#অরুর_সংসার
#পর্ব-১২
#লেখিকা-নিশিকথা
__________________
অরুকে এমন শুয়া দেখে অয়নের কেন জানি ভাল লাগছে না!
যাই হোক গুটিগুটি পায়ে অয়নের আশেপাশে তো সবসময় ঘুরতে থাকে মেয়েটা।
আজ এমন শুয়া! তাকালোও না অয়নের দিকে!…
আচ্ছা অরু এমন করে শুয়ে আছে কেন?
কি হয়েছে ওর??(অয়ন শাওয়ার ছেরে দাড়িয়ে ভাবছে)……………
শাওয়ার শেষে অয়ন বের হল একটা ট্রাউজার আর নিল কালারের গেঞ্জি পরে বের হল। অয়ন বের হয়ে একটা জিনিস খেয়াল করলো……….
………….. আজ তার বউ শাড়ি পরা নেই…. তার মত নীল রং এর একটা সালোয়ার কামিজ পরেছে….. পিছে থেকে যা অবজারভ করলো…চেহারা তো দেখায় কায়দা নেই।
অয়ন যেয়ে টেবিল থেকে লেবুর শরবত টা খেয়ে নিল।
তার নজর অরুর দিকে! কি হয়েছেটা কি মেয়েটার!!
অয়ন ভাবছে…
জিঙ্গাসা করবো??
আবার নিজেই বলল মনে মনে …..
নাহ জিঙ্গাস করবো আর কি না কি ভেবে নেবে!
অয়ন খাটের অপসিটের স্কাউচে দিয়ে বসলো লেপটপ নিয়ে। কাজের মাঝে ডুব দিল অয়ন কখন ১০ টা বেজে গেছে খেয়াল নেই তার।
দরজার নক শুনে তাকালো অয়ন! আরোহী খেতে ডাকছে!
অয়ন রুম থেকে বের হতে গিয়ে আবার অরুর দিক তাকালো।।
তারপর আরোহী কে বলল…..
অয়ন : কি তোমাদের নতুন বউ কি ২ দিন রান্না করে অসুস্থ হয়ে গেল নাকি?
আরোহী : ওকি কথা ভাইয়া। ও অসুস্থ!!! চল তুই। আমি ওকে একটু পরে কিছু খাওয়ায় দিবো ডেকে।
অয়ন: হুম ( আজব অসুস্থ অসুস্থ!!! বললেই হয় কি হয়েছে! ডঃ ফারহানার কাছে শুনে মেডিসিন আনিয়ে দিতাম! ধুর। >মনেমনে <) অয়ন নিচে গিয়ে অনিককে দেখে অবাক. অয়ন: আরে ভাই কবে এলে? অনিক : কাল! আজ খবর নেবার সময় হল?? অয়ন : আমাকে তো কেউ বলেই নি অনিক : কাল লেট ফিরেছিলে!! তা ভাবি বলে নি অয়ন: আর লোক পেলো না(মনেমনে ) খাওয়া শেষে অয়ন আর অনিল গেল ছাদে আড্ডা দুতে! আসলে সিগারেট টানতে গেল তারা! ছাদে সময় কাটিয়ে ১১ টা নাগাদ রুমি ঢুকলো অয়ন। রুমে ঢুকতেই দেখে অরু আলমারির কাছে দাড়িয়ে কি যে করছে! অয়নকে দেখে হাতে থাকা কিছু একটা সাথেসাথে লুকিয়ে ফেলল অরু! অয়ন বিষয়টা দেখেছে! আর এটা দেখে অয়নের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে!! অয়ন তার কাছে কিছু লুকানো খুব ই অপছন্দ করে!!!! অয়নঅরুকে দেখেও এবার না দেখার ভান করে লাপটপ নিয়ে বসলো! অরু ওয়াশরুমে চলে গেল ...... অরু যেতেই অয়ন আলমারি খুলল! তার দেখতে হবে যে অরু তার কাছে কি লুকাচ্ছে! আলমারি খুলতেই অয়ন যে দেখলো সেতো বল্ড!!! আলমারিতে তার কাপড় চোপড় কই??? সব তো অরুর কাপড়!!! ৪ পার্ট আলমারির ২ পার্ট ওলরেডি অরুর দখলে সেখানে আগে পুরো আলমারি অয়নের ছিল!! অয়ন ভাবছে যে এই ২ দিন অরু তার কাপড় গুছিয়ে সামনে রাখছে, সেতো খেয়াল ই করে নি যে এর ফাঁকে অরু তার আলমারির অর্ধেকাংশ বাজেয়াপ্ত করে ফেলবে। ধুর আর ভাল লাগে না অয়নের!!! উফ তার সব কিছুতে এখন অরু ভাগ বসাবে নাকি! না অরুকে বলতে হবে আলমারি টা ছেড়ে দিতে! দরকার পড়লে অয়ন তাকে ওয়ারড্রব এনে দেবে নতুন!!! এর মাঝে অয়ন যে কাজে আলমারির কাছে এসেছিল ভুলেই গিয়েছিল। ফিরতে গিয়ে মনে পড়লো, আবার আলমারি খুলল। অরুর লুকানো জিনিসটা দেখে অয়ন বুঝলো বিষয় টা। অয়ন: ওহ তা আমাকে সোজাসুজি বললেই হত।