ইয়াসমিন_রিমা #অসম_প্রেম #পর্ব_৪৬

0
391

#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৪৬

#বর্তমান,

আদিত্য অনেকক্ষণ ধরে পাইচারি করে যাচ্ছে। আজ কিছু ক্ষণ ধরে কিছুই ভালো লাগছে না বড্ড অস্থির লাগছে। সেই তখন থেকে কিছু ভালো লাগছে না। প্রেমাকে বার বার ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু বন্ধ আসছে। হঠাৎ আদিত্যর পি এ আসলো সুমন,স্যার আপনাকে টেন্সট দেখাচ্ছ।
চমকে গেল,হু আসলে প্রেমাকে অনেকক্ষণ ধরে ফোন দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু প্রতি বার বন্ধ আসছে।ও কোথায়।

, জানি না স্যার তবে আপনার কার এক্সিডেন্ট হয়েছে।সব নিউজ চ্যানেল রিপোর্ট করছে আপনি সেখানে ছিলেন ।
আপনার গাড়ি ব্লাস্ট হয়েছে।যে ছিল সে বোধহয় নেই।

, কি বলছ এই সব চিৎকার করে।

আদি দ্রুত কার পার্কিং এর কাছে যায়। নিজের গাড়ি খুঁজতে থাকে হন্নে হয়ে। খুব অস্থিরতা কাজ করছে। কিন্তু দেখে সেখানে এক কোনে প্রেমার গাড়ি।
, অবাক হয়ে, ওহ্ মাই গড। তাহলে প্রেমা ছিল। ভয়ে কাঁপছে। খুব দ্রুত অন্য একটি গাড়ি নিয়ে রওনা হয়েছে সেই এক্সিডেন্ট স্পষ্ট এ।

এদিকে ফারহান ঘড়ে বসে টিভি দেখছে আর হাসছে।

, আমি যা চেয়েছিল তাই হয়েছে। তোকে আমি প্রেমার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছি।হা হা হা হা। তোকে আমি মেরে দিয়ে ছি আদিত্য। এবার উপরে বসে আমার আর প্রেমার সম্পর্ক দেখবি।এই খবর টা তো প্রেমাকে জানাতে হবে।
ফোন করল কিন্তু বন্ধ আসছে বার বার।

আদিত্য খুব দ্রুত গাড়ি চালিয়ে এক্সিডেন্ট স্পষ্ট এ এলো।মিডিয়ার লোক পুলিশ জরো হয়ে আছে। তার পাশ কাটিয়ে চলে গেল গাড়ির কাছে। কেউ খেয়াল করে নি। গাড়ি চুর্ন বিচূর্ণ হয়ে গেছে।আদি ভয় পেয়ে গেল যদি প্রেমাকে না পায়। ভয়ে কাঁপছে।, আমার প্রেমা কোথায় বুক ধড়ফড় করছে কি হবে।

চারিদিকে খুঁজতে লাগলো। প্রেমা কোথায়।রাস্তা টা একটু উঁচু ছিল পাশে অনেক নিচু নিচু জমি আছে।এক সময় খুঁজতে খুঁজতে রাস্তার ঢালু সাইডে গেলে পা পিছলে পড়ে যায়। জমিতে নতুন ধান উঠেছে।সেচে মাটিতে পানি জমে আছে। উল্টে পরে গেল উচু কিছুর উপর। কেমন জানি লাগছে। কেমন জানি প্রেমার গায়ের গন্ধ পেল।পরে তাকিয়ে দেখে এটা প্রেমা। আদিত্য আসলে প্রেমার গায়ের উপর পড়ছিল।

