#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 48
🍁🍁🍁
মিম : কোথায় ছিলিস তুই৷
সিমথি : উহুমম ছিলাম কোথাও একটা।
সায়ন : হুটহাট এমন করিস কেনো টেনশন হয় তো নাকি।
সিমথি : আমি কি বাচ্চা নাকি। যায় হোক সর সামনে থেকে টিভি চালাবো৷
সিমথির কথায় সবাই হতভম্ব। সিমথি গিয়ে নীলয় খানের পাশে ধপাস করে বসে পড়ে। নীলয় খান চমকে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি টেডি স্মাইল দেয়।
সিমথি : উহুমম ভয় পেলে নাকি বড় আব্বু।
নীলয় খান থতমত খেয়ে যায়।
নীলয় খান : ন নাহ তো। ভয় কেনো প পাবো।
সিমথি : তাও ঠিক তুমি কেনো ভয় পাবে।
সিমথি হেঁসে রিমোট নিয়ে টিভি চালায়। চ্যানেলে পাল্টে নিউজ চ্যানেলে দেয়। সায়ন রা হতবাক হয়। আচমকা মেয়েলি আওয়াজে সবাই টিভির দিকে তাকায়।
” আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে একটা নতুন দিনের আগমন ঘটতে চলেছে। আজকের দিনের সকল ব্যর্থতা, গ্লানি কাল মুছে যাবে৷ সেই সাথে আপনাদের জন্য আছে আজকে শেষ তাজা সংবাদ। আগামী বিশ বছর ধরে যেই গ্যাং ছিলো অধরা। যাদের সম্মুখে কেউই চিনতে পারতো না। এই গ্যাং কে ধরতে গিয়ে অনেক পুলিশ অফিসার আর্মি, অফিসার নিহত হয়েছেন। অনেকে হারিয়েছেন তাদের আদরের সন্তান , কেউ হারিয়েছে নিজেদের স্বামী। কেউবা হারিয়েছে নিজেদের মাথার উপর সবচেয়ে বড় আশ্রয় মা-বাবা কে। আজ আঠারো বছর পর সেই গ্যাং এর সদস্যদের ধরতে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা রা সক্ষম হয়েছে। এন.কে নামক আগন্তুকের কালো ব্যবসায় জড়িত এন.কে গ্যাং এর পঁচিশ জন সদস্যকে নিরাপত্তা বাহিনী আটক করেছে। বর্তমানে সবাই পুলিশ কার্স্টেরীতে। এখনো গ্যাং এর আসল সদস্য অর্থাৎ যার আন্ডারে গোটা সামরাজ্য চলছে তিনিসহ আরো দুইজন সদস্যকে পুলিশ আটক করতে ব্যর্থ হয়েছেন। চলুন একনজরে দেখে নেবো সেই পঁচিশ জন আসামীকে।
আমি মারিয়া খাতুন। বিডি নিউজ চ্যানেল।
স্কিনে ভেসে ওঠে একে একে পঁচিশ জনের মুখ। আদি চমকে সিমথির দিকে তাকায়। সেই মুহূর্তে সিমথিও আদির দিকে তাকায়। আদির দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। আদি যা বুঝার বুঝে নেই৷
নিউজ চ্যানেল জুড়ে যেনো ঝড় উঠেছে। কিছুক্ষণের বাকি দুইজনকেও আটক করা হয়। নীলয় খান ঘামতে শুরু করে। সিমথি সেদিকে একনজর তাকিয়ে হাসে ৷
তখনই সায়নদের বাড়িতে ছয়-সাত জন লোকের প্রবেশ ঘটে। প্রত্যেকের গায়ে আর্মির ড্রেস দেখে কারো বুঝতে বাকি নেই ওরা কারা।
ওদের মধ্যে একজন বয়স্ক লোক এগিয়ে আসে সিমথির দিকে। সিমথি উঠে দাঁড়ায়।
সিমথি : আসসালামু আলাইকুম স্যার।
বয়স্ক লোক হেসে সিমথির সালামের জবাব দেয়।
জাফর : বোস। দাঁড়ালি কেনো।
সিমথি : না না ঠিক আছে আপনি বসুন
সায়ন : জাফর আঙ্কেল আপনি।
জাফর : মাই সান চিনেছো আঙ্কেল কে।
সায়ন : কি বলেন আঙ্কেল আপনাকে চিনবো না কেনো। এতোবছর পর আজ হঠাৎ।
জাফর : বলছি বলছি বসো।
আর্মি অফিসার জাফর ইকবাল। মেজর আহনাফ খানের টিম মেম্বার। আহনাফ খানের মৃত্যুর পর পুরো টিমের দায় ভার এসে উনার উপর বর্তায়।
জাফর : ইফাজ, রোজ, তরী সবাই কেমন আছো।
_ ভালো আঙ্কেল।
সায়ন : রুবি আপু নাস্তার আয়োজন করো।
জাফর : আরে না না ডিউটি টাইমিং। তোর বাবার সাথে থাকতে থাকতে আমিও নিরামিষ হয়ে গেছি। ডিউটি টাইমে নো খাওয়া।
অফিসার জাফরের কথায় সায়ন স্মিত হাসে। অফিসার জাফর নীলয় খানের দিকে তাকায়।
জাফর : তা আপনার ব্যবসা বানিজ্যের কি খবর বড় ভাই।
