#শুধু_তুই #Rifat_Amin #পর্বঃ০১

0
477

-কলেজ গেটের সামনে প্রহর ভাইয়ের হাতে দামড়ামার্কা থাপ্পড় খেয়ে মাথাটা সেকেন্ড কয়েকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। আমি হতবিহ্বল হয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনার দৃষ্টিতে ক্রোধের ফুলকি উড়ছে, ভ্রুজোড়া দপদপ করে কাঁপছে। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে একই সাথে কাঁপছি আমি। মনে একরাশ ভয় আর অপমানে কান্না পেয়ে যাচ্ছে আমার। চারপাশের সব মানুষজন যেনো নাটক দেখতে প্রস্তুত। জানি না কি করেছি আমি, যার জন্য এমন হাল হলো আমার। আমি খানিকটা রাগ আর কান্নাভরা চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ আমি কি করেছি ভাইয়া? মারলেন কেনো আমায়? ‘

উনি এখনো আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। উনার বন্ধুগুলাও রাগ দেখে ভয়ে চুপসে গেছে যেনো। উনি কোনো কথা না বলে বাইকে উঠলেন, সাথে স্পষ্টশব্দে বলে গেলেন,

‘ তোকে আগেই বলেছিলাম রাস্তায় কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাতে। কিন্তু জানালি না! না জানিয়ে খুব ভালোই করেছিস। আজ বাড়ি হয়। ‘

বলেই উনি গেট কাঁপিয়ে পুরো হিরোদের মতো বাইক চালিয়ে সেখান থেকে কেটে পরলেন। সাথে উনার বন্ধুগুলা। আমার নাম রশ্নি, পুরো নাম আহমেদ রশ্নি। আমরা তিন বোন। পুরো কন্যার রাজ্য বলা যায়। আমার যমজ বোনের নাম ঐশী। আর পিচ্চি যে কিনা এবার ক্লাস ২ তে উঠলো, ওর নাম প্রিয়সী। বাবা এই কলেজেরই প্রোফেসর। অথচ সেই কলেজের সামনেই প্রহর নামের ছেলেটা আমায় শক্তহাতে থাপ্পড় মেরে গেলো। এর অবশ্য কারণ আছে। কারণটা এখনো জানি না। যিনি আমাকে থাপ্পড় মেরে গেলেন ওনার নাম প্রহর খান। এই কলেজেরই প্রাক্তন স্টুডেন্ট। প্রাক্তন হলেও যখন তখন এই কলেজে এসে নিজের মতো চলাচল করে। আর করবেই বা না কেনো? একসময়ের ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বলে কথা। এখন আবার বুয়েটের মতো ভার্সিটির স্বনামধন্য স্টুডেন্ট। আমার মা জননীর বান্ধবীর ছেলে। বাড়িটাও হয়েছে আমাদের বাড়ির পাশেই। যার কারণে বাঁশ সবসময় আমার উপরেই পড়ে। কোনো কিছু করলেই শুধু মা জননী উদাহরণ দেয়, “ঐ দেখ,, প্রহর কত সুন্দর পড়াশোনা করে বুয়েটে চান্স নিয়ে নিলো। আর তুই? তুই তো ওর পা ধোঁয়া পানির যোগ্যও নয়।” আর আম্মি এই ছেলেকে এমন পছন্দ করে, যেনো উনিই আমার মা জননীর প্রিয় পুত্র আর আমাকে কুড়িয়ে পেয়েছে বুড়িগঙ্গার ঘোলা জলে।

গালে থাপ্পড় মারায় আঙ্গুলের ছাপ উঠে গেছে। এটা এমন কিছু না। মাঝে মাঝেই বড় কোনো অপরাধ করলে এভাবে সবার সামনে অপমান করেন উনি। জানি না উনার সাথে আমার কি শত্রুতা। তবে যাই হোক, আমি আজ এর শেষ দেখে ছাড়বো। আমিও আহমেদ রশ্নি হু!
আমি গেট থেকে এসে কলেজের ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ফ্রেস হয়ে গালে হাত রাখলাম। স্পষ্ট আঙ্গুলের ছাপ। ফর্সা ত্বক হওয়ায় দাগটা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টত্বর হচ্ছে।

এমন সময় ব্যাগে ফোন কাঁপার শব্দে আমার ধ্যান ভাঙ্গলো। ফোন বের করে স্ক্রিনে চোখ বুলালাম। সাথে সাথেই একজোড়া সুশ্রী চোখ আর সহাস্য ঠোঁট চোখে পড়লো আমার। আর জ্বলজ্বল করে উঠলো চারটি ইংরেজি বর্ণ ‘ PREM ‘। আমার মুখেও হাসি ফুটলো। এই ছেলেটা হলো প্রহর খাটাসের মিষ্টি ছোট ভাই। জানি না এমন একটা বদমাস ছেলের ছোটভাই এত ভালো কেমনে হয়। আমি ফোনটা রিসিভ করেই বলে উঠলাম,