,প্রেমা চোখ খোলো।গালে হাত ছোঁয়াতে হাতে রক্ত আর কাদা লেগে আছে।প্রেমা উঠো।আরে উঠো না।কি হয়েছে তোমার। হাতের পাল্স চেক করে।দ্রুত কোলে তুলে গাড়িতে উঠিয়ে। গাড়ি চালাচ্ছে আর প্রেমাকে বুকের সাথে ধরে রেখেছে।হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। ওটিতে নেওয়ার পর ডাক্তার এসে বললো। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। রক্ত লাগবে।
আদিত্য পাগলের মত করছে।
, আমি দেব রক্ত। আমার স্ত্রীর কিছু হবে না। আদিত্য রক্ত দিল। দুজনের ব্লাড গ্রুপ এক ছিল।

এদিকে পুলিশ চারপাশ খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোনো লোক পেল না। সবাই ধরে নিল যে যে বা যারা গাড়িতে ছিল তাকা কেউ নেই। আগুনে পুড়ে মারা গেছে। সেরকম কোন ক্লু পেল না।
চৌধুরী বাড়ির সবাই আতংকে আছে আদি বোধহয় নেই। এদিকে প্রেমাকে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু বন্ধ আসছে। আকাশ তন্ময় সেই জায়গায় গেল কিন্তু পুলিশের সাথে কথা হলো।তারা আরো তদন্ত করে দেখবে।

চৌধুরী বাড়ির সবার শোখ দেখতে আসলো ফারহান। ফারহান ত খুব খুশি। কারন তার পথের কাঁটা নেই।

,আসরাফ চৌধুরী, ফারহান ছেলেটা সব কিছু পাওয়ার আগেই হাড়িয়ে ফেললো।
, ফারহান, আংকেল আপনি একদম চিন্তা করবেন না।সব কিছু ই ত আল্লাহর ইচ্ছা।এই পৃথিবীতে আমরা কেউ বেঁচে থাকবো না।
, অজয় চৌধুরী,দাদা এটা কি হলো আমার ছেলের সাথে। ওকে আমি বুকে জড়িয়ে নেওয়ার আগে আল্লাহ নিয়ে গেল। কেঁদে। আমি ওর মুখ থেকে বাবা ডাক শুনবো বলে অপেক্ষা করে আছি। কিন্তু কেঁদে দিল।

বাড়ির সবাই একটা শোখ কাটিয়ে উঠতে পারলো না তারমধ্যে আর একটা শোখ।কি হচ্ছে সবার সাথে। সবার চিন্তা দিগুন হলো প্রেমার ফোন সমানে বন্ধ আসছে।

রিনা চৌধুরী কিছু ই ভালো লাগছে না। সন্ধ্যা থেকে। তখন বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। হাতে থাকা পানি গ্লাস পড়ে গেল। মায়ের মন। সব সময় সন্তানের বিপদ হলে বুঝতে পারে। তার মেয়ে যা সাইকো কখন কি করে ফেলে বোঝা যায় না।এত জেদি।

এদিকে প্রেমাকে বেডে দেওয়া হয়েছে বিপদ থেকে মুক্ত।, আদিত্য নাওয়া খাওয়া ভুলে প্রেমার পাশে বসে আছে।প্রেমার সেবা করে যাচ্ছে।কখন যে আদির বন্ধ হয়ে গেছে খেয়াল নেই।সব কিছু ভুলে প্রেমাকে নিয়ে পড়ে আছে।
বারো ঘন্টা হয়ে গেল কিন্তু জ্ঞান ফেরেনি। আদি শুধু না ঘুমিয়ে প্রেমাকে দেখে যাচ্ছে।

, কেন তুমি আমাকে বোঝ না। আমি তোমার উপর কোনো জোর খাটাইনি তুমি যেমন ভালো থাকতে চেয়েছ আমি দিয়েছি। আমার কাছে তোমার মুখের হাসি টাই বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি।আর সারাজীবন এভাবে ভেসে যাবো। আমি জানি তুমি কাউকে ভালোবাসতে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে। এখনো বাসো। আমি হয়তো তোমাকে অত বেশি ভালোবাসতে পারবো না কিন্তু আমি আমার মতো করে ভালোবাসবো। আমি জানি তোমার কতটা যন্ত্রনা হয়। কারন আমি ও যে আমার ভালোবাসার মানুষ কে পাইনি। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো।যানো খুব ইচ্ছে করে প্রকৃতির সব নিয়ম ভেঙে তোমাকে নিজের করে নেই।