লুকানোর কি আছে। ওয়েট , তুমি নিজেই বলবা আমাকে। অয়ন খাটে লাপটপ নিয়ে বসলো কাজে। / // / অরু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে খাটের কাছে আসলো। খাটে এক শুতেই অয়ন অরুর উপর আধশোয়া হয়ে শরীরে ভার ছেরে দিল। অরুর বোঝ হয় এখনি দম আটকে যাবে!!!! অরু ভয় পাচ্ছে! এই অবস্থায় ও কি তাহলে???? কি হতে চলেছে তার সাথে? অরু: (কাপাকাপা কন্ঠে) আমাকে ছেড়ে দিন। আজকে। আমার কাছে আজকে থেকে ১ সপ্তাহ এসেন না অয়ন : (অরুর গলায় ঠোট বুলাতে বুলাতে) হুম কেন?? অরু: প্লিজ অয়ন : কেন সেটা তো বল অরু: আমি অসুস্থ অয়ন: দেখলাম। কিন্তু বললে না তো কি হয়েছে? অরু: ..................... অয়ন: বল। অরু : ............. (অরু এবার হুহু করে কেঁদেই দিল.... অরুর হুট করে কাঁদায় অয়ন মোটেও প্রস্তুত ছিল না।দ্রুত উঠে গেল অরুর উপর থেকে। ) অয়ন : আরে কি হল কাঁদছো কেন? (অরু কেঁদেই চলেছে) অয়ন: আচ্ছা বাবা আমি আসবো না ১ উইক কাছে। প্লিজ থামো (অরু কাঁদতে কাঁদতে এক কোণে শুয়ে পরলো খাটের) অয়নের খারাপ লাগতেছে। কেমন করে কাঁদলো মেয়েটা! কিন্তু এই মেয়েই গত কয়দিন রাতের পর রাত কেঁদেছে অয়নের জানা নেই! রাত ২:৩০........ অয়নের ঘুম ভাংলো কারো গোঙানির শব্দে। অরু পেটে ব্যাথায় গোঙাচ্ছে পেট চেপে। অয়ন সাথেসাথে উঠে বসলো! অয়ন: অরু? কি হয়েছে? অরু????? খুব কষ্ট হচ্ছে?? অরু : আর পারছি না আমি।খুব কষ্ট অয়ন: .................... (অয়ন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না...অরুর চোখের পানি আর চাপা আর্তনাদ যেন অয়নের বুকে ছুরিকাঘাত করছে.. ..এত রাতে কাকে ডাকবে?? আরোহীকে?? না এত রাতে স্বামি স্ত্রির একটা প্রাইভেসি আছে! ডঃ শুশান্ত কে ফোন করবে?? না না উনি তো ছেলে ডঃজয়া???? পাগল নাকি!!! আপদকে ফোন করে বিপদ ডাকা যাবে না ডঃফারহানা? এত রাতে ফোন করা ঠিক হবে না ) অয়ন না পেরে নেটে সার্চ দিল। গুগল ই সব সমস্যার ইন্সট্যান্ট সমাধান বাসার মেডিসিন এক্স এ পেইনকিলার থাকতে পারে । অয়ন এরপর দ্রুত পায়ে নিচে দিয়ে একটা হট ব্যাগ রেডী করে নিল। এক গ্লাস কড়া চিনির শরবত বানালো।। তারপর অনেক খুঁজে একটা পেইন কিলার পেল। উপরে গেল সব নিয়ে। অয়ন: অরু! ওঠো "! অরু (অয়ন অরুকে কোনমতে ধরে উঠালো..... অরুকে পেইন কিলার খাইয়ে দিলল অয়ন: অরু এই নেও এই চিনির শরবত টা এক ঢকে খেয়ে নিবা (অরুর হাত কাঁপছে অয়ন নিজে অরুকে খাইয়ে দিল) অয়ন : শোও এখন ( অরুকে শুইয়ে দিয়ে ) এই হট ওয়াটার ব্যাগ টা পেটে দিয়ে শোও আরাম পাবে ১ ঘন্টা পর অরুর ব্যাথাটা কমলো ! অরু ঘুমিয়ে গেল। ♥♥♥♥♥♥ সকালে অরুর ঘুম ভাংলো, অরু চোখ খুলে অয়নকে দেখলো। অরুর মুখে স্মিত হাসি। মাশাআল্লাহ কি সুন্দর তার বর টা। ঘুমের মাঝে কি ইনসেন্ট লাগছে তাকে! গতকাল রাতে অয়ন তাকে অনেক যত্ন করেছে।