#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৫
শিশির বাসায় এসে রুমের দরজা নক করতেই চৈতী বেগম দরজা খুলে দিলেন। শিশির মুচকি হেসে বললো,
-“মা তুমি আমাদের ফ্ল্যাটে?রাত কি বোর ফিল করছিলো?”
-“হ্যা কিছুটা।”
শিশির মাকে দেখে হাতে থাকা গেলাপটা লুকিয়ে ফেললো।চৈতী বেগম হেসে বললেন,
-“রাতের জন্যে? ”
শিশির হেসে মাথা চুলকায়।চৈতী বেগম শিশিরের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
-“যা। আজই সব মিটমাট করে নিবি।”
শিশির ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
-“হুম মা”
চৈতী বেগম নিঃশব্দে হাসলেন।শিশির আবারো বললো,
-“মা,আমাকে তো আবার যেতে হবে হাসিব স্যারের এঙ্গেজমেন্টে।”
-“তাহলে গিয়ে রেডি হয়ে নে।”
-“হুম।”
-“আমি আমার ফ্ল্যাটে যাচ্ছি, ”
বলেই চৈতী বেগম প্রস্থান করলেন।দুজনকে একা ছেড়ে দিতে চান তিনি।শিশির সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো।নিজের রুমে ঢুকতেই সে থমকে গেলো। এটা কি দেখছে সে!
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে রাত!পড়নে মিষ্টি কালারের শাড়ি,হাত-গলা সব খালি!কিন্তু মুখে থাকা হাসির মাধুর্যে শিশির ঘায়েল হয়ে যাচ্ছে।রাত চোখে কাজল দিতে ব্যস্ত।শিশির এগিয়ে গেলো।রাতের পিছনে দাঁড়াতেই রাত উঠে দাঁড়ায়।আয়নায় তাকিয়ে বলে উঠে,
-“আপনি চলে এসেছেন? ”
-“হুম!”
গম্ভীর গলায় বলে শিশির।তারপর মায়ের কাছ থেকে এনে রাখা নিজের কেনা ঝুমকা আর চুড়িগুলো নিয়ে এলো।রাত তো নিজের মতই সাজছে। শিশির রাতের সামনে এসে রাতকে বসিয়ে দিলো। রাত অবাক হয়ে বললো,
-“কি করছেন!”
-“হুশশ!”
শিশির আস্তে আস্তে রাতের কানে ঝুমকা,হাতে চুড়ি পড়িয়ে দিলো। রাতের তো এগুলো দেখে ভীষণ খুশি লাগছে। সে খুশিতে বলতে লাগে,
-“এগুলো আমার জন্যে আপনি এনেছেন?”
-“হুমম!”(মুচকি হেসে)
রাত দুহাত একসাথে করে চুড়িগুলো নাড়তে লাগলো। আর বলতে লাগলো,
-“চুড়ি আমার খুব ভাল্লাগে।”
শিশির গালে হাত দিয়ে রাতকে দেখছে!এই প্রথম হয়ত সে রাতকে এতটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। রাত কানের ঝুমকাগুলো নাড়িয়ে বললো,
-“এগুলোই তো সেদিন আমি দেখেছিলাম দোকানে।”
-“তাই এনেছি।”
রাত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শিশিরের মুখ পানে। শিশির তার জন্যে এতটা ভাবে?রাতের চোখে খুশিতে পানি এসে গেলো। শিশির সেটা মুছে নিয়ে বললো,
-“একদম না রাত!”
-“হু।”
-“আরেকটা জিনিস তো বাকি!”
-“কি?”(অবাক হয়ে)
শিশির নিজের কিনে আনা গোলাপটা রাতের কানে গুঁজে দিয়ে বললো,
-“এটা!”
