অরুর_সংসার #পর্ব-১৩ #লেখিকা-নিশিকথা

0
311

#অরুর_সংসার
#পর্ব-১৩
#লেখিকা-নিশিকথা
__________________

দেখতে দেখতে ৭ দিন পার হয়ে গেল।

ওদিকে জয়ার বাবা অনেক অসুস্থ ! হার্টে ছিদ্র পাওয়া গেছে কয়েকটা। এই নিয়ে জয়া খুব ই টেনশনে আছে।
আজ জয়া তার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে ডঃশুশান্ত এর কাছে।
গাড়ী তে বসে জানালার দিক তাকাতে তাকাতে হটাৎ জয়া একটা জিনিস খেয়াল করলো……..
সেদিন বাসায় ফিরে জয়ার মন খুব খারাপ ছিল অয়নের কথায়। কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছিল।
সেদিন রাতেই জয়ার বাবা অসুস্থ হয়ে যান।

!!! জয়ার বাবা অসুস্থ হবার পর থেকে জয়া যেন তাকে নিয়েই ব্যস্ত।

আশ্চর্য ওরপর থেকে এতদিন জয়ার একবারও অয়নের কথা মনে পরে নি!!!

তাহলে কি অয়নের কথাই ঠিক? জয়া কি নিজের উত্তর পেয়ে গেল??

জয়ার অয়নের বলা সেদিনের কথা মনে পরে গেল…..
♦অয়ন :ডঃ আমি আপনার জীবনের কোন অধ্যায় নই..মরীচিকা মাত্র!!!
আর মরীচিকার না শুরু আছে না শেষ………♦

and I can’t be your lifeline…
you know why??
— — — — — —
নাহ এটা আমি আপনাকে বলবো না! আপনি একটু ভেবে দেখবেন! নিজের এখোনো অবধি জীবন এবং ওই জীবনের সাথে জড়িত মানুষদের নিয়ে ভেবে দেখবেন! ” উত্তর পেয়ে যাবেন…..

হ্যা জয়া নিজের উত্তর পেয়ে গেছে…. জয়া এতদিন যার পিছনে ছুড়েছে সে জয়ার জীবনে মরীচিকা মাত্র! যার শুরু জয়া করেছিল কিন্তু যার শেষ নামানো জয়ার পক্ষে সম্বব নয়…
……………. আর একটা মানুষের অত্র জীবনে *পরিবার* সবথেকে গুরুত্বপুর্ণ অংশ! তার থেকে বড় কিছু না।সেটা বাবার পক্ষের পরিবার হোক বা স্বামির পক্ষের!

আরও একটা কথা আজ জয়া বুঝেছে……

সেটা হল ভালবাসার কথা!
প্রেম – ভালবাসা একটা এমন অনূভুতি যা মানুষের জীবনে অবিচ্ছেদ্দ অংশ। প্রেম ছাড়া মানুষ অনূভুতিহীন জড় বস্তুর মত।
কিন্তু…….
প্রেম নামক অনূভুতি যখন একটা সম্পর্কের মাঝে বিরাজ করে…. সেটা যে কোন সম্পর্কের মাঝে হতে পারে যেমন ঃ বাবা মা এর প্রতি সন্তানের বা সন্তানের প্রতি বাবা মা এর……..স্বামির প্রতি স্ত্রির কিংবা স্ত্রি প্রতি স্বামির…… অথবা ভাই বোনের একে অপরের প্রতি বা বন্ধু বান্ধব বা আত্বীয়ের প্রতি, কিংবা দেশের প্রতি………
তখন সেই
অনূভুতিটা সব থেকে পবিত্র অনূভুতি হয়।

তবে সম্পর্কহীন প্রেমানুভূতি নামহীন সম্পর্কস্বরূপ…………
আর নামহীন সম্পর্কের সমাজের কোন জায়গা নেই।

