#যেদিন_আমি_থাকবো_না
#লেখিকা_ইভা_আক্তার
#পর্ব_৭
————————
– কিরে নীল তানিশা কোথায় ? তোদের তো একসাথেই আসার কথা ছিলো না ? (আইরিন)
প্রায় আধঘন্টা ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে তানিশার অপেক্ষায় বসে আসে সকলে । তবুও তানিশার যেনো কোনো খবর নেই ।
– আচ্ছা তোরা অপেক্ষা কর আমি তানিশাকে নিয়ে আসছি (নীল)
– বাদ দে । চল আমরাও যাই (অভি)
নীলের সাথে সাথে অভি এবং আইরিনও গেলো তানিশাকে ডেকে নিয়ে আসতে । কিন্তু ক্লাসের সামনে যেতেই সকলে দেখতে পেলো ক্লাসের দরজায় তালা মারা। এটা দেখে সকলেই প্রচন্ড অবাক হয়ে যায় । এদিকে তানিশা তখন দরজা আটকানোর ভয়ে রুমের এক কোনে বসে ছিল । ওর ধারণা ছিল ওকে ছেড়েই হয়তো কলেজের সকলে চলে গেছে । এর থেকেও বড় সমস্যা হচ্ছে তাঁর মোবাইলের চার্জ শেষ যার ফলে ও এখন চাইলেও কাউকে কল দিতে পারবে না । সকালে তাড়াহুড়ো করে আসায় মোবাইলে চার্জও দেওয়া হয় নি। সব ঝামেলা যেনো একসাথে হানা দিয়েছে ।
এদিকে বাইরে দাড়িয়ে নীল আর বাকি সবাই ভাবতে লাগলো তানিশা তাহলে কথায় গেছে । এমন সময় হাজির হয় তিশা । তিশাকে দেখে সকলের মুখ আরো ভার হয়ে গেলো ।
– কেমন আছো তোমরা ?(তিশা)
– যেমন দেখছো (আইরিন)
তাচ্ছিল্য সহকারে কথাটা বলে দেয় আইরিন । তিশার রাগ উঠলেও সেটা না প্রকাশ করে নীলকে জিজ্ঞেস করে,
– এখানে কি করছো?
– তানিশাকে খুঁজতে এসছি । কিন্তু এখানে তো তালা মারা। আশ্চর্য! ও তো ক্লাসে বসেই পড়ছিল।
– আর না না । আমি কিছুক্ষন আগে এসে দেখলাম তানিশা এখানে নেই। পুরো ক্লাস রুম খালি ছিল । তারপর দারোয়ান আঙ্কেল এসে দরজা তালা মেরে দিলো ।
– তাহলে তানিশা কথায় ?
নীল এবার টেনশনে পড়ে গেলো ।
– আচ্ছা তুই একটা কাজ কর । তানিশাকে কল দে । দেখ কোথায় গেছে এই মেয়ে (অভি)
– লাভ নেই । ওর ফোনে একটুও চার্জ নেই ।
তিশা এবার আমতা আমতা করে বলল,
– আরে ওকে নিয়ে টেনশন করো না । ও বাসায় চলে গেছে।
তিশার কথায় সকলে ওর দিকে অবাক চোখে তাকালো । নীল অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
– ইম্পসিবল । তানিশা কখনো আমাদের থেকে বিদায় না নিয়ে চলে যায় না । কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে ।
– আমি সত্যি বলছি । ক্লাস রুমে যখন এসেছিলাম তখন তানিশার সাথে আমার দেখা হয় । ওর সাথে টুকিটাকি কথাও হয় । ও বলে যে ওর শরীর ভালো না তাই বাসায় চলে যাবে ।
নীল এবং বাকি কারোই যেনো তিশার কথা বিশ্বাস হচ্ছিল না । কিন্তু ও মিথ্যা কেনোই বা বলবে । এটা ভেবেই সকলে নিজেদের আশ্বাস দিলো। আইরিনের প্রচন্ড রাগ হলো যে তানিশা বিদায় না নিয়েই চলে গেছে।
– কাল শুধু আসুক ও । পিঠের ছাল তুলে দেব ।
– আচ্ছা আচ্ছা চল এবার (অভি)
নীল এবং বাকি সবাই সেখান থেকে চলে যায় ঠিকই কিন্তু নীলের ব্যাপারটা অদ্ভুদ লাগে । নীল ঠিক করে যে ও এখনই যাবে তানিশার বাড়িতে । নাহলে আজ তানিশার চিন্তায় ও মরেই যাবে।
নীল এবং বাকি সবাই চলে যেতেই তিশার পাশে এসে দাঁড়ায় জাইমা । জাইমা তিশাকে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে,
– বাহ! বেশ বুদ্ধিমতী মেয়ে দেখি তুমি। তোমার মতই তো একজনের দরকার ছিলো আমার । বায় দ্যা ওয়ে তুমি দরজার চাবি আর তালা কি করে পেলে ?
