#প্রেম_প্রার্থনা
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৪৭
“তুই চাইলে এখনি বাসর কইরা ফেলতে পারি।ছাদেই কিন্তু আছি দুজন।”
এই কথা শুনে চারু তড়িৎ গতিতে রবিনের দিকে ফিরলো। চোখ আটকে গেলো রবিনের চোখে। রবিন রেলিঙে হাত রেখে ঝুঁকে আছে তার দিকে। শান্ত চোখে চারুর দিকে চেয়ে আছে সে। চারু চোখ নামিয়ে নিলো। এদিক ওদিক এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো।
রবিন শান্ত মুখে চোখের মণি ঘুরিয়ে চারুর সারা মুখ দেখলো। গভীর মনোযোগ দিয়ে চারুর চোখের পাপড়ির নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করলো। ভালো করে দেখার জন্য হাঁটু কিছুটা ভেঙ্গে আরেকটু ঝুঁকে আসলো চারুর দিকে। কাছাকাছি মুখ এনে চারুর মুখের প্রতিটি কোণা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।
এদিকে রবিনের বাহুদ্বয়ের মাঝে আবদ্ধ চারুর হার্ট এটাক হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এম্নিতেই তার হৃদয়ের অবস্থা করুণ।তার উপর এরকম করলে হৃদয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়া তো উপায় নেই।সে এম্নিতেই দূর্বল হৃদয়ের মানুষ। চারু এক পলক রবিনের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।তারপর ছোট করে গলা খাকারি দিয়ে রবিনের ধ্যান ছুটাতে চাইলো।কিন্তু কোনো ফল পেলো না। সে এইবার আগের চেয়েও জোরে শব্দ করে গলা খাকারি দিলো।কিন্তু যেই লাউ সেই কদু।রবিনের কোনো ভাবোদয় হলো না।চারু বাধ্য হয়ে যতটা সম্ভব কঠিন গলায় বলল-
“হাত সরান।আমি নিচে যাইবাম।”
চারুর গলার স্বরে কাঠিন্যতার বদলে কম্পনের মাত্রা অধিক। সে নিজের গলার স্বরে নিজেই বিব্রত। রবিনের কোনো নড়চড় না দেখে আবারো বলল-
“হাত সরাতে বললাম না।সরান হাত।”
“তুমি কইরা ডাক।”
রবিনের আবেগ মিশানো কন্ঠ শুনে চারু কেঁপে উঠলো। চোখ তুলে রবিনকে দেখলো।আবারো চোখ আটকে গেলো রবিনের স্থির চোখে।রবিনের চোখ এত সুন্দর কেন?কালো ছেলেদের চোখ কি এমনই সুন্দর হয় নাকি? কি গভীর কালো চোখ যেন এক্ষনি টুক করে ডুব দিয়ে আসা যাবে।আর সাঁতার না জানলে সেখানেই ডুবে মরতে হবে। চারু ডুবতে চায় না তাই চোখ সরিয়ে নিলো। রবিনের বাহুদ্বয়ের মাঝখানেই সে ছটফট করতে লাগলো।রবিন আবারো বলল-
“তুমি কইরা ডাক।”
“আপনি বয়সে আমার চেয়ে বড়।”
“ও তাই! তাইলে আগে যখন তুমি ডাকতি তখন তোর চেয়ে বয়সে ছোট ছিলাম।”
চারু হাসফাস করলো। তার দম আটকে আসছে। নতমুখে চোখের চাহনি হলো এলোমেলো। রবিন চারুর অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে নিশব্দে হাসলো। একটুতেই এই মেয়ের সব রাগ তেজ ফুটুস হয়ে গেছে। রবিন চারুর কাছাকাছি মুখ আনলো।চারু চোখ খিচে একপাশে মুখ দিয়ে পিছনের দিকে হেলে গেলো। যার কারনে রবিনেকেও আরো কিছুটা এগিয়ে আসতে হলো।সে চারুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল-
