ভালোবাসার_ফোড়ন_২ #মিমি_মুসকান #পর্ব_৫২

0
389

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৫২

দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসলাম। তাদের খাবার টেবিল টা বেশ বড়।‌ বাচ্চারা নিজের হাতেই খাচ্ছে। তাদের বয়স এতোটাও কম না। ভালোই বয়স। খাবার দাবারের দেখা হলো নানা’র সাথে। নানুর কথায় যতোটা শাসন পেয়েছিলাম নানার কথায় ততোটাই আহ্লাদী আহ্লাদী বলে মনে হলো।
বিকালে আমি আর আহিয়ান বের হলাম হাঁটতে। তাদের বাড়ির আশপাশ পুরোটাই গাছ পালা দিয়ে ভরপুর। এর মাঝেই বাড়ির পিছনের দিকে একটা কুয়া আছে। তবে কুয়ার মুখটা টিনের চাল দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। পুরো বাড়িটাই এখন শান্ত! বাড়ির আশপাশে অবশ্য কিছু পাহাড়াদার আছে।

অতঃপর আমরা উঠলাম বাড়ির ছাদে। সেখানে মেয়েরা বসে মাথায় তেল দিচ্ছে আর এক পাশে আচারের বোয়াম রোদে দেওয়া আছে। উনি এসেই আচারের দিকে চলে গেলেন। সেখানে আগে থেকে কিছু বাচ্চারা বসে ছিল। হয়তো তারাও আচার খাবে। উনি গিয়েই একটা আচারের বোয়াম নিয়ে ফেলেন। বাচ্চাগুলো জোরে জোরে বলে,

“এগুলো ধরো না বড় মা এসে বকা দেবেন।

উনি আশপাশ তাকিয়ে বলেন,
“বুড়ি আছে এখানে।

একজন মাথা নেড়ে না জানায়। উনি বলে উঠেন,
“তাহলে আর কি? আমি আচার খেয়েছি এটা বুড়িকে কে বলবে!

বাচ্চাগুলো গুলো মুখ টিপে হাসতে থাকে। এপাশ থেকে উনার মামাতো বোন বলে উঠে,
“ভাইয়া আমি বলে দেবো কিন্তু!

আরেকজন বলে উঠে,
“ভাইয়া আমিও দেখেছি!

উনি সবার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“সবাইকে শপিং করতে নিয়ে যাবো!

উনার বোনেরা হাসতে শুরু করে দেয়। দুই ভাবী তার দুই ননদের মাথায় তেল দিচ্ছিল। তারাও হেসে দিল। উনি এক কোনে নিচে বসে সবাইকে আচারের ভাগ দিয়ে আচার খেতে ব্যস্ত। আমি এক পাশে দাঁড়িয়ে দেখছি সবাইকে। এর মাঝেই বড় ভাবী এলেন। উনার হাতে তেলের বাটি। উনি এসেই আমার মাথায় হাত দিয়ে বলেন,

“নিহা বসো তোমার মাথায় তেল দিয়ে দেই!

“না ভাবী, আপনি বসুন।

“আমি দিয়েছি, তুমি বসো!

অতঃপর আমি বসলাম , উনি আমার মাথায় তেল দিচ্ছেন। আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন,
“তোমার বুড়ি ছাদে এলো বলে, এসে যদি দেখে আচারের এই অবস্থা করছো তখন দেখো।

উনি আচারের বোয়াম নিয়ে সামনে আসতে আসতে বলেন,
“কে বলবে এই কথা। সবাইকে ঘুস দেওয়া হয়ে গেছে।

“তোমার বউ কে দিয়েছ!

আমি কপাল কুঁচকে উনার দিকে তাকালাম। বড় ভাবী আমার চুলে তেল দিতে দিতে বলেন,

“নিহার চুলের গোছা খুব ভালো।

হঠাৎ উনি বলে উঠেন,
“ভূতনি তো তাই এই অবস্থা!

উনার এই নাম শুনে সবাই অনেকক্ষন যাবত নিরবতা পালন করল। আমি দাঁতের সাথে দাঁত চেপে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি আমার সামনে বসে বলেন,

“ভূতনি আচারের তেল তোমার মাথায় দিয়ে দেই।

বড় ভাবী বলে উঠে,
“এটা কি বললে তুমি আহি।

“আরে ভাবী এটা ওর ডাক নাম আমি দিয়েছি সুন্দর না বলো।

বড় ভাবী কিছু না বলে মুখ টিপে হাসলেন। তার হাসির শব্দ আমার কান অবদি এলো। উনার বোন বলে উঠে,

“তুমি কি আচারের তেল ভাবীর মাথায় দিয়ে মুখ বন্ধ করাতে চাইছো!

