#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 47
🍁🍁🍁
ঘুমের মাঝে কপোলে তরল পদার্থের অনুভূত হতেই সিমথির ঘুম পাতলা হয়ে আসে। কিন্তু বেশখানিক সময় অশ্রু জড়ানোর ফলে মাথাটা ভার হয়ে আছে। সিমথি ঘাড় ঘুরিয়ে অন্য সাইডে মুখ ঘুরায়। চোখে সূর্যের তীর্যক রশ্মির আলো পড়তেই সিমথি চোখ মুখ কুঁচকে নেয়। চোখ পিটপিট করে খুলে পরিচিত রুমে নিজে আবিষ্কার করে। সিমথি ঘাড় বাঁকিয়ে দেখে আদি সিমথির পাশে বসে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। সিমথি ধপাস করে উঠে বসে।
সিমথি : এমন ভূ/তে/র মতো ডাগর ডাগর চোখে দেখবেন না তো। ঘুম থেকে উঠে এসব দেখলে ভয় লাগে।
আদি : হসপিটালে যাবে না।
সিমথি : কয়টা বাজে।
আদি : দশটা পয়ত্রিশ
সিমথি : ওহ আচ্ছা। এইই কিহহ
সিমথি হালকা চেঁচিয়ে দেয়ালে ঘড়ির দিকে তাকায়। সময় দেখে সিমথির চোয়াল ঝুলে যায়। এতো সময় লাস্ট কবে ঘুমিয়েছিলো সিমথির মনে নেই। সিমথি তাড়াহুড়ো করে উঠে নিচে নামতে নিলে শাড়িতে পা বাজিয়ে বিছানায় ধপাস করে পড়ে যায়। আদি মন খারাপের মাঝেও শব্দ করে হেঁসে দেয়। সিমথি চোখ মুখ কুঁচকে আদির দিকে তাকায়।
সিমথি : আদি হাসবা না। উঠাও।
সিমথির হাত টেনে আদি সিমথিকে উঠায়। সিমথি আদির বুকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে নিজে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
আদি : ধাক্কা মারলে কেনো।
সিমথি : ইচ্ছে হয়েছে তাই।
সিমথি আদির পাল্টা জবাব না শুনেই ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আদি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিচে নেমে যায়। কাল রাতেও খায়নি এই মেয়ে।
আদির মা : কি রে উঠলো।
আদি : হা মাত্র উঠলো।
শাওনের মা : ঠিক আছে তো।
সিমথি : কার ঠিক থাকার কথা বলছো বড় মা। কারো কিছু হয়েছে।
সিমথির কথায় সবাই সিঁড়ির দিকে তাকায়। আজ ফ্রাইডে হওয়ায় সবাই বাড়িতেই আছে।
সিমথি : আরেহহ সবাই আমাকে দেখলে থমকে যাও কেনো আমি কি তোমার কথার মেশিন মিউট করে দেয় আজব।
তিন্নি : কাকিয়য়য়য়া।
সিমথি : ওলেলে আমাল মা টা আতো। কলো আতো।
সিমথি তিন্নিকে কোলে নিয়ে নাদুসনুদুস গালে টপাটপ চুমু খায়। তিন্নি খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। সবাই সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ দেখলে বলবে এই মেয়ে কাল এতোকিছু করলো।
মেহের : খেতে আয়। দুপুর হয়ে যাচ্ছে কখন খাবি।
সিমথি : এখন খাবো না। একটু পর হসপিটাল যাবো।
আদির মা : কি খাবি না কাল রাতেও খাস নি। এখন খাবিনা। এই শরীরে খাওয়া নিয়ে এতো বাহানা কিসের তোদের।
সিমথি : শ্বাশুমা রাগো কেনো। খাবো তো। আমি কি না করেছি নাকি।
সিমথির কথায় আদির মা রাগের মাঝেও হেসে দেয়। সিমথি হাসতে হাসতে হঠাৎ মুখ মলিন করে ফেলে।
সিমথি : আব,,, কাল রাতের জন্য সরি মা, মেহের আপু, সবাই কে। আসলে আমি এ,,,
শাওনের৷ মা : এসব বাদ দে। খেতে আয়। মেহের, আদিবা, তুহা কেউই খায়নি ৷
সিমথি : হায় খোদা। এরা খাবার নিয়ে এতো অনিয়ম করে কেনো। শায়লা আপু কোথায়।
শাওনের মা : রবিবার ইনিমার পরীক্ষা। তাই সকাল সকালই বেরুতে হয়েছে। চিন্তা করিস না চলে আসবে ইনিমার বই-খাতা নিয়ে।
সিমথি : ওহহো।
সিমথিরা খেয়ে সবাই এসে ড্রয়িং রুমে জড়ো হয়। সিমথি আড়চোখে আদির দিকে তাকায়। বেচারার চোখ লাল হয়ে আছে। কি ব্যাপার কেঁদেছে নাকি সারারাত আমার বিরহে ঘুমায়নি।
আদির বাবা : বুঝলি সিমথি গ্রাম থেকে আমার আব্বু-আম্মা আসবে। কতদিন পর আসছে।
সিমথি : কবে আসবে।
শাওন : সামনের সপ্তাহে আসবে।
সিমথি : ওহোহ। শুধু দাদু – দাদিই আসবে আর কেউ না।
আদিবা : হুমম নাহ। মেহের ভাবীর বাড়ির লোকরা ও আসবে অনেকেই আসবে।
সিমথি : কোনো স্পেশাল ডে নাকি সামনে।
ইশান : স্পেশালই তো আমাদের তিন্নি রাণীর জন্মদিন।
সিমথি : ওমা তাই আমাদেল তিন্নি লাণী বুঝি আট বছলে পা দিবে।
