#অরুর_সংসার
#পর্ব-৭
#লেখিকা-নিশিকথা
_________________
অয়নের ইমেইল!!!!!!!
জয়া কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। খুশিতে তার নাচতে ইচ্ছা করছে! মিনিটেই যেন তার সব ক্লান্তি দুর হয়ে গেল।……
কিন্তু জয়ার এই খুশি যে বেশিক্ষনের স্থায়ী না!……
জয়া ইমেইল অপেন করলো……………. তাকিয়ে আছে জয়া লেপটপ এর দিকে। তাকিয়েই আছে………….. চোখ থেকে দু ফোটা তিন ফোটা করে পানি পরছে তারর….কিছুক্ষন বাদে চোখ জোরা ঝাপসা হয়ে আসলো জয়ার……
কেবল ই তো ভালবাসার বিশার প্রাচীর গড়ছিল জয়া তার মনে…. হুট করেই দমকা হাওয়া এসে তার ভালবাসার প্রাচীর গুড়িয়ে দিল!!! বলতেও তো পারলো না অয়নকে তার মনের কথা! …… বলতে পারলো না যে ♥♥ভালবাসি ♥♥….
বড্ড বেশি ভালবাসি..।।।
জয়ার বুক টা ফেটে যাচ্ছে! ছোট বেলা থেকে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে জয়া! ।।।।।। এই প্রথম যাকে চেয়েছিল তাকে পেল না… আর আজ যা পেল না তা জয়াকে পুরো শূন্য করে দিয়ে গেল।
ভালবাসার মানুষকে না পাওয়া এত কষ্টকর জানা ছিল না জয়ার……..
জয়া বেশ শক্ত মেয়ে.. চাপা স্বভাবের ও বটে…… সহজে কঁাদে না সে……. কিন্তু আজ তার খুব কান্না পাচ্ছে!! পাবেই বা না কেন আজ পর্যন্ত তো কখনও নিজেকে এত নিঃস্ব মনে হয় নি…..
ডুকরে কেঁদে উঠলো জয়া……………….
বাস্তবতা হয়তো এমন ই। কথায় আছে না ‘কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ ‘
আজ তেমন ই হয়েছে এদের জীবনে……..
★একদিকে জয়া সারারাত ডুকরে ডুকরে কেঁদেছে আরেকদিকে অয়ন সারারাত অরুর সাথে সুখের মিলনে লুপ্ত অবস্থায় কাটিয়েছে ★
সকাল…………..
অরুর ঘুম ভাংলো ভোর ৬ টায়। অয়নের গায়ে চাদর টেনে দিয়ে নিজেকে দ্রুত গুছিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। লম্বা শাওয়ার নিয়ে একটা হাল্কা পেস্ট কালারের সুতির শাড়ি পরে বের হল অরু।ভেজা চুল পিঠে ছড়িয়ে দিল। নিচে নেমে সোজা রান্নাঘরে চলে গেল। অরু রান্নাঘরে যেয়ে দেখে মিনু চা বিস্কিট নিয়ে খেতে বসেছে। অরুকে দেখে সেনিলা, মিনু সবাই অবাক।মিনু বলল..
মিনু : আরে নতুন বউ এখানে?
অরু: আটা ময়দা এগুলা কোথায় খালা?
মিনু : কেন কেন? আপনি কি করবেন ওগুলা নিয়া?
অরু : কি করবো মানে? নাস্তা বানাবো
মিনু: দরকার নাই। কেউ সক্কালে এত ভারী খাওন খায় না
অরু : আপনি বলেন কোথায় আছে ওসব…. আমি আজ থেকে রান্না করবো প্রতি বেলায়, আপনি আমাকে সহায়তা করবেন! সবাই খাবে না খাবে আমি বুঝবো
মিনু : মিনু তো রাগে একাকার ! গজগজ করতে করতে সব বের করে দিল।
(অরু মিনুকে বলল সব্জি গুলা কেটে দিতে,মিনু তাই কেটে দিল! মিনু শত রাগ বলেও কিছু বলার উপায় নাই)
অরু এক এক করে সবার জন্য পরোটা, আলু গাজর সিম মিক্সড একটা সবজি, মুরগী ছোট ছোট পিস করে ভুনা করলো… মিস্টান্ন হিসেবে সেমাই রেঁধে ফেলল। জুস আর চা বাকি এখন শুধু।
বুয়ারা সবাই অবাক। অরু একা হাতে দের ঘন্টার মধ্যে সব রেঁধে ফেলল!!! আর অরুর কাজ খুব ই নিট এন্ড ক্লিন! কারো খুত ধরার সাধ্য নেই !!….