অয়ন অরুর পাশে না থাকলে হয়তো অরু পেতের ব্যাথায় শেষ হয়ে যেত.... অরু ভাবছে... মানুষ টা বাইরে দিয়ে যতই খারাপ প্রিটেন্ড করুর মন টা তার ভাল। একারনেই তো অরু তাকে এত ভালবাসে। আর সে কিনা বলে অরুকে ভালবাসে না। ভাল না বাসলে কি অরুর এত কেয়ার করতো । অরুর শরীর টা এখন অনেকটা বেটার লাগছে। শুধুমাত্র অয়নের কারনে! না অরু মনে মনে ভেবে নিয়েছে সে অয়নের মন জয় করবেই। যে করে হোক অয়নের মনের এক কোনে নিজের জন্য জায়গা তৈরী করেই ছারবে, অয়নের ভালবাসা সে অর্জন করবেই ♥♥ ঘড়ির দিক তাকাতেই অরুর চোখ কপালে! তখন ৮ বাজে। অরু ধরফরিয়ে উঠলো! এখন অরু রান্না কখন করবে? আজ কি আবার অয়নের ব্রেড বাটার খেতে হবে নাকি!!! দ্রুত ফ্রেশ হয়ে, অয়নের কাপড় বের করে নিচে গেল। নিচে গিয়ে দেখে আরোহী রান্নাঘরে অরু : আসসালামুআলাইকুম আপু আরোহী : ওয়াকাইকুম আসসালাম♦ শরীর এখন কেমন অরু : আলহামদুলিল্লাহ আপু এখন ভাল। আপনি এখানে কি করছেন? আমি রান্না করে দিচ্ছি দ্রুত কিছু। আরোহী : আরে না আমি খিচুরি রান্না করেছি আজকে,সাথে আচার আছে, ডিম ভাজি।অয়নের খুব প্রিয় নাস্তা! অরু: তাই আপু? আরোহী : হুম। তোমাকে যাওয়ার আগে শিখিয়ে দিব অরু : আচ্ছা আপি। আমি চা বানাই? আরোহী : না আমি বানিয়েছি। তুমি উপরে যাও, দেখ অয়নের কিছু লাগে কি না। অরু আরোহীর কথা মত উপরে গেল। অরুর খুব লজ্জা করছে কেন জানি। রুমে ঢুকতেই দেখলো অয়ন শার্ট পড়ছে। অয়ন অরুকে দেখে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল অয়ন: এখন শরীর কেমন? অরু: জি ভাল (মাথা নিচু করে, এমন একটা ভাব তার যে অয়নের চোখে চোখ মিলালে মাটিতে মিশে যাবে লজ্জায় অয়ন: এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে বুঝি না। এত লজ্জা আসে কোথা থেকে তোমার? আমাকে একটু ধার দেও। আমার তো একটুও লজ্জা নেই (অরু অয়নের কথা শুনে হেসে দিল) অয়ন ওয়ালেট, মোবাইল পকেটে রেখে কোট হাতে নিল। মাশা আল্লাহ্ লাগছে অয়নকে। অরু মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখছে তার বর কে মায়াভরা চোখে। অয়ন : সেলোয়ার কামিজ পরলে বউ বউ লাগে না তোমাকে। তেমন একটা ফিল আসে না আর কি। সুস্থ হলে এসব পরার দরকার নেই আর। (বলে নিচে চলে গেল) ♣♣♣♣♣♣♣♣♦ ♦♣♣♣♣♣♣♣♣ দেখতে দেখতে ৭ দিন পার হয়ে গেল। ওদিকে জয়ার বাবা অনেক অসুস্থ ! হার্টে ছিদ্র পাওয়া গেছে কয়েকটা। এই নিয়ে জয়া খুব ই টেনশনে আছে। আজ জয়া তার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে ডঃশুশান্ত এর কাছে। গাড়ী তে বসে জানালার দিক তাকিয়ে আছে। হটাৎ জয়া একটা জিনিস খেয়াল করলো........ সেদিন বাসায় ফিরে জয়ার মন খুব খারাপ ছিল অয়নের কথায়। কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছিল। সেদিন রাতেই জয়ার বাবা অসুস্থ হয়ে যান। !!! জয়ার বাবা অসুস্থ হবার পর থেকে জয়া যেন তাকে নিয়েই বিজি। আশ্চর্য ওরপর থেকে এতদিন জয়ার একবারও অয়নের কথা মনে পরে নি!!! তাহলে কি অয়নের কথাই ঠিক? জয়া কি নিজের উত্তর পেয়ে গেল?? চলবে...