অরুর_সংসার #পর্ব-৮ #লেখিকা-নিশিকথা

0
334

#অরুর_সংসার
#পর্ব-৮
#লেখিকা-নিশিকথা
_________________

অনিককে বেশি খানিকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে রিটা।
মেজাজ টা তার চরম খারাপ হচ্ছে অনিকের আরোহী আর রুশার প্রতি এত ভালবাসা দেখে।।।
কত না চেস্টা করলো অনিককে পাওয়ার। পেল না।অনিকের মন প্রানে শুধু একমাত্র আরোহী কে ভালবাসে কেন যেন সেতা মেনে নিতে পারে না রিটা।।।।।।

(রিটা অনিকের বসের মেয়ে।প্রথম দেখাতেই অনিককে ভালবেসে ফেলেছিল… তার পর থেকে অনিকের পিছু ছাড়ছে না….অনিক কে পাওয়া টা রিটার কাছে একটা নেশা!! আর এই নেশায় তার মাথায় প্রখর ভাবে সেদিন থেকে চড়ে বসেছে যেদিন রিটা জানতে পারে অনিক বিবাহিত এবং তার একটা মেয়ে আছে!!!! এটা জানার পর থেকে যেন রিটা অনিক আর আরোহীর সম্পর্ক ভাংগার পিছে মরিয়া হয়ে উঠেছিল….. কিন্তু কিছুতেই অনিকের মন গলাতে পারে নি সে….. এলের পর এক চেস্টা ব্যর্থ যাবার ফলে রিটা একদিন এমন নিচে নেমে যায় যা কল্পনার বাহিরে….. )

ওদিকে অনিক ভাবছে সেই কথা!!! ১ দেড় মাস আগের কথা……….
সেদিন অনিক তার বসের রুমে ঢুকে বস কে পায় নি!! কিন্তু অনিককে তো বলা হয়েছিল যে বস তাকে ডেকেছে!!! সারা কেবিন ভালবাবে দেখে বস কে না পেয়ে অনিক বের হতে নিবে কেউ তার হাত ধরে ফেলে!!

সে আর কেউ না রিটা!

রিটা তখন অনিকের সামনে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় দাড়ানো ছিল। অনিক কে টেনে জরিয়া ধরলো রিটা!! অনিক ধরে নি!!
অনিক রিটার এমন বিহেভিয়ার এ বড় রকম ঝাটকা খেয়েছিল!
অনিক : what the f**k!! how dare you Rita!!!
রিটা : i love you Anik
অনিক:are you mad?? তুমি জানোনা আমি মেরিড! আমার একটা মেয়ে আছে?
রিটা : জানি তো কি? আমি ভালবাসি তোমায় অনিক”” আমি তোমার ভালবাসা চাইই , তোমার ছোঁয়া চাই!!! একটা বারের মত অনতত “””<অনিককে শক্ত করে জরিয়া >
<অনিকে রিটাকে জোরে ধাক্কা দিল রিটা নিচে পড়ে গেল>
অনিক : You are just disgusting! nonsense
(অনিক বের হতে নিলে এবার রিটা অনিককে জোর করে টেনে নিজের গায়ের উপর ফেলল…অনিককে কিস করতে চাইলো। অনিক তখন রিটার এমন অসভ্যতামি দেখে জোরে ওর গালে চড় বসিয়ে চলে গেল…. )
ব্যাস…….
সেদিনে কিছু moment এর pick wrong angel এ তুলিয়েছিলো রিটা তার বান্ধুবিকে দিয়ে!!! সেটা নিয়েই রোজ রিটা অনিককে ব্লাকমেইল করে।যেদিন এই ঘটনা ঘোটে সেদিন থেকেই অনিক চেঞ্জ বিহেব করা শুরু করেছিল… আর যেদিন পিক গুলা দিয়ে রিটা তাকে ব্লাকমেইল শুরু করে সেদিন ই বাসায় ফিরে রুশার সাথে খারাপ বেহেভ করেছিল অনিক!!!
রোজ রাতে রিটাই অনিককে ফোন দেয়! ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখে!!!!

