ভালোবাসার_ফোড়ন_২ #মিমি_মুসকান #পর্ব_২৯

0
747

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৯

আকাশ ভাইয়া হেসে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“কেমন আছো নিহা!

“ভালো আপনি!

“হুম ভালো।

“আচ্ছা ভাইয়া..

“জানি কি বলবে, চলো ক্যান্টিনে যাই সেখানে চা খেতে খেতে কথা বলি।

আমি মাথা নাড়লাম। অতঃপর ভাইয়ার পিছু পিছু গেলাম। দেখলাম ওপাশ থেকে নিতি উঁকি দিয়ে আমায় দেখছে।
ভাইয়া চেয়ারে বসে চা আনতে বলল। আমাকে জিজ্ঞেস করল আর কিছু অর্ডার করবে কি না। আমি বললাম শুধু চা’ই চলবে। অতঃপর বলি,

“মা আর বাবা কেমন আছে?

“হুম ভালো!

“খালেদ কিছু করেছে সকাল বেলা। মানে লোকজন নিয়ে এসে কি ধমকাধমকি করেছে।

ভাইয়া আমার মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। আমি আরো উত্তেজিত হয়ে বলি,

“কি হলো ভাইয়া বলছেন না কেন?

“আহি তোমাকে কিছু বলে নি।

“না তো!

এর মাঝেই চা চলে এলো। ভাইয়া আমাকে চা নিতে বললেন। বলেন,

“নাও একটু চা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো আগে। অনেক উত্তেজিত তুমি!

আমি চায়ের কাপ টা একবার চুমুক দিলাম। ভাইয়াও চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,

“তোমার মনে আছে তোমার বিয়ের পর আমি আর আহি একটু বাইরে গেছিলাম।

“ভাইয়া আমি সেটাকে বিয়ে বলে মানি না।

“হুম বুঝতে পারছি, কোন মেয়ে’ই মেনে নিবে না সেটা।

আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি,
“ভাইয়া তখন কি হয়েছিল।

“সেদিন আমরা তোমার ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম

“হ্যাঁ মনে আছে মা আর বাবা কে নিয়ে এসেছিলেন।

“তা তো এনেছি তার সাথে আরেকটা কাজ ও করেছি

“কি কাজ?

“আহি তোমাকে নিয়ে আসার পর’ই সবাই সবকিছু জেনে গেছিল। তারা সবাই তোমাদের খুঁজতে তখন’ই বের হতে গেছিল।

“তারপর!

“তখন.. [ অতীত …

আহিয়ান যেতেই খালেদ এসে তার কলার ধরতে যাবে তখন’ই আকাশ ভাইয়া খালেদ কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। পুরো গ্রামের লোক এক হয়ে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব এসে আহি কে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,

“নিহা কোথায়? কি করেছো তুমি তার সাথে?

ভাইয়া আর ভাবী ও এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,
“নিহা কোথাও?

আমার মা দূরে এক কোনে দাঁড়িয়ে ছিল। আহিয়ান একবার আমার মা’র দিকে তাকিয়ে সবার সামনে বলল,

“ও এখন নিহা না নিহারিকা নিহা আহিয়ান চৌধুরী মানে আমার বিবাহিতা স্ত্রী। যাকে আমি সদ্য বিয়ে করেছি।

আহিয়ানের কথায় তৎক্ষণাৎ সবাই রেগে যায়। খালেদ রেগে আহিয়ানের কাছে আসতে গেলে ভাইয়া তাকে আটকায়। সবাই উঠে পড়ে লাগে তার উপর। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ আসে সেখানে। যদিও পুলিশদের আহিয়ান’ই ডেকে রাখে। খালেদ পুলিশ কে দেখে বলে,

“স্যার, স্যার এই পোলা আমার বউ রে নিয়া পালাইছে।

পুলিশ আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি হয়েছে আহিয়ান! [ পুলিশ আহিয়ানের পরিচিত ছিল ]

