ইয়াসমিন_রিমা #অসম_প্রেম #পর্ব_৫০

0
444

#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৫০

আদির সাথে প্রেমা যাচ্ছে যাওয়ার পথে পিছন ফিরে দেখলো প্রিয় সময়ের ব্যবধানে মানুষ কত বদলে যায়।

চার বছরের সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়ে কাছের মানুষ টা চলে গেল বিশ্বাস করুন সেদিন আমি প্রচুর কেঁদে ছিলাম বেঁচে থাকার সব টুকু সাদ শেষ হয়ে গিয়েছিল আমি অনেক ভেঙ্গে পড়ে ছিলাম অনেক বার আত্ম ত্যাগের পথে অনেক বার পা বাড়িয়ে ছিলাম কিন্তু যতবারই সিলিংয়ে সাথে গামছাটা পেঁচিয়ে ছিলাম ততবার ই মায়ের টানানো ছবিটি আমার খুঁজে নেওয়া পথটা বন্ধ করে দিয়েছিল আমার সেদিন মনে হয়েছিল চার বছরের সম্পর্ক চার বছর ধরে গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের পাহাড় ভেঙ্গে দিয়ে যেই মানুষ টা কে এত বেশি ভালো বাসতাম সেই মানুষ টাকে ভুলে থাকব ভবিষ্যতের দিন গুলোতে খুব খুব কেদেছিলাম
আমার পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব ছিল না এখন দিব্বি দিন কাটাচ্ছি এখন আর আগের মতো মনে পড়ে না মনে পড়লেও বর্তমান কে প্রবাহিত করে না।
মানুষের জীবন টা আসলে স্রোতে ভেসে যাওয়া শেওলার মত ভাসতে ভাসতে কোথায় গিয়ে বস্তি গড়ে মায়া মমতায় আবদ্ধ হয়ে যায় কিন্তু একটা সময় পর ঠিকি স্রোতে গা ভাসিয়ে চলে যেতে হয় ।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রেমা আর আদি একসাথে হাঁটছে।প্রেমা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো প্রিয় চলে যাচ্ছে। খুব ইচ্ছে করছে জরিয়ে ধরতে।সব কিছু উপেক্ষা করে।ছুটে দৌড় দিল প্রিয়র কাছে।আদি ভাবতেই পারেনি প্রেমা এই রকম করবে।আদি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রেমার চলে যাওয়ার দিকে।

হঠাৎ প্রেমা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়কে। প্রিয় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

,প্রেমা, আলতো করে বলছে, তুমি কোথায় যাচ্ছ।জানো তোমাকে ছাড়া আমার থাকতে কত কষ্ট হয়েছে।

প্রিয় পিছন ফিরে তাকালো, তুমি আমাকে ছাড়ো।প্লিজ প্রেমা। সবাই দেখছে। কি ভাববে বলো।

,যার যা ভাবার ভাবুক। তাতে আমার কিছু জায় আসে না। আমার শুধু তোমাকেই লাগবে। তুমি যে আমাকে বলেছিলে

আমি ছাড়া তোমার অন্য কোথাও আনন্দ হলে ।আমার দুঃখ লাগে। আমি বেশি স্বার্থপর মানুষ।
আমি চাই তুমি শুধু আমার কাছে ই সুখে থাকো অন্য কারো কাছে না। আমি চাই তুমি আমাকে নিয়ে সুখে থাকো। তোমার সব আনন্দ আমাকে ঘিরে হোক । তুমি আমার হয়ে থেকো। শুধু ই আমার।
শোনো প্রিয়তমা আমি এই পৃথিবীর সব থেকে সুদর্শন পুরুষ।

তাহলে এত কিছু ভেবে কি লাভ বলো।লোকে কি ভাবলো তা দিয়ে কি হবে। তুমি শুধু ই আমার।বুঝলে। এবার তোমাকে আমার থেকে কেউ কেরে নিতে পারবে না।