অনিকের ভয় এটা না যে আরোহী এসব দেখলে তাকে ভুল বুঝবে!!! অনিকের ভয়
নিজের চাকরী নিয়ে!!! চাকরী টা ৫ বছরের আগে সে ছাড়তে পারবে না,কোন কারনে ছাড়লে তাকে মোটা অংকের জরিমানা দিতে হবে ! আর রিটা পিকগুলা দেখালে অনিকের মান ইজ্জত কিছুই থাকবে না…… নানান চিন্তায় অনিকের মাথা ইদানিং ঠিক থাকে না!!!!! কিন্তু অনিকে যেটা করেছে সেটা অপরাধ…… চরম অপরাধ!!! সে তার স্ত্রির গায়ে তার তুলেছে”!!

অনিক উঠে দাড়ালো…… না আর এভাবে বসে থাকলে হবে না! আর অন্যায়ের সাথে আপোষ করবে না সে……….

অনিক গাড়ি নিয়ে আরোহীদের বাড়ীর উদ্দ্যশ্যে রওনা হল…….

♣♣♣♣♣♣♣♣♣

সকালে নিজের মায়ের ডাকে ঘুম ভাংলো জয়ার।।।। সারারাত কেঁদে ভোরের দিকে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে!

মা: কিরে আজ এতক্ষন ঘুমুচ্ছিস!!! হাসপাতালে যাবি না?
জয়া: হুম
মা: কি হল নিচে তাকিয়ে আছিস কেন!??
জয়া: কিছুনা
মা: এই তোর গলা এমন ভাড় ভাড় কেন? কিছু হয়েছে??? এই তাকা আমার ফিকে!!
জয়া!!!!!!
(এর ই মাঝে জয়ারর বাবাও রুমে এলো….তিনি কাধে হাত রাখতেই জয়া তাকিয়ে আবার কেঁদে দিলো)
মা- বাবা: কি হয়েছে তোরর???বল না মা??
জয়া: বাবা আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি!!! আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি বলে হুহু করে কেঁদে দিল
বাবা: কি হয়েছে আমাকে বল
জয়া: অয়ন স্যারের বিয়ে হয়ে গেছে বাবা।কিভাবে উনি পারলেন এভাবে এগিয়ে যেতে??? আমি তো তাকে অনেক ভালোবাসি বাবা। বলা ও তো হল না!!!! আমি যে তাকে কত বেশি ভালবাসি আমাকে সেটা বলার সুযোগ ও দিল না………………..
বাবা: জয়া!! শক্ত হও মা! এভাবে ভেংগে পরলে হবে না!!! আর তুমি তাকে ভালবাসতে সেটা তো তুমি তাকে বলোইই নি!! আর এখন সে বিবাহিত! “” আর বলেও লাভ নেই
জয়া : না বাবা আমি উনাকে বলবো!! উনাকে আমি জানাতে চাই!!! বাবা উনি আমার ভালবাসার গভীরতা জেনে যদি আমাকে ভালবাসে???? হতেও তো পারে!!!
মা: জয়া!!! একজন ডাক্তার হয়ে এমন ভিত্তিহীন কথা বল না!!!
জয়া: বাবা আমি তো আজ পর্যন্ত যা চেয়েছি তোমার কাছে তুমি দিয়েছো!!! বল আমাকে দাও নি??? তাহলে আজ আমার এই চাওয়া টা তুমি পুরন করে দাও বাবা। নাহলে তোমার মেয়ে বাঁচবে না!!!
বাবা: জয়া “!! এমন অন্যায় আবদার কর না মা।অয়ন যদি বিবাহিত না হত তাহলে ও তোমাকে ভাল না বাসলেও আমি অয়নকে যে করি হোক তোমার কাছে এনে দিতাম কিন্তু মা সে যে বিবাহিত! “!!!
জয়া:……………..
বাবা??? বিয়ের জোড় কি এতই?????
বাবা: হ্যা মা
জয়া: (আমি তাও একটা বার অয়নকে নিজের মনের কথা বলবো বাবা) মনে মনে বলব জয়া