অফিসার জাফরের কথায় নীলয় খান চমকে যায়। জোরপূর্বক হেসে মাথা নাড়ায়।
জাফর : সবাই স্বাভাবিক হোন। আমি একটা দরকারি কাজে এসেছি। সিমথি মা বাচ্চাদের ভেতরে পাঠাও।
সিমথি : রুবি আপু ইনিমা, আয়াজ, আদ্র কে ভেতরে আমার রুমে নিয়ে যাও।
সিমথির কথায় রুবিনা তিনজনকে নিয়ে উপরে নিয়ে যায়।
জাফর : ওকে পাঠালে না যে ( তিন্নিকে দেখিয়ে)
সিমথি : ওর একটু কাজ আছে।
জাফর : ওহ। শারাফ বাচ্চাদের কাছে যাও।
অফিসার জাফরের কথায় একজন অফিসার রুবিনার পেছন পেছন যায়। জাফর ইকবাল গম্ভীর কণ্ঠে বলে,,,,
জাফর : সিমথি আঠারো বছর পূর্ণ হয়েছে। তুই বলেছিলি সময় মতো চিপ টা আমাদের হাতে তুলে দিবি। এখন সেই সময় টা এসেছে।
জাফর ইকবালের কথায় সায়নরা চমকে সিমথির দিকে তাকায়।
সায়ন : চিপ কিসের চিপ।
জাফর : তোমার মা-বাবার মৃত্যু হয়েছে যেই চিপকে ঘিরে।
সায়ন হতবাক হয়ে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি একপলক সায়নের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসে।
ইফাজ : কিন্তু চিপ টা তো ছোট বাবার কাছে ছিলো। বোনের কাছে কিভাবে আসবে।
সিমথি : বাবাই বাড়ি ছাড়ার আগে চিপ টা আমাকে দিয়ে গিয়েছিলো।
সিমথির কথায় সায়ন চমকায়। নীলয় খান হাতে হাত ঘষতে শুরু করে।
ইফাজ : মানে বুঝলাম না হেয়ালি না করে বুঝিয়ে বল।
সিমথির মা-বাবা যেদিন কেসের গোপন তদন্তের জন্য বাইরে যায় তার আগের দিন রাতে দুজনই সিমথির রুমে আসে।
আহনাফ : প্রিন্সেস
বাবাইয়ে আদর মাখানো কন্ঠের ডাকে সিমথি খেলা ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে আহনাফের কোমড় জড়িয়ে ধরে।
সিমথি : বলো বাবাই। খেলবে
আহনাফ : না মামনি। বাবাইয়ের কাজ আছে। তোমার সাথে আমি একটা অন্য গেইম খেলবো।
সিমথি : অন্য গেইম। কিন্তু কেমন
তানহা : সোনা মা এই গেইমের কথা কিন্তু খুব সিক্রেট।
সিমথি : সিক্রেট
তানহা : হুমম। আগে মাম্মাম- বাবাইকে প্রমিস করো এই গেইমের কথা আমরা তিনজন ব্যতিত কাউকে বলবে না।
সিমথি : ভাইয়া কে ও না।
আহনাফ : না মামণি। তোমার ভাইয়া তো অনেক সহজ সরল। ওকে বললে ও ভয় পাবে। তুমি কি চাও তোমার ভাইয়া ভয় পাক।
সিমথি : নাহ নাহ। আচ্ছা কাউকে বলবো না টপ সিক্রেট রাখবো। গড প্রমিস।
তানহা – আহনাফ একে অপরের দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্ট জনক হাসি দেয়। আহনাফ পকেট থেকে একটা চেইন বের করে সিমথির গলায় পড়িয়ে দেয়। সিমথি অবুঝ দৃষ্টিতে একবার বাবার দিকে তাকায় তো একবার মায়ের দিকে তাকায়।
আহনাফ : এই চেইন টা সবসময় নিজের কাছে রাখবে। আমরা যদি কখনো না ফিরি তখনও এটা সিক্রেট রাখবে। কখনো কাউকে চেইনটার কথা বলবে না। এই চেইনের লকেটে তোমার বাবাইয়ের এতোবছরের সফলতার ফল আছে মামণি।
সিমথি : লকেটে বুঝি ফসল ফলে।
সিমথির বোকা বোকা কথায় আহনাফ – তানহা দুজনই হেসে দুদিক থেকে সিমথিকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়।
তানহা : এই লকেটে একটা মেমোরি জাতীয় জিনিস আছে। ওখানে তোমার বাবাই যেই দুষ্টু লোকগুলোকে শায়েস্তা করেছে তাদের সম্পর্কে সব তথ্য আছে। এটা যদি হারিয়ে যায় তোমার বাবাই – মাম্মামের নামে বদনাম রটবে। তাই এই চিপটা তুমি ততদিন নিজের কাছে সুরক্ষিত রাখবে যতদিন না তোমার বয়স ২৫ হয়। যতদিন না তুমি ভালো-মন্দের ফারাক টা এক দেখায় বুঝতে পারবে ততদিন। যেদিন তুমি তেইশে পা দেবে তখন চিপটার ভেতরের সব তথ্য তুমি দেখতে পারবে। ততদিন পর্যন্ত এটা তোমার হেফাজতে। যেদিন তোমার মনে হবে এবার এই গেইমের সমাপ্তি টানা দরকার সেদিন তুমি তোমাদের জাফর আঙ্কেলের হাতে চিপ টা তুলে দেবে।
