#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৫৮
সে আমার না হওয়া মহারাজা। চিৎকার করে বলছে আর দু হাত মেলে ঘুরছে।No one can understand my pain inside.প্রেমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
আদি পাগটাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে।যতই আঘাত করুক সে আবার শক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াবে।
এদিকে আয়োজন শুরু হয়েছে গেছে। বন্ধু বান্ধব সবাই হাজির বিয়ে বাড়ীতে।
আদি বিরক্ত হয়ে চলে গেলো।যত দেখবে ততই কাছে টানতে ইচ্ছে করবে কিন্তু ওর শিক্ষা হওয়া দরকার।
প্রেমা রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। তখন ওর পিছু নিয়ে প্রিয়তা আসলো।
ড্রয়িং রুমে সবার সামনে বললো, আমি চাই কাল আরো একটি বিয়ে হোক। আমি চাই আলিশা ও প্রান্তিকের বিয়ে হোক। এখন আলিশার পাশে সত্যি কাউকে খুব প্রয়োজন।
প্লিজ কেউ দ্বিমত পোষণ করো না।
আসরাফ চৌধুরী, আলিশার পাশে সত্যি কাউকে দরকার। তুই ঠিক বলছিস।দেখ অজয় তুই একবার ভেবে দেখ।
,অজয় চৌধুরী, কিন্তু দাদা। আলিশার মত।
, সেটা আমি বুঝে নেব। ওকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।
বাড়ির সবাই মোটামুটি রাজি কারন তাদের কাছে প্রান্তিক খুব ভালো ছেলে। আলিশাকে সুখে রাখবে।
প্রান্তিককে প্রেমা কোনো মতে রাজী করালো কিন্তু আলিশা মানছে না। অনেক কষ্ট এ রাজি হলো।
হলুদ অনুষ্ঠান এ প্রেমা বসে আছে তার পাশে আলিশা।প্রেমা জানে এখানে আরো একজন এসে হাজির হবে সে যা নাছোর বান্দা। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রিয়তা আসলো প্রেমার পাশে বসলো।ক্যামেরা ম্যান ভিডিও করা শুরু করলে আগে প্রেমা হলুদ নিয়ে আগে প্রিয়তার গালে ও আলিশার গালে লাগায়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কেউ কিছু বুঝলো না।প্রেমা সবার সামনে শর্ত রাখলো হলুদ তিন জনকেই সবার লাগাতে হবে।
সবাই রাজি হলো। সবার হলুদ দেওয়া শেষে আদি আসলো হলুদ দিতে কিন্তু সেখানে প্রেমা বাদে দুজনকেই লাগালো কিন্তু প্রেমার দিকে ফিরেও তাকায়নি। চলে গেছে।
পরে এখানে ই প্রান্তিকের হলুদ অনুষ্ঠান হলো।আলাদা ভাবে। প্রান্তিকের পরিবারের লোকজন খুব ভালো তাঁরাও আলিশাকে মেনে নিলো।ওর জীবন সম্পর্কে সবাই জানে। আলিশা খুব ভালো মেয়ে।
খুব আনন্দ খুশিতে সবারই হলুদ অনুষ্ঠান কাটলো। অনেক রাত হয়ে গেছে কালকে বিয়ের অনুষ্ঠান।
সবাই জানে আগামীকাল প্রেমা ও আলিশার বিয়ে।প্রেমা বিয়ে নিয়ে সবার আনন্দ উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রেমা রুমে এসে ভাবলো, আদি মনে হয় সত্যি ওকে ঘৃণা করে।আদির কথা গুলো একটু বেশি গায় লাগলো। কিন্তু কেন। প্রিয়র কথা মনে পড়ে গেল। প্রিয় কে আর একটি বার পাওয়ার আশা। এবার সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে বদলে নেবে।
হঠাৎ ফোন আসলো,হ্যালো।
,ম্যাডাম আফসানা মা রা যায়নি।
, কি হহ বললি।ম রে নি মানে।
, লরির ড্রাইভার কে ওই অফিসার ধরে ফেলেছে।আমরা কোনো ভাবেই আটকে রাখতে পারিনি।
,সব লিক হওয়ার আগেই শেষ কর ।যে ভাবে হোক সে ভাবে।তা না হলে তোদের একই হাল হবে। understand.
