উজান_যমুনা #পর্বঃ৩

0
131

#উজান_যমুনা

#পর্বঃ৩

লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

প্রেয়সীর টেনশনে অস্হির হয়ে আছে উজান চৌধুরীর বক্ষ। শখের নারীকে এক পলক দেখার লাগি মন হয়েছে তার পাগলপা’রা। এইতে ঘন্টা খানিক সময় ধরে রাস্তার নিকটে থাকা পিলের উপর ঠে’স দিয়ে দাঁড়িয়ে দূর থেকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, একতলা বিশিষ্ট বাড়ির দিকে। ওই বাড়িতেই রয়েছে তার অতি মূল্যবান মানুষটি। কিন্তু মেয়েটার কোনো হদিস নেই। দু’দিন ধরে কতশত বার কল দিয়েছে তাকে কিন্তু ফোনটাও অফ করে রেখেছে।

এবার রাগ লাগছে ছেলেটার, অভিমানে মুখ গোমড়া করে থাকতে ইচ্ছে করে। তার কি সময়ের কোনো মূল্য নেই? মেয়েটা কেন বুঝে না তাকে! কিসের কমতি রয়েছে তার মধ্যে? একটু তার থেকে বয়সে ছোট বলেই কি সমস্যা? আরে বয়স একটা সংখ্যা মাএ! ভালোবাসা কি এতো বাছ-বিচার করে হয় না-কি। উজান চৌধুরী তাকে উজার করে ভালোবাসবে এর থেকে বড় সত্য আর কি হতে পারে! উজান চৌধুরী সবদিক দিয়েই তো পারফেক্ট। এরপরও কেন তার শখের নারী তাকে এতোটা পো’ড়া’য়। ভালোবাসে বলেই কি এতো অবহেলা!

এসব ভাবনার মাঝে হঠাৎ করেই টানটান হয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো উজান চৌধুরী। এলোমেলো ঝাঁকড়া চুল গুলোতে একবার হাত বুলিয়ে লম্বা শ্বাস ছাড়লো সে।
যমুনাদের বাড়ির আশেপাশে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরঘুর করেও যখন একপলক দেখতে পারলো না কাঙ্ক্ষিত নারীকে, এরপর সিদ্ধান্ত নিলো বাড়ির ভিতরে যাবে সে। ওটা তো আর পরের বাড়ি না। তারই ফুপির বাড়ি। যেই ভাবা সেই কাজ। পরক্ষণেই ছেলেটা লম্বা লম্বা কদমে ঢুকে পড়লো কাঙ্ক্ষিত বাড়ির ভিতরে।
.
.
দুপুরের রান্না করছিলো তাহেরা খানম। এরিমধ্যে হরদমে কেউ কলিং বেল টিপছে। এই অসময়ে আবার কে? তাও অভদ্রের মতো এতো বার বেল বাজাচ্ছে! বিরক্ত হলো তাহেরা খানম। বাসায় উনি আর যমুনা। যমুনার জ্বর হয়েছে, সে নিজের রুমেই আছে। জলি গিয়েছে কলেজে, বাবা স্কুলে। উনি মাএই গরম তেলে মাছ ছেড়েছে, এগুলো রেখেও তো আর যাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে হাঁক ছেড়ে মেয়ে’কে ডেকে বললেন,

“যমুনা… দেখতো কে এসেছে। দরজাটা একটু খুলে দে মা।”

যমুনা সুয়ে সুয়ে উপন্যাস পড়তে ছিলো। দু’দিন জ্বর থাকলে-ও আজ একটু সুস্থ সে। তবুও অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে ক’দিন। হঠাৎ মায়ের কথা শুনে বিছানা ছেড়ে আলগোছে উঠে দাঁড়ালো যমুনা। মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে বিনাবাক্যে রুম থেকে বের হলো মেয়েটা। মিনিট সময়ের মধ্যে দরজা খুলতেই র’ক্তি’ম চ*ক্ষু এলোমেলো উজানকে দেখা গেলো। অসময়ে এখানে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখে খানিকটা অবাক হলো যমুনা। কেননা সচারাচর লোকটা তাদের বাড়িতে আসে না। পরক্ষণে নিজেকে সামলে গমগমে গলায় বললেন,

“তুমি এখানে কেনো?”