রাত লাজুক হাসলো। শিশির রাতের চুলে ফুলটা গুঁজে দিয়ে বললো,
-“রেডি হয়ে আসি।”(হালকা হেসে)
রাত সম্মতি দিলো। শিশির রেডি হতে চলে গেলো। রাত সায়ানকেও রেডি করে নিলো।কিন্তু এত গানবাজনার মধ্যে ওকে নেওয়াটা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না। শিশির এসে বললো,
-“আরে সায়ানকে কেন রেডি করাচ্ছ?”
-“ছেলেকে রেখে যাব?”
-“আরে এত গান-বাজনা,কোলাহলের মধ্যে ও অসুস্থ হয়ে যাবে।ভয় পাবে!”
-“হুমম!”(মন খারাপ করে)
-“আর তুমিও এনজয় করতে পারবা না। ওকে মায়ের কাছে দিয়ে এসো। আর বলিও যেন মিতালিকে না দেয়।”
রাত মুখ বাঁকিয়ে বললো,
-“মিতালি থাকলে তো মিতালির কাছে দেবে।”
-“মানে?”(অবাক হয়ে)
রাত মুচকি হেসে বলতে লাগে,
-“বলেছিলাম না?এসে দেখবেন মিতালি নেই?”
-“কিন্তু সেটা তো মজা করে..”
-“না। মজা করে না।সত্যিই নেই।”
-“কিভাবে কি?”
রাত শিশিরকে আস্তে আস্তে সবটা খুলে বললো। শিশির রাতের হাত ধরে বললো,
-“কেয়ার কথাটা শুনে মনে হচ্ছিল ওকে জ্যান্ত পুঁতে দি। কিন্তু ভিডিওটা যে ডিলিট হইছে এটা শুনে রিলিফ লাগছে।”
-“হ্যা। আর ডিলিট না হলেই বা কি? আমার কাছে ওরটা আছে!”
বলেই হাত হাসতে লাগলো।শিশির রাতের গাল টেনে বললো,
-“তুমি পারোও রাত!”
-“আরেকটা মজার ভিডিও আছে।দেখবেন?”
-“কই দেখি?”
রাত মিতালির ওই বাদরের মত লাফানোর ভিডিওটা শিশিরকে দেখালো।শিশির হো হো করে হাসতে লাগলো। রাতও হাসছে।কিছুক্ষণ পর রাত হাসি থামিয়ে শিশিরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। শিশিরকে এভাবে হাসতে দেখেনি বেশি। তাই উপভোগ করছে। তাছাড়া শিশির হাসলে তাঁর গালের পাশে একটা গর্ত হয় যেটাকে আমরা টোল বলি। এটাই রাতের বেশ লাগে।রাতকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শিশির বলে উঠে,
-“কি পিচ্চি?”
-” না কিছু না।”(চাপা হেসে)
শিশির মজা করে বলে উঠে,
-“একদম তোমার মত লাফাচ্ছে।”
রাত চোখ বড় বড় করে বললো,
-“মানে?”
-“মানে তুমিও কিছু না বুঝেই এমনে লাফাও।”
রাত রাগে দুঃখে শিশিরের হাতে চিমটি দিয়ে বললো,
-“একদম বাজে কথা বলবেন না।”
-বাজে কই! সত্যিই তো।”
-“সত্যি তাই না?”
-হুম!”(হেসে)
-“দেখাচ্ছি!”
বলেই রাত পাশ থেকে বালিশ নিয়ে শিশিরকে মারতে লাগলো।শিশির হাসছে।রাত আরো রেগে গেলো। শিশির একসময় রাতের কোমড় ধরে বিছানায় ফেলে বললো,
-“এবার?”
-“ছেড়েই দেখুন না!”
-“পাগল নাকি!”
এদিকে মা-বাবার এমন কান্ড দেখে সায়ান তো হাসছে। রাত সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এই তুই হাসছিস!”
শিশির রাতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।রাতের কপালে থাকা চুলগুলো সরিয়ে বললো,
-“রাত?”
রাত চোখ ছোট ছোট করে বললো,
-“কি?”