বলেই কেটে দিল। তুমি কিছু জানতে পারবে না প্রিয় । তুমি শুধু আমার।আর কারোর নও।
পরের দিন সকালে সবার হই হুল্লোড় এ ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রেমার বিয়ে বাড়ি সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে আছে।
সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।
এদিকে প্রিয় অনেক কিছু বার করতে পেরেছে। প্রিয় এখন থেকে ওর ওয়াইফ আফসানাকে কিছু লোক গাড দিয়ে রাখছে। প্রিয় ও আফসানা পাশে ছিল।
প্রিয় হুট করেই ডেবিড কে ধরে ফেলল। অনেক লোক জরিত আছে সব অনৈতিক কাজ কর্মে। কিন্তু সমস্যা হল এর সাথে অনেক বড় বড় নেতারা জরিত।উপর মহল থেকে ফোন আসে এদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
প্রিয় ছাড়লেও আশ্চর্য হয়ে যায় প্রেমার কার্য কলাপে। কিন্তু Hunter অবধি এখানো পৌঁছাতে পারেনি।
সন্ধ্যায় বিয়ের আয়োজন শুরু।বর যাত্রী আসছে। সবার সামনে সোফায় দুই জোড়া বর ও কনে বসানো হয়েছে।
সবাই খুব খুশি।ফাইনালি প্রেমা বিয়ে করছে। কিন্তু আদি ওর দিকে ফিরেও তাকায় না।
কাজি প্রথমে প্রান্তিক ও আলিশার বিয়ে পড়ানোর শুরু করে। শেষ এ প্রেমার কাছ থেকে কবুল বলায় ফারহানের বাবা মায়ের নাম ও ফারহানের নাম নিয়ে। ফারহান খুব খুশি। সামনে চেয়ারে আদি বসে ছিল। আদির চোখে চোখ রেখে একটা বাকা হাসি দেয় ফারহান। এবার ও ই শেষ পর্যন্ত জিতে গেল।
কাজি যখন ফারহানের কবুল বলাবার জন্য প্রেমার বাবা ও মায়ের নাম নেয় এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু মেয়ের নাম টা প্রেমার জায়গায় প্রিয়তা বলে উঠে। ফারহান চমকে যায়। কিন্তু ও তো ভেবেছিল এটা প্রেমা।প্রেমা আর আলিশা দুজনে ই ঘোমটা দিয়ে বসেছিল।তাই কেউ বুঝতে ই পারেনি।
ফারহান রাগে বিয়ের জায়গায় থেকে উঠে দাঁড়ায় । সেখানে থাকা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।কি হলো।প্রেমা কোথায়।
প্রিয়তা উঠে দাঁড়ালো।আর ফারহান কে বললো, কেঁদে আপনি বিয়ে টা করুন কারণ আপু বলেছে আপনি আমাকে বিয়ে না করলে ম রে যাবে।
প্রিয়তা বললো,
#ফ্লাসব্যাক
প্রেমাকে যখন সাজানোর জন্য মেয়েরা আসলো। তখন প্রিয়তা ও সব কিছু গয়না শাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছিল। তখন প্রেমা বলে, তোর এগুলো পছন্দ।
,এই গুলো তোমাকে পড়লে খুব সুন্দর লাগবে আপু। তুমি জানো না তুমি কত সুন্দর।
, আমি কে তোর।
, কেন তুমি আমার বোন। আমার আপু।হে হে
, আমি তোর বোন নই। তোর কেউ না আমি।
, তুমি এমন ভাবে বলো না আমার কষ্ট হয়। আমার নিজের রক্তের বোন সে আমাকে ভালবাসে না। আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই। কেঁদে
, তাই তুই চাস আমাকে পেতে।
, খুশি হয়ে হুম।
, তাহলে একটা কাজ করতে পারবি
, তুমি যা বলবা তাই করবো।
,সিওর প্রমিস
, হু প্রমিস
