প্রেম_প্রার্থনা #তামান্না_আঁখি #পর্ব ৯

0
345

#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব ৯

রবিন চারুর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে সেই যে এক লোকমা ভাত তার মুখে দিয়েছিল আর খাওয়ানোর নাম নেই। হাতের দিকে চেয়ে বসে আছে। রবিন চারুর মুখের সামনে হাত দিয়ে তুড়ি বাজাল। চারু চমকে চোখ তুলে চাইল। রবিন বলল-

“খাওয়াইতে আইসা বইসা আছস কেন। খাওয়া।”

চারু থতমত খেয়ে বলল-

“চামচ নিয়া আসি রবিন ভাই? তুমি বরং চামচ দিয়াই খাও।”

রবিন জোর গলায় বলল-

“না চামচ দিয়া না। আমি তোর হাত দিয়েই খাব।”

চারু র “ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি” অবস্থা হলো। রবিন আরেকবার ধমক দিয়ে বলল-

“কি রে! খাওয়া!”

চারু ভাত মাখাল। রবিনের মুখে ভাত তুলে দিতে গিয়ে দেখল তার হাত কাঁপছে। হাত থেকে কিছু ভাত রবিনের প্যান্টের উপর পড়ে গেল। রবিন তা দেখে মুখ এগিয়ে এনে টুপ করে চারুর আংগুল সহ ভাত মুখে পুরে নিয়ে আবার মাথা সোজা করে চারুর দিকে তাকিয়ে চাবাতে লাগল। রবিনের আকস্মিক কান্ডে চারু চমকে গেল। ওর এবার বুক কাঁপছে। চোখ তুলে রবিনের দিকে যে তাকাবে সেই সাহস নেই তার। আবারো লোকমা বানিয়ে রবিনের মুখের কাছে নিল। রবিন চারুর কম্পনরত হাত দেখে হাসলো শুধু। সে ভীষণ মজা পাচ্ছে চারুর কর্মকান্ডে।

চারু তীব্র অস্বস্তি নিয়ে রবিনকে খাওয়ানো শেষ করল। খাওয়ানো শেষ হতেই সে এক প্রকার দৌড়ে এই ঘর থেকে বের হতে নিল। অমনি রবিন পিছু ডাকল-

“ঘর টা মুছে দিয়ে যা।”

চারু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। ঘর মুছবে মানে? সে বোকার মত জিজ্ঞেস করল-

“ঘর মুছব কেন রবিন ভাই?”

রবিন তার প্যান্টের উপর থেকে ভাত গুলো ঝেড়ে ফ্লোরে ফেলল। তার পর সেদিকে দেখিয়ে বলল-

“এক প্লেট ভাত খাওয়াইতে আইসা অর্ধেক আমার প্যান্টে আর ফ্লোরে ফেলছস। সব পরিষ্কার করে দিয়ে তারপর যা।”

চারু হতবাক হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। এখন সে ঘর মুছবে? দু টো ভাত ই না হয় পড়েছে, তাই বলে ঘর মুছাবে?
চারুর দাঁড়িয়ে থাকা দেখে রবিন বাজখাঁই গলায় বলল-

“দাঁড়ায় না থাইকা তাড়াতাড়ি ঘর পরিষ্কার কর। আমার কাজ আছে।”

চারুর চোখে পানি চলে এল। এত আদর করে মুখে তুলে খাইয়ে দেওয়ার এই প্রতিদান? ঘর মুছতে হবে? বাড়িতে সে এক গ্লাস পানি নিয়েও খায় না। চারু ব্যথিত হৃদয় নিয়ে বালতি ভর্তি পানি নিয়ে এল। রবিন ল্যাপটপে কাজ করছিল। সে চারুকে আবার ধমক দিল।

“আগে ঘর ঝাড়ু দেয়া লাগে, জানস না? অপদার্থ একটা। যা ঝাড়ু নিয়া আয়।”

চারুর হৃদয় ফুটো হয়ে গেল। সব আবেগ সেই ফুটো দিয়ে পানির বেগে বের হয়ে গেল। সে মনে মনে রবিন কে কিছু গালি দিল। গালি দিতে দিতে সে ঘর ঝাড়ু দিল তারপর মুছল। রবিন পুরোটা সময় ল্যাপটপে মুখ গুঁজে ছিল। চারু কষ্টে তার কিছু যায় আসে না। চারু মুখ ফুলিয়ে বালতি নিয়ে বের হতে যাবে তখন রবিন আবার ডাকল-

“দাঁড়া।”

চারু দাঁড়িয়ে গেল। গোমড়া মুখ করে ঘুরে তাকাল।

রবিন ফ্লোরের দিকে এক বার দেখে আবার চারুর দিকে তাকিয়ে বলল-

“ভাল করে ঘরটাও ত দেখি মুছতে পারস না। আবার বিয়েশাদি করার শখ। পাঁচ সেকেন্ডে ঘর থেকে বের হ নয়ত আবার ঘর মুছাব।”

