প্রেম_প্রার্থনা #তামান্না_আঁখি #পর্ব-৪৫

0
528

#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৪৫

রাত বারটার কাছাকাছি। পরিষ্কার আকাশে সুন্দর চাঁদ উঠেছে। চারদিকে নরম জোৎস্না। মিটিমিটি করে জ্বলতে থাকা তারাও দেখা যাচ্ছে। চারু ছাদের দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার খোলা চুল হালকা বাতাসের দোলায় উড়ছে। হুট করে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললো সে। রবিনের সাথে সাইকেলে চড়ার ঘটনা মনে পড়ে গেছে।রবিনের বুকের উষ্ণতা এখনো তার পিঠে লেগে আছে। বাড়ির সামনে সাইকেল থামিয়ে চারুকে যেতে না দেয়ার সময় দুজনের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকাও চোখে ভাসলো তার।সেই সাথে মনে পড়লো রবিনের চাহনি।ইশশশ!কেমন করে জানি তাকায় রবিন! চারু দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো। তার লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে অনেক। মুখ থেকে হাত সরিয়ে সে ঠোঁট কামড়ালো।মনে মনে চিন্তা করলো রবিনের কথা।কত চেঞ্জ হয়েছে রবিন! কিন্তু স্বভাবগুলো আগের মতোই আছে। রবিনের বদমেজাজ টাও আগের মতোই আছে নিশ্চয়ই। চারুর মনে পড়লো গত নির্বাচনের কথা। তখন চারুর সাথে রবিনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ।

সেদিন নির্বাচন ছিলো।যথারীতি শাখাওয়াত তালুকদার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। বাড়িতে খবর আসলো শাখাওয়াত তালুকদার নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এর কিছুক্ষন পর খবর আসলো ভোট কেন্দ্রে মারামারি হচ্ছে। সেই মারামারিতে রবিন নিজের মেজাজ হারিয়ে বসলো। মেজাজ হারিয়ে সে সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই কুপিয়েছে। সে নিজেও অনেক জখম হয়েছে। কিন্তু কেউ তাকে মারতে এসে বিনা আঘাতে ফেরত যায় নি। সে ইচ্ছামত মারামারি করেছে সেদিন। এগুলো সব ই চারু বাড়ির লোকের কাছে শুনেছে। রানির কাছে সে আরো ভয়ংকর কথা শুনেছে।রবিন বাড়ি ফিরেছিলো রক্তে মাখামাখি হয়ে। বাড়ি ফিরেই সে বাড়ির আঙিনায় গোসল করেছিলো। তার দলের দুজন ছেলে তার উপর পাইপ ধরে রেখেছিলো আর সে পাইপের পানির নিচে ঠায় বসেছিলো। তখনও নাকি সে রাগে ফোস ফোস করছিলো। চারু এসব শুনে অনেক ভয় পেয়েছিলো। সে জানতো তালুকদার বাড়ির ছেলে হওয়ায় রবিন কিছুটা পাগলাটে ধরনের। কিন্তু এত উন্মাদ যে তা চারু জানতো না। এ ঘটনার পর বাড়ির বড়রা রবিনকে দেখতে গিয়েছিলো।গ্রামের ঝামেলার জন্য ছোটদের বাড়িতেই রেখে গিয়েছিলো। চারু বাড়ির বড়দের কাছে তখন শুনেছে রবিনের বুক বরাবর ব্যান্ডেজ করা,সেখানে রাম*দার কোপ লেগে জখম হয়েছে।মাথা আর হাতেও ব্যান্ডেজ পড়েছে। চারু এসব কথা শুনছিলো আর অবাক হচ্ছিলো। এতদিন যে সে রবিনের সাথে এত তর্ক করেছে রবিনের জিনিসপাতি নষ্ট করেছে তা মনে পড়ে তার নিজেকে গালি দিয়েছিলো।এমন ভয়ংকর ছেলের ত্রিসীমানায়ও থাকতে নেই। মেজাজ হারিয়ে কখন কি করে বসে।

