#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 52
🍁🍁🍁
রাত বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট। ড্রয়িং রুমে শাওন রা সবাই বসে আছে। এখন আর এই ড্রয়িং রুম হাসি-খুশীতে মজে থাকে না। সিমথি কিছু বললে আদির মা তেড়ে আসে না। হুটহাট ভাবী জ্বি নামেও ইশান কাউকে ডেকে উঠে না। আর না কেউ ইশানকে দেবর জ্বি বলে। সিমথি যে প্রতিটা বাড়ির প্রাণ ছিলো তা ওর শূন্যতায় সবাই বুঝতে পারছে। শাওন দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই ছেলে আজোও মধ্যরাতে আসবে।
আদির মা : ছেলে টা আমার কোনো কথা শুনে না। এতো রাত তো আগে করতো না। এখন যেনো বাড়ি ফিরতেই ওর মন চাইনা।
শাওন : আগে তো সিমথি ছিলো মেঝো মা।
শাওনের কথায় আদির মা কেঁদে ওঠে।
আদির মা : আল্লাহ এমন কেনো করলো বলতে পারিস৷ আমার ছেলেটাকে কতদিন হলো হাসি খুশি দেখিনা। তোদের মাঝেও প্রাণোচ্ছল কোনো ভাবমূর্তি নেই। সবাই এভাবে ঘুমরে থাকলে আমরা বুড়ো-বুড়িরা কোথায় যাবো বলবি।
ইশান : মেঝো মা। তোমরা রুমে যাও। কয়েকটা দিন যেতে দাও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আদির মা : সব ঠিক হয়ে যাবে হয়ে যাবে করতে করতে সাত টা মাস গেলো। আর কবে আদি ঠিক হবে বলবি।
আদির মায়ের কথায় সবাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই কথার উত্তর সত্যিই ওদের জানা নেই।
আদিবা : মা, বাবা, বড় মা তোমরা সবাই রুমে যাও। রাত হয়েছে ঘুমাও। শুধু শুধু ওর জন্য জাগছো। ও সেই মধ্যরাতেই বাড়ি ফিরবে।
মেহের : হুমম। মা, মেঝো মা তোমরা যাও প্লিজ।তোমাদের দেখলে ভাইয়ার আরো মন খারাপ হবে।
আদির মা কাদতে কাদতে নিজের রুমে চলে যায়। পেছন পেছন আদির বাবা ও যায়। শাওনের মায়েরা ও নিজ নিজ রুমে চলে যায়।
শাওন : তিন্নি কোথায়।
মেহের : অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়েছি। প্রতিদিন শুধু সিমথি কোথায় জানতে চাই। মেয়েটাকে কিভাবে বলি বলোতো।
মেহেরের কথার বিপরীতে শাওন সোফায় গা হেলিয়ে চোখ বুঁজে নেয়।
রাত দুইটায় আদি বাড়ি ফিরে। দরজা খুলে সোফার দিকে তাকাতেই চোখে আসে শাওনের কাঁধে মাথা হেলিয়ে রাখা মেহের ঘুমন্ত মুখটা। চোখের সামনে ভেসে ওঠে কটেজে নিজের বুকে সিমথির ঘুমন্ত মুখটা। আদির বুকের ব্যথা বেড়ে যায়। বুকে আঙ্গুল ঘষে দরজা আস্তে করে লাগিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। সোফার অন্যপাশে আদিবা, ইশান ও ঘুমিয়ে ছিলো এটা আদির দৃষ্টি এড়ায়নি। নিজের রুমে আসতেই বুকের ভেতর টা আবারো কামড়ে উঠে। এই রুমটায় তো একসময় সিমথি ও ছিলো ওর সিয়াজান। তাহলে আজ রুমটা শূন্য কেনো। আদি ড্রেসিং টেবিলের সামনে এগিয়ে যায়। হাত ঘড়ি খুলে টেবিলে রাখতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এই জায়গায় টায় তো ওদের কত সুন্দর মুহুর্ত কেটেছিলো অথচ আজ সবকিছু ই স্মৃতি। আদি ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। ঝরনা চালিয়ে নিচে বসে পড়ে। ঝরনা পানি আর চোখের পানি মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। রুমে প্রতিটায় কোণায় সিয়াজানের স্মৃতি কিন্তু সেই মানুষ আজ নাকি,,,,।