, প্রেমা কি বলছ তুমি। অবাক হয়ে। এটা সম্ভব নয়। কখনো ই সম্ভব নয়।এত গুলো বছরে তোমার জীবন আমার জীবন অনেক টাই পাল্টে গেছে। পাগলী করো না।

দুহাত দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে।

পুরো ট্রেন স্টেশনে সবাই প্রেমার পাগলামী দেখে যাচ্ছে।

, হোক যতই অসম্ভব তবু ও আমি সম্ভব করবো। অট্ট হাঁসিতে মেতে উঠেলো। হা হা হা। প্রিয় দিকে আঙুল উঁচিয়ে বললো।এ জীবনে কেন প্রতিটা জীবনে তুমি শুধু ই আমার। তোমাকে আমার হতেই হবে। তোমার আমার মাঝখানে যে আসবে তাকে আমি বাকা হাসি দিয়ে।

, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেন তুমি এমন করছো। তুমি ত আগে এমন ছিলে না।

, হুম ছিলাম না। এখন হয়েছি। তুমি যেমন চাইবে আমি তোমার কাছে তেমন ভাবেই থাকবো।

,এই পাবলিক প্লেসে কেন সিংক্রেট করছো। তুমি তোমার কাজে যাও আমার লেট হচ্ছে।

, তুমি কোথায় ও যাবে না। আমার সাথে যাবে।চলো।

জোর করে প্রিয়কে নিজের সাথে নিয়ে গেল।

আদি সব টাই দেখলো।কি করবে বুঝতে পারছে না।প্রেমা আজ এত গুলো বছর পর কাছের মানুষ টা কে পেয়ে ছে। তার কাছ থেকে কিভাবে কেরে নেবে।প্রেমার ডাইরি পড়ে সব জানতে পেরেছে।যে প্রেমা কতটা কষ্ট পেয়েছে। প্রিয় ছাড়া ও কতটা একাকিত্ব বরন করে নিয়েছে।আজ তার থেকে মুক্তি। প্রিয়র সাথে প্রেমা খুব খুশি।এতটা খুশি আনন্দ আগে কখনো দেখিনি।এতটা খুশি স্বামী হয়েও রাখতে পারেনি। আদি ভাবছে। ভালোবাসার আর এক নাম ত্যাগ। ভালোবাসার মানুষ যেখানে সব থেকে বেশি ভালো থাকে তাকে সেখানে ভালো থাকতে দেয়া উচিৎ। জোর করে হয়তো শরীর পাওয়া যায় কিন্তু ভালবাসা কখনোই না। সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা এ জীবনে পেলাম না যদি পূন জন্ম বলে কিছু থাকে তাহলে আল্লাহ যেন তোমাকে আমার করেই পাঠায়। আদি যখন প্রেমা আর প্রিয়কে একসাথে দেখছিল তখন ভেতরটা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছিল।এ জীবনে না হয় দূর থেকে ভালো বেসে যাবে । প্রেমার কাছ থেকে প্রিয়কে কেরে নেওয়ার ক্ষমতা আদির নেই। তাহলে প্রেমাকে হাজার ভালোবাসা দিলেও কোনো দিন আদির হবে না।

আদির ভাবনায় ছেদ পড়ল।প্রেমা আদিকে ডাক দিল।

প্রেমা,আদি।
আদি ,হু। তুমি।

,হ্যা প্রিয় ও আমার সাথে যাবে।

আদি এক কষ্ট ভরা চোখে তাকিয়ে আছে প্রিয় ও প্রেমার দিকে।প্রেমা দু হাত দিয়ে ধরে রেখেছে প্রিয়র হাত ‌। প্রিয় বার বার বলছে ছেড়ে দিতে কিন্তু প্রেমা ছাড়ছে না।