চারু আনমনে হাসলো। আজ যেন তার মুখ থেকে হাসি সরছেই না। কি এক আনন্দ এসে যেন তার মনে ভীড় জমিয়েছে।রবিনের উচ্চারন করা প্রতিটা শব্দ মনে করে চারু আপ্লুত হচ্ছে। তার মেঘের মতো ভাসতে ইচ্ছে হচ্ছে। তারপর ভেসে ভেসে রবিনের উপর বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়তে মন চাচ্ছে।

_______

শাখাওয়াত তালুকদার আর জামশেদ মজুমদার পাশাপাশি বসে আছে।দুজনের মুখ ই হাসি হাসি। দুজনের হাতেই চায়ের কাপ। শাখাওয়াত তালুকদার সামনে ইশারা করে বললেন-
“ব্রিজটার ডিজাইনটা অনেক ভালো হইছে তাই না রে?”

জামশেদ মজুমদার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মাথা নাড়লেন। মুখে বললেন-
“ইঞ্জিনিয়ার টা তো আমি ঠিক কইরা দিছি ব্যাডা। ডিজাইন তো সুন্দর হইবই।”

” হ, ইঞ্জিনিয়ারটা কাজ করে ভালো।তবে সুড়কির লোকের ঝামেলা টা তুই একটু মিটায়া দে।”

“আচ্ছা,আমি ব্যাপার টা দেখতাছি।”

দুজনেই বড় ছাতার নিচে বসে চায়ের কাপ হাতে গল্প করতে লাগলো। তাদের সামনে নদীর উপরে এক্টা ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। সেই নদীর এক পাশে ছাতা টানিয়ে দুই বন্ধুর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামের চেয়ারম্যান হিসেবে এই ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে শাখাওয়াত তালুকদার। আর তাকে বিভিন কাজে সাহায্য করার জন্য রয়েছে জামশেদ মজুমদার। গত নির্বাচনের ভয়াবহ মারামারির পর তাদের দুজনের শত্রুতা শেষ হয়েছে। তৃতীয় পক্ষ দ্বারা সংঘটিত সেই মারামারিতে রবিন তুহিন দুজনেই আহত হয়েছিলো।নিজেদের ছেলের জীবনের সংশয়ের কথা চিন্তা করে দুজনেই হাত মিলিয়েছে তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে।শাখাওয়াত তালুকদার গ্রামের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে আর জামশেদ মজুমদার পৌরসভা মেয়র নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এরজন্য তাকে কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়েছে কিন্তু তারপরও তিনি অনেক খুশি। তাদের দুই পরিবারের বন্ধুত্ব আবারো জোড়া লেগেছে।

______

রবিন শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে নিচে নামলো। সারা সোফায় বসে মোবাইল দেখছিলো রবিনকে নামতে দেখে হাসি হাসি মুখ করে তাকালো। রবিন নিচে নেমে সারাকে দেখে ডায়নিং থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে প্রশ্ন করলো-

“কিরে কেমন আছস? গত রাতে দেখলাম না তো তোরে।”

“মাথা ব্যথা করছিলো তাই ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম।”

রবিন পুরো গ্লাস পানি শেষ করে সারার সামনে সিংগেল সোফায় বসলো।টেবিল থেকে পেপার টেনে নিয়ে পড়তে আরম্ভ করলো।সারা অনিমেষ তাকিয়ে রইলো রবিনের দিকে। তার গতকালের সাইকেলের ঘটনাটা মনে পড়লো।তার চোখের পাতা কেঁপে উঠলো। রবিনের সাথে সে অন্য কোনো মেয়েকে কিভাবে মেনে নিবে? সারার মনে জেঁকে বসেছে যদি রবিন তাকে মেনে না নেয়? যদি রবিন চারুকেই চায় তখন কি করবে সে? সারা দুইপাশে মাথা নাড়লো। না!না! এমন হতে পারে না।তার এত দিনের প্রার্থনা বৃথা যেতে পারে না। সারার চোখ মুখ অন্যরকম হয়ে গেলো।রবিন চোখ তুলে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো-

“কোনো সমস্যা?”

সারা কিছু না বলে বসা থেকে উঠে চলে গেলো। তখনি শাখাওয়াত তালুকদার আর ফাতেমা বেগমকে আসতে দেখে সে সিড়ির কোণায় দাঁড়ালো। দুজনেই সোফায় এসে বসলেন। শাখাওয়াত তালুকদার বোন কে উদ্দেশ্য করে বললেন-

“রানির বিয়ের জন্য ই আসলে তোরে আসতে কইছি। সামনের সপ্তাহেই জামশেদ বিয়েটা সারতে চাইতাছে।”

তারপর রবিনের দিকে তাকিয়ে বলল-
“রবিন তুই কি কস?”

