথি : হুহ রাখছি।

আদিকে কিছু বলার না দিয়ে সিমথি ফোন কেটে দেয়। আদি ফোন কান থেকে নামিয়ে দেখে সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আদি হেসে বলে,,,,

আদি : লেট হবে আজ।

আদিবা : উফফস থেংক্স গড। চল চল বাকি কাজগুলো সেড়ে নেই।

ইশান : এই শায়লা আপুরা কখন আসবে।

আদি : দুলাভাইয়ের অফিস শেষ হলে চলে আসবে। আমরা গিয়ে আমাদের কাজ টা সেড়ে রাখি চল।

আদির কথায় সবাই আবারো কাজে লেগে যায়।

রাত বারোটা বাজতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি। আদি রা সবাই সিমথির জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু সিমথির আসার নাম নেই। আদি চিন্তিত পায়ে একবার বাইরে যাচ্ছে তো একবার ফোন করছে। কিন্তু সিমথির ফোন বন্ধ বলছে।

তুহা : ভাবী এতো লেট করছে কেনো।

আদিবা : আর তো মাত্র কয়েক মিনিট বাকি। কখনই বা আসবে।

বারোটা দশ মিনিটে সিমথি বাড়ি আসে। ড্রয়িংরুমে ডুকতেই টাস্কি খায়। পুরো রুম এমন অন্ধকার দেখে।

সিমথি : বাইরে তো আলো আছে ভেতরে কি হলো। মা রা কি ঘুমিয়ে পড়লো নাকি।

সিমথি ঠোঁট উল্টে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।

_ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, ম্যানি ম্যানি হেপি রিটার্নস অব দ্য ডে।

আচমকা সম্বলিত কন্ঠস্বরে সিমথি চমকে যায়। চোখে মুখে লাইট পড়তেই চোখ বুঁজে নেয়। অতঃপর পিটপিট করে তাকায়। চোখের সামনে ফ্যামিলির প্রত্যেকজনের হাস্যজ্জ্বল মুখ ভেসে আসে। সিমথি মাথা ঘুরিয়ে পুরো রুমের দিকে চোখ বুলায়। সারা ড্রয়িংরুমে বেলুন দিয়ে সাজানো। সামনেই টেবিলে একটা চকলেট ফ্লেভারের কেক। এতোসব আয়োজন দেখে সিমথি দুপা পিছিয়ে যায়। দমিয়ে রাখা বুকের চাপ টা ক্রমশই বাড়তে শুরু করে। সিমথির চোখ-মুখ হঠাৎ ই লাল হয়ে যায়। চোখে অশ্রু টলমল করে। সিমথির হাত থেকে এপ্রোণ টা পড়ে যায়। আদিরা হকচকিয়ে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি পেছাতে পেছাতে শাড়িতে পা বাজিয়ে পড়ে যেতে নিলেও নিজেকে সামলে নেয়।

আদি : সিয়া ( আতঙ্কিত গলায়)

আদির ডাক কে পাত্তা না দিয়ে সিমথি দু হাতে মাথা চেপে ধরে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে দুইটা সাদা কাপড়ে ডাকা র/ক্তা/ক্ত দেহ। কানে বেজে ওঠে কিছু কথা।

_ বাবাই- মাম্মাম তোমরা কখন আসবে। আমি কিন্তু ভীষণ রাগ করেছি।

_ মামণি আমরা কালই চলে আসবো৷ বাবাই- মাম্মাম তোমার জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে আসবে।

_ বাবাই বাবাই উঠো না। ও মাম্মাম ওঠো না। মাম্মাম আমাকে প্রিন্সেস সাজাতে হবে না। আমি তোমাদের জন্য কেক রেখেছি। ওঠো না। ও ভাইয়া মাম্মাম-বাবাই উঠছে না কেনো। এতো লাল রঙ কেনো মাম্মা-বাবাইয়ের গায়ে। আমার ভয় করছে ভাইয়া।