প্রেমার চোখের উপর আদিত্যর চোখের পানি পড়লো। চোখ নড়ে উঠলো।প্রেমা চোখ মেলে তাকিয়ে সামনে দেখতে পায়।আদিকে।গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। গায়ের সাদা শার্ট এ কখনো কিছু কিছু রক্ত লেগে আছে। সেই এক ভাবেই প্রেমার কাছে পড়ে আছে। মনে হয়।এই পৃথিবীতে শুধু ই প্রেমা আছে ওর সব কিছু ঠুংকো।

আদি দেখলো প্রেমা তাকিয়ে আছে।,আদির খুব রাগ হচ্ছে কারণ এমন ভাবে গাড়ি চালিয়েছে যে এক্সিডেন্ট করে ফেলেছে।রাগ কন্ট্রল করে শান্ত গলায় বলল। কারন মেয়েরা যে বড্ড অভিমানী একটু রাগ দেখালে আর কথাই বললবে।তাই নরম গলায় আলতো ভাবে বললো,
, এমন ভাবে কেউ গাড়ি চালায় হুম আর গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে।যদি তোমার কিছু হয়ে যেত। তাহলে আমার কি হতো।
প্রেমা শুধু তাকিয়ে আছে।
প্রেমা, এখানে কেন এসছো।
, আমি আসবো না কে আসবে। হুম। কারন আমি তোমার স্বামী।জানো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কি।
শোনো তাহলে,

স্বামী হচ্ছে এমন একজন মানুষ, যার সাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও, তার প্রাধান্য ইসলামে জন্মদাতা বাবারও আগে।একমাত্র তিনিই এমন একজন মানুষ, যার কাছে কোনো গোপনীয়তার প্রয়োজন নেই।

সর্বপ্রথম স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এসেছে তারপর বাকিসব। স্বামী যতটা আপন,আবার স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ততটাই ঠুনকো। রাগে হোক কিংবা হাসিঠাট্টায়,তিন তালাকেই সম্পর্কের শেষ। মুহুর্তেই হালাল থেকে হারামে পরিণত হয়ে যায়।

এই মহৎ সম্পর্কের যত্ন নিতে হয় সবচেয়ে বেশি। একটু ভুলে রাগের মাথায় যেন সম্পর্ক শেষ ‘না’ হয়ে যায়।

সম্পর্কের যত্ন নিতে হয়। যাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবেন না, তাকে রাগের মাথায় পর করে দিতে নেই। রাগ চলে গেলেও স্ত্রী একবার হারাম হয়ে গেলে সহজেই তাকে হালাল করা সম্ভব নয়। এই একটা সম্পর্কেই, যদি সম্পর্ক টা টিকে যায় তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দুজন দুজনকে ছেড়ে যায় না। পাশে থেকে যায় সারাজীবন…..🤍✨

ইসলামে আরো বলা আছে সৃষ্টিকর্তার পরে যদি কাউকে সেজদার অনুমতি থাকতো তাহলে স্বামী কে দিতো। কারন স্ত্রীর সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্বামী পালন করে।জানো স্বামীর পদতলে স্ত্রীর বেহেস্তে।

বুজলেন ম্যাডাম।
সবাই শুধু ছেড়ে যায় না। এই ছেড়ে যাওয়ার যুগে কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত থেকে ও যায়।

দুটি মানুষকে আটকে রাখার জন্য স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক যথেষ্ট। আমি তোমার সব না পাওয়াকে পুরন করবো। আমি জানি প্রেমা তুমি প্রিয়কে এখনও অসম্ভব রকম ভালোবাস তাই না।

প্রেমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আদি কিভাবে প্রিয়র কথা জানলো।সব কিছু কিভাবে জানলো।

আদি গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে,কি ভাবছো হুম। আস্তে করে দুজনের কপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখলো।

প্রেমা,,

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here