শাওয়ার সেড়ে রুমে আসে। দরজা লাগিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। হাতে সিগারেটের প্যাকেট। দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই সিগারেট হাতে যদি ওর সিয়াজান ওকে দেখে তাহলে নির্ঘাত ওর গর্দান যাবে। কিন্তু কিভাবে দেখবে এটা তো অসম্ভব।
আদি : তুমি আমার এমনই একজন, যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না এমন।
ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট ঢুকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। একসময় এই সিগারেট ছেড়েছিলো সিমথির জন্য এখন আবারো সিমথির জন্যই হাতে নিলো। আদি মনে পড়ে ইন্টারে পড়ুয়া বাচ্চা সিমথির সেই কথাটা।
_ তুমি আর কখনো সিগারেট ছুঁবে না। তোমার ওই গোলাপি ঠোঁট গুলো আমার ভীষণ প্রিয়। ওখানে সিগারেটের অস্তিত্ব ও আমার সহ্য হয়। বুঝলে আদি তোমার দেহের সর্বত্র জুড়ে কেবল আমার বিচরণ চাই। এসব সিগারেট ফিগারেট আরেক দিন খেতে দেখলে সেদিনই তোমায় বিয়ে করে নেবো। তারপর ওই ঠোঁটে কেবল আমার বিচরণ হবে।
ওইদিন সিমথির কথায় আদি উপরে বিরক্তি দেখালেও ভেতরে কোথাও একটা ভালো লাগা কাজ করেছিলো। অতীতের কথা মনে করে আদি আনমনে হেসে উঠে। মুহুর্তেই হাসিটা মিলিয়ে যায়। মন বলে উঠে,,
_ ইশশ আবারো যদি সিয়াজান দেখতো ওর হাতে সিগারেট তখন যদি এই কথাটা বলতো তাহলে আদি ওর সিয়াজানকে বুকের খাঁচায় বন্ধী করে রাখতো।
কিন্তু হায় সেই দীর্ঘশ্বাস এসে জানান দিলো তোর সিয়াজান তোর কাছে নেই। ও তোর কথা শুনছে কিন্তু তবুও চুপ করে আছে। তোকে শাস্তি দিচ্ছে ভালোবাসার।
__________
সকালে খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে।
শাওন : কাল কখন বাড়ি ফিরলো তোরা কেউ টের পেয়েছিস।
আদিবা : নাহ রে। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
আদিবার কথায় সবাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আদির মা অনেক আমতা আমতা করে বলে উঠে,,,,
আদির মা : আ আমি একটা কথা বলতে চাইছিলাম।
আদির মায়ের কথায় সবাই উনার দিকে তাকায়।
শাওনের মা : বল।
আদির মা : বলছিলাম আ আদির আ আরেকটা বিয়ে দিলে হয় না।
আদির মায়ের কথায় সবাই হতভম্ব দৃষ্টিতে আদির মায়ের দিকে তাকায়। আচমকা কোনো কিছু পড়ার শব্দে সবাই আঁতকে ড্রয়িংরুমের দিকে তাকায়। ফ্লোরে ফ্লাওয়ার ভার্স টা পড়ে থাকতে দেখে সামনে তাকিয়ে আদিকে দেখে সবাই আঁতকে যায়।
আদি : কি বললে তুমি আবার বলো।
আদির বাবা : আদি তোর মায়ের কথা ধরিস না তো।
আদির মা : কেনো আমার ছেলের ভালো কি আমি চাইতে পারিনা। কতদিন একা একা থাকবে। কি আছে ওর জীবনে যাকে আঁকড়ে থাকবে।
আদি : না তুমি আমার ভালোর বদলে খারাপ চাইছো। এটা তুমি নিজেও ভালো করে জানো। আমার নিঃশ্বাস নিয়ে কেউ খেলবে সেটা আমি সহ্য করবো। আমার জীবনে কেবল একজন মেয়েই থাকবে আর সে হলো সিমথি জাহান সিয়া। ফিজিক্যালি ও আমার কাছে নেই মানে যে ও আমার মন থেকে উবে গেছে এটা ভাববে না। নেক্সট টাইম এসব বললে আমাকে আর খুজে পাবে না।
কথাগুলো বলে আদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। শাওনরা একে অপরের দিকে তাকায়। আদির মা কেদে দেয়।