জয়া: বাবা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি
বাবা: ঠিক আছে মা।তুমি অনেক শক্ত কিন্তু। ভুলে যাও ওকে। জানি এত সহজ না, জানি কষ্ট হবে কিছুদিন কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে যাবে
জয়া : হুম
(জয়া উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল)

♦♦♦♦♦♦♦♦♦
অয়ন সব ডাক্তার দের রিপোর্ট নিয়ে তাদের পেইমেন্ট দিল।বাকি শুধু জয়া!!!
অয়ন: Hello!! ডঃ জয়া অনুপস্থিত?? নাকি সে আমার কেবিনে এখনো আসেন নি!!! লগ বুক চেক করে জানান আমাকে
শুশান্ত : ডঃজয়া তো আসেন নি আজকে!!এটেন্ডেন্স লগ বুক এ তো উনার নাম নেই!!!

অয়ন: what!!!!! তিনি কি জানেন না আজ তার কত বড় একটা সার্জারি আছে????

শুশান্ত : OMG!!! এটা আমার মাথা থেকে বের হয়ে গেছিলো!!!!

অয়ন: Dr.Shushanto call her

শুশান্ত : Okay I will handle…… patient কি admit হয়ে গেছে??

অয়ন: জি। পেইন্ট ও ফুল দেওয়া কম্পলিট!!

(শুশান্ত ফোন রেখে জয়াকে কল করলো…. জয়া জানালো সে আসতেছে……. )
/
//
///
//
/

ওদিকে অরুর দুপুরের রান্না শেষ!! ৩ টা টিফিন বক্স গুছিয়ে অলরেডি ড্রাইভার কে কল করেছে সে।

অরু আজ লাঞ্চে বাসমতী চালের সাদা ভাত, গরুর মাংস ভুনা, তেতুল দিয়ে ডাল, চিংড়ি মাছের দোপেয়াজা করে পাঠাচ্ছে!!! অরু আরোহীর কাছে শুনেছে যে অয়ন টক ডাল পছন্দ করে, প্রতি বেলায় তার এটা চাই..তবে তেতুল দিয়ে ডাল টা অরুর নিজের ইনভেনশন! …… বেশ মজা করে রাধে অরু…….

ড্রাইভার কে দিয়ে বক্স গুলা পাঠিয়ে শান্তি হল অরুর! এখন সে গোছল করে দিবে আবার!! তাই একটা নীল রঙের তঁাতের শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল অরু!!
/
//
///
//
/

গোল টেবিলে অয়ন, শুশান্ত সহ হাসপাতালের বড় বড় ৯ জন সার্জেন্ট এর সামনে বসে আছে জয়া।।।।।।।

শুশান্ত : ডঃ জয়া আপনি এসব কি বলছেন?? মাথা ঠিক আছে আপনার??
ভাবতে পারছেন এটা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য কত বড় একটা oppertunity!!!!!!! can you imagine /??
আর আপনি বলছেন সেই সুযোগ আপনি সেচ্ছায় হাত ছাড়া করবেন????
আর আপনি ই ৪,৫ আগে এই সা্র্জারি নিয়ে কতই না এক্সসাইটেড ছিলেন!!!!

অয়ন: প্রব্লেম টা কি হয়েছে বলবেন তো

জয়া : …………….

অয়ন: ডঃ শুশান্ত আমার মনে হয় আপনার এই কেস টা হয় ডঃ রাকিব বা ডঃফারহানা কে দেওয়া উচিৎ…..

শুশান্ত : ডঃ ফারহানা আপনি এই কেস টা নিন , আর ডঃ মাহি আপনাকে এসিস্ট করবে

(এই বলে ডঃ শুশান্ত বের হয়ে গেল রুম থেকে।আস্তে আস্তে সবাই বের হয়ে গেল রুম থেকে, শুধু জয়া বসা….. মাথা নিচু করে চোখের জল ঝড়াচ্ছে সে)