– চুরি করেছি ।
তিশার কথায় জাইমা অবাক হয়ে গেলো । এই মেয়ে ওর থেকে প্রায় দুই কি তিন বছরের ছোট । তাও কি ডেঞ্জারাস।
– কিন্তু কিভাবে ?
– সকালে দারোয়ান আঙ্কেলের পিছু করতে করতে ওনার ওই স্টোর রুমে চলে যাই। ওখান থেকেই কোনো রকম চাবিটা নিয়ে এসেছি ।
– দারোয়ান কথায় তাহলে ? উনি তো টেনশন করবেন ।
– চিন্তার কিছুই নেই । উনি বাথরুমে গেছে । আর এই ফাঁকেই আমি চাবিটা দরজার সামনে রেখে আসবো। এতে ওনার চিন্তাও কম হলো ,আর আমাদের প্ল্যানও সাকসেসফুল হলো ।
জাইমা খুশি হয়ে তিশার হাতে হাত মিলালো ।
– তাহলে চলো এই খুশিতে তোমাকে ট্রিট দেওয়া যাক । যাবে আমার সাথে ?(জাইমা)
– হুম যাওয়া যায় ।
জাইমা এবার সামনে রওনা দিল । জাইমার মন আজ বেজায় খুশি । আজ যেনো ও তানিশাকে জব্দ করতে পেরেছে । এইদিকে তিশা মনে মনে বলতে লাগল,
– শুধু তানিশা রাস্তা থেকে সরুক । তোমাকেও সরাতে এক মিনিটও লাগবে না । আর তারপর নীল সম্পূর্ণ আমার ।
এদিকে রুমের দরজা তালা মারায় বাইরের কোনো শব্দ তানিশার কানে গেলো না । তানিশা ভেবে চলছে কি করে এখান থেকে বেরোনো যাবে । তানিশা এবার আবারো চিৎকার করতে লাগলো । কিন্তু আফসোস ওর চিৎকার চেচামেচি করো কানেই ঢুকলো না ।
———————————–
এই প্রথম চৌধুরী বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো নীল। এর আগে বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে শুধু তানিশার জন্য অপেক্ষা করেছে। নীল বাড়িটার দিকে এক পলকে চেয়ে রইলো । সত্যি বলতে বাড়িটা নীলের বাড়ির থেকেও অনেক বড় । নীল গলা খাকারি দিয়ে ডাকতে লাগলো,
– তানিশা ,তানিশা।
নীলের আওয়াজে তানিশা না আসলেও রোজা চৌধুরী নিচে নামলেন। রোজা চৌধুরী নীলের দিকে তাকিয়ে রইলেন । এই প্রথম তিনি নীলকে দেখছেন । কেননা আজ পর্যন্ত তানিশা নীলের সাথে কারোই পরিচয় করিয়ে দেয় নি। নীল রোজা চৌধুরীকে দেখে বললো,
– আসসালামু আলাইকুম আন্টি ।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম । কে তুমি ?
– আমি নীল । তানিশার বেস্ট ফ্রেন্ড । তানিশা কি বাড়িতে এসেছে ?
– মনে হয় আসে নি ।
নীল অবাক হয়ে গেলো । মনে হয় মানে ? এ কেমন মহিলা ? নিজের মেয়ে কখন আসছে না যাচ্ছে তাই জানে না । তবে নীল সেটা জানত।
– হয়তো তানিশা এসেছে । একটু ওর রুমে গিয়ে ডেকে আনতে পারবেন ওকে ?
রোজা চৌধুরী কিছু না বলে তাদের বাড়ির কাজের মেয়ে অহনা কে ডাকলেন ।
– অহনা, গিয়ে দেখ তো তানিশা এসেছে কিনা ।
অহনা উপরে চলে গেলেও নীল দাড়িয়ে দাড়িয়ে রোজা চৌধুরীর হাবভাব দেখছে । তানিশা যেমন বলেছিল ঠিক তেমনি তার মা । কে জানে তানিশা কিভাবে এই বাড়িতে থাকে । নীলের মনটা হটাৎ তানিশার কথা চিন্তা করে খারাপ হয়ে গেলো । কিছুক্ষন পর অহনা নিচে নেমে এসে বললো,
– তানিশা আপা আসে নাই । সব জায়গায় খুজছি এমন কি বাথরুমেও।
রোজা চৌধুরী নীলের দিকে তাকালেন । নীলের মুখটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও কতটা চিন্তিত।
– কিছু কি হয়েছে ?