সিমথির কথার স্টাইলে সবাই হেসে উঠে। সবাই মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে মেয়েটা স্বাভাবিক হবাই।
_____________
আচমকা পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় আদি চমকে যায়। কানে ফোন নিয়েই পেছন ফিরে। সিমথিকে দেখে সিমথির হাত টেনে নিজের সামনে এনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে পুনরায় কথা বলায় মনোযোগী হয়। সিমথি দুষ্টু হেসে আদির বুকের মুখ ডুবিয়ে জোরে শ্বাস নেয়। অতঃপর অধর ছোঁয়ায়। আদি চমকে সিমথির দিকে তাকায়। বেচারা ফোনে একটা জরুরি মিটিংয়ের সম্পর্কে কথা বলছে আর এই মেয়ে দুষ্টামি শুরু করেছে। আদি চেয়েও কিছু বলতে পারছে না। যদি মেয়েটার মন খারাপ হয় পুনরায়। সিমথি আদির থেকে পাত্তা না পেয়ে পা উঁচু করে মুখে ফুঁ দেয়। আদি চোখ বুঁজে সিমথিকে রেলিঙের সাথে ঠেস দিয়ে ধরে। দুহাত পেছনের দিকে নিয়ে চেপে ধরে কথা বলায় মনোনিবেশ করে। সিমথি ঠোঁট ফুলিয়ে আদির দিকে তাকায়। আদি সিমথির নাকের ডগায় চুমু খেয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। আচমকা সিমথি আদির পেটে জোরে চিমটি কাটে।
আদি : আহ
আদির এহেন আর্তনাদে ফোনের ওপাশের মানুষ ঘাবড়ে যায়। আদি চোখ বড়বড় করে একবার ফোনের দিকে তাকায় অতঃপর সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি শব্দ করে হাসতে নিলে আদি মুখ চেপে ধরে।
আদি : রহিত এখন রাখছি। পরে এটা নিয়ে ডিসকাশন করবো।
আদি ফোন কেটে সিমথির দিকে তাকায়।
আদি : এমন করছো কেনো।
সিমথি : তো করবো না। আমি কখন থেকে তোমার এটেনশন পেতে চেষ্টা করছি আর তুমি আমার সতীনের সাথে রাসলীলা করছো।
আদি : আরেহহ মিটিং নিয়ে কথা বলছিলাম।
সিমথি : ফ্রাইডে তে কিসের মিটিং। একটা দিন তো আমার জন্য রাখবে।
আদি : হাহ। নিজেই তো একটু পর চলে যাবে।
সিমথি : ওটি আছে ( ঠোঁট উল্টে)
আদি সিমথিকে সামনে ফিরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
আদি : আহ জানি তো। তোমার এই হসপিটাল তো আমার সতান।
আদির কথায় সিমথি হেসে উঠে। আচমকা হাসি থামিয়ে মলিন কন্ঠে বলে,,,
সিমথি : সরি জামাইজান।
সিমথির কথায় আদি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
আদি : কেনো
সিমথি : কালকের জন্য। আমি ইচ্ছে করে তোমাকে ধাক্কা দেইনি। আসলে নিজেকে কন্ট্রোল,,
আদি : হুশশ। আমি জানি জান। কালকের কথা বাদ দাও। আমি বা কেউই কিছু মনে করেনি। আমি সরি তোমাকো হার্ট করার জন্য আমরা
সিমথি : আচ্ছা ওসব বাদ দাও। অতীত নিয়ে ভেবে লাভ নেই বর্তমান নিয়ে ভাবো। কালকের কাহিনি ডিসমিস হুমম।
সিমথির কথায় আদি হেসে দেয়। আচমকা সিমথি আদিকে জড়িয়ে ধরে বুকে নাক ঘষে নিচু কন্ঠে বলে,,,,,,
সিমথি : ভালোবাসি জামাইজান
আদি হেসে সিমথিকে জড়িয়ে ধরে চুলের ভাজে অধর ছোঁয়ায়।
________________
আজকের দিনটা কেমন গুমোট ভাব ধরে আছে। না আকাশে সূর্য উঠেছে আর না বৃষ্টির কোনো দেখা মিলছে। হালকা উষ্ণতা হালকা শীতলা বিরাজ করছে। সকাল থেকে আকাশ গুম মেরে আছে। আজ সিমথির মা-বাবার আঠারোতম মৃত্যু বার্ষিকি। সকাল সকালই আদি – সিমথি সিমথিদের বাড়ি যায়। আজ সিমথির মা-বাবার মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষে ওদের বাড়িতে ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে গরীবদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। আদিরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আদিদের বাড়ির সবাই ও যায়৷ সায়ন বার বার বলে দিয়েছে ওদের সবাই কে যেতে। দুপুরের অনুষ্ঠান শেষে সব গুছাতে গুছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
সায়নরা সবে এসে সোফায় গা হেলায়। ক্লান্তিতে মুখ ভার হয়ে আছে প্রত্যেককের। হঠাৎ করেই সায়ন বলে উঠে,,,,
সায়ন : কি রে সিমথি কোথায়।
সায়নের কথায় সবার হুশ ফিরে।
ইফাজ : সত্যিই তো সিমথি কোথায় গেলো।
_ হে গাইস আম হেয়ার।
চলবে,,,,