“থাক আর তুমি ডাকা লাগব না।বিয়ের পর একবারে ডাকিস।”
বলেই রবিন হাত সরিয়ে দূরত্ব রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।চারু রবিনের সরে যাওয়ার আভাস পেয়ে চোখ মেলে তাকালো।তারপর আর কোনোদিকে না তাকিয়ে এক দৌড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।
_________
সবুর আলী তার ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে। এখন মাঝরাত তাও তার চোখে ঘুম নেই।বৃদ্ধ বয়সের এই এক জ্বালা একবার ঘুম ছুটে গেলে সহজে আর আসতে চায় না।সবুর আলীর বুক ছিড়ে এক দ্বীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো। আজ ২ বছর যাবত সে বার্ধক্যজনিত পীড়ায় ভুগছে।বেশির ভাগ সময় তাকে শুয়েই থাকতে হয়। যৌবনের কথা অনেক মনে পড়ে তার।কি দাপটেই না চলাফেরা করেছে।সেই সাথে তার মনে ক্ষোভ জাগে যৌবনে সে তার প্রতিশোধ নিতে পারে নি। কিন্তু এখনো তার প্রতিশোধের আগুন নিভে নি। তার কোটরে বসে যাওয়া চোখগুলোতে এখনও সেই আগুন দৃশ্যমান।
দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলো সবুর আলীর দুই ছেলে। বাবাকে জেগে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে বাবার বিছানার কাছে দাঁড়ালো।সবুর আলী ছেলেদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“কোনো খবর পাইছস? ”
সবুর আলীর বড় ছেলে মাথা নাড়ালো। সে খবর পেয়েছে। গরম গলায় বলল-
“সামনের শুক্কুরবার তালুকদারের ছেড়ির বিয়া মজুমদারের পোলার লগে।”
সবুর আলীর চোখ ক্রোধে লাল হয়ে গেলো।দাঁত কিড়মিড় করে বলল-
“তালুকদার আর মজুমদার এক হইয়া গেছে।আমার এতদিনের কষ্ট সব বিফলে গেলো।”
সবুর আলীর ছোট ছেলে তেজী গলায় বলল-
“আব্বা আপনি খালি আদেশ দেন এক্ষনি তালুকদারের কল্লা ফালায় দিমু।”
সবুর আলী খুক খুক করে কাশলেন।হাত নেড়ে না করলেন। কাশি থামিয়ে বললেন-
“না, এক ভুল আমি দ্বিতীয়বার করতাম না। এক তালুকদাররে মারলে আরেকটা তালুকদার মাথা তুইল্লা খাড়া হইব। এইবার তালুকদারদের হাঁটু ভাইংগা দেওন লাগব।”
সবুর আলীর দুই ছেলে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তারা তাদের বৃদ্ধ বাবার কথা কিছু বুঝতে পারছে না।সবুর আলী দুই ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো-
“তালুকদারের মাইয়ারে তুইল্লা আন।মাইয়া মানুষ বংশের সম্মান।সেই সম্মান নষ্ট হইলে তালুকদারের হাঁটু ভাইংগা যাইব আর সোজা হইয়া দাঁড়াইতে পারব না।খেয়াল রাখবি তালুকদারের মাইয়ার বেইজ্জতির কথা যেন সারা গ্রামে ছড়ায়। মুখ দেখানির মতো অবস্থা যেন না থাকে।”
সবুর আলীর দুই ছেলেই বাপের কথায় সায় দিলো।সবুর আলীর মুখে শয়তানি হাসি ফুটলো। নিজের বড় ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ সে যা করেই হোক নিবে।