, তাহলে তোকে ফারহান কে বিয়ে করতে হবে।
, আমি অবাক হয়ে। দুলাভাই কে না কিছুতেই পারবো না। উনি তোমাকে খুব ভালোবাসে।
, এই কাজ না করলে তুই আমাকে কোনো দিন পাবি না।
বলেই প্রিয়তার সামনে রিবাল বার দিয়ে মাথায় ঠেকিয়ে,বলে আমি ম রে যাবো।আর কেউ কোন দিন পাবে না।
, কেঁদে আমি রাজি।
, গুড।যা ওকে সাজিয়ে দে।
#বর্তমান
সবার সামনে হঠাৎ প্রেমা আসলো মাথায় রিবালবার ঠেকিয়ে ফারহান কে বললো।
, ফারহান তুমি ওকে এই মুহূর্তে বিয়ে না করলে আমি এক্ষুনি সুট করবো নিজেকে।
সবাই ভয় পেয়ে গেল। ফারহান চরম আশ্চর্যান্বিত হলো। শেষে এ প্রেমা থ্রেট এ বিয়ে সম্পন্ন হলো
বাড়ির সবাই আরো রেগে গিয়েছে । সবার আশা ভরসা ভেঙ্গে দিয়েছে । আসরাফ চৌধুরী রিনা চৌধুরী প্রচন্ড রকমের রেগে আছে।আদি আগেই বুঝেছিল ও ফারহান কে বিয়ে করবে না ।
ফারহান বউ নিয়ে যাওয়ার সময় প্রেমা রং সামনে এসে দাড়িয়ে বললো, তুমি কি ভেবেছ তোমার বোন কে আমি বিয়ে করেছি বলে আমার কাছে ভালো থাকবে। কখনো না। আমি তোমায় অনেক ভালবাসি। কিন্তু আজ যে বিশ্বাসঘাতকতা করলে। তার জন্য তুমি আমার কাছে কখনো ক্ষমা পাবে না। ফারহানের চোখ থেকে অস্রু গড়িয়ে পড়লো। চোখ মুছে। আমার মনে তুমি থাকবে। তোমার বোন আমার মনে কখনো জায়গা পাবে না। তুমি এত নিষ্ঠুর কেন। কেঁদে। তুমি জানতে আমি তোমায় ভালবাসি তবুও বিয়ের নামে রাজি হয়ে অন্য কাউকে জীবনে ধরিয়ে দিয়েছ।
প্রেমা, এই বার বুঝলে ত । ভালোবাসার মানুষ টা কতটা দামী। তার জায়গায় শুধু তাকেই বসানো যায়। আমি তোমাকে অনেক বুঝিয়ে ছিলাম আমি একজন কে ভালোবাসি তুমি কখনো বুঝতে চাওনি। আমি ও কখনো তার জায়গায় কাউকে বসাতে পারিনি। তোমার সাথে বিয়ে হলে কখনোই তুমি আমার ভালোবাসা একজন স্ত্রীর ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হতে। আমি জানি তুমি খুব ভালো মানুষ। তাই আমি কখনো চাই না আমার জন্য তোমার জীবন নষ্ট হোক। তাই আমার থেকে হাজার গুণ ভালো মেয়ে আমার কলিজার টুকরা বোন কে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। আমি ওকে খুব ছোট বেলায় হারিয়েছি। তবুও ওর জায়গা আমার জীবনে অনেক বেশি। আমি তোমাকে অনেক ভরসা করি একমাত্র তুমিই পারবে ওকে ভালো রাখতে।
ফারহানের হাত ধরে বললো।, আমি না খুব বাজে খারাপ মানুষ। আমার জন্য এত ভালোবাসা রিজার্ভ করে না। আমি চাই না আমার জীবনের জরিয়ে তোমার জীবন নষ্ট হোক। sorry.lm really really sorry 😔 ফারহান।যদি কোনো দিন পারো এই নিষ্ঠুর মানুষ টা কে ক্ষমা করে দিও।
তোমরা ভালো থেকো।
ফারহান কিছু বলতে পারছে না। বলার ভাষা টুকু নেই। চুপটি করে গাড়ি তে উঠে গেল।
প্রান্তিক আলিশাও এসে ওদের থেকে বিদায় নিল।ওরাও গাড়ি করে চলে গেল।
