শর্ত #লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম) #পর্ব:১৪

0
129

#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৪

-“হ্যা মিতালি আমাদের থেকেও দ্বিগুন চালাক। তাই ও আমাদের পরিকল্পনা কিছুটা বুঝতে পেরেছিল।তাই কিছু করার আগেই ও কেয়ার বাথরুমে ক্যামেরা ফিট করে।”

বলেই চৈতী বেগম আবারো কাঁদতে লাগলেন। রাত মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে।একটা মানুষ নিজেকে বাঁচাতে এতটা নিচে নামতে পারলো? তাও সেই ভিডিওটা নিয়ে ব্লেকমেইল করছে এখনো!চৈতী বেগম হাত জোর করে বলছেন,

-“আমার অবিবাহিত মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে রাত। দয়া কর আমার আর আমার মেয়ের উপর!আর মাত্র ৪-৫ টা দিনই তো। ও যা করার করে চলে যাক।”

রাত উঠে দাঁড়ালো। শক্ত গলায় বললো,

-” চার-পাঁচদিন? এই বাসায় আর ওকে এক দন্ডও আমি থাকতে দিবো না আন্টি। ওকে ওর মত করেই আমি তাড়াবো।”

-“রাত!ওর কাছে পুরো ভিডিওটা আছে।শিশির জানতে পারলেও নিজের বোনের বিরুদ্ধে এসব মানতে পারবে না। পুরো সমাজে মুখ দেখাতে পারবো?”

-“ভিডিওটা ভাইরাল হলে তো আন্টি!কার ফোনে ওটা?”

-“মিতালির। রাত দেখ,পাকনামো করে কিছু করতে যাস না।”

-“শোনো!সাতদিন পর চলে গেলে যে ভিডিওটা ডিলিট করে দিবে তার কি গ্যারান্টি আছে?”

-“ও আমায় কথা দিয়েছে!”

-“এখনো বিশ্বাস করো ওকে? শোনো!যেই মানুষ একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের ক্ষতি করতে পারে তার থেকে খারাপ আর কি হতে পারে?”

-“কিন্তু ও বলেছে যে ও সাতদিন পর ভিডিওটা ডিলিট করবে।”

-“সেই আশায় তুমি থাকতে পারো আন্টি। আমি না। কেয়া আমারো ছোট বোন। আর আমি কেয়ার এত বড় ক্ষতি হতে দিবো না।”

বলেই রাত রুম থেকে বের হয়ে গেলো।চৈতী বেগমও পিছন পিছন আসতে লাগলেন।রাত ড্রয়িংরুমে গিয়ে মিতালিকে পেলো। মিতালি ওদের এভাবে ছুটে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,

-” কি সমস্যা?”

রাত রাগে গজগজ করছে।সে কোনোমতে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

-“সায়ানকে এখন দাও,আমি গোসল করাব।”

মিতালি সায়ানকে বুকে চেপে ধরে বললো,

-” না না,আমি গোসল করাতে পারব।”

রাত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,

-“আমি করিয়ে দিই ওকে।”

-” না।”

রাত কি করবে করবে ভেবে হঠাৎ বলে উঠলো,

-“তাহলে তো তোমার ওয়াশরুমে গরম পানি ঢালতে হবে।”

-“হ্যা যাও।”

রাত গরম পানি গ্যাসের চুলা হতে নামাচ্ছে আর ভাবছে কিভাবে মিতালির মত করেই মিতালিকে শাস্তি দেয়া যায়।চৈতী বেগম রাতের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

-“রাত? কিছু ভেবেছিস?”

-“হুম ভাবছি। আজই ওকে তাড়াবো।”

-“কিন্তু কীভাবে? ”

-“আন্টি? একটু দোকানে যেতে পারবেন?”

-“কেন?”(অবাক হয়ে)

-“ওইযে একটা ঔষধ থাকে না যেটা দিলে চুলকায়?ওগুলো এক শিশি আনবেন আর একটা ছোট্ট ক্যামেরা।”(বাঁকা হেসে)

চৈতী বেগম মাথা নাড়ালেন।দোকান বেশি দূরে না। বিল্ডিং এর নিচেই। রাত মিতালির রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে গরম পানি ঢাললো। পাশেই দেখতে পেলো মিতালির একটা শাড়ি। মানে মিতালিও গোসল করবে।রাত গরম পানি ঢেলেই মিতালির কাছে গিয়ে বললো,

-“পানি ঢেলে দিয়েছি। আচ্ছা নুশান কই?”

-“কেন?”(ভ্রু কুঁচকে)

-” না মানে এমনি আরকি!”