_________
আজ রানির গায়ে হলুদ। তালুকদার বাড়ির চারদিকে লাইটের বাহার। আত্নীয় স্বজন দিয়ে বাড়ি পরিপূর্ণ। গমগম করছে বাড়ির চারপাশ। রানি ফীহাকে কোলে নিয়ে তার ঘরে বসে আছে। তাকে ঘিরে আছে সব মেয়েরা। বিয়ে উপলক্ষে সৈয়দ বাড়ির মেয়ে বউরা সবাই ই তালুকদার বাড়ি এসে থাকছে। শুধু বাড়ির পুরুষরাই বাড়িতে থাকছে। রান্নাঘরে একের পর এক রান্না চাপানো হচ্ছে। অতিথি আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখতে চাচ্ছে না তালুকদার গিন্নি। রানির বিয়ে উপলক্ষে ফারহানাও এলো তার স্বামীকে নিয়ে। এটা যেন শুধু বিয়ে না পরিবারের সবার মিলনমেলা।
শাখাওয়াত তালুকদার বসার ঘরে সোফায় বসে চা খাচ্ছেন আর সবার আনন্দ করা দেখছেন। রুবিনা বেগম এদিক ওদিক ব্যস্ত ভঙ্গিতে হেঁটে বেড়াচ্ছে। শাখাওয়াত তালুকদারের বেশ লাগছে দেখতে। নিজের অর্ধাঙ্গিনীর দিকে তাকিয়ে নিজেকে সুখী সুখী অনুভব করলেন। তার মনে পড়লো বিয়ের আগের ঘটনা। যখন রুবিনাকে চাইতে সৈয়দ বাড়িতে গেলো তার বাবা তখন শাহজাহান আলী ভদ্রভাবে না করে দিলো। একমাত্র বোনের বিয়ে তিনি কোনো খুনি পরিবারের সাথে দিবেন না। শাখাওয়াত তালুকদার সেদিন খালি হাতে ফিরে এসেছিলেন কিন্তু হাল ছাড়েননি। এলাকায় তখন তাদের অনেক দাপট। চাইলেই তিনি রুবিনা বেগমকে তুলে আনতে পারতেন কিংবা সৈয়দ বাড়ির মানুষকে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু তিনি এসব কিছুই করেন নি বরং তিনি বয়সে ছোট শাহজাহান আলীর সাথে বন্ধুর মতো ব্যবহার করেছেন তার মন জিতেছেন।শেষ পর্যন্ত বোনের সুখের কথা চিন্তা করে শাহজাহান আলী রাজি হয়েছিলেন।শাখাওয়াত তালুকদার চোখ বন্ধ করলেন। এইতো সেদিন ই তাদের বিয়ে হয়েছিলো। অথচ আজ তার মেয়ের বিয়ে।তিনি তৃপ্তি নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।
আস্তে আস্তে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো।আর একটু পর সন্ধ্যা হবে।সন্ধ্যার পর ই শুরু হবে রানির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান।রবিনকে খুব ই ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। গরমে তার পড়নের সাদা পাঞ্জাবি কিছুটা ঘেমে গিয়েছে। ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে বসার ঘরে ঢুকে চেয়ার টেনে স্ট্যান্ড ফ্যানের কাছাকাছি বসলো।বসার ঘরে অনেক এক্সট্রা ফ্যান দেয়া হয়েছে।আস্তে আস্তে চালু করছে সেগুলোকে। বসার ঘরের সবকটা পিলারে ডেকোরেশনের লোকেরা ফুল দিয়ে সাজাতে ব্যস্ত। রবিন পায়ের উপর পা তুলে আয়েশ করে বসলো। বসে চারদিকে নজর ঘুরালো সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখার জন্য। হালকা ভলিউমে সাউন্ড বক্সে গান বাজছে।গানের ভায়োলিনের সুর ভেসে আসছে। রবিন ফোনে কথা বলা শেষ করে ফোন কান থেকে নামালো। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে মাথাটা পিছনের দিকে হেলিয়ে দিলো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে খুব ক্লান্ত। হঠাৎ তার কানে ভেসে আসলো রিনঝিন শব্দ। রবিন চোখ মেলে তাকালো। কেউ নুপুর পায়ে দৌড়াচ্ছে।