সিমথি : আহহহ।

আচমকা সিমথির চেঁচানো তে সবাই ভয় পেয়ে যায়। আদি দৌড়ে সিমথি কাছে যায়।

আদি : সিয়াজান কি হয়েছে তোর। এমন করছিস কেনো।

সিমথি রেগে আদিকে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে সরিয়ে দেয়। আদি দু পা পিছিয়ে যায়। শাওনরা ঘাবড়ে যায়।

সিমথি : আ আপনারা স সবাই বাজে। কাছে আসবেন না কেউ। এসব কেনো করেছেন। আমি বলেছি আমাকে এই দিনটা মনে করাতে। আপনারা সবাই বাজে। সবাই বাজে, সবাই বাজে।

সিমথি রেগে টেবিলের কেক তুলে নিচে ফেলে দেয়। সাজানো রুমটা এলোমেলো করে দেয়। আদির মা, চাচী, মেহেররা এগুতে নিলে সিমথি রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় ।

সিমথি : কেউ আসবেন না। দূরে থাকুন বলছি। সবাইকে শেষ করে দেবো আমি। আমার ইমোশন নিয়ে মজা করবেন না। সরুন বলছি।

সিমথির এহেন আচরণের সবাই হতভম্ব। সবাই কে অবাক করে দিয়ে আচমকা সিমথি দৌড়ে উপরে চলে যায়। পেছনে সবাই স্তব্ধ হয়ে সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

শাওন : সিমথি এমন করলো কেনো।

ইশান : আমরা ভুল করে ভাবীজ্বিকে আঘাত করে ফেলিনিতো।

আদির মা : মেয়েটা এভাবে ছুটে কোথায় গেলো। ও আদি যা না দেখ না।

আদি যেতে নিলে আদির বাবার কথায় থেমে যায়।

আদির বাবা : এখন যাস না। সায়ন কে ফোন করে একবার আসতে বল তো৷

শাওনের বাবা : কিন্তু এতো রাতে।

আদির বাবা : তো কি মেয়েটা কে একা ছেড়ে দেবো। ওর মুখের অবস্থা দেখেছো তো ভাইজান। এখন ওর সামনে কাউকে পাঠানো বিপদজনক। সায়নের থেকে ডিটেইলসে জানতে হবে।

আদির বাবার কথায় কেউ আর কিছু বলে না। অগত্যা আদি সায়ন কে ফোন করে।

ঘন্টাখানেক পর সায়ন আর ইফাজ আদিদের বাড়ি আসে। দুজনের চোখে মুখেই বিস্ময়। সায়নদের আসতে দেখে সবাই ওদের দিকে এগিয়ে যায়।

সায়ন : কি রে এতোরাতে ডা,,,,

সায়ন পুরো রুমে চোখ বুলায়। সায়নকে থেমে যেতে দেখে ইফাজ ও সায়নের দৃষ্টি অনুসরণ করে। মুহুর্তেই দুজনের চোখে মুখে আতঙ্কের দেখা মেলে।

আদির বাবা : আসলে সায়ন তোমা,,,

সায়ন : আদি তোরা কি পরীর জন্মদিন পালন করতে এসব করেছিস। ( আতঙ্কিত গলায়)

শাওনের বাবা : হুমম কিন্তু

সায়ন : এটা কি করলেন আঙ্কেল। আদি তুই আমাকে একবার জানাবি তো। ( রেগে হালকা চেঁচিয়ে )

আদি : আসলে আমরা

ইফাজ : সিমথি কোথায়।

আদি : ছাঁদে।

সায়ন আর ইফাজ দৌড়ে ছাঁদের দিকে অগ্রসর হয়। ওদের পেছন পেছন বাড়ির সবাই যায়। সায়ন ছাঁদের দরজা বন্ধ দেখে দুজনই ঘাবড়ে যায়। সায়ন চোখের চশমা ঠেলে উপরে তুলে দরজার করাঘার করে।

সায়ন : প পরী দরজা খোল।

____

ইফাজ : সিমথি বোন দরজা খোল।

____

সায়ন : পরী লক্ষ্মীসোনা বোন দরজা খোল। ভাইয়া এসেছি তো। ভয় পাস না খোল। ভাইয়া আছি না। ভাইয়ার কথা শুনবি না। পরী দরজা টা খোল।