চারু হা করে কথা গুলো শুনলো। আবারো ঘর মুছানোর কথা শুনে সে গুলির মত ছুটে বের হয়ে গেল, সেই সাথে রবিনের ঘরের দরজাটা হা করে খুলে রেখে গেল। রবিন একটা ছোট শ্বাস ফেলে উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে আবারো ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।

_____

চারু দুম দুম পা ফেলে রানির ঘরে গিয়ে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। রানি বই পড়ছিল। বই থেকে মুখ তুলে জিজ্ঞেস করল-

“কি হইছে তোর?”

“কিছু না।”

“মামা মামি রা সব চলে গেছে। তুই ও চইলা যাইতি। মামী তোরে নিয়া যাইতে চাইছিল।”

চারুর সর্বাঙ্গ যেন জ্বলে গেল এই কথা শুনে। সে বিছানায় উঠে বসলো। ক্ষিপ্ত কন্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল-

“তোরা দুই ভাই বোন ত আমারে মানুষ ই মনে করস না। একজন ত আমারে দিয়া ঘর মুছাইলো আর তুই তাড়ায় দিতাছস। আজকের ঘটনার জন্য তোর মন খারাপ সেই জন্য আমি থাইকা গেছি। আর বিনিময়ে কিনা এই প্রতিদান পাইতাছি? তোরা অকৃতজ্ঞ। তোদের উপকার করাই আমার ভুল হইছে।”

চারুর এমন রেগে যাওয়ার আগামাথা কিছু বুঝল না রানি। সে চারুর গা ঘেষে বসে বলল-

“রাইগা আছস কেন? মামী তোরে নিয়া চিন্তা করতাছে তাই কইছি।”

চারু “হুহ” বলে মুখ অন্য দিকে সরিয়ে নিল। রানি চারুকে জড়িয়ে ধরল।বলল-

“তুই আমার সাথে থাকলে ত আমার মন খারাপ এক নিমিষেই চইলা যাইব। এইবার ক তোরে দিয়া কে ঘর মুছাইল?”

“তোর ভাই।”

রানি এই কথা শুনে হেসে কুটি কুটি হয়ে গেল। চারু রানির হাসি দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ল রানির উপর। দুমা দুম কিল পড়ল রানির পিঠে।

___________

তুহিন আর সজল তাদের ন্যাড়া মাথা নিয়ে নদীর ধারে বসে আছে। দুজনের মুখ ই ভোঁতা হয়ে আছে। সজলের হাতে একটা প্যাকেট। সে প্যাকেট থেকে দুটো ক্যাপ বের করল। একটা নিজে মাথায় পড়ল আর আরেকটা তুহিনের দিকে এগিয়ে দিল। তুহিন ক্যাপ টা হাতে নিয়ে দলা পাকিয়ে ছুড়ে ফেলল। সজল একটা হতাশ শ্বাস ফেলে উঠে গিয়ে ক্যাপ টা নিয়ে এল। তুহিন রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। সজল তুহিনের পাশে বসে ক্যাপ টা তুহিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল-

“ভাই, এই ক্যাপ ছাড়া আর গতি নাই। ন্যাড়া মাথা নিয়া ত আর ঘুরন যাইব না।”

তুহিন দাঁত কিড়মিড় করে বলল-

“রবিন্যারে আমি চাবায় খাইয়া ফেলবাম।”

“মাথা গরম কইরা লাভ নাই ভাই। উলটা লস। রবিন্যা চেয়ারম্যানের ছেলে। সামনে ইলেকশন এখন কিছু না করন ই ভাল।”

তুহিন একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল-

“সমস্যা নাই, রবিন্যা রে কিছু করতাম না। হিসাব ত আমার রানির সাথে। এমন এক ব্যবস্থা করছি কাকপক্ষিও টের পাইব না কিছু।”

_____________________

চারু বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে পায়চারী করতে লাগল।তার মন অস্থির হয়ে আছে। কোনো মতেই কিছুতেই তার মন বসছে না। রবিন তাকে দিয়ে ঘর মোছানোতে তার অনেক রাগ হয়েছিল কিন্তু ওই বাড়ি থেকে আসার সময় যখন একটু রবিনের দেখা পেল না তখন তার সব রাগ কষ্টে পরিণত হল। পাশাপাশি সে নিজের উপর খুব বিরক্ত হলো। এরকম মিশ্র অনুভূতি হয়ার মানে কি? সে ঘরে পায়চারি করতে করতে একটা সিদ্ধান্ত নিল।

ফারহানা পড়ছিল। হঠাত করে দুম করে দরজা খুলে চারু ঢুকল। তার হাতে ভাতের প্লেট। সে এসেই ভাত মাখিয়ে লোকমা বানিয়ে ফারহানার মুখের কাছে ধরল। ফারহানা বিস্মিত চোখে তাকাল। চারুর মতিগতি কিছু তার বোধগম্য হচ্ছে না। সে জিজ্ঞেস করল-

“কি হইছে তোর?”