রবিন চেয়ারে সোজা হয়ে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাল। এক অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য দেখে তার মুখাবয়ব শিথিল হয়ে গেলো।সমস্ত ক্লান্তি মুছে গেলো।চারু দৌড়ে নামছে সিড়ি দিয়ে।তার পড়নে হলুদ লেহেঙ্গা। দুই হাতে লেহেঙ্গা উঁচু করে ধরে সিড়ি দিয়ে নামছে। মাথার চুল ছেড়ে দিয়ে পিছনে অনেকগুলো ফুল গেথেছে।সিড়ি দিয়ে নামার তালে তালে চুলে লাগানো ফুলগুলোও নাচছে।পায়ের নুপুর যেন ঢেউ তুলছে পায়ে। সেই সাথে শব্দ করছে হাতে থাকা কাচের চুড়ি। রবিন অবাক নয়নে তাকিয়ে দেখলো এই দৃশ্য।তার মুগ্ধ হওয়ার ক্ষমতাও যেন হারিয়ে গেছে।
চারু সিড়ি থেকে নেমে দৌড়ে গেলো ডায়নিং এর দিকে। তার দৌড়ে যাওয়ার বাতাস এসে দোল খেলো রবিনের চোখে মুখে। রবিন মোহাবিষ্টের মতো চারুর গতিবিধির দিকে তাকিয়ে রইলো। চারু ডায়নিং এ এসে রবিনের দিকে পিছন ফিরে টেবিলের কাছ ঘেঁষে দাড়ালো। টেবিলের উপর থাকা রসমালাই এর বাটি খুললো।ভিতরের রসে ভাসতে থাকা রসমালাই দেখে তার জিভে পানি চলে এলো। সে চামচ নিয়ে একটার পর একটা রসমালাই মুখে দিতে লাগলো।
রবিন কিছুক্ষন চেয়ারে বসে উঠে দাঁড়ালো।ধীর পায়ে হেঁটে আসতে লাগলো চারুর দিকে। জেনারেটর চালু করে বসার ঘরের চারদিকে লাগানো ফ্যানগুলো ছেড়ে দেয়া হলো।মুহূর্তে বাতাস বয়ে গেলো বসার ঘরে।।ডেকোরেশনের ছেলেগুলোর টানাটানিতে পিলারে লাগানো কাঁচা ফুলগুলো থেকে পাপড়ি ঝড়ে পড়ছে। আর ফ্যানের বাতাসে উড়াউড়ি করছে চারদিকে।ঝুড়িতে রাখা গাঁদা ফুলের পাপড়ি গুলোও ফ্যানের বাতাসে গড়িয়ে পড়ছে ফ্লোরে।রবিন সেই পাপড়ি পা দিয়ে মাড়িয়ে চারুর দিকে এগিয়ে আসছে। চারুর আশেপাশে পাপড়ি উড়ছে। ঘরভর্তি মানুষ অথচ রবিনের মনে হচ্ছে এখানে সে আর চারু ছাড়া আর কেউ নেই।সমস্ত শব্দ যেন থেমে গেছে।শুধু কানে আসছে চুড়ির টুংটাং শব্দ। চারুর এসবে কোনো ধ্যান নেই সে রসমালাই মুখে পুড়তে ব্যস্ত। রবিন ধীর পায়ে আরো কিছুটা কাছে চলে আসলো। কিন্তু চারুর নিকটবর্তী হতে পারলো না। চারু খাওয়া শেষ করে চামচ রেখে যেভাবে দৌড়ে এসেছিলো সেভাবে দৌড়ে অন্যদিকে চলে গেলো।রবিন থম মেরে দাঁড়িয়ে ছন্দ তুলে চারুর দৌড়ে যাওয়া দেখলো। তার ডান হাত আপনাআপনি বুকের বাম পাশে চলে গেলো।
__________
সন্ধ্যার পর বাগানে রানির গায়ে হলুদের অনুষ্টান শুরু হয়ে গেলো।সকলেই স্টেজে উঠে রানিকে হলুদ লাগালো। ফটোগ্রাফার ফটাফট ছবি তুলছে। হলুদ রঙের লেহেঙ্গা আর কাঁচা ফুলের গয়নায় রানিকে দেখতে রানির মতোই লাগছে। রানি আর চারু দুজনেই হলুদ লেহেঙ্গা পড়েছে তবে ডিজাইন আলাদা।বউ হওয়ার কারনে রানির মাথায় লম্বা করে ঘোমটা দেয়া।চারুর উপর দায়িত্ব পড়েছে রানির ছবি তুলে তুহিনকে পাঠাতে হবে। তবে এমনি এমনি সে ছবি পাঠাবে না। কষ্ট করে ছবি তুলে পাঠানোর জন্য বিয়ের দিন গেটে তুহিনকে মোটা অংকের নোটের বান্ডিল দিতে হবে চারুর হাতে।তুহিন বাধ্য হয়ে সেই শর্তে রাজি হয়েছে। চারু অনেকগুলো ছবি তুলে এক কোনায় গিয়ে দাঁড়িয়ে ছবিগুলো তুহিনকে পাঠালো।