লাঞ্চ এর সময় হল…
অয়ন ফাইল পত্র রেখে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে বের হতে নিবে তখনই আলমগির ভাই (ড্রাইভার) এসে হাজির বল।
আলমগির :আসসালামুআলাইকুম ভাই।
অয়ন: ওয়ালাইকুমআসসালাম
আলমগির : ভাই এইযে আপনার খাবার!! বউমনি দিছে
অয়ন: ওহ!! দেও! (অয়ন টিফিনবক্স নিয়ে আলমগিরের হাতে ৫০০ টাকা দিল )
অয়ন: তুমি কিছু খেয়ে নেও ভাই। এসময় তো তুমি বাড়ী যাও, আজ আমাকে খাবার দেওয়ার চক্করে তো তোমার যাওয়াই হল বা
আলমগির : না না ভাই দরকার নাই। বউমনি আমার জন্য ও খাবার দিছে সব! আমি এখন খাবো ভাই
(অয়ন আর কিছু বলল না।নিজের কেবিনে চলে গেল)
অয়ন ভাবছে অরুর কথা!! মেয়েটার মাথায় বেশ বুদ্ধি আর তার চেয়ে বেশি মন টা ভাল!!!!!!! ………. হয়তো!! আবার বলাও যায় না।মেয়ে তো বিশ্বাস নেই।।।।।।।।

অয়ন ওয়ার্ডবয় কে একটা প্লেট, চামচ আনতে বলল!
ওয়ার্ডবয় সব এনে দিয়ে গেলে অয়ন খাওয়া শুরু করলো।খাবার গুলা দেখেই মজাদার মনে হচ্ছে !!

অয়ন খুবই তৃপ্তি করে খেল !! প্রতিটা আইটেম খুব ই মজা হয়েছে ♥♥
আজ যে অয়ন কত বছর পর এমন তৃপ্তি করে খেল তার জানা নাই…………

অয়ন আলমগিরকে ফোন করে টিফিন বক্স নিয়ে যেতে বলল।।।।।
আলমগির বক্স গুলা নিয়ে চলে গেল।।।।
আলমগির বের হওয়ার সাথেসাথেই জয়া কেবিনের রুমে ঢুকলো
……………

(অয়ন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে জয়ার দিকে….)

জয়া: আমার আপনার সাথে কথা আছে………
অয়ন: হুম কথা আছে তো? বলবেন কিন্তু আগে আপনি আমার কেবিনের বাহিরে যান … তারপর নক করে ঢুকেন
জয়া :………
অয়ন: যান!!!!
(অয়ন যা বলল জয়া তাই ই করলো)
অয়ন: এটা বলার কারন আছে!! কারন হল আপনি এর আগেও এমন করেছেন!!নক করে ঢোকা ভদ্রতা!!

<এবার জয়া কেঁদে দিল হাউমাউ করে >
দৌড়ে যেয়ে অয়নকে ঝাপটে ধরলো জয়া!!!!!

অয়ন বোল্ড!!! ফ্রিজেড হয়ে আছে অয়ন

জয়া : স্যার স্যার…..
।।।♥ I love you♥।।।
♥ I love you a lot♥
আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি.. বাচবো না আপনাকে ছাড়া “! আপনি বিয়ে করে ফেললেন?? কেন?? একটা সুযোগ ও দিলেন না আমাকে?????
একটাবার বলতেও দিলেন না যে কতটা ভালবাসি আপনাকে!!!!
স্যার বাঁচবো না আপনাকে ছাড়া!!! মরেই যাবো
(অয়ন জয়াকে যতই ছাড়ানোর চেস্টা করছে জয়া ততই অয়নকে চেপে ধরছে)……
/
//
///
//
/
কলিং বেল বাজার সাথেসাথে অরু আর আরোহী দরজার দিকে তাকালো!!”
আরোহী : হয়তো বোনু এসেছে
অরু: আমি দেখছি আপি

(অরু দরজা খুলতেই দেখলো……………. )

অরু : আপনি???
……. অনিক…….
অরু: আসসালামুআলাইকুম ভাইয়া
(অনিক সালামের উত্তর দিয়ে ভিতরে ঢুকলো)

আরোহী : …………..
অনিক: ……………….
আরাহীর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে …………

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here