অয়নের প্রতি জয়ার ভালবাসাও সম্পর্কহীন প্রেম,এমন প্রেমানুভূতি অয়নই মেনে নেয় নি…তেমনই না সমাজ মেনে নিবে না জয়ার পরিবার।।
দীর্ঘস্বাস ফেলল জয়া….
…..
……….
……………
……….
…..
♦♦অরু নিজের সব কাজ শেষ করে,অয়নের লাঞ্চ পাঠিয়ে এখন বই পড়ছে। সামনে তার এইচ এস সি পরীক্ষা না!
এইতো গতকালই অয়ন তাকে সব বই কিনে এনে দিয়েছে ! অহনা তাকে পড়ায় হেল্প করছে।
২,৩ দিন আগে হবে অয়ন রাতে লেপটপে কাজ করতে করতে অরুকে জিজ্ঞাস করেছিল……..
অয়ন: অরু।।। কতদুর লেখাপড়া করেছো???
অরু: ১২ ক্লাশ
অয়ন: হু? ১২ ক্লাশ পড়ে আর পরীক্ষা দেও নি?
অরু : পরিক্ষা তো হয় নি এখনও
অয়ন: মানে? তুমি কি এবারের এইস.এস.সি ক্যান্ডিডেট?
অরু: হুম
অয়ন: তা পড়ালেখা তো দেখি কিছুই কর না।
অরু : ………..
অয়ন: কোন কলেজে পড়?
অরু: ভিকারুন্নেসা
অয়ন: তাহলে তো লেখাপড়ায় ভাল তুমি।
কোন বিভাগ??
অরু : আর্টস
অয়ন: ওহ।চাকরি করার ইচ্ছা আছে নাকি।
অরু : এখন আর নেই
অয়ন: আগে ছিল বুঝি?
অরু : বিয়ে না হলে তো কিছু করে খাওয়া লাগতো। সৎ মায়ের সংসারে ছিলাম বলে কথা। আর আমার আম্মু বলতেন যে মেয়েদের লেখাপড়া অনেক বেশি দরকার। শুধু যে চাকরি করার জন্য তা নয়,!! কারন প্রতিটা বাচ্চাই একজন শিক্ষিত মা দরকার! কারন প্রতিটা বাচ্চা প্রাথমিক শিক্ষা মায়ের কাছেই পায়! সংসারে একজন শিক্ষিত বউ দরকার।
অয়ন: হুম। এখন পরীক্ষা দেবার ইচ্ছা থাকলে দিতে পারো। কিন্তু চাকিরী করা চলবে না। i am enough able to fullfill your needs.
(অরু অবাক? কি বলছে অয়ন? অরু পরিক্ষা দিতে পারবে?? )
অয়ন: কি বল? দিবা পরিক্ষা? তাহলে বই এনে দিব কাল পরশু
অরু : দিবো
অয়ন: এডমিট তুলছো?
অরু : না
অয়ন: ফর্ম ফিলাপ করছিলা??
অরু : হ্যা!
অয়ন : তাহলে আগে বল নি কেন? বোকা নাকি?
অরু: আমি ভেবেছিলাম আর লেখাপড়া হবে বা
অয়ন : হুম আর আন্ডার ইন্টার মেয়েকে আমি বউ করে ঘরে রাখবো তাই না?
(অয়নের মুখে বউ কথা টা শুনে অরু যেন একবুক সুখ পেয়ে গেল। নিমিষেই অরুর চোখ ভোরে এলো)
অয়ন:সবাই জিজ্ঞাস করলে বলবো যে আমার বউ মাধ্যমিকের গন্ডি পার হয় নি।লজ্জার বিষয়!!! তুমি ইন্টার, অনার্স,মাস্টারর্স সব পড়বা। আমি পড়াবো!
(অয়নের মুখে এমন কথা শুনে অরু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি…অয়নের পায়ের কাছে বসে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছিল)
অরু : আমি সত্যি পড়বো??
অয়ন অরুর এমন কান্ড দেখে অবাক। সাথেসাথে বসে পরলো অয়ন অরুর সামনে। এমন করছো কেন? লেখাপড়া যতদুর করতে চাও করবা। তবে যাই কর রাত তা আমার