রবিন প্রতিটা মুহূর্ত চারুকে দেখছে। হলুদ লেহেঙ্গায় চারুকে এত সুন্দর লাগছে যে সে চোখ ফিরাতে পারছে না। চারু যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই রবিনের চোখ তাকে অনুসরণ করছে।চারু ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মাঝে মাঝে রবিন থেকে আড়াল হয়ে যাচ্ছে। তখন রবিনের চেহারাটা দেখার মত হচ্ছে। পরিবারের সবার সামনে না পারছে কিছু বলতে না পারছে চারুকে এনে সামনে দাঁড় করিয়ে রাখতে। চারু রবিনের সাথে এই লুকোচুরি খেলায় বেশ মজা পাচ্ছে।রবিন কয়েকবার তাকে চোখ রাঙিয়েছে, ইশারায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে।কিন্তু চারু দেখেও না দেখার ভান করে একটু পর পর এদিক ওদিক ছুটে আড়াল হয়ে যাচ্ছে।
রবিন আর চারুর এই খুনসুটি খুব কাছ থেকে দেখলো সারা। তার দমবন্ধ হয়ে আসলো এসব দেখে। সেও তো সেজেছে। রবিন কি পারে না তার দিকেও একটু তাকাতে? কি এমন আছে এই চারু মেয়েটার? সারা চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। সে তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আর বাড়াতে চায় না।
গায়ে হলুদের অনুষ্টানের মাঝে রানির ফোন বেজে উটলো।স্ক্রিনে তুহিনের নাম্বার ভাসলো।রানি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো পরিবারের সবাই এখানে আছে। তাই সে ফোন কেটে দিলো। তুহিন আরো কয়েকবার কল করলো। প্রতিবার ই কল কেটে দিলো রানি। কিছুক্ষন পর একটা মেসেজ আসলো ফোনে।সেখানে লেখা-
“বাড়ির পিছনে আসো। এখন তোমারে সামনাসামনি না দেখলে আমি মইরা যাইবাম।”
রানির চোখ কপালে উঠলো এমন মেসেজ দেখে। সে সাথে সাথে “না” লিখে রিপ্লাই করলো। কিন্তু তুহিন মানলো না। সে বিভিন্নভাবে কাকুতি মিনতি করতে লাগলো।সে রানির জন্য ফুল নিয়ে আসবে এই ফুল তাকে নিতেই হবে। শেষমেশ রানি তুহিনকে কথা দিলো লোকজন একটু কমে এলে সে আসবে। তুহিন তখন শান্ত হলো।
আস্তে আস্তে অনুষ্ঠান শেষের দিকে চলে আসলো। লোকজনও কমে আসলো। রবিন একটু সরে এসে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ফোন কানে নিয়ে কথা বলছে। এর মাঝেই একদল ছেলে নিয়ে লিমন এসে ঢুকলো। রবিনকে কিছু বলতে চাইছে সে।কল টা ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট হওয়ায় রবিন হাত ইশারা করে অপেক্ষা করতে বললো। কথা শেষ করে ফোন নামিয়ে লিমনের দিকে তাকালো। লিমন এগিয়ে এসে নীচু কন্ঠে বললো-
“ভাই, খবর পাইলাম সবুর আলীর নির্দেশে তালুকদার বাড়ি থাইকা একটা মেয়েরে কিডন্যাপ করা হইছে। ”
রবিনের ভ্রু কুচকে গেলো।শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
“কারে কিডন্যাপ করছে?”