আহনাফ : সোনা মা এই গেইম টা কখনো কারো কাছে শেয়ার করবে না। এটা কেবল আমাদের তিনজনের মাঝে থাকবে। মনে রাখবে সবসময়। একটা কথা সবসময় মনে রাখবে তুমি মেজর আহনাফ খানের মেয়ে তোমার মাঝে বিচক্ষণতা আছে। সেটাকে যথাসময় কাজে লাগাবে। আমরা তোমার পাশে থাকি বা না থাকি নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তুলবে সবাই যেনো তোমার মাঝে তোমার বাবাইয়ের কঠোরতা দেখতে পায়। অন্যায়ের সাথে কখনো আপোস করবে না। আপন মানুষ সবসময় আপন হয় না। পিঠ পিছে অনেকে আপন মানুষের ছদ্মবেশে ছু/ড়ি চালায়। কথায় আছে না ” শস্যের মাঝেই ভূত লুকিয়ে থাকে “।
তানহা : তোমার ভাইয়াকেই এই দায়িত্ব দিতে পারতাম কিন্তু তোমার ভাইয়া অনেক ইমোশনাল। নিজেদের মানুষের এই হিংস্রতা সে কখনো সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু তুমি কঠিন মনের তৈরি হবে। কেউ যেনো তোমার দুর্বলতা না বুঝে। কেউ যেনো নিজের লক্ষ্য থেকে তোমাকে সরাতে না পারে। তোমাকে একদেখায় যেনো সবাই বলতে পারে মেজর আহনাফ খানের যোগ্য মেয়ে। আহনাফ খানের সব গুণ তোমার মধ্যে আছে। মাম্মামের মতো কখনো নরম মনের হবে না। এতে করে তোমার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে। আমরা যদি তোমার কাছে নাও থাকি যেখানেই থাকি না কেনো আমরা এটা ভেবে নিশ্চিত থাকবো আমাদের দুই ছেলে-মেয়ে দুইজনের রক্ষা কবচ। মানবে তো মাম্মাম-বাবাইয়ের কথা।
সেদিন সিমথি ওদের মা-বাবার কথার সব মানে না বুঝলে ও সেদিন বুঝেছিলো যেদিন চিপটা দেখেছিলো।।
সব শুনে সায়ন ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে। সিমথি মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নেয়। মাম্মাম – বাবাই ঠিকই বলেছিলো ওর ভাই সরল মনের।
সিমথি : এভাবে জান ছেড়ে দিচ্ছিস কেনো। তোর বোন ম/র/ছে আজব।
আদি : সিয়া ( ধমকে)
সায়ন : পরী ( ধমকে)
আদি, সায়ন বোকার মতো একে অপরের দিকে তাকায়। সিমথি মাথা নাড়িয়ে শ্বাস ছাড়ে।
জাফর : চিপটা কোথায় সিমথি। ওই চিপের মাধ্যমেই এন.কে মানুষ টাকে খুঁজে পাবো।
সিমথি : চিপ আছে।
নীরব খান : কোথায় কোথায় ( উত্তেজিত হয়ে)
সিমথি : আছে কোথাও একটা। কিন্তু তুমি এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো। হাই প্রেশারের রোগীর জন্য এটা সাংঘাতিক।
নীরব খান দমে যায়। সিমথি তিন্নির দিকে এগিয়ে যায়। মেহেররা একে অপরের দিকে তাকায়। সিমথি তিন্নির সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।
সিমথি : তিন্নি সোনা।
তিন্নি : হুম বলো।
সিমথি : তোমার গলার চেইন টা আমাকে একটু দেবে।
তিন্নি : কিন্তু তুমি তো বলেছিলে এটা যেনো কখনো কাউকে না দেয়।
সিমথি : কাউকে না দিতে বলেছি কিন্তু কাকিয়াকে না দিতে তো কখনো বলিনি।
সিমথি হেসে তিন্নির গলা থেকে চেইন খুলে হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। সবার দিকে একপলক তাকিয়ে চেইনের লকেটের ভেতর থেকে একটা ছোট্ট চিপ বের করে অফিসার জাফরের দিকে তাকায়। ড্রয়িং রুমের উপস্থিত সবাই ছোট বড় একটা ধাক্কা খায়। অফিসার জাফর হেসে উঠে দাঁড়ায়।
অফিসার জাফর : বুদ্ধির তারিফ করতে হয় তোর। এমন জায়গায় রাখলি যেনো কারো ব্রেনেও না আসে।
চলবে,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)