ওই সময়ের মাঝে যে অরু শুধু নাসতা করেছে তা কিন্তু নয়!!!! অরু অয়ন, বাবা আর অহনার জন্য দুপুরের লাঞ্চ তৈরীর প্রস্তুতিও করছে!
সকাল ৮ টার এলার্ম বাজাতে ঘুম ভাংলো অয়নের। খুব ভাল ঘুম হয়েছে তার তাই মেজাজ টাও ফুরফুরে তার। টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে গেল অয়ন শাওয়ার নিতে।………….
৮:১০ বাজে অরু বুঝলো অয়ন উঠে গেছে। বুয়াদের টেবিল রেডি করতে বলে অরু উপরে গেল। অয়ন এখনো শাওয়ার নিচ্ছে …
অরু আলমারি থেকে অয়নের শার্ট, সুট, প্যান্ট, টাই, ওয়ালেট, বেল্ট, রুমাল মানে যাবতীয় সব প্রয়োজনীয় জিনিস বের করে রাখলো………
♣হ্যা অরু নিজের সংসার আজ থেকে নিজের মত করে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে… এটা তো অরুর ই সংসার,…..
.অরুকেই সব দিক সামলাতে হবে ♣
অরু রুম থেকে যেই বের হয়ে গেল। তার যে অনেক কাজ!!
অয়ন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তো অবাক! তার প্রয়োজনীয় সব জিনিস তার হাতের নাগালে রেখে গেছে!!!
কে???
অরু???
অয়ন বাকা হাসি দিয়ে বলল বাহ ♥ এমন হলে আজ থেকে আর ১০ মিনিট বেশি ঘুমানো যাবে……..
প্রতিদিনের মত সবাই ৮:৩০ এ নিজ নিজ রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেল।
নিচে নেমে সবাই অবাক!! বিশেষ করে অয়ন।কত বছর পর যে এমন টেবিল ভর্তি খাবার দেখলো তাও আবার ঘরের তৈরি….
বাবা: সেকি!!! এত কিছু কে করলো।
সেলিনা : সাহেব নুতন বউ এইসব রানছে তাও একা একাই
বাবা: কি!! অরুমা এসব কি? ১দিন কেবল হয়েছে এই বাড়ীতে এসেছো আর আজই রান্নাঘরে ঢুকলে!”! আমি বলেছিললাম বটে যে তোমার হাতের রান্না খাবো তবে আজ ই!!!!
অয়ন:…….
অরু: বাবা আপনি ই তো বলেছেন এটা আমার সংসার!! তাহলে আমাকেই তো সামলাতে হবে!
(অয়ন,অহনা আর তাদের বাবা খেতে বসলো টেবিলে)(অরু সবাইকে খাবার বেড়ে দিল)
(এতক্ষনের আরোহীও চলে এসেছে! অরু আরোহী কে বসতে বলল)
বাবা: অরুমা আমাদের সাথে বস!
অরু : না বাবা আমি একটু পরে খাবো!
আরোহী : কেন? এখনই বস!!!
অরু: না আপু পরে প্লিজ! আপনারা খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে…
অহন: ওয়াও!!! ভাবি ভাজি টা জি ইয়াম্মি হয়েছে!! আর চিকেন টাও জাস্ট ওয়াও
অরোহী অরুকে ইশারা করলো অয়ন কে সব বেড়ে দিতে! অরু অয়নকে পরোটা আর ৩ ড়া বাটিতে সব্জি, চিকেন, সিমাই বেড়ে দিল..