“জানিনা ভাই।তবে সবুর আলী ক্ষতি করলে তোমার পরিবারের মেয়ের ক্ষতিই করব।”
রবিনের কপাল টান টান হয়ে গেলো। সে দৌড়ে গায়ে হলুদের স্টেজের দিকে গেলো। সেখানে গিয়ে রানিকে দেখে হাফ ছাড়লো।আস্তে আস্তে চোখ ঘুরিয়ে পরিবারে সকল মেয়েকেই দেখতে পেলো। লিমনের দিকে দ্বিধা নিয়ে তাকালো। লিমন ভীত কন্ঠে বললো-
“ভাই, চারু ভাবি কই?”
শোনামাত্র রবিন চারপাশে চোখ ঘুরালো। চারু কোথাও নেই।সে দৌড়ে গেলো বাড়ির ভিতর।সেখানে না পেয়ে ছাদে গেলো। নেই চারু নেই।কোথাও নেই। রবিন ঘাড় চেপে ধরলো।হতবুদ্ধি হয়ে চারপাশে নজর ফেলতে লাগলো।লিমন দৌড়ে ছাদে প্রবেশ করলো। রবিনের কাছে এসে বললো-
“ভাই,বাড়ির চারপাশ খুজছি। ভাবি কোথাও নাই। ”
রবিন আতংক নিয়ে ডাকালো।তার চোখমুখ ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। এই জীবনে এত আতংক এত ভয় সে কোনোদিন পায় নি। লিমন রবিনের অবস্থা দেখে ঘাবড়ালো। তখনি ছাদে দৌড়ে আসলো একটা ছেলে। রবিনের সামনে দুইটা দুমড়ানো ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
“ভাই,এইটা বাড়ির পিছনের গেটে পাইছি।”
রবিন ফুলগুলো হাতে নিলো।এইগুলো চারুর চুলে লাগানো ছিলো। প্রচন্ড ক্রোধে রবিনের চোখ জ্বলে উঠলো।ফুলগুলো মুঠোয় নিয়ে লিমনকে বললো-
“সব ছেলেদের বাড়ির পিছনের লাকড়ি ঘরে আইতে ক।”
বলেই বড় বড় পা ফেলে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। লিমন ফোন করে বাকি ছেলেদের আসতে বলে রবিনের পিছু নিলো। লাকড়ি ঘরে এসে কয়েকটা কাঠ সরানোর নির্দেশ দিলো রবিন। সেখান থেকে বের হয়ে এলো একটা বড় বাক্স। লিমন দক্ষ হাতে বাক্স খুলল। সে জানে বাক্সে কি আছে। রবিন ঘরের অন্য পাশে গিয়ে কাঠ সরিয়ে আরেকটা বাক্স বের করলো।বাক্সে থাকা রিভ*লবারটা হাতে তুলে নিলো। গু*লি লোড করে কোমড়ে গুজলো।লিমন একটা রিভ*লবার তুলে নিয়ে বাকিদের হাতে রাম*দা দিলো।রবিন ওদের কাছে এসে তীব্র ক্রোধে হিসহিস করে বলল-
“এই ঘটনায় যারা জড়িত একটারেও আস্ত ছাড়বি না। চারুর গায়ে যদি আচড় লাগে তেইলে ওদের ওইখানেই জানে মা*ইরা দিবি।”
চলবে