সায়নের চোখে পানি চলে আসে। সায়ন হাতে উল্টো পিঠে পানি মুছে দরজায় পুনরায় আঘাত করতে নিলে দরজা খুলে যায়। সায়ন আর ইফাজ দরজা পেরিয়ে ছাঁদে প্রবেশ করে। সিমথিকে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে থাকতে দেখে সায়নের বুক মোচড়ে ওঠে। ইফাজ ওখানেই থেমে যায়। চোখ ছাপিয়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে নেয়। সায়ন নিঃশব্দে সিমথি পাশে বসে সিমথি মাথা টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে। প্রিয় ভাইয়ের স্পর্শ পেয়ে সিমথি মতো বাচ্চাদের ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দেয়। সায়ন সিমথির মাথায় হাত বুলিয়ে ভেজা গলায় বলে।

সায়ন : পরী কাঁদিস না।

সিমথি : ওরা সবাই আমাকে আবারো মনে করিয়ে দিয়েছে ভাইয়া। আ আমি এ দিন টা ভুলে থাকতে চাই। ও ওরা ক কেনো ম মনে করালো।

সায়ন : সোনা বোন আমার ওরা তো জানতো না তাই না।

_____

ইফাজ ঘাড় ঘুরিয়ে ছাঁদের দরজার দিকে তাকায়। আদিদের অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইফাজের খারাপ লাগে। ইফাজ পেছন থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে সিমথির অপর পাশে গিয়ে বসে।

ইফাজ : আমাদের প্রিন্সেস না অনেক সাহসী। সবাই না বলে ওর মন পাথর দিয়ে তৈরি। তাহলে আজ এমন মোমের মতো গলে যাচ্ছে কেনো সে।

____

সায়ন : পরী তোকে আমরা অনেকবার বুঝিয়েছি এসবে তোর কোনো দোষ নেই। তখন তুই ছোট ছিলিস। একটা ঘটনা আঁকড়ে তুই নিজের লাইফ থেকে বার্থডের মতো পবিত্র দিনটাকে বিষাক্ত বানিয়ে রাখিস। আমরা কেউ কিছু বলিনা। তোর কষ্ট টা আমরা বুঝি। কিন্তু এখন যদি এমন করিস ভাইয়ার কষ্ট হয় না। তুই তো জানিস আমরা তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারিনা।

_____

ইফাজ : আদি রা জানতো না তাই এমন টা হয়েছে। আমরা ওদের বারণ করলে আর করবে না। কিন্তু তুই কান্না থামা বোন।

সিমথি : আ আমি বা বাড়ি যাবো।

সিমথির কথায় আদি আহত দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকায়৷

সায়ন : না বোন। এখন বাড়ি গেলে ওরা ভাববে তুই ওদের জন্য চলে যাচ্ছিস। সবাই কষ্ট পাবে। কাল সকালে যাস।

সিমথি : সবার ভালো লাগা খারাপ লাগা আমাকেই কেনো বুঝতে হবে সবসময়। আমার ও তো ভা ভালো লাগা খারাপ লাগা আছে। তোরা এটা কেনো বুঝিস না ভাইয়া ( বিড়বিড়িয়ে)

বেশকিছু ক্ষণ পর সায়ন সিমথির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সিমথির মাথা তুলে দেখে সিমথি ঘুমিয়ে গেছে। আদি আলতো হেসে দেয়। বোনটার স্বভাব এখনো বদলায়নি দেখে। আদি এগিয়ে এসে সিমথি কে কোলে নিতে গেলে সায়ন বাঁধা দেয়।

সায়ন : আমি নিয়ে যাচ্ছি। তোরা ড্রয়িং রুমে গিয়ে বোস আমি আসছি।

সায়নের কথায় আদিরা নিচে চলে যায়। সায়ন সিমথিকে আদির রুমে শুইয়ে দিয়ে নিচে আসে। ইফাজের পাশে সোফায় বসে একটা লম্বা শ্বাস নেয়। মনে পড়ে কালকের পরদিনই তো ওদের মা-বাবার মৃত্যুর আঠারো বছর পূর্ণ হবে।