“আমি তোমারে মুখে তুইলা খাওয়ায় দেই?”

“আমি একটু আগেই খাইছি। আর তুই ভাত নিয়া আসছস কেন? তোর হইছে টা কি?”

“আমার কিছুই হইছে না। তুমি শুধু একটা লোকমা খাও।”

চারুর জোরাজোরি তে শেষ পর্যন্ত ফারহানা কে খেতেই হলো। চারু এখানেই থামল না। সে বাড়ি ঘুরে ঘুরে তার মা চাচিকেও খাওয়াল, রনিকেও খাওয়াল। খাওয়ানোর পাট শেষ করে সে ঘরে এসে বসল। ঘরে এসে সে গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো। এত জন কে সে মুখে তুলে খাওয়ালো কই কোনো কিছু ত হলো না, তাহলে রবিনকে খাওয়ানোর সময় ই এমন হল কেন? সে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। সে তার ডান হাতের দিকে তাকাল। তর্জনি টা লাল হয়ে আছে। রনিকে মুখে তুলে খাওয়ানোর সময় রনি বিরক্ত হয়ে কামড়ে দিয়েছিল। চারু তার অস্থির মনের কোনো দিশা না পেয়ে চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল।

_________

রানি স্কুল ছুটি হয়ার পর স্কুলের গেটে এসে দাঁড়াল। গত দুই দিন ধরে চারু স্কুলে আসে না তাই অগত্যা রানিকে একাই আসতে হয়। রবিন তাকে স্কুলে দিয়ে যেত নিয়ে যেত। কিন্তু আজ রবিন গ্রামের বাইরে কাজে গেছে তাই তাকে একাই ফিরতে হবে। ফিরার পথে মোড়ে আসতেই সে দাঁড়িয়ে পরল। দূর থেকেই দেখতে পেল মোড় টা আজ ও খালি। ওইদিনের পর থেকে তুহিন আর মোড়ে দাঁড়ায় না। এতে অবশ্য রানি স্বস্তি পাওয়ার বদলে আরো চিন্তায় পড়েছে। সে নিশ্চিত তুহিন কিছু একটা করবে। সে মোড় পার হয়ে মাটির রাস্তায় নেমে এল। একটু যেতেই তার পিছনে বাইকের শব্দ শুনল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার আগেই বাইকটি তার সামনে এসে ব্রেক কষল। বাইক থেকে নেমে দাঁড়াল তুহিন। তার মাথায় কালো ক্যাপ। রানির দিকে চেয়ে বলল-

” অনেক দিন পর দেখা হইল মহারানি। কেমন আছো?”

রানি ভয়ে ঢোক গিলল। আজ সে একা। আজ কি করবে তুহিন? সে তুহিন কে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইল কিন্তু পারল না। তুহিন তার পথ আটকে দাঁড়াল। খ্যাক করে হাসির শব্দ তুলে বলল-

“আজকের পরিবেশ টা সুন্দর তাই না মহারানি? এই পরিবেশে তোমার জন্য একটা সুন্দর উপহার বরাদ্দ করছি আমি। ”

রানি ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। তার হাত পা অল্প কাঁপছে। তুহিন আবারো বলল-

“তোমার ভাই এত বড় কান্ড করল আমার সাথে সবাই দেখছে কিন্তু কেউ সাক্ষি দিল না। ”

বলে তুহিন রানির আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর ফিস ফিস করে বলল-

“আজ কিন্তু আশে পাশে কেউ নাই। আজ কিছু হইলে এম্নিতেও কিন্তু সাক্ষি দেওনের কেউ নাই।”

রানি ভয়ার্ত চোখে তুহিনের দিকে তাকাল। তুহিন খ্যাক করে বিশ্রি একটা হাসির শব্দ তুলল। তার পর পকেট থেকে খবরের কাগজে মোড়ানো একটা কাচের মাঝারি সাইজের বোতল বের করল। বোতলের ছিপি খুলতে খুলতে বলল-

“এই প্রথম তোমারে আমি উপহার দিতাছি। তাই উপহার টা একটু স্পেশাল। তোমার সারাজীবন মনে থাকব।”

বলেই বোতলে থাকা তরলটি রানির দিকে ছুড়ে দিল।

চলবে

[এটা আমার প্রথম গল্প। জানিনা কেমন হচ্ছে। ভুল ত্রুটি হলে আমাকে ধরিয়ে দিবেন। আপনাদের একটু উৎসাহ ই আমার কাম্য]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here