(অয়ন চলে গেল)
অরু ভাবছিল যে…
তার মনে লোক টা একটু একটু করে সম্পুর্ণ জায়গা নিয়ে নিয়েছে, কবে যে সে তার মনে জায়গা করতে পারবো?
না অরুর চেস্টা ছাড়লে চলবে না।যথাসাধ্য চেস্টা চালয়ে যাবে সে। ♦♦
/
//
///
//
/
জয়া : May i come in sir?
অয়ন: yes
জয়া : স্যার এইযে এটা শুশান্ত স্যার দিয়েছেন!
আমার বাবার অপারেশনে যাবতীয় সব এক্সেসারিজ মিলিয়ে কেমন কি খরচ হবে তার একটা ডিটেইলস যদি আমায় দিতেন
অয়ন: ডঃ জয়া আপনি ফাইটা রেখে যান আমি আপনাকে সন্ধায় দিব
জয়া : ওকে স্যার! কিন্তু আমার তো আজ কোন সার্জারি নেই তাই এখনী বাসায় ফিরছি বাবাকে নিয়ে।।।কাইন্ডলি যদি ইমেইল করে দিতেন।
অয়ন: ইয়াহ শিওর
জয়া : ওকে গুড আফটার নুন স্যার
অয়ন: গুড আফটার নুন
(জয়া দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এলো)
জয়া: স্যার
অয়ন: হুম
জয়া : সেদিনের বিহেভিয়ার এর জন্য I am really sorry. That day i was wrong
অয়ন: It’s ok Dr.Forget it
জয়া : হুম আল্লাহ হাফেয
অয়ন: হুম
….
…….
……….
……..
সন্ধায় অয়ন বাড়ী ফিরলো। আজকাল কাজের চাপ কম।ফিরে রুমে ঢুকে অয়নের নজর অরুকে খুঁজছে! কেন? জানা নেই অয়নের। হয়তো এতদিনে ফিরেই অরুর মুখ দেখার অভ্যাস হেছে! জি অভ্যাস
ভালবাসা নয় কিন্তু।
♥♥♥♥
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে অরুকে দেখতে পেল অয়ন।হাতে সেই লেবুর শরবত।
অরু শাড়ি পরেছে!!
আজ কেন যেন অপ্সরীর মত লাগছে অরুকে অয়নের কাছে!
অরু বিয়ের পরের দিনের সেই গোলাপি মনিপুরি তাঁতের শাড়ি টা পরা। চুলগুলো ছেরে দিয়েছে। মুখে কোন সাজ নেই। হাতে গোলাপি সাদা ড়েশমী চুরি, গলায় কানে ছোট সোনার গহনা। মাশাআল্লাহ সুন্দর লাগছে অরুকে।
অরু তো সবসময় ই এমন , সাজগোজ করে না খুব একটা! তাহলে আজ স্পেশাল কিসে?
হয়তো আজ প্রায় ৮ দিন পর অরু শাড়ি পরেছে তাই হয়তো……..
অয়ন অরুর হাত থেকে গ্লাসটা নিল।সারাদিন পর ফিরে অরুর হাতের এই লেবুর শরবত টা অয়নের ক্লান্তি নিমিষেই শেষ করে দেয়!
অয়ন গ্লাস টা রেখে অরুর কোমড় ধরে কাছে টেনে নিল নিজের।
অয়ন: অরু
অরু : জ্বি
অয়ন: কেবল গোছল করলে বুঝি?( অরুর ভেজা চুলে হাত দিয়ে)
অরু : জ্বি।
অয়ন: এত বেলায় কেন?
অরু : ……………
রুশা তরকারি ফেলে দিয়েছিল গায়ে তাই
অয়ন: ওহ ! মানে ডবল করা লেগেছে??
অরু : হ্যা
অয়ন: ট্রিপল করা লাগলে??
অরু : হ্যা????????? , (চোখ বড়বড় করে)
অয়ন: হ্যা….

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here