সেদিন সিমথির জন্মদিন ছিলো। আহনাফ খান আর উনার স্ত্রী কোনো গোপন কেসের তদন্তের জন্য কোথাও গিয়েছিলো সিমথির জন্মদিনের দুইদিন আগে। কিন্তু ফোনে বলেছিলো সিমথির জন্মদিনের সমস্ত আয়োজন করে রাখতে। উনারা দুইজন বিকেলের মধ্যে চলে আসবে। তারপর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। নীলয় খান সহ বাড়ির সবাই সিমথির জন্মদিনের তোরজোর শুরু করে। সিমথির বয়স তখন সাত বছর। ছোট্ট সিমথির আট-দশ টা বাচ্চার মতোই ভীষণ খুশি ছিলো। সিমথি, তরী, রোজ তিন বাচ্চা সারা বাড়ি খেলছিলো। সায়ন আর ইফাজ ছিলো সমবয়সী। বয়সে সিমথির থেকে পাঁচ বছরের বড়। বড় ভাই হবার সুবাদে দুজনই কাজে ব্যস্ত ছিলো। সিমথি খেলার ফাঁকে ফাঁকে বার বার মা-বাবার আসার জন্য গেটের কাছে যাচ্ছিলো। কিন্তু প্রতিবারই মন খারাপ করে ফিরে আসে। একপর্যায়ে ফোন দিয়ে আহনাফ খানের নাম্বারে ফোন লাগায়।

_ শুভ জন্মদিন মামণি।

_ তোমার মামণি ভীষণ রেগে আছে বাবাই মাম্মাম।

_ ওমা তাই। মামণির রাগ ভাঙাতে বাবাই – মাম্মাম কে কি করতে হবে।

_ তোমরা জলদি জলদি চলো আসো বাবাই – মাম্মাম। আমি ওয়েট করছি।

_ আসবো তো মামণি। বাবাই – মাম্মাম তোমার জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে আসবে।

_ সত্যি ( আহ্লাদী স্বরে)

_ হুমম তিন সত্যি।

সিমথি খুশি হয়ে ফোন কেটে দেয়। অতঃপর সিমথি আবারো খেলতে শুরু করে। কিন্তু সময় নিজের মতো গড়াতে থাকে। সিমথির মা-বাবার আসার খবর নেই। সিমথি কেঁদে দেয় আর বলে উঠে মাম্মাম -বাবাইকে ছাড়া কেক কাটবে না। সিমথিকে কেউই বুঝারতে সক্ষম হয়না। শেষমেশ নীলয় খান বলে উঠে,,,

নীলয় খান : সিমথি মামণি তোমার বাবাই-মাম্মাম জ্যামে আটকে গেছে। আমাকে বলেছে তুমি যেনো কেক কেটে নাও। ওরা কিছু সময়ের মধ্যেই চলে আসবে।

নীলয় খানের কথা বিশ্বাস করে সিমথি কেক কাটে। নিজের মাম্মাম – বাবাইয়ের জন্য কেক আলাদা করে রেখে সবাই খেতে দেয়। জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হলে সব নিমন্ত্রিত অতিথিরা ফেরত যেতে আরম্ভ করে। রাত বারোটার দিকে খান বাড়িতে খবর আসে আহনাফ খান আর তানহা খান যে গাড়িতে আসছিলো সেটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। দুজনের অবস্থা গুরুতর। নীলয় খান তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে পড়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য। এদিকে মা-বাবা কে আসতে না দেখে সিমথি আরো ডেস্পারেট হয়ে উঠে। কিন্তু কেউই সিমথি, তরী, রোজকে আহনাফ খান আর তানহা খানের এক্সিডেন্টের কথা জানায়নি। পুরো একদিন পর পরের দিন সকালে হসপিটাল থেকে হঠাৎ খবর আসে তানহা বেগম আর আহনাফ খানের অবস্থা শোচনীয়। মৃত্যুর কয়েক মুহুর্ত আগে সায়নকে আহনাফ খান নিজের কাছে ডেকে পাঠায়। সায়ন নিজের বাবাকে এমন অবস্থায় দেখে কেঁদে দেয় ছোট্ট মনটা। আহনাফ ছেলেকে দুর্বল হাতে নিজের কাছে ডাকে।