-“তোমার চোখগুলো বেশি সুন্দর! ”
রাতের হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। গালগুলো আস্তে আস্তে লাল হচ্ছে। সে তুতলিয়ে বললো,
-“কি..”
-“হুম”
রাত শিশিরের চোখের দিকে তাকালো।শিশির রাতকে মন ভরে দেখছে।আর রাত ভাবছে,
-“শিশির চৌধুরী কি রাতের প্রেমে পড়েই গেলো?”
____
রাত আর শিশির একত্রে ঢুকলো এঙ্গেজমেন্টের অনুষ্ঠানে। রিসাবদের নিজস্ব বাড়ি!বেশ বড়ই। রাত এসেছিলও বেশ কয়েকবার। যেহেতু ওরা ভালো বন্ধু আসাটাই স্বাভাবিক।রাত শাড়ির কুঁচি ধরে আস্তে আস্তে এগুচ্ছে। আর শিশির রাতের পিছনে।রাত আরেকটু এগুতেই দেখতে পেলো তার বন্ধুরা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।রাতকে দেখে এগিয়ে আসতেই রাত শিশিরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।কারোর চোখে পড়েনি ব্যাপারটা। শিশির মুচকি হেসে বললো,
-“যাও।আমি এদিকটায় আছি।”
রাত মুচকি হেসে বন্ধুদের দিকে এগিয়ে গেলো।শিশির ব্যস্ত হয়ে গেলো কথা বলায়।এদিকে রাতকে দেখে নিপা বলতে লাগলো,
-“রাত!তোকে তো একদম পরীর মত লাগছে।তাই না শিহাব?”
শিহাবও সায় দিয়ে বললো,
-“একদম!রাত, তুই অনেকদিন পর শাড়ি পড়লি।”
রাত হেসে মনে মনে ভাবলো,
-“বাসায় তো রোজই পড়ি।”
তারপর চোখ গেলো রিসাবের দিকে।রিসাব অনেকক্ষণ যাবত তাকে দেখছে।রাতের কেমন অস্বস্তি হচ্ছে!সে জোরপূর্বক হেসে বললো,
-“রিসাব!কিছু না বলে তাকিয়ে আছিস যে!
নিপা আর শিহাব মিটিমিটি হাসছে। রাত সেদিকে তাকিয়ে বললো,
-“তোরা আবার হাসছিস কেন?”
-“না কিছু না।”
এদিকে রিসাব এখনো রাতের দিকে তাকিয়ে। রাত শিশিরের দিকে যাবে এমন সময় রিসাব রাতের হাত ধরে ফেললো। রাত অবাক হয়ে বললো,
-“এসব কি রিসাব!”
-“বলছি!”
বলেই সে রাতকে টেনে নিয়ে গেলো স্টেজের সামনে।সব আলো নিভে গেলো।আলো পড়লো রিসাব আর রাতের উপর। রাত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। রিসাব হাঁটু গেড়ে বসে নিজের কেনা সেই ডায়মন্ডের রিং টা বের করে বললো,
-“রাত?আই লাভ ইউ। উইল ইউ মেরি মি?”
রাত থমকে গেলো!চারিদিক থেকে সবাই বলছে, রাত সে ইয়েস!না!রাত সবার মাঝে শিশিরকে খুঁজে চলেছে।পেয়েও গেলো। একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে শিশির রাতের দিকে অনুভূতিহীন চোখে তাকিয়ে। রাত অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।শিশির কিছু বলছে না কেন?শিশির নিজের চোখে জমে থাকা পানিটা মুছে ভীরের মধ্যে হারিয়ে গেলো। এদিকে রাতকে কিছু বলতে না দেখে রিসাব বলে উঠলো,
-“কি হলো রাত?চুপ কেনো?”
রাত অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকায়।রিসাব এই তাকানোর মানে বুঝতে পারছে না!তার খুব ভয় হচ্ছে!শেষ অবধি রাত তার হবে তো!
চলবে…
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন☺️💌)