-“বাহিরে গেছে একটু।”

-“ভালোই হলো।”(মনে মনে)

মিতালি রাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে। রাত দেখতে পেলো মিতালির ফোনটা সোফায় পড়ে আছে।এটাই তো সুযোগ। রাত মিতালির ফোন ঘেটে দেখলো লক করা। কি পাসওয়ার্ড হতে পারে ভাবতে ভাবতে রাত নুশানের নাম দিলো।নাহ খুললো না!কি ভেবে শিশির টাইপ করতেই খুলে গেলো।রাত তো রেগে ফায়ার। রাগে বলছে,

-“কত বড় বেয়াদব হলে আমার বরের নাম দেয়!”

রাত গ্যালারি ঘেটে ভিডিওটা ডিলিট করে দিলো।এমনকি মেসেঞ্জার,হোয়াটসঅ্যাপ সবকিছু থেকে ভিডিওটা ডিলিট করে দিলো যেন আর কোথাও না পায়।তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে মিতালির রুমে গিয়ে দেখলো মিতালি সায়ানকে গোসল করাচ্ছে। রাত দরজার কাছে আসতেই পিছন থেকে চৈতী বেগম বলে উঠলেন,

-“রাত? যা আনতে বলেছিলি সব এনেছি।”

-“হুশশ!আস্তে!”

-“হুমম।”

-“ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছি আন্টি!”(মুখ ভর্তি হেসে)

-“সত্যি?”(খুশি হয়ে)

-” হ্যা।”

-“কিন্তু তবুও তো ওকে বিশ্বাস নাই।”

-“তাই তো ওনার মত করে ওনাকে তাড়াবো।”

-“কিভাবে?”

-“আসুন।”

বলেই রাতও গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।চৈতী বেগমও ঢুকে দেখলেন মিতালি সায়ানকে গোসল করাচ্ছে। রাত আস্তে করে পিছিয়ে গিয়ে মিতালির শাড়িতে পাউডারটা মিশিয়ে দিলো।তারপর মিতালিকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,

-“আর কতক্ষণ লাগবে?”

-” দুই মিনিট।”

রাত সুন্দর করে উঠে পাশে থাকা শ্যাম্পুর বোতলের পিছনে ক্যামেরা সেট করে দিলো। চৈতী বেগম রাতকে আড়াল করে দাড়িয়ে রইলেন। তাই মিতালি তেমন টের পায়নি। তবুও এতক্ষণ এমন চুপচাপ থাকতে দেখে তার একটু সন্দেহ হলো। তাই বললো,

-“আপনি এখানে?”

চৈতী বেগম কেঁপে উঠলেন।তুতলিয়ে বললেন,

-” না দেখছিলাম,কিভাবে গোসল করাও।”

-“কেন?কোনোদিন দেখেননি নাকি!”(ভ্রু কুঁচকে)

চৈতী বেগম জোরপূর্বক হাসলেন। রাত হেসে বললো,

-“আমাকে দিন সায়ানকে,আমি কাপড় পড়িয়ে নিবো।”

মিতালিও দিয়ে দিলো।কারণ তারও গোসল করতে হবে। রাত সায়ানকে গিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।চৈতী বেগমও রাতের সাথেই থাকেন। রুমে এসে রাত সায়ানকে কাপড় পড়াতে পড়াতে বলতে লাগে,

-“একটু পরেই দেখবেন নাটক শুরু হবে।”

-“আজকেই যেন আপদটা বিদায় হয়।”

-” হবে হবে।অনেকদিন ধরে জ্বালাচ্ছে।”

রাত চৈতী বেগমের সাথে এসব নিয়েই আলোচনা করছিল। তারপর সায়ানকে ফিডার দিয়ে শুইয়ে দিলো। সায়ানও কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো। বেশকিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর চৈতী বেগম বললেন,

-“এখনো কাজ হচ্ছে না কেন রাত?”

রাত কিছু বলবে এমন সময় মিতালির চিৎকার ভেসে এলো। রাত হেসে বললো,

-“এইযে শুরু হয়ে গেলো। ”

রাত সায়ানের উপর মশারি দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। চৈতী বেগমও গেলেন। গিয়ে দেখতে পেলো মিতালির শরীর চুলকাচ্ছে আর নুশান তাকে থামানোর চেষ্টায় মত্ত। এ তো যেসে চুলকানি না। একপ্রকার শাড়ি খুলে ফেলছে চুলকাতে চুলকাতে। বিছানায় উঠে লাফাচ্ছে। রাত হো হো করে হাসতে লাগলো।মিতালি রেগে বললো,

-“এসব তোমার কারসাজি রাত!আমি বুঝি না নাকি!”

-“আমি?আমি আবার কি করলাম!”(হাসতে হাসতে)

-“কি করেছো রাত তুমি? আমার শরীর চুলকাচ্ছে কেন?”

-“আমি কিছুই করিনি। পাপের ফল আপনার।”

-“কিসের পাপ হ্যা?”

-“অনেক পাপই করেছেন।”

-“রাত প্লিজ আমায় বাঁচাও। আমি আর চুলকাতে পারছি না।”

নুশানও অস্থির হয়ে বললো,

-” রাত প্লিজ!ওর কষ্ট হচ্ছে।”

-“আরে তো আমি কি করব?”

