ইয়াসমিন_রিমা #অসম_প্রেম #পর্ব_৬৪

0
312

#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৬৪

প্রেমা হঠাৎ সাথে সাথে প্রাইম মিনিস্টার মানে প্রধানমন্ত্রী কে ফোন করে বললো।,এই সব নিউজ বন্ধ করুন।তা না হলে আমি সব শেষ করে দিব।আর আপনাদের কি হাল হবে জানা আছে নিশ্চয়ই। হ্যা।সব নিউজ চ্যানেল প্রেস মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। সবাই কে বলুন যেন সব খবর উল্টো ভাবে বলে। আমার দুর্নামের বদলে সুনাম করে।

PM,এ সব তুমি কি বলছো । আমি এক্ষুনি সব ঠিক করছি। টেনশন নিও না।সব ঠিক হয়ে যাবে।

, ওকে। কেটে দিল।

আদি প্রেমার দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক হয়ে।

আদি, আমি তোমাকে বারন করেছিলাম।এই সব মারপিটে জরাবে না। কিন্তু তুমি আমার কোনো কথা শুনো না কেন।কি হয়েছে তোমার।এই শরীরে আমি তোমাকে কোনো ঝামেলা জরাতে দিব। তুমি যত ভুল করেছ আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু আর নয়।

,প্রেমা, ঠিক আছে। কিন্তু Hunter কে কখনোই নয়। কখনো আটকে রাখতে পারবে না।

,প্রেমা।

, ঠিক আছে আমি তোমার সব কথা শুনব। ওকে হ্যাপি। কিন্তু আমি এই সময় আমার পরিবারের সাথে থাকতে চাই।তাই এমন করেছি।

,চলো ওষুধ খেতে হবে। তুমি বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারবে না।

, ঠিক আছে।

টিভি চ্যানেল এ দেখানো হচ্ছিল।প্রেমা চৌধুরী একজন স্বনামধন্য ব্যবসী হয়ে ও একজন মাফিয়া। বিশ্বের নামকরা মাফিয়া ডন দের মধ্যে একজন। তিনি এতদিন ভালো মানুষের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন।দেশ বিদেশ এর অসহায় দুস্থ বিধবা নারী অনাথ শিশুদের গরীব দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।সব থেকে গরীব দেশ উগান্ডার আফ্রিকানদের জীবনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। দেশে ও নাম করা অনাথ আশ্রম ও বৃদ্ধা আশ্রম এর মালিক। একজন দয়াবান মানুষ তিনি সবার কাছে কিন্তু আজ সবাই আশ্চর্য এর চরম পর্যায়ে এসেছে।
একটা মানুষ এরকম কিভাবে হতে পারে।কেউ বিশ্বাস করছে আবার কেউ এই সব মিথ্যা চক্রান্ত বলে উরিয়ে দিয়ে ভালো কাজের কথা বলছে। কিন্তু সবার সামনে হুট করেই সকল নিউজ উল্টো ভাবে বলতে শুরু করল। এতক্ষণ নাকি সবার সাথে ভুল কথা বলেছে। সবাই কে পরিক্ষা করে দেখল প্রেমা চৌধুরী কেমন মানুষ সবার কাছে। সকল জনগণ এইসব উল্টোপাল্টা নিউজ দেখে ক্ষুব্ধ। কেন শুধু শুধু মিথ্যা কথা বলে সবাই কে বিভ্রান্ত করছিল। কেন সকলের সামনে গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছিল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই নিউজ চ্যানেল এ সুনামের ছড়াছড়ি হয়ে গেল।

আরকেউ প্রেমাকে না চিনলেও তার বাড়ির লোক ঠিকই চিনে।তারা সবাই বুঝলো এইসকল কাজ প্রেমার। কি করবে কিছু বলতে পারছে না।

হঠাৎ প্রিয়র কাছে রেজিগনেশন লেটার আসলো।মানে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রিয় সব বুঝতে পেরেছে এই কান্ড প্রেমা ঘটিয়েছে।প্রেমা ই প্রিয়র চাকরি খেয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার আসলো একটা ব্যাংক থেকে।মানে প্রিয়র নতুন চাকরি হয়েছে।দু দিনের মধ্যেই জয়েন্ট করতে হবে। তবে প্রিয় কোনো দিন আইনের চাকরি করতে পারবে না।

প্রিয় প্রেমাকে ফোন দিল, হ্যালো। তুমি আমার চাকরি কেন নিয়েছ।

,যাব বাবা বলেছিলাম তোমাকে আমাদের চোর পুলিশের খেলা সবে। কিন্তু পুলিশ থাকলেত চোর এমনিতেই ধরা পড়বে তাই পুলিশের চাকরি গেছে।কি হয়েছে তাতে। নতুন ব্যাংকের ম্যানেজার।
, আমি ওই চাকরি করবো না।

, কিন্তু আমি যে তোমার নাম নকল করে সাইন করে দিয়েছি।তাই চাকরি তোমাকে করতেই হবে। তোমার জয়েনিং লেটার টাও পেয়ে যাবে। জয়েনিং লেটার এর সকল শর্ত তোমাকে মানতে হবে। তা না হলে তোমাকে ৭০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। I’m your boss.