আদির বাবা : তুমি এমন টা কিভাবে ভাবলে সিমথির জায়গা অন্য কেউ ছিহ৷
শাওনের মা : মেঝো তুই ভুল ভাবছিস। আদিকে স্বাভাবিক একজনই করতে পারে সে হচ্ছে সিমথি কিন্তু ও তো,,,
মেহের : এসব বাদ দাও তো। শাওন তিন্নিকে নিয়ে যাও।
করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় সিমথির কেবিনের সামনে এসে থেমে যায় তুহিন৷ একবার বন্ধ কেবিনটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। একটা সময় এই কেবিনে কত আড্ডা হতো আর এখন সময়ই স্মৃতি। তন্ময়ের বাচ্চা টার ও সাত মাস চলছে। নীলয় খান সেদিনই ওই জায়গায় স্পট ডেইথ হয়েছিলো। তারপরের দিন সীমা বেগমের ফা/সি হয়। আহনাফ খান & তানহা খানে খুনীরা তাদের যোগ্য শাস্তি পেয়েছে।
_____________
গতকাল মেঘার গায়ে হলুদ । আগামীকাল সবাই রিসোর্টে এসেছে। সেদিনের পরেরদিনই দুই পরিবার মিলে সামনের সপ্তাহে বিয়ে ঠিক করে। আবারো দুজন ভালোবাসার মানুষ এক হবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তির আর কিছু হতে পারে নাকি। বিয়ে উপলক্ষে রিসোর্ট বুক করা হয়েছে। আদিদের রিকদের পরিবারের সবাই কে দাওয়ার দিলেও তারা গায়ের হলুদের দিন আসবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বাচ্চারা দুদিন আগেই আসবে। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেনো আয়াশ তো ওদের বন্ধু। বন্ধুর বিয়ে খামতি থাকলে চলবে নাকি।
সবাই খোলা ছাঁদে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু সবার মাঝে মিসিং দুইজন মানুষ।
রোদেলা : এখন যদি সিমথি থাকতো তাহলে কি বলতো জানিস।
রোদেলার কথায় মেঘা শুকনো হাসে।
মেঘা : বলতো ” কিরে এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে করতে পারিস বলে মন খারাপ। আরে ইয়ার প্যারা নাই। ”
পরিবেশ থমথমে ভাব ধারণ করে। মেঘা মাথা নুইয়ে নেয়। মূলত চোখের পানি আড়াল করার পন্থা। তন্ময় আর তুহিন উঠে এসে মেঘাকে টেনে তুলে। তন্ময় মেঘার চোখের পানি মুছিয়ে বলে,,,
তন্ময় : কাঁদিস কেনো। আচ্ছা সত্যি কথা বলতো তুই এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে না করতে পারা শোকপ কাঁদছিস না তো।
তন্ময়ের কথায় সবাই হেসে উঠে। মেঘা তন্ময়ের বুকে কিল বসিয়ে দেয়।
মেঘা : ফা/জি/ল একটা।
তুহিন : কাঁদিস না মেঘপরী। তুই কাঁদলে আমাদের ভালো লাগে না।
তুহিনের কথায় মেঘা চোখের পানি মুছে নেয়।
মেঘা : কোথায় কাঁদছি। কাঁদছি না তো। আচ্ছা আদি ভাইয়া কোথায়।
আয়াশ : আমাদের সাথেই তো আসলো। কিন্তু আসার পর আর দেখতে পেলাম না তো।
সায়ন : চল গিয়ে দেখি কোথায়।
রাদিফ : আদি ভাইয়া মনে হয় রুমে একা বসে আছে।
শাওন : না রুমে নেয়। আমি আসার সময় দেখে আসলাম।
শাওনের কথায় সবাই পেছনে তাকায়। শাওন তিন্নিকে নিয়ে এদিকেই আসছে।
ইশান : তাহলে কোথায় গেলো।
শাওন : জানিনা।
রিক : ফোন করে দেখি। এই ছেলে আমাদের পা/গ/ল বানিয়ে ছাড়বে।
রিক আদিকে ফোন দেয় কিন্তু নো রেসপন্স। এবার সবার মনেই ভয় ঢুকে যায়। এই ছেলে কিছু করে বসবে না তো আবার।
চলবে,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)