রবিন পেপার ভাঁজ করে টেবিলে রেখে বলল-
“তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো।”

বলেই উঠে চলে গেলো। রবিন সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো। ফাতেমা বেগম রবিনের বের হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন।এই সময়ের মাঝে রুবিনা বেগম ট্রে তে করে তিন কাপ চা নিয়ে এসে বসলেন। স্বামী আর ননদের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে নিজেও কাপে চুমুক দিলেন। ফাতেমা বেগম কাপ হাতে তুলে নিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন-

“ভাইজান,আমার একটা আবদার আছে।আমি এর আগেও ভাবিরে এই কথা একবার কইছি।এখন তোমার কাছে সরাসরি ই কইতে চাই।”

শাখাওয়াত তালুকদার কাপে চুমুক শেষ করে মুখ তুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।প্রশ্ন করলেন-
“কি আবদার?”

রুবিনা বেগম বুঝতে পারলেন তার ননদ কি বলতে চাচ্ছে। তিনি চিন্তিত হলেন কিছুটা। ফাতেমা বেগম গলা পরিষ্কার করে বললেন-

“আমার একটামাত্র মেয়ে। আমি চাই মেয়েটারে এমন ঘরে বিয়ে দিয়ে যেইখানে আমার কোনো চিন্তা থাকব না মেয়েটারে নিয়া। বাপ মরা মেয়েটার সুখ হইলেই আমি নিশ্চিন্ত। ”

শাখাওয়াত তালুকদার মাথা দুলিয়ে সায় দিয়ে বললেন-
“তা তো অবশ্যই। তোর মনে কি কোনো পাত্র আছে? আর না থাকলে আমি ঘটক লাগাইতাছি।”

“ভাইজান,আমি আমার মেয়েরে অন্য কোথাও দিতে চাই না।আমি চাই আমার মেয়েটারে তুমি তোমার বাড়ির বউ কইরা আনো। তেইলে আমি শান্তিতে থাকবাম।”

সারা আড়ালে দাঁড়িয়ে লাজুক হাসলো। সে নিজেও তো এই বাড়ির বউ হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে।

বোনের কাছ থেকে এমন কথা শুনে শাখাওয়াত তালুকদার স্ত্রীর দিকে তাকালেন। দুজনের চোখে চোখ মিললো। তিনি দ্বিধা ভরা কন্ঠে বললেন-
“তুই কি রবিনের সাথে সারার বিয়ের কথা কইতাছস?”

“জী,ভাইজান।সারা রবিন দুজন দুজনরে ছোটবেলা থাইকা চিনে। দুজনের বিয়ে হইলে দুজন ই সুখী হইব ইন শা আল্লাহ।”

শাখাওয়াত তালুকদারকে চিন্তিত দেখালো।তিনি চায়ের কাপ টেবিলে নামিয়ে রেখে বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন-
“সব ই বুঝলাম। কিন্তু এই ব্যাপারে রবিনের মতামত ছাড়া তো কিছু বলা সম্ভব না। তুই তো জানোস রবিনরে। সে তার নিজের মেজাজ মর্জি ছাড়া কিছু করে না।এমনকি বাপের কথাও সে তেমন দাম দেয় না। তাই ওর মতামত ছাড়া আমি তোরে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারতাম না।”

ফাতেমা বেগম হাসলেন। সন্তুষ্টচিত্তে বললেন –
“তুমি এই বিষয়ে চিন্তা কইরো না।রবিন আমার একমাত্র ভাতিজা।ও আমার কথা ফেলতে পারতো না।ও ঠিক ই রাজি হইব। ও রাজি হইলে রানির বিয়ের পর তেইলে আমি সারা আর রবিনের বিয়ের আয়োজন করতে চাই।”

ফাতেমা বেগম খুশিমনে টেবিল থেকে চায়ের কাপ তুলে নিয়ে চুমুক দিলেন। অপর পাশে শাখাওয়াত তালুকদার আর রুবিনা বেগম চিন্তিত মুখে এক অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন।তারা দুজন ই জানেন যে রবিন চারুকে ভালোবাসে।