(অয়ন চুপচাপ খাচ্ছে নিচের দিকে তাকিয়া)
আরোহী, অহনা আর বাবা তো অরুর রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ!!!
অরু বলল…
অরু: বাবা দুপুরে লাঞ্চে কি খাবেন? বললে ভালো হত
বাবা: কেন মা? তুমি লাঞ্চ ও বানাবে? আমরা তো বাইরে খেয়ে নেই তাউ প্রয়োজন নেই
অরু: এতদিক খেয়েছেন বাবা! এখন থেকে আর না! আমি রোজ আপনাদের ৩ জনের লাঞ্চ পাঠিয়ে দিব! বাইরের খাবার স্বাস্থের পিক্ষে ভাল না।
অয়ন:……..
অহনা : ওকে ভাবি আজ গরুর মাংস ভুনা খাব।
বাবা: আচ্ছা মা তুমি ভাত আর মাংস দিয়ো
অয়ন:………
খাওয়া শেষে অয়ন অহনাকে বলল…
অয়ন: অহন! চল তোকে কলেকে ড্রেপ করে দেই ”
অহনা : কেন ভাই! তোমার অফিস আর আমার কলেজ তো অপসিট রাস্তায়
অয়ন: ব্যাংকে কাজ আছে চল
অহনা : ওকে। আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি
অয়ন: হুম
……..
(অয়ন অরুর রান্না ভাল হয়েছে কি না কিছুই বলল না! অরুর মন খারাপ হয়ে গেল)
আরোহী : ভাইয়া বললি না তো অরুর রান্না কেমন হয়েছে???
(অয়ন অরুর দিকে তাকিয়ে বলল….
অয়ন: খাওয়ার মত হয়েছে…..
এই বলে অয়ন বের হয়ে গেল)
(অরুর মুখটা কালো হয়ে গেল)
আরোহী সেটা খেয়াল করে বলল..
আরোহী : আরে অয়নের খুব পছন্দ হয়েছে তোমার রান্না! দেখলা না কি গপাগপ খেল!! ৪ তা পরোটা!! ভাবা যায়!! অয়ন কে আমি অনেক দিন পর এত খেতে দেখলাম
(অরুর মুখে এবার বিশ্বজয়ের হাসি)
অরু নাস্তা খেয়ে নিল। বুয়াদের ও নাস্তা সাজিয়ে দিল। বুয়ারা অবাক!
কিন্তু খুব খুশি হল সবাই
আজ অয়নের মন টা ভাল সকাল থেকেই! হবেই বা না কেন সামনের উপর আজ সব প্রয়োজনীয় জিনিস গুছানো পেয়েছে, তার কষ্ট করে খোজা লাগে নি… আর আজকের নাস্তা টা সেই ছিল অয়নের কাছে!
আজ কতদিন পর যে এমন পেট পুরে সে খেল!!!! রোজ রোজ ব্রেড, জেলী, বাটার খেয়ে খেয়ে অয়ন ছিল ফেড আপ। আর আজকে বেস্ট এর উপর বেস্ট ছিল অরুর হাতের চা।যেন চা তে চুমিক দেওয়ার সাথে সাথেই মন প্রফুল্ল হয়ে গেছিল, এরকম এক কাপ চা যে কোন মানুষের সব ক্লান্তি দুর করতে সক্ষম।।।
অয়ন অহনাকে ড্রপ করে ব্যাংকে গেল। হাসপাতালের সকল ডাক্তার + স্টাফদের বেতন তুলে হাসপাতাল এর উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হল………………..
♣♣♣♣♣♣♣♣♣
ওদিকে অনিকের মন টা খুব খারাপ! নিজেকে বড্ড পাষান মনে হচ্ছে তার! সে তার সব থেকে কাছের মানুষ টার গায়ে হাত দিয়েছে!! ১টা মাস ধরে তার কলিজার টুকরো কে কষ্ট দিয়েছে!!!
নিজেকে অনেক একা লাগছে তার!!! নিঃস্ব হয়ে গেছে সেই আজ
….
♣♣♣♣♣♣♣♣♣
চলবে…….
পরবর্তী পার্ট পড়তে আমাকে Follow দিয়ে রাখুন