_ স সায়ন এ এদিকে আ আসো

_ বাবা তুমি এভাবে শুয়ে থেকো না। আমার পরী কষ্ট পাচ্ছে। আমার ও কষ্ট হচ্ছে বাবা।

_ ব বেটা ত তুমি য যদি এএএ অঅঅবস্থায় ভেঙ্গে যাযাও তাতাহললে তোমাড পর রীকে কে দেখববে। ত তুমি ও ওর বড় ভাই। আমার আ আআর তোমমমার মায়েরর অবর্তমানে ওওওর গার্ডিয়ান। তোমমমার হাতে ওর দাদাদায়িত্ব দদিয়ে গগগেলাম। ককখনো আমমমার প্রিনননন্সেস কে ককককস্ট পেতে দিদিও না। সসসর্বদা ও ওওর ঢাঢাল হয়ে থেথেকো। তুতুতুমি ছাছাড়া ওওওর আর কে কেউ নে নেই।

কথাগুলো বলামাত্র আহনাফ খানের শ্বাসকার্য থেমে যায়। সায়ন ডুকরে কেঁদে ওঠে। নীলয় খান প্রাণপ্রিয় ভাইয়ের মৃত্যুতে অনেকটায় শোকাচ্ছন্ন হশে পড়ে। খান বাড়িতে খবর পাঠানো হয়। পুরো শহরের মুহুর্তেই বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পড়ে মেজর আহনাফ খান এবং এডভোকেট তানহা খানের মৃত্যুর খবর।

সিমথি ছোট ছোট পা ফেলে ওর মা-বাবার ডেডবডির সামনে এসে দাঁড়ায়। ছোট্ট সিমথি তখনও বুঝতে পারেনি ওর মাথার উপর থেকে সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল টায় হারিয়ে গেছে।

সিমথি : বাবাই – মাম্মাম তোমরা এখানে ঘুমিয়ে আছো। তোমাদের সাথে আমার জন্মের কাট্টি। জানো আমি কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম। ভাইয়া দেখেছিস ওরা এখনো ঘুমাচ্ছে।

সায়ন : বোন

সিমথি : ও বাবাই মাম্মাম উঠো। আমি তোমাদের উপর রেগে নেই। সত্যি বলছি। কেক রেখেছি আমি তোমাদের জন্য। ও মাম্মাম আমি প্রিন্সেস সেজেছি তুমি না বলেছিলে আমার ছবি দেখবে। তাহলে ঘুমিয়ে আছো কেনো ওঠো না।

ইফাজ : সিমথি শোন

সিমথি : ও ইপাজ ( ইফাজ) ভাইয়া মাম্মাম-বাবাইকে উঠতে বলো না। আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে। ওরা কথার খেলাপ কেনো করছে। এটাকে তো প্রতালণা ( প্রতারণা) বলে

সিমথির এই ছোট্ট গলায় একরাশ অভিমান মিশ্রিত কথাগুলো ও সেদিন ওর মা-বাবার ঘুম ভাঙ্গাতে পারেনি। যে ঘুম চিরতরে হয় সেই ঘুম কি কভু ভাঙ্গে হুহু। তারপর ধীরে ধীরে সিমথি কেমন হতে শুরু করে। সেদিনের পর থেকে আর কোনো দিন জন্মদিনের নাম মুখে আনেনি। একবার সায়নরা আয়োজন করেছিলো কিন্তু সিমথি ভয়াবহ রিয়েক্ট করেছিলো। একপর্যায়ে সেন্সলেস হয়ে যায় । সেদিন ডাক্তার জানিয়েছিলো এই নিজের জন্মদিনের উপর ওর প্যানিক আ্যটাক হয়ে গেছে। এই দিনটায় ওর স্টার মাম্মাম-বাবাইয়ের কথা মনে পড়ে যায়। সিমথির বয়স যখন বারো তখনই সিমথি বুঝতে পারে ওর মা-বাবা স্টার হয়ে গেছে এটা কোনো সুখবর না। ওর জীবনের সবচেয়ে বড় শূন্যতার জায়গা। সেদিন থেকে বাড়ির প্রত্যেকে এই দিনটা মনে রেখেও ভুলে যেতো। সিমথি ও সারাদিন নিজেকে রুমবন্দী করে রাখতো।