ফারহান রাও চলে গেল কিন্তু পিছনে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রেমা।প্রেমারও খুব খারাপ লাগলো। সেই কলেজ লাইফ থেকে ফারহান অনেক ভালোবাসে। প্রতিবার শুধু প্রত্যাক্ষান করেছে। ফারহান কতটা ভালো বেসেছিল প্রেমাকে না বললেও জানে। ভালোবাসার মানুষ কে পাওয়ার যন্ত্রনা কি ভালো করেই জানে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে ঢুকে দেখে সবাই রেগে আছে। কেন এমন করছে।
আসরাফ চৌধুরী, তুই আমাদের সবার সাথে এমন কেন করলি বল।এই ছিল তোর মনে। আমাদের আর কত কষ্ট দিবি তুই।
রিনা চৌধুরী, তুমি বোধহয় ভুলে গেছ ।ও আমাদের কেউ না।যদি আমরা ওর আপনজন হতাম তাহলে ও কখনো আমাদের ঠকাতে পারতো না।ও ওর ইচ্ছা মত যা করুক।
বলেই সবাই এক প্রকার অবহেলা করে দুরে সরে গেল।যে যার কাজে চলে গেল।কেউ কোন কথা বলছে না।
আদি প্রিয়কে সব কিছু বলে দিল।এটাও জানিয়েছে Hunter আসলে প্রেমা।সব কিছুর মাস্টার মাইন্ড প্রেমা।
প্রিয় কোনো দিন স্বপ্নে ও ভাবতে পারেনি।প্রেমা এত খারাপ।আজ প্রিয়র কাছে সব খোলসা হয়ে গেল।
প্রিয় সব জানতে পারলো আফসানা কে মারতে চেয়েছিল। প্রিয় বাবা হতে চলেছিল কিন্তু ওর ভালোবাসাই ওর সন্তান কে কেরে নিয়েছে।
প্রিয় আফসানা কে ওর ফ্লাটে নিয়ে আসলো। প্রেমাকে ও শাস্তি দিবে ই । প্রিয়র ভালোবাসা ই প্রেমাকে জঘন্য করেছে।
আদি ও প্রেমার এই খারাপ রুপে অনেক কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু মেয়েটা নিঃসঙ্গ তায় জীবন টা শেষ করে দিয়েছিল।কেউ ওর পাশে ছিল না। কেউ ওকে ভালোবেসে আগলে রাখেনি।যার আজকের প্রেমায় পরিনত হয়েছে।
বিয়ের তিন দিন পার হয়েছে।প্রেমার উপর সবাই রাগ করে আছে।কেউ ওকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি।প্রেমা অনেক কষ্ট পেয়েছিল সবাই যখন ওকে অবহেলা করলো। কিন্তু সব ভুলে আবার শক্ত হয়ে কাজ করছে।প্রেমা অনেক আগেই নিজেকে হাজার বার ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছে। তখন ওর পাশে কাউকে পায়নি। এখন এই গুলো অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। এখন এত সহজে ভেঙে যায় না প্রেমাকে।
আজ বাড়ির নতুন মেয়ে জামাই আসবে। সবাই খুব ব্যাস্ত।
কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রিয়তা ফারহান প্রান্তিক আলিশা আসলো। সবাই খুব খাতির যত্ন করলো।
প্রেমা সব কিছু ই দেখে যাচ্ছে দূর থেকে।আজ ওর সব চাওয়া সার্থক হয়েছে। সবাই আছে।
সবাই সন্ধ্যায় ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছিল।
সেখানে হঠাৎ আগমন ঘটে প্রিয়র।এই প্রথম চৌধুরী বাড়িতে প্রিয় পা রাখলো। সবাই সে দিকে তাকিয়ে আছে।আদি অবাক হলো। প্রিয় কেন এসছে। প্রেমাকে ধরে নিয়ে যেতে না কি অন্য কিছু।
প্রেমা খুব খুশি হলো। দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়র সামনে। সবার মাঝখানে।
সবার মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে ।কি হবে এখন।
চলবে,