– কিরে বল। কি খবর? (আমি)
– কিসের খবর চাও তুমি আপু? খবর পুরাই কেরোসিন। ভাইয়া অনেক রেগে আছে। (প্রেম)
– তোর ঐ হতচ্ছাড়া ভাই আজকেও আমায় থাপ্পড় মেরেছে। আর তোর ভাই কখন শান্ত থাকে বলতো। খাটাস একটা! (আমি)
– সে তুমি যাই বলো। আমি নিজেও কিন্তু রেগে আছি। তোমাকে রাস্তায় যে ছেলেটা এতদিন ডিস্টার্ব করতো সে কথা এতদিন বলো নাই কেনো ভাইয়াকে? ভাইয়াকে না বলতে পারো। আমাকে তো বলতে পারতে। এখন ঐ ছেলের কি হবে তুমি ভেবে নাও (প্রেম)

আমার গলা শুকিয়ে গেলো। আসলেই তো, এই ছেলের তো অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে নিশ্চই। এর আগেও বহুবার এমন ঘটনা ঘটেছে । তবে এবারেরটা ভয়াভহ। গতকাল রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে কলেজ গেটে ঢুকবো, এমন সময় একটা অপরিচিত ছেলে আমার মুখের উপর সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে। আর শিষ বাজিয়ে চলে যায়। ছেলেটা এমনিতেই মাঝে মাঝে বাইক নিয়ে আমার পিছনে ঘুরতো। কিন্তু প্রহর ভাইয়ের চোখে পড়লো গতকাল। সর্বনাশ!

– কি হলো আপু? কথা বলছো না কেন? (প্রেম)
– কিছুনা। আচ্ছা এখন বায়, কলেজের ঘন্টা পড়ে গেছে। শুন, তুই আজকে সন্ধ্যায় লুকিয়ে আমার জন্য একটা বিরিয়ানির প্যাকেট আনিস তো। (আমি)
– এ্যাঁ। কিন্তু ভাইয়া জানতে পারলে আমায় বাঁশ দিবে। (প্রেম)
– ধুর। তুই ঐ বদমাস ছেলেকে ভয় পাস ছিঃ। তোর বড়বোন হতে পেরে লজ্জায় মরে যাচ্ছি আমি। (আমি)
– থাক আর মরে যেতে হবে না। আমি আনবো নে। সমস্যা নাই। (প্রেম)
– এইতো ভালো ছেলে। উম্মাহহহ জানু, লাবু, বায় (আমি)

ফোন কেটে ক্লাসে ঢুকে পড়লাম। আজ মন বসছে না ক্লাসে। ওড়না দিয়ে ডানগালটার কিছু অংশ ঢেকে নিয়েছি। সবকিছু যেনো অসহ্য লাগছে । এমন সময় আমার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড স্নেহা এসে হাজির। স্নেহা প্রচন্ড জেদী মেয়ে। তবে মনটা অনেক ভালো। আমার সাথে এই কলেজেই প্রথম দেখা হয়েছিলো। আর বন্ধুত্ব হয়ে যায় সেদিন থেকেই। আমাকে মনমরা হয়ে থাকতে দেখে ব্যাগটা ধপ করে টেবিলে রেখে বললো,

– রশ্মি, তুই এত খারাপ কবে থেকে হলি বল তো। তুই আসার আগে আমায় একটা ফোন করতে পারলি না রে। আমি তো ভেবেছিলাম তুই আজ কলেজেই আসবি না।

আমি গালের জ্বালায় বাঁচি না। আবার ওর কথা শুনে মনটা হঠাৎ করেই ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। আজ যদি একসাথে আসতাম তাহলে আমার এইদিনটা দেখতে হতো না। প্রহর ভাই হয়তো স্নেহাকে দেখে একটু কম রিয়েক্ট করতেন। ধুর। আজ কার মুখ দেখে যে উঠেছিলাম। আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,

– আমি আজ কার মুখ দেখে উঠেছিলামরে স্নেহু। তুই জানিস? কলেজ গেটের সামনে প্রহর ভাই আমাকে কি থাপ্পড়টাই না মেরেছে। আরেকটু হলে হার্ট এ্যাটাক করতে হতো।

স্নেহার একমাত্র ক্রাশ প্রহরভাইয়ের নামে এসব কথা যেনো বিশ্বাস হলো না ওর। স্নেহা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