উনি দাঁত বের করে হেসে মাথা নাড়েন। তখনই আমি সামনে তাকিয়ে হেসে বলি,
“ঘুস পরে দেবেন আগে পিছনে তো দেখুন।

আমার কথায় সবাই পেছনে ফিরল। তাকিয়ে দেখে নানু ছাদের দরজার বাইরে তাকিয়ে আছে। আহিয়ান আচারের বোয়াম রেখে সেখান থেকে সরে গেল। নানু বলে উঠেন,

“আমার আচার গুলো এভাবে নষ্ট করছিস তুই

আহিয়ান দূরে যেতে যেতে বলল,
“আরে বুড়ি কি বলো, আচার তো ভালোই ছিল আর এখনো আছে।

“তবে রে দাঁড়া!
বলেই নানু আগাতে লাগলেন। আহিয়ান কে আর পায় কে? উনি পুরো ছাদ ঘুরিয়ে বের হয়ে গেলেন। উনার পিছনে পিছনে সব পিচ্চি বাহিনী গুলোও দৌড়। নানু বিড় বিড় করতে করতে আচারের বোয়াম টা নিয়ে আবারো রোদে দিলেন। অতঃপর আহিয়ান কে ধরতে নিচে চলে গেলেন। তাদের এসব কাহিনী দেখে হাসতে হাসতে আমরা ব্যস্ত!

ভাবী আমার মাথায় তেল দিচ্ছিল আর কিছু অবাঞ্ছিত কথা বলতে লাগল। যা শুনতে আমার মোটেও ভালো লাগছিল না। দুজন বিবাহিতা নারীর মাঝে যেমন কথা হয় তেমন’ই কথা কিন্তু তবুও আমার এতে কোন আগ্রহ ছিল না। একসময় বাচ্চার কথা অবদি বলে দিলেন ভাবী। আমি যথাসম্ভব তার কথা এড়িয়ে যাচ্ছি। এসব শুনে আমার কোন লাভ নেই। এটা কখনো হবার নয়!
.
সন্ধ্যার সময় আহিয়ান ফিরে এলো। সেই তখন তাড়া খেয়ে পালিয়েছিলেন এখন এলেন। তার সাথে সেই পিচ্চি বাহিনীরা দল বেঁধে এসেছে। সবার শরীরে ধুলো লেগে আছে। শুনলাম তারা নাকি মাঠে খেলছিল তাই এই হাল।

ঘরে এসে গোসল করে মাথা মুছতে মুছতে বিছানার পাশে বসলেন উনি। আমি সবে মায়ের সাথে কথা বলে ফোনটা রাখলাম। হঠাৎ করেই দরজার বাইরে আওয়াজ আসলো। আমি দরজা খুলে দেখি উনার মামাতো বোন দাড়িয়ে আছে। দুই বোনের নাম তিন্নি আর তিথি। বড় হলো তিন্নি। তিন্নি কে দেখে হেসে বলি,

“আসো ভিতরে আসো।

“না ভাবী, আমি বসতে আসি নি তোমাদের নিতে এসেছি। সবাই ছাদে গেছে এখন গল্প হবে।আমি তোমাদের নিতে এসেছি!

“আচ্ছা আসছি!
তিন্নি চলে গেল। অতঃপর আমরা দুজন গেলাম ছাদে। রাতের আকাশের নিচে সবাই গোল হয়ে বসে আছে। বড় ভাবী আর মেঝো ভাবী সবাইকে চা দিচ্ছেন। তিথি এসে আমাকে আর আহিয়ান কে নিয়ে তাদের সাথে বসাল। নানা আর নানু দুজনেই চলে এলেন। চাঁদের আলোয় মাঝখানে হারিকেন নিয়ে ভূতের গল্প বলা শুরু হলো। এমন অভিজ্ঞতা আমার ছিল , যখন আমি ছোট ছিলাম তখন আমরাও কয়েকজন মিলে এভাবেই রাতের বেলা বসতাম। গল্প করতাম সবাই, আজ আবারো সেই দিনের কথা মনে পড়ল আমার!
.
নানুর বাসায় এসেছি আজ অনেকদিন’ই হলো। সবার আমাকে ভালো লাগলেও নানু’র যে আমাকে দেখে খানিকটা খারাপ লেখেছে তা আমি বেশ বুঝেছি। কিন্তু তার মন ভালো করার কোন উপায় পাচ্ছিলাম না আমি। কিভাবে তাকে খুশি করা যায় ভেবে পাচ্ছিলাম না। সেদিন আহিয়ান আর ভাইয়ারা সবাই গেছেন মাছ ধরতে। দূরেই বেশ বড় একটা দিঘি আছে সেখানে সব ভাইয়েরা ছিপ ফেলে মাছ ধরবে। পিচ্চি বাহিনী আর আমরা বাকি মেয়েরা ছাদে বসে গল্প করছি। ভালোই লাগে এখানে সবার সাথে থাকতে। এখন বুঝতে পেরেছি কিভাবে তারা এতোজন একসাথে থাকে। নানু খুব যত্নে সবাইকে একসাথে করে রেখেছে। সবাই সবার সাথে বেশ খুশি। খুব ভালো ভাব আছে সবার সবার সাথে।