________

কলেজ ছুটির পর রানির ফুচকা খাওয়ার সাধ জাগলো। তাই চারু রানি দুজনেই কলেজ মাঠের এক কোণায় দাঁড়ানো ফুচকার দোকানে এসে দাঁড়ালো।দুজনেই হাসাহাসি করে একজন আরেকজনের উপর ঢলে পড়ছে। হাসতে হাসতে চারুর চোখ পড়লো ফুচকার দোকান থেকে কিছুটা দূরে নিচু জায়গাটায়। সেখানে রবিন একটা গাছের নিচে দলবল নিয়ে বসে আছে। গাছের পাশে অনেকগুলো বাইক স্ট্যান্ড করে রাখা। রবিনের সাথে আরো কজন চেয়ারে বসে আছে বাকিরা সবাই কেউ দাঁড়িয়ে কেউবা গাছের শিকড়ে বসে। চারু ভালোভাবে রবিনকে খেয়াল করলো। মেলার দিন সে উত্তেজনা ভয়ে ভালো করে দেখতে পারে নি রবিনকে। তাই এখন সে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো। রবিন পায়ের উপর পা তুলে বসে পা নাচাচ্ছে।বরাবরের মতোই তার চোয়াল শক্ত হয়ে আছে কিন্তু শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ঠোঁট নেড়ে অল্প স্বল্প কথা বলছে। হুমম, নেতা নেতা ভাব এসেছে তার মাঝে। চারু মৃদু হেসে ঠোঁট বাঁকালো। এই ছেলের ভাবের চেয়ে ভঙ্গি বেশি। দেখোনা দেখো,এমন ভাব নিয়েছে যেন প্রেসিডেন্ট।

রানি ফুচকার প্লেট চারুর হাতে ধরিয়ে দিতেই চারু চোখ সরিয়ে নিলো। ফুচকা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চেয়ে চেয়ে দেখলো রবিনকে।কোথা থেকে কাগজ কলম এনে কিসব লেখালেখিও করছে। চারু বেশিক্ষন দেখতে পারলো না রানির ডাকে তাকে রানির দিকে মনোযোগ দিতে হলো। রানি তাকে ফুচকার টক কি ভাবে খেলে সুস্বাদু লাগে সেটা হাত নেড়ে নেড়ে বুঝাচ্ছে। ফুচকা খাওয়া শেষে বিল দেয়ার সময় একটা ছেলে এসে বিল দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল-

“ভাই বিল দিয়া পাঠাইছে আমারে।আপনেরা আর কিছু খাইবেন?”

রানি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“কোন ভাই?”

ছেলেটা আঙ্গুল দিয়ে রবিনকে দেখিয়ে বলল-
“রবিন ভাই।”

রানি রবিনকে দেখে বিস্মিত হলো।এক পা এগিয়ে হাসি দিয়ে রবিনকে হাত নাড়ালো।রবিন ও প্রতিউত্তরে মাথা উপর নীচ করলো। ছেলেটা হঠাৎ চারুর কাছে এসে হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলল-
“এইটা ভাই আপনারে দিছে।”

চারুর হাতে কাগজটা দিয়েই ছেলেটা দ্রুত চলে গেলো। চারু প্রথম ধফায় কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল তারপর নিজেকে কিছুটা সামলে রানির দিকে তাকালো।রানি এখনো রবিনের দিকে তাকিয়ে আছে।সে তাড়াতাড়ি চিরকুটটা হাতের মুঠোয় লুকিয়ে ফেললো।রানিকে এটা দেখানো যাবে না, সুযোগমতো ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলতে হবে। তারপর বাড়ি গিয়ে লুকিয়ে পড়বে এটা।

চিরকুট পড়ার উত্তেজনায় চারু তৎক্ষনাৎ রানিকে নিয়ে রওয়ানা হলো বাড়ির দিকে। বাড়িতে এসে তার আর তর সইলো না। ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ না করেই চিরকুটটা হাতে নিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। তারপর চিরকুটটা খুললো।সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা-