,আদি,ও ‌। চলুন।

পাশাপাশি তিন জনে হাটছে। মাঝখানে প্রেমা।দুই পাশে দুই জন। প্রিয় সাথে টুকটাক কথা বলে যাচ্ছে। প্রিয় বেশ বিরক্ত হচ্ছে কিছুই বলতে পারছে না।প্রেমার খামখেয়ালি জন্য। প্রেমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি এসেছে হোটেল থেকে। তিন জনে গাড়িতে করে যাচ্ছে। হোটেল আসলো। প্রিয় চলে যেতে চাচ্ছিল প্রেমা জোর করে হোটেলের একটি রুমের চাবি ধরিয়ে দিল। তিন জনের তিন টি রুম নেওয়া হয়েছে।প্রেমার রুমে আদি ডুকেছে। জিজ্ঞেস করলো।

, তুমি প্রিয়র সাথে এমন করছো কেন। প্রিয় বিরক্ত হচ্ছে।

, সেটা আমি কাউকে ভাবতে বলিনি। বোঝা গেছে।

,প্রেমা।এত বছরে হয়তো প্রিয় বিয়েও করে নিয়েছে। তুমি খামখা ওর সাথে জড়াচ্ছো।

, খালি আমার আর প্রিয়র মাঝখানে ডুকিস কেন আদির গলা চেপে ধরেছে। তোকে বাঁচিয়ে রেখেছি এই তোর ভাগ্য। আমার উপরে যদি তুই তোর অধিকার খাটাস তাহলে তোর জীবন আমি শেষ করে দিব।ওই দিন ই তোর শেষ দিন হবে। বলেই ছেড়ে দিল আর রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

আদি ভাবতেই পারেনি প্রেমা এত হাইপার হয়ে যাবে।প্রেমা প্রিয় ছাড়া কিছুই বোঝে না। বিছানায় বসে বসে ভাবছে।প্রেমা কেন ওর সাথে এত বাজে ব্যবহার করছে।প্রেমা কি বোঝে না।আদি ওকে কতটা ভালোবাসে।

প্রেমা রুম থেকে বেরিয়ে প্রিয়র রুমে ঢুকলো। দেখে প্রিয় খালি গায়ে। চেন্জ করছে।প্রেমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসল।চুপটি করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। পিঠে নাক ঘষছে।,I love you my dear jan.

প্রিয় বুঝতে পেরে প্রেমাকে ছাড়িয়ে দুরে সরে গেল। কাপড় দিয়ে গা ডাকছে।

প্রেমা প্রিয়র কান্ড দেখে হাসতে। আচমকা প্রিয়র জামাটা টান মেরে ফেলেদিল। আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রিয় পিছাতে পিছাতে বেডে পড়ে গেল।প্রেমা পাশে শুয়ে জরিয়ে ধরে আছে। মুখ কানের কাছে নিয়ে বললো।,

অপেক্ষা করেছি তোমার;
তুমি আসবে।
অবসান হবে কল্পনার-
তোমায় দেখবো;
যখন আমায় ছোঁবে।

তারপর!
পৃথিবী ঘুরে গেল উনপঞ্চাশ বার!
তুমি নেই, চির শূন্যতায়ও হাহাকার।

, প্রিয় বার সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

প্রেমা, কি করছো তুমি।একটু খানি কাছে চাইছি।তাও এমন করছো।

, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।ছাড়ো সর্বনাশ হয়ে যাবে।

,হলে হোক।আজ রাতে আমি তোমার কাছে থাকবো।যেতে দিব না কোথাও।

, তুমি ভুল করেছো।

, ছাড়তে পারি একটা শর্ত আছে।

, কি শর্ত বলো।

,একটা লিপ কিস দাও। মুখ টা প্রিয়র মুখের কাছে নিয়ে আসলো। তখন প্রিয়র ফোন টা বেজে উঠল। প্রিয় ধরার আগেই প্রেমা ধরে ফেলল।
,হ্যালো

উলটো পাশ থেকে।
Some one,কে বলছেন আপনি।

, আপনি কে বলছেন। একটা মেয়ে কন্ঠ।

, আমি প্রিয়র উয়াফ। আফসানা।

, স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফোন টা মেঝেতে পরে গেল। চোখ সরিয়ে প্রিয়র দিকে রাখলো।