– না আন্টি । তেমন কিছু না ।
– তাহলে তানিশা কোথায় ।
– ও হয়তোবা আইরিন আর অভির সাথে আছে । ওর ফোন বন্ধ থাকায় আমি ভাবছিলাম ও হয়তো বাসায় । তাই আর কি । আচ্ছা অন্টি তাহলে আজ আসি ।
রোজা চৌধুরী মাথা নাড়ালেন । একদম রোবটের মতো । নীল চুপচাপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে । নীলের মাথায় শুধু একটাই চিন্তা । কোথায় তার তানিশা ? কোথায় গেলো ?
———————–
সময়টা সন্ধ্যা সাতটা। জাইমা আর তিশা দুজনে মিলে ক্যাফেতে বসে ইনজয় করছে আর আড্ডা দিচ্ছে । এক পর্যায়ে জাইমা তিশাকে জিজ্ঞেস করে ,
– আচ্ছা তোমার এতো ঘৃনা কেনো তানিশার উপর ?
– ও আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে । আমি যাদের যাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তাদেরকে ও কেড়ে নিতে চায় ।আমার ভাইকে । যাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসতাম । সেই ভাই এখন আর আমাকে দু চোখে সহ্য করতে পারে না। ভাইয়ার ধারণা আমি তানিশার সাথে ঝগড়া করি।
– আচ্ছা ।
– তোমার এত রাগ কেনো তানিশার উপর ?
– ও আমার পথের কাটা । আর কাটা কখনো রেখে দিতে নেই । ও আমার নীলকে আমার কাছে থেকে কেড়ে নিতে চায় । ওর জন্য তো আমি আমার নীলকে হারাতে পারি না তাই না ? তাই আমি ঠিক করেছি যত দ্রুত সম্ভব এই কাটাকে সরিয়ে ফেলবো ।
জাইমার কথায় তিশা মনে মনে জ্বলে উঠলো । তিশাকে জাইমা ভার্সিটি থাকতেই বলেছিল যে নীলের হবু বউ জাইমা । কিন্তু তিশার ধারণা নীল জাইমা কে নয় বরং তানিশাকে ভালোবাসে । আর একারণে ওর চিন্তা তানিশাকে নিয়ে । জাইমা তো শুধু মাত্র ওর হাতিয়ার ।
এদিকে নীল চিন্তায় চিন্তায় বাড়ি ফেরে । ওর মাথায় শুধু তানিশা কোথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । নীল বাড়িতে ঢুকতেই আফিফা সওদাগর বললেন,
– এত দেরি কেনো হলো নীল ? আর জাইমা কোথায় ?
নীল এবার ওর মায়ের দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইলো । আসলেই তো ক্লাস শেষ হওয়ার পরও জাইমাকে দেখা গেলো না । তার মানে জাইমা এখনও বাড়ি ফেরে নি । নীল দ্রুত মোবাইলটা বের করে জাইমাকে কল দিলো।
জাইমা তখনও তিশার সাথে বসেই গল্প করছিলো । জাইমা নীলের কলটা পেতেই রিসিভ করলো ।
– হ্যা বেবী বলো ।
– একদম চুপ । আমি তোমার সাথে মজা করতে কল করি নি। কোথায় তুমি ?
– আমি ক্যাফেতে ।
– ওয়াহ ! এদিকে বাড়ির সকলে তোমাকে খুঁজছে আর তুমি ক্যাফেত । কি মজার কাহিনী ।
– এভাবে কেনো বলছো ?
– আমার কাছ থেকে তুমি আর কি আসা করবে বলো ?দ্রুত বাড়ি ফিরে এসো ।
নীল কথাগুলো বলেই কল কেটে দেয় । আর জাইমা একটা শ্বাস ছেড়ে তিশার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ওর গন্তব্যে ।
—————–
সেই কতক্ষন ধরেই আফিফা সওদাগর খেয়াল করলেন নীল বাড়িতে আসার পর থেকেই চুপচাপ ড্রয়িং রুমে বসে আছে । আফিফা সওদাগর নীলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
– কি হয়েছে বাবা ? তোমাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো ?