রাত ওয়াশরুমে গিয়ে ক্যামেরাটা লুকিয়ে নিলো। তারপর মিতালিকে ডেকে বললো,

-” এসে গোসল করে নিন।”

মিতালি ওয়াশরুমে দিকে ছুট লাগালো। এদিকে রাত আর চৈতী বেগম তো হাসতে হাসতে কাহিল। নুশান রেগে বললো,

-” এখানে হাসার মত কিছু হয়েছে? ”

রাত তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

-” তাহলে কি কাঁদবো? ”

-“তোমাদের তো কাদারই সময়।”

রাত আবারো হো হো করে হাসতে লাগলো। নুশান ভ্রু কুঁচকে বললো,

-” হাসছো কেন! ”

-” কারণ কাঁদার সময় আমাদের না। আপনাদের।”

-” মানেহ!”

-“কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই দেখতে পাবেন মানেটা কি!”(বাঁকা হেসে)

মিতালি কিছুক্ষণ পর হাঁপাতে হাঁপাতে বের হলো। রাত মিতালির হাত ধরে বললো,

-” ভালো লাগছে এখন?”

-” আগের থেকে বেটার।”(জোর জোরে শ্বাস নিয়ে)

-” তাহলে চলুন!যাওয়া যাক!”

-” কই?”

-“বাড়ি থেকে বাইরে।”

বলেই রাত মিতালির হাত টেনে দরজার কাছে নিতে লাগলো। আর চৈতী বেগম মিতাকির ব্যাগপত্র নিয়ে আসছে। মিতালিকে বাড়ির বাইরে বের করে দিয়ে রাত ব্যাগটা ছুড়ে মারলো। নুশান রেগে বললো,

-” এসব কি ধরণের ব্যবহার?”

রাত আঙুল উঁচিয়ে বললো,

-“এই চুপ!একদম গলা নামিয়ে।”

মিতালি চৈতী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“আমি কিন্তু সব ভাইরাল করে দিবো।আপনি কেন কিছু বলছেন না।”

চৈতী বেগম চুপ করে রইলেন।মিতালি ফোন থেকে ভিডিওটা খুঁজতে লাগলো। নুশানও বলছে,

-“আপনি কি ভুলে গেছেন আমাদের কাছে কি আছে?”

রাত বাঁকা হেসে বললো,

-“আমাদের কাছেও আছে।”

মিতালি ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“কই গেলো ভিডিওটা!”

রাত নিজের ফোন থেকে মিতালির ভিডিওটা বের করে মিতালির সামনে দিয়ে বললো,

-” ইশ এটা বেশি সুন্দর! ”

মিতালির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।নিজের চোখে নগ্ন নিজেকে দেখে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। কাপা কাপা গলায় বললো,

-“এটা..”

-” জ্বী এটা।”

-“এটা কখন করলে রাত?”

-“যখনই করি!আপনি কেয়ার জীবনটা নষ্ট করতে চেয়েছিলেন। আপনার মত করেই আপনাকে শাস্তি দিলাম। ”

-” না!এটা তুমি করতে পারো না রাত।দেখো,আমি একটা মেয়ে।তুমি আরেকটা মেয়ে হয়ে কিভাবে..”

-“তুমি করলে দোষ নাই?আর আমি করলেই দোষ?আমি চাইলে আপনাকে পুলিশে দিতে পারি।কিন্তু দিলাম না!নিজের জীবনটাকে নুশানের সাথে ভালো করে গুছিয়ে নিন।কেন অন্যের সংসার ভাঙতে আসছেন?”

-“রাত!!”

-“আপনি যাই করেন না কেন শিশিরের কোনো ক্ষতিই করতে পারবেন না যতদিন আমি এখানে আছি। আর এখন এখান থেকে না গেলে আমি ভিডিওটা ভাইরাল করবো।”

মিতালি রাগে কটমট করছে।নুশান মিতালিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“অনেক নাটক করেছো। চলো!”

বলেই সে মিতালির হাত ধরে টেনে নিতে লাগলো।মিতালি পিছনে ফিরে বললো,

-“তোমাকে আমি ছাড়ব না রাত।”

-” এখনই দেখে নিন না!”(হেসে)

মিতালি চলে গেলো। কিন্তু মনে পুষে রাখলো হাজারো জেদ। সে রাতকে কিছুতেই ছাড়বে না। এদিকে রাত তো মিতালিকে তাড়াতে পেরে ভীষণ খুশি!আজ সে শিশিরকে সারপ্রাইজ দিবে।

চলবে….
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন☺️💌)
(আসলে এতদিন পর ঘুরাঘুরি করে ক্লান্ত হয়ে লিখতে বসেছিলাম। জানি না সাজানো হয়েছে কি না।না দিলেও সবাই মন খারাপ করত,তাই দিলাম গল্পটা।ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী😌)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here