“উত্তর টা তো পেলাম না।এক্সপেরিমেন্ট করবি কিনা জানালি না তো। আমার কিন্তু আর দেরি সহ্য হচ্ছে না।জোর করে এক্সপেরিমেন্ট করে ফেললে তখন দোষ দিস না।”

চারু চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো।বড় বড় শ্বাস পড়ছে তার।কি সমস্ত কথা লিখেছে রবিন!! ইয়া আল্লাহ! তার তো বুক কাঁপছে।

_______

সন্ধ্যার পর রবিন বাড়ি ফিরলো।রুবিনা বেগম রবিনের আসার আভাস পেয়ে তার ঘরে আসলেন।রবিন তখন সদ্য হাত মুখ ধুয়ে বের হয়েছে।টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বিছানায় রুবিনা বেগমের পাশে বসে বললো-
“কি ব্যাপার মা, এই সময় আমার ঘরে আসলা যে।”

“তোর সাথে একটা বিষয়ে কথা কইতাম।”

“কি বিষয়?”

“তোর বিয়ের বিষয়। ”

রবিন টাওয়াল রেখে বলল-
“রানির বিয়ে হোক পরে আমারটা।”

রুবিনা বেগম উশখুশ করে বললেন-
“তোর ফুপি চায় তুই সারারে বিয়ে কর।”

রবিনের ভ্রু কুচকে গেলো।সে বিস্মিত কন্ঠে বলল-
“কি? সারার সাথে এই ধরনের চিন্তা মাথায় আনার কারন কি?”

“আমি জানি না।তোর ফুপি আজ এই কথা তোর আব্বার সামনে তুলছে আর…..”

রবিন তার মা কে থামিয়ে দিয়ে বলল-
“এই বিষয়ে আর কোনো সাউন্ড না মা। আমি কারে বিয়ে করতে চাই তোমরা ভালো কইরাই জানো।এইসব বিষয়ে সময় নষ্ট না কইরা তার সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করো।”

রবিন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। রুবিনা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি জানতেন এমন ই কিছু হবে।

রবিন ছাদে এসে ছাউনির নিচে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। মাথার নিচে হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। চারুর কথা মনে পড়লো। চারুর ফুচকা খাওয়ার দৃশ্য মনে করে কিছুটা হাসলো রবিন। হঠাৎ সারার ডাকে পাশ ফিরে তাকালো।সারা দাঁড়িয়ে আছে। রবিন উঠে বসলো। মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো-

“কিছু বলবি?”

“আসলে তোমার আমার বিয়ের কথা চলছে। তুমি কি রাজি,যদি রাজি……”

রবিন সুন্দর করে সারাকে বুঝানোর মতো করে বলল-

“এই বিষয়ে আর কোনো কথা না। তুই আমার ফুপাত বোন, তোরে আমি বোনের নজরে দেখি। তোর সাথে আমার বিয়ে এইসব চিন্তা মাথা থাইকা দূর কর।”

রবিনের বলা কঠিন শব্দ গুলোতে সারার চোখে পানি আসলো। সে ভেজা কন্ঠে বলল-

“বিয়ের পর এইসব কেটে যাবে। তখন ঠিক ই আমাকে আর বোন লাগবে না। আমাদের অনেক সুন্দর সংসার হবে। দেখো তুমি।”

রবিন ঝাঁঝাঁলো কন্ঠে বললো-
“সারা, তুই এইখান থাইকা এখনি যা। এই বিষয়ে আর কোনো কথা না ।”

সারার মুখ কঠিন হয়ে গেলো। সে হাত মুঠো করে শক্ত কন্ঠে বললো-
“আর চারু,চারুকে কি নজরে দেখো তুমি?মামাতো বোনের নজরে?”

রবিন গরম চোখে তাকালো। সারা এগিয়ে এসে বললো-
“চারুকে যদি বোনের চোখে না দেখতে পারো তাহলে আমার ক্ষেত্রে সমস্যা কি?”

রবিনের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। তার মেজাজ চড়ে গেলো। সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল-
“চারুকে বউ এর নজরে দেখি।আমার বাচ্চার মায়ের নজরে দেখি।”

সারার দিকে একটা কঠিন চাহনি দিয়ে রবিন বড় বড় পা ফেলে ছাদ থেকে বেরিয়ে গেলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here