“কিছুক্ষণ আগেই এখানে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। মেয়েটার ভাইয়া ভাবী তার সাথে জড়িত। শুধু তাই নয়, এই চেয়ারম্যান ও জড়িত তার সাথে

চেয়ারম্যান রেগে বলেন,
“এই ছেলে তুমি কিসব বলছো আমার নামে। নিহা নিজে রাজি হয়েছে বিয়েতে।

পুলিশ চেয়ারম্যান’র দিকে একবার তাকিয়ে বলে,
“আমি কথা বলছি! আপনি দয়া করে চুপ থাকুন। আহিয়ান তুমি যা বলছো তা প্রমাণ করতে পারবে।

“হ্যাঁ পারবো। আমার কাছে তখনকার ভিডিও আছে আর গ্রামের সবাই সেখানে উপস্থিত ছিল।

পুলিশ এবার চোখ ঘুরিয়ে চেয়ারম্যান’র দিকে তাকায়। বলে উঠে,

“আপনি জানেন ও কে?

চেয়ারম্যান সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে আহিয়ানের দিকে। পুলিশ বলে উঠে,
“নাহিয়ান চৌধুরী নাতি ও !

চেয়ারম্যান সাহেবের মুখে এবার চিন্তিত আর ভীতির দুটোর’ই ছাপ পড়ে। নাহিয়ান চৌধুরী’র এখানে না থাকলেও তার রাজত্ব এখনো টিকে আছে সেখানে। এছাড়া অনেক বড় বড় লোকদের সাথে হাত আছে তাদের। চেয়ারম্যান সাহেব যে নিজের পদে আর টিকে থাকতে পারবে না এটা সে এতোক্ষণে বুঝে গেছে। তাই সে চুপ হয়ে যায়। এদিকে খালেদ চেঁচিয়ে বলে উঠে,

“আফনে কি ওগো লগে স্যার। আমার বউ রে নিয়ে গেছে ওই পোলায়। কাল সকালে তার লগে আমার বিয়ার কথা ছিল।

আহিয়ান শান্ত ভাবেই বলে,
“নিজের বউ নিজের বউ বলা বন্ধ করো। বিয়ে হবার কথা ছিল বিয়ে হয় নি। আর বিয়ে যদি হয় সেটা আমার সাথেই হয়েছে। এই যে পেপার যাতে নিহা নিজের ইচ্ছায় সাইন করেছে!

বলেই পেপার টা পুলিশের হাতে দেয়। ভাবী বলে উঠে,
“আফনি ওরে ভয় দেখাইমা বিয়া করছেন। আমরা জানি আর সেই দোষ আমগো দিতাছেন। স্যার এই পোলায় সব মিথ্যা কইতাছে।

আহিয়ান জবাবে পুলিশ কে বলে,
“আংকেল আপনি চাইলে আমার বাড়িতে যেতে পারেন। নিহা এখনো ওখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।

“সেটা পরেও করা যাবে তার আগে ওদের সবাই কে নিয়ে চলো। ধর্ষনের চেষ্টা করার অপরাধে আপনাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হলো।

অতঃপর ভাইয়া, ভাবী আর খালেদ কে পুলিশে ধরে নিয়ে গাড়িতে বসায়। আহিয়ান গাড়ির সামনে গিয়ে খালেদের দিকে তাকায়। খালেদ বলে উঠে,

“ছেমড়া তুই কামটা ভালা করলি না।

আহিয়ান হেসে বলে,
“আসলেই! তোকে নিজের হাতে মারতে পারলে আরো শান্তি লাগত তবে সেটা কিছুদিনের অপমান হতো। আমি চাই তুই সারাজীবন অপমান নিয়ে থাকবি আর তাই এই ব্যবস্থা। আর বিশ্বাস কর তোদের এতো তাড়াতাড়ি আমি জেল থেকে ছাড়া পেতে দিবো না। ( আমার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ) এক টাকেও না!