হঠাৎ করেই লাল ফ্রক পড়া একটা ছোট মেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে তিথির কাছে বলল,
“ফুপি ফুপি তেঁতুল খাবো!

“আমি এখন তেঁতুল পাবো কোথায়?

“ওই যে ওখানে তেঁতুল গাছে অনেক তেঁতুল ধরেছে, তেঁতুল গুলো পাকাও। চলো না আমরা গিয়ে সেগুলো পাড়ি।

“মার খেতে চাস নাকি নানুর কাছে। নানু জানলে না অনেক বকে দেবে ভালো লাগবে।

আমি বলে উঠি,
“কেন বকা দেবে, আচ্ছা এই গাছ তো এই বাগানের, নাহ।

“হ্যাঁ গাছ আমাদের, কিন্তু নানু কোনমতে আমাদের খেতে দেবে না।

“কেন দিবে না।

“এগুলো দিয়ে সে আচার বানাবে আর সেই আচার তোমাদের সাথে করে দেবে মানে খালার কাছে পাঠাবে। আমাদের অনেক আগেই বলে দিয়েছে এই তেঁতুল যেন আমরা কেউ না পারি। এখন যদি পাড়তে যাই তাহলে বাড়িতে গুরুচন্ডালী কান্ড ঘটবে।

মেয়েটার চোখের কোনে অশ্রু এসে ঠেকল। ভারী ভারী গলায় বলল,
“আমি তেঁতুল খাবো।

“আহ, জ্বালাতন করিস না তো। তোকে এখন কে তেঁতুল পেরে দেবে বল। তোর ভাইরা এখন গেছে তোর বাবা’র সাথে মাছ ধরতে। আমরা কি কোন মেয়ে গাছে চড়তে পারি বল যে তোকে তেঁতুল পেরে খাওয়াবো।

কথা বলতে বলতে মেয়েটার চোখের অশ্রুর গাল গড়িয়ে পরল। মেয়েটা দেখতে কিন্তু বেশ সুন্দরী। তার এই সুন্দর চেহারার বিশেষত্ব ছিল তার চোখের পাপড়ি। পাপড়ি গুলো বেশ ঘন ঘন। তার টানা টানা চোখে চোখ গুলো একটা ফুটন্ত ফুলের মতো লাগছিল। সেই চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ায় আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আমি হেসে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলি,

“তুমি তেঁতুল খাবে।

মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। আমি বলে উঠি,
“চলো আমরা পেড়ে খাবো।

তিন্নি বলে উঠে,
“কি বলো ভাবী, বাড়িতে কোন ছেলেমানুষ নেই যে।

“ছেলেরাই কি শুধু গাছে চড়তে জানে নাকি।

“মানে!

“আহ চলো না!

“চললেই হবে না, পাহাড়াদার দেখছো। গাছে চড়তে দেখলে নানু কে গিয়ে বলে দেবে।

“এগুলো কে সরাবো কি করে?

তিথি বলে উঠি,
“ওদের আমি দেখে নিচ্ছি, তোমরা বলো তেঁতুলের ভাগ আমাকে একটু বেশি দিবে কি না।

তিন্নি খোঁচা মেরে বলে,
“শুরুতে না না কে বলছিল শুনি!

“আরে সেটা তো গাছে চড়ার মতো কেউ ছিল না বলে। কিন্তু এখন তো ভাবী আছে।

তিন্নি আমার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বলে,
“ভাবী তুমি চড়তে পারবে তো।

তিন্নি দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু হাসি দিলাম!
.
সবাই দাঁড়িয়ে আছি বাগানের গাছের পিছনে, মিশন হচ্ছে তেঁতুল চুরি করা। এজন্য ওই পাহাড়াদার টাকে সরাতে হবে। পাহাড়াদার টাও পাহাড়ের মতোই। বিশাল তার দেহ। শরীরে একটা সাদা রঙের গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরা। কোমরে বাধা গামছা। এদিকে অনেকক্ষণ হলো তিথি গেছে তাকে এখান থেকে সরাতে। আমরা দাঁড়িয়ে দেখছি সে কি করে। সে কিছু একটা বলার পর পাহাড়াদার চলে গেল।

তিথি মুখ টিপে হাসতে হাসতে আমাদের কাছে আসলো। তিন্নি বলে উঠে,
“কি বললি রে যে খোচ্চর লোকটা চলে গেল।

“বলেছি নানু তাকে ডেকেছে, বলেছে জলদি যেতে।

আমি বলে উঠি,
“হায় হায় কি বলো, নানু যদি বলে আমরা ডাকে নি। তখন তো হবে আরেক গন্ডগোল।

“আরে কোন গন্ডগোল হবে না। নানু দু টো ঝাড়ি দিয়ে বলবে, “মুখপুড়ো তোকে কে বলল আমি ডেকেছি, রেখে এলি তো আমার বাগানটাকে। কিছু যদি চুরি হয় তাহলে তোর একদিন তো আমার একদিন।” নানুর এসব কথা শুনে পাহাড়াদার ভয়ে তটস্থ। সে মাথা নেড়ে আবারো এখানে ততোক্ষণে আমাদের কাজ হয়ে যাবে। এখন তুমি কথা না বলে গাছে চড়ো দেখি।

তিন্নি বলে উঠে,
“শাড়ি পড়েই কি চড়বে, পারবে তো!

ছোট মেয়েটা বলে উঠে,
“আন্টি তুমি পড়ে যেও না তাহলে কিন্তু অনেক ব্যাথা পাবে।

আমি ওর গালে হাত রেখে বলি,
“না সোনা পড়বো না, তুমি শুধু এখানে দাঁড়িয়ে থেকো আমি তেঁতুল পেরে তোমার হাতে দেবো।

আমার কথায় মেয়েটা হেসে মাথা নাড়াল। তার হাসিটা মারাত্মক। কারো মন খারাপ থাকলে তার হাসি দেখে মন ভালো হতে বাধ্য!

শাড়িল আঁচলটা কোমরে গুঁজে গাছে উঠতে লাগলাম। ব্যাপারটা কঠিন ছিল না। আমি এর আগেও অনেক উঠেছি। গাছটা বেশ পুরোনো। আমি গাছের একটা ডালে বসে তেঁতুল পেরে নিচে ফেলছি আর তারা ধরছে। হঠাৎ করেই কারো আসার শব্দ পেলাম। তবে একজন না অনেকজন। তারা কথা বলতে বলতে আসছে। আমরা সবাই ভয়ে চুপ। না জানি নানু আসছে। ইশ্ আমাকে এখানে দেখলে কি হবে, আগে তো আমাকে পছন্দ করতেন না তবুও ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করতেন এখন তো আর কথাই বলবেন না।

আমি দ্রুত নামতে যাবো এর আগেই আহিয়ানের ভাইয়ের ছেলে দৌড়ে আসল। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই বসে রইলাম। তবে ভয় কাটল কারণ এটা নানু এসেছে আহিয়ান না। বলতে বলতে তারা চলেও এলো। তিথি ওদের চোখ দিয়ে ইশারা করে না বলছি যাতে আমি এখানে আছি এটা না বলে।

আহিয়ান একটা কাতলা মাছ ধরেছে আর সেটাই তাদের দেখাচ্ছে। আর তারাও মাথা নেড়ে হেসেও যাচ্ছে। উনি বলছেন,

“দেখলি কতো বড় মাছ ধরেছি!

তিন্নি বলে উঠে,
“হ্যাঁ মাছটা অনেক বড়।

“হুম জানি জানি। তা ভূতনি কোথায় দেখতে পাচ্ছি না যে। আর তোরা এখানে কেন?

তিথি বলে উঠে,
“এমনেই এসেছে ঘুরতে!

উনি বলেন,
“আর ভূতনি!

“ভাবী!

“হ্যাঁ ভূতনি, কোথায় সে?

“জানি না তো।

“জানি না মানে।

এর মাঝে ভাইয়া বলে উঠে,
“কেন আসার সময় তো দেখলাম তোদের সাথেই ছাদে ছিল। এখন কোথায় জানিস না!

ওরা সবাই চুপ হয়ে আছে। এদিকে টেনশনে আমি গাছের ডালে বসেই তেঁতুল খাচ্ছি। তেঁতুল গুলো ভালোই মিষ্টি লাগছে তবে টক ও লাগছে। এর মাঝেই সেই ছোট ছেলেটা উপরে তাকাল। তার সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে গেল। আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ সেই ছেলেটা চেঁচিয়ে বলে উঠে,

“ভূতততততত! মামা ভূত! তেঁতুল গাছে ভূত!

ছেলেটার চেঁচামেচি তে সবাই উপরে তাকাল। আমাকে দেখেই সবার মুখ শুকনো হয়ে গেল। ছেলেটা দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ির কাছে গেল। আমি মাথা নিচু করে তেঁতুল খাচ্ছি। সবকিছু শান্ত, ইশ কি লজ্জা! সবার সামনে ঘরের বউ গাছে চড়ে আছে।

হুট করেই আহিয়ান জোরে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বলল,

“আরে এটা ভূত না তো, ভূতনি!

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আহিয়ানের হাসি দেখে সবাই হেসে উঠে। ভাইয়া তিথির দিকে তাকিয়ে বলে,

“তোরা তেঁতুল চুরি করতে এসেছিস।

“আসলে ভাইয়া মানে…

ছোট ভাইয়া বলে উঠে,
“আর কাউকে পেলি না, শেষমেশ নিহা কে উঠালি গাছে।

মেঝো ভাইয়া বলে উঠে,
“নানু জানে!

তিন্নি বলে উঠে,
“আল্লাহ’র দোহাই লাগে ভাইয়া নানু রে কিছু কইয়ো না।তাহলে আজ আমরা শেষ।

আহিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে হেসে বলে,
“আমি তো বলবো ভূতনি গাছে উঠেছি তেঁতুল চুরি করতে।

তিথি বলে উঠে,
“ভাইয়া মানা করছি তো।

আহিয়ান ঠোঁটে দাঁত কামড়ে বলে,
“ভূতনি আজ তো তুমি শেষ।

আমি রেগে একটা তেঁতুল ছুড়ে মারি তার দিকে। উনি সরে গেলে তেঁতুল টা তার গা ঘেঁষে নিচে পড়ে। উনি সেটা উঠিয়ে কামড় দিয়ে বলে,

“আহ টেস্টি তো খেতে।

তিন্নি বলে উঠে,
“ভাইয়া এখন কিন্তু তুমি কিছু বলতে পারবে না। চুরির ভাগ তুমিও খেয়েছ তাই তুমিও এই চুরির সাথে যুক্ত!

আহিয়ান মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
“আমি গেলাম বলতে। আজ নানু তোদের সবাইকে গাছের সাথে বেঁধে রাখবে দেখে নিস!

তিথি বলে উঠে,
“ভাইয়া না!

পিছনে ঘুরে আমাকে বলে,
“ভূতনি তুমি কি বলো!

আমি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বলি,
“কি হচ্ছে টা কি, আমি কি নামবো না গাছ থেকে।

“তো নামো না কে মানা করেছে, নামলেই তো গাছের সাথে বেঁধে রেখে দেবো। তারপর নানু কে গিয়ে ডাক দেবো।

আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই পেছন থেকে নানুর গলা পেলাম। নানু বলে উঠে,
“কাকে বেঁধে রাখবি লা গাছের সাথে।

নানুর গলার আওয়াজ পেয়ে আমরা রীতিমতো থমকে গেলাম। আহিয়ান এতোক্ষণ যে বলছিল নানুর কাছে যাবে উনিও চুপ। বোঝাই গেল উনি শুধু ভয় দেখাচ্ছিলেন। আহিয়ান বলে উঠে,

“নানু মানে!

এর মাঝেই সেই ছেলেটা নানুর হাত ধরে গাছের নিচে নিয়ে আসল। নানু বলছে,

“কোথাম ভূত রে, তুই কোথায় দেখলি ভূত!

বলতে বলতে নানু উপরে তাকালেন। আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলাম। এর মাঝেই নানার গলার আওয়াজ পেলাম। তিনি বলে উঠেন,

“নিহা!

আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি নানা, নানু , ভাবী তারা সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি কি করবো না ভেবে চুপচাপ বসে আছি। চারদিক নিস্তব্ধ! বোঝাই যাচ্ছে ঝড় আসতে চলেছে। বুঝতে পারছি নানু বেশ ক্ষেপেছে। কে জানে কি করবে এখন! অতঃপর হুট করেই…

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here