এতোটুকু বলে সায়ন চোখের কার্নিশের পানি টুকু মুছে আদির দিকে তাকায়। ড্রয়িং রুমে সবাই বাকরুদ্ধ। সামান্য জন্মদিনের মতো পবিত্র দিনটাকে ঘিরেও কারো জীবনে একটা কালো অধ্যায় থাকতে পারে এটা সবার ধারাণতীত ছিলো।

মেহের : নিজেদের অজান্তেই এতো বড় কষ্ট দিয়ে দিলাম মেয়েটা কে।

আদি : সব আমার দোষ। আমি না জানালে তো এসব হতোই না।

সায়ন : না ভাবী, আদি তোমাদের কারো দোষ নেই। তোমরা ওকে খুশি করতে চেয়েছিলে কিন্তু তোমরা তো জানতে না এসব। আমারই ভুল হয়েছে। আমার তোমাদের বলে দেওয়ার দরকার ছিলো। আঙ্ক আন্টি আমি জানি পরীর প্যানিক আ্যটাক হবার পর হয়তো বাজে বিহেভ করেছে তার জন্য দুঃখিত। আপনারা কিছু মনে করবেন না। কাল সকালে দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।

ইফাজ : সায়ন মিম ফোন করেছিলো বাড়ি যেতে হবে।

শাওনের বাবা : অনেক রাত হয়ে গেছে আজ বরং থেকে যাও।

সায়ন : তা হয়না আঙ্কেল। আদ্র টার শরীর ভালো না তেমন। আমাকে যেতে হবে। আপনারা চিন্তা করবেন না। আর সিমথির জন্য আমি আবারো দুঃখিত।

আদির বাবা : না না বাবা এসব বলে আমাদের লজ্জা দিও না। আসল অপরাধী তো আমরা। মেয়েটার ক্ষত জায়গায় আবারো ক্ষত সৃষ্টি করলাম।

সায়ন কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

শাওন : চলো আমরা এগিয়ে দিয়ে আসি।

সায়ন আর ইফাজ সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়।

ইশানের বাবা : হাসির আড়ালেও কিছু মানুষের কষ্ট কেউ দেখতে পারে না। এতোকিছুর পরও মেয়েটা শ্বাস নেয় কিভাবে।

আদির মা : আদি তুই সিমথির কাছে যা। আমি ওর খাবার নিয়ে আসছি। আর তোমরা খেয়ে নাও।

আদিবা : আমি খাবো না মা। ভালো লাগছে না।

তুহা : আমিও না।

একে একে সবাই খাবে না বলে ওঠে। আদির মা রেগে বলে,,,

আদির মা : তোরা যদি শুনেই এমন করিস তাহলে মেয়েটা নিজের চোখের সামনে এতোকিছু দেখেও কিভাবে আছে। তোরা এমন করলে মেয়েটাও নিজের চারপাশে শূন্যতা অনুভব করবে। এটা কি চাস তোরা।

_ না না

শাওনের মা : তাহলে সবাই খেয়ে চুপচাপ রুমে গিয়ে ঘুমা। কাল স্বাভাবিক বিহেভ করবি।

অগত্যা সবাই খেতে বসে। আদি রুমের দিকে অগ্রসর হয়।

বিছানার মাঝে সিমথির নির্জীব মুখটা দেখে আদির চোখ ভিজে উঠে। সিমথির উপর ঝুঁকে কপালে চুমু খায়।

আদি : আম সরি জান। তোকে আবারও কষ্ট দেবার জন্য। সত্যিই সরি।

চলবে,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here