সবাই ভীত চোখে আহিয়ানের দিকে তাকায়। আহিয়ান বাঁকা হেসে পিছনে ফিরতেই আকাশ ভাইয়া বলে,

“আংকেল তো দেখি চেয়ারম্যান’র সাথে কথা বলছে।

“আমিই বলতে বলেছি। ওকে আমার কাজে লাগবে।

“যেমন

“দেখতে পারবি চল!

বলেই চেয়ারম্যান’র কাছে যায়। চেয়ারম্যান সাহেব ভীত স্বরে বলে,
“স্যার যদি এইবারের মতো আমারে ক্ষমা কইরা দেন।

আহিয়ান পুলিশের দিকে তাকায়। পুলিশ চোখ দিয়ে আশ্বাস দিয়ে বলে,
“আহিয়ান চেয়ারম্যান সাহেব তার দোষ স্বীকার করছে। এজন্য সে অনুতপ্ত। তুমি কি বলো! উনার উপর কেস টা উঠিয়ে নিবে।

“হুম আংকেল! উঠিয়ে নিন।

চেয়ারম্যান সাহেব কৃতজ্ঞতা চোখে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে বলে,

“অনেক ধন্যবাদ আপনাকে স্যার।

“ধন্যবাদ বলে লাভ নেই, একটা ফেভার করতে হবে।

চেয়ারম্যান সাহেবর উত্তেজিত হয়ে বলে,
“বলুন কি করতে হবে! আপনি যা বলবেন তাই করবো।

পুলিশ আংকেল বলে উঠে,
“আহিয়ান তুমি কথা বলো আমি চলে যাচ্ছি।‌

“আংকেল?

“চিন্তা করো না ওদের সহজে ছাড় পেতে দিবো না।

“অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

“এটা আমার দায়িত্ব! আকাশ এলাম!

আকাশ ভাইয়া মুচকি হাসি দিয়ে তাকে গাড়ি অবদি নিয়ে গেল। আহিয়ান চেয়ারম্যান কে বলল,

“আপনাকে একটা কাজ করতে দেবো।

“বলুন কি করতে হবে। যা বলবেন তাই করবো।

“বড় কোন কাজ না। শুধু নিহা’র মা আর বাবা দের সেফটি দিতে হবে। ওরা এখন থেকে আমার জমিদার বাড়িতে থাকবে আমার আত্মীয় হয়ে। ওদের সব দায়িত্ব আমার ‌

“স্যার আপনি চিন্তা করবেন না। আমি বেঁচে থাকতে ওদের কিছু হবে না।

“আমি আজ রাতেই চলে যাবো। তবে আকাল এখানে থাকবে। সব কিছু সেই’ই দেখবে। এছাড়া আমি ফোন করে সব জানবো।

“আচ্ছা স্যার! আপনার অনেক দয়া!

অতঃপর আহিয়ান তাকাল মা’র দিকে। তিনি বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছেন। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। নিজের ছেলে আর ছেলের বউ কে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল। মা কিছুই বললেন না। হয়তো তিনি ও এটাই চেয়েছিলেন।

আহিয়ান মা কাছে গেলেন। মা আঁচলে মুখ দিয়ে কেঁদে উঠলেন। আহিয়ান এক হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কাঁদবেন না আন্টি! আমি আংকেল’র চিকিৎসা’র ব্যবস্থা করবো। খুব তাড়াতাড়ি তিনি সুস্থ হয়ে যাবে।

“তুমি কি সত্যি আমার মাইয়ারে বিয়া করছো।

“জ্বি আন্টি, বিশ্বাস রাখুন ওর সব দায়িত্ব আমার!

মা আহিয়ান কে ধরে কেঁদে কেঁদে বললেন,
“আমার মাইয়াটারে দেইখো। ওই আমার রক্তের মাইয়া না। আমার সতীনের মাইয়া। ছোটবেলা থেকে মাইয়াটারে একটুও আদর করি নাই। যা ছিল সব ছেলেরে দিলাম আর দেখলা সেই ছেলে এখন আমারে রাখতে চায় না।

আহিয়ান মা কে সাত্বনা দেবার চেষ্টা করলেন। অতঃপর সবাইকে নিয়ে আমাদেরকে বাড়িতে এলেন। আকাশ ভাইয়া কে বললেন,

“আমি আজ চলে যাবো। তুই পরে আসবি। চাচা উনাদের সব ব্যবস্থা করে আসবি।

“আচ্ছা!