উজান সে কথার কোনো জবাব না দিয়ে হুট করেই যমুনার একটা হাত শক্ত করে দরজার সাথে চে’পে ধরে ভ’য়ং’ক’র ক্রোধিত কণ্ঠে শুধালো,

“আপনার সমস্যা কি উপমা? দু’দিন অফিসেও যাচ্ছেন না, ফোনটাও অফ। জানেন, চিন্তা হয় আমার! আমাকে সারাক্ষণ এতো হয়রানি করছেন কেনো? কি সমস্যা আপনার?”

উজান চৌধুরীর এমন কাজে ভড়কে গেলো যমুনা। শক্ত পুরুষালী হাতের আঘাতে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো সে, তার হাতটা মনে হচ্ছে ভেঙে ফেলবে এই ছেলে। যমুনা নিজের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,

“হাত ছাড়ো উজান, ব্যথা পাচ্ছি আমি। আমার জ্বর হয়েছিলো, অসুস্থ আমি।”

তার প্রেয়সী অসুস্থ! কথাটা কর্ণগোচরে প্রবেশ করতেই হুঁশ আসলো উজান চৌধুরীর। মুহুর্তেই হাতের বাঁধন আগলা করে নিলো তবে ছাড়লো না। রাগের চো’টে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ছিলো সে। নিজের অজান্তেই আঘাত করছিলো এই মানুষটাকে। পরক্ষণেই অনুতপ্ত হয়ে অপরাধীর ন্যায় শুধালো,

“স্যরি উপমা! আপনার উপরে একটু রেগেই ছিলাম আমি। খুব রিয়েক্ট করে ফেললাম তাই-না। স্যরি!স্যরি! খুব লেগেছে তাই-না?”

যমুনা একরাশ ক্রোধ নিয়ে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে উজানকে চোখ রাঙিয়ে বললো, “বেয়াদব!”

উজান শব্দহীন ভাবে হাসলো। গালে হাত দিয়ে অপলক নয়নে চাইলো প্রিয় নারীর মুখশ্রীর পানে। সিমসাম গড়নের শ্যামময়ী মায়াবী নারীটির মধ্যে যেন এক আকাশ সমো মুগ্ধা ঢেলে দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা! উজান চৌধুরীর চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে, তার অচেতন দেহে যেন এতক্ষণে প্রা’ণ ফিরে পেলো।

উজানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখের উপর দরজা এঁটে দিতে উদত্য হয়েছিলো যমুনা। পরক্ষণে উজান নিজের হাত দিয়ে বাঁ*ধা দিয়ে বললো,

“হবু বরকে সম্মান করতে শিখুন উপমা। হবু বর এসেছে শ্বশুর বাড়িতে, কই জামাই আদর করে ভিতরে নিয়ে যাবেন তাকে। তা-না তাকে ভিতরেই ঢুকতে দিচ্ছেন না। কত বড় সাং”ঘা’তি’ক মেয়ে আপনি একবার ভাবুন উপমা!”

“একদম থাপ্পড়িয়ে তোমার সব গুলো দাঁত ফেলে দিবো, শয়তান ছেলে! এক্ষুণি দূর হও এখান থেকে।”

উজান হেসে দুষ্ট হেসে বললো, “উঁহু! যাচ্ছি না আমি। বউ না নিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে এবার আর নড়ছি না।”

এরিমধ্যে তাহের খানমের কণ্ঠ স্বর শোনা গেলো।

“কে এসেছে-রে যমুনা?

মায়ের কথা শুনে বিড়বিড় করে যমুনা বললো,

“তোমার বে’য়া’দ’ব ভাতিজা এসেছে আমাকে জ্বা’লা’তে! আস্ত অসভ্য একটা!”

উজান সেসব পাওা না দিয়ে যমুনাকে পাশ কাটিয়ে হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পড়লো। যমুনা উজানের আচরণে বিরক্ত হয়ে ধুপধাপ পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো। উজান সেদিকে একবার তাকিয়ে হাসলো। অতঃপর বসার ঘরের সোফায় আয়েশ করে বসে মৃদু কণ্ঠে শুধালো,

“ফুপু, আমি এসেছি।”

হঠাৎ করে ভাইপোর কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলো তাহেরা খানম। তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এসে উজানের গাল ছুঁয়ে দিয়ে অভিমানী কণ্ঠে বললেন,

“আজ ফুপির কথা মনে পড়লো তোর? তোর বাপ তো সারাদিন ব্যস্ত, বছরেও একবার সময় হয় না তার। তুইও খুব বড় হয়ে গেছিস, সচারাচর কখনো একটু আসিস না ফুপিকে দেখতে। এখন আর মনে পড়ে না বুঝি! অথচ ছোটবেলায় ফুপিকে ছাড়া কিছুই বুঝতি না!”