প্রেমা, তুমি বিয়ে করছ।

প্রিয়,হ্যা আমি বিয়ে করেছি। বলেছিলাম না এত বছরে জীবন অনেক টাই পাল্টে গেছে।

, তুমি বিয়ে করতে পারো না। তুমি শুধু আমার।আর করোর নও।

, প্রেমা প্লিজ পাগলামো করো না।একটু বোঝার চেষ্টা করো।

, আমি কিছু বুঝতে চাই না। তুমি ওই মেয়ে টাকে ডিবোর্স দিয়ে দাও ‌‌। আমাদের মাঝে কোন কাটা থাকবে না।

ফোন টা মেঝে থেকে উঠিয়ে নিয়ে প্রিয়র হাতে দিল ‌।,আর বললো,যতই তোমার বউ থাকুক না কেন। তোমাকেই লাগবে আমার।চলো বাকি কাজ শেষ করি । আমাদের মাঝে বাধা শুধু এই ফোনটা। পাশে গ্লাসের পানির মধ্যে ফোনটা দিয়ে দিল‌।

প্রিয়, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তুমি কি সাইকো হ্যা।

,হ্যা হ্যা আমি সাইকো। তোমাকে আমার চাই।আজ এবং এক্ষুনি।

বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজে প্রিয়র গায়ের উপর শুয়ে পড়ল।, তোমাকে আমার কিভাবে করতে হবে তা আমি খুব ভালো করেই জানি Mr.priyo Ahmed

যখন গলায় মুখ দিবে তখন দরজায় খুলে আদি চলে এসে, প্রেমা বলে চিৎকার দেয়।

আদি এসেই সব পন্ড করে দিল।প্রেমা মনে মনে বলছে, আমার রোমান্টিক মুডটা দিল খারাপ করে।আর একটু হলেই প্রিয় আমার হতো। চাইলেও আমার বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে যেতে পারতো না।

প্রিয় এমন কান্ডে বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
প্রেমা পিছন থেকে কয়েক বার ডাকলো। আদির কাছে এসে বলল, তোর জন্য প্রিয় আর আমার সুন্দর মুহূর্ত টা নষ্ট হয়ে গেল। বলেই দুটো চর মারলো।

,আদি, তুমি যেটা চাচ্ছ সেটা ভুল ‌।

, তুই আমায় শেখাবি কোনটা ভুল কোনটা ঠিক। তোকে আমি ছারবো না।তোর লাইফ হেল করে দিবো।

আদি ও প্রেমাকে একটা চর দিল, তোমার উপর আমি কখনো অধিকার দেখাইনি বলে ভেব না যে আমি তোমাকে ছাড় দিব। পাগলী বন্ধ করো।

, শুধু তোর জন্য প্রিয় চলে গেল। আমার গায়ে হাত তুলেছিস এর শাস্তি তোকে পেতে হবে। আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা গুলো বললো।

প্রেমা রুমে এসে বলছে আর পাইচারি করছে,ওই মেয়ে আমার কাছ থেকে প্রিয়কে কেরে নিয়েছে। আমার আর প্রিয়র মাঝখানে বাধা ওকে সরিয়ে ফেলতে হবে।ওই আফসানার সময় ঘনিয়ে আসছে।

প্রায় অনেক রাত হয়ে গেছে।কাল থেকে অফিসের অনেক কাজ শুরু।প্রেমা ঘুমিয়ে ছিল। তখন কেউ মধ্যক অবস্থায় রুমে ঢুকে। দরজা বন্ধ করে দিল।

আবছা আলোয় প্রেমার মুখটা দেখতে পেল। পাশে বসে গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।প্রেমা ঘুরের ঘোরে প্রিয় ভেবেছ।,প্রিয় তুমি।

মুখ থেকে মদের গন্ধ বেড় হয়ে আসছে।
,হু

দুজনে কাছাকাছি চলে এলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here