নীল একে একে সব ঘটনা ওর মাকে খুলে বলে । সব শুনে আফিফা সওদাগর বলেন,
– এসব তুমি কি বলছো নীল ? কোথায় তানিশা? একা একটা মেয়ে কোথায় যাবে?
– সেটাই তো বুঝতে পারছি না মম । খুব টেনশন লাগছে ।
– মেয়েটা বাড়িতেও নেই । আবার ফোনও বন্ধ । হায় আল্লাহ মেয়েটাকে সুস্থ রেখো ।
ঠিক তখনই হাজির হয় জাইমা । জাইমা কে দেখে আফিফা সওদাগর বললেন,
– কোথায় ছিলে তুমি জাইমা ? আমরা কতো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম জানো ?
– সরি আন্টি। ভালো লাগছিলো না তাই একটু ক্যাফেতে গিয়েছিলাম । তাছাড়া আসার পর থেকে তো নীল নিজেও একবারও আমাকে ঘুরতে নিয়ে গেলো না ।
জাইমা কথাটা বলেই নীলের দিকে তাকালো । নীল সেটাকে পাত্তা না দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলে ওর মনে একটা সন্দেহ জাগে । নীল দ্রুত নেমে জাইমার কাছে এসে বলে ,
– আচ্ছা তুমি সারাটাদিন কোথায় ছিলে ? ক্লাসের পর থেকে তোমায় দেখলাম না কেনো ?
জাইমা কিছুটা ঘাবড়ে যায় । হটাৎ করে নীল এধরনের প্রশ্ন কেনো করছে ।
– কি হলো জবাব দিচ্ছ না কেনো ? তানিশার গায়েব হওয়ার পিছনে তোমার হাত নেই তো ?
– নীল ,কি বলছো কি তুমি ? আমি কেনো তানিশাকে গায়েব করতে যাবো ?
– তাহলে কোথায় ছিলে সারাদিন ?
– বাইরে ছিলাম ।
– মিত্থা বলবে না । তোমার চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে তুমি কিছু লুকাচ্ছ । সত্যি করে বলো । তানিশা কোথায় ?
– আমি সত্যি জানি না ।
নীল এবার রাগে চিৎকার করে উঠলো ।
– আমার প্রশ্নের উত্তর চাই আমি । যদি আমি কোনোভাবে জানতে পারি এসবের সাথে তুমি জড়িত তাহলে সেদিন তোমার এই বাড়িতে শেষ দিন হবে ।
জাইমা এবার ভয়ে কেপে উঠে । হঠাৎই ওর কিছু একটা মনে আসতেই বলে,
– আমি সত্যি কিছু জানি না । ওই হলুদ রঙের টপস পরা মেয়েটা বোধয় জানে তানিশা কোথায় ।
নীল অবাক চোখে জাইমার দিকে তাকিয়ে রইলো ।
– কোন হলুদ রঙের টপস ? কে সে ?
– আমি চিনি না । তোমাকে খুঁজতে গিয়ে দেখলাম তোমাদের ক্লাস শেষ। তানিশা তখন ক্লাসে বসা ছিল । আর ক্লাসের বাইরে হলুদ রঙের টপস পরা একটা মেয়ে ছিল । চুল ব্রাউন কালার আর শর্ট। কালো রঙের লেগিংস । মাথায় ঝুঁটি করা ।
নীলের আর বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটা কে । নীলের সারা শরীর রাগে জ্বলে উঠলো । তারমানে তিশা তানিশার সাথে কিছু একটা করেছে যার ফলে তানিশার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না । নীল দৌঁড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। গাড়ি স্টার্ট দিযতে দিতে নীল তুহিনকে কল দেয় । তানিশা নীলকে বলেছিল যে গতকাল রাতে তুহিন ভাইয়া বাংলাদেশে এসেছে । তুহিন তখন তার বন্ধুদের সাথে ছিল। নীলের সকল কথায় তুহিন নিজেও ভয় পেয়ে যায় । তুহিনের আরো ঘৃনা জমতে থাকে তিশার উপর । নিজের বোন যে এত জঘন্য হবে সেটা তার ধারণা ছিল না ।
এদিকে চৌধুরী বাড়ির সকলে তখন একসাথে ড্রয়িং রুমে বসে ছিল । তারা যখন তুহিন আর নীলকে একসাথে বাড়িতে ঢুকতে দেখলো তখন সকলেই অবাক চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলো । অন্যদিকে নীলকে দেখে তিশার মনে আনন্দের জোয়ার বইছিল । তিশা দাড়িয়ে নীলকে ডাকতে নেওয়ার আগেই তুহিন এসে ওর গালে চর বসিয়ে দেয়। এটা দেখে রাফসান চৌধুরী আর রোজা চৌধুরী দুজনেই অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায় । তুহিন এবার চিৎকার করে উঠে,
– কি করেছিস তুই তানিশার সাথে ? কোথায় আমার বোন ?
তিশার চোখে পানি টলমল করছিলো । রাফসান চৌধুরি বলে উঠলেন,
– তুহিন কিসব বাজে কথা বলছো তুমি ? তানিশার সাথে তিশার কি সম্পর্ক ? তানিশা হাওয়া হয়ে গেছে নাকি উধাও সেটা তিশা কি করে জানবে?
– চুপ থাকো বাবা ।
রাফসান চৌধুরী যেনো নিজের ছেলের এই আচরণ বিশ্বাস করতে পারছিলেন না । তিনি নিজেই হা হয়ে গেলেন ।
– তোমার এই নোংরা মেয়েকে এখনই জিজ্ঞেস করো কোথায় তানিশা । ও যদি এই মুহূর্তে সব খুলে না বলে তাহলে আমি এই বাড়ি পুড়িয়ে দেবো । আমার বোনকে আমি না পেলে সব ছাই করে দিবো ।
তিশা কিছু বলছে না । শুধু চোখের পানি ফেলছে । কিন্তু আজ ওর চোখের পানি তুহিনের কাছে পুরোপুরি মুল্যহীন।
তুহিন এবার রাগ সামলাতে না পেরে যেই না তিশাকে আবারো চর মারতে যাবে অমনি তিশা বলে,
– তানিশাকে আমি ক্লাসে আটকে রেখেছি ।
উপস্থিত সকলে তিশার কথায় হা হয়ে যায় । তিশার কথা যেনো কেউই বিশ্বাস করতে পারছিলো না । তারমানে গত কয়েকটা ঘণ্টা ধরে তানিশা ক্লাস রুমে বন্ধি?
আর এদিকে তিশার কথায় তুহিন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো । নীল ইশারা করতেই তুহিন আর নীল দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে রওনা দিলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
কিন্তু সমস্যা হলো তখনই । ভার্সিটির গেট ছিল বন্ধ । এই মুহূর্তে ওরা কোথা থেকে চাবি পাবে ? এদিকে নীল চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছিল । কে জানে কেমন আছে তানিশা । খুব কষ্টে নীল এবং তুহিন মিলে ভার্সিটির দারোয়ানকে কল করে তাকে অনুরোধ করে । ওনার কাছে ক্লাস রুমের চাবি থাকায় কোনো সমস্যা হবে না বলে উনি জানিয়েছেন।
অপরদিকে আলো বিচ্ছিন্ন এক বদ্ধ রুমে সেই কয়েক ঘণ্টা ধরে তানিশা আটকে রয়েছে । তানিশার যেনো শ্বাস আটকে গেছে । চারিদিক অন্ধকার । এই রুমে ও ব্যাতীত অন্য কেউ আছে কিনা সেটাও দেখা যাচ্ছে না । তানিশার মনে পড়লো ছয় বছর আগের কাহিনী । যখন তানিশা ট্রে নিয়ে টেবিলে রাখতে গিয়ে ট্রের উপরে রাখা সকল কাচের গ্লাস এবং প্লেট ফেলেছিল । যার ফলে রোজা চৌধুরী রাগের মাথায় তানিশাকে স্টোী রুমে আটকে রাখে । অন্ধকার ওই রুমে তানিশা ঠিক রাত এগারোটা পর্যন্ত আটকে ছিল । তারপর থেকেই তানিশা ওর ফ্যামিলিকে ঘৃনা করতে শুরু করে । এমনকি তাদের থেকে দূরে সরে যায় । তানিশার এবার ভয় হতে শুরু করলো । সারারাত কি ওকে এভাবেই এই অন্ধকার রুমে থাকতে হবে ? কিন্তু সেটা কিভাবে ? তানিশা এবার কাঁপতে শুরু করলো । এক পর্যায়ে ও ভয়ে হাঁটু গেরে বসে পড়লো । তানিশা শব্দ পেলো কেউ একজন ক্লাস রুমের দরজা খুলছে । এত রাতে কে এখানে ? ওর মনে হতে লাগলো এটা হয়তো বা কোনো খারাপ লোক হবে যে তানিশার সাথে বাজে কিছু করবে । দরজা খোলার সাথে সাথে তানিশা নিজেকে সামলাতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
চলবে,,,,,,❤️