“আরে, ফুপি মন খারাপ করো না। এইতো আজ আসলাম। এখন থেকে রোজ আসবো, তোমার মেয়ে’কে দেখতে।”

তাহেরা খানম গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো উজানের মুখপানে। ছেলেটার কথা তার বোধগম্য হলো না। উজান কথা ঘুরিয়ে বললো,

“কি হলো ফুপি? বুঝো নাই আমার কথা? আরে আমি বলছি, এখন থেকে রোজ রোজ দাদুর মেয়ে’কে দেখতে আসবো আমি।”

তাহেরা খানম হাসলো। পরমুহূর্তে খুশীতে গদগদ হয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ভাতিজাকে নিয়ে। একমাত্র ভাইপো তার, বড়ই আদরের! কতদিন পর এসেছে ছেলেটা। তাকে ভালো-মন্দ কিছু খাওয়ানোর তোড়-জোড় করছে তাহেরা খানম। আপাতত কিছু নাস্তা তৈরী করেছে। সেগুলো উজানকে দেওয়ার জন্য রান্না ঘরে গিয়ে যমুনাকে ডাকছে। বিরক্ত হলো যমুনা। ছেলেটা এমনিতেই তাকে জ্বালিয়ে মা’র’ছে, আবার মা সুযোগ করে দিচ্ছে। লজ্জায় না পারছে মা’কে সে-সব বলতে, না পারছে সহ্য করতে। কিন্তু, মা যে ডাকা শুরু করছে আর না গিয়ে উপায়ও নেই। এ কোন মুসিবত! বাধ্য হয়ে আবারো উজানের মুখোমুখি হতে হলো তার। নাস্তা রেখে কোনো মতে মায়ের কাছে এসে দাঁড়ালো। পরমুহূর্তে তাহেরা খানম বললো,

“উজানের জন্য চা-করবো না-কি কফি। একটু জিজ্ঞেস করে আয় তো যমু।”

এবার চরম বিরক্ত যমুনা। চোখ-মুখ কুঁচকে ফেললো মেয়েটা। হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তা দেখে মা আবারো ঝামটি মে*রে বললো,

“ওমন চোখ কুঁচকে আছিস কেনো শয়তানের বা*চ্চা! আমার গোষ্ঠীর কেউ এসেছে দেখে তোর জাতি-গোষ্ঠীর কপাল পু’ড়’লো বুঝি! যা গিয়ে জিজ্ঞেস করে আয়,দেখ ছেলেটার কি দরকার।”

মায়ের কথায় মেজাজ বিগড়ে গেলো যমুনার। ধুপধাপ পা ফেলে উজানের কাছে গিয়ে দাঁতে দাঁত চে*পে বললো,

“চা খাবে নাকি কফি? ”

উজান গেস্ট রুমে সুয়ে ফোন ঘাঁটছিল। যমুনার কথা শুনে চোখ তুলে তাকালো তার দিকে। রেগে যাওয়া প্রেয়সীকে আরো একটু রাগাতে মোলায়েম কণ্ঠে শুধালো,

“আমার কিসের আবার চা-কফির নেশা? আমার একমাত্র নেশা তো উপমা আপনি। এই-যে মায়াবী চোখ দিয়ে তাকিয়েই আমায় খু* ন করতে পারেন অবলীলায়!
আমি তো আপনার চোখের নেশাতেই ডুবে ম*রি রোজ!একটু একটু করে তার চোখের নেশায় আমি খু* ন হচ্ছি!অথচ আপনি খু* নী হয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে।পৃথিবীর কোনো আইন-আদালত দিয়েও আপনাকে আমার বক্ষের কারাগারে বন্দি করতে পারি না।”

চলবে……

(রেসপন্স করবেন সবাই। রিচেক দেইনি ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here