, কি তুমি আমার বস।

, হুম।ওই ব্যাংক আমার। তাই তোমাকে সামলাতে হবে।হা হা হা হা।বাই।

কেটে দিল।

কিছু দিন পর।

এতদিনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে।আজ বড় ধুম ধাম করে আদি ও প্রেমার বিয়ে হলো। প্রিয় খুব খুশি হলো প্রেমার বিয়ে হয়েছে বলে। এতদিনে সব কিছু ভুলে নিজের নতুন জীবন শুরু করুক। সবাই খুব খুশি।প্রেমা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।সব কিছু একটু একটু শুধরে নিতে চেয়েছে।
বিয়ের দিনে প্রিয় ও তার পুরো পরিবার আসলো। আফসানা ও আসলো।প্রেমা আফসানার ক্ষমা চেয়েছে। একটা মানুষ যখন পরিস্থিতি কারণে ভুল করে। আবার সেই ভুল এর জন্য অনুতপ্ত বোধ করে। ক্ষমা চায় তখন তাঁকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ। আফসানা ও প্রেমাকে ক্ষমা করে দিল।

কিন্তু প্রেমা আদির থেকেই এখনো দুরত্ব বজায় রেখে চলে।
প্রেমা আদিকে বলেছে আমাকে বলেছিলে পবিত্র হতে শুদ্ধ হতে। আমি পবিত্র শুদ্ধ হয়ে ই আসবো তোমার কাছে। কিন্তু আদি মানতে নারাজ।এত অপেক্ষার পর ফিরে পেল কিন্তু আর হারাতে চায় না।

প্রেমা সবাই কে বললো, আমি যদি তোমাদের কখনো কষ্ট দিয়ে থাকি তবে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমার এর শাস্তি পেতেই হবে।
আমি কখনো শাস্তি ছাড়া শুদ্ধ হতে পারবো না।

বেশ কয়েক মাস কেটে গেল। সবাই খুব শুখেই ছিল।এত দিন আদি প্রেমাকে অনেক আগলে রেখেছে।প্রেমা আদির ভালোবাসা বুঝতে পেরেছে।তা নিয়ে সে অনুতপ্ত।আদি খুব খেয়াল রাখে।প্রেমা বুঝতে পেরেছে আদি ইওর জীবনের সঠিক মানুষ। যে শত বাধার মধ্যে আগলে রেখেছে। কিন্তু আদির বউ হতেই হবে।এত গুলো দিন নিজের মন মতো ছিল। আদির জন্য একবার ও শাড়ি গয়না পড়েনি। ওকে সবার থেকে দূরে যেতেই হবে। মিথ্যা মায়ায় জড়িয়ে কি লাভ।

আসলে জীবনে প্রথম প্রেম ভুল মানুষের সাথে হলেও। দ্বিতীয় প্রেম ভুল সময়ে সঠিক মানুষের সাথেই হয়।

ডাক্তার বলেছে জমজ সন্তান হবে। এই নিয়ে সবাই খুব খুশি।আজ প্রেমার ডেলিভারি। অনেক অসুস্থ। ডাক্তার কিছু বলতে পারছে না।আদি প্রচন্ড টেনশনে আছে। বাড়ির অনেকেই আছে হাসপাতালে প্রিয় ও আসলো। আফসানা আবার মা হতে চলেছে।তাই সে আসেনি। আলিশার পুত্র সন্তান হয়েছে।সেও আসলো। প্রিয়তার সংসার খুব ভালো ই চলছে। ফারহান ও প্রিয়তা ও এসছে।

এই মুহূর্তে ডাক্তার ওটি থেকে বের হলো নার্স দুজন আদির হাতে দুই সন্তান দিল। একজন কন্যা সন্তান আর একজন পুত্র সন্তান।

ডাক্তার, I’m sorry আপনার সন্তান বাঁচাতে পারলেও। আপনার ওয়াইফ কে বাঁচাতে পারিনি।সরি।

আদি শুধু ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।আজ যেন পুরো দুনিয়া টা শেষ হয়ে গেল। এই নিষ্পাপ শিশুর সাথে এমন টা কেন হলো।
সবাই খুব কাঁদলো কিন্তু আদির চোখে একফোঁটা জল অবধি নেই।এটা ওদের ভাগ্য এ লেখা ছিল। কিন্তু কেন?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here