অতঃপর আমরা চলে এলাম। আর পরেরদিন আকাশ ভাইয়া মা, বাবা আর চাচা কে আহিয়ান দের জমিদার বাড়িতে উঠালেন। এখন তারা সেখানেই থাকে। ভালো আছেন। ভাইয়াদের কেস টা কিছুদিন পর কোর্টে উঠবে। ততোদিন তারা পুলিশের হেফাজতে থাকবে। চেয়ারম্যান সাহেব চেষ্টা করছেন যাতে তারা একদম কঠিন শাস্তি পায় এছাড়া মা আর বাবা কে দেখে রাখছে।
.
আমি এসব কথা শুনে হা হয়ে বসে আছি। আমার সামনের চায়ের কাপ টা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আকাশ ভাইয়া এই নিয়ে দু কাপ চা খেয়ে ফেললো। নিজেকে একটা ঘোরের মধ্যে বলে মনে হচ্ছিল। আশপাশ সবকিছু ‌যেন‌ মনে হয় থমকে গেছে।‌ হঠাৎ ভাইয়া বলে উঠেন,

“নিহা!

“জ্বি ভাইয়া।

“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ঘটনা টা তোমার উপর প্রভাব ফেলেছে। সেটা কি?

“জ্বি ভাইয়া!

“উত্তেজিত হয়ো না। আমি সব দেখে শুনেই এসেছি। সবকিছু এখন ঠিকঠাক আছে।

আমি শব্দ করে একটা নিঃশ্বাস ফেললাম। ভাইয়া বলল,
“এক কাপ চা দিতে বলি।

“না ভাইয়া!

এর মাঝেই ইতি উদয় হলো সেখানে। এসে বলল,
“শুধু কি নিহা কে চা খাওয়াবেন নাকি।

“আরে ইতি বসো। বলো কি খাবা শুধু কি চা’ই নাকি।

“শুধু চা’ই চলবে।

“বসো!

ইতিও বসল আমার পাশে। আরো দু কাপ চা এলো। ইতি চা খাচ্ছে আর কথা বলছে। আমি শুধু চা’ই খাচ্ছি। কোন কথা আমার কানে ঢুকছে না। শুধু ঘটনা গুলো সাজাচ্ছি একের পর এক।

আকাশ ভাইয়া উঠে চলে গেলেন। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে তার।‌ আমি আর ইতিও বের হলাম। ইতি এখনো বক বক করছে তবে তা আমার কানে আসছে না।
ক্লাসরুমে যেতে গিয়ে দেখলাম উনি মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। উনাকে দেখে বির বির করে বললাম,

“গোমরামুখো একটা! এতো কিছু ঘটে গেলো অথচ আমাকে কিছু বললো না। ঘটে গেল কেন বলছি সবগুলোই তো উনি ঘটালেন। এতো কিছু পরও তার চেহারায় কোন আভাস পেলাম না। কেমন স্বাভাবিক সবকিছু! কিভাবে রাখলেন এতো কথা নিজের পেটে। আর কতো কি রেখেছে কে জানে। একদিন দেখবো উনার পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। ভালোই হবে তখন আমি ফটাস করে সেটা ফুটে দেবো।
বলেই হেসে দিলাম!

ইতি আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
“কিরে পাগলের মতো বির বির করে আবার হাসছিস কেন?

“ককই হাসলাম!

“এই যে আবার বির বির ও তো করছিস। পাগল টাগল হলি নাকি।

“পাগল আমি না তুই হয়েছিস তাই ভুলভাল সব দেখছিস। চল ক্লাসে চল লেট হচ্ছি!

বলেই ওকে টেনে ক্লাসরুমে চলে এলাম।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here