– প্রহর ভাই তোকে কি সত্যি সত্যি মারে নাকি রে? ইসসস! হাউ সুইট একটা ছেলে। কেনো যে ওর নামে এমন মিথ্যা এলিগেশন আনিস। তুই জানিস? প্রহরভাইয়ের চোখদুটো যেনে চোখ নয়। ঐ চোখের দিয়ে তাকিয়ে আমি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারবো, ট্রেন টু বুসান মুভির মতো জম্বিদের সাথে লড়াই করতে পারবো। আহা! তার চুলগুলো এমন সিল্কি কেনো বলতো? জেল টেল ইউস করে নাকি রে? মাঝে মাঝে উনার পারফিউমের ঘ্রাণে মহাশুন্যে ভেসে যেতে ইচ্ছে করে আমার…

– তুই থামবি? তোর ঐ ক্রাসের আসল চরিত্র জানলে আর ভুলেও তাকাবি না উনার দিকে।
অসহ্য!

———–

আমি দুটো ক্লাস করেই বাসা চলে আসলাম। শরীরটা খারাপ করছে। মাথাটা ভার ভার লাগছে।
বাসায় এসে একটা লম্বা ঘুম দিলাম। এক ঘুমে পেরিয়ে গেলো সারাটাদিন। যখন সন্ধ্যা হলো। পূর্বাকাশটা গাঢ় লালচে বর্ণ ধারণ করলো। পাখিরা তাঁদের আপন নীরে ফিরতে শুরু করলো। তখন নিদ্রা কাটলো আমার। সাথে শরীরটাও যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। বিছানায় থেকেই ফোনটা হাতে নিলাম। ডাটা অন করলাম। সাথে সাথেই হোয়াটসঅ্যাপের দুটো নোটিফিকেশন দেখে চক্ষু আমার চড়াকগাছে। প্রহর ভাই ভিডিও পাঠিয়েছে। যে ভিডিও পাঠিয়েছে তা যে অত্যন্ত ভয়ানক হতে চলেছে তা বুঝতে পারছি আমি। আমি এই ভেবে অবাক হচ্ছি যে আমার মা জননী কেনো আমার উপর রাগ ঝারছে না! প্রহর ভাই কি এখনো কিছু জানায়নি! আমি বেশী দেরী না করে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলাম। ভিডিওটা অন করে যা দেখলাম তাতে আমার কলিজার পানিটুকু গায়েব হবার জোগাড়। একটা জলজ্যান্ত মানুষকে কুকুরের মতো পিটাচ্ছে একটা ছেলে, ছেলেটা যে প্রহরভাই নয় তা আমার মস্তিষ্ক ভালো করেই বুঝে গেলো। অবশ্য ছেলেটাকে চিনার উপায় নেই। মুখে, হাতে, পায়ে, মাথায় কালো পোষাকে ঢাকা। তবে মনে হচ্ছে কুব চেনা আমার। একটা হকিস্টিক দিয়ে গতকালকের ছেলেটাকে জোরছে পিটাচ্ছে। আমার ভিডিওতে পাওয়া যাচ্ছে ছেলেটার নিজেকে বাঁচানোর জন্য ভুবন কাঁপানো আত্মচিৎকার। তাতে জেনো কালো পোষাক পড়া ছেলেটার মনে মায়া জন্মালো না। বরং মারের গতি আরো বাড়লো। আর ক্যামেরা যে করছে সে নিজেও মনে হচ্ছে প্রোফেশনাল। কোনো ফোনের কাঁপাকাঁপি নড়াচড়া ছাড়াই দিব্যি হেঁটে হেঁটে চারপাশ থেকে ভিডিও করে নিচ্ছে। মনে হচ্ছে উনিও বেশ মজা পাঁচ্ছেন।
আমি আর ভিডিওটা দেখলাম না। ভয়ে হাত পা ঠক ঠক করে কাঁপছে। এমন সময় প্রেমের কল আসলো। আমি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে প্রেম বললো,

– আপি তুমি ছাদে আসো। আজ বিরিয়ানির পার্টি হবে। আমার ভাইয়াও জয়েন করবে বলেছে। আর ভাইয়াই তোমার জয়েন করানো বাধ্যতামূলক করেছে। কি আসবা তো?

আমি হা হু কিছুই করলাম না। প্রহর নামটা শুনেই আবারো একদফা ভয়ে কাঁপলাম।

আগাম একটা করে বেশি পর্ব পড়তে চাইলে আমাকে ফ্লো করুন ✊🖐️

চলবে?

#শুধু_তুই
#